নীলাম্বরীর_প্রেমে Tuhina pakira পর্ব : ২২

নীলাম্বরীর_প্রেমে
Tuhina pakira
পর্ব : ২২

সকাল ৭টা।

চায়ের কাপটা বিছানার পাশের টেবিলে রেখে আয়ু গিয়ে জানালার পর্দা গুলো সরিয়ে জানালাটা খুলে দিলো। সারা ঘরময় সূর্যের আলো ঝলকানি দিয়ে উঠলো। আয়ু কোমরে নিজের শাড়ির আঁচলটা গুজে চুলগুলো খোঁপা করতে করতে এগিয়ে গেলো স্পর্শের দিকে। নূপুরের ঝন ঝন শব্দে ঘরময় এক আলাদা শোভা বিচরণ করছে। স্পর্শ চোখ দুটো পিটপিট করে খুলতেই নজরে এলো আয়ু কে। স্পর্শের মুখে ফুটে উঠল প্রাণবন্ত হাসি। মুখে বিড়বিড় করে কিছু বলে স্পর্শ চোখ বন্ধ করে নিলো। আবারও ওর ঘুম আসছে,চোখ দুটো বেশিক্ষণ খুলে রাখা যাচ্ছে না।

আয়ু গিয়ে স্পর্শের পাশে বসে স্পর্শের দিকে তাকিয়ে হালকা হাসলো। তারপর স্পর্শের মাথার চুলগুলো নিজের হাতের আঙ্গুল দিয়ে এলোমেলো করে দিল। কখনো বা নিজের হাতের মুঠোয় চুলগুলো ধরে হালকা করে টেনে ধরলো, পাছে স্পর্শ ব্যথা পায়।

-” স্পর্শ দা, ও স্পর্শ দা ওঠো না।”

আয়ুর গলাটা অতীব মিষ্টি লাগলো স্পর্শের কাছে। ঘুমের মাঝেই আয়ুর কথা শুনে ওর মুখ যেনো উজ্জ্বল হয়ে উঠল। কিন্তু ও চোখ খুললো না।

আয়ু একভাবে স্পর্শের দিকে তাকিয়ে রইল। ঘুমন্ত স্পর্শকে ওর বেশ লাগছে। আয়ু আস্তে করে স্পর্শের গাল দুটো টেনে দিল,

-” ও লে লে আমার কিউট কিউট স্পর্শ দা।”

কিছুক্ষণ স্পর্শকে ডিস্টার্ব করে আয়ু হাতটা যেই সরিয়ে আনতে গেল স্পর্শ ঘুমের ঘোরে ওর হাতটা ধরে ফেললো। আয়ু চেষ্টা করেও হাতটা ছাড়াতে পারলো না। অপর দিকে স্পর্শ বিন্দাস ঘুমিয়ে আছে ওর হাত ধরে।

-” স্পর্শ দা, ও স্পর্শ দা হাতটা ছাড়ো। ”

আয়ুর কথা স্পর্শ বুঝতে পারলো কিনা কে জানে কিন্তু ও হাত ছাড়ার পরিবর্তে হাতটা আরও শক্ত করে ধরে হাতের মুঠোয় ভালোবাসার ছোঁয়া দিয়ে বিড়বিড় করে বললো , আমার বউটা, ভালোবাসি তো। ”

স্পর্শের পুরো কথাই আয়ুর শ্রবণ গোচর হতেই আয়ুর মধ্যে এক অজানা অনুভূতির সঞ্চার হলো। এই অনুভূতি আগে কখনো ও অনুভব করেনি। আয়ুর মধ্যে যেনো লজ্জার হিম প্রবাহ ওর সারা মুখে ছড়িয়ে পড়ল। না, আয়ু আর এখানে দাঁড়িয়ে থাকতে পারছে না। এবার নির্ঘাত লজ্জায় ও মরেই যাবে। স্পর্শের থেকে জোর করে হাত ছাড়িয়ে নিতে যেতেই স্পর্শ চোখ খুলে পিটপিট করে ওর দিকে তাকালো।

-” কী রে হাত ধরে টানছিস কেনো? ”

-” আমি না, তুমি আমার হাত ধরে আছো।”

-” ও তাই বল।”

কথাটা বলেই স্পর্শ আয়ুর হাত টা ধরেই উবু হয়ে শুয়ে পড়লো।

-” ওই আমার হাতটা ছাড়বে তো, কেউ দেখলে খারাপ ভাববে ”

-” খারাপ কেনো ভাববে? বউয়ের হাত ধরবো না তো কী, অন্য কারোর হাত ধরে বসে থাকবো?”

