#যদি_তুমি_জানতে
#ইসরাত_জাহান_তানজিলা
#পর্ব_28
লম্বা ঘুম শেষে বিকালের দিকে কে উঠে তুরান । এক ঘুমে যেন সকল ক্লান্তি- বিষাদ দূর হয়ে গেছে। ঘুম ঘুম চোখে দরজা, জানালা গুলো খুলে তুরান। জানালার ফাঁক দিয়ে উঁকি মেরে দেখলো আশেপাশে রুপা আছে কিনা! রুপার সকালের ব্যবহারে খুব বেশি রাগ হয়েছে তুরানের। আবার মিথ্যা বলে ডিপ্রেশনে রেখেছে। মেয়ে টার বুদ্ধি বোধ হয় হাঁটুর নিচে। মিনিমাম সেন্স নেই, একটা মানুষ যে চিন্তায় মরে যাচ্ছে আর সে মিথ্যা বলে ব্লাকমেইল করছে। তুরান গোসল সেরে সকালের অবশিষ্ট নাস্তা খেয়ে নিলো! ওয়াক্ত মতো রান্না করাও হয়ে উঠে না তুরানের! ব্যাচেলর লাইফ কোন রকম খেয়ে পেট ঠান্ডা রাখতে পারলেই এনাফ। রুপা বোধ হয় অনেকক্ষণ দরজার সামনে দাঁড়িয়ে ছিলো। থাকুক দাঁড়িয়ে! খানিকটা চাপা অভিমান জমে তুরানের মনে।
রুপার তুরানের উপর মেজাজ খারাপ হচ্ছে। এমন কেন তুরান? রুপার রাগ ভাঙালোই না উল্টো নিজেই এখন ভাব ধরে বসে ছিলো। রুপা মনে মনে ভেবে নিয়েছিলো অনেক দিন কথা বলবে না তুরানের সাথে কিন্তু রুপা কেন জানি কথা না বলে পারছে না। আগে কখনো এমন হয়নি রুপার। রুপা রাগ যত ইচ্ছা তত করবে তাই বলে তুরান রাগ ভাঙাবে না? এমন আচরণ করবে? ভীষণ মন খারাপ হচ্ছে রুপার। সব মেয়েরাই বোধ হয় চায়, তাঁর ভালোবাসার মানুষটা ধৈর্য সহকারে রাগ ভাঙাক।
রুপার তুরানের সাথে কথা বলতে ভীষণ ইচ্ছে করছে। রুপা তুরানের রুমের কাছে গেলো। রুমের দরজায় বাইরে থেকে ছিটকানি লাগানো। এর মানে তুরান কোথায়ও গেছে। কোথায় গেছে ছাদে নাকি অন্য কোথায়ও? বিকাল টাইমটা তুরান বেশিরভাগ ছাদেই থাকে। রুপা ছাদে গিয়ে দেখে ছাদের এক কোনায় চেয়ারে বসে বই পড়ছে তুরান। চোখে সেই মোটা ফ্রেমের চশমাটা। কেমন হাবা হাবা দেখাচ্ছে তুরান কে। রুপা তুরানের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য একটু কেশে শব্দ করলো। তুরান মনোযোগ সহকারে বইয়ের দিকেই তাকিয়ে আছে। রুপা এবার গিয়ে তুরানের চেয়ারের পাশে দাঁড়ালো। তুরান বই থেকে মুখ না তুলেই বললো,
-‘ পড়ছি ডিস্টার্ব করো না। কিছু বলার থাকলে বলে চলে যাও।’
খানিকটা অভিমান দোল খায় রুপার মনে। ভ্রু কুঁচকে বলে,
-‘ আমি আপনায় ডিস্টার্ব করি?’
উত্তর দেয় না তুরান। তুরানের এমন আচরণে অবাক না হয়ে পারে না রুপা। রুপা নির্বাক হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে । কোন কথা বলছে না। তুরান অনেকক্ষণ পরে বললো,
-‘ আমার আচরনে খুব বেশি অবাক হওয়ার কিছু নেই।’
তুরান একটু থেমে আবার বলে,
-‘ যে মানুষের বিন্দু মাত্র রেসপনসিবিলিটি নেই তাঁর সাথে এর থেকে ভালো ব্যবহার করতে পারি না আমি। মিথ্যা বলার একটা সীমা আছে রুপা। আচ্ছা মানলাম আমার ভুল হয়েছে। আমি তোমার রাগ ভাঙিয়ে নিতাম। তুমি কি আচরণ টা করলে ? এমন সব মিথ্যা বললে আমার পাগল হওয়ার অবস্থা। একটুর জন্য ধরা খায়নি। সামান্য একটা বিষয় তুমি টেনেটুনে কত বড় করেছো বুঝতে পারছো?আরে মেয়েটা আমার ফ্রেন্ড, আমার সাথে আগ বাড়িয়ে কথা বলতে আসছে। এটা যাস্ট একটা ফ্রেন্ডলি ম্যাটার।’
এই টুকু বলে রুপার দিকে তাকায় তুরান।টপটপ করে জল গড়াচ্ছে রুপার চোখ থেকে।
রুপা কান্না চেপে বললো,
-‘ আমার তো কোন ফ্রেন্ড-ট্রেন্ড নেই। আর আমি তো আর লেখাপড়াও করি নি। তাই ওসব ম্যাটারও বুঝি না। মেয়েটা কে চড় দিয়েছে বলে আপনার লেগেছে খুব সেটা ডিরেক্টলি বললেই পারেন এত ভনিতার দরকার নেই।’
তুরান বিস্ফোরিত দৃষ্টিতে রুপার দিকে তাকায়। চেয়ার থেকে উঠে রুপার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে বলে,
-‘ এসব চিন্তা ভাবনা কোথায় পেয়েছো? ওই মেয়ের জন্য আমার লাগবে তাই না?’
