#দ্বিতীয়_সূচনা
#পর্ব_৪৪
লেখা – আফরোজা আক্তার
[কোনোক্রমেই কপি করা যাবে না)
অয়নন্দিতা পুকুর পাড়ে দাঁড়িয়ে আছে। এই ফার্ম হাউজে এক পাশে পুকুর খনন করা হয়েছে। পুকুরে মাছ চাষও হয়। পুরো পরিবেশটাকে ফারহান একটা গ্রাম্য জীবনের আওতায় আনার চেষ্টা করেছে। ফারহানের কাছ থেকে শুনেছে বছরে একবার সবাই এখানে আসে। এক সপ্তাহ থেকে যায়। আর এবার সবার আগে ফারহান তাকে নিয়ে এসেছে। মোরগ ডাকছে বেশ চওড়া গলায়। অয়নন্দিতা ঘাড় ঘুরিয়ে পেছনে তাকায়। মোরগটা বেশ বড়ো। লাল খয়েরী রঙের মোরগটাকে বেশ স্বাস্থ্যবান।
ফারহানের দুঃসম্পর্কের ফুফু অয়নন্দিতার পাশে এসে দাঁড়ায়।
‘কী গো বউ, এইখানে দাঁড়াই আছো যে?’
অয়নন্দিতা মহিলার দিকে তাকিয়ে আছে। কী মায়াময় চাহনি তার! ফারহানের কাছ থেকে শুনেছিল এই মহিলার ছেলে নাকি তাকে তাড়িয়ে দিয়েছে। ছেলের বউ নাকি ভাত দিত না। অয়নন্দিতা ভাবে, আল্লাহ পাকের দুনিয়ায় এত নিকৃষ্ট মানুষও হয় যে নিজের জন্মদাত্রী মায়ের মুখেও খাবার তুলে দেয় না। ফারহান যখন জানতে পারে তখন তাকে মানুষ দিয়ে এখানে নিয়ে আসে। শুধু তিনিই নন এখানে বাকি যারা আছেন সবাই এমন কোনো না কোনো পরিস্থিতির শিকার। ফারহান প্রতি মাসে টুকটাক বাজার পাঠিয়ে দেয় আর বাকি শাক সবজি তারা এখানেই চাষ করে। অয়নন্দিতা হাসি মুখে জবাব দেয়,
‘এভাবেই দাঁড়িয়ে আছি৷’
‘ফারু কই? ঘুমায়?’
ফারু নামটা শুনে অয়নন্দিতা একটু চমকে গেলেও বুঝে নেয় যে তিনি ফারহানকে ফারু বলে ডাকেন। তাই উত্তর দেয়,
‘হ্যাঁ। ও ঘুমাচ্ছে।’
‘তুমি কিছু খাইবানি?’
‘নাহ। এখন কিছু খাব না।’
‘মতিনের আম্মা রসের নাস্তা বানাইছে। খাইবানি একটু?’
রসের নাস্তা অয়নন্দিতার ভীষণ প্রিয়। ছোটোবেলা নানাবাড়ি গেলে নানী বানিয়ে খাওয়াত। অয়নন্দিতার নারকেল দিয়ে খেতে ভালো লাগে। রসের নাস্তার নাম শুনে জিবকে সামলাতে না পেরে অয়নন্দিতা বলে,
‘নাস্তায় নারকেল দিয়েছে?’
‘হ। নারকোল দিছে। খাইবানি?’
