যদি তুমি জানতে’পর্ব-১৬

0
677

#যদি_তুমি_জানতে
#ইসরাত_জাহান_তানজিলা
#পর্ব_16
(যাঁরা গল্প পড়তে ইচ্ছুক অবশ্যই আগের পর্ব পড়ে নিবেন।)
রুপার সাথে প্রেমের বয়স যত বেড়ে চলেছে , তুরান এর চিন্তা তত গাঢ় হচ্ছে। রুপা আর চার-পাঁচটা মানুষের মত স্বাভাবিক নয়। হয়ত রুপা স্বাভাবিক নয় বলেই তুরান এত বেশি ভালোবেসে ফেলেছে ওকে। তবুও এ নিয়ে প্রতিনিয়ত চিন্তায় ভুগছে তুরান। প্রেম-ট্রেম অত নিয়ম-কানুন মেনে হয় না। কেমন একটা অনিশ্চয়তার মাঝে আছে। ভবিষ্যতে কথা ভাবলেই শিউরে উঠে তুরান। রুপার সম্পর্কে তেমন কিছুই জানে না। রুপার কাছ থেকে জানার সুযোগ নেই, এসব কথা সব সময় ইগনোর করে রুপা। মাত্র এই কয়েক দিনে খুব ভালোবেসে ফেলেছে রুপা। ভালোবাসা কেমন একটা অদ্ভুত ব্যাপার!
দুপুরে ভার্সিটি থেকে বাসায় ফিরে বারান্দার দিকে তাকায় তুরান! রুপা যে প্রতিদিন ওর অপেক্ষায় বারান্দায় দাঁড়িয়ে তাকিয়ে থাকে গেটের দিকে। তুরান কে দেখলেই এক চিলতে হাসির চিহ্ন ফুটে ওঠে রুপার ঠোঁটের কোনে।
আজ রুপা বারান্দায় দাঁড়িয়ে নেই। কিছু টা শূন্যতা অনুভব করছে তুরান। হয়ত ঘুমাচ্ছে রুপা।
বাসায় এসে কাঁধের ব্যাগ টা তাড়াহুড়ো করে ছাদে যায় তুরান রুপার খোঁজে। এই মেয়েটা কে নিয়ে সব সময় অজানা ভয় কাজ করে তুরানের মনে। রুপা কে ছাদে না দেখে রপার রুমের জানালা দিয়ে উঁকি দেয় তুরান। রুপা রুমেও নেই! মেজাজ খারাপ হচ্ছে তুরানের।
বিকাল পেড়িয়ে সন্ধ্যা হয়ে গেল। সারা বিকাল ছাদে পাঁয়তারা করছে তুরান। রুপার কোন খোঁজ ই নেই। মনের ভেতর খুব অস্থিরতা কাজ করছে।
এমন তো কখনো হয় নি। আজিজ চৌধুরীর বাসায় যাবে কি একবার? না বিষয় টা কেমন বেমানান লাগে! সংকোচিত মনে আজিজ চৌধুরীর বাসার সামনে ঘুরঘুর করছে তুরান।
জানালার ফাঁক দিয়ে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে সোফায় বসে বসে চায়ের কাপ হাতে গল্প করছে আজিজ চৌধুরীর আর সাহেলা বেগম। সাহেলা বেগম নিঃসন্তান তবুও দুই জন কত ভালো ভাবে পথ চলছে।
হঠাৎ আজিজ চৌধুরী বাসার ভেতর থেকে মোটা কন্ঠে তুরান কে ডাক দেয়। তুরান যথারীতি ঘাবড়ে যায়। অপ্রস্তুত বোধ করে উত্তর দেয়,
-‘জ্বী আংকেল।’
-‘ওখানে কি করো আসো আসো বাসার ভিতরে আসো।’
তুরান কে দেখেই মিষ্টি হেসে সাহেলা বেগম বলে,
-‘ রুপা কে খুঁজছিলে বুঝি?’
