চলো রোদ্দুরে পর্ব-২৮

0
1857

#চলো_রোদ্দুরে
#ফাতেমা_তুজ
#part_28

রাত দিন মেয়েটার যত্ন নিচ্ছে রাদ। তবে এখনো তেমন কিছু প্রশ্ন করে নি ওহ। ভোর ঠিক আছে এটাই সব থেকে জরুরী বিষয়। সময় করে প্রশ্ন করবে, করবে করবে করে তিন টে দিন পার হয়ে গেল। অফিস কিংবা হসপিটাল কোথাও যাচ্ছে না ছেলেটা। ইফতিহারের থেকে বলে কয়েক দিনের জন্য ফ্রেস টাইম নিয়ে নিয়েছে। তবে রামিসার কড়া জবাব ছিলো ‘ কাজ করতে ইচ্ছে করছে না ঠিক আছে। তবে লাঞ্চ ডিনার এক সঙ্গে করতে হবে।’
রাদ অবশ্য হেসে সম্মতি জানিয়েছে। কয়েক দিন মাত্র। এই কয়েক টা দিন না হয় প্রিয় মানুষদের সাথেই কাটানো যাক। ভোরের মাথায় চিরুনি করে দিচ্ছে রাদ। মাঝে মাঝে হালকা টান লাগছে তাঁতেই ব্যস্ত হয়ে পরছে ছেলেটা। মুখ টিপে হাসছে মেয়েটা। মিররে সেটা দেখতে পেয়ে রাদ বলল
_কি হলো এটা?

_কিছু না তো।

_মুখ টিপে হাসছো কেন? বেশি হাসা স্বাস্থ্য কর নয়।

_কে বলেছে হু?

_তোমার ডাক্তার সাহেব।

হেসে কুটি কুটি হয়ে যাচ্ছে ভোর। এতো টাই পাগলী যে হাতের ব্যথার কথা ভুলেই গেল। বিছানায় ঝাপটা দিতেই ডান হাতে প্রচন্ড ব্যথা অনুভব হলো। না চাইতেই ও মুখ দিয়ে আহ এর মতোন শব্দ বের হয়ে আসলো। ধীর স্থির চোখ থেকে কয়েক ফোঁটা পানি গড়িয়ে পরলো। বুকের ভেতর যেন কেউ ছিদ্র করে দিয়েছে মেয়েটার কষ্ট দেখে রাদের অনুভূতি টা ঠিক তেমনি।ব্যস্ত কন্ঠে রাদ বলল
_দেখি আবার কোথায় ব্যথা পেলে। কি যে করো তুমি।

_আমি ঠিক আছি।

_ঠিক নেই তুমি। শুধু পাকনামি করতে জানো। বি কেয়ারফুল ভোর। এমন করলে কেমন হবে বলো তো?

_কেমন হবে?

_আশ্চর্য মেয়ে তো তুমি! ম্যানহলে পরে যাচ্ছো আবার ভাঙা হাতে ড্রাবল ব্যথা পাচ্ছো। আর পা যে কতো বার মচকে গেছে তাঁর তো হিসেব ই নেই।

মেয়েটার হাত হালকা ভাবে নাড়াচাড়া করতে লাগলো রাদ। ভাগ্যিস তেমন কোনো ক্ষতি হয় নি।মুখ টা পাংশুটে করে রাদ বলল
_ম্যানহলে কি করে পরেছিলে?

_পা টা হঠাৎ ই ফসকে গেল। সব হয়েছে আপনার হাই হিলের জন্য।

_অভ্যেস এর জন্য পরতে বলেছিলাম। যাই হোক সু কিনে দিবো। যেভাবে শুকনো বনে ও পরে যাচ্ছো।

ছেলেটার মুখের হাসি দেখে তেলে বেগুনে জ্বলে উঠে ভোর। দাঁতে দাঁত চেপে বলল
_আমি শুকনো বনে পরে যাই?

_তা নয়তো কি?

অভিমান হলো মেয়েটির। নাক টানতে লাগলো। চোখে পানি নেই অথচ নাকে পানি এসে পরেছে। পাশ থেকে টিসু এগিয়ে দিলো রাদ। বলল
_ঠান্ডা লেগে গেছে। কান্না করিয়ো না কেমন? না হলে আরো অসুস্থ হবে।

_একশ বার কান্না করবো।

_জেদ করো না ভোর। তোমার অসুস্থতা পড়াশোনা তে কতো টা ক্ষতিগ্রস্ত করে দিলো বুঝতে পেরেছো?