‘আচ্ছা।’
‘তাইলে ঘরে গিয়া বসো। আমি নাস্তা নিয়া আসি।’
‘নাহ। আমি পাকের ঘরে বসেই নাস্তা খাব।’
‘কী কও বউ? না না তুমি ঘরে গিয়া বসো।’
‘নাহ। আমি ওখানে বসেই খাব।’
ভদ্রমহিলা অয়নন্দিতার কথার সাথে পেরে না উঠে অয়নন্দিতাকে নিয়ে গেলেন পাকের ঘরে।
বেলা করেই ফারহান ঘুম থেকে উঠেছে। গতকাল রাতে বেশ ইমোশন হয়ে পড়ায় মাথায় চাপ লেগেছে। সকালে একবার ঘুম ভেঙেছিল। চোখ মেলে পাশে অয়নন্দিতাকে না পেয়ে একবার উঠে বসেছিল কিন্তু প্রচন্ড মাথা ব্যথার কারণে আবারও শুয়ে পড়ে।
অয়নন্দিতাও আর ফারহানকে ডেকে তোলেনি। সে ভাবে, সারা মাস তো বিরামহীন ভাবে অফিসে ব্যস্ত থাকে এখন না হয় একটু ফ্রী সময় কাটাক। তার খারাপ লাগে ফারহানের কথা ভেবে। মানুষটা কত্ত ভালোবাসত বন্দনাকে। আর বন্দনা,,,
অয়নন্দিতা মনে মনে বলে, আমি কখনও বন্দনাকে ক্ষমা করব না। তার উচিত ছিল ফারহানকে ধরে রাখার। কিন্তু সে এইভাবে ফারহানকে ঠকিয়ে গেছে। তার ক্ষমা হয় না।
অয়নন্দিতা ছাদের একপাশে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে এক মনে এইসবই ভেবে যাচ্ছে। হঠাৎ পেছন থেকে ফারহান এসে তাকে জড়িয়ে ধরে।
‘কী ভাবছ একা একা?’
অয়নন্দিতা ফারহানের দিকে ঘুরে দাঁড়ায়।
‘উঠে গেছ?’
‘হ্যাঁ।’
‘চলো। নাস্তা করবে।’
‘বললে না তো কী ভাবছিলে?’
‘তেমন কিছুই না। চলো।’
‘তুমি কি বন্দনাকে নিয়ে ভাবছিলে নাকি অয়নন্দিতা?’
ফারহান সত্যিটাই আন্দাজ করতে পেরেছে। সে বুঝে গেছে অয়নন্দিতা বন্দনাকে নিয়েই ভাবছিল। সত্যিটা এড়িয়ে যায় সে।
‘নাহ। তাকে নিয়ে ভাবব কেন? আমি এখানে এমনিতেই দাঁড়িয়ে ছিলাম। আমি একা একা আর তুমিও ঘুমাচ্ছিলে। তাই এখানে দাঁড়িয়ে ছিলাম। রোদ পোহাচ্ছিলাম। তুমি অযথাই টেনশন করছ। চলো, নাস্তা করে নেবে।’
অয়নন্দিতা সামনে পা বাড়াতেই ফারহান খপ করে তার হাতটা ধরে।
‘অয়নন্দিতা, একটা কথা বলি তোমাকে। তুমি বন্দনার বিষয়ে জানতে চেয়েছ তাই আমি বলেছি। এইসব নিয়ে আর ভাববে না। আমি চাই না আমার কালো অতীত নিয়ে টেনশন করে তুমি অসুস্থ হয়ে পড়ো। মনে থাকবে আমার কথা?’
অয়নন্দিতা কিছু না বলে মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁসূচক ইশারা করে। ফারহান অয়নন্দিতার ইশারা দেখতে পেয়ে অয়নন্দিতার দু’গাল চেপে ধরে। এরপর কাছে এসে আলতো করে অয়নন্দিতার কপালে চুমু দেয়।
‘এইতো আমার লক্ষী বউ। চলো, ক্ষুধা লেগেছে। নাস্তা খাব।’
ফারহান অয়নন্দিতার ডান হাতটা ধরে ছাদের সিঁড়ির দিকে পা বাড়ায়।
চলবে…………………………
[রাজশ্রী তোমার জন্য বইটি প্রি অর্ডার করতে পারেন এই লিংক — https://www.rokomari.com/book/221852/rajosrre-tomar-jonno]