#জান্নাহ্
#পর্বঃ২৯
লেখনীতেঃতাজরিয়ান খান তানভি
নিকষ কালো আকাশে গুমোট অন্ধকার।সেই অন্ধকারের বুক ফেঁড়ে জেগে আছে কুসুম রঙের চাঁদ।তারাগুলো জ্বলছে মুক্তোর মতো।যেনো ঝিনুক খসে মুক্তো ছড়িয়ে আছে আকাশ জুড়ে।
মৃদু আলোয় শুয়ে আছে জান্নাহ্।তার ভারি নিঃশ্বাস বলে দিচ্ছে গভীর ঘুমে তলিয়ে আছে সে।নগ্ন কোমল পা জোড়ায় আর্দ্র স্পর্শ পেতেই চোখ কুঁচকে নেয় জান্নাহ্।কিন্তু ক্রমশই সেই স্পর্শ গভীর হতে লাগলো।আর্দ্র স্পর্শের সাথে উষ্ণ পবন জান্নাহ্কে ধীরে ধীরে সপ্রতিভ করে তুললো।সেই অযাচিত স্পর্শ ক্রমাগতভাবে ধাবমান হতে লাগলো তার শরীরের উর্ধ্বাংশে।অস্বস্তি হতে লাগলো জান্নাহ্ এর।সকল পাহাড়সম ক্লান্তিকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে ঝট করে উঠে বসে জান্নাহ্।নিমিঝিমি চোখে সে অদ্ভুত কিছুর সম্মুখীন হলো। চোখের পাল্লা দুটো মেলতে আজকাল বড্ড বেগ পেতে হয় জান্নাহ্ এর।ভারি পাওয়ারের ঔষধ খেয়ে শরীরটাকে আরো বেশি দুর্বল লাগে।দিনের বেশির ভাগ সময় বিছানার সঙ্গেই সই পাতে জান্নাহ্।বাকি সময়ও হেলেদুলে চলে।ভাগ্যিস গত সপ্তাহে এক মাসের কোর্স কমপ্লিট হয়েছে।তবুও তার রেশ কাটতে লম্বা সময়।
এলোমেলো হয়ে উঠার পর একটু ধাতস্থ হয়ে তাকাতেই দেখে তার চক্ষু সীমানার ভেতর তার প্রিয় মানুষটি বসে আছে।ভালো করে সব কিছু বোঝার আগেই সারহানের সেই মুগ্ধ কন্ঠের আওয়াজের আলোড়ন শুরু হয়।উৎকর্ণ হয়ে তা শুনে জান্নাহ্।
“মেনি মেনি হ্যাপি রিটার্নস অফ দ্যা ডে এন্ড হ্যাপি অ্যানিভার্সেরি মাই মিল্কি বিউটি।”
জান্নাহ্ তার ঘুমে ঢলুঢলু চোখের পাতা প্রশ্বস্ত করে সারহানকে দেখে।অস্ফুট আলোয় সারহানকে আরো রহস্যময় লাগছে।জান্নাহ্ পুরো রুমে চোখ বুলায়।রঙ বেরঙের মোমবাতি জ্বালানো।ফ্লোর জুড়ে ছড়িয়ে আছে হার্টশেপ কালারফুল বেলুন।জান্নাহ্ এর নাকে এসে ঠেকে রজনীগন্ধার তীব্র সুবাস।তা ধীরে ধীরে প্রকট হতে লাগলো।জান্নাহ্ এর ঘুম উবে যায়।পায়ে ঠান্ডা ঠান্ডা কিছু অনুভূত হতেই তা গুটিয়ে নেয়।একজোড়া নুপুর পড়ানো পায়ে।মোমবাতির আবছা আলোয় চিকচিক করছে।
জান্নাহ্ কল্পনাতীত অবাক হয়ে বললো–
“এইসব কী সারহান?