_পরীক্ষার তো অনেক দিন বাকি ।

_এক সেকেন্ড সময় ও মূল্যবান। পরীক্ষার সময় পড়াশোনা করে খুব বেশি সফলতা পাবে না। তবে এটা ও সত্য যে পরীক্ষার আগে পড়া টুকু সব থেকে বেশি কাজে লাগে।

কথা টা বলেই স্থির নয়নে তাকালো রাদ। মাথা টা নিচু করে আছে ভোর। মেয়েটার পাশে বসলো রাদ। বলল
_মন খারাপ করলে?

_উহহু।

_আচ্ছা বলো তো কি করে ম্যানহল থেকে বের হলে?

_একটা ভাইয়া গাড়ি নিয়ে যাচ্ছিলো। অন্য ম্যানহলের ঢাকনা খোলা দেখে সেটা লাগাতে এসেছিলো। তখনি আমাকে দেখতে পায়। আর আমাকে বাঁচিয়ে নেয়।

_আচ্ছা। ছেলেটার নাম কি বলো তো?

_ইসস নাম তো জিজ্ঞাসা করতে মনে নেই।

ভোরের জ্বিভ কাঁটা দেখে আলতো হাসলো রাদ। মেয়েটা অদ্ভুত সুন্দর। এই সুন্দরে তুলনা হয় না। আসলে প্রতি টা মানুষের ভেতর ই ম্যাচিওরিটি আর বাচ্চা সুলভ আচারন লুকিয়ে থাকে। প্রয়োজন আর পরিস্থিতি ভেদে একেক টা আচারন ফুটে উঠে। তাই তো সৃষ্টির সেরা জীব মানুষ।

আশার সাথে কয়েক টা কথা হলো রাদের। প্রচন্ড সাহায্য করেছেন ভদ্র মহিলা। ওদের বিয়ে সম্পর্কিত কথা টা ওনি জানেন তবু ও কাউ কে কিছু বলেন নি। বরং নানান ভাবে সাহায্যে করে যাচ্ছেন। ভদ্র মহিলার প্রতি কৃতঙ্গতা প্রকাশ করলো রাদ। আশা বললেন
_বি নরমাল মাই বয়। ভাগ্য বড় বিচিত্র জিনিস। এর উপর কারো কথা চলে না। সৃষ্টিকর্তার উপর ভরসা রাখো। নিশ্চয়ই যেটা ভালো সেটাই হবে।

_থ্যাংকস ম্যাম। আপনি না থাকলে এতো টা দিন সুন্দর ভাবে পার হতো না।

_ভরসা রাখো রাদ। আমি আমার সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো। আর তোমার জন্য শুভকামনা। আমাদের দেশ কে আরো ভালো কিছু উপহার দিবে তুমি।

_ইনশাআল্লাহ। আমি চেষ্টা করবো।

আশার সহিত কথোপকথন শেষ করে হোস্টেল থেকে বেরিয়ে এলো রাদ। সেভেন ফ্লোর এর ব্যলকনি দিয়ে তাকিয়ে রইলো ভোর। মেয়েটা সেকেন্ড ফ্লোর এ থাকতো আগে। এখন কিছু কারনে সেভেন ফ্লোরে এসেছে। রাদ এর মুখ টা তেমন স্পষ্ট নয়। হঠাৎ ই অনুভব হলো এক নিদারুন যন্ত্রণা।এ ব্যথা নতুন নয়। এটা প্রায় ই হয়। রাদ চলে গেলে বুক চিরে বেরিয়ে আসে এই ব্যথা টা। বড্ড ভয় হয় ওর। মাথার উপরে থাকা ছায়া গুলো কে হারিয়ে ফেলার ভয়। গত দেড় বছর রাদ ওর জন্য যা করেছে তা ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না।চিরকৃতঙ্গ থাকবে এই মানুষটির উপর। যে নর্দমা থেকে তুলে নিয়ে একটা সুন্দর জীবন দেওয়ার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে।
.

_এখন আবারো বের হবে রাদ?

