“মানুষের মাংসের বিরিয়ানি খেয়েছিস কখনো?
রাফাতের এমন প্রশ্নে হকচকিয়ে উঠে ইশাক।মুখে ভয়ের ছাপ একে ভীত চোখে তাকায় রাফাতের দিকে।বারে চলছে ইন্ডিয়ান ক্ল্যাসিক গান।চারদিকে ঝিলমিলে আলো।কেউ পানে ব্যস্ত তো কেউ গানে।আর কেউবা পৃথিবীর সবচেয়ে নিখুঁত নেশায় বুদ।মানে নারীতে।নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত সবাই।অন্যের কথা শোনার বা জানার আগ্রহ কারো নেই।জ্বলজ্বলে চোখে তাকিয়ে বাঁকা হাসে রাফাত।ঘাড় নিচু করে চাপা গলায় বললো–
“হিউম্যান ফ্ল্যাশ কিন্তু মিষ্টি হয় জানিস তো!যেমনটা জীবন্ত নারী দেহের স্বাধ হয়।”
কথা শেষ করেই শব্দ করে হেসে উঠে রাফাত।ভীতসন্ত্রস্ত ইশাক আজ প্রথম রাফাতের সাথে বারে এসেছে।কিন্তু এখনো কিছু ছুঁয়ে দেখেনি।কিন্তু এর মাঝেই দুই প্যাগ ওয়াইন গিলা হয়ে গেছে রাফাতের।আর তার এই অস্বাভাবিক কথায় আরো আঁতকে উঠে ইশাক।ব্যগ্র হয়ে বললো–
“নেশা চড়েছে তোর মাথায়।চল এখান থেকে।কীসব আবোলতাবোল বলছিস।”
রাফাত নেশার্ত কন্ঠে বললো–
“সত্যি বলছি।আজকের ব্রেকিং নিউজ দেখিসনি!আজ ও একটা লাশ পাওয়া গেছে।প্রায় দশের অধিক টুকরো হয়েছে।আর এবারো মেয়ের লাশ।”
ইশাক ঘন ঘন শ্বাস নিতে থাকে।গত পাঁচ মাসে তাদের এলাকায় দুটো খন্ডিত লাশ পাওয়া যায়।দুটোই মেয়েদের লাশ।পুলিশের তৎপরতা বেড়েছে তিনগুন হারে।তবুও কোন কাজ হচ্ছে না।ইশাকদের ঠিক পেছনের টেবিলে কালো হুডিতে বসে আছে কেউ।লাশের কথা শুনতেই আর বৃদ্ধা আঙুলে কম্পন শুরু হয়।চোখ হয়ে উঠে জ্বলন্ত দাবানল।কালো বুট পরা পায়ে গটগট করে বেরিয়ে আসে অন্ধকার রাতের সেই মিথ্যে আলোর ঝলকানির এক সুখময় বীভৎস জাহান্নাম থেকে।যেখানে শুধু চলে মস্তিষ্কের বেহায়াপনা।
,
,
,
ঘড়ির কাটা চলছে।আকাশে উঠেছে কুসুম রঙের চাঁদ।কাঠাল গাছটার পাতার ফাঁক দিয়ে সে চাঁদের আলো গলে পড়ছে জানালার গ্রীল ভেদ করে।ক্ষনে ক্ষনে হালকা নাতিশীতোষ্ণ বাতাসে উড়ছে পর্দা।ভেসে আসছে এক অদ্ভুত আওয়াজ।নৈঃশব্দ রাতের বুক চিড়ে সেই শব্দ বাতাসে আলোড়ন সৃষ্টি করছে।চাঁদের আলোয় আরকিছু স্পষ্ট না হলেও বিছানায় শুয়ে থাকা অবর্ণনীয় সৌন্দর্যের অধিকারী মেয়েটির উন্মুক্ত উদর স্পষ্টত।এলোমেলো হয়ে বিছানায় শুয়ে আছে সে।তার মেদহীন ফর্সা উদরে চাঁদের আলো যেনো খেলছে।ছড়ানো চুলগুলো মুখের অনেকাংশ ঢেকে রেখেছে।চকিতে কানের মধ্যে ডোর বেলের আওয়াজ আসতেই ঝট করে উঠে বসে সে।একটু ধাতস্ত হয়ে নিমিঝিমি দুই চোখের পাতা প্রশস্ত করে আরেকবার সেই আওয়াজ শোনার চেষ্টা করে।আবারো কানে ডোর বেলের আওয়াজ আসতেই ব্যস্ত হয়ে পা বাড়ায় রুমের বাইরে।
