গোধূলীর_রঙিন_ছোঁয়া পর্ব_১৯

গোধূলীর_রঙিন_ছোঁয়া পর্ব_১৯
#লেখায়_ফারহানা_ছবি

.
.
🦋

” ঠিক আছে JM আপনি যে সির্ধান্ত নিবেন আমরা ততাতেই সহমত ৷ আপনি শুধু আমাদের বাঁচান৷

” আপনাদের তো বাঁচাতে হবে আমাকে নাহলে যে আমার বিজনেস ডুবে যাবে৷” মনে মনে কথা গুলো বলে JM মিটিং শেষ করে ৷ নিজের কেভিনে চলে যায়৷

___________

সাজিত আজ অফিসের কাজ দ্রুত শেষ করে বাড়িতে ফিরে আসে৷ স্মরণ বান্দরবান থেকে ফিরবার পর থেকে সাজিত প্রিয়ার সাথে নম্র ভাবে কথা বলে৷ প্রিয়া প্রথমে সাজিতের এতো ভালো ব্যবহার এর কারণ বুঝতে না পারলেও সেদিন তার শাশুড়ি মায়ের কথায় বুঝতে পারলো সাজিত মিহু দু’জনে স্মরণকে বাঘের মতো ভয় পায় ছোট বেলা থেকে কিন্তু কেন এটা সাহারা বেগম জানে না৷ এটা নয় যে স্মরণ ওদের কে মারধর করতো ৷ স্মরণ কখনই ওদের গায়ে হাত দিতো না তবুও স্মরণ কে প্রচন্ড ভয় পায়৷ প্রিয়া এখন সে সুযোগ টাই কাজে লাগায়৷ সাজিত কে নিজের আঙুলে ইশারায় নাচায় সাজিত কিছু বলতে চাইলে প্রিয়া স্মরণ কে সবটা বলে দেওয়ার ভয় দেখায় যে সাজিত তাকে মারধর করে ৷ সাজিত স্মরণ এর ভয়ে প্রিয়ার সব কথা শুনে চলে৷ প্রিয়া নিজের মতো করে সংসার গুছিয়ে নিয়েছে তার পাশাপাশি পড়াশুনা শুরু করে৷

মিহু এখনো সুযোগ খুজছে প্রিয়াকে নাস্তানাবুদ করার কিন্তু আফসোস কোন না কোন ভাবে সাহারা বেগম প্রিয়াকে বাচিঁয়ে দেয়৷ কিন্তু শেষ বার প্রিয়াকে সিঁড়ি থেকে ফেলে দেওয়ার জন্য সিঁড়িতে তৈল ফেলে দেয় ৷ কিন্তু ভাগ্য চক্রে মিহু ভুল করে তৈলের উপর পা দিতে পা পিচলে নিচে গড়িয়ে পড়ে৷ প্রিয়া মিহুকে ধরতে এসে দেখে সিঁড়িতে তৈল ফেলা ৷ প্রিয়া বুঝতে পারে এই তৈল ফেলা হয়েছিলো তার জন্য কিন্তু মিহু যে নিজের গর্তে নিজে পড়লো এটা প্রিয়া ভালো করে বুঝতে পারছে৷ সাহারা বেগম তার স্বামীকে ফোন করে মিহুর সিড়িঁ দিয়ে পড়ে যাওয়ার ঘটনা জানাতে তিনি হন্তদন্ত হয়ে দ্রুত অফিস থেকে ফিরে আসে৷

