দ্বিতীয়_সূচনা পর্ব-৯

0
1963

#দ্বিতীয়_সূচনা
#পর্ব_৯
লেখা – আফরোজা আক্তার
(কোনোক্রমেই কপি করা যাবে না)

মুরব্বি টাইপ কিছু মানুষের মাঝে বসে থাকতে অদ্ভুত লাগছে ফারহানের। এমন পরিস্থিতিতে কখনও পড়েনি সে। বন্দনাকে নিয়ে নিজে নিজেই সব করেছিল বলেই হয়তো এইসব অদ্ভুত আর নতুন লাগছে তার কাছে।
খাইরুল সাহেব ফারহানকে খুঁতিয়ে-খুঁতিয়ে দেখছে। যিনি প্রস্তাব দিয়েছিলেন তিনি বলেছিলেন ছেলের বয়স নাকি কিছুটা বেশি। কিন্তু তার চোখে তেমন কিছুই ধরা পড়ছে না। তবে ভাগনি অয়নন্দিতার চেয়ে যে বয়সে বড়ো তা বোঝা যায়। সেটা সমস্যা না, পুরুষের বয়স থাকা ভালো। তিনি ফারহানের সঙ্গে কথা বলছেন। ফারহানও বেশ ঠিকঠাক ভাবেই কথা বলছে। মনে থাকা রাগ অভিমান এক পাশে রেখেই কথা বলছে। কারণ তার কাছে খাইরুল সাহেব লোকটাকে ভালো লাগছে। দেখেই বোঝা যায়, একটু বেশিই সহজ সরল। অন্যদিকে, হাসান বেশ ফ্রী হয়েই কথা বলছে ফারহানের সঙ্গে। কথা বলার এক পর্যায়ে হাসান বলে,
‘অয়নন্দিতা আমার ফুফাতো বোন হলেও আমাদের কাছে সে আমাদের ঘরের মেয়ে। কখনও ভেদাভেদ করিনি যে অয়নি আমার নিজের বোন নয়৷’
অয়নন্দিতা নামটা শুনেই ফারহান চমকে যায়। ভাবছে, এ কোন অয়নন্দিতা! সে যেই অয়নন্দিতাকে চেনে সে নয়তো। তার ভাবনার মাঝেই খাইরুল সাহেব বললেন,
‘মা-বাবা হারা সন্তানের যে কত কষ্ট তা আমি আমার ভাগনিকে দেখলে বুঝি। তাই তো তার জন্য আমি সব সময় ভালো চিন্তা করি। যাতে ভাগনি কখনও বলতে না পারে আমার বাবা-মা নেই বলে মামা আমার সঙ্গে এমন করেছে। আমার এই ভাগনিটা ভীষণ চাপা স্বভাবের। বিশেষ করে ওর বাবা-মা মারা যাওয়ার পর থেকে আরও চুপচাপ হয়ে গেছে। ওকে কেটে ফেলে দিলেও টু-শব্দ বের করবে না মুখ থেকে। তার মন থেকে চাওয়া-পাওয়া মনে হয় চিরতরে হারিয়ে গেছে। নিজের জন্য না আছে কোনো চাহিদা না আছে কোনো আবদার। আমার বোনটা চলে তো গেছে যাওয়ার সময় মেয়ের সব হাসি আনন্দ নিয়ে গেছে।’
রমজান শেখ এবং রওশন বেগম আফসোস করছেন। ফারাশ আর সাজিরও খারাপ লাগছে। এই জগতে অনেকেই আছে যাদের কষ্টের শেষ নেই তাদের মধ্যে অয়নন্দিতা একজন। এটাই সবার মনে হচ্ছে।
এদিকে ফারহানের মাথায় ঘুরছে ব্যাপারটা। শরীফকে ফোন দিতে হবে।
‘এক্সকিউজ মি, আমি কি পাঁচ মিনিটের জন্য একটু উঠতে পারি?’
ফারহানের প্রশ্নে খাইরুল সাহেব এবং হাসান সহ সবাই মত দেন। সবার অনুমতি নিয়েই ফারহান সেখান থেকে উঠে যায়। একটু দূরে এসে শরীফকে ফোন দেয় ফারহান।
কয়েকবার ফোন বাজার পর রিসিভ হয়।
‘হ্যালো ফারহান, কী অবস্থা?’
‘অবস্থা পরে। আগে একটা প্রশ্নের উত্তর দে তো।’
‘কী প্রশ্ন?’
‘তোর ওই স্টুডেন্টটা, অয়নন্দিতা। ওর কি মা-বাবা মৃত?’
‘হ্যাঁ। প্রথমে বাবা মারা গেছে আর তার চল্লিশ দিনের মাথায় মা। অনেল বড়ো ধাক্কা খেয়েছিল মেয়েটা। সেই থেকে যে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছে আর কখনও মেলে ধরতে দেখিনি।’
ফারহান আর কিছু বলেনি। ফোনের লাইনটা কেটে দেয়। বাম হাত দিয়ে নিজেত মুখটা স্পর্শ করে সে। চোখ জোড়া মুছে নেয়। এরপর হালকা একটা নিঃশ্বাস ফেলে সবার সামনে গিয়ে দাঁড়ায়।