দরজা খুলতেই দেখে দুটো গভীর চোখ তার দিকে তাকিয়ে আছে।নিঃশব্দে নিঃশ্বাস ফেলে জান্নাহ্।সারহান নির্নিমেষ তার দুই ঈগল চোখ দিয়ে তাকিয়ে আছে জান্নাহ্ এর দিকে।চেহেরায় কোন অভিব্যক্তি করলো না সারহান।কিন্তু তার নেশার্ত দুই চোখের ভাষা বুঝতে দেরি হলো না জান্নাহ্ এর।সারহান ভেতরে এসেই পরম আবেশে দুই বাহুতে আবদ্ধ করে জান্নাহ্কে।এক দীর্ঘ শীতল নিঃশ্বাস বেরিয়ে আসে জান্নাহ্ স্বরনালি বেয়ে।ঘড়ির কাটা তখন তিনটার ঘরে।কিন্তু জান্নাহ্ জানে বাকি রাত আজ আর সে ঘুমাতে পারবে না।
সকালে জগে পানি না থাকায় পানি নিতে রান্নাঘরে আসে জান্নাহ্।খিদেও পেয়েছে জোরালোভাবে।কিচেন ক্যাবিনেট খুলে ড্রাইফ্রুট বের করতে গেলে তার মাথার কাপড় সরে যায়।ভেজা চুলের পানিতে চপচপ করছে কোমরের ভাজ।তার ফর্সা উন্মুক্ত পিঠের অংশে কামুক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সেরাজ।নিস্পলক সেই দৃষ্টি।যেনো কোন শিকারী বাঘ চেয়ে আছে কোনো হরিণীর দিকে।শুভ্রার কথা কানে আসতেই সপ্রতিভ হয় সেরাজ।জান্নাহ্ চকিতে পেছন ফিরেই ননদ আর তার স্বামীকে দেখে ঘাবড়ে যায়।শশব্যস্ত হয়ে কাপড় টেনে দীর্ঘ করে ঘোমটা।শুভ্রা কর্কশ গলায় বললো–
“এখানে কী করছো তুমি?
সেরাজ চোখ পিট পিট করে কয়েকটা ফাঁকা ঢোক গিলে যেমনটা একটু আগে জান্নাহ্ কে দেখে গিলেছিলো।চোখ লুকিয়ে তটস্থ হয়ে রান্নাঘর থেকে বের হয় সেরাজ।সেরাজ বের হতেই সেখানে এসে হাজির হয় অন্তরা বেগম।জান্নাহ্ কে দেখে বুঝতে বাকি রইলো না কাল রাতে তার ছেলে এসেছে।মেঘের মতো গর্জন করে বললেন–
“আসতে না আসতেই ঘরে ঢুকিয়ে ফেলেছিস আমার ছেলেটাকে!বশ করে রেখেছিস তাই না!
মায়ের কথায় বাঁধা দিয়ে শুভ্রা বললো–
“এইসব কী বলছো তুমি!
“বুঝতে পারছিস না।ছেলেটা আমার দু’দিনের জন্য আসে।আর এই নাগিন আমার ছেলেটাকে ঘর থেকেই বের হতে দেয় না।বিয়ের পর থেকে যতবারই আসে মা,বাবার সাথে কোনো কথাই বলে না।সারাদিন কী করে ঘরের ভেতর!
