#চলো_রোদ্দুরে
#ফাতেমা_তুজ
#part_34
রাদ যেন ভবিষ্যত বানী করেছিলো আজ বৃষ্টি থামবে না। তাই সন্ধ্যা নামার উপক্রম হলে ও বৃষ্টি থামছে না একটু ও। মেয়েটা বড্ড বেশি শীত কাতুরে। শীর শীর হাওয়া তে কেমন জড়োসড়ো হয়ে যাচ্ছে। গাড়ির কাচে মুখ দিয়ে আছে ঠিক যেন পাঁচ বছরের কোনো আদুরে বাচ্চা। রাদ কিছু টা কাছে এলো। ভোরের কোনো পাত্তা নেই। মেয়েটা দিব্বি শাড়ি পরে পুতুল হয়ে আছে। রাদের ভীষন দুষ্টুমি করতে ইচ্ছে হলো। মেয়েটার কানের কাছে মুখ নিয়ে ফু দিলো। ভোর বলল
_কি করছেন কি?
_কি করলাম আমি?
_কিছু না।
ভোর আবারো ব্যস্ত হলো বৃষ্টি দেখায়। মেয়েটা এতো টা বুদ্ধি জ্ঞান হীন যে রাদ কি করবে বুঝে উঠে না। কয়েক মিনিট দাঁতে দাঁত চেপে বসে রইলো। ভোর এখনো হা হয়ে বৃষ্টি দেখছে। প্রকৃতি কতো সুন্দর। আকাশ থেকে পানির ফোঁটা এসে মাটি কে ছুঁইয়ে যাচ্ছে। আচ্ছা মাটির কি রকম অনুভূতি হয়?
_ডাক্তার সাহেব একটা কথা বলুন তো বৃষ্টি যখন মাটি কে স্পর্শ করে মাটির কেমন লাগে?
প্রশ্ন টা অদ্ভুত হলে ও রাদ এর কাছে দুষ্টু এক উত্তর আছে। মেয়েটার সন্নিকটে এলো রাদ। কিছু টা ঝুঁকে ফিসফিস করে বলল
_বৃষ্টি যখন মাটি কে স্পর্শ করে তখন পুরো পৃথিবী মাটি কে হিংসে করে।
_সত্যিই?
_হুমম। আর মাটি তখন রাজকীয়তা অনুভব করে। ঠিক তুমি আমাকে স্পর্শ করলে আমার যেমন লাগে।
বেশ আগ্রহ পেল ভোর। হাসি হাসি চোখে বলল
_আমি আপনাকে স্পর্শ করলে কেমন লাগে আপনার?
মেয়েটার দৃষ্টি দেখে রাদের ভেতর থেকে তৃপ্তি এলো বেশ। রাদ বলল
_তুমি যখন আমায় স্পর্শ করো তখন আমি এলোমেলো অনুভব করি। আমি আমার সত্তা কে ভুলে যাই। ভেতর টা দুমরে মুচরে যায়। মনে হয় এ স্পর্শ আমাকে শেষ করে দিবে। আবার এ স্পর্শ ছাড়া ও আমি বাঁচতে পারি না। এক নিদারুণ যন্ত্রণা। যাঁর কোনো নাম হয় না। হয় শুধুই অনুভূতি, আর অনুভূতি।
মেয়েটার মুখ হা হয়ে আছে। রাদের মাঝে লুকিয়ে আছে বিশালতা। রাদ শুধুই হাসলো। সিটে হেলান দিয়ে কয়েক মুহূর্ত চুপ করে রইলো। সন্ধ্যার আকাশে লাল আভা মোহ ছড়াচ্ছে। বৃষ্টির পরিমান টা কমে গেছে বেশ অনেক টা। হালকা বৃষ্টির ফোঁটা পরছে। তবে আকাশ গুমোট। মেয়েটা কে নিয়ে বাইরে এলো রাদ। ধীর পায়ে কাঁদা মাটি ডিঙিয়ে নদীর কাছে এলো। সূর্যের শেষ আলো টুকু নদীর পানি তে পরেছে কেমন। হালকা স্রোতে সেগুলো খেলা করছে অদ্ভুত ভাবে। ভোরের মনে পরে গেল পুরনো কিছু রঙিন স্মৃতি। চোখ দিয়ে সুখের জলধারা বইলো। পেছন থেকে ভোর কে জড়িয়ে ধরলো রাদ। কাঁধে নাক ঘষে বলল
_ভালো লাগছে?