সারহান বিগলিত হাসলো।মোহবিষ্ট গলায় চাপা সুরে হিসহিসিয়ে বললো–
“আজ আমার রজনীগন্ধার জন্মদিন।আর আমাদের প্রথম বিবাহ বার্ষিকী।আজ এই ধরার সাথে সাথে আমিও ভাগ্যবান।আপনি এসেছন আমার জীবনে।”
জান্নাহ্ মুচকি হাসলো।এতোকিছুর মধ্যে মনেই ছিলনা আজ তার জন্মদিন।জান্নাহ্কে কিছু বলতে না দিয়েই তাকে কোলে তুলে নেয় সারহান।চকিতে ভয় পেয়ে আঁতকে উঠে জান্নাহ্।হতভম্ব গলায় অধৈর্য হয়ে বললো—
“কী,কী করছেন!
সেই অবস্থায় জান্নাহ্ এর কপালে নিজের কপাল ঠেকিয়ে ধরে সারহান। অনুরক্তির গলায় বললো–
“আপনার কপালে কপাল ঘষে নিজের দুর্ভাগ্য বদলানোর চেষ্টা করছি।”
চোখের কোন ক্ষীন করে অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকায় জান্নাহ্।ড্রয়িং রুমে একটা টুলের উপর একটা বারবিডল কেক।যার গায়ে চেরি বসানো।জান্নাহ্কে কোল থেকে নামায় সারহান।আচম্বিত হয় জান্নাহ্।বিস্ময়কর আবেশে আচ্ছন্ন জান্নাহ্।কেকের পাশেই সাদা আর হালকা গোলাপী রঙের মিশেল মোমবাতি।যেমনটা চেরি ফুলের রঙ হয়।নীল,কালো আর কুসুম রঙের হলুদের শিখা জ্বলছে মোমবাতির ডগায়।সারহান নরম চাহনি দিয়ে মখমলে গলায় বললো–
“ব্লৌ দিস।”
জান্নাহ্ প্রসন্ন হাসে।চোখ দুটো তার উজ্জ্বল।কৃত্রিম আলোয় যেনো তা আরো গভীর হচ্ছে।জান্নাহ্ মোমবাতিতে ফুঁ দিতে গেলে সারহান ব্যস্ত হয়ে জান্নাহ্ এর মুখ চেপে ধরে।সরব গলায় বললো-
“নো মাই নর্থ স্টার।”
সারহান জান্নাহ্ এর পেছনে গিয়ে জান্নাহ্ এর কোমর আলতো করে জড়িয়ে ধরে।নিজের মুখ দিয়ে জান্নাহ্ এর কানের পাশ থেকে তার ছড়ানো চুলগুলো সরিয়ে কাঁধে চিবুক রাখে।কানের সাথে অধর লাগিয়ে ফিসফিসিয়ে বললো–
“আগে উইশ তো করুন।তারপর মোমবাতি নেভাবেন।”
সারহানের দিকে আস্ত নজর দিয়ে চোখে হাসে জান্নাহ্।সারহানের তৃষ্ণার্ত চোখ দুটো আটকে যায় জান্নাহ্ এর পাতলা কমলার কোষার মতো ঠোঁটে।টুপ করে জান্নাহ্ এর নাকের উপর চুমু খেয়ে বললো—
“কী হলো উইশ করুন।”
জান্নাহ্ ঠোঁটের কোণ প্রসারিত করে আমুদে হাসলো।মোমবাতি নেভাতেই সরব গলায় বলে উঠে সারহান—
“শুভ জন্মদিন রজনীগন্ধা।এই দিনে ধরনীতে এসে তাকে ধন্য করার জন্য আর ছন্নছাড়া সারহানকে ভালোবাসার জন্য।সে সারাজীবন আপনার প্রতি কৃতজ্ঞ থাকবে।”
জান্নাহ্ মৃদু গলায় বলে উঠে—
“আপনি আমার কাছে ঋণী নন।”
সারহান দুই হাত দিয়ে জান্নাহ্কে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরে তার চুলে অধর ছুঁইয়ে বললো—
“আই নো রজনীগন্ধা।কেক টা কাটুন এইবার।”
সারহানের বুকে মুখ গুঁজে আছে জান্নাহ্।তার শরীরের মিষ্টি পুরষালী ঘ্রাণে অদ্ভুত নেশা।দুই হাতে সারহানের টিশার্ট খামচে ধরে রেখেছে জান্নাহ্।স্বাভাবিক গলায় বললো সারহান—
“রজনীগন্ধা।”
সারহানের বুকে মুখ গুঁজেই অস্ফুট সুরে জান্নাহ্ বললো–
“হু।”
“কী চাই আপনার বলুন?
