#চলো_রোদ্দুরে
#ফাতেমা_তুজ
#part_32
‘ আজ দুঃখ ভারাক্রান্ত মন নিয়ে এখানে উপস্থিত হয়েছি যে আমার বন্ধু মহলের দুই প্রান প্রিয় বন্ধু আমাকে দুঃখ দিয়ে প্রেমের সম্পর্কে লিপ্ত হয়েছেন।’
রাদের উপস্থাপনা দেখে হাসতে লাগলো সকলেই। সবার আগে ছুটে এলো সুপ্তি। রাদ কে জড়িয়ে ধরে বলল
_স্যরি স্যরি স্যরি। বিশ্বাস কর এই হারামি নাহিদ কে ভালোবাসি না আমি। শুধু মাত্র ওকে জ্বালানোর জন্য এই রিলেশন এর নাটক।
_হয়েছে। আপনি অনেক বলেছেন। দুদিন পর বিয়ে করে নিবেন তারপর ও আমরা জানবো না।
_রাদ।
মুখের ভঙ্গিমা পাল্টে গেলো সুপ্তির। মেয়েটার হাত ধরে রাদ বলল
_রাগ করার কথা আমার আর রাগ করছিস তুই?
_আমি এমনি।
আবারো হাসির রোল পরে গেল। নাহিদের মন টা ভালো নেই। সবার দিকে তাকিয়ে থেকে ও তেমন হাসি মজা করতে পাচ্ছে না। সুপ্তি এসে ওর মন ভালো করার চেষ্টা করলো। নাহিদ বলল
_আমি তোকে বিয়ে করতে চাই সুপ্তি।
_আমি ও তো চাই।
_কিন্তু আমার মম ড্যাড
নাহিদের মুখ টা কেমন হয়ে গেল। সুপ্তি বলল
_ওনারা আমাকে মেনে নিবেন না?
_সেটা নয়। ওনারা আসতে চায় না এ দেশে।
_কিন্তু নাহিদ তাহলে কি করে হবে?
দম ফেললো ছেলেটা। সুপ্তির অবিন্যস্ত চুল গুলো গুছিয়ে দিয়ে বলল
_আমি ওদের সাথে কথা বলে তোকে জানাবো।
মাথা ঝাঁকালো সুপ্তি। মলিন মুখে সবার সাথে আড্ডা দিতে লাগলো দুজনে। তবে ভেতর থেকে শান্তি অনুভব হলো না। এ যন্ত্রণার বুঝি শেষ নেই।
_রাদ।
_হ্যাঁ রনিত বল।
_ একটু এদিকে আয়।
সকলের থেকে রাদ কে আড়ালে নিয়ে গেল রনিত। ছেলেটা কিছু একটা বলতে চাচ্ছে তবে পারছে না। রাদ আশ্বস্ত করে বলল
_আরে বল।
_ভাই আঙ্কেল আন্টি তোকে নিয়ে মেয়ে দেখতে যাবে বলছে।
_তো সমস্যা কি?
_উফফ রাদ, তুই কি ভুলে গেলি?
_কি ভুলে গেলাম?
_আরে ভাই
_হেয়ালি না করে ভেঙে বল।
_ভোরের কি হবে?
শান্ত চোখে তাকালো রাদ। এই কয়েক বছরে ভোর কে ছোট বোনের স্থান দিয়েছে রনিত। তাই এতো চিন্তিত ছেলেটা। রাদের বাহু ঝাঁকিয়ে বলল
_তোর অনুভূতি কি?
_আমার কোনো অনুভূতি নেই। আমি চেষ্টা করেছি দায়িত্ব পালনের।
_আর বিয়ে টা?
শুকনো ঢোক গিললো ছেলেটা। এই মুহুর্তে কিছু বলার মতো ভাষা নেই ওর। তাই প্রসঙ্গ বদলে আবারো আড্ডা তে মজে গেল।
.
ভোর কে দেখতে এসেছে রনিত আর রাদ। দুজন কে এক সঙ্গে আশা করে নি মেয়েটা। রনিত বলল
_একি মুখ টা এমন কেন? আমরা আশা তে খুশি হও নি?
_খুশি হবো না কেন? অবশ্যই খুশি হয়েছি। তবে দুজন কে এক সাথে আশা করি নি।
মেয়েটির সরল উত্তর দেখে হাসলো রাদ। এক পলক তাকিয়ে চোখ ফিরিয়ে নিলো ভোর। রনিত বলল
_একটা সুসংবাদ রয়েছে। আজ আমরা রাদ এর জন্য পাত্রী দেখতে যাচ্ছি।
_ওহহ এখনি যাবেন?
ভোরের স্বাভাবিকতা দেখে মুখ টা ফুটো বেলুনের মতো চুপসে গেল রনিতের। এ কেমন মসিবতে পরলো ওহ? এরা দুজন কি সব পানি তে গুলে খেয়েছে?
