#চলো_রোদ্দুরে
#ফাতেমা_তুজ
#part_30
‘ বিচ্ছেদ! যাঁদের মধ্যে কোনো সম্পর্ক ই নেই তাঁদের মাঝে বিচ্ছেদ কি করে হয়? ‘
ছেলেটা আপন মনে এমন প্রশ্ন করে যাচ্ছে। ফেসবুক নামক সোশ্যাল মিডিয়া যেন আজ বিচ্ছেদের কারখানা। যেখানে প্রেম হয় দ্রুত, সাথে বিচ্ছেদ ও হয় দ্রুত। তবে একটা কথা বেশ ভাবাচ্ছে ওর সাথে তো ভোর এর মনের কোনো সম্পর্ক নেই। আছে কি?
উহু নেই। তবে ভোর এর সাথে ওর বিচ্ছেদ কি করে হয়। এটা তো সম্ভব নয়। আকাশ কুসুম কল্পনা কখনো বাস্তব হতে পারে।
ভাবনার মাঝে ডোর বেল বেজে উঠলো। ছেলেটা ডোর খুলে দেখতে পেল এক সুন্দরী স্প্যানিশ নারী। কোকো বলল
_হ্যালো ইফতিহার রাদ।
_হ্যালো কোকো। প্লিজ কাম।
_ইয়াহ।
রুমে প্রবেশ করলো কোকো। দেখতে তেইশ চব্বিশ মনে হলে ও মেয়েটির বয়স একত্রিশ বছর। যাঁর দরুন আনমনেই হাসলো রাদ। বিদেশিনী দের বয়স ধরা বড্ড নিষ্করুণ।কোকো জানালো সে রাদ এর সমস্ত দায়িত্বে রয়েছে। যে কোনো সমস্যা যেন ওকে জানানো হয়। কোকো কে কফির অফার করলো রাদ। কোকো স্পষ্ট স্প্যানিশ ভাষা তে বলল
_অন্য একদিন।
স্প্যানিশ ভাষা জানা নেই রাদের তাই ভ্রু কুঞ্চিত করে বলল
_স্যরি? আমি বুঝতে পারি নি।
_উফফ আম স্যরি। আসলে আমি ভুলে গিয়েছিলাম তুমি স্প্যানিশ ভাষা জানো না।
হেসে উঠলো রাদ। টুকটাক কিছু কথা হলো দুজনের। কোকো বয়সে ছয় বছরের বড় হলে ও ফ্রেন্ডলি। মনে হচ্ছে ওরা একই ক্লাসের স্টুডেন্ট।
কোকো চলে গেল। বিদীর্ণ মন নিয়ে ফোন টা হাতে নিলো রাদ। বেশ অনেক গুলো ঘন্টা পার হয়ে গেছে লন্ডনের মাটি তে। তবে কারো সাথেই কথা হয় নি। ইচ্ছাকৃত ভাবেই কথা বলে নি ওহ। কেন যেন অশান্ত মন টা শান্ত হচ্ছে না।
কনফারেন্স কলে যোগ হলো সাত জন। সকলের চোখে মুখে বিস্ময়। রাদ কে একের পর এক প্রশ্ন করে যাচ্ছে। ছেলে টা শুধুই হ্যাঁ না করছে। মন ভালো না থাকলে কিছু ভালো লাগে?
সুপ্তি বলল
_কি রে কথা বলিস না কেন?
_বলছি তো।
_আশ্চর্য কেমন কথা বলিস দেখতেই তো পাচ্ছি। ভুলে গেলি আমাদের?
হালকা হাসলো রাদ। চঞ্চল মন টা কে কখনোই দমাতে পারে না সুপ্তি। মাঝে মাঝে রাগ হয় রাদের। মেয়েটা এমন কেন?
_এই রাদ?
দ্বীপ এর কন্ঠস্বর শুনেই বলল রাদ
_পরে কথা হবে। এখন আমি রাখছি কেমন?
কথা গুলো শেষ হওয়ার ফুসরত পেল না তাঁর পূর্বেই ল্যাপটপ অফ করে দিলো রাদ। শ্বাস প্রশ্বাস প্রচন্ড ভার হয়ে আছে। এ আবহাওয়া যেন সহ্য হচ্ছে না ওর। ভেতর টা কেমন জ্বালা পোড়া করছে। এ জীবনে এমন ব্যথা কখনো অনুভব হয় নি। এ দেশে থাকা সম্ভব নয়। পারবে না থাকতে।
.