-” আরে আমাদের বিয়ে হোক, তারপর এইভাবে হাত ধরে বসে থেকো। এখন হাতটা ছাড়ো। আমাদের দেরি দেখে কেউ উপরে এলেই গেলাম।”

আয়ুর কথায় স্পর্শ ওর দিকে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালো। কী বলছে ওদের বিয়ে হয়নি? তাহলে ও যে আয়ু কে তখন সিঁদুর পড়ালো, ওর মা বরণ করে ওর ঘরে নিয়ে গেলো, সেই সব! ”

স্পর্শ ধড়ফর করে উঠে বসলো। কিন্তু আয়ুর হাত ছাড়লো না। একবার আয়ুর দিকে তাকিয়ে সারা ঘরে চোখ বুলিয়ে দেখলো এটা ওর মামা বাড়ি।তারমানে এতক্ষণ ও স্বপ্ন দেখছিল।

আয়ুর হাতের একটা আঙ্গুল মুটকে বললো,

-” তুই তাহলে এখানে কী করছিস?”

স্পর্শের ব্যবহারের মাথা মুন্ডু না বুঝে আয়ু ভ্রু কুঁচকে বললো,
– ” আমি এখানে কী করছি মানে কি? তুমিই তো কাল দুপুরে এই বাড়ি নিয়ে এলে। আমাকে নাকি কয়েকদিন না দেখে তোমার খুব কষ্ট হচ্ছে তাই। আর এখন আমি তোমাকে ঘুম থেকে ডাকতে এসেছি।”

আয়ু টেবিল থেকে চা এর কাপটা স্পর্শের দিকে এগিয়ে দিল। স্পর্শ কাপটা হাতে নিয়ে চোখ ছোটো ছোটো করে বললো,

-” আমি তোকে শুধু এই বাড়িতে আসতেই বলেছিলাম। একবারও বলিনি তোকে না দেখে আমার কষ্ট হচ্ছিল।”

-” সে তোমাকে বলতে হবে না আমি জানি। ”

-” উহু, সব জানিস তুই। ”

স্পর্শ চায়ের কাপে চুমুক দিতে যেতেই আয়ু স্পর্শের একটা কান খচ করে মুলে দিয়ে ওর থেকে দূরে সরে গেলো,

-” যাও আগে মুখ ধুয়ে তারপর চা খাও।”

-” ওই তোর সাহস কম না তো, আমার কান মুলে দিলি। তোর হবে।”

-” তুমি কিছুই করতে পারবে না। ”

-” আমার কাছে আয়, কী যে আজ করবো তুই নিজেও জানিস না। ”

আয়ু একটু খানি স্পর্শের সামনে এগিয়ে এসে বলল,
-” কী করবে? কিছু করে তো দেখো। তোমার দিদা, না না কদিন পড়ে তো আমারও দিদা হবে, সে যাই হোক দিদা কে বলে দেবো। ”

স্পর্শ হাত বাড়িয়ে আয়ু কে ওর কাছে টেনে এনে ওর কান দুটো জোর টেনে ধরলো।

আয়ু ব্যথায় লাফিয়ে উঠলো।

-” আহ! লাগছে তো। ”

স্পর্শ আয়ুর কান দুটো ছেড়ে ওকে ঘরের এক কোনায় দাঁড় করিয়ে দিল। তারপর নিজের হাত দুটো মুড়ে পাশের দেওয়ালে হেলান দিয়ে বললো,

-” কান ধরে চুপ করে এই খানে দাঁড়িয়ে থাকবি। যতক্ষণ না আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি। মনে থাকবে?”

আয়ু স্পর্শের কথা মন দিয়ে শুনে অপর দিকে দরজার দিকে ছুটে চলে গেলো। স্পর্শের দিকে তাকিয়ে দেখলো ও চোখ কটমট করে ওর দিকেই তাকিয়ে রয়েছে । কিন্তু আয়ু ভয় না পেয়ে মুখে ভেংচি কেটে বললো,

-” কিচ্ছু মনে থাকবে না।”

স্পর্শের কিছু বলার আগেই আয়ু ফুড়ুৎ করে চলে গেলো। স্পর্শ চিৎকার করে বললো,

-” তোকে পড়ে দেখে নেবো।”

কিন্তু পরক্ষণেই হেসে উঠলো। আয়ু কে তো বেশ লাগছে। আজ এক পিনে কুঁচি দিয়ে শাড়ি পরেছে, পুরো বউ বউ লাগছে। কিন্তু একটা ব্যাপার স্পর্শের মাথায় এলো না। আয়ু কাল শাড়ি পড়েছে , আবার আজও কেনো শাড়ি পড়লো? স্পর্শ উঠে দাঁড়ালো, প্রশ্নটা দেখা হলে আয়ুকেই জিজ্ঞেস করে নেবে।