বেশ কিছুক্ষণ কথা বলে রাদ আর রনিত বেরিয়ে এলো। রনিতের মাথা কেমন ভন ভন করছে। রনিত বলল
_তোরা কি এই বিয়ে টা ভেঙে দিতে চাচ্ছিস?
_আমাকে কেন বলছিস তুই?
_আজব তো কাকে বলবো?
_জানি না।
পকেটে হাত গুঁজে দিয়ে হাঁটা লাগালো রাদ। রনিতের কাহিল অবস্থা। ছেলেটা এক বাচ্চার বাপ হয়ে ও বুঝতে পারে না এই দুই মানব মানবীর অনুভূতি।
কতো গুলো মেয়ের ছবি পরে আছে রাদ এর কাবাডে। সব গুলোই রামিসা আর ইফতিহারের দেওয়া। ছেলেটা ব্যক্তিত্ব সবাই কেই মুগ্ধ করেছে। সেই কারনে এতো গুলো প্রস্তাব এসেছে।না দেখেই রিজেক্ট করে দিয়েছে রাদ। তাই আজ কোনো এক অপ্সরীর সাথে দেখা করাবে বলে মনস্থির করেছেন রামিসা। রাদ অবশ্য বারন করে নি। নাহিদ আর রনিত ওহ এসেছে। সবার মুখ ই গোমড়া। যেন কেউ ই রাজি নয় এই বিষয়ে।
_তাড়াতাড়ি তৈরি হয়ে নে রাদ।
_আমি তো তৈরিই।
_এই কস্টিউম পরেই যাবি?
রনিতের প্রশ্নে বিব্রত হলো ছেলেটা। শার্টের গাঁ থেকে সামান্য ঘামের গন্ধ নাকে এসে লাগছে। তাই শার্ট টা চেঞ্জ করে নিলো ওহ। নাহিদ গেমস খেলায় মত্ত হলো। রনিত এগিয়ে এসে শীতল কন্ঠে বলল
_একটু ভেবে দেখ।
_কি ভাববো?
_হেয়ালি ভালো লাগছে না রাদ।
_কোনো হেয়ালি নেই এতে। যে কোনো সম্পর্কের জন্য দুটো পজিটিভ মনের প্রয়োজন।
_আমি এখানে নেগেটিভ মন খুঁজে পেলাম না।
_এখন এসব বাদ দে রনিত।
চুপ হয়ে গেল রনিত। রাদের মন টা কেমন অস্থির চঞ্চল। ছেলেটা বরাবর ই আফসোস করে কোনো রকম মাদক কিংবা ধূম পান না করতে পারার জন্য। এমন নয় যে চেষ্টা করে নি। বহু দিন চেষ্টা করেছে। তবে কখনোই সম্ভব হয় নি। ভেতর থেকে নাকোচ চলে আসে।
_হয়েছে তোমাদের?
_জি আঙ্কেল অলমোস্ট।
_একি নাহিদ এখনো ফোন ইউজ করছো। রাখো এগুলো , আসো আমার সাথে অনেক কাজ করতে হবে।
হাসি মুখে সম্মতি প্রদান করলো নাহিদ। ইফতিহারের সাথে খোশগল্প হলো কয়েক মুহুর্ত।
‘ মেয়ে দেখতে যাওয়ার জন্য এতো তত্ত্ব নিয়ে আসে কেউ? ‘
_উফফ বেশি কথা বলো না তো।
রামিসার ধমকে সরে আসলেন ইফতিহার। তত্ত্ব দেখে মনে হচ্ছে পাত্রী দেখতে নয় পাত্রী কে তুলে আনার ব্যবস্থা চলছে। অবশ্য মেয়েটা আসলেই সুন্দরী। ইফতিহার নিজেও ছবি দেখেছেন। রামিসার কোনো এক কাজিনের মেয়ে। তিন গাড়ি করে তত্ত্ব পাঠিয়ে দিলেন রামিসা। ড্রয়িং রুমে এসে তাগাদা দিয়ে বললেন
_আরে আসো তোমরা। এমন ভঙ্গিমা করে আছো কেন রাদ? কিছু হয়েছে বেটা?
_আম ওকে মম।
_আচ্ছা দ্রুত আসো। রনিত, নাহিদ রাদ কে নিয়ে আসো তো বেটা।
_জি আন্টি।
রনিতের কোনো আগ্রহ নেই। তাই নাহিদ ই এগিয়ে গেল। রাদ এর পাশে এসে বলল
_কি রে চল।
_যাহ আসছি আমি।
_আন্টি কি বললো শুনলি না?
_একটু পরে যাবো নাহিদ।
_আশ্চর্য হচ্ছি আমি। আরে আয় না রে দোস্ত।
_নাহিদ একটু পর।
_না কোনো পরে নয়।
_ আচ্ছা, আসছি।
নাহিদের সাথে হাঁটা লাগালো রাদ। তখনি ছেলেটার ফোন বেজে উঠলো। সুপ্তি কল করেছে। দুপুর থেকে আট বার কল করেছে মেয়েটা। মাত্র তেরো দিনের রিলেশন ওদের, অথচ তেরো হাজার বার কল করে নিয়েছে সুপ্তি। এমন প্রেমিকা পাওয়া ভাগ্য নয় রাজ ভাগ্যের ব্যাপার।
.
