জান্নাহ্ “পর্বঃ৫৮

0
3117

#জান্নাহ্
#পর্বঃ৫৮
লেখনীতেঃতাজরিয়ান খান তানভি

স্থির নয়ন জোড়া আবদ্ধ করে সারহানের নির্লিপ্ত মুখের দিকে অনিমেষ চেয়ে আছে সরফরাজ।এমন একটা কাজ করবে তার ডিপার্টমেন্টের বেস্ট রিপোর্টার সে ভাবতে পারেনি।সরফরাজের গভীর,শীতল দৃষ্টিতেও ভাবান্তরহীন সারহান।
সরফরাজের নিষ্কম্প মস্তিষ্ক তড়াক করে উঠে সারহানের এমন আবদারে।আগামী এক বছরের জন্য লিভ অ্যাপলিকেশন জমা দিয়েছে সারহান।সরফরাজ থমথমে গলায় বলে উঠেন—

“এইসবের মানে কী সারহান!এক বছরের জন্য কোনো প্রতিষ্ঠান লিভ অ্যাপলিকেশন মঞ্জুর করে?

উদ্বেগহীন ঝরঝরে হাসে সারহান।আরেকটা পেপার টেবিলে রেখে মৃদু গলায় বললো—

“এইটা আমার রেজিগনেশন লেটার।দুটোর যেকোনো একটা এক্সেপ্ট করে বাকিটা পাঠিয়ে দিবেন।আসসালামু আলাইকুম স্যার।”

কোনো ধরনের দ্বিধা ছাড়াই উঠে দাঁড়ায় সারহান।তার সাথে হতবাক দৃষ্টিতে উঠে দাঁড়ায় সরফরাজ।কৌতূহলী গলায় বললেন—

” এইসবের মানে কী সারহান?

সারহান চট করে হাসি ফুটায় তার পুরু অধরে।নির্বিঘ্ন গলায় বললো—

“বেঁচে থাকলে আবার ফিরে আসবো স্যার।আপনার কাছে আমি ঋনী।আমার সবচেয়ে দুর্দিনে আপনি যদি আমার পাশে না দাঁড়াতেন তাহলে আজকের সারহান তৈরি হতো না।নিজেকে প্রমাণ করার সুযোগ করে দিয়েছেন আপনি।থ্যাংকস আ লট।আপনার সুস্থতা কামনা করছি।ভালো থাকবেন।আসি।”

সরফরাজ ব্যগ্রতায় বারকয়েক ডেকে উঠলেন।কিন্তু সারহানের কর্ণকুহর হলো না তা।নিজের গাড়িতে গিয়ে বসলো সারহান।তার চোখে ভেসে উঠে তার রজনীগন্ধার সেই মায়াবী চোখ।স্বগতোক্তি করে বললো—

“আই এম রিয়েলী সরি রজনীগন্ধা।আই এম রিয়লী সরি।”
,
,
,
হু হা করে হেসে ঘর কাঁপাচ্ছে রাফাত।তার হাসিতে পিত্তি জ্বলে যাচ্ছে জান্নাহ্ এর।তার ঘরে ঢোকার গুটি টা খেয়ে দিলো!ফ্যাকাশে চোখে চেয়ে আছে জান্নাহ্।মিটিমিটি হাসছে রাফাত।

লুডুর ঘরে এখনো জান্নাহ্ এর তিনগুটি অবশিষ্ট।যেখানে রাফাতের একটাই।রাফাতের দৃষ্টি জান্নাহ্ এর চিন্তিত মুখে।আর জান্নাহ্ এর তার গুটিতে।রাফাতের ওই রাক্ষুসে গুটির ভয়াল গ্রাস থেকে নিজের গুটি বাঁচাতে তটস্থ সে।

রিতা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো।এ কয়েকদিনে যেনো তার ঘরে প্রাণ ফিরে এসেছে।রাফাত হাসছে,খাচ্ছে,কথা বলছে।সেই প্রাণচঞ্চল,প্রাণউচ্ছল রাফাতের প্রাণ সঞ্জিবনী নিয়ে ফিরেছে জান্নাহ্।কাঁদো গলায় বলে উঠে জান্নাহ্–