_ভীষন।
_একটা কথা বলি?
_হুম।
_রাগ করবে না তো?
_রাগ করবো কেন?
_আচ্ছা তাহলে বলি।
_হুম।
_তোমাকে চকলেট এর মতো লাগছে। হোয়াইট চকলেট এর মতো একদম। দেখলেই বুকের ভেতর ঝড় উঠে যায়। আর খেয়ে ফেলতে ইচ্ছে হয়।
_ছিইই কি অশ্লীল আপনি।
_প্রতি টা স্বামী তাঁর বউ এর কাছে ভীষন অশ্লীল হয় জানো না?
_ছাড়ুন।
_ছাড়বো না।
_আচ্ছা ধরেই থাকুন।
_উহহু দুষ্টুমি করতে ইচ্ছে হয়।
কথা টা বলেই মেয়েটার গালে চুমু খেলো রাদ। রাদ কে অনুভব করতে চোখ বন্ধ করলো মেয়েটি। পুরুষালি স্পর্শ কখনোই পছন্দ নয় ওর। তবে রাদ কে এতো ভালো লাগে কেন?এ স্পর্শ হালাল তাই?
_এই কি ভাবছো বলো তো?
_উহহু কিছু না।
_আচ্ছা চলো ঐ কুটিরে যাবো আমরা।
_আচ্ছা।
কুটিরের কাছে এসে কিছু একটা মনে পরলো রাদের। ভোর কে নিয়ে আবার গাড়ির কাছে এলো। গাড়ি তে বসিয়ে দিয়ে বলল
_একটু পর এসে তোমাকে নিয়ে যাবো।
_আপনি কোথায় যাচ্ছেন?
উত্তর করলো না রাদ। ভোর কে ফেলে রেখেই চলে গেল। ফোঁস করে দম ফেললো ভোর। রাদ কে আজ অন্য রকম লাগছে। যেন রহস্য ময় কোনো মানব।
ছেলেটার জন্য অপেক্ষা করতে করতে ঘুমিয়ে পরলো ভোর।যখন ঘুম ভাঙলো তখন মনে হলো শূন্যে ভাসছে ওহ। ছুটোছুটি করতেই রাদ বলল
_নড়াচড়া করো না পরে যাবে।
_কিন্তু আপনি আমাকে কোলে নিয়েছেন কেন?
_লজ্জা পাচ্ছো কেন? প্রথম নিলাম নাকি।
_তাই বলে এভাবে।
_হুসস।
কুটিরের কাছে এসে রাদ বলল
_চোখ বন্ধ করো।
_কেন?
_বেশি কথা বলো না তো। যাহ বলছি তাই করো।
চোখ বন্ধ করলো ভোর। রাদ ওকে কুটিরে নিয়ে গেল। মেয়েটার সাথে রাদ এমন অদ্ভুত কান্ড করবে তা বুঝতে ও পারে নি ভোর। সবিনয়ে মেয়েটির ঠোঁটে চুমু খেল ছেলেটি। লজ্জা পেয়ে ভোর বলল
_কি করছেন কি।
_যা দেখছো আর অনুভব করছো।
_আপনি
_বউ কে কাছে নেওয়া অপরাধ বুঝি?