__________

শাওয়ার নিয়ে ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে দেখে বেডের উপর আকাশি রঙের জামদানি শাড়ি ৷ রুমের কোথাও স্মরণ কে খুজে না পেয়ে প্রাণো শাড়িটা নিয়ে দ্রুত পড়তে লাগলো৷ প্রাণো ভিজে চুল গুলো খোপা করে শাড়ির কুচি ঠিক করতে করতে ট্যারেসের দিকে চোখ পড়তে প্রাণো চমকে ওঠে৷ মিনি সুইমিংপুল থেকে উঠে আসছে ৷ ফর্সা শরীরে বিন্দু বিন্দু পানি গড়িয়ে পড়ছে ৷ ডুবো ডুবো সূর্যের আলো স্মরণের শরীরে পড়তে পানির বিন্দু গুলো চিকচিক করছে৷ স্মরণ তোয়ালে দিয়ে চুল মুছতে মুছতে রুমে ঢুকে প্রাণোর দিকে তাকাতে স্মরণ এর চোখ দুটো আটকে যায়৷ আদখোলা চুলের খোপা লেপ্টে যাওয়া চোখের কাজল গোলাপি পাপড়ির মতো ঠোঁট জোড়া থরথর করে কাঁপছে৷ স্মরণ প্রাণোর দিকে এগিয়ে প্রাণোর উম্মক্ত কোমর জড়িয়ে ধরে ঠোঁটের ভাজে ঠোঁট জোড়া ডুবিয়ে দিলো৷ কিছুক্ষণ পর স্মরণ প্রাণোর ঠোঁট জোড়া ছেড়ে আরো গভির ভাবে স্পর্শ করতে লাগলো৷ স্মরণে প্রত্যেকটা ছোঁয়ায় প্রাণো শিউরে উঠছে ৷ হঠাৎ প্রাণোর দেওয়াল ঘড়ির দিকে চোখ পড়তে স্মরণ কে থামিয়ে দিয়ে বলে উঠলো ,” আমাকে এখন বাড়ি ফিরতে হবে স্মরণ৷” বাড়ি ফিরতে হবে কথা টা শুনে স্মরণ থমকে যায়৷

” বাড়ি ফিরবে মানে? তুমি বাড়ি ফিরবে তবে আমাদের বাড়িতে গট ইট?”

” ছেলে মানুষি করো না স্মরণ ৷ আমাকে আমার বাড়িতে ফিরতে হবে ৷ আর একটা কথা আমাদের বিয়ের কথা এখনি পাবলিক করার প্রয়োজন নেই ৷ মানে তোমার বাড়িতে কাউকে জানাবে না৷”

“কিন্তু কেন প্রাণ ? আমাদের বিয়ের কথা বাড়িতে কেন জানাবো না?”

” তুমি বুঝতে পারছো না স্মরণ আমি এখুনি কাউকে আমাদের বিয়ের কথা জানাতে বারণ করছি কারণ আমি চাই না আমার বাবা মা আমার বিয়ের কথা জেনে কষ্ট পাক ৷ আমি চাই তাদের মতামত নিয়ে বিয়ে করতে ৷৷এমনি তে একবার বিয়ে থেকে পালিয়ে মা বাবা কে কষ্ট দিয়েছি আর কষ্ট দিতে চাই না৷”

” ওকে সুইটহার্ট তুমি যা চাইবে তাই হবে৷”

” ওকে বাট তুমি এতো তাড়াতাড়ি শাড়ি এরেন্জ করলে কি করে?”

” ইট’স ম্যাজিক সুইটহার্ট ”

” হু এখন দ্রুত চেন্জ করে খাবারের ওডার্র দেও তো আমার ভিষণ খিদে পেয়েছে৷”

স্মরণ ভেজা তোয়ালে ফেলে প্রাণোর কোমর দুহাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে বলে, ” হু আমারও না ভিষণ খিদে পেয়ে প্রাণ৷ ” কথাটা বলতে বলতে প্রাণোর ঠোঁটের দিকে এগোতে প্রাণো হাত দিয়ে স্মরণের মুখ চেপে ধরে বলে,” অনেক হয়েছে এখন আর না আমি দ্বিতীয়বার শাওয়ার নিতে পারবো না৷ দ্রুত চেন্জ করে এসো আমি ফোন করে খাবারের ওডার্র দিচ্ছি৷”

স্মরণ মুখ গোমড়া করে চেন্জ করার জন্য চলে গেল৷ প্রাণো ফোন করে খাবারের অর্ডার দিয়ে দিলো পনেরো মিনিটের মাথায় দরজায় নক হতে প্রাণো দরজা খুলে দেয়৷ একজন স্টাফ খাবার গুলো টেবিলের উপর সাজিয়ে রেখে চলে যায়৷ স্মরণ চেন্জ করে বের হয়ে নিজের হাতে প্রাণোকে খাবার খাইয়ে দিলো ৷ দুজনের খাওয়া শেষ হতে প্রাণো বলতে লাগলো,” স্মরণ তোমাকে আমার কিছু বলার আছে৷ ”

” বলো প্রাণ কি বলতে চাও?”

” আচ্ছা স্মরণ তুমি যদি কখনো জানতে পারো তুমি আমাকে যেমন টা ভাবো আমি তেমন টা নই৷ তখন কি করবে?”