জান্নাহ্ আলতো করে সারহানের প্রশ্বস্ত বুকে মুখ ঘষতে থাকে।মাথা আলগা করে তার বুকে চিবুক ঠেকিয়ে মৃদু গলায় বললো–
“কিছু চাই না আমার।”
সারহান ধীর গলায় বললো—
“কিছু তো চান।আজ যা চাইবেন তাই আপনাকে দেবো আমি।যদি প্রাণ টা চান সেটাও পাবেন।”
জান্নাহ্ অতি নরম গলায় বললো—
“আমার শুধু আপনাকে চাই।আপনিই আমার গিফ্ট।আর আমি আপনার রিটার্ন গিফ্ট।সারহান ছাড়া তার রজনীগন্ধার সুবাস বিলীন।”
সারহান গাঢ় গলায় বললো–
“মিস করলেন কিন্তু!
জান্নাহ্ কিছু বললো না।সে সারাজীবন এই মানুষটার বুকের মাঝে থাকতে চায়।তার শিরায় রক্ত হয়ে প্রবাহিত হতে চায়।তার কন্ঠনালির শব্দ হতে চায়।তার নিঃশ্বাস হতে চায়।তার হৃদপিন্ডের হৃদকম্পন হতে চায়।নিঃশব্দে ঝড় তুলে সারহানের আলতো কন্ঠ,বললো–
“যান,আপনার সেই প্রিন্সেস গাউনটা পড়ে আসুন।”
জান্নাহ্ চমকিত হয়।উৎসুক হয়ে বললো–
“এতো রাতে!
সারহান বিগলিত গলায় বললো—-
“রাত হোক বা দিন।পড়বেন তো আমার জন্য।আই এম ওয়েটিং।”
জান্নাহ্ সময় নষ্ট করলো না।গাঢ় লাল রঙের গাউনে জান্নাহ্ এর ফর্সা রঙ আরো বেশি দ্যুতিময় লাগছে।জান্নাহ্ এর দিকে অনিমিখ চেয়ে রইলো সারহান।আলগোছে তাকে এনে আয়নার সামনে দাঁড় করায়।মোমবাতির আলোয় এক অপ্সরা মনে হচ্ছে জান্নাহ্কে।জান্নাহ্ এর পেছনে দাঁড়ায় সারহান।আয়নার দিকে সরল দৃষ্টি রেখে কোমল গলায় বললো–
“আপনার আরেকটু লম্বা হওয়া উচিত ছিলো।”
জান্নাহ্ কৌতুকমাখা গলায় বললো–
“কেন!আমি কী স্ট্যাচু অফ লিবার্টি নাকি!
দুর্বোধ্য হাসলো সারহান।আয়নার দিকে তাকিয়ে জান্নাহ্ এর তীক্ষ্ম চোখে চোখ রেখে অদ্ভুত কান্ড করে সারহান।জান্নাহ্ এর গাউনের জীপার টেনে খুলে দেয়।ধুম করে ঝড়ের বেগে সারহানের দিকে ফিরে তাকে খামচি মেরে ধরে জান্নাহ্।কপট রাগ করে বললো–
“আপনি একটা অসভ্য।”
সারহান মিচকি হেসে বললো–
“বিয়ের এক বছর পর আপনার মনে হলো আমি অসভ্য!
