#শুভ্র_নীলের_প্রেমপ্রহর
লেখক – এ রহমান
পর্ব ২৫
প্রচন্ড চিৎকার শুনে দিগ্বিদিক ভুলে ইভান এক প্রকার দৌড়ে চলে যায় রান্না ঘরে। দরজায় দাড়িয়ে ঈশা কে একবার দেখে নিল। সে পুরোপুরি ঠিক আছে। বিচলিত কণ্ঠে জিজ্ঞেস করলো
— কি হয়েছে জান?
ইভান এর গলার আওয়াজ শুনে ঈশা কোন কথা না বলে দৌড়ে এসে ইভান কে জড়িয়ে ধরে শক্ত করে। ইভান কিছু না বুঝেই সেও ঈশা কে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে অদূরে কণ্ঠে বলল
— রিলাক্স! এই তো আমি। কি হয়েছে?
ঈশা এক প্রকার হাপাতে হাপাতে বলল
— তেলাপোকা!
ইভান চুপ হয়ে গেলো। সে কি ঠিক শুনলো। সামান্য তেলাপোকার জন্য এরকম সাংঘাতিক চিৎকার! কি ভয়াবহ ব্যাপার। কথাটা মাথায় ঢুকতেই ইভান হেসে ফেললো। হাসি থামিয়ে বলল
— এতো ভয় পাওয়ার কিছু নেই। ওটা তোমাকে খেয়ে ফেলবে না।
ঈশা তবুও শান্ত হলো না। জোরে জোরে শ্বাস টেনে বলল
— ওটাকে সরাও।
ইভান হেসে ফেলে বলল
— ওটাকে সরানো যাবেনা তো।
ঈশা একটু বিরক্তির সরে বলল
— কেনো যাবেনা?
ইভান আদুরে কণ্ঠে বলল
— ওটাকে সরালে এটাও সরে যাবে যে।
ঈশা মাথা তুলে বিস্ফোরিত চোখে তাকিয়ে বলল
–ফাইজলামি করো আমার সাথে?
ইভান সিরিয়াস ভাব এনে বলল
— একদম করছি না। আমি ভয়াবহ রকমের সিরিয়াস। আমি তো ভাবছি এই তেলাপোকাকে নিয়ে আমার ঘরে সাজিয়ে রাখবো।
ঈশা প্রশ্নবিদ্ধ চোখে তাকাতেই ইভান হেসে ফেলে ঈশা কে দুই হাতে জড়িয়ে ধরে বলল
— তাহলে আমার বউ সারাদিন আমাকে এভাবে জড়িয়ে ধরে বুকের মাঝে থাকবে। একটুও নড়াচড়া করবে না।
ঈশা ইভান কে ধাক্কা দিয়ে একটু সরে যেতেই আবার তেলাপোকা উড়ে এসে ঈশার পাশের দেয়ালে বসলো। ঈশা আবারও চিৎকার দিয়ে ইভান কে জড়িয়ে ধরলো। ইভান ঈশা কে জড়িয়ে ধরে বলল
— চাইলেই কি দূরে যাওয়া যায় জান। কোনো না কোন ভাবে আমার কাছে আসতেই হবে।
ঈশা আবারও সরে দাড়ালো। কিন্তু তেলাপোকার দিকে তাকাতেই আবার ভয়ে ইভানের কাছে চলে এলো। ইভান তাকে জড়িয়ে ধরে তেলাপোকাকে দেখছে। এর মাঝেই তাদের চেঁচামেচিতে ইভানের বাবা এসে দাড়ালো। চিন্তিত কণ্ঠে বলল
— কি হয়েছে? কোন সমস্যা?
ইভান ঈশা কে ছেড়ে দিলো। বাবার দিকে ঘুরে হাসতে হাসতে বলল
— কিছু না বাবা তেলাপোকা।
— তেলাপোকা?
উনি ভ্রু কুচকে একটু ভাবলো। কিছুক্ষণ পর বিষয়টা মাথায় ঢুকতেই শব্দ করে হেসে ফেললো। হাসতে হাসতে ঘুরে চলে গেলেন নিজের ঘরের দিকে। ইফতি এসে ওদের দুইজনকে দাড়িয়ে থাকতে দেখে বলল
— কি হয়েছে? এভাবে চিৎকার করছো কেনো তোমরা?
