#চলো_রোদ্দুরে
#ফাতেমা_তুজ
#part_37
‘ এসব কি ঠিক ভোর? ‘
‘ অবশ্যই ঠিক। ‘
মেয়েটার সাথে তর্ক করে লাভ নেই আর। সেই কারনে গাড়ি ড্রাইভিং এ মনোনিবেশ করলো রাদ।মেয়েটা যা তা ধরনের বটে। তাই তো হোস্টলে ফিরে যাবে বলে স্থির করেছে। রিসেপশন পার্টির পর ই নাকি শশুর বাড়ি তে অবস্থান করবে। এতো করে বোঝানোর পর ও মেয়েটা শুনলো না। ভারী রাগ হচ্ছে রাদ এর। পিচ্ছি একটা মেয়ে তাঁর পার্সোনালিটি দেখো।
বেশ অনেকক্ষণ ধরে ভোর একটা কথা ভাবছে। তবে বলার সাহস পাচ্ছে না। ওর সংকোচ উপলব্ধি হতেই রাদ বলল
_কিছু বলার থাকলে বলো। এভাবে ভয় পেও না প্লিজ।
_আসলে ডাক্তার সাহেব, আমি আসলে
মেয়েটার আমতা আমতা দেখে গাড়ি টা সাইট করলো রাদ। বাহু তে স্পর্শ করে বলল
_কি হয়েছে তোমার?
_আমি গ্রামে যেতে চাই।
_আচ্ছা নিয়ে যাবো। তবে শর্ত আছে।
_কি শর্ত?
_তুমি সেখানে রাত্রি যাপন করতে পারবে না। আমার সঙ্গেই ফিরে আসবে।
_কিন্তু
_কোনো কিন্তু নয়। আমি চাই না যেই ঘোর আঁধারে তোমাকে নিয়ে এসেছিলাম সেই আঁধারে আবার ডুবে যাও তুমি। তুমি হলে রোদ্দুর, তাই রোদ্দুরেই যাবে আর আঁধারে ফিরে আসবে ঠিক আগের মতো।
কথা শেষ করে মেয়েটির কপালে চুমু এঁকে দিলো রাদ। মৃদু হাসলো ভোর।
হোস্টলে বেশ চেঁচামেচির সৃষ্টি হয়েছে। আর তাঁর প্রধান কারন ভোর, রাদ। এখানে বেশ নাম ডাক মেয়েটার। দীর্ঘদিন অবস্থান করেছে কি না। যেহেতু একটা প্রপার সম্মান পাবে ভোর তাই সকলের মাঝে উত্তেজনা কাজ করছে। ভীর ঠেলে কোনো মতে ঘরে প্রবেশ করলো ওরা। বেডে বসে রাদ বলল
_এর জন্যই বলে মেয়ে রা ডেঞ্জারাস হয়।
_মোটে ও না।
_শতাধিক মেয়ের মাঝে আমি অবলা পুরুষ। দেখছিলে কি অবস্থা হয়েছিলো আমার?
রাদের কাছাকাছি এলো ভোর। ছেলেটার বুকে মাথা রেখে বলল
_শতাধিক মেয়েদের তো এমন সুন্দর ডাক্তার সাহেব নেই। আর আমার তো আছে। তাই একটু চাঁপ নিতেই হবে তাই না?
_হুম মিসেস। আম অলোয়েজ রেডি।
হালকা হাসলো ভোর। মেয়েটার চুল হাত গলিয়ে দিয়ে রাদ বলল
_জানো ভোর নাহিদের কাছে চির কৃতঙ্গ থাকবো আমি। ওর জন্য তোমাকে ফিরে পেয়েছি আমি। যদি ওহ না থাকতো সেদিন তাহলে আমি হয়তো তোমাকে হারিয়ে ফেলতাম।
_আপনি আবার মন খারাপ করছেন?
_মন খারাপ নয় রে পাগলি। এই খান টায় ব্যথা হয়। আমি যে হারাতে ভয় পাই।
বুকের বা পাশে হাত রেখে বললো রাদ। মেয়েটার চোখে মুখে তৃপ্তি। হঠাৎ করেই অবাঞ্ছিত কাজ করে ফেললো ভোর। ছেলেটার ঠোঁটে চুমু খেলো। লজ্জা পেয়ে উঠতে যেতেই খপ করে হাত ধরে নিলো রাদ। রহস্যময় হাসি দিয়ে বলল
_আজ আপনার মুক্তি নেই ম্যাডাম।
.