_তাই বলে এভাবে।
_হুহ এভাবেই। এখন সামনে তাকাও।
রাদের কথা মতো সামনে তাকালো ভোর। কুটিরের মাঝে কাঠ দিয়ে আগুন জ্বালানো হয়েছে। ভাঙা জানালা দিয়ে পশ্চিমা আকাশের ঘন কালো আঁধার দেখা যাচ্ছে।মাঝে মাঝে উঁকি দিচ্ছে চাঁদের রোদ্দুর। লাল আভা যেন বুকে বিঁধে যায়। হালকা করে মেঘ ডাকতেই শরীর কেঁপে উঠে মেয়েটির। ভোর কে নামিয়ে দেয় রাদ। লতা পাতা দিয়ে বেশ রোমাঞ্চকর কুটিরে পরিনত হয়েছে। কয়েক টা বুনো ফুল ও ফুটেছে আবার কয়েক টা নেতিয়ে আছে কচি পাতার বুকে। ধীর পায়ে এগিয়ে যায় মেয়েটা। লতা পাতার গাঁয়ে জমে থাকা বিন্দু বিন্দু পানি স্পর্শ করতেই ঠোঁটের কোনে স্মিত হাসি ফুঁটলো। মেয়েটার সজীবতা দেখে তৃপ্ত হয় রাদ।
এক ধ্যান তাকিয়ে থাকে বেশ কিছু টা সময়। বড্ড আবেগী মেয়েটা। একটু সুখ পেলেই কেমন আষ্ঠে পৃষ্ঠে ধরে।
মেঘের গর্জন ভয় পায় না ভোর। তাই খুব সহজেই ভাঙা জানালা দিয়ে হাত বাড়িয়ে বৃষ্টি কনা কে উপভোগ করছে। রাদের ভেতরে তীব্রতর ভাবে ঝড় নেমে আছে। অপেক্ষার রোদ্দুর যেন আজ অবসান হতে চলেছে। ধীরস্থির পায়ে মেয়েটির হাত স্পর্শ করলো রাদ। ঠান্ডা বাতাসের সাথে পুরুষালি স্পর্শ মেয়েটির আত্মা কে আটকে দিলো। রাদের বাহু তে আবদ্ধ হয়ে গেল ভোরের ছিম ছাম শরীর। কাঁপা কন্ঠে বলল
_প্লিজ কাছে আসবেন না।
_দূরে গেলে আর কখনোই ফিরবো না।
_ডাক্তার সাহেব!
_ভোর।
অদ্ভুত শোনালো রাদের কন্ঠ। এতো আকুলতা কেন এই কন্ঠে?
রাদ আবারো বলল
_শুনবে না এক অদ্ভুত আঁধার কাঁপানো রোদ্দুরের গল্প। বুকের ভেতর পুষে রাখা রোদ্দুরের গল্প। কি, শুনবে তো ভোর?
ছেলে টার কন্ঠে ব্যথার আভাস। যেন কতো শত ব্যথা ভাঙা অপেক্ষার পর আঁধার ছাপানো রোদ্দুর দেখেছে আজ। ভোরের ছলছল নয়নে নিজের উষ্ণ ঠোঁটের ভালোবাসা ছোঁয়ালো রাদ। চোখ দুটো কেমন স্থির চঞ্চল। মনে হচ্ছে এই বুঝি প্রান চলে যাবে। শুষ্ক ঠোঁটের মলিন হাসি যেন ভোর কে আকর্ষিত করে। রাদের গলা জড়িয়ে ধরে শক্ত করে আঁকড়ে ধরে। রাদ স্পর্শ করে না মেয়েটি কে। কারন ওর হাত কাঁপছে। অতি সুখে মানুষ পাগল হয়ে যায়। রাদের অবস্থা এখন তেমনি।সুখের জল মুছে রাদ বলল
‘ রাজকুমার জানতো না তেইশে এসে প্রেমে পরে যাবে। তা ও এক সাধারণের মাঝে লুকিয়ে থাকা অসাধারন কিশোরীর প্রেমে।মেডিকেল ক্যাম্পেইন এর নামে এক কিশোরী কে খুঁজতে গিয়েছিলো সে। গ্রামে সচেতনতা মূলক বার্তা প্রেরণ করতে গিয়ে পদ্ম বনে হারিয়ে যাওয়া এক কিশোরী কে দেখেছিলো রাজকুমার। এক গাছি পদ্ম নিয়ে খিলখিল করে হাসছিলো মেয়েটি। তখন তেমন কোনো অনুভূতি কাজ করে নি।