সমস্ত সোশ্যাল মিডিয়া থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়েছে ভোর। মনস্থির করেছে নিজেকে আইনজীবী হিসেবে গড়ে তোলার। পড়াশোনায় বেশ অনেক টা মনোযোগী হলো মেয়েটা। সামনে যে এইচ এস সি পরীক্ষা। সেই হিসেবে প্রত্যেক মুহুর্ত অতি গুরুত্বপূর্ণ।
রিসিপশন থেকে কল এসেছে কেউ একজন ওর সাথে দেখা করতে চায়। তাই নিজেকে ঠিক ঠাক করে নিচে এলো মেয়ে টা। রনিত কে দেখে আলতো হাসলো। কাছে এসে বলল
_কেমন আছেন ভাইয়া?
_ভালো। তুমি কেমন আছো?
_হ্যাঁ ঠিক ঠাক।
ভোরের গলা থেকে যেন কথা বের হয় না। রনিতের সাথে গার্ডেন এ আসলো। দীর্ঘশ্বাস উপনীত করে রনিত বলল
_সোশ্যাল মিডিয়া কখনো পড়াশোনায় ব্যাঘাত ঘটায় না। ব্যাঘাত ঘটায় আমাদের মন মস্তিষ্ক। সমস্ত কিছুর ব্যবহার তো আমাদের হাতে তাই না?
_আসলে ভাইয়া।
_সেসব বাদ দাও। সিম কার্ড টা ও খুলে রেখেছো? এই যে তুমি কি করছো না করছো এসব আমি জানবো কি করে? তাছাড়া রাদ
ঘন চোখের পাপড়ি গুলো কেমন নড়তে লাগলো। সামান্য পানির আভাস ও রয়েছে। উদ্বিগ্ন কন্ঠে ভোর বলল
_ডাক্তার সাহেব কি?
_তেমন কিছু নয়। ওহ চিন্তিত খুব, আমি নিশ্চয়ই রাত এক টা দুটো তে হোস্টলে হুটহাট চলে আসতে পারবো না? তাই মন মড়া করে থেকো না বোন।
রনিতের কথায় লজ্জা পেলো ভোর। রাদ হুটহাট চলে আসে এসব ও জানে রনিত?
ভোরের মাথায় হাত বুলিয়ে রনিত বলল
_নিয়মিত খবর নিবো তোমার। সিম কার্ড টা অন করো।
ফোন নিয়ে বিপাকে পরলো ভোর। রাদ কে কি কল করবে? রনিত তো নাম্বার দিয়ে গেল। কল করার জন্যই নিশ্চয়ই নাম্বার দিয়েছে? কেমন দোটানায় ভুগছে মেয়েটা। ভালো লাগছে না কিছুই। অবশেষে স্থির করলো কল করবেই। বিদেশী নাম্বার টা ডায়াল করলো তবে রিসিভ হলো না। দ্বিতীয় বার কল করে একবার রিং হতেই কল কেঁটে দিলো ওহ। ফোন সুইচ অফ করবে তখনি কল ব্যাক হলো। কেন যেন ফোন সুইচ অফ করতে পারলো না মেয়েটা। রিসিভ করে কানে গুঁজে রাখলো। কয়েক মুহুর্ত এভাবেই পার হয়ে গেল। কেউ ই কথা বলছে না। শুধু ঘন ঘন নিশ্বাসের শব্দ শোনা যাচ্ছে। মোলায়েম গলায় রাদ শুধালো
_কেমন আছো ভোর?
_ভালো।
_মন খারাপ?
_না।
_তো কি করছিলে?
_এই তো পড়াশোনা করছিলাম।
নীরবতা বিরাজ করছে। রাদ ভাঙা গলায় বলল
_আমাকে মিস করো?
_কিছু টা করি। তবে সব ঠিক ঠাক ভাবেই চলছে।
ফোঁস করে দম ফেললো রাদ। ভোর হাসি মাখা স্বরে বলল
_লন্ডন খুব সুন্দর তাই না? আপনার ভালো লাগার ই কথা। আমাকে নিয়ে চিন্তিত হবেন না। আমি ঠিক আছি। আমি বরং ভালোই আছি।
_হুম। আচ্ছা শোনো
_হ্যাঁ বলুন।
কয়েক টা শুকনো ঢোক গিললো রাদ।বলল
_ সত্যিই কোনো অসুবিধা হচ্ছে না?