শুভ্রা বিরক্তি নিয়ে বললো–
“উফ মা!চুপ করবে তুমি।সারহান উঠে যাবে।জান্নাহ্ তুই ঘরে যা।”
জান্নাহ্ নিঃশব্দে মাথা হেলায়।ঘরে এসে সারহানের পায়ের কাছে বসে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে থাকে।গভীর তন্দ্রায় নিমগ্ন সারহানের কানে পৌঁছায় জান্নাহ্ এর কান্নার স্বর।ক্লান্ত শরীরে উঠে বসে।তার গভীর চোখ দুটো পরিশ্রান্ত।জান্নাহ্ এর কাছে এসে শান্ত দৃষ্টিতে তাকায়।মৃদু হাসে সারহান।আর ভাবে,মেয়েরা শুধু কাঁদতেই জানে।
জান্নাহ্ এর শাড়ির আঁচল ভেদ করে তার পেটে হাত রাখে সারহান।তাতে বল প্রয়োগ করেই জান্নাহ্কে নিজের বক্ষস্থলে নিয়ে আসে।তার মাথার উপর থেকে ঘোমটা সরিয়ে ভেজা চুলে ঘ্রাণেন্দ্রিয় গুঁজে দেয়।শ্রান্ত গলায় প্রশ্ন করে —
“কী হয়েছে রজনীগন্ধ্যা?
কাঁদছেন কেন?
জান্নাহ্ অভিমানি গলায় বললো–
“আপনি মা বাবার সাথে কেন দেখা করেন না!তারা ভাবে আমার জন্যই আপনি..।”
কথার মাঝেই জান্নাহ্কে চুপ করায় সারহান।তার চোখের পানি শুঁষে নেয় নিঃশব্দে।ক্লান্ত গলায় বললো–
“মায়ের কথায় রাগ করবেন না।বয়স হয়েছে তার।আর আমি তো আপনার জন্য বাড়িতে আসি।নাহলে এই বাড়িতে আসার কোনো ইচ্ছে আমার নেই।আমার ঘুম এখনো পূর্ণ হয়নি রজনীগন্ধ্যা।আপনাকে বলেছি না আমি আসলে ঘর থেকে বের হবেন না?
জান্নাহ্ অনুযোগের গলায় বললো–
“ঘরে পানি শেষ হয়ে গিয়েছিলো।তাই।”
“বুঝলাম।
বসুন আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি।”
“ঘুমাবেন না?
সারহান অধর কোণে হেসে ফিচেল গলায় বললো–
“ঘুমাতে দিলেন কই!না রাতে না এখন।”
পকেটে দু’ হাত ভরে হেলতে হেলতে ওয়াশরুমের দিকে পা বাড়ায় সারহান।ভারি গলায় বললো–
“টাওয়েল টা নিয়ে আসুন রজনীগন্ধ্যা।”
সারহান ওয়াশরুমে ঢুকে।সারহান তার সব কিছুই পরিপাটি পছন্দ করে।সে বাড়ি থেকে গেলেই তার সমস্ত জিনিস পরিষ্কার করে আলাদা করে রাখে জান্নাহ্।ড্রয়ার খুলে টাওয়েল নিয়ে ওয়াশরুমের দরজার নক করে জান্নাহ্।সারহান হালকা দরজা খুলে টাওয়েল নিতে গিয়ে জান্নাহ্ এর হাত ধরে টেনে তাকে ভেতরে নিয়ে যায়।
খাবার টেবিলে বসে আছে সারহান।তার তীক্ষ্ম,ক্ষীপ্ত দৃষ্টি তার মায়ের দিকে।মাথার ওপর অনবরত ঘোরা ফ্যানের শব্দ ভেদ করে সারহানের ওই তীক্ষ্ম নজর অন্তরার চোখ এড়ালো না।সারহানকে এই বাড়ির সবাই ভয় পায়।কেউ কেউ অবচেতন মনেও।ভুলেও তাকে রাগানোর দুঃসাহস কেউ করেনা।
গরমের মাত্রা বেড়েই চলছে।সারহান একদম গরম সহ্য করতে পারে না।শুভ্রা ভাইয়ের জন্য আইস ট্রে এনে রাখে।গম্ভীর গলায় অন্তরাকে প্রশ্ন করে সারহান–
“কী বলেছেন আপনি জান্নাহ্ কে?