“খেলবো না আমি।তুমি আমার সব গুটি খেয়ে দিলে।বেহুদা রাফাত।”

হা হা করে হেসে উঠে রাফাত।সরব গলায় বললো—

“জান্নাহ্!তুমি এখন পর্যন্ত কখনো আমার সাথে জিততে
পারো নি।আজও হারবে।”

জান্নাহ্ নাক ফুলিয়ে চোখ,মুখ বিকৃত করে পুরো লুডুর বোর্ড এলোমেলো করে ফেলে।রাফাত ফচকে হেসে বললো—

“হারু পার্টি।”

“বেহুদা রাফাত।মেরেই ফেলবো আজ তোমাকে।”

জান্নাহ্ বসা থেকে উঠতেই ডোর বেল বাজে।চকিতে সবাই সেইদিকে দৃষ্টি ক্ষেপন করে।ড্রয়িং রুমেই বসা ছিলো রাফাত আর জান্নাহ্।রিতা কিচেন থেকে দ্রুত পা চালিয়ে আসেন।জান্নাহ্কে বসতে বলে দরজা খুলে দাঁড়ায় রাফাত।রাফাতের বিস্ময় আকাশ ছুঁলো।অধরে অমায়িক হাসি ঝুলিয়ে দাঁড়িয়ে আছে সারহান।হাত টা বাড়িয়ে দিয়ে জিঙ্গেস করলো—

“কেমন আছো রাফাত?

বিস্ময় কাটাতে খানিকটা সময় নিলো রাফাত।হতচকিত চোখ জোড়া স্থির হয়ে রইলো।হাসি হাসি মুখটার হৃদয়খোলা হাসি যেনো কোথায় মিলিয়ে গেলো!
অপ্রভ গলায় প্রত্যুত্তর করে রাফাত—

“ভালো।তুমি?

সারহান চোখে হেসে নরম গলায় বললো—

“ভেতরে আসতে বলবে না?

হতভম্ব রাফাত কী করবে বুঝে উঠতে পারছে না।মিইয়ে গলায় বললো–

“এএএসো।”

স্মিত হাসে সারহান।ঘরে প্রবেশ করেই তার নয়নযুগল আটকে যায় জান্নাহ্ এর দিকে।থমথমে মুখ তার।জান্নাহ্ এর কাছে গিয়ে হৃদয় গলানো হাসি দিয়ে বললো—

“কেমন আছেন রজনীগন্ধা?

জান্নাহ্ বেশ কিছু সময় অনিমেখ চেয়ে রইলো তার প্রাণের দিকে।চোখ দিয়ে জল ছাপিয়ে আসে জান্নাহ্ এর।সারহান অদ্ভুত কান্ড করে বসে।দুই হাতে ঝাঁপটে ধরে জান্নাহ্কে।রিতা নিজের ছেলের দিকে তাকায়।রাফাত তার দৃষ্টি ঘুরিয়ে নেয়।ছেলের চাপা আর্তনাদ শুনতে বেগ পেতে হলো না রিতার।বুক ফুলিয়ে শ্বাস টেনে নেয় সারহান।জান্নাহ্কে ছেড়ে দাঁড়ায় সারহান।মিষ্টি সুরে বললো—

“চলুন রজনীগন্ধা।আমি আপনাকে নিতে এসেছি।”

আলতো করে জান্নাহ্ এর হাত ধরে সারহান।রিতা কে কৃতজ্ঞতা জানায়।রাফাতকে বললো–

“থ্যাংকস।আমার রজনীগন্ধার খেয়াল রাখার জন্য।”

রাফাতের নিঃশ্বাস ভারি হয়ে আসে।খুশিতে আত্নহারা দুই চোখ মুহূর্তেই উত্তাল সমুদ্রে রূপ নেয়।কিন্তু ঢেউ উপচে আসার আগেই নিজেকে সতন্ত্র করে রাফাত।সে তার রেড চেরিকে খুশি দেখতে চায়।রাফাতের দিকে কাতর চোখে তাকিয়ে আছে জান্নাহ্।চোখে হেসে অধর ছড়ায় রাফাত।হাত উঠিয় ইশারা করে।চোখের ভাষা বুঝে নেয় জান্নাহ্।রাফাত বলছে,আমি ভালো আছি রেড চেরি।তুমি ভালো থাকলেই তোমার বেহুদা রাফাত ভালো থাকবে।খুব ভালো থাকবে।”

গাড়ি চলছে তার নিজ গতিতে।জান্নাহ্ অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।গাড়িতে উঠে আর একটা কথাও বলে নি সারহান।ধরা গলায় ডেকে উঠে জান্নাহ্—

“সারহান!

