অদ্ভুত প্রেমবিলাস পর্ব-৩৮

0
3414

#অদ্ভুত_প্রেমবিলাস
#লেখিকাঃ সারজীন ইসলাম

|পর্ব-৩৮|

ইভান খাবার টেবিলে বসে আছে। আড়চোখে আশেপাশে তাকায়। না তাঁর প্রিয়সি তাঁর আশেপাশে কোথাও নেই। ইভান খাবারে হাত দেওয়াও আগে জোনাকি ভাবির দিকে তাকিয়ে ভাঙা গলায় বলল,

‘ ভাবি তোমার ননদ কোথায়? তাকে দেখছি না যে?’

জোনাকি পানির জগ টা এনে টেবিলে রেখে ইভানের দিকে তাকিয়ে মৃদু স্বরে বলল,

‘ সে তো তোমাদের জন্য বসে থাকতে থাকতে কিছুক্ষণ আগে নিজের ঘরে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে।’

ইভান ছোট করে বলল,

‘ রাতে খাবার খেয়েছে ভাবি?’

জোনাকি ডান-বাম মাথা দুলিয়ে বলল,

‘ না কিছু খাইনি। আমি আর আম্মা জোর করেছিলাম খাওয়ার জন্য কিন্তু ধারা খিদে নেই বলে ঘুমতে চলে গেছে। সেই সন্ধ্যার পরে আমাদের সাথে বসে নাস্তা করেছি তারপরে আর কিছু খায়নি।’

জোনাকির কথা শুনে সম্রাট চোখ গুলো ছোট ছোট করে বলল,

‘ সে কি সেই সন্ধ্যায় খেয়েছে ও, আর এখন তো রাত দশটার বেশি বাজে এখনো কিছু খাইনি? শীতের এত বড় রাতে মেয়েটা না খেয়ে থাকবে?’

ইভান জোনাকির দিকে তাকিয়ে মৃদু স্বরে বলল,

‘ ভাবি তুমি আমার আর ধারার খাবারটা এক প্লেটে বেড়ে দাও। আমি ওকে খাইয়ে দেবো তোমরা চিন্তা করো না।’

জোনাকি মুচকি হেসে মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানায়। তাড়াতাড়ি করে ইভান আর ধারার খাবার এ প্লেটে বেড়ে দেয়। এরমধ্যে রান্নাঘর থেকে ধারার আম্মা বেরিয়ে এসে বলল,

‘ বাবা তুমি আমার মেয়ের জন্য এত কিছু ভেবেছো দেখে আমার মন জুরিয়ে গেছে। আমি নিশ্চিত ও তোমার কাছে সুখী থাকবে। কিন্তু আমার মেয়েটা যে একবারও ঘুমিয়ে পড়লে বাড়িতে চোর ডাকাত পড়লেও ওকে ঘুম থেকে তোলা যায় না। তুমি আমার অমন ঘুম কাতুরে মেয়ে কে কিভাবে ঘুম থেকে তুলে খাইয়ে দেবে? তার থেকে বরং তুমি এখানে বসে খেয়ে নাও। কাল সকালে ধারা ঘুম থেকে উঠলে আমি ওকে পেট ভরে খাইয়ে দেবো।’

ইভান ঠোঁটে হাসি ফুটিয়ে বলল,

‘ আম্মু আপনি চিন্তা করবেন না আমি ওকে সামলে নিতে পারবো।’

জোনাকি মুচকি হেসে খাবারের প্লেট ইভানের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল,

‘ এই যে হিরো, এই নাও তোমার আর তোমার বউয়ের খাবার। খাবার-পানি ধারার ঘরেই আছে।’

ইভান ঠোঁটের হাসিটা আর একটু প্রসারিত করে, বসা থেকে উঠে জোনাকির হাত থেকে খাবারের প্লেট নিয়ে ধীর পায়ে চলে যায়।

সম্রাট ইভানের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আনমনে বলল,

‘ আমি আল্লাহ তালার কাছে ধারার জন্য যেমন রাজপুত্র চেয়েছি, আল্লাহ তায়ালা তার থেকে শতগুণ ভালো রাজপুত্র পাঠিয়েছে আমাদের ধরার জন্য।’

ধারার আম্মা খানিকটা অস্পষ্ট স্বরে বলল,

‘ কথাটা তুই শতভাগ সত্যি বলেছিস বাবা!’