_হ্যাঁ মম।

_সারাদিন বাহিরে থেকে যে কি পাও তুমি।

_কয়েক টা দিন রয়েছি সবার সাথে না হয় আড্ডা হোক।

_আর কি বলি বলো? তা বন্ধুদের ইনভাইট করো একদিন। সবাই মিলে না হয় হৈ চৈ করবে।

ঠোঁট টা সামান্য প্রসারিত করলো রাদ। খাবার নাড়াচাড়া করতে করতে বলল
_প্রয়োজন নেই মম।

_মন মড়া হইয়ো না রাদ। তোমার ভালোর জন্য এই দূরত্ব।

_বুঝতে পেরেছি আমি।

ছেলেটার ঘন নিশ্বাসে চার পাশ ভরে উঠলো। দেয়াল গুলো ও যেন বলতে চাচ্ছে যেও না তুমি। এ জীবনে প্রাপ্তির বড়ো অভাব। অন্য দেশ তোমাকে প্রাপ্তি দিবে না। সমস্ত কথা কে সাইডে ফেলে ইফতিহারের কাছে চলে এলো রাদ। বাড়িতেই অফিস কক্ষ রেখেছেন ইফতিহার। রাদ কাজ না করাতে সমস্ত কিছু আবারো দেখা শোনা করছেন তিনি। দরজার বাইরে কয়েক মুহূর্ত পায়চারি করে রাদ বলল
_আসবো ড্যাড।

_আসো। একটু পরে কথা বলছি।কিছু কাজ সম্পূর্ন করে নেই।

_ওকে।

ইফতিহারের কাজ দেখে ব্যলকনিতে আসলো রাদ। বেশ জোড়ালো সমীরণ বয়ে চলেছে। অদ্ভুত তৃপ্তি রয়েছে এতে। নিজ দেশ ব্যতীত অন্য দেশ কতো টা আপন হবে ওর? এমন নয় যে বিদেশ যায় নি ওহ। বরং বহু বার বহু দেশে গিয়েছে ছেলেটা। তবে দীর্ঘ সময়ের জন্য নয়। সেই কারনেই মনের ভেতর খচখচ অনুভব হচ্ছে। এ ধরার সব থেকে আপন মাটি এই বাংলার মাটি। এই বাংলার মাটি ছেড়ে কোন সফলতা লাভ করবে ওহ?
_কি ভাবছো?

ইফতিহারের কন্ঠ পেয়ে পেছন ঘুরলো ওহ। রাদ মাথা টা নিচু করে কয়েক টা দীর্ঘশ্বাস লুকালো। সামান্য হাসি ফুঁটিয়ে বলল
_প্রচন্ড চাপে আছো তাই না ড্যাড?

_কিছু টা। তবে এর থেকে বেশি কাজ সামলানোর এক্সপেরিয়েন্স আছে আমার।

ক্ষনকালের জন্য বাবার মুখের পানে তাকিয়ে রইলো রাদ। কতো টা ধারালো ব্যক্তিত্ব ওনার। চশমা টা খুললেন ইফতিহার। ছেলের চোখের ভাষা যেন আজ পড়তে পারছেন ওনি। তাই বললেন
_আপন মানুষ পর হতে দেখেছি আমি। প্রচন্ড কষ্ট হয়েছিলো সেদিন। বহু কষ্টে এই স্থানে এসেছি। এর জন্য প্রবাসী হতে হয়েছে আমাকে। এই বলে এমন নয় যে নিজের দেশ কে ভালোবাসি না আমি। প্রচন্ড ভালোবাসি এই দেশ কে।তবে একটা কথা মনে রাখবে। কিছু পেতে হলে ক্ষনকালের জন্য নত স্বীকার করতে হয়। চতুর প্রানী হও রাদ। একটা হার যদি দশ টা সফলতা এনে দেয় তবে সে হার কি ভালো নয়?

_অবশ্যই ভালো।

_মাই ব্রেভ বেটা। আমাদের ছেড়ে থাকতে কষ্ট হবে তবে বিশ্বাস করো যখন সফলতা পাবে তখন সমস্ত কষ্ট দূর হয়ে যাবে।

ইফতিহার কে জড়িয়ে ধরলো রাদ। বুকের ভেতর শান্তির ঝড় নেমেছে। বাবা নামক এই মানুষ টি কতো টা ধারালো ব্যক্তিত্ব সম্পূর্ণ তা একটু হলে ও বুঝতে পারে ওহ।

গ্রুপ: Fatema’s story discussion
গল্প সংক্রান্ত সকল আপডেট দেওয়া হবে গ্রুপে।

বি : দ্র : ভুল ত্রুটি মাফ করবেন।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here