জান্নাহ্ তাড়া দিয়ে বললো–
“ঠিক করুন বলছি।”
সারহান মজা করে হাসে।টান দিয়ে জীপার আটকে দুই হাতে নিজের সাথে চেপে ধরে জান্নাহ্কে।মৃদু গলায় প্রশ্ন করে—
“রজনীগন্ধা,আপনার বয়স কতো হলো?
জান্নাহ্ সোজা বললো–
“ষোলো।”
“বড় হয়ে যাচ্ছেন আপনি।”
“আর আপনি বুড়ো।”
“আর এই বুড়োকেই পাগলের মতো ভালোবাসেন আপনি।”
জান্নাহ্ অভিমানি গলায় বললো–
“ভালোবাসি তো কী হয়েছে?
“মৃত্যুকে বেছে নিয়েছেন আপনি।”
জান্নাহ্ সরস গলায় বললো—
“ভালোবেসে মরনেও সুখ।”
নিরবতা নেমে আসে পুরো ঘর জুড়ে।টিমেটিমে মোমবাতির আলোয় আলোকিত ঘর।রজনীগন্ধার তীব্র সুবাস।দুইজন মানব-মানবীর পড়ন্ত নিঃশ্বাসের আন্দোলন।একে অপরকে প্রগাঢ়ভাবে পাওয়ার তৃষ্ণা।সারহানের হৃদযন্ত্রের ঢিব ঢিব শব্দ জান্নাহ্ এর কর্ণকুহরে ঝড় তুলতে লাগলো।তার পুরুষালী ছোঁয়া দাঁপিয়ে বেড়াচ্ছে জান্নাহ্ এর রন্ধ্রে রন্ধ্রে।উত্তাল ঢেউ পাড় খুঁজে পাচ্ছে না।কম্পন শুরু হয় জান্নাহ্ এর শরীরে।অনুরণন শুরু হয় তার ওষ্ঠাধরে।সারহানের বুকের মাঝে আলগোছে অধর ছোঁয়াতে থাকে জান্নাহ্।সেই স্পর্শে জেগে উঠে সারহানের পৌরষসত্তা।কিন্তু সে নিরুত্তেজ। প্রতিক্রিয়াহীন এক শক্ত মানব।জান্নাহ্ এর শ্বাস ঘন হতে থাকে।তার তুমুল শ্বাসের বর্ষণ যেনো বেপরোয়া।দাঁতে দাঁত চেপে সারহানকে আরো জোর দিয়ে আঁকড়ে ধরে।বাঁকা হাসে সারহান।তার রজনীগন্ধা উপচে পড়া সুবাসে অসাঢ় হয়ে যাচ্ছে।সেই সুবাস যে তাকে নিতে হবে।জান্নাহ্ তার দাঁতের ব্যবহার করে।তার ছোট ছোট ইঁদুর দাঁত দিয়ে সজোরে কামড় বসায় সারহানের বুকে।সারহান একটা দীর্ঘশ্বাস টেনে তার বলিষ্ঠ দুই হাতের বাঁধন দৃঢ় করে পিষে ধরে জান্নাহ্কে তার বক্ষস্থলে।
,
,
,
অন্ধকার ঘরে ডিভানে চিবুক রেখে অনিমেষ চাহনিতে বসে আছে রাফাত।তার চোখের সামনেই সাত ইঞ্চির ষোলোটা মোমবাতি।পাশেই বারবিডল কেক।যাতে চেরি বসানো।রাফাতের চোখ দুটো বিষন্ন হাসছে।ক্লান্ত এবং আর্দ্র গলায় বলে উঠে—
“হ্যাপি বার্থডে রেড চেরি।তোমার জীবনের প্রতিটি দিন সুন্দর হোক।যে জীবন তুমি আমাকে ছাড়া বেছে নিয়েছো সে জীবন তোমার কল্যাণকর হোক।তুমি ভালো থাকো।বাঁচো যুগ যুগ।তোমার প্রতীক্ষায় আমি অনন্ত প্রহর থাকবো অপেক্ষায়।”