অন্তরা চোরা চোখে তাকায়।ক্ষীন নিঃশ্বাস নেন তিনি।যেনো নিঃশ্বাসের শব্দে সারহানের হিংস্র থাবার কবলে পড়বেন তিনি।নিজের ছেলেকে প্রাণের চেয়েও বেশি ভালোবাসেন অন্তরা আর জমির।ছেলের স্বভাব বরাবরই ভয়ংকর।তার চলার গতি,ব্যবহার,চোখের দৃষ্টি,অভিব্যক্তি সবকিছুই যেনো তেজস্বীয়তায় ভরা।তাই তো ছেলের নাম রেখেছেন সারহান।যার অর্থ নেকড়ে বাঘ।হিংস্রতা যার নখদর্পণে।
সারহান নিঃশব্দে উঠে দাঁড়ায়।আইস ট্রে থেকে বরফ নিয়ে তা একটা বাটিতে ঢালে।অন্তরার ডান হাত তুলে তাতে আলতো চুমু খায়।বিস্মিত নজরে তাকায় অন্তরা।ঝড় আসার পূর্বাভাস পাচ্ছেন তিনি।সারহান অন্তরার সেই হাত বাটির বরফে ঠেসে ধরে।অন্তরা নড়তে গিয়েও নড়লেন না।শুভ্রা আগাতে গিয়েও পিছু হটে।জমির বসেছিলো কাউচে।সকাল বেলার দেশীয় তাজা খবরে ভরপুর সংবাদপত্র ঘ্রাণেন্দ্রিয় পর্যন্ত উঠিয়ে চশমার ফাঁক গলিয়ে সারহানকেই দেখছিলেন।ছেলের এহেন কাজে হকচকিয়ে উঠে দাঁড়ান তিনি।অন্তরা ভীত চোখে তাকিয়ে আছে।সারহান হালকা ঝুঁকে থমথমে গলায় বললো–
“আমি তো বিয়ে করতে চাইনি।আপনারা আমাকে বিয়ে করিয়েছেন।নাউ টলারেট হার।”
বরফ পানিতে অন্তরার কুঁচকে যাওয়া চামড়ার হাত অসাড় হয়ে আসছে।তবুও সে স্থির।
,
,
সারহানের পাশেই বসে আছে জান্নাহ্।বিষন্ন মুখ তার।সারহান এক পা বিছানায় আরেক পা ফ্লোরে রেখে জান্নাহ্ এর দিকে মুখ করে বসে আছে।এক হাতে পরোটা আর অমলেট।তা থেকে একটু একটু করে জান্নাহ্ এর মুখে দিচ্ছে সারহান।ধীর গলায় সারহান বললো–
“কী হয়েছে আপনার!এতোদিনে আপনার অভ্যাস হয়ে যাওয়ার কথা।আমাদের বিয়ে হয়েছে প্রায় এক বছর।আমাকে এখনো হজম করতে পারেন না আপনি!আপনি তো ছোট নন।”
জান্নাহ্ নির্লিপ্ত।সারহান জান্নাহ্ এর মুখে পরোটা দিতেই অমলেটের খানিক অংশ তার ঠোঁটের পাশে লেগে যায়।মিচকি হাসে সারহান।ঘাড় হেলিয়ে জান্নাহ্ এর ঠোঁটের পাশ থেকে সেই অংশই অবলেহন করে সারহান।বিচলিত হয় না জান্নাহ্।সারহানের অভ্যাস সম্পর্কে সে অবগত।যে কয়েকদিন সে বাড়িতে থাকে জান্নাহ্ তার কাছে একটা পুতুল ছাড়া কিছুই নয় যাকে সে ইচ্ছে মতো ব্যবহার করে।খাওয়া শেষে উঠে দাঁড়ায় সারহান।আয়নায় নিজেকে ঠিক করে বাইরে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হয়।সারহানের এই অতর্কিত ভালোবাসার অত্যাচারেই ক্ষনে ক্ষনে মরে জান্নাহ্।সারহানকে বাইরে যেতে দেখেই উঠে দাঁড়ায় সে।ব্যস্ত গলায় প্রশ্ন ছুঁড়ে–
“কোথায় যাচ্ছেন?
