এক_রক্তিম_শ্রাবণে❤️পর্ব-১১

এক_রক্তিম_শ্রাবণে❤️পর্ব-১১
#লেখিকা_মালিহা_খান❤️

মাথার উপর প্রখর সূর্যতাপ।জলন্ত আগুনের মতো উত্তাপ ছড়িয়ে দিচ্ছে সূর্য।তোহার কলেজ ছুটি হয়েছে প্রায় বিশ মিনিট আগে।ব্যস্ত নয়নে বারবার ঘড়ি দেখছে তিহান পরক্ষণেই মাথা তুলে অস্থির দৃষ্টিতে চোখ বুলিয়ে যাচ্ছে গেটের এপার থেকে ওপার।এই গরমের মধ্যেও তার পরণে ফুলহাতা সাদা শার্ট।অফিস থেকে এখানে এসেছে সে।তাড়াহুড়োয় শার্টের হাতাটা গুটিয়ে নেয়ার খেয়ালটাও হয়নি।ঘাড় গলা ঘেমে নেয়ে একাকার।মেয়েটা এখনো বের হচ্ছেনা কেনো?এত দেরি হয় নাকি?ক্লান্তিতে চোখ বন্ধ করে মুখ ফুলিয়ে কয়েকবার জোরে জোরে শ্বাস ছাড়লো তিহান।
অত:পর চোখ মেলতেই তোহাকে বের হতে দেখে স্বতির নি:শ্বাস ফেঁসে দ্রুত পায়ে হেঁটে এগিয়ে গেলো সে।
তোহার কাঁধ থেকে বইখাতা ভরা ভারি ব্যাগটা নিজের হাতে নিয়ে তপ্ত কন্ঠে বললো,

—“এত দেরি করলি কেনো?আমি কি তোর পার্সোনাল ড্রাইভার যে ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষা করবো?ইডিয়ট।”

কপালে ভাঁজ ফেলে তাকালো তোহা।প্রতিউওরে কিছু বলতে যেয়েও তিহানের ঘামে ভেজা শার্ট দেখে চুপ হয়ে গেলো সে।মনে মনে ভাবলো,আসলেই বেশি দেরি হয়ে গিয়েছে।আরো একটু তাড়াতাড়ি বেরোনো উচিত ছিলো।
অনুশোচিত নিচু কন্ঠে সে বলল,
—“সরি।”

একপলক তাকালো তিহান।চোখে মুখে স্পষ্ট মন খারাপের ছাঁপ ফুঁটে উঠেছে তোহার।মনে মনে হাসলো তিহান।তারপর মুখ বাঁকিয়ে হাতের বাহুতে কপালের ঘামটুকু মুছে নিয়ে হাত বাড়িয়ে তোহার দিকে মেলে দিয়ে নরম গলায় বললো,
—“আয়।”

তোহা ক্ষীণ হেসে শক্ত করে তার হাতটা জড়িয়ে ধরতেই সামনের দিকে পা বাড়ায় তিহান।তার সাথে পা মিলিয়ে তোহাও হাঁটতে শুরু করে।গাড়ির সামনাসামনি যেতেই পা দুটোকে থমকে দাড়া করিয়ে দেয় তোহা।
তিহানকেও আটকানোর জন্য তার হাতে টান দিতেই তিহান ঘাড় ফিরিয়ে বিরক্তিকর কন্ঠে বলে,

—“কি হয়েছে তিহু?”

তোহার দৃষ্টি সামনে থাকা আইসক্রিম ওয়ালার দিকে।তিহানের ডাকে সে আবদার মাখা মিষ্টি কন্ঠে বলে,
—“কিনে দিননা প্লিজ।”

তোহার দৃষ্টি অনুসরণ করে আইসক্রিম ওয়ালার দিকে চোখ পরতেই তিহান গম্ভীরভাবে বলে,
—“একদম না।এই গরমের মধ্য হুট করে আইসক্রিম খেলে ঠান্ডা লেগে যাবে।চুপচাপ মুখ বন্ধ করে সামনে হাঁট।”

তোহা দৃষ্টি ছোট করে কাতরকন্ঠে বলে,
—“তিহান ভাই,একটা খেলে কিছু হবেনা।”

—“তিহু…”

তিহানের ধমকে কাজ হয়না।তোহা আবারো বলে উঠে,
—“প্লিজ।”

হার মানে তিহান।দীর্ঘশ্বাস ফেলে তোহাকে আইসক্রিম ওয়ালার কাছে নিয়ে যেয়ে ছোট্ট করে বলে,
—“কোনটা খাবি?জলদি নে।”