তুরানের উত্তরের অপেক্ষা না করে সাহেলা বেগম আবার বলে,
-‘ বসো বসো চা নিয়ে আসছি।’
তুরান আজিজ চৌধুরীর পাশে বসে। আজিজ চৌধুরী বই হাতে বসে আছে। বই টা হাত থেকে রেখে তুরানের দিকে মনোযোগ দেয়।
-‘ রুপা কে তো ওর মা আজ নিয়ে গেছে। যেতেই চাচ্ছিল না মেয়ে টা।’
বুকের মাঝে ধক করে উঠল তুরানের। হতবাক হয়ে বলল,
-‘নিয়ে গেছে মানে ? এক বারে নিয়ে গেছে?’
যতটা সম্ভব নিজের হতভম্ব ভাব টা লুকিয়ে রেখে প্রশ্ন গুলো করে তুরান।
-‘না,না একেবারে নিয়ে যাই নি। ওর এক আত্মীয় মারা গেছে তাই আর কি দেখতে গেছে।’
স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল তুরান। রুপা কবে আসবে জানার জন্য মনটা ছটফট করছে কিন্তু আজিজ চৌধুরী কে এত প্রশ্ন করলে যদি সন্দেহ করে? নিজের ভাবমূর্তি রক্ষা করতে আর কোন প্রশ্ন করল না তুরান।
এর ভিতর চা নিয়ে আসে সাহেলা বেগম।
চা খেতে খেতে খানিকক্ষণ গল্প করে তাঁদের দুই জনের সাথে। মানুষ দুই জন ফ্রেশ মাইন্ডের।
এক পর্যায়ে তুরান প্রসঙ্গক্রমে জিজ্ঞেস করে,
-‘ রুপা আপনাদের কাছে থাকে কেন?’
আজিজ চৌধুরী কিছু বলতে গেলেও থামিয়ে দিলো সাহেলা বেগম।
-‘আমাদের তো সন্তান নেই তাই রুপা আমাদের কাছে থাকে।’
কথা বাড়ায় না আর তুরান। রুমে এসে সোজা হয়ে শুয়ে পড়ে। শরীর বেশ ক্লান্ত! রুপা কে ভীষণ মিস করছে।
হঠাৎ ফোন বেজে উঠে তুরানের। ওপাশ থেকে বলে উঠে,
-‘ হ্যালো..তুরান বলছেন? আমি রুপা। আমি বাসার সামনে। আম্মু কে বলেন না। আপনি চুপি চুপি চলে আসেন।’
তুরান কে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে লাইন কেটে দিল রুপা।
তুরান অবাক হয়ে যায়। রাত প্রায় দশটা বাজে ,রুপা কোথা থেকে আসলো?আর রুপার কাছে তো ফোন নেই ,ফোন দিলো কিভাবে? হয়ত অন্য কারো ফোন দিয়ে কল দিয়েছে কিন্তু ফোন নম্বর পেলো কোথায়?
উদগ্রীব হয়ে বাসার সামনে গেলো তুরান। রুপা জড়োসড়ো হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
-‘ এত রাতে কোথা থেকে আসলে? আর তোমার নাকি কোন আত্মীয় মারা গেছে? ফোন পেলে কোথায়? আমার ফোন নম্বর পেলে কোথায়? আর এখানে দাঁড়িয়ে কেন? বাসার ভিতরে যাচ্ছো না কেন?’
অনার্গল ভাবে প্রশ্ন গুলো করলো তুরান।
-‘ এত গুলো প্রশ্ন কোন টার উত্তর দিব বলেন তো?’
-‘সব গুলোর উত্তর দেও তাড়াতাড়ি। আর জানো তোমায় না দেখে আমার কত টেনশন হচ্ছিলো?’
