#যদি_তুমি_জানতে
#ইসরাত_জাহান_তানজিলা
#পর্ব_27
সারা রাত ঘুম হলো না তুরানের। এ রকম সিচুয়েশনে ঘুম আসে না। রুপার আচরণে খুব বেশি বিরক্ত হয়েছে তুরান। এতটা অবুঝ হলে কিভাবে চলে? আর অন্য দিকে দুঃশ্চিন্তা আর হতাশায় তুরানের অবস্থা শোচনীয়। কিসের জন্য পাগলা গারদে রাখবে রুপাকে? এ রকম কোন সিচুয়েশন হলে রুপাকে নিয়ে দরকার হলে পালিয়ে যাবে। রুপা যদি বিষয়টা তুরানের সাথে শেয়ার না করে তাহলে তুরানের কি করার আছে? কিন্তু রুপা কথাটা সত্যি কিনা মিথ্যা বলেছে এটাই এখন ভাবার বিষয়। সাহেলা বেগম আর আজিজ চৌধুরী যথেষ্ট সচেতন আর টাকাওয়ালা মানুষ। তাঁরা কি রুপা কে পাগলা গারদে দিয়ে আসবে? তাছাড়া রুপার তো গার্ডিয়ান আছে। তুরানের মাথায় কিছুই খেলছে না। রুপার সাথে কথা না বললে কিছুই জানা যাবে না। রাতের সেই ভয়ংকর পরিস্থিতির কথা ভেবে শিউরে উঠে তুরান। একবার যদি সাহেলা বেগম আর আজিজ চৌধুরীর কাছে ধরা খেয়ে যেতো তাহলে যে কি হতো কে জানে!
ফযরের আজান দেওয়ার সাথে সাথে ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নেয় তুরান। চোখ গুলো ভয়ংকর রকমের লাল হয়ে আছে। মুখটা ফ্যাকাশে দেখাচ্ছে আর চিন্তার সূক্ষ্ম রেখা দেখা দিচ্ছে কপালে। শরীরও খুব ক্লান্ত লাগছে তুরানের।
তুরান যে স্টুডেন্ট পড়ায় কালকে তাঁদের পরীক্ষা। সুতরাং আজকে পড়াতে না গেলে টিউশনি থাকবে না তাও শিওর তুরান। যাওয়ার আগে রুপার সাথে কথা বলে সম্পূর্ণ টা না জানলে কিছু তেই মন শান্ত হবে না তুরানের। নাকি সাহেলা বেগমের কাছে জিজ্ঞেস করবে? পরক্ষনে নিজের বিবেকের কাছে প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে যায় তুরান! সাহেলা বেগমের কাছে এসব জিজ্ঞেস করা অযৌক্তিক। এমনিতেই ব্যাচেলর দের কেউ বাসা ভাড়া দিতে চায় না, সামান্য দোষ ত্রুটি পেলেই বাসা থেকে নামিয়ে দিতে দুইবার ভাবে না । কারন তাঁদের ভাড়াটিয়ার অভাব নেই, কিন্তু ব্যাচেলর দের এমন বাসার খুব অভাব।
তুরান উদ্ভ্রান্তের মত রুম থেকে বের হয়। রুপার দেখা পাওয়া যায় কিনা এই ভেবে। রিলেশনের এই পর্যায়ে এসে তুরান বুঝেছে আর যাই হোক একটা ম্যাচিউর মেয়ের সাথে প্রেম করা উচিত। রুপার অবুঝ পাগলামি গুলো ভালোলাগে তুরানের, কোন কিছুতেই বিরক্ত হয় না তুরান। তাই বলে এমন অযোক্তিক পাগলামি করবে। তুরানের ব্রেনের উপর খুব বেশি ডিপ্রেশন সৃষ্টি হচ্ছে।
