দ্বিতীয়_সূচনা পর্ব-৬০

0
4165

#দ্বিতীয়_সূচনা
#পর্ব_৬০
লেখা – আফরোজা আক্তার
(কোনোক্রমেই কপি করা যাবে না)

একই শহরে দুই পরিবারের অবস্থান বলে দুই পরিবার একত্রেই হলুদ পোগ্রামের আয়োজন করে। রাত আটটা নাগাদ হাসানরা পৌঁছে যায়। অয়নন্দিতা সবদিক সামলে নিয়ে নিজেও তৈরি হয়ে গেছে। আয়নায় নিজেকে দেখছে আর নিজের বিয়ের কথা মনে করছে অয়নন্দিতা। একদিন সে-ও হলুদ পোগ্রামে বসেছিল। বিয়ের দিন বউ সেজেছিল। রুপকথার রাজপুত্র তো ঘোড়ায় চড়ে আসে কিন্তু তার মনের রাজপুত্র সেদিন গাড়ি করে এসেছিল। ফারহানকে মনে করতে করতে ঠোঁটের কোণে মুচকি হাসি ফুটে ওঠে অয়নন্দিতার।
কোনো এক প্রয়োজনে ফারহান ঘরে প্রবেশ করে। আয়নার সামনে কোনো এক হলুদ পরীকে দেখে ভড়কে যায় সে। পা থেকে মাথার চুল পর্যন্ত পর্যবেক্ষণ করতে করতে এক পা দু পা বাড়ায় ফারহান। হলুদ রঙের জামদানী শাড়ি পরে তাকে একটা সূর্যমুখীর মতো লাগছিল। সেই সাথে হালকা গহনা সৌন্দর্যের মাত্রাকে আরও দ্বিগুণ করে দিয়েছে৷ চুলের খোঁপায় বেলীফুলের মালাটা ত্রিমাত্রায় ঘ্রাণ ছড়াচ্ছে। ফারহান না চাইতেও বেলীফুলের ঘ্রাণে মত্ত্ব হয়ে যেতে বাধ্য হয়। সে একদম অয়নন্দিতার কাছে এসে দাঁড়ায়। নাক দিয়ে ঘ্রাণ নেয় অয়নন্দিতার। ধরা গলায় বলে ওঠে,
‘এই মেয়ে, একই সঙ্গে এত রুপ কেন তোমার?’
ফারহানের গালের সঙ্গে নিজের গাল মিশিয়ে অয়নন্দিতা বলে,
‘কত রুপ পেয়েছ?’
‘বলব?’
‘হু।’
‘হলুদ শাড়িতে সূর্যমুখী। খোঁপায় দেওয়া বেলীফুল। সব মিলিয়ে হলুদ পরী। একই সঙ্গে এত রুপ। আমি তো পাগল হয়ে যাব।’
‘পাগল হলে সামলে নেব।’
ফারহান অয়নন্দিতার কোমরে হাত রাখে। শিউরে ওঠে অয়নন্দিতা। ঘাড়টা সরিয়ে নেয়। ফারহান সেখানেও সুযোগ নেয়। চট করেই ঘাড়ে চুমু দেয় অয়নন্দিতার। অয়নন্দিতা নিজের হাত মুষ্টিবদ্ধ করে ফারহানের দিকে ঘুরে যায়।
‘সুযোগ পেলেই এমন করতে হবে তোমার, তাই না?’
‘সুযোগ আর দিলে কই?’
‘সুযোগ না দিতেই এত কিছু। সুযোগ দিলে তো আমায় খুঁজে পাওয়া যাবে না।’
‘হুশ, কথা বোলো না। ভালোবাসতে তো দাও না।’
এমন সময় ফারহানের ফোন বেজে ওঠে। ফোন বের করে দেখে ফারাশ নিচ থেকে ফোন করেছে। অয়নন্দিতাকে ছেড়ে দিয়ে বলে,
‘নিচে যেতে হবে। তুমি এসো তাড়াতাড়ি।’
ফারহান পা বাড়াতেই অয়নন্দিতা ফারহানের হাতটা ধরে নেয়৷ বাধা পেয়ে ফারহান ঘুরে তাকায় অয়নন্দিতার দিকে। ইশারায় জিজ্ঞেস করে কী হয়েছে? উত্তরে অয়নন্দিতা বলে,
‘আমার ভালোবাসা দিয়ে এরপর এ ঘর থেকে বের হবে। নয়তো বের হতে দেব না।’
ফারহান এক চোখ উঁচু করে তাকায় অয়নন্দিতার দিকে।
‘আমায় আটকে রাখার শক্তি আছে তোমার?’
‘আমি শক্তি প্রয়োগ করতে পারি না। আমি ভালোবাসার বিনি সুতোয় বেঁধে ধরব তোমায়। ভালো না বেসে তুমিও এই বাঁধন ছেড়ে বের হতে পারবে না।’
ফারহান এগিয়ে আবারও অয়নন্দিতার সামনে দাঁড়ায়। কোলে তুলে নেয় অয়নন্দিতাকে। বিছানায় শুইয়ে দেয় তাকে। হঠাৎই কে যেন নিচে গান চালিয়েছে। সেই গানের শব্দ উপরে আসছে৷ গানটা দু’জনেরই কানে লাগছে। লিরিক শুনে অয়নন্দিতার মনে পড়ে এই গানটা তো তার ভীষণ প্রিয়৷ “দিল কি তাপিশ আজ হ্যায় আফতাব, বাজি মুরে দিল কি তাপিশ আজ হ্যায় আফতাব”— ফারহান অয়নন্দিতার একটা হাত নিজের হাত দিয়ে আটকে দেয়। অনেকটা ঝুকে পড়ে অয়নন্দিতার দিকে। অয়নন্দিতাও চোখ জোড়া বন্ধ করে ফেলে। ফারহান গুনে গুনে সাতটা চুমু দেয় অয়নন্দিতার পুরো মুখ জুড়ে। অয়নন্দিতাকে বসিয়ে রেখে ফারহান পা বাড়াতে গেলে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে অয়নন্দিতা। ফারহান বুঝে গেছে আজ তার বউ তাকে ছাড়তে চাইছে না। অয়নন্দিতা ফারহানের সামনে দাঁড়িয়ে পা জোড়া উঁচু করে ফারহানের কপালে চুমু খায়।
‘রাতে সবটা পুষিয়ে দেব। কথা দিচ্ছি।’