কেকের চারপাশে জ্বলছে মোমবাতি।ক্রুর হাসে রাফাত।বন্ধ ফ্যানের নিচে দরদর করে ঘামছে তার শরীর।চোয়াল বেয়ে পড়ছে উষ্ণ জল।ক্ষীন শ্বাস ফেলছে রাফাত।তার চাহনিতে কোনো পরিবর্তন হলো না।এক হাত অতি সন্তর্পনে উঠিয়ে কেকের পাশ থেকে মোমবাতি হাতে নেয়।সেটাকে ঢালু করে আরেক হাতের তালুর উপর ধরে।তেরছা অগ্নি শিখায় মোম গলে রাফাতের হাতে পড়ছে।রাফাতের কোনো অনুভূতি হলো না।সে একই কাজ বারবার করলো।অদ্ভুত তৃপ্তিকর হাসি তার মুখে।মোমবাতির সেই অস্বচ্ছ আলোয় ভয়ংকর লাগছে রাফাতকে।প্রায় পাঁচটা মোমবাতি গলিয়ে সে তার হাত মাখিয়ে ফেলে।
বিছানায় রাফাতের অস্তিত্ব না পেয়ে উঠে পড়ে ইশাক।রুম থেকে বের হতেই দেখ ভয়ংকর কান্ড ঘটাচ্ছে রাফাত।শশব্যস্ত হয়ে এসে মোমবাতিসহ পুরো কেক ফেলে দেয় ইশাক।কিছু বুঝে উঠার আগেই ঘামে ভেজা রাফাত হিংস্র রুপ ধারণ করে।খলবলিয়ে উঠে ইশাকের গলা চেপে ধরে ফোঁস ফোঁস করে বজ্রকঠোর গলায় বললো—
“এই,এইটা কী করলি তুই!আমার রেড চেরির জন্মদিনের কেক কেন ফেললি!এতো সাহস হলো কী করে তোর?
ইশাক ভড়কে যায়।রাফাতের শরীরে যেনো কোনো দানবীয় শক্তি ভর করেছে।শ্বাস আটকে আসে ইশাকের।রুদ্ধশ্বাসে ভাঙা ভাঙা করে বললো–
“ছা,,ড় রা,,ফা,,ত।”
দাঁত-মুখ খিঁচে আরো জোরে চেপে ধরে রাফাত।চোখ দিয়ে যেনো নগ্ন দাবানল জ্বলছে যেনো সব এখনই ভষ্ম করে দিবে। এই দুনিয়ার কোনো মায়াই তার নেই।বাধ্য হয়ে ইশাক তার মনের বিরুদ্ধে একটা কাজ করে।রাফাতের চোয়াল বরাবর একটা ঘুষি মারে।ইশাকের অতর্কিত হামলায় মুখ থুবড়ে পড়ে কাউচের উপর রাফাত।রাফাত উঠলো না।সেখানে মুখ চেপে ধরে অশ্রু বিসর্জন দিতে লাগলো।অসহিষ্ণু ইশাক ত্রস্ত হয়ে বন্ধুকে টেনে উঠিয়ে ধরে।বুকে বিঁধে যায় এই যন্ত্রনা।
ভালোবাসা কেনো এতো বিষাক্ত যা তিলে তিলে নিঃশেষ করে জীবন সঞ্জীবনী?এই স্বাধ কখনো নিতে চায় না ইশাক।বন্ধুর এই কষ্টে সে দৃঢ় সংকল্প আঁটে কখনো প্রেম নামের অভিশাপ না আসুক তার জীবনে।এই জীবন ব্যর্থ তো হবে না।হয়তো পৃথিবীর সবচেয়ে সুখকর অনুভূতি থেকে সে বঞ্চিত হবে।তবুও তো এই মৃত্যুসম যন্ত্রণা তাকে ভোগ করতে হবে না প্রেয়সীর বিরহে।