” তোমাকে যেমন টা ভাবি তুমি যদি তেমন টা না হও তাতে আমার বিশেষ কোন অসুবিধা নেই কারণ আমি আমার প্রাণ কে সব রকম অবস্থায় ভালোবাসি ৷ ”

” ভেবে বলছো তো?”

” একদম ”

” আচ্ছা ধরো তোমার কাছের খুব প্রিয় একজন ব্যক্তি তোমাকে ছোট বেলা থেকে ঠকিয়ে যাচ্ছে ৷ ইভেন তোমার সব থেকে প্রিয় জিনিস টা কেড়ে নিয়ে তোমায় নিশ্ব করে দিয়েছে ৷ আর তোমার সামনে ভালো মানুষির মুখোশ পড়ে আছে ৷ তুমি তখন তাকে কি করবে ? ”

” আমি তাকে কখনো ক্ষমা করবো না প্রাণ ৷ সে যদি সত্যি আমাকে ঠকিয়ে থাকে আমার সব চেয়ে প্রিয় জিনিস টা কেড়ে নিয়ে থাকে তাহলে তাকে আমি নিজ হাতে শাস্তি দিবো৷ এই স্মরণ কখনো তাকে ক্ষমা করে না যে তার প্রিয় জিনিস টা কেড়ে নিতে চায়৷”

প্রাণো স্মরণের উওর শুনে রহস্যময় হাসি দিয়ে বললো, ” স্মরণ এখন আমাকে যেতে হবে৷”

” আমি তোমাকে বাড়িতে ড্রপ করে দিচ্ছি৷”

” না স্মরণ আমি একাই যেতে পারবো৷”

” প্রাণ আমি তোমার অনুমতি নিচ্ছি না তোমাকে আমার ডিসিশন জানিয়েছি ৷ সো চুপচাপ আমার সাথে এসো আর নো মোর আর্গুমেন্ট ডিয়ার”

স্মরণের গম্ভির কন্ঠে কথা গুলো শুনে চুপ হয়ে গেল৷ প্রাণো চেয়েছিলো এখান থেকে কমিশনার এর সাথে দেখা করতে যাবে কিন্তু তা হলো না৷ স্মরণ রেডি হতে হতে প্রাণো হেয়ার ড্রাইয়ার দিয়ে দ্রুত চুল গুলো শুকিয়ে ব্রাশ করে নিলো৷তারপর ফোন পার্স নিয়ে স্মরণের পিছু পিছু যেতে লাগলো৷

গাড়িতে উঠে বসতে প্রাণো খেয়াল করে তার বন্দুক টা সে গাড়িতেই ফেলে গিয়েছিলো৷ স্মরণ ড্রাইভিং সিটে বসতে বসতে প্রাণোকে প্রশ্ন করে , ” বন্দুক কোথায় পেলে প্রাণ?”

” আমার এক বন্ধু পুলিশ অফিসার তার কাছ থেকে নিয়েছি কাল ফেরত দিয়ে দিবো৷”

” গুড আর কখনো বন্দুক হাত নিবে না৷”

” কেন? আমার তো বেশ ভালো লাগে বন্দুক চালাতে ৷ ” প্রাণো বন্দুক টা স্মরণের দিকে তাক করে বলে উঠলো ,” যাস্ট একটা ট্রিগার টিপবো আর একটা বুলেট যথেষ্ট তোমার প্রাণ পাখি উড়িয়ে দিতে তাই না স্মরণ?”

প্রাণোর কথার মাঝে স্মরণ হুট করে প্রাণোর হাত থেকে বন্দুক নিজের হাতে নিয়ে বলে, ” বন্দুক চালাতে পারলে হয়না প্রাণ ৷ নিশানা যদি ঠিক না থাকে তাহলে নিজের শিকার কে কখনোই শিকার করতে পারবে না৷”

প্রাণো স্মরণের কথা শুনে কিটকিটিয়ে হেসে ওঠে৷

” স্মরণ দ্রুত চলো আমাকে ফিরতে হবে আর বন্দুক কোন খেলনা নয় যে তুমি ওভাবে ধরবে ৷ আর নিশানার কথা বলছো ? আমার নিশানা কখনো মিস হয়না ৷ ”

” তুমি বন্দুক চালাতে পারো?”