হলুদের অনুষ্ঠান শুরু হয়ে গেছে। সাজি আর হাসান পাশাপাশি বসে আছে। হাসান আড় চোখে দেখছে সাজিকে৷ হলুদ আর মেরুন রঙের কম্বিনেশনের শাড়িতে অপূর্ব লাগছিল সাজিকে। এক এক করে সবাই এসে তাদের হলুদ মাখিয়ে দিয়ে যাচ্ছে। আজ নায়াকেও পরীর মতো লাগছে। রওশন বেগম মেয়ে, ছেলের বউদের দিকে তাকিয়ে আছেন আর মনে মনে একশো বার মাশা-আল্লাহ পড়ছেন। একটাই দোয়া তার, তার সংসারে যেন কারো নজর না লাগে।
অনুষ্ঠানের এক পর্যায়ে সবাই অয়নন্দিতাকে নাচার জন্য অনেক রিকুয়েষ্ট করে। কয়েকবার না করার পর ফারহানের ইশারা পেয়ে রাজি হয়। ফারাশ মিউজিক প্লে করে। সাউন্ড সিস্টেমে গান বাজছে। “দিল টুটা, জাগ ছুটা, তু রুঠা, রাব রুঠা”— গানের তালে অয়নন্দিতার পা পড়ে। ফারহান বিমোহিত দর্শকের মতো একদৃষ্টে তাকিয়ে আছে অয়নন্দিতার দিকে। নায়া ভিডিও করছে। ফারাশও মায়া ভরা তাকিয়ে আছে তার রাজরানীর দিকে৷ হাসান সাজি দু’জন দু’জনের হাত শক্ত করে ধরে আছে। কিছুক্ষণ পর পর দু’জন দু’জনকে দেখছে। হাসান সুযোগ বুঝে সাজির কানের কাছে নিজের মুখ নিয়ে সাজির সৌন্দর্যের প্রশংসা করছে।
আপাতত চারপাশের কোলাহল ফারহানের কানে ঢুকছে না। তার কানে কেবল সাউন্ড সিস্টেমে প্লে করা গানটা বাজছে আর চোখের সামনে অয়নন্দিতা নাচছে। সে এত দিনেও জানত না যে, তার বউ এত সুন্দর নাচে। নাচের মধ্যে এক সময় অয়নন্দিতা ফারহানের সামনে চলে আসে। হাতের ভঙ্গিতে ফারহানের সামনে নাচছে সে৷ এরপরই গানটা শেষ হয়ে যায়। সেখানে উপস্থিত সবাই হাত তালি দিয়ে অয়নন্দিতার নাচের প্রশংসা করে। অয়নন্দিতা ফারহানের দিকে তাকিয়ে আছে। ফারহান হাতের বুড়ো আঙ্গুল এবং তর্জনী আঙ্গুলের সমন্বয়ে ভঙ্গিমায় তার বউয়ের নাচের প্রশংসা করে। অয়নন্দিতা খানিকটা লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করে ফেলে।

চলবে…………………..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here