আয়ু নীচে নামতেই দেখলো উঠোনের একদিকে ছোটো মাদুরে দিহান, আয়ান, দ্রুতি বসে রয়েছে। ওদের পাশে রুহি, সজলকে দেখে আয়ুর মনে পড়লো ওরা তো এখানে ছিল না, তবে কার সঙ্গে এলো? ওদের থেকে কিছুটা দূরে পলাশ কে বসে থাকতে দেখে আয়ু বুঝতে পারলো ওর দাদা ওদের এখানে নিয়ে এসেছে। আয়ু গিয়ে ওদের পাশে বসে পড়লো। রুহি ওকে দেখে বললো,

-” তুই তো আমাদের রেখে বেশ ভালোই আছিস। আর আমরা ভয়ে মরছি ওই ছেলেটা তোকে এখানে নিয়ে এসে মারে নি তো!”

-” আরে স্পর্শ দা কেনো মারতে যাবে?”

সজল হেসে বললো,

-” ওই ছেলেটা আগের দিন যে ভাবে আমাদের দিকে তাকালো রুহি তো পড়ে ভ্যাঁ ভ্যাঁ করে কেঁদেই
ফেলেছিল।”

রুহি পাশ থেকে সজলের পিঠে ঘুঁসি মেরে বললো,

-” মিথ্যে কথা কমিয়ে বল শয়তান।”

-” কী রে আয়ু দি স্পর্শ দা উঠেছে?”

– ” হ্যাঁ উঠেছে আসছে।”

আয়ু দিহানের থেকে চোখ সরিয়ে নিতেই স্পর্শের দিদা আয়ু কে ডাকলো। তিনি একটু দূরে সিঁড়িতে বসে বড়ি দিচ্ছে রোদে।

-” হ্যাঁ দিদা বলো?”

-” আয়ু মা ঝট করে আমাকে একটু জল এনে দে তো। ”

-” আচ্ছা তুমি বসো আমি আসছি।”

আয়ু ভিতরে রান্নাঘরের দিকে এগিয়ে যেতেই নজরে পড়লো স্পর্শকে। স্পর্শ সিঁড়ি দিয়ে নামছে। আয়ু ওকে ভেংচি কেটে জল আনতে চলে গেলো।

আয়ু জল নিয়ে এসে দেখলো স্পর্শ ওর দিদার পাশে বসে গল্প করছে। আয়ু জলের গ্লাসটা দিদার দিকে এগিয়ে দিয়ে তার থেকে কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে রইলো।

-” এবার তবে আমার নাতির বিয়ে দিলেই হয়। ”

স্পর্শ কিছু বললো না, হালকা হাসলো।

-” তো মেয়ে দেখি, না দেখা আছে দাদু ভাই।”

স্পর্শ আয়ুর দিকে তাকিয়ে ওকে চোখ মেরে ওর দিদাকে বললো,

-” মেয়ে দেখে কি হবে তুমি আছো না। আমি তোমাকেই বিয়ে করি। ”

-” আমি তো বুড়ি মানুষ, আমাকে আর তোমার মনে ধরবে। তোমার তো পরী লাগবে দাদু ভাই।”

-” পরী নয় দিদুন আমার তো নীলাম্বরীকে চাই। তাকেই বিয়ে করবো বুঝলে।”

স্পর্শ আয়ুর দিকে তাকিয়ে হালকা হেসে কথাটা বলতেই আয়ু এইদিক ওইদিক তাকাতে লাগলো। সবার সামনে এই সব বলার কি আছে।

ততক্ষনে দিহানেরা ওদের দিকে এগিয়ে এসেছে। পলাশ আয়ুর দিকে তাকিয়ে হেসে স্পর্শের দিদাকে বললো,

-” সেই সব নিয়ে ভেবো না দিদা। সে তোমার নাতি বউ খুঁজে নেবে। এখন আমরা বরং একটু ঘুরে আসি।”

-” যাও দাদুভাই ঘুরে এসো। তোমার বউয়ের গল্পঃ পড়েই না হয় শুনবো। ”

স্পর্শ উঠে দাঁড়িয়ে আয়ুর পাশে গিয়ে দাঁড়ালো। ততক্ষনে সকলে বাইরে চলে গেছে।
-” সে তো ঘুরতে যাবোই। ”