আকাশের পানে তাকিয়ে থেকে চোখের পানি মুছলো ভোর। বুকের ভেতর কষ্ট টা যেন হুরমুরিয়ে বেড়ে চলেছে। ওর কোনো অনুভূতিই কাজ করছে না। শুধু মাত্র চোখ থেকে নোনা পানির শ্রোত নেমে যাচ্ছে। টুং টাং ম্যাসেজ এর শব্দে ঘোর কাঁটে মেয়েটার। মিসেস মেরিন ম্যাসেজ পাঠিয়েছেন।
‘ কাল সকাল সকাল আমরা সাত দিনের জন্য একটা ইনভেস্টিগেশন চালাবো। আমি অন্য কারো উপর ভরসা রাখতে পারছি না। বিষয় টা অতিব জরুরি। ‘
ক্রন্দনরত মুখ টা সিরিয়াস হয়ে উঠলো। একজন নিষ্ঠাবান ব্যক্তিত্ব কে রপ্ত করেছে মেয়েটা। উপলব্ধি করতে পারে নিজের জীবনের ঝামেলা গুলো কাজে প্রভাব পরলে কাজ সঠিক হয় না। লেপটপ নিয়ে বসে পরলো মেয়েটি। প্রচন্ড কাজ করতে হবে ওকে।
সকাল সকাল বের হতে যাচ্ছে ভোর। তাই রাদ দেখা করতে এসেছে। হাই তুলে ছেলেটি বলল
_কাক ভোর এখন, মাত্র সাড়ে চার টা বাজে।পশ্চিমা আকাশে এখনো ঘন কালো আঁধার। রোদ্দুর ছাড়া কোথায় যাবে তুমি?
_বিষয় টা খুব জরুরী ডাক্তার সাহেব। আমাকে যেতেই হবে। ম্যাম আমার উপর ভরসা করে আছেন। আর এতো গুলো মানুষ কে ন্যায় বিচার পাওয়ানোর দাবি তে কাজ করছি আমরা।
_কিন্তু এখন আঁধার ভোর।
মৃদু হাসলো মেয়েটি। হাতে থাকা ব্যাগ টি ফেলে রেখে সামান্য এগিয়ে এসে বলল
_আঁধার কে ভয় পাই না আমি। রোদ্দুর তো আপনিই দেখিয়েছেন তাই না?
নিদ্রাচ্ছন চোখে তাকিয়ে রইলো রাদ। মেয়ে টি বুঝি অনেক বড় হয়ে গেছে? বাচ্চা সেই সতেরো বছরের মেয়েটি আজ তেইশ বছরের যুবতী। কথায় রয়েছে ধারালো সুর। বোঝায় যায় কতো টা সচেতন মেয়েটি।
_ডাক্তার সাহেব।
_হ্যাঁ।
_আমায় যেতে হবে।
_আমি পৌছে দেই?
বারন করার ইচ্ছে থাকলে ও বারন করতে পারলো না ভোর। মন মস্তিষ্ক এক সাথে কাজ করছে না মেয়েটির। প্রচন্ড চিন্তিত হয়ে পরলো। এভাবে চলতে থাকলে বড় সড় ভুল হয়ে যাবে।
রাদ এর ভারী নিশ্বাসের শব্দে তাকালো মেয়েটি। ছেলেটার চোখ বার বার বুঁজে আসছে।
_গাড়ি থামান।
_কেন?
_থামান ই না।
মেয়েটির কথা মতো গাড়ি থামালো রাদ। গাড়ি থেকে নেমে এসে সিট বদল করলো ভোর। রাদ কে উদ্দেশ্যে করে বলল
_ আপনি বড্ড অলস হয়ে গেছেন আজকাল।
_বড্ড বেশি নয় কিছু টা।
_উচিত নয় এগুলো।
_কেন উচিত নয় মেয়ে। জানো না, অলসতা ভালো।
_আশ্চর্য!
_কিসের জন্য?
_জানি না।
ভোর আর কথা বাড়ালো না। স্মৃতির অলি তে গলি তে রাদ ছড়িয়ে আছে। পাঁচ বছর পূর্বে নিজ হাতে ড্রাইভিং শিখিয়েছিলো রাদ। কি সুন্দর সেসব অনুভূতি। চোখের পাতা গুলো নেতিয়ে পরতেই বা হাতে চোখ বুলালো। সিটে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে আছে রাদ। বারং বারং মন চাইছে এ সময় যেন পার না হয়।
গল্পের আলোচনা করুন গ্রুপ এ
Fatema’s story discussion
বি : দ্র : ভুল ত্রুটি মাফ করবেন।
চলবে