যদি তুমি জানতে’পর্ব-৩৭

0
616

#যদি_তুমি_জানতে
#ইসরাত_জাহান_তানজিলা
#পর্ব_37
সাহেলা বেগম আর আজিজ চৌধুরী বাসায় ফিরে গেলো। বাসায় গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়লো সাহেলা বেগম। নিঃসন্তান সাহেলা বেগমের কান্নায় সান্ত্বনা দেওয়ার ভাষা খুঁজে পেলো না আজিজ চৌধুরী। সাহেলা বেগমের কান্না দেখে তুরানের উপর আজিজ চৌধুরীর আক্রোশ বাড়ছে ক্রমশ। মনে হচ্ছে সব কিছু্র জন্য তুরানই দায়ী।
আজিজ চৌধুরী সাহেলা বেগমের পাশে বসে রইলো চুপচাপ। অনেকক্ষণ পর কান্না থামিয়ে সাহেলা বেগম বললো,
-‘অনেক রাত হয়েছে খেয়ে নেও তুমি।’
আজিজ চৌধুরী নড়েচড়ে বসে বললো,
-‘তুমি খাবে না?’
-‘উঁহু।’
আজিজ চৌধুরী উদাস হয়ে বসে রইলো। সন্তান না থাকার ব্যাথা অনুভব করছে নতুন করে। সাহেলা বেগমের কান্নায় সন্তান না থাকার ব্যাথা জড়িয়ে রয়েছে।
আজিজ চৌধুরী নিচু গলায় বললো,
-‘আমাদের সন্তান নেই বলেই হয়ত রুপা কে শাসন করতে পারি নি ঠিক ভাবে। কোনটা সঠিক কোন সঠিক নয় সে জ্ঞান ও বোধ হয় রপ্ত করতে পারিনি এব্যাপারে।’
আজিজ চৌধুরী কিছুক্ষণ চুপ থেকে আবার বললো,
-‘ মন খারাপ করে কেঁদে কি হবে বলো? রুপা অন্যের মেয়ে । আজ হোক কাল হোক আমাদের ছেড়ে চলেই যেত। আমাদেরও ফল্ট ছিলো কিছু্। ও প্রায়ই তুরানের কথা বলতো আমরা সেভাবে কেয়ার করতাম না। ওর জন্য কাঁদা নিছক বোকামি ছাড়া কিছু না।’
সাহেলা বেগম কান্না থামিয়ে আজিজ চৌধুরীর দিকে তাকিয়ে রইল। আজিজ চৌধুরী চিন্তা ভাবনা গুলো সবই বাস্তবিক। সংসার জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে সাহেলা বেগম আজ বুঝতে পারলো আজিজ চৌধুরী সব সময়ই সঠিক এবং তার চিন্তা ভাবনা গুলোও। যে কোন বিষয়ে আজিজ চৌধুরী যখন যা বলেছে আজ হোক কাল হোক তাই হয়েছে।
সাহেলা বেগম কে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে আজিজ চৌধুরী বললো,
-‘কি হলো তাকিয়ে রয়েছো কেন? কি ভাবছো?’
আমি
সাহেলা বেগম বললো,
-‘কিছু না। আচ্ছা তুমি সব কিছু সঠিক ভাবো কিভাবে সব সময়?’
আজিজ চৌধুরী ফিকে হেসে বললো,
-‘আমি জীবনের একটা খারাপ সময় পার করেছি। তাই আমার চিন্তা গুলো বাস্তবিক,আবেগের ঠাঁই নেই। কিন্তু তুমি তো খারাপ সময় পার করো নি। তাই ছোট ছোট বিষয় গুলো নিয়েও ইমোশনাল হয়ে যাও। যা হওয়ার তা আজ হোক কাল হোক হবেই। সেটা মেনেই আমাদের জীবন চালাতে হবে। আচ্ছা তোমার কি মনে হয় রুপার জন্য আমার খারাপ লাগছে না? রুপা এত লম্বা সময় আমাদের কাছে ছিলো!’
আজিজ চৌধুরী দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে আবার বললো,
-‘ রুপার জন্য আমারও কষ্ট হচ্ছে কিন্তু প্রকাশ করছি না ‌। কষ্ট প্রকাশ করতে আমার ভালোলাগে না । কারন কষ্ট প্রকাশ করলেই কষ্ট গুলো তীব্র হয়ে যায়, প্রখর হয়ে যায়। যা আরো যন্ত্রণাময়। শুয়ে পড়ো তুমি অনেক রাত হয়েছে।’
সাহেলা বেগম নির্লিপ্ত কন্ঠে জিজ্ঞেস করলো,
-‘খাবেনা তুমি?’
-‘উঁহু!’
সাহেলা বেগম শুয়ে পড়লো। আজিজ চৌধুরী ডাইনিং রুমে গিয়ে এক গ্লাস পানি খেলো। তারপর কিছুক্ষণ বারান্দায় পাঁয়তারা করলো। কেন জানি অস্থির লাগছে খুব। রাত গভীর হতে লাগলো। ব্যস্তময় শহরের ব্যস্ততা কমতে লাগলো। আজিজ চৌধুরী বারান্দায় দাঁড়িয়ে চারপাশ টা দেখছে। কিছুক্ষণ পরে রুমে এসে দেখলো সাহেলা বেগমের শরীর কাঁপছে। কান্নায় থামানোর চেষ্টা করছে তাই হয়তো শরীর কাঁপছে। আজিজ চৌধুরী বললো,
-‘এখনো ঘুমাও নি?’
-‘উঁহু।’
আজিজ চৌধুরী লাইট অফ করে শুয়ে পড়লো। শরীর বড্ডো ক্লান্ত লাগছে আজিজ চৌধুরীর। বিছানায় গা এলিয়ে দিতেই ঘুমিয়ে গেলো।
.