-‘ আমায় আম্মু এসে জোর করে নিয়ে গেছে। এক আত্মীয় মারা গেছে নাকি। ওই বাড়িতে গিয়ে আমার দম বন্ধ হয়ে যাচ্ছিল তাই চলে আসছি। আর রাস্তার পাশের এক দোকান থেকে কল দিয়েছি। আপনার ফোন নম্বর তো আমি জানি ই। আর বাসায় যাবো না কারন এভাবে চলে আসছি জানলে আমায় বকবে।’
তুরান কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলে,
-‘ বাসায় যাবে না তো কি করবে? আর তোমার মা – বাবা টেনশন করবে না? এত পাগলামি কেন করো বলো তো?’
খিলখিল করে হেসে দেয় রুপা।
-‘ ওই বাড়িতে আমার খুব কষ্ট হচ্ছিল তাই আম্মু আমায় একটা রুমে নিয়ে বলল ঘুমাতে। উনারা ভাববে আমি ঘুমাচ্ছি। আর খোঁজ করলেও সকালে করবে। সকালে সাহেলা আম্মু ফোন দিয়ে জানিয়ে দিবে যে আমি চলে আসছি।’
-‘ রাতে যদি খোঁজ করে?’
রুপা ভাবলেশহীন ভাবে বলল,
-‘করলে করুক আমার কি?’
তুরান শক্ত গলায় বলল,
-‘ তুমি না বলছো আর পাগলামি করবে না?’
কোন উত্তর না দিয়ে মাথা নিচু করে থাকে রুপা। তুরান আবার বলে,
-‘ হয়েছে অনেক পাগলামি এবার বাসায় চলো।’
-‘বাসায় যাবো না আজ সারা রাত আপনার সাথে ঘুরবো।’
কিছু বলতে গিয়েও থেমে যায় তুরান। মুচকি হেসে বলল,
-‘ ভেবেছিলাম তোমার মাথায় গোবরের গোডাউন। না বুদ্ধি সুদ্ধিও আছে।’
তুরানের কথার উত্তরে মুচকি হাসছে রুপা। ঠোঁটে দুষ্টুমির হাসি ফুটিয়ে তুরান বলে,
-‘ প্রেম শিখে গেছো দেখছি।’
এবারও লাজুক হাসি দেয় রুপা।
রুপা আগের থেকে স্বাভাবিক অনেক। বিষয়টা খুব স্বস্তিদায়ক তুরানের জন্য।
-‘ আপনায় একটু জড়িয়ে ধরি?’
রুপার কথায় ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যায় তুরান।
তুরান চারদিকে তাকিয়ে বলে,
-‘ রাস্তা ভরা মানুষ তো।’
রুপা তুরান কে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে তুরানের বুকে ঝাঁপিয়ে পড়ে।
তুরানের অদ্ভুত প্রশান্তি অনুভব করলেও অস্বস্তি বোধ করে। চারদিকে মানুষ অথচ এ ব্যাপারে রুপার বিন্দুমাত্র ভ্রুক্ষেপ নেই। রুপা টা এমন কেন?
হাঁটতে হাঁটতে একটি নিরিবিলি জায়গায় এসে পরলো। রুপার সাথে এভাবে সময় কাটানোর অদ্ভুত অনুভূতি প্রকাশ করার উপায় তুরানের জানা নেই।
জ্যোৎস্না রাত চারদিকে আলো ছড়িয়ে পরেছে। থমথমে পরিবেশ। তুরান আর রুপা একটা বেঞ্চে বসলো।
-‘রুপা সত্যি আজ সারা রাতে বাসায় যাবে না?’
রুপা জোর গলায় বলল,
-‘না যাবো না।’
রুপার খানিকটা কাছে গিয়ে তুরান বলল,
-‘ ভালোবাসো আমায়?’
রুপা কাঁপা কাঁপা গলায় বলল,
-‘ হ্যাঁ।’
কথা বলতে বলতে তুরানের কাঁধের উপর ঘুমিয়ে গেল রুপা। এত সুন্দর করে কথা বলতে পারে রুপা? তুরান যেন মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে গেল।
এদিকে সকাল ও প্রায় হয়ে যাচ্ছে। পবিত্র ভালোবাসায় রাঙানো যেন দুটি প্রান।

চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here