#দ্বিতীয়_সূচনা
#পর্ব_৪৮
লেখা – আফরোজা আক্তার
(কোনোক্রমেই কপি করা যাবে না)
মিটিংরুমে মুখোমুখি বসে আছে ফারহান আর জাহরাফ। জাহরাফের মুখের ভঙ্গিই বলে দিচ্ছিল সে ভীষণ খুশি। অবশ্যই সে খুশি। ভীষণ খুশি। কারণ সে তার সামনে ফারহানকে দেখতে পাচ্ছে। তার কাছে ফারহানকে পরাজিত সৈনিক বলে মনে হয়। মনে হয় না, সে পরাজিত এক সৈনিক। হেরে যাওয়া মানুষ। আর হেরে যাওয়া মানুষদের মুখোমুখি হতে তার ভালো লাগে। ভীষণ ভালো লাগে৷
নির্লজ্জ আর ইতর টাইপ মানুষটাকে দেখার পরেও নিজেকে এইভাবে শান্ত রাখতে হচ্ছে ফারহানকে। কারণ, তার বাবার আদেশ। কোনো অশান্তি করা চলবে না। জাহরাফের হাসিটা তাকে ক্ষতবিক্ষত করছে। যেন মনে হচ্ছে, কেউ একজন তার পুরো শরীর ছুরি দিয়ে ফালা ফালা করছে। কিছুক্ষণ পর ফারাশ মিটিংরুমে এসে উপস্থিত হয়৷ জাহরাফকে দেখে নিজেকে অত্যন্ত সামলে রেখেই ভাইয়ের পাশে বসে ফারাশ। অন্যদিকে ফারাশকে দেখে জাহরাফ বলে ওঠে,
‘ফারাশ, নাইস টু মিট ইউ।’
গাল বাঁকিয়ে শয়তানি হাসি দিয়ে ফারাশও জবাব দেয়,
‘আই ডিড নট লাইক ইউর প্রেজেন্স।’
ফারাশের কথা শুনে জাহরাফ শব্দ করে হাসে।
‘ভাগ্য কি জিনিস, তাই না? এত বছর পর আবার দেখা করিয়েই দিল৷’
ফারহান ভেবেছিল সে কথা বলবে না। কিন্তু জাহরাফের এই কথাটা শুনে সে কথা না বলে থাকতে পারল না। চোখ থেকে চশমাটা খুলে জাহরাফের দিকে তাকিয়ে হাতদুটো একত্রিত করে টেবিলের ওপর রাখে। ফারহানের চোখ জোড়া রাগে ফেটে যাচ্ছে। এদিক-সেদিক তাকিয়ে ফারহান বলে,
‘ভাগ্যকে এই মুহুর্তে আমার চুতিয়া বলতে হচ্ছে। কি চুতিয়া জিনিস এই ভাগ্য, তাই না? যার জন্যই তো তোমার মতো চুতিয়া লোকের সামনে বসতে হলো আমায়।’
ফারহানের কথায় জাহরাফের মুখটা কালো হয়ে যায় আর ফারাশ তৎক্ষণাৎ হেসে দেয়। জাহরাফ রাগান্বিত কন্ঠে বলে,
‘হাসো হাসো। ফারাশ, হেসে নাও। এই অর্ডারটাই তোমাদের কোম্পানির শেষ অর্ডার হবে। লিখে দিলাম।’
ফারাশ হাসি থামিয়ে জবাব দেয়,
‘এই অর্ডার সাপ্লাইয়ের পর তুমি জাহরাফ জীবনেও এমুখো হবে না। সাদা কাগলে কালো কালি দিয়ে আমিও লিখে দিলাম। যদি না মেলে তো আমার নাম বদলে দিও।’
‘চ্যালেঞ্জ করলাম। পারলে করে দেখাও।’
‘চ্যালেঞ্জ করব না তবে করে দেখাব। তোমার মতো এমন চোর ছ্যাচড় কত এলো কত গেল। কোনো কূল করতে পারল না। তুমিই ভাগ্যবান, যে সিধ কেটে চুরি করতে পেরেছিলে। তবে বার বার না। মনে রেখো কথাটা।’