_না। অসুবিধা হবে কেন? আমি তো আগের মতোই আছি।
ব্যথিত হলো রাদ। ভোর এর সাথে টুকটাক কথা বলে বুঝতে পারলো মেয়েটার তেমন কোনো অসুবিধা হচ্ছে না। কাঁধের ব্যাগ টা ভালো করে পরে নিলো। হাতে থাকা প্লেন এর টিকেট টা লন্ডনের এয়ারপোর্ট এই ছিঁড়ে ফেলে দিলো। ভেবেছিলো আজ ই দেশে ফিরে যাবে। কিন্তু সব কিছুই তো ঠিক রয়েছে। তাহলে ওহ কেন দেশে যাবে?
.
আজ এক সপ্তাহ হলো একি হসপিটালে জব করছে সুপ্তি আর নাহিদ। এর মাঝে হাজার বার ঝগড়া করেছে দুজনে।প্রতি টা কাজেই ঝগড়া। এমন কি অপারেশন থিয়েটারে গিয়ে ও ঝগড়া করেছে দুজনে। হসপিটালে আসা লোকজন হা হয়ে তাকিয়ে আছে। বোধহয় ডাক্তার দের তুই তুই করে ঝগড়া করতে কখনো দেখে নি তাঁরা। নাহিদ এর ধ্যান ফিরতেই নাহিদ বলল
_চুপ। এটা হসপিটাল, তোর বাবার টাকার হোটেল না।
_থাপ্পড় চিনিস।
_সুপ্তি বাড়াবাড়ি করবি না তুই।
_সামনে থেকে যাহ।
নাহিদের গাঁয়ে থাক্কা মেরে চলে গেল সুপ্তি। ঠায় দাঁড়িয়ে থেকে নাহিদ ওহ পিছু ছুটলো। ক্যান্টিনে এসে দুজনেই এক টেবিলে বসলো। রাগে গজগজ করতে করতে খাবার শেষ করলো দুজনে। হাই তুলে নাহিদ বলল
_বিল দিয়ে দে সুপ্তি।
_তোর টাকা নাই?
_না আমি গরিব মানুষ।
_আমি কি তোর পেছনে আমার সমস্ত বেতন খরচ করবো?
_হুহ করবি।
_পারবো না। আর তোর বিল তুই দিবি। এমন কি আমার টা ও দিয়ে দিবি।
_বয়ে গেছে আমার।
গাঁ ছাড়া ভাব নিয়ে বলল নাহিদ। দাঁতে দাঁত চেপে কয়েক মুহূর্ত দাঁড়িয়ে রইলো সুপ্তি। হুট করেই নাহিদের বুক পকেট থেকে কার্ড নিয়ে গেল। হতচকিয়ে উঠলো ছেলেটা। সুপ্তির থেকে কার্ড টা নেওয়ার জন্য পাগল প্রায় অবস্থা। পুরো ক্যান্টিনে ছুটতে লাগলো দুজনে। ট্রেরেস এ এসে মেয়েটার নাগাল পেল। তবে সুপ্তি কার্ড দিতে নারাজ। মুখের ভঙ্গিমা বদল ঘটেছে নাহিদের। বলল
_কার্ড টা ফেরত দে সুপ্তি।
_দিবো না।
_ভালোই ভালোই দিয়ে দে বলছি।
_বললাম তো ,দিবো না।
_সুপ্তি।
নাহিদের ধমক এতো টা জোরালো ছিলো যে সুপ্তির হাত থেকে কার্ড টা পরে গেল। সেটা তুলে নিয়ে নাহিদ দেখতে পেলো কাঁদছে সুপ্তি। পুরো যা তা অবস্থা। দেখেই বোঝা যাচ্ছে খুব ভয় পেয়েছে। নিজের ভুল বুঝতে পারে নাহিদ। তাই শান্ত সুরে বলল
_রাগ করিস না আমি তো
কথা শেষ করার পূর্বেই চলে গেল সুপ্তি। যাওয়ার আগে দুজনের বিল পরিশোধ করে দিলো। নাহিদের এমন ব্যবহারে প্রচন্ড কষ্ট পেয়েছে ওহ।
গল্পের আলোচনা করুন
Fatema’s story discussion
বি : দ্র : ভুল ত্রুটি মাফ করবেন।
চলবে