গভীর রাতে ঘুম ভেঙে গেলো রুপার। চারদিকের সুনসান নীরবতায় রুপা বুঝতে পারলো গভীর রাত এখন। চোখ খুলে তাকিয়ে দেখলো অন্ধকার, চোখ বুঁজলেও অন্ধকার। এত অন্ধকারের ভিতরও জায়গা টা অপরিচিত মনে হতে লাগলো রুপার । যেন এই অন্ধকার গুলোই অপরিচিত। রুপার হঠাৎ মনে হতে লাগলো হসপিটালের কথা, সাহেলা বেগম আর আজিজ চৌধুরীর কথা। রুপা বুঝতে পারলো না কোথায় আছে ও? রুপা বেড সাইডে হাত দিলো লাইট অন করার জন্য। কিন্তু সুইচ কিছু পেলো না। রুপার ভয় করতে শুরু করলো। কিছুতেই বুঝতে পারলো না কোথায় আছেও? চারদিকে ভালো করে তাকাতে লাগলো। অন্ধকার ছাড়া কোথায়ও কিছু নেই। এক ফালি আলোও কোথায়ও নেই। রুপা চিৎকার করতে শুরু করলো। রুপার ভয় ক্রমশ বাড়তে লাগলো। নিজেকে খুব বেশি অসহায় মনে হচ্ছে। তুরানের কথা ভাবতেই রুপার কষ্ট গুলো আরো প্রখর হতে লাগলো। রুপা গলা ফাটিয়ে চিৎকার দিতে লাগলো। কোথায়ও কারো সাড়া পাওয়া গেলো না। এমন তো কখনো হয়নি। যতই রাত হোক রুপা চিৎকার করলেই মূহুর্তের মধ্যেই ছুটে আসতো সাহেলা বেগম। তবে কি সাহেলা বেগম সত্যিই রুপা কে ওঁদের সাথে দিয়ে দিলো? এতটা স্বার্থপর সাহেলা বেগম! তুরানের সাথে কতদিন দেখা হয়না। রুপার মন শূন্যতায় ছেয়ে যাচ্ছে। কিভাবেই দেখা হবে তুরানের সাথে? কোথায় খুঁজে পাবে তু্রান কে? তুরান কি খুঁজছে না রুপা কে? হাজার প্রশ্ন রুপার মাথায় ঘোরপাক খেতে লাগলো। এমন অন্ধকারে দম বন্ধ হয়ে আসতে লাগলো রুপার। তুরানের নাম ধরে চিৎকার করতে লাগলো। রুপা বুঝতে পারছে না এখানে কি কোন মানুষ নেই? থাকলে ছুটে আসছে না কেন রুপার ডাকে? সাহেলা বেগমে কোথায় রেখে গেলো রুপা কে? তুরান ছুটে আসছে না কেন রুপার ডাকে? রুপার বড্ড অভিমান হতে লাগলো। এত জ্বর ছিলো রুপার গায়ে,এত অসুস্থ ছিলো রুপা। তুরান কেন একবারও দেখতে আসলো না?
রুপার অসহ্য রকমের কষ্ট হচ্ছে এই ঘন অন্ধকারে। ভয়ে , কষ্টে, একাকিত্বে বিলীন হয়ে যেতে লাগলো রুপা। অসহায়ত্ব গ্রাস করতে লাগলো রুপা কে। রুপা নিজের মাথায় আঘাত করতে লাগলো। মরে যেতে ইচ্ছে করছে রুপার। অন্ধকারে আন্দাজ করে পা ফেলে খাট থেকে নামলো রুপা। অন্ধ মানুষের মত অনুমান করে পা বাড়ালো রুমের দিকে। শেষে দেয়ালের সাথে এসে ঠেকলো। রুপা হাত দিয়ে খুঁজতে লাগলো কোন দরজা জানালা আছে কিনা। রুপা জানালা খুঁজে পেলো, জানালা টা আটকানো। রুপা খুলতে চেষ্টা করলো। কিন্তু পারলো না, জানালা টা খুব শক্ত করে লাগানো। যেন অনেকদিন ধরে আটকানো জানালা, তাই বোধ হয় খুলতে পারছে না। অনেক কষ্ট করে জানালা টা খুললো রুপা। জানালা খুলতেই এক ফালি আলো এসে পড়লো রুমে। আবছা আলোতে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি দিয়ে রুমটা দেখতে লাগলো রুপা।
রুপা একদম অপরিচিত। আগে বোধ হয় কখনো দেখে নি হয়ত বা দেখছে। রুপা রুমের দরজাটাও খুললো তারপর লাইট অন করলো। পা টিপে টিপে রুম থেকে বের হলো। রুপা যে রুমে ছিলো সে রুমের পাশেই আরেকটা রুম ,রুপা জানালা দিয়ে উঁকি দিয়ে দেখলো রুমের ভিতর। কিন্তু রুমে কোন মানুষ আছে কিনা স্পষ্ট বুঝা গেলো না। রুপা এ পর্যায়ে বুঝতে পারলো সাহেলা বেগম রুপা কে রুপার বাবা-মায়ের কাছে পাঠিয়ে দিয়েছে। এই বাসায় আরো কয়েকবার রুপা কে জোর করে এনেছিলো তারা। সেজন্যই জায়গাটা এখন কিছুটা পরিচিত মনে হলো রুপার। কিন্তু অন্ধকারে সবটা অপরিচিত মনে হয়েছিল।
রুপা ফ্লোরে বসে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে লাগলো। সাহেলা বেগম কেন করলো এমনটা? তুরান কে ছাড়া থাকা কোন কিছুতেই সম্ভব না।
চলবে..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here