তোহা মুচকি হেসে একটা চকলেট ফ্লেবারের আইসক্রিম তুলে নিতেই তিহান টাকাটা মিটিয়ে দিয়ে ব্যঙ্গাত্বক কন্ঠে বলে,
—“এটা যে নিলি,খেতে পারবি?মাখিয়ে ফেলবি তো জামাকাপড়।”

ততক্ষনে আইসক্রিমের কাগজটা খুলে ফেলেছে তোহা।ছোট একটা কামড় দিয়ে সে দৃঢ় কন্ঠে বলে,
—“মাখবেনা।”

তিহান অবিশ্বাসের দৃষ্টিতে তাকায়।একটু পর কি হবে সেটা তার অজানা নয়।

গাড়িতে বসে আছে তারা।গাড়ি চলছে আপনগতিতে।এসির বাতাসে ঘাম শুকিয়ে গেছে তিহানের।চোখের ক্লান্তি ভাবটাও কেটেছে অনেকটা।রাস্তার জ্যামে একটু পরপরই থেমে যাচ্ছে গাড়ি।তিহানের কপালে বিরক্তির ভাঁজ।আজকে ড্রাইভার আঙ্কেলকে নিয়ে আসেনি।অগত্যা তাকেই ড্রাইভ করতে হচ্ছে।

তোহার আইসক্রিমটা অর্ধেক খাওয়া শেষ না হতেই গলে যেতে শুরু করেছে দ্রুত সেটা চেঁটেপুটে খেতে গিয়ে ইতিমধ্য ঠোঁটের কিছু অংশ মাখিয়ে ফেলেছে সে।কয়েকমিনিট যেতে না যেতেই একটা বড় একটা অংশ গলে পরে যেতে নিলেই দ্রুত গাড়ি ব্রেক করে তোহার থুতনির নিচের অংশে হাত পাতে তিহান।ফলস্বরূপ তিহানের হাতের উপর পরে আইসক্রিমের টুকরোটা।সঙ্গে সঙ্গে আরো দু তিন ফোঁটা আইসক্রিম তার শার্টের হাতার উপর পরতেই তোহা আৎকে উঠে বলে,
—“আরে কি করছেন?হাত সরান।শার্ট মেখে যাচ্ছেতো।”

তিহান উওর না দিয়ে জানালা দিয়ে হাতের আইসক্রিমটা ফেলে দিয়ে গাড়ির সামনের ড্রয়ার থেকে পানির বোতল বের করে তেঁতো কন্ঠে বলে,
—“কি যে করিস তিহু।…দরজাটা খুলতো।হাতটা ধুয়ে দেই।”

পরিষ্কার হাতটা দিয়ে ঠেলে দরজা খুলে তোহা।তিহান ঝুঁকে গিয়ে পানির বোতল খুলে যত্ন করে তোহার হাত ধুইয়ে দিয়ে বোতলটা তোহার হাতে দিয়ে বলে,
—“পানি ঢাল।”

তোহা মুখ গোমরা করে তিহানের হাতের উপর পানি ঢালে।হাতটা পরিষ্কার হলেও ফকফকে সাদা শার্টের হাতাতে চকলেট কালারের দাগগুলো লেগেই থাকে।তিহান আবারো সিটে বসে তোহার হাত থেকে বোতলটা নিয়ে আগের জায়গায় রেখে দেয়।
তিহানের হাতার দিকে তাকিয়ে তোহা মৃদু কন্ঠে বলে,
—“আমাকে বাসায় দিয়ে আপনি এখন অফিসে যাবেন না?”

—“হ্যাঁ,কেনো?”

—“তাহলে শুধু শুধু হাতায় দাগগুলো লাগালেন কেনো?কেমন দেখাচ্ছে।”

তিহান তৎক্ষনাত কোনো উওর দেয়না।তবে তোহাকে গাড়ি থেকে নামিয়ে দেয়ার আগমূহুর্তে তার চোখের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নি:ক্ষেপ করে কন্ঠে গাম্ভীর্য নিয়ে বলে,
—“তোমার থেকে ইম্পোর্টেন্ট কিছুই না।অন্তত এসব বিষয় তো নয়ই।মনে রেখো।”

~চলবে~

[বাসায় ফুপি এসেছে।সবার সাথে গল্পগুজব করতে করতে গল্প লেখার কথা মাথা থেকে একপ্রকার বেরিয়েই গিয়েছিলো।একঘন্টায় তাড়াহুড়ো করে এতটুকু লিখেছি।জানি অনেক বেশি ছোট হয়েছে।সেজন্য সরি।কালকে বড় করে দেয়ার চেষ্টা করবো ইনশাআল্লাহ❤️]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here