কনফিউশন
লেখকঃ মৌরি মরিয়ম
পর্ব ২০
আরশি নিজের ঘরে ঢুকে শান্তি পেলো। দুনিয়ার আর কোথাও গিয়ে শান্তি পায় না সে। এই বাড়ির বাইরে সবকিছুই অন্যদের মনে হয়। বিছানায় গা এলিয়ে দিতেই আরশির ঘুম এসে গেলো। প্রায় ঘুমিয়ে পড়েছে এমন সময় কাব্যর মেসেজ এলো। সে লিখেছে,
“পৌঁছেছো?”
আরশি রিপ্লাই দিলো,
“কিছুক্ষণ আগেই।”
“ওকে টেক রেস্ট।”
“আপনি কি করছেন?”
“অন দ্যা ওয়ে টু কক্সবাজার।”
“বাড়ি যাচ্ছেন হঠাৎ!”
“ছুটি নষ্ট করতে ইচ্ছে করলো না। কিছু পারসোনাল প্রব্লেমের কারণে অনেকদিন বাড়ি যাই না। তাছাড়া, ওখানে তুমি নেই তিরা নেই। বাকি সবাই আমার অপরিচিত। আমি একা কী করতাম?”
“সরি আমার জন্য মেবি আপনার প্ল্যান বরবাদ হলো।”
“ডোন্ট বি সরি। আমার তেমন কোনো প্ল্যান ছিলো না। খুলনা ঘুরে দেখতাম হয়তো একটু! সেটা পরেও কখনো করা যাবে।”
অর্নব গেট খুলে কাব্যকে দেখে জড়িয়ে ধরে খুশিতে চিৎকার করে উঠলো,
“মা দেখো ছোট ভাইয়া এসেছে!”
কাব্য অর্নবকে দেখে বললো,
“কি খবর মিস্টার ম্যাকগাইভার?”
অর্নব দাঁত কেলিয়ে বললো,
“বাবার ঘরের টিভি টা গতকাল খুলে ফেলেছিলাম। এজন্য বাবা আমাকে কি মার মেরেছে দেখ!”
অর্নব টি-শার্ট উঠিয়ে মারের দাগ দেখাচ্ছিলো। কাব্য হেসে বললো,
“তোর তো কলিজা কম বড় না। আর মানুষ পেলি না বাবার টা?”
“আর কোনো টিভি ফ্রি থাকে না।”
“বাদ দে এসব। তোর সাথে আমার কাজ আছে। এবার তোকে নিয়ে আমি একটা মিশনে যাবো।”
অর্নবের চোখ চকচক করে উঠলো,
“সত্যি ছোটো ভাইয়া? কোথায়?”
“সেটা পরে বলবো।”
অর্নব ফিসফিসিয়ে বললো,
“তোমার সাথেও আমার প্রাইভেট কথা আছে।”
শাহনাজ বেগম রান্নাঘর থেকে বেড়িয়ে ছেলেকে দেখে খুশিতে কথাই হারিয়ে ফেললেন। কাব্য কাছে গিয়ে মাকে জড়িয়ে ধরলো।
“মা কেমন আছো তুমি?”
“আসবি বললি না কেন?”
“সারপ্রাইজ দেব বলে।”
“চাইনা তোর এসব সারপ্রাইজ। সারাক্ষণ তোর সারপ্রাইজের অপেক্ষায় থাকি। কিন্তু বছরে পাই কয়বার?”
“কেন দুই ঈদে তো আসি।”
“তোর পড়াশোনা শেষ হলে সোজা বাড়ি চলে আসবি। তোর মত ছেলের অতদূরে থাকার অধিকার নেই যে কিনা দুই ঈদ ছাড়া ফ্যামিলিকে মনে করে না।”
“ওমা মনে করিনা মানে? প্রতিদিন ফোনে কথা হচ্ছে না?”