গাড়ির স্প্রীড বাড়ায় সারহান।কোনো প্রতিক্রিয়া করলো না সে।হালকা হালকা কেঁপে উঠে প্রস্ফুরিত গলায় আবার ডেকে উঠে জান্নাহ্—

“সারহান!

চট করে রেডিও অন করে সারহান।গাড়ির গতিও বৃদ্ধি পায়।সারহান যেনো তার সুপ্ত রাগে পিষে ফেলবে গাড়িকে।রেডিওতে তখন গান হচ্ছে।

“পৃথিবীর যত সুখ,যত ভালোবাসা
সবই যে তোমায় দেবো একটাই আশা,
তুমি ভুলে যেওনা আমাকে…
আমি ভালোবাসি তোমাকে….।

সারহানের এহেন ব্যবহারে আর কোনো কথা বললো না জান্নাহ্।খোলা জানালায় মুখ দিয়ে বাইরের দিকে চেয়ে রইলো।জান্নাহ্ এর শঙ্কিত মনে একটা প্রশ্ন উদয় হয়।সারহানের গাড়ি শহর ছেড়ে বাইরে যাচ্ছে।কোথায় যাচ্ছে সারহান?
,
,
,
শহর থেকে দূরে একটা কৃত্তিম নদীর থেকে মাইল খানেক দূরে একটা বাংলো বাড়ি।প্রায় কয়েক একর জমির উপর বাংলোটি।চারপাশে সবুজের সমারোহ।বড় বড় দেবকাঞ্চন,রাধাচূড়া,রেইনট্রির আরো বিভিন্ন পাহাড়ি আর ফলের গাছ লাগানো বাংলোর একপাশে।বিশাল বাংলোটির বাইরের সদর দরজাটিও বিশাল।যেনো বাড়িটির জন্যই সে উপযুক্ত।আশপাশ একদম অনিকেত প্রান্তর।বাংলো থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে একটা টাওয়ার।আশেপাশে ফসলি জমি।

সারহানের গাড়ি এসে থামে বাংলোটির সামনে।শান্ত পা দিয়ে বাইরে নেমে আসে জান্নাহ্।তার চোখে মুখে উছলে উঠছে হাজারো প্রশ্ন।সারহান কোনো কথা বললো না।জান্নাহ্ও কোনো কথা বললো না।সারহানকে অনুসরণ করতে লাগলো।বিশাল সদর দরজায় ডাসা এক তালা লাগানো।সেইটা খুলেই ভেতরে প্রবেশ করে সারহান সাথে বিনাবাক্যে জান্নাহ্।বাংলোর দরজা খুলে অবাক বিস্ময়ে চেয়ে থাকে জান্নাহ্।বাংলোর বাইরেটা মিহি হলুদ আর ভেতরটা সাদা আর মিহি গোলাপী রঙের।আধুনিক ইন্টিরিয়র ডিজাইন।বাংলোতে ঢুকতেই প্রশ্বস্ত লিভিং রুম।এর একপাশের দেয়ালে জান্নাহ্ এর ছবিতে দেয়াল ভরা।আরেক পাশে দেশী-বিদেশী বড় বড় চিত্রকরদের চিত্রকর্ম।দরজার দুই পাশেই দুটো মানব আকৃতির সমান এন্টিং ফুলদানি।কৃত্তিম ফুল তাতে।দরজার বাম দিকটার কোণার দিকে কিছু জায়গা জুড়ে ফলস গ্রাস কার্পেট বিছানো।তাতেই দাঁড় করানো সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য আনয়িত কৃত্তিম বাঁশঝাড়।যা দেখলে প্রথম দেখায় মনে হবে একদম বাস্তবিক।তার পাশেই দৈত্যাকৃতির একুরিয়াম।ডান দিকে দেয়াল ঘেঁষেই কাউচ।কাউচের সাথে লাগোয়া একটা শ্বেত পাথরের অর্ধ বিবসনা আবেদনময়ী নারীর মূর্তি।জান্নাহ্ আলতো পায়ে মূর্তিটির সামনে গিয়ে দাঁড়ায়।ধীর হাতে তাকে ছুঁয়ে দেখে।ধবধবে সাদা মূর্তিটির বুকের খানিকটা অংশ দৃশ্যমান।তাতেও যে তার কামনা উপচে পড়ছে।