হিনহিনে গলায় বলে উঠে ইশাক—
“কেন নিজেকে এভাবে শেষ করছিস?কেন পোড়াচ্ছিস নিজেকে এই প্রেমাগুনে।ভুলে যা জান্নাহ্কে।”
এক সমুদ্র কষ্ট নিয়ে শ্রান্ত গলায় বললো রাফাত—
“আমি তো পুড়ে ছাই হয়ে গেছি।এখন শুধু পড়ে আছে আমার অঙ্গার।”
“বর্ষিলে প্রেমাগুন,জ্বলে দেহপিঞ্জর,পুড়ে হয় ছাড়খার
ছাই হয়ে উড়ে যায় অনুভূতি,পড়ে থাকে অঙ্গার।”
আক্রোশে ফেটে পড়ে ইশাক।দাঁতখামটি মেরে বললো-
“কী পেয়েছিস ওই মেয়ের মধ্যে তুই!কেন ভুলতে পারছিস না।ও যদি তোকে ছাড়া ভালো থাকতে পারে তুই কেন পারবি না!
চিৎকার দিয়ে উঠে রাফাত।মেঘের মতো গর্জন করে বললো–
“পারবো না আমি।পারবো না আমি ওকে ভুলতে।জীবনের সাতটা বছর দিয়েছি ওকে আমি।যখন থেকে ওর জন্য আমার অনুভূতি জাগ্রত হয়েছে এই দুই চোখ দিয়ে আগলে রেখেছি ওকে আমি।নিজের স্কুল বাদ দিয়ে ওকে স্কুলে নিয়ে যেতাম।এক্সামের সময় ওর জন্য ঘন্টার পর ঘন্টা দাঁড়িয়ে থাকতাম।জ্বর হলে সারারাত ওর পাশে বসে থাকতাম।এইটুকুই ছিলো।এতো বড় কেন হলো ও!জীবনের সব সিদ্ধান্তে ওকে আমি সঠিক পরামর্শ দিয়েছি।তাহলে আজ কেন ওর জীবনের সবচেয়ে বড় সিদ্ধান্ত ও একাই নিয়ে নিলো!ছেড়ে চলে গেলো আমাকে।আর এভাবেই গেলো একেবারে আমাকে নিঃস্ব করে দিয়ে গেলো।”
রাফাত তেড়ে এসে ইশাককে খাবলে ধরে।দারাজ গলায় বললো—-
“তুই তো বললি ও কিছুই বুঝে না।যেই মেয়ে কিছুই বুঝে সে স্বামীর সংসার করে কী করে!ছাড়বো না ওকে আমি।আমার প্রশ্নের জবাব না দিলে ছাড়বো না ওকে আমি।”
ধপ করে বসে পড়ে রাফাত।পুরুষ মানুষেরও কাঁদতে হয়।কখনো কখনো নিজেকে বাঁচাতে কাঁদতে হয়।নিজেকে ভাঙা থেকে বাঁচাতে কাঁদতে হয়।
ইশাক আর কিছু বলার সাহস করলো না।রুম থেকে বেরিয়ে রাফাতের বাবাকে কল করে।অধৈর্য গলায় বললো–
“প্লিজ আঙ্কেল কিছু একটা করুন।নিয়ে যান ওকে এখান থেকে।নাহলে ওকে বাঁচাতে পারবেন না।ও ভয়ংকর হয়ে গেছে।যেকোন মুহূর্তে কিছু একটা করে বসবে।বাঁচান ওকে।”
চলবে,,,