গুন গুন করে গান গাইছে নীলাশা। হাতে রেড ওয়াইন। পাশে পরে আছে সহস্রাধিক ছবি। প্রতি টি ছবি রাদের। রকিং চেয়ারে বসে আছেন কাইসার। ইতো মধ্যেই মেয়ের কানে অনেক গুলো কথা পৌছে গেছে। কি করবেন তিনি বুঝে উঠলেন নি।
আকস্মিক ভাবে হেসে উঠলো নীলাশা। চোখে জল, মুখে হাসি, ঠোঁটের কোনে তাচ্ছিল্য, নাকে রাগ, সব মিলিয়ে বোঝাই যাচ্ছে মানসিক ভাবে ঠিক কতো খানি ডিপ্রেসড। কাইসার কিছু বলার জন্য উদ্ধৃত হতেই নীলাশা বলে উঠলো
_মিনিস্টারের মেয়ে আমি। কি যেন বলেছিলে যা চাইবো তাই পাবো। কোথায় পেলাম আমি?
এগারো বছর ধরে যারে চেয়ে এসেছি সে তো আমার কাছে নেই। কোথায় তোমার লোক? কি করছিলো ওরা। কেনো আমি জানতে পারি নি আমার রাদ বিয়ে করে নিচ্ছে?
_দেখো মামুনি
_প্লিজ ড্যাড, আর কিছু বইলো না। তুমিই তো বলেছিলো রাদ দেশে আসলেই আমাদের বিয়ের কথা বলবে? প্রয়োজন পরলে নাকি ওদের পা ধরবে। এতো টাই নাকি ভালোবাসো আমাকে।
_নীলাশা মামুনি, পজিশন গাঢ় করার জন্য ই তো সময়ের অপেক্ষা করেছিলাম আমরা।
_কি হলো তোমার পজিশন দিয়ে? আমি তো হারিয়ে ফেললাম ওকে।
_আমি এনে দিবো রাদ কে। তুমি চিন্তা করো না।
নীলাশার মাথায় হাত বুলিয়ে চলে গেলেন তিনি। রাদের ছবি বুকে চেপে ধরে কাঁদতে লাগলো মেয়েটা। অস্ফুটন স্বরে বলল
_হারিয়ে ফেললাম তোমায়। শুধু মাত্র ড্যাড এর জন্য হারিয়ে ফেললাম রাদ। আমার ভালোবাসা জানানোর সময় টুকু হলো না। লোকে বলে আমি নাকি ভাগ্যবতী, আর আমি বলি অভাগী।
স্বামীর কথার উপর কখনো কথা বলেন নি রোজিনা। তবে আজ বেশ অনেক গুলো কথা শোনালেন।মেয়ের অবস্থা দেখে অবিরত কাঁদছেন তিনি। নাহিদ প্রচন্ড রেগে যাচ্ছে। রাগে ফোঁস ফোঁস করতে করতে বাসা থেকে বেরিয়ে পরলো। বহু দিন পূর্বে ওয়াইন পান করেছিলো ওহ। আজ গলা ডুবিয়ে ওয়াইন পান করবে। ভেতর টা জ্বলে যাচ্ছে। নিজের প্রতি রাগ হচ্ছে খুব। এতো দিন যাবত রাদ এর সাথে থেকে ও সঠিক খবর রাখতে পারে নি। বিক্ষিপ্ত মন ভেঙে কেঁদে উঠলো নাহিদ। কালো রাত্রী তে চিৎকার করে বলল
_আম স্যরি বনু, আম স্যরি। তোর দা ভাই ডাফার, কিচ্ছু করতে পারলো না।
নীলাশার মাথা টা বুকে চেপে রেখেছে নাহিদ। নীলাশার চোখের জল শুকিয়ে গেছে অনেক টাই। ভারী সুন্দর মেয়ে টি, যে কারো নজর কাড়তে সক্ষম। অথচ মেয়েটা ডুবে আছে রাদ নামক কারো মাঝে।
_আম স্যরি বনু।
_রাদ কে আমি হারিয়ে ফেলেছি দা ভাই?