ধীর গলায় প্রশ্ন করে জান্নাহ্—

“এইটা কোথায় থেকে এনেছেন সারহান?

সারহান ততক্ষনে জান্নাহ্ এর পেছনে এসে দাঁড়ায়।তার কোমর জড়িয়ে বুকের সাথে পিঠে ঠেকিয়ে কাঁধে চিবুক রেখে ফিসফিসিয়ে বললো—

“আমেরিকা।আপনার পছন্দ হয়েছে?

জান্নাহ্ অস্ফুট স্বরে বললো–

“হুম।”

সারহান জান্নাহ্ এর গলার দিকটায় অধর ছোঁয়ায়।তার শুকনো ঠোঁটের স্পর্শে সরব হয়ে উঠে জান্নাহ্ এর থিতিয়ে থাকা অনুভূতি।সচল হয়ে উঠে জমাট বাধা রক্তকণিকা।জান্নাহ্ ঘুরে দাঁড়ায়।ক্ষীণ গলায় বললো—

“এইটা কার বাড়ি সারহান?

সারহান হালকা ঝুঁকে জান্নাহ্ এর ললাটে অধর ছোঁয়ায়।মোলায়েম গলায় বললো—

“আমাদের।সারহান আর তার রজনীগন্ধার।”

জান্নাহ্ কিঞ্চিৎ উৎসুক গলায় বললো—

“মানে?

সারহান সুদীর্ঘ শ্বাস ফেলে।জান্নাহ্কে ঘুরিয়ে পেছন দিক থেকে জড়িয়ে ধরে বললো—

“এনজিও প্রতিষ্ঠাতার প্রিয় বাংলো এইটা।এইটা উনি আমার নামে করে গেছেন।আমার ফ্ল্যাটটা আমি বিক্রি করে দিয়েছি।আজ থেকে আমরা এখানে থাকবো।চলুন,ভেতরে দেখবেন।”

জান্নাহ্ কে ভেতরে নিয়ে যায় সারহান।লিভিং রুম থেকে সামনের দিকে প্রশ্বস্ত করিডোর।তার একপাশে সংকীর্ণ করিডোর হয়ে গেলে সেখানে একসাথে তিনটি বেডরুম।শেষের রুমটার সাথে একটা খোলা বারান্দা।যা থেকে পেছনের দিক সম্পূর্ণটা অবলোকন করা যায়।উত্তর দিকের করিডোর দিয়ে গেলে একটা মাষ্টার বেডরুম।দু’দিকে বড় জানালা।যেপাশে বারান্দা তার বিপরীত পাশে বাইরের দিকে বারান্দা।সেখানে ক্যাচিগেট লাগানো।কিন্তু রুমের সাথে মোটা কাঠের দরজা।ইচ্ছে করলেই এই রুম থেকে সরাসরি বাংলোর বাইরের দিকে যাওয়া যায়।বাংলোর পেছন দিকে সমান্তরালে দুটো ঘর।সেই ঘরগুলো একটাই জয়েন্ট খোলা বারান্দা।বর্ষার দিনে এখানে দাঁড়িয়ে বৃষ্টিকে ছুঁয়ে তার সৌন্দর্য আস্বাদন করা যায়।এক বর্ষণমুখর সন্ধ্যায় ধোঁয়া উঠা এক মগ কফি আর দুরের নদীর সেই প্রাকৃতিক সৌন্দর্য যেনো হৃদয়গ্রাহী।