স্পর্শ চারিদিকে ভালো করে একবার দেখে আয়ুর কানে কানে বললো,
-” চলো বউ ঘুরতে যাবো।”

স্পর্শ এগিয়ে গেলো। আয়ুর কানে কেবল একটা কথাই ঘুরছে ‘চলো বউ ঘুরতে যাবো।’ আয়ু কে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে স্পর্শ আবার ফিরে এসে ওর হাত ধরে টেনে নিয়ে চলে গেলো।

কিছুদিন পর,

আয়ুদের বসার ঘরে আয়ু এবং স্পর্শ দের বাড়ির সকলে বসে রয়েছে। কেবল আয়ু বাদে, ও এই টিউশন থেকে ফিরে উপরে ফ্রেশ হতে গেছে, এক্ষুনি চলে আসবে। আয়ু এবং স্পর্শের বাবা কিছু জরুরি কথা বলবে বলে ওদের সকলকে ডেকেছে।

আয়ুর বাবা সকলের দিকে তাকিয়ে স্পর্শের বাবাকে বললো,

-” তুই বল শিশির। ”

-” আমি আর জয় আয়ুর জন্যে ছেলে দেখেছি। আমার এক বন্ধুর ছেলে, পেশায় ডাক্তার, পরিবারও ভালো। ওরা কাল আয়ুকে দেখতে আসবে।”

কথাটা বলতে দেরি দ্রুতি, দিহান, আনন্দে লাফিয়ে উঠলো। আয়ু আর স্পর্শের মা নির্বাক হয়ে তাদের স্বামীর দিকে তাকিয়ে রয়েছে। এইসব কি বলছে তারা দুই বন্ধু মিলে। এই সবের মাঝেও স্পর্শ দাঁড়িয়ে রয়েছে নির্বাক হয়ে। ওর মাথায় কেবল ঘুরছে ওর আয়ুর বিয়ে। পাশ থেকে আয়ান স্পর্শের হাতে হাত রাখতেই ওর হুশ ফিরল। সামনে তাকাতেই দেখলো ছলছল চোখে আয়ু ওর দিকেই তাকিয়ে রয়েছে।

আয়ু নীচে নামতেই এইরকম একটা কথা শুনে থমকে গেছে। কী বলছে ওর বাবা আর পাপা।ওর তো স্পর্শকে হারাবার কথা শুনেই নিশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে। বাবার ডাকে আয়ুর হুশ ফিরল।

-” এইতো আয়ু এইখানে আয়। তোর জন্যে একটা রাজপুত্র ঠিক করেছি আয়।”

রাজপুত্র, কোন দেশের রাজপুত্র? কেনো তাদের সামনেই তো রয়েছে রাজপুত্র তাদের কী চোখে পড়ছে না। আয়ু সামনে আগাতেই কিছুর সঙ্গে পা জড়িয়ে পড়ে গেলো।

আয়ু কে পড়ে যেতে দেখে স্পর্শ ছুটে ওর কাছে এগিয়ে গেলো। আয়ু কে ধরে তুলে পাশের একটা সোফায় বসিয়ে দিল। সকলে অস্থির হয়ে আয়ুর দিকে তাকিয়ে রয়েছে। স্পর্শ ধরা গলায় বলল,

-” কোথায় লেগেছে আয়ু ?”

আয়ু সকলের দিকে তাকিয়ে বললো, ” আমার লাগেনি আমি ঠিক আছি।”

স্পর্শ আয়ুর পায়ের দিকে তাকাতেই দেখলো ওর পায়ের আঙুলের এর নোখে রক্ত লেগে। স্পর্শ অস্থির হয়ে গেলো,

-” একটা চড় মারবো। লাগেনি মানে এই যে তোর পা দিয়ে রক্ত রেরচ্ছে। দ্রুতি তাড়াতাড়ি ফার্স্ট এইড বক্সটা আন।”

আয়ু ছলছল চোখে স্পর্শের দিকে তাকালো। ওকে হয়তো বোঝাতে চাইছে দেহের ক্ষতের চেয়ে মনের ক্ষতটা কতো গভীর।

স্পর্শের এই মুহূর্তে ইচ্ছে করছে আয়ু কে নিজের বুকের মধ্যে জড়িয়ে ধরলে যদি দুই জনের কষ্টটা একটু হলেও কমতো। ও কী করে পারবে আয়ু কে ছেড়ে থাকতে? পারবে না তো।