রুপা বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে। হাতে চায়ের মগ। খুব স্বাভাবিক ভঙ্গিতে চা খাচ্ছে। রুপার ভাব দেখে বুঝা যায় সে খুব নিশ্চিতে আছে। রুপার এমন কান্ড দেখে অবাক না হয়ে পারে না তুরান। ইমোশনাল ব্লাকমেইল করছে রুপা? রুপা কে ঠিক বুঝে উঠতে পারছে না তুরান। তুরান বিভিন্ন ভাবে রুপা কে ইশারা করার চেষ্টা করলো, কিন্তু রুপা ফিরে তাকাচ্ছে না। হয়ত রুপা কথা বলতে চাচ্ছে না তাই কোন রেসপন্স করছে না। তুরান বরাবরের মতো একটা চিরকুট ছুঁড়ে ফেললো বারান্দার দিকে। এভাবে চিঠি দিলে রুপা খুব বেশি খুশি হতো। তুরান চরম অবাক হয়ে গেলো! রুপা ফ্লোর থেকে কাগজটা তুলে ছিঁড়ে টুকরো টুকরো করে ফেলে দিলো। আর তুরানের দিকে বিরক্তিকর দৃষ্টিতে তাকালো। নতুন রুপা কে দেখছে যেন তুরান। একটা মানুষ সামান্য একটা বিষয় নিয়ে এত রাগ করতে পারে জানা ছিলো না তুরানের।
তুরানের রাগ হলো ,ঠিক রাগ না খানিকটা অভিমানও। রাগ ,অভিযানের মিশ্রন যাকে বলে। এতটা ইগ্নোর করা কি রুপার ঠিক হয়েছে? তুরান হতাশ হয়ে রুমে চলে গেলো। তুরানের এখন মনে হচ্ছে রাতে রুপা যে বলেছিলো যে ওকে পাগলা গারদে রেখে আসবে বিষয়টা মিথ্যা।
তুরান রুপার এমন অনাকাঙ্ক্ষিত আচরনে খুব বেশি কষ্ট পায়। তুরান তাড়াহুড়ো করে রেডী হয়ে টিউশনির উদ্দেশ্য রওয়ানা হয় । টিউশনি শেষে ভার্সিটি তে যাবে সেখান থেকে দুপুরের পর আসবে। তুরান বারান্দার দিকে না তাকিয়ে সোজা চলে গেলো।
রুপা বারান্দায় দাঁড়িয়ে তুরানের চলে যাওয়া দেখছে। তুরান চলে যাওয়ার পর রুপা ফ্লোর থেকে কাগজের টুকরো গুলো তুলে মিলানোর চেষ্টা করছে। কিন্তু পারল না । রুপার নিজের গালের উপর দুইটা চড় দিতে ইচ্ছে করলো । কি দরকার ছিল ঢং করে কাগজটা ছিঁড়ে ফেলার? রুপা মনে মনে বেশ মজা পাচ্ছে। তুরান তাহলে সত্যিই বিশ্বাস করেছে যে রুপা কে পাগলা গারদে রেখে আসবে। পাগলের মত করেছিলো তুরান । একটুর জন্য ধরা খায় নি! আনমনে হাসছে রুপা। এবার বুঝো রং ঢং করে মেয়েদের সাথে কথা বলার ফল! রুপা মনে মনে কঠিন প্রতিজ্ঞা করলো যে এরকম শাস্তি আরও দুই দিন অব্যাহত থাকবে। জীবনে আর যেন কখনো মেয়েদের সাথে কথা বলা তো দূরের কথা তাকানোর সাহসও যেন না পায়! রুপা কে চিনতে ভুল করেছে। এবার বুঝুক মজা!