মেহমান চলে গেছে। সামনের মাসের দশ তারিখ বিয়ের তারিখ ফাইনাল করে গেছেন তারা। সোফায় বসে ল্যাপটপে কাজ করছে ফারহান। ফারাশ আর সাজিও পাশে বসে আছে। তারা অয়নন্দিতার কথা বলছে। সাজি বলে,
‘ভাইয়া, একবার আমাদের ভাবীকে দেখে নাও।’
ফারহান কাজ রেখে একবার সাজির দিকে তাকায়। ভাইয়ের তাকানো দেখে সাজি মাথা নিচু করে নেয়।
‘দেখার কী আছে?’
ফারাশ তখন বলে,
‘সি ইজ সো বিউটিফুল। একবার দেখতে পারো। চোখ সরবে না।’
‘এতটাও সুন্দর না যতটা বলছিস।’
‘তুমি কী করে বুঝলে?’
‘ঠোঁটের ডান পাশের তিল, এক জোড়া হরিণী চোখ ছাড়া তেমন কিছুই নেই।’
সাজি আর ফারাশ হা হয়ে তাকিয়ে থাকে ফারহানের দিকে৷ আর ফারহান, সে নিজেই বোকা হয়ে গেছে এই কথাটা বলে। ফারাশের মুখ পুরো হা হয়ে যায়। কারণ, ফারহান যা বলেছে তার সবটাই অয়নন্দিতার মধ্যে বিদ্যমান৷ তবে প্রশ্ন হচ্ছে অন্য জায়গায়৷ ফারহান কী করে জানল এত কিছু?
সাজি প্রশ্ন করে,
‘তুমি জানো কীভাবে?’
ফারহান কিছু বলতে পারেনি। আমতা-আমতা না করে কাজ আছে বলে সোজা উপরে চলে যায়। সাজি নিজে থেকেই বলে ওঠে,
‘বুঝলা ছোটো ভাইয়া, ডাল ম্যায় কুছ কালা জারুর হ্যায়।’
ফারাশ টিপ্পনী কেটে বলে,
‘নেহি৷ মুঝে লাগতা হ্যায়, ডাল ম্যায় জারুর কুছ সাফেদ হ্যায়।’
‘মুঝে ভি লাগতা হ্যায়।’

কলেজের গেইট থেকে বের হতেই একটা গাড়ি এসে অয়নন্দিতাকে ঘিরে ধরে। তার সাথে এর আগে কখনও এমন হয়নি। এইভাবে পথ আটকে ধরা তাও আবার কলেজের সামনে। কারো চোখে পড়লে সমস্যা হতেই পারে৷ গাড়ির গ্লাস খুলে দিতেই অয়নন্দিতা ফারহানকে দেখতে পায়। ফারহান তখন ড্রাইভিং সীটে বসে আছে। অয়নন্দিতা ফারহানকে দেখে কিঞ্চিৎ অবাক হয়। মনে-মনে বলতে থাকে, এই লোক এখানে কী করে? অয়নন্দিতার মনে থাকা প্রশ্নের উত্তর ফারহান অনায়াসে দিয়ে দেয়,
‘এখানে কাজেই এসেছি। অকারণে আসিনি। গাড়িতে উঠুন।’
অয়নন্দিতা ফারহানের হাব-ভাব দেখে একটু ভয়েও পাচ্ছে। সে চাইলেই এখন কারো সঙ্গে কোথাও যেতে পারবে না। কারণ তার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে। কিছুদিন পর সে অন্য কারো বউ হবে। এখন এভাবে কারো সঙ্গে উঠা-বসা করা উচিত না৷ অয়নন্দিতাকে এইভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ফারহান আবারও বলে,
‘এইযে, দাঁড়িয়ে আছেন কেন? গাড়িতে বসুন।’
‘আমার একটু কাজ আছে। তাড়াতাড়ি বাসায় যেতে হবে।’
‘এই মুহুর্তে আমার সাথে কথা বলা সব থেকে জরুরী। গাড়িতে আসুন।’
‘দেখুন, আমার কথা বলার ইচ্ছা নেই। আমার তাড়া আছে।’
‘আপনি নিশ্চয়ই চাইবেন না যে, আমি গাড়ি থেকে নেমে আপনাকে জোর করি।’
‘মানে,,,?’
‘মানি কিছুই না। চুপচাপ গাড়িতে উঠে বসুন।’
গাড়ি থেকে নেমে যদি তার হাত ধরে টানে তাহলে তো মান সম্মান নিয়ে টানাটানি হবে। এইসব ভেবে অয়নন্দিতা গাড়িতে বসে যায়। আর ফারহান ফুল স্পিডে গাড়ি স্টার্ট করে।

চলবে…………………………

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here