সারহান স্মিত হাসে।হাতে থাকে কালো রঙের হাতঘড়িতে চোখ বুলায়।শান্ত ও কোমল গলায় বললো–
“বাইরে।তিন ঘন্টার মধ্যে ফিরে আসছি আমি।”
দরজার কাছে গিয়ে থমকে যায় সারহান।ত্রস্ত পায়ে পেছন ফিরে এসে ঝাঁপটে ধরে জান্নাহ্কে।দীর্ঘ সময় নিয়ে চুমু খেলো তার ঠোঁটে। বিগলিত হেসে বললো–
“আমার মিষ্টি বউটা।”
জান্নাহ্ এর শরীর ঝনঝনিয়ে উঠে এই কথায়।
,
,
,
দীর্ঘ সময় রতিক্রিয়া শেষে বিছানা থেকে উঠে আসে সারহান।ফ্রেশ হয়ে নিজের অ্যাশ কালারের শার্ট গায়ে জড়ায়।বিছানায় এলোমেলো হয়ে বসে আছে মেঘনোলিয়া।তার বুকের কাপড় বিছানায় পড়ে আছে।তা উঠিয়ে কোনোরকম কাঁধে রাখে।সারহানের দিকে আস্ত নজর দিয়ে রেখেছে।লোলুপ সে দৃষ্টি।সারহান বাঁকা হেসে ফিচেল গলায় বললো–
“এভাবেন কেন তাকিয়ে আছো?দুই ঘন্টায়ও কী মন ভরেনি?
মেঘনোলিয়া গুমোট গলায় প্রশ্ন করলো–
“কাল রাতে এসেছো?
সারহান বিক্ষিপ্ত চোখে তাকায়।মেঘনোলিয়া গম্ভীর মুখে বললো–
“এতোদিন কোথায় ছিলে?
সারহান চোখের কোন ক্ষীন করে তাকায়।কাউকে উত্তর দেওয়ার অভ্যাস সারহানের নেই।তার নির্লিপ্ততায় ফের প্রশ্ন করে মেঘনোলিয়া–
“এইজন্যই তোমার বউ আজ স্কুল আসেনি।”
সারহান নাকের ডগা ফুলায়।অশান্ত তার চাহনি।উঠে দাঁড়ায় মেঘনোলিয়া।ক্ষীন গলায় বললো–
“কী পেয়েছো ওই মেয়ের মধ্যে যে এখনো ওকে ছাড়ছো না!
সারহান শান্ত গলায় বললো–
“শী ইজ মাই রেড ওয়াইন।শী ইজ মাই অবশেসন।আই এম এডিক্টেড টু ইট।”
গনগনে গলায় মেঘনোলিয়া বললো–
“তাহলে আমি!
অধর ছড়িয়ে ক্ষীপ্র হাসে সারহান।তার চোখের দৃষ্টিতেই যেনো শ্বাস আটকে আসছে মেঘনোলিয়ার।ভয়ংকর সেই চাহনি উপেক্ষা করতে পারে না সে।দুমদুম করতে থাকে তার বুক।অতি স্বাভাবিক কন্ঠে সারহান বললো–
“কীট।কীট কাঁচের জারে থাকুক আর নর্দমায়।কীট,কীট ই হয়।তা কখনো প্রজাপতি হয় না।”
ফুঁসলে উঠে মেঘনোলিয়া বললো–
“সারহান!