তুরান চলে যাওয়ার কিছুক্ষণ ও সাহেলা বেগম আর আজিজ চৌধুরীও চলে গেলো । বাসায় একা একা শূন্যতা অনুভব করছে রুপা। তুরানকে অনেক বেশি মিস করছে কিন্তু তুরানের উপর রাগ কমছে না । রুপার রাগটা খুব দীর্ঘস্থায়ী। হঠাৎ রুপার নিজের রুমটা গোছাতে ইচ্ছা করলো। এর আগে কখনো এমন ইচ্ছা করে নি। সব সময় সাহেলা বেগম রুম গুছিয়ে দিয়েছে। রুম গুছিয়ে টাইম পাস করতে চাচ্ছে বোধ হয়। বোরিং সময় গুলো সহজে কাটতে চায় না। রুপা রুম গুছিয়ে গেটের সামনে গেলো । যদিও রুপার গেটের বাইরে বেরুনো নিষেধ। দাড়োয়ান কে বুঝিয়ে কোন রকম বের হলো। সামনেই ফুসকা পাওয়া যায়। হঠাৎ রুপার কে জানি ইচ্ছা করছে ফুসকা খেতে ।
সাহেলা বেগম হসপিটাল থেকে এসে যখন দেখবে রুম পরিপাটি করে গোছানো তখন একদম সারপ্রাইজড হবে। রুপা রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে ফুসকা খাচ্ছে। হঠাৎ তুরান কে দেখে চমকে যায় । এত তাড়াতাড়ি ফিরে আসছে কেন তুরান? অসুস্থ দেখাচ্ছে তুরান কে।
তুরানও হঠাৎ রুপা কে দেখতে পায় । তুরান আস্তে আস্তে হেঁটে রুপার কাছে আসে। রুপা খাওয়া থামিয়ে আড় চোখে তুরানের দিকে তাকাচ্ছে। কেমন যেন উস্কখুস্ক দেখাচ্ছে তুরান কে। তুরান কথা না বলে রুপার পাশে দাঁড়িয়ে রইলো। রুপা হয়ত আশা করেছিলো তুরান কিছু বলবে। কাউকে সামনে রেখে এভাবে একা একা খাওয়া বিষয়টা বেশ বিব্রতকর। কিন্তু রুপা তো প্রতিজ্ঞা করছে তুরানের সাথে কথা বলবে,এখন সাধবে কি করে?
রুপা কি যেন ভেবে বলে,
-‘ খাবেন?’
তুরান দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে বললো,
-‘ না তুমি খাও।’
-‘ এত তাড়াতাড়ি ফিরলেন যে?’
-‘ ভার্সিটি তে যায় নি। শরীর খারাপ লাগছে খুব। টিউশনি করে এসে পরেছি।’
তুরান পকেট থেকে মানিব্যাগ বের করে ফুসকাওয়ালার টাকা টা শোধ করে গেটের ভিতরে ঢুকে গেলো। রুপার দিকে একবার তাকালো না । তুরানের এমন আচরণে বুকের মাঝে চিনচিনে ব্যথা অনুভব করলো রুপা। তুরান কখনো এমন আচরণ করে নি। নাকি তুরানের শরীর খারাপ লাগছে বলে? তুরানের এমন সামান্য অসুস্থতায় রুপা কষ্ট অনুভব করলো। রুপা ফুসকার প্লেট টা রেখে দ্রুত বাসায় চলে গেলো ।
বাসায় বসে ছটফট করতে লাগলো রুপার । কথা বলতে ইচ্ছে করছে তুরানের সাথে। রুপা দ্রুত তুরানের রুমের দিকে গেলো । রুমের দরজা ভিতর থেকে লক করা, এমনকি জানালা গুলোও সব আটকানো। রুপা কলিং বেল চাপ দিলো, ভিতর থেকে কোন রেসপন্স নেই। রুপা ডাকতে লাগলো তুরান কে। তুরান রাতের ঘটনার জন্য প্রতিশোধ নিচ্ছে নাকি?
প্রায় দুই ঘন্টা তুরানের রুমের কাছে দাঁড়িয়ে রইলো রুপা। দরজায় কতগুলো লাথিও দিলো , কিন্তু কোন সাড়া নেই। তুরান কি সেন্সলেস হয়ে গেলো নাকি? একটু পরে রুপার মনে হলো সেন্সলেস হলে কেউ দরজা- জানালা বন্ধ করে হয় না। এ তো দেখছি আমার থেকে এক কাঠি সরেস শয়তানিতে।
সাহেলা বেগম কে বাসায় আসতে দেখে রুপা নিজের রুমে চলে গেল।
চলবে…