“এতোকিছু জানিনা আমি। তুই পড়াশোনা শেষে এখানেই যা করার করবি। তোকে ঢাকা পাঠিয়ে আমি বড় ভুল করেছি।”
কাব্য হেসে বললো,
“আচ্ছা মা তা নাহয় সময় হলে দেখা যাবে। এখন তাড়াতাড়ি ভাত খেতে দাও তো।”
“এই সকালবেলা তাড়াতাড়ি ভাত কোথায় পাবো? তুই ফ্রেশ হ। আমি ভাত বসাচ্ছি। হতে সময় লাগবে না।”
কাব্য খাওয়া শেষ করে ঘরে যেতেই পেছন পেছন গেলেন শাহনাজ বেগম। কাব্য বিছানায় শুতেই উনি গিয়ে পাশে বসলেন। কাব্য বললো,
“মনে হচ্ছে স্পেশাল কথা আছে?”
“তা তো আছেই।”
“বলো।”
“তনিকার সাথে তোর কথাটথা হয়?”
“ওর তো বিয়ে হয়ে গেছে মা।”
শাহনাজ বেগম অবাক হয়ে বললেন,
“কী বলছিস তুই? মেয়েটার বিয়ে হয়ে গেলো?”
“হ্যাঁ।”
“তুই আমাকে একবারও বললি না?”
“বলার কী আছে মা? ব্রেকাপের পর ওর কী হচ্ছে না হচ্ছে সেটা নিয়েও আমি কেন মাথা ঘামাবো?”
“ওর ব্যাপারে মাথা ঘামিয়েছিলি কবে তুই? এতো লক্ষী একটা মেয়েকে কতো কষ্টই না দিলি!”
“মা দুনিয়ার সব মেয়েই তো তোমার কাছে লক্ষী।”
“না তনিকা অন্যরকম ছিলো। কাব্য রে আমার তো ভয় হয়, তনিকার অভিশাপে তোর আবার না বড় কোনো ক্ষতি হয়ে যায়!”
কাব্য হেসে বললো,
“কেন? তোমার লক্ষী মেয়ে অভিশাপ কেন দেবে?”
“তো দেবেনা? ওর জীবনটা তুই নষ্ট করেছিস।”
“আমি ওর জীবন মরন কিছুই নষ্ট করিনি মা। দেখো গিয়ে কি সুন্দর বিয়ে করে সুখী হয়েছে। আবার নাকি বাচ্চাও হবে। তাহলে জীবন নষ্ট কীভাবে হলো? দোষ আমার একার না। দোষ ওরও ছিলো। আর ব্রেকাপও আমি করিনি, ওই করেছে।”
“তনিকা তো ব্রেকাপ করেছে। ওর জায়গায় আমি হলে তোকে খুন করতাম।”
“মা তুমি বেশি সেন্টিমেন্টাল। তনিকা আমাদের পারসোনাল কথাগুলো তোমাকে আংশিকভাবে বলেছে। এজন্য তুমি আমাকে ভুল বুঝছো। ওর উচিত ছিলো বললে পুরোটা বলা।”
“তাহলে তুই পুরোটা বল।”
“আমি তো ওর মতো ডেস্পারেট না যে নিজেকে ভালো প্রমাণ করার জন্য কার সাথে কী সম্পর্ক মাথা রাখবো না। সবাইকে সব বলে বেড়াবো।”
“আরে! বিয়ে না করে একটা মেয়ের সাথে স্বামী স্ত্রীর মতো থেকেছিস। মেয়েটার এতো বড় ক্ষতি করেছিস আর ও তোকে ছেড়ে দেবে? এসব জানার পর থেকে আমার তো তোকে নিজের ছেলে বলে পরিচয় দিতেও লজ্জা লাগে।”
“হ্যাঁ মা আমি অনেক বড় ক্ষতি করে ফেলেছি ওর। আমি স্বীকার করছি। কিন্তু ওকে জিজ্ঞেস করো তো ও কেন বাক্সপেটরা নিয়ে আমার বাসায় এসে উঠেছিলো? এর কোনো উত্তর যদি ওর কাছে থাকে তাহলে আমি এ বিষয়ে তোমার সাথে কথা কন্টিনিউ করবো নাহয় এই চ্যাপ্টার এখানেই ক্লোজ।”
চলবে…