ঈশা তেলাপোকার দিকে ইশারা করতেই ইফতি একটু এগিয়ে গেলো সেদিকে। ইফতি যেতেই তেলাপোকা আবার উড়তে শুরু করলো। ঈশা আবারও চিৎকার করে ইভানের কাছে এসে দাড়ালো। ইভান তাকে জড়িয়ে ধরতেই ইফতি বিজ্ঞের ভঙ্গিতে বলল
— দেখো ভাইয়া আমার মনে হয় ওর ভাবী আপুকে ভীষন পছন্দ হয়েছে। শুধু উড়ে উড়ে সেদিকেই যাচ্ছে।
ইফতি তেলাপোকার কাছে আর একটু এগিয়ে গিয়ে বলল
— কি ভাবী আপুকে পছন্দ হয়েছে?
ঈশা দুম করে ইফতির পিঠে একটা মেরে ঝাঁঝালো গলায় বলল
— কি ও ও করছিস? ও কি তোর গার্ল ফ্রেন্ড? এখনি ওটাকে সরা নাহলে তোকে ভর্তা বানাবো।
ইফতি হাত দিয়ে আলতো করে তেলাপোকা টা ধরতেই ঈশা ইভানের বুকে মুখ লুকালো। ইফতি ওটাকে নিয়ে বাইরে চলে গেলো। ইভান ঈশা কে দেখে হাসছে। ঈশা তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে বলল
— হাসছো কেনো?
ইভান ঠোঁট চেপে হেসে বলল
— আমার বউ এতো সাহসী এসব বাইরে জানলে আমার মন সম্মান আর থাকবে না।
ঈশা রেগে গেলো। ঝাঁঝালো গলায় বলল
— আমি তেলাপোকা ভয় পাই। তার মানে এটা না যে আমি ভীতু। আমার সাহস আছে।
ইভান এগিয়ে গেলো ঈশার দিকে। দেয়ালের সাথে আটকে দিলো তাকে। এক আঙ্গুল দিয়ে পুরো মুখে স্লাইড করে গলা বেয়ে নামতেই ঈশা কাপা কাপা গলায় বলল
— কি..কি করছো?
ইভান শান্ত সরে বলল
— কত সাহস সেটা দেখছিলাম।
ঈশা কে ছেড়ে দিয়ে দূরে সরে দাড়ালো। ঈশা চোখ খুলে ইভানের দিকে তাকাল। ইভান ঠোঁট টিপে হাসছে। একটু কাছে এসে দুই হাতে কলার চেপে ধরে বলল
— তো কি দেখলে?
ইভান সরু চোখে তাকিয়ে বলল
— আমার তো মনে হলো না সাহস আছে।
ঈশা আর একটু কাছে এসে মৃদু সরে বলল
— আমি সাহস দেখালে আবার তুমি যাতে ভয় না পাও!
ইভান ঈশার কোমর জড়িয়ে ধরে আরো কাছে টেনে বলল
— আই অ্যাম ইগার্লি ওয়েটিং ফর দিস!
———————-
নিজের সব কাজ শেষ করে ঈশা ঘরে এসে দেখে ইভান বিছানায় শুয়ে টিভি দেখছে। ঘর একদম অন্ধকার। টিভির সাউন্ড অনেক বেশি। কান পাতানো যাচ্ছে না। ঘরটা সাউন্ড প্রুভ হওয়ায় বাইরে কোন আওয়াজ যাচ্ছে না। টিভির সাউন্ড শুনেই আন্দাজ করা সম্ভব সেখানে কোন মারাত্মক হরর মুভি চলছে। ইভান এর সমস্ত মনোযোগ সেদিকে। ঈশা ওয়াশ রুমে যাওয়ার আগে একটু জোরেই বলল
— সাউন্ড কমাও।
ইভান তার কথা শুনলো না। এমন ভাবে সামনে তাকিয়ে আছে যে তার আশে পাশে আর কিছু আছে সেটা মাথাতেই নেই। ঈশা সোজা ওয়াশ রুমে গেলো। হাত মুখ ধুয়ে বাইরে এসে দেখলো সব কিছু ওভাবেই আছে। কোন কিছুই পরিবর্তন হয়নি। ইভান এর সামনে এসে তুড়ি বাজিয়ে জোরে বলল
— সাউন্ড কমাও না।
ইভান তাকে সরে দিয়ে বলল
— বিরক্ত করোনা তো হরর মুভি দেখছি।
ঈশা বিস্ফোরিত দৃষ্টিতে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকলো। বুঝে গেলো কেনো লাভ হবে না। তাই আর কথা না বাড়িয়ে বিছানায় শুয়ে পড়লো। কিন্তু বেশিক্ষণ শুয়ে থাকতে পারলো না। কারণ ঈশা হরর মুভি প্রচন্ড ভয় পায়। আর এরকম হরর পরিবেশ মানেই আরো ভয়ংকর। উঠে বসলো। ভীষন আদুরে কণ্ঠে বলল
— এই শোন না!