ফারাশের নাম ধরে গর্জে ওঠে জাহরাফ। ফারহান তখন বলে,
‘ধীরে জাহরাফ, ধীরে। এটা অফিস। তোমার বাসা নয়। এখানে আওয়াজ নামিয়ে কথা বলবে।’
কিছুক্ষণ পরই এক এক করে সবাই মিটিংরুমে উপস্থিত হয়৷ রমজান শেখ মিটিংরুমে পা রেখেই জাহরাফকে দেখতে পান। তিনি বিশেষ কিছু বলেননি। নজর সরিয়ে নিজ আসনে বসে পড়েন।
শপিং ব্যাগগুলো বিছানায় রেখে সোফায় নিজের শরীর ছেড়ে দেয় অয়নন্দিতা। এটাই ভাবার চেষ্টা করছে, কী হচ্ছে তার সঙ্গে? ফারহানকে নিয়ে জীবনটা সুন্দর ভাবেই তো কেটে যাচ্ছিল তবে এত বছর পর হঠাৎ বন্দনার এইভাবে সামনে আসাটা কীসের ইঙ্গিত দিচ্ছে? বন্দনাকে কয়েক সেকেন্ডের জন্য দেখে অয়নন্দিতার মস্তিষ্কের প্রতিটা স্নায়ুকোষ তাদের কাজ বন্ধ করে দিয়েছিল। তাকে ভাবাতে বাধ্য করেছে বন্ধনা হঠাৎ কেন এইভাবে সেধে এসেছে আলাপ করতে।
অয়নন্দিতার আইডি ঘেঁটে হাসানের আইডি বের করে সাজি। হাসানের পুরো আইডি চেক করা শেষ তার। আইডিটা বেশ পরিষ্কার। মিলি সমেত বহু ছবি তার টাইমলাইনে। হাসানের সঙ্গে মিলিকে বেশ মানায় তবে কেন যেন সাজি মানতে পারছে না। হাসানকে যেদিন প্রথম দেখেছিল সেদিন থেকেই হাসানকে ভালো লাগতে শুরু করে। তবে ভালো লাগাটা মনের মধ্যে লুকিয়ে রেখেছিল৷
কে জানে কতক্ষণ এই ভালো লাগাটা লুকায়িত রাখতে পারবে সে।
রাত নয়টা নাগাদ ফারহান বাড়ি ফিরে। এমনিতেই কোনো একটা কারণে মাথা গরম ছিল তার। যখন সাজি সমস্ত ঘটনা তাকে খুলে বলল তখনই তার মাথা আরও গরম হয়ে গেল। সে বুঝতেছে না, একই সঙ্গে সব ঘটনা ঘটছে কীভাবে। পুরোটা তো আর কাকতালীয় ঘটনা হতে পারে না।
ফারহান দ্রুত পায়ে নিজের ঘরে আসে৷ অয়নন্দিতা তখন ঘরেই ছিল। ফারহান ঘরে অয়নন্দিতাকে দেখে থমকে যায়। এক পা দু পা করে অয়নন্দিতার কাছে এগিয়ে আসে। ফারহানের স্তব্ধতাই অয়নন্দিতাকে বুঝিয়ে দেয় যে, ফারহান অলরেডি সব কিছুই জেনে গেছে। অয়নন্দিতা কিছু বলতে যাবে তখনই ফারহান তাকে জড়িয়ে ধরে।
‘কিছু বোলো না। আমি সব ঠিক করে দিব। একদিন সব ঠিক হয়ে যাবে৷ তাকে তোমার ত্রিসীমানায় আসতে দেব না আমি। কোনো কষ্ট দিতে দেব না তোমায়। তুমি শুধু আমার পাশে থাকবে।’
ফারহানের কথা শুনে নিঃশব্দে কাঁদতে শুরু করে অয়নন্দিতা। তার জানা নেই, শেষ অবধি তার আর ফারহানের সংসারটা টিকবে কি না।
চলবে………………………..