“শিষ!
নো সাউন্ড।আমার বউয়ের সাথে নিজের তুলনা করবে না।”
“এমন কী আছে ওই ষোড়শীর কাছে!তুমি তো বেশিদিন কোথাও টিকতে পারো না।তাহলে এক বছর ধরে কী করে ওর সাথে আছো!
ঠোঁটের কোণ বাঁকায় সারহান।চোখে এক অদ্ভুত উজ্জ্বলতা।রহস্য গলায় বললো–
“জান্নাহ্ সে।এডিকশন আমার।যতদিন তার শ্বাস ততদিন তার বাস।আমার ভালোবাসাই তার সর্বনাশ।গট ইট।”
ফোঁস ফোস করতে থাকে মেঘনোলিয়া।সারহান একটানে মেঘনোলিয়াকে নিজের কাছে নিয়ে নেয়।মেয়েটার শরীরে এখনো সারহানের গায়ের গন্ধ লেগে আছে।কিছুক্ষন তার সারা শরীরে নিজের হাতের বিচরণ করে সারহান।জান্নাহ্ ছাড়া এই প্রথম কোনো মেয়েকে বিছানার কার্যসিদ্ধির পরও ছুঁয়েছে সে।মেঘনোলিয়ার গালের দুই পাশ চেপে ধরে গাঢ় গলায় বললো–
“বাই,সুইটহার্ট।”
সারহান যেতেই পাগলের মতো আচরণ শুরু করে মেঘনোলিয়া।সে কিছুতেই চাইছিলো না সারহান তাকে ছেড়ে চলে যাক।আয়নার সামনে গিয়ে বুকের উপর থেকে শাড়ির আঁচলটা ফেলে নিজেকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখে সে।রাগে তার শরীরের প্রতিটি লোমকূপ জ্বলে যাচ্ছে।কিসের কমতি তার মাঝে!কেন সারহানকে বশ করতে পারে না সে!
গত তিনমাস ধরে সারহানের বিছানার সঙ্গী মেঘনোলিয়া।একটা চার্চে পরিচয় হয় সারহানের সাথে তার।প্রথম দেখায় ঘোর লেগে যায় সারহানের ব্যবহারে।নেশার্ত দুই নয়ন আর শরীর যেনো কিছুতেই মানছে না।মেঘনোলিয়ার বিয়ে হয়েছিলো।স্বামীর সাথে বনিবনা না হওয়ায় ছয় মাসের মাথায় ডিবোর্স হয়।সারহানের সাথে কাটানো মুহুর্তও গুলো সে ভুলতে পারে না।যতক্ষন তার সাথে থাকে যেনো স্বর্গীয় সুখে সে ভাসতে থাকে।নিজের স্বামীর কাছেও এতোটা সুখ সে কখনো পায় নি।সারহানের ভাগ সে কাউকে দিতে চায় না।নিজের করে চায় তাকে।কিন্তু জান্নাহ্!
এই মেয়েটা কী জাদু করেছে সারহানকে সে ভেবে পায় না।রোজকার মতো আজ সারহান ছিলো না।এতো কম সময় কখনো সারহান তার সাথে অতিবাহিত করে নি।কিন্তু আজ!
ঘরের সবকিছু এলোমেলো করে সেখানেই বসে পড়ে মেঘনোলিয়া।তার পিপাসার্ত দেহপিঞ্জর এখনো সারহানকে পান করার জন্য আকুলিবিকুলি করছে।পুরো একটা রাত কেন সে সারহানকে পায় না!এই ঘন্টা খানেকের সময় তার কাছে কিছু নয়।সারহানকে তার পুরোদমে চাই।পুরো।
চলবে,,
#জান্নাহ্
#পর্বঃ১
লেখনীতেঃতাজরিয়ান খান তানভি