জান্নাহ্ সেই মাষ্টার বেডরুমে এসে বাইরের বারান্দার সেই জানালার পাশে দাঁড়ায়। সফেদ পর্দাটা একটানে সরাতেই ঝলমলে দিনের আলো ধেই ধেই করে চোখে বিঁধে গেলো জান্নাহ্ এর।এতোটা স্বচ্ছ থাই হওয়াতে তা খোলার প্রয়োজন বোধ করলো না জান্নাহ্।নিশ্চল দৃষ্টি দিয়ে তাকিয়ে রইলো।হালকা হাওয়ায় দুলছে আমগাছের পাতা।আমগুলো স্থির।পাশে থাকা কৃষ্ণচূড়া গাছে রক্ত বর্ণীয় ফুল।জান্নাহ্ তার পেছনে ভারি বাতাস অনুভব করে।পেছন ফিরতেই সারহান তার অধর ছুঁইয়ে ধরে জান্নাহ্ এর অধরে।ভড়কে যায় জান্নাহ্।একগাল হেসে সোজা হয়ে দাঁড়ায় সারহান।মোহনীয় গলায় বললো—

“ভয় পেয়েছেন রজনীগন্ধা?

জান্নাহ্ নিঃশব্দে চোখের পলক ফেলে বললো—

“আপনি কী আমার উপর রেগে আছেন?

“কেন?

” আমি আপনাকে না বলে চলে গিয়েছিলাম।”

সারহান অধর কোণে হাসে।চঞ্চল গলায় বললো—

“নো,মাই ডিয়ার রজনীগন্ধা।”

জান্নাহ্ ছোট্ট ঢোক গিলে থমথমে গলায় জিঙ্গেস করে–

“আপনি কী আমাকে সন্দেহ করেন?

সারহান নাক টানে।জান্নাহ্ এর কপালের সাথে কপাল ঠেকিয়ে বললো—

“আই ট্রাস্ট ইউ।আমি জানি,আমার রজনীগন্ধা তার জীবনে আমার জায়গা কাউকে দিবে না।”

জান্নাহ্ আলগোছে দুর্বল হাতে সারহানকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরে।অতি আদরে মাথাটা রাখে সারহানের বুকে।চোখ ভরে আসে তার।তার জীবনটা এমন না হলেও পারতো।এই মানুষটার ভালোবাসার একমাত্র অধিকারীনি সে হলেও পারতো।তার ভালোবাসার ছোঁয়া শুধু তার জন্য হলেও পারতো।
কিন্তু কেন হলো না!সে তো সবটা দিয়ে ভালোবেসেছে এই মানুষটাকে।খামতি তো রাখেনি।তাহলে?

সারহানের পিঠের দিকটা জ্বলে উঠে।নিজের অজান্তেই ক্রন্দনরত জান্নাহ্ সারহানকে খামচি মেরে ধরেছে।সারহানের বুকের দিকটায় আর্দ্রতা অনুভব করে সে।সারহানের বুক ফুড়ে বেরিয়ে আসে এক সমুদ্র গ্লানিভরা দীর্ঘশ্বাস।নিজের হাতের বাঁধন জোরালো করে সারহান।তার বক্ষপিঞ্জিরায় আবদ্ধ হয় জান্নাহ্ নামের ছোট্ট পাখি।

আদুরে গলায় সারহান বললো—

“রজনীগন্ধা!চেঞ্জ করে নিন।আমি আপনার খাবারের ব্যবস্থা করছি।”

জান্নাহ্ সারহানের বুক থেকে মাথা তোলে।চোখে হাসে সারহান।ওয়াল আলমিরা খুলতেই চক্ষু ছানাবড়া জান্নাহ্ এর।তার জন্য শাড়ির বদলে স্কার্ট,টপস,সালোয়ার কামিজ,স্লিভলেস ড্রেস রাখা।চকিত গলায় শুধায় জান্নাহ্—

“এইসব কী সারহান?