” না বন্দুক চালাতে পারি না কিন্তু নিশানা করতে পারি ৷” বলে রহস্যময় হাসি দিলো প্রাণো৷

স্মরণ বন্দুক প্রাণোর হাতে ফিরিয়ে দিয়ে গাড়ি স্টার্ট দিলো৷

__________

” আর ইউ সিরিয়াস সিমি তুই স্মরণ প্রাণোকে আলাদা করতে চাইছিস না?” ( শান)

” দেখ শান যে মানুষ টা কোন ভুল করেই নি ৷ যার কোন দোষ নেই তাকে আমি অযথা শাস্তি পেতে দিয়ে পারি না ৷ তাই তুই প্রাণোর পিছু নেওয়া বন্ধ কর৷”

” অসম্ভব সিমি আমার পক্ষে সেটা করা অসম্ভব ৷”

” কিন্তু কেন শান?”

” কারণ আমি প্রাণোকে ভালোবেসে ফেলেছি আর তার চেয়েও বড় কথা আমি স্মরণকে আগেই চ্যালেন্জ করেছি ওর ভালোবাসার মানুষটাকে আমি আমার বেডে নিবো ৷ আমি হারতে পারবো না স্মরণের কাছে হোক সে তো ভাই তবুও আমার পক্ষে পিছু হাটা সম্ভব নয়৷ ”

” শান তুই ভুল করছিস৷ আর তুই কখনো স্মরণ আর প্রাণোকে আলাদা করতে পারবি না কারণ ওরা এক হয়ে গেছে৷”

” ম,,মানে?”

” আজ ওরা কাজী অফিসে গিয়ে বিয়ে করেছে তারপর হানিমুন সুইটে সময় কাটিয়ে কিছুক্ষণ আগে স্মরণ প্রাণোকে বাড়িতে পৌছে দিয়েছে৷”

সিমির কথা শেষ হতে শান বসে পড়ে ৷ রাগে চোখ মুখ লাল হয়ে গেছে ৷ সিমি বুঝতে পারছে শান এখন প্রচন্ড রেগে আছে ৷ শান কখনো হারতে শেখেনি কিন্তু আজ তাকে হারতে হলো তাও স্মরণের কাছে , এটা মেনে নিতে পারছে না শান৷

“শান প্লিজ দোস্ত সবটা ভুলে যা , আমি জানি তুই হারতে পছন্দ করিস না কিন্তু যেখানে মানুষ গুলোর কোন ভুল বা অপরাধ নেই সেখানে চ্যালেন্জ অযৌক্তিক নয় কি?”

” সিমি আমাকে একটু একা ছেড়ে দেয়৷”

” কিন্তু…. ”

” প্লিজ সিমি”

সিমি আর কিছু বললো না রুম থেকে বেড়িয়ে গিয়ে তার বাবার রুমের সামনে গিয়ে নক করে৷

” ড্যাড আসবো?”

” এসো মামুনি”

” ড্যাড আমি স্বরণের সাথে দেখা করতে চাই৷”

” কিন্তু কেন মামুনি?”

” প্রয়োজন আছে ড্যাড , তুমি যেভাবে পারো স্মরণের সাথে আমার মিট করানোর ব্যবস্থা করো৷”

” ঠিক আছে আমি দেখছি কি করা যায়৷ ”

” ড্যাড আমাকে যে স্মরণকে সর্তক করে দিতে হবে৷ আজ শান এর যে রুপ দেখলাম আমার মনে হয় না শান তার হার মেনে নিবে! বন্ধু হয়ে আমাকে সাহায্য করতে এসে নিজেকে যে বিপদে জড়িয়ে ফেলছে শান ৷ আমি ওর বেস্টফ্রেন্ড হয়ে কি করে মানবো ৷ ওকে বাঁচাতে হবে৷ আর প্রাণো যদি জানতে পারে শান তার আর স্মরণের ক্ষতি করতে চায় তাহলে শানকে প্রাণো ছাড়বে না৷ ” মনে মনে কথা গুলো বলে রুম থেকে বেড়িয়ে গেল সিমি৷

” আমি এই শাহরিয়া শান কখনো হারতে শেখেনি ৷ সেখানে স্মরণ আমাকে হারিয়ে দিলো? এই হার আমি মানি না ৷ প্রাণো শুধু আমার শুধু আমার ৷ প্রাণো কে আমি নিজের করে নিবোই এতে যদি স্মরণকে আমার রাস্তা থেকে সরিয়ে দিতে হয় তাহলে আমি তাই দিবো৷” কথা গুলো বলে কোমর থেকে বন্দুক বের করে লোড দিয়ে নিলো শান…..
.
.
.
#চলবে………..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here