তুরানের কথা না শুনেই চলে যায় রুপা। তুরানও আটকায় নি রুপা কে। রুপা চলে যাওয়ার পর ঠাস করে চেয়ারে বসে পড়ে তুরান। নিজের মাথার উপর বারি দিতে ইচ্ছে করছে তুরানের। রুপা কে এমন কঠিন কথা শুনানোর কি দরকার ছিলো? ও তো এমনই,সব কিছু উল্টো বুঝবে। বিষয়টা এ পর্যন্তই তো শেষ হয়ে যেত আবার রাগ শুরু হয়েছে। তুরান হতাশ ভঙ্গিতে বসে রইল। রুপার রাগ যত দ্রুত সম্ভব ভাঙানো দরকার।
তুরান ছাদে বসে রইলো। বিকেল পেরিয়ে গোধূলি লগ্ন, সূর্য টা অস্ত যাচ্ছে । রক্তিম আভায় ছেয়ে গেছে পুরোটা। তুরান উদাস মনে প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করছে। সারা সন্ধ্যায় রুপা কে একবারও দেখেনি তুরান। খুব বেশি খারাপ ব্যবহার করে ফেলেছে কি? এই রাগ ভাঙাতে ছোট খাটো ঘূর্ণিঝড়ও হয়ে যেতে পারে।
রুপা যদি রাতে ছাদে আসে তাহলে রাগটা ভাঙানো যাবে। যার সাথে কথা না বলে থাকা যায় না তাঁর সকল রাগ , অভিমান মেনে নেওয়াই বোধ হয় শ্রেয়। তুরান ছোট একটা কাগজের টুকরায় রুপা কে ছাদে আসার জন্য লিখলো। রুপার রুমের জানালার ফাঁক দিয়ে কাগজ টা ছুঁড়ে মারে। রুপাকে কাগজ টা হাতে নিতে দেখে ঠোঁটের কোনে চিলতে হাসি ফুটে তুরানের। সেদিনের পর থেকে রুপার রুমের কাছে যেতে ভয় লাগে তুরানের। তুরানের শঙ্কা কাজ করছে রুপা আসবে তো?
তুরান টাইমও বলে দিয়েছে। তুরান ছাদে গিয়ে অপেক্ষা করতে লাগলো। প্রায় আধা ঘন্টা অপেক্ষা করলো, রুপা আসলো না।তুরান ছাদে থেকে নেমে রুপার রুমের দিকে উঁকি দেয়। জানালাও বন্ধ,লাইট অফ। তার মানে ঘুমিয়ে পড়েছে রুপা , আসবে না ছাদে।
তুরান এক রাশ হতাশা নিয়ে রুমে গিয়ে শুয়ে পরলো। কালকে দিনে যে করেই হোক রুপার রাগ ভাঙাতেই হবে।
সকাল বেলা ঘুম এলার্মের শব্দে ঘুম ভেঙে যায়। মাঝে মাঝে রুপা এসে সকালে ঘুম ভাঙাতো তুরানের। খুব মিস করছে রুপা কে । তুরান ফ্রেশ হয়ে খেয়ে টিউশনির উদ্দেশ্য রওয়ানা দেয় । বাসায় ফেরার সময় রুপার পছন্দের সব কিছু নিয়ে আসবে, তাহলে রুপা আর রাগ করে থাকতে পারবে না। তুরান মনে মনে ভাবলো আজও ভার্সিটি তে যাবে না। কারন টিউশনি করিয়ে বাসায় এসে দেখবে সাহেলা বেগম আর আজিজ চৌধুরী কেউই বাসায় নেই। এটাই রুপার রাগ ভাঙানোর সুযোগ।
তুরান টিউশনি শেষে রুপার জন্য দুই মুঠো চুড়ি কিনলো, রুপার পছন্দের ফ্লেভারের আইসক্রিম আর কতগুলো কদম আর রজনীগন্ধা ফুল নিলো।
রুপা এবার আর রাগ করে থাকতে পারবে না। এগুলো দেখে রুপার রিয়্যাক্ট কেমন হবে তা নিয়ে ভাবছে আর মিটিমিটি হাসছে তুরান। তুরান বাসায় এসে দেখলো আজিজ চৌধুরী বাসার মেইন ডোরে বড়োসড়ো একটা তালা ঝুলানো। এর মানে বাসায় কেউ নেই।আর রুপা কে তো বাসার ভিতরে বন্দি করে রেখেছে যাবে না । তুরান পুনরায় হতাশ হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। বাসার আশেপাশে ঘুরে ঘুরে দেখলো বাসায় কেউ আছে কিনা। কেউ নেই বাসায়।
তুরানের এখন কি যে ইচ্ছা করছে নিজেও জানে না। পাশের ফ্ল্যাটের কারো কাছে জিজ্ঞেস করে জানা যাবে। কোথায় যেতে পারে রুপা? তুরান হতাশায় নিমজ্জিত হয়ে গেলো।
পাশের ফ্ল্যাটের ভাইয়ের কাছে জিজ্ঞেস করে জানলো রুপা সাহেলা বেগম আর আজিজ চৌধুরীর সাথে কক্সবাজার গেছে। তুরানের মাথায় যেন বাজ পড়লো। কক্সবাজার কি ঘুরতে গেছে উনারা? তুরান ফ্লোর ঘেঁষে বসে পড়লো।
এমন কেন রুপা টা? একবার বললো না! ও কি বুঝে না ওর জন্য কারো খুব বেশি টেনশন হয়। কবে ফিরবে রুপা? অনিশ্চিয়তার হতাশ হয়ে যাচ্ছে রুপা।
চলবে…