দ্রুতি এলে স্পর্শ আয়ুর পায়ে ব্যান্ডেজ করে উঠে দাঁড়ালো। সবাই আয়ুর সাথে কথা বলে, আবার তারা বিয়ের আলোচনায় মাতলো। অপর দিকে পুরোটা সময় আয়ু তাকিয়ে ছিল স্পর্শের দিকে। ও আর এখানে থাকতে পারছে না সকলের অলক্ষে নিজের ঘরের দিকে চলে গেলো।

আয়ুর চলে যেতেই স্পর্শ ওর যাবার দিকে তাকালো। এতক্ষণ ও আড় চোখে আয়ুর দিকেই তাকিয়ে ছিল। কিন্তু কিছুই করতে পারছিল না। এখানে এই মুহূর্তে কিছু বললে হিতে বিপরীত হবে। স্পর্শের বাবা যেহেতু কাউকে কথা দিয়েছে তবে সে কথা রাখবে। তার জন্যে হয়তো নিজের ছেলের কষ্ট টা বুঝবে না। আচ্ছা সত্যিই কি তিনি বুঝবে না? সে তো সময় এলে বোঝা যাবে।

স্পর্শ আর ওখানে দাঁড়ালো না নিজের বাড়ির দিকে চলে গেলো। ওর ও খুব কষ্ট হচ্ছে।

স্পর্শ কেবল নিজের ঘরে পা দিলো, সঙ্গে সঙ্গে ওর ফোন বেজে উঠলো। পকেট থেকে ফোনটা বের করতেই নীলাম্বরী নামটা জ্বলজ্বল করে উঠলো।

-” বারান্দায় আসবে একবার।”

স্পর্শ ফোনটা কানে রেখে আস্তে আস্তে বারান্দায় চলে গেলো। আয়ুও ওর বারান্দায় দাঁড়িয়ে রয়েছে। স্পর্শকে দেখে ওর কেঁদে উঠলো আবার। আয়ুর কান্নার আওয়াজে স্পর্শের বুকটা যেনো ফেটে যাচ্ছে।

-” আমাকে আর কষ্ট দিও না স্পর্শ দা। আর পারছিনা, আমি বিয়ে করবো না।”

-” এই আয়ু কাঁদিস না। দেখ তুই কাঁদলে কী আমার কষ্ট হয় না। ”

-” আমাকে কাঁদতে তুমি খুব ভালো বাসো না। দেখো আজ তো আমি কাঁদছি, তোমাকে কষ্ট করে কাঁদতেও হয়নি। তাহলে তুমি কেনো কষ্ট পাচ্ছো। ”

স্পর্শ এর চোখেও জল এসে গেছে। ও আর আয়ুর দিকে তাকালো না উল্টো দিকে ফিরে গিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলল। ফোনটা অন্য কানে ধরে বললো,

-” আয়ু প্লিজ কাঁদিস না। আর তাছাড়া কতো ভালো একটা সম্বন্ধ এসেছে তোর আর তুই কিনা কাঁদছিস পাগলি।

-” আমি তোমাকে ছেড়ে থাকতে পারবো না স্পর্শ দা। আমি কাউকে বিয়ে করবো না তোমাকে ছাড়া। মরে গেলেও না। সাড়ে তিন বছর তোমাকে ছেড়ে থেকেছি, আর পারবো না। তুমি শুধু আমাকে কষ্ট দাও। কেনো তুমি বোঝো না আমার ছোটো মনটা নিতে পারে না এই সব। তুমি কি জানো, আমার কতো কষ্ট হচ্ছে? আমিতো ঠিক মতো নিশ্বাস নিতেও পারছি না। ”

-” আয়ু তুই জানিস ছেলেটাকে কতো সুন্দর দেখতে, তোর সঙ্গে খুব মানাবে।”

আয়ু ঘন ঘন নিশ্বাস ফেলে বলল,
-” এইবার আর এত কষ্ট দিও না, মরে যাবো। তার চেয়ে আমাকে মারো, কিংবা মেরে ফেলো। আমি সব সহ্য করে নেবো।”

স্পর্শ আয়ুর দিকে ঘুরে দেখলো আয়ু দেওয়ালে হেলান দিয়ে ওর দিকেই তাকিয়ে রয়েছে। ওর চোখ দিয়ে ঝরে চলেছে জলের ধারা।

(চলবে )
{ বিঃ : গতকাল ডান হাতে যন্ত্রণার জন্যে লেখা হয়ে ওঠেনি। তাই আজ 2 তো পার্ট মিলিয়ে বড়ো করে দিলাম। ভুল ক্ষমা করবেন । ভালো কিংবা খারাপ কেমন হয়েছে জানাবেন । হ্যাপি রিডিং }

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here