এতো শব্দের মাঝেই ঈশার এমন আদুরে কথা ইভানের কানে পৌঁছাতেই সে ঘুরে তাকাল। চোখ মুখে অতি বিস্ময়! ঈশা আবারও আদুরে কণ্ঠে বলল
— সাউন্ড টা কমাও না।
ইভান ঈশার দিকে তাকিয়েই সামনে রিমোট দিয়ে সাউন্ড কমায় দিলো। আবারও প্রশ্নবিদ্ধ চোখে তাকিয়ে থাকলো। আরো কিছু বলবে কিনা তার অপেক্ষা। ঈশা এবার মৃদু কণ্ঠে বলল
— ওটা বন্ধ করোনা।
ইভান ভ্রু কুচকে তাকাল। কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে সামনে মুখ ফিরিয়ে বলল
— কেনো?
ঈশা অসহায় কণ্ঠে বলল
— আমার ভয় লাগছে। বন্ধ করো না প্লিজ!
ইভান সোজা সাপটা বলল
— বন্ধ হবে না। তোমার না অনেক সাহস।
ঈশা আবারও বলল
— আমি সত্যি ভয় পাচ্ছি।
ইভান তার দিকে না তাকিয়েই হাত বাড়িয়ে বলল
— কাছে আসো।
ঈশার রাগ হলো। ইভান জানে ঈশা ভয় পায়। তবুও সে এরকম কেনো করছে। তাই একটু দূরে সরে গেলো। ইভান সামনে তাকিয়েই বলল
— ভয় কমাতে হলে আমার কাছে আসা ছাড়া কোন উপায় নেই। কারণ ওটা বন্ধ হবে না। চয়েজ ইজ ইয়র্স!
ঈশা কোন কথা বলল না। গুটিসুটি মেরে শুয়ে থাকার চেষ্টা করলো। কিন্তু পারলো না। একটু আবার ভয়ংকর শব্দ হতেই উঠে ইভানের বুকের উপরে শুয়ে পড়লো। ইভান ঈশার মুখের দিকে তাকিয়ে হাসলো। চোখ মুখ খিচে বন্ধ করে আছে। এক হাতে ইভানের শার্ট খামচে ধরে আছে। ইভান ঈশা কে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলল
— এতো ভয় পাও কেনো আমাকে? আমি কি তোমাকে খেয়ে ফেলি?
ঈশা কোন কিছু না ভেবেই বলল
— যদি খেয়ে ফেলো?
ইভান একটু ভেবে বলল
— তাতে কি। খেয়ে ফেললে কি হবে? আমিই তো।
ঈশা হেসে ফেললো। মাথা উচিয়ে বলল
— তুমি বলে কি সব মাফ?
ইভান একটু চিন্তিত হয়ে বলল
— এমনি তো হওয়ার কথা ছিলো। তুমিই বলো।সব মাফ কিনা?
ঈশা হাসলো।কোন উত্তর দিল না। ইভান ঈশা কে এক হাতে জড়িয়ে ধরে আর এক হাত মাথার নিচে দিয়ে শুয়ে আছে। কি মনে করে হুট করেই জানালার দিকে তাকাল। বাইরে বৃষ্টি হচ্ছে। বৃষ্টির ফোঁটা একেবেকে জানালার কাঁচ বেয়ে নিচে পড়ছে। বৃষ্টির বেগ সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যাচ্ছে না। ইভান সেদিকে তাকিয়েই বলল
— বাইরে বৃষ্টি হচ্ছে। ছাদে যাবা?
চলবে……..
(ব্যস্ততার কারণে গল্প দিতে দেরি হয়ে গেলো। রাতে আর একটা পর্ব পাবেন।)