ইভান খাবারের প্লেট ধারার পড়ার টেবিলের উপর রেখে ধীর পায়ে হেঁটে গিয়ে ধারার পাশে বসে। ইভান সরল চোখে তাকিয়ে থাকে কিছুক্ষণ তার প্রিয়সি দিকে। না বেশিক্ষন তাকিয়ে থাকা যাবে না ওর দিকে। মায়ায় পড়ে আর এই পিচ্চি কে ঘুম থেকে তুলতে পারবে না। বড্ড মায়াবী চেহারা তার। ইভান মুচকি হেসে ধারার দিকে ঝুঁকে ধারা কপালে ঠোঁট ছুঁইয়ে সোজা হয়ে বসে। ধারার গালে একহাত দিয়ে ইভান ধীর গলায় বলল,

‘ লিটিল এঞ্জেল, এই লিটিল এঞ্জেল।’

ইভান ছোট নিঃশ্বাস ফেলে বিড় বিড় করে বলল,

‘ আসার সময় শাশুড়ি আম্মু তো বলেছিল ও খুব ঘুম কাতুরে। একবার ঘুমিয়ে পড়লে চোর ডাকাত বাড়িতে এসে ওকে শুদ্ধ চুরি করে নিয়ে গেলেও না কী ওকে ঘুম থেকে তোলা যায়। সেই হিসেব মতো ওকে এত মিষ্টি মিষ্টি করে ডাকলে কিছুতেই ওকে ঘুম থেকে তোলা যাবে না। সো ইভান গেট রেডি ফর ব্যাটেল।’

ইভান বিছানা থেকে উঠে ধারার পড়ার টেবিলে রাখা খাবার পানির জগ থেকে পাশে থাকা গ্লাসে এক গ্লাস পানি ঢেলে নেয়। ইভান শয়তানি হেসে আবার গিয়ে ধারার পাশে বসে, গ্লাস থেকে অল্প কিছু পানি হাতে ঢেলে নিয়ে ধারার মুখে ছিটিয়ে দেয়।

ঘুমের মধ্যে হঠাৎ করে মুখে পানি এসে পড়ায়, ধারা হকচকিয়ে লাফিয়ে উঠে ঘুম থেকে। বড় বড় নিঃশ্বাস নিতে নিতে প্রথমেই চোখ যায় সামনে। নির্লজ্জ লোকটা কেমন বেয়াক্কেল এর মত দাঁত বের করে হাসছে। ধারা সেদিকে খেয়াল না দিয়ে আশে পাশে তাকায় তার মুখে কোথা থেকে পানি এসে পড়লো সেটা খোঁজার জন্য। ঘরে তো তারা দুইজন ছাড়া আর কেউ নেই। মামাতো বোন গুলো বাড়ির দক্ষিণের ঘরে ঘুমিয়ে আছে। ওরা এখানে থাকলে না হয় বুঝতো ওরা এই কাজ করেছে। তার মধ্যে ধারার দুই বিচ্ছু মামাতো বোন ই ধারার বিয়েতে আসতে পারেনি। ঘরের দরজা ও তো ভিতর থেকে বন্ধ। তাহলে? ধারা ইভান কে সতর্ক চোখে পর্যবেক্ষণ করে। ইভান হেলে দুলে আবার উঠে গিয়ে ধারার পড়ার টেবিলের গ্লাসটা রেখে বলল,

‘ এইতো উঠে পড়েছ এবার যাও গিয়ে হাত মুখে পানি দিয়ে এসো। তারপরে খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে যেও।’