সারহান আলমিরার সাথে হেলান দিয়ে সাবলীল গলায় বললো—

“এইটা আপনার শশুড় বাড়ি নয়।আপনার বাড়ি।আপনার যা ইচ্ছে তাই পড়বেন।জলদি ফ্রেশ হয়ে আসুন।আমি অপেক্ষা করছি।”

জান্নাহ্ অবাক দৃষ্টিতে সব দেখে।এইসব কাপড় পরা ছেড়েছে আজ অনেকদিন।জান্নাহ্ এর তার বাবার কথা মনে পড়লো।কাঁদতে কাঁদতে নিচে বসে পড়ে জান্নাহ্।এখন আর সে তার বাবার ডল নয় এখন সে একজন খুনি।ঘোলা চোখে জান্নাহ্ এর চোখ যায় আলমিরার নিচের দিকটায়।একজোড়া গোলাপী স্ক্যাকার্স।অচঞ্চল হাতে তা নেয় জান্নাহ্।হাত বুলাতে থাকে।তার মাম্মা তার জন্মদিনে গিফ্ট করেছিলো এমন একজোড়া স্ক্যাকার্স।ভীষণ পছন্দ ছিলো তা জান্নাহ্ এর।বুক ভেঙে কান্না আসে জান্নাহ্ এর।মাম্মা,বাবা বলে কাঁদতে থাকে।কে শুনবে তার কান্না?
কেউ নেই তার।কেউ না।

টেবিলে দু হাতের উপর চিবুক লাগিয়ে জান্নাহ্ এর দিকে নিষ্পলক চেয়ে আছে সারহান।কাটা চামচের মাথায় হালকা একটু অমলেট নিয়ে মুখে দেয় জান্নাহ্।গাঢ় গলায় জিঙ্গেস করে—

“এভাবে কী দেখছেন?

সারহান মুচকি হেসে বলে—

“এই ড্রেসে আপনাকে বাচ্চা বাচ্চা লাগছে।”

জান্নাহ্ তাচ্ছিল্য সুরে বললো—

“বিয়ের সময় মনে ছিলো না?

“তখন তো এইভাবে দেখিনি।”

“কীভাবে দেখেছেন?

সারহান আলতো হেসে বললো–

“কামুক দৃষ্টিতে।”

“আর এখন?

“ভালোবাসার দৃষ্টিতে।”

জান্নাহ্ গম্ভীর গলায় বললো–

“ভালোবাসেন আমাকে?

“উঁহু।আমার রজনীগন্ধাকে ভালোবাসি।”

জান্নাহ্ মুখ ভার করে বললো–

“আমি আপনার রজনীগন্ধা নই।”

“জানি।আপনি তো ফুলনদেবী।”

জান্নাহ্ উৎসুক গলায় বললো–

“সেইটা কী?

“জানি নাতো।”

“কী জানেন?

“আপনাকে ভালোবাসতে।”

বিনাশব্দে উঠে দাঁড়ায় জান্নাহ্।তার চোখে মুখে থমথমে ভাব।বিরস অঙ্গভঙ্গি।গম্ভীর গলায় প্রশ্ন ছুঁড়ে জান্নাহ্—

“কাজে যাবেন না?

সারহান বিক্ষিপ্ত হেসে বললো—

“জবটা আমি ছেড়ে দিয়েছি রজনীগন্ধা।”

জান্নাহ্ উদ্বিগ্ন গলায় বললো—

“কেন?

জান্নাহ্কে বুকে টেনে নেয় সারহান।কোমল গলায় বললো—

“গত এক বছরে আপনার কাছ থেকে যা কেড়ে নিয়েছি তা ফিরিয়ে দিবো আপনাকে।আগামী এক বছর আমি আপনার সাথে আপনার ছায়া হয়ে থাকবো।এতোদিন যে দেহকে ভালোবেসেছি আমি আজ থেকে তার হৃদয়কে ভালোবাসবো।”

জান্নাহ্ কিছু বললো না।মুখ গুঁজে রইলো সারহানের বুকে।সারহান জান্নাহ্ এর মাথায় চুমু খায়।নির্বিকার গলায় বললো–

“আপনাকে আজ এক জায়গায় নিয়ে যাবো।”

সারহানের বুক থেকে হালকা মাথা উঠিয়ে জান্নাহ্ বললো–

“কোথায়?

“প্রেমের সমাধিতে।”

চলবে,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here