_উহুহ, ড্যাড আর আমি তো বলেছি রাদ কে এনে দিবো। চিন্তা করিস না বনু।
_আমি মরে যাবো। সত্যিই মরে যাবো।
_চুপ আর একটা ও কথা নয়। এসব বাজে কথা যেন না শুনি। আমার ডলের চোখ থেকে যেন পানি না ঝরে।
_দা ভাই।
নাহিদ কে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো নীলাশা। প্রচন্ড কান্না চেপেছে ওর মনে। ভালোবাসায় এতো দহন কেন?
.
আজ রাতেই গ্রামের উদ্দেশ্য বের হবে বলে ঠিক করেছে রাদ। রাতে বের হলে কাল সকালের মধ্যে পৌছে যাবে। আবার সন্ধ্যায় রওনা দিলে রাতের মাঝেই ফিরে আসা যাবে। ভোরের জামা কাপড় গুছিয়ে দিচ্ছে রাদ।মেয়েটার মন খারাপ। আড়চোখে তাকিয়ে রাদ বলল
_মন খারাপ করো না।
_মন খারাপ করবো না কেন?
_ আহা আমার অভ্যেস আছে তো।
_তাই বলে এই রাত্রি বেলায় সাত আট ঘন্টা ড্রাইভ করবেন আপনি?
_হ্যাঁ রে সমস্যা নেই। আমি এর আগে ও ড্রাইভ করেছি।
_রাতের বেলা করেছেন কখনো?
_করেছি। কেন তোমাকে নিয়ে এসেছিলাম তো রাতেই? ক্লান্ত লাগলে কিছু টা জিরিয়ে নিবো।
_হয়েছে। আমি অর্ধেক ড্রাইভ করবো আর আপনি অর্ধেক। আর এটাই ফাইনাল, না হলে যাবো না আমি।
_আচ্ছা করিয়ো। এবার মুড অফ রেখো না প্লিজ।
_হুহ।
_একটু হাসো?
ঠোঁট দুটো কিছু টা প্রসারিত করলো ভোর।দুজনের জন্য দু সেট জামা কাপড় ব্যাগে নিলো রাদ।যদি ও এক টা দিনের ব্যাপার। তবে গোসল না করে থাকতে পারে না ছেলেটা।
শপিং মলের কাছে এসে গাড়ি থামালো রাদ। ভ্রু কুঞ্চিত করে ভোর বলল
_এখানে কেন?
_ প্রথম বার শশুর বাড়ি যাচ্ছি খালি হাতে যাবো?
_সবাই আমাকে মেনে নিবে ডাক্তার সাহেব?
_নিবে। অবশ্যই নিবে। তবে আমার কষ্ট টা জানো কোথায় একটি বার তাঁরা তোমায় খোঁজার চেষ্টা করলো না। এটা উচিত করে নি তাঁরা।
_হয়তো খুঁজেছে কিন্তু পায় নি।
_এই পৃথিবী টা খুব বড় হলে ও ইচ্ছা শক্তির কাছে খুব ছোট ভোর। আমাদের বিয়ে তে নাম ঠিকানা সব সঠিক দিয়েছি আমি। খোঁজার চেষ্টা করা টা খুব কি কঠিন ছিলো?
মৃদু হাসলো ভোর। চোখ থেকে যখন তখন পানি নেমে যাবে। মন টা কে স্থির করে বলল
_বিষয় টা তেমন নয়। আসলে সবাই পরিস্থিতির স্বাকীর। তাছাড়া আমি বার বার সবার কাছে ভুল প্রমানিত হয়েছে। হয়তো সবাই ঘৃনা করে আমায়।
_ভোর।
আকুল ভরা কন্ঠে কেঁপে উঠলো ভোর। মেয়েটাকে জাপটে ধরে রাদ। চোখ বন্ধ করে বলে
_তুমি ভুল নও , তুমি সঠিক। আমার ভোর পরিত্র, সব থেকে বেশি পবিত্র।
**নাহিদ সম্পর্কে অনেকের মন্তব্য ই সঠিক ছিলো।**
পরবর্তী গল্প #অভিমানী_সে
বি : দ্র : ভুল ত্রুটি মাফ করবেন।
চলবে