তবে মেডিকেল ক্যাম্পেইন টা যখন পাশের গ্রামে হলো তখনি সেই কিশোরী , রাজকুমারের মনে সাড়া ফেলে দিলো। ক্যাম্পেইন এর উছিলায় রাজকুমার সেই কিশোরী কে দেখতে গিয়েছিলো। তাই তো বন্ধু দের সাথে ফিরে নি সে। তবে যখন জানতে পারলো কিরোশীর হলুদ আজ তখন বুকের ভেতর শূন্যতা অনুভব হয়েছিলো। মনে প্রানে চেয়েছিলো কিশোরীর বিয়ে টা না হোক। অদ্ভুত ভাবে বিয়ে টা ভেঙে যায়। আর গ্রামের পথে এসে এই কথা টাই শুনতে পেয়েছিলো রাজকুমার। তখনি আশার রোদ্দুর নিয়ে ছুটে আসে সড়কে কিশোরীর খুঁজে। তবে কিশোরীর ভুলের কারনে গাড়ির কাছে এসে ধাক্কা খায়। সেই দিন কিশোরী কে প্রথম স্পর্শ করেছিলো। বিশ্বাস করো রাজকুমার ডুবে গিয়েছিলো কিশোরী তে। তবে ভাগ্য যে অন্য খেলা সাজিয়েছে তা কল্পনা ও করতে পারে নি। বিয়ে করার ইচ্ছে ছিলো না। কারন তখন সেটা অনুচিত কার্য ছিলো। তবে রাগের মাথায় বিয়ে টা করে নেয়। প্রত্যয় নেয় সেই মেয়েটি কে গড়ে তুলবে। প্রতি টা মানুষের ভুল ধারনা ভেঙে দিবে। আর এভাবেই রাজকুমারের দিন যেতে থাকে। তখনো অনুভব হয় নি তীব্র ভালোবাসা। তবে মেয়েটা যখন হারিয়ে গেল ওর থেকে, তখন প্রচন্ড ব্যথা অনুভব হয়েছিলো। খরস্রোতা নদীর ন্যায় ভেসে গিয়েছিলো অন্য দুনিয়ায়। একটু একটু করে অনুভব করেছিলো ভালোবাসা। তবে এক পাক্ষিক ভালোবাসা কি পূর্নতা পায়?
অপেক্ষার রোদ্দুরে রাজকুমার একটু একটু করে মরে। তবে কখনো দায়িত্বের থেকে ভালোবাসা কে বড় করে দেখে নি। কারন রাজকুমার এমন কোনো ভুল করতে চায় নি যাতে করে কিশোরী কে হারিয়ে ফেলে সে। একটা সময় এসে খুব কষ্ট হতো। এক টা বৈধ্য সম্পর্ক লুকিয়ে রাখার কষ্ট, চোর ছ্যছরা অনুভব করাতো। তবে উপায় ছিলো না। মেয়েটির অনুভূতি সরাসরি জিজ্ঞাসা করে দূর্বল করার কোনো প্রয়োজন মনে হয় নি। সাড়ে চার বছর দূরে থেকে ও যেন রাজকুমার মৃত্যু কে কাছে পায় নি। তবে মরন যন্ত্রনা বুকের ভেতর সব সময় তাড়া করে বেড়াতো। একটা সময় পর অধৈর্য্য হয়ে পরলো। সিদ্ধান্ত নিলো এমন কিছু করার যাতে করে সেই মেয়েটি নিজের অনুভূতির জানান দেয়। তবে মেয়েটা এতো টা শক্ত মনের যে কিছু তেই ব্যক্ত করবে না তাঁর অনুভূতি। হঠাৎ করে যখন সমস্ত ভালোবাসা কে উজার করে দিয়ে অধিকার চাইলো তখন রাজকুমার অন্যত্র হারিয়ে গেল। আকুলতা ভরা দৃষ্টি তে প্রেমময় রোদ্দুর নিয়ে তৃষ্ণার্ত প্রেমিক তাঁর প্রেমিকা কে আজ বলতে চায় , আমাকে নিয়ে চলো তোমার ভালোবাসার রোদ্দুরে।’
**লেখিকা রাগ অভিমান কিছুই করতে পারবে না। সব অধিকার পাঠক দের।**
** এই সব কিছু আরো কয়েক পার্ট পরে আরেকটু রহস্য হয়ে সাজিয়ে আসতো। বাট আপনারা চাইলেন না সেটা। তাই এক প্রকার বাধ্য হলাম দিতে। যাই হোক গঠন মূলক মন্তব্য করবেন। সব রহস্য গল্পের শুরুতেই থাকে না শেষে ও হয়।কেউ কখনো কল্পনা করেছিলেন রাদের অনুভূতি?
আমি ভিন্নতা আনার জন্যই এই গল্পের প্লট সাজিয়েছি।ভালো না লাগলে অবশ্যই ইগনোর করবেন। **
বি : দ্র : ভুল ত্রুটি মাফ করবেন।
চলবে