ধারা এতক্ষণে বুঝে গেছে এই ইভান নামক ছেলেটা তার মুখে পানি ছিটিয়ে তাকে ঘুম থেকে তুলেছে। ধারা কপট রাগ দেখিয়ে বলল,

‘ আপনি আমার মুখে পানি ছিটিয়েছেন কেনো? দেখতে পাননি আমি ঘুমিয়ে ছিলাম।’

ইভান সে ধারার কথা না শোনার ভান করে বলল,

‘ থাক তোমাকে এই শীতের মধ্যে আর হাত মুখ ধুতে হবে না। তার চেয়ে বরং আমি তোমাকে খাইয়ে দেই।’

ইভানের কথা শুনে ধারা চোখ বড় বড় করে ওর দিকে তাকায়। এই ছেলে নিশ্চয়ই মাথায় সমস্যা আছে। যে কথা জিজ্ঞেস করুক না কেন সবসময় উল্টোপাল্টা উত্তর দেয়। আর এমন পাগলের সঙ্গে কিনা তার সারা জীবন কাটাতে হবে। এসব ভেবে দেখো ছোট্ট নিঃশ্বাস ফেলল বলল,

‘ আমার খিদে নেই। আমি খাব না। আপনি না খেয়ে থাকলে আপনি খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ুন। আমার প্রচন্ড ঘুম পাচ্ছে আমি ঘুমালাম।’

ধারা এইটুকু বলে যেই শুয়ে পড়তে যাবে। ইভান বড় বড় পা ফেলে এসে হাত ধরে বলল,

‘ এখন যদি তুমি না খেয়ে ঘুমিয়েছো না, তাহলে তোমাদের বাড়ির পিছনে যে ভূত আছে না, তার কাছে গিয়ে তোমাকে রেখে আসবো। এবার তুমি ডিসাইড করো কী করবে, খাবার খাবে না ভূতের বাড়ি যাবে?’

ধারা শুকনো গলায় ঢোক গিলে ভয়ে ভয়ে আশে পাশে তাকায়। ইভানের দিকে একটু এগিয়ে এসে বলল,

‘ আপনি জানেন না রাতের বেলায় তাদের নাম নিতে নেই। যদি একবার তারা চলে আসে তাহলে কিন্তু আপনারা ঘাড় মটকে দেব সাথে আমার ঘাড় টাও ফ্রিতে মটকে দিবে।’

ইভান ঠোঁট চেপে হাসি থামিয়ে বলল,

‘ তাই? আমি তো জানতাম না। যাই হোক এবার খাবার খেয়ে নাও নাহলে কিন্তু আমি তোমাকে ওই ভূতের বাড়িতে দিয়ে আসব।’

ধারার কিছু একটা মনে পড়ে গেলে ইভানের দিকে ভীতু চোখে তাকিয়ে বলল,

‘ শুনুন না আমার মনে হয় কালকে রাতে ওই ভূত টা আমাদের ঘরে এসেছিলো।’

ইভান চোখ ছোট ছোট করে বলল,

‘ তুমি কিভাবে বুঝলে যে ভূত টা আমাদের এই ঘরে এসেছিলো?’

ধারা ওর হাতে ইভানের পরিয়ে দেওয়া আংটি টা দেখিয়ে ভীতু গলায় বলল,

‘ এই দেখুন এই আংটিটা আমার হাতে কখনো ছিল না। কালকে রাতের পর থেকে এটা আমার হাতে দেখছি। সকালবেলা বাড়ির সবাই জিজ্ঞেস করেছিল আমি আংটি টা কোথায় পেয়েছি? আমি জানি না বলায় ভাবিরা কী হাসাহাসি করেছিল আমাকে নিয়ে। আমার কী মনে হয় জানেন? কাল রাতে ওই ভূত টা আমাদের ঘরে চুপি চুপি এসে আমার হাতের আংটিটা পড়িয়ে দিয়ে গেছে। চিন্তা করে দেখেন একবার কী সাংঘাতিক ভূত!’

চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here