প্রাণস্পন্দন”পর্বঃ২

0
6061

#প্রাণস্পন্দন
#পর্বঃ২
লেখনীতেঃতাজরিয়ান খান তানভি

একটা আলো ঝলমলে ডুপ্লেক্স বাড়ির সামনে থামে নিষ্প্রাণের ব্ল্যাক মার্সেডিজ।জানালা দিয়ে একবার বাড়িটির দিকে তাকায় নিষ্প্রাণ।তারপর ঘাড় ঘুরিয়ে ম্লান মুখের অধিকারীণি আয়েন্দ্রিকে দেখে।মিষ্টি হেসে বললো—

“নাম ধ্রুবতারা।এইটা আমাদের বাড়ি।”

আয়েন্দ্রি নামলো না।সেভাবেই পাথরমূর্তির মতো বসে রইলো।গাড়ি থেকে নেমে আসে নিষ্প্রাণ।আয়েন্দ্রির দিকটায় গিয়ে আলগোছে গাড়ি থেকে নামিয়ে আনে তাকে।আয়েন্দ্রি যেনো নিঃশ্বাস নিতে ভুলে গেছে।এক যন্ত্রচালিত ডিভাইস সে।বাড়িটার সামনে এনে দাঁড় করায় আয়েন্দ্রিকে নিষ্প্রাণ।নিম্নদিকে পতিত অক্ষিযুগল প্রশ্বস্ত হয় আয়েন্দ্রির।ধীরে ধীরে চিবুক উঁচু করে তাকায় সে।আচম্বিত হয় আয়েন্দ্রি।রাতের আঁধারেও বাড়িটি ঝলমল করছে।এর দোতালায় কাঁচের বেড় দেওয়া খোলা বারান্দার দুই পাশে দুটো করে চারটা গোলক লাইট লাগানো।যত্ন সহকারে তার উপর ছাউনির ব্যবস্থাও আছে যাতে করে বৃষ্টিতে তা ভিজে না যায়।নিচ তলার দরজার বাইরেই করিডোর।তার দুই পাশে ফুলের টব দিয়ে ঘেরাও দেওয়া সেখানে কোনো রেলিং এর ব্যবস্থা করা হয়নি।দোতলা বারান্দার নিচের দিকে ঝুলন্ত লাইট যা বাড়ির সামনের দিকটা আলোকিত রাখে।বাড়িটির উত্তর -দক্ষিনে এক কাঠার মতো জায়গা ফাঁকা।তারপর থেকে বসত বাড়ি।বাড়িটির চারপাশে বাউন্ডারি।আর বাউন্ডারির ভেতরে বাইরে থেকে দেখা সম্ভব নয়।

বিস্ফোরিত নয়নে তা দেখতে থাকে আয়েন্দ্রি।সে যতটুকু জানে নিষ্প্রাণ একটা মেসে থাকতো।কিন্তু এই বাড়ি!
চকিতে বলে উঠে নিষ্প্রাণ–

“কীরে,কী দেখছিস এমন করে?এইটা আমাদের বাড়ি।আজ থেকে আমরা এখানেই থাকবো।”

হট করেই কোলে তুলে নেয় আয়েন্দ্রিকে নিষ্প্রাণ।হকচকিয়ে যায় যে।ভীতসন্ত্রস্ত আয়েন্দ্রি গলা আঁকড়ে ধরে নিষ্প্রাণের।নিষ্প্রাণ স্মিত হাসে।আবেগী গলায় বললো—

“সিঁড়ি বেয়ে উঠতে তোর কষ্ট হবে।”

বাড়ির সামনে যেতেই ওয়াচম্যান দরজা খুলে দেয়।ওয়াচম্যান তারিফ উপরের দিকে তাকালো না।নির্দ্বিধায় নিজের কাজ করলো।আড়চোখে একবার তারিফের দিকে তাকালো আয়েন্দ্রি।ছেলেটা কেমন অদ্ভুত !

সমতল থেকে একটু উঁচুতে বাড়িটি।নিষ্প্রাণ সিঁড়ি বেয়ে উঠতে উঠতে বিগলিত গলায় বললো–

“ভয় পাস না ধ্রুবতারা।এখন তো আমি তোর স্বামী।এই বাড়িটি একদম আমাদের স্বর্গনীড় হবে।এইখানে হবে তোর আর আমার বাসর।আজ তোকে আমি আমার সর্বস্ব দিয়ে ভালোবাসবো।আদর করবো তোকে।এই দুই বছর তোর থেকে দুরে থেকে কতটা পিপাসার্ত আমি তুই জানিস না।তোর ভালবাসার সুধায় আজ সে পিপাসা মেটাবো আমি।”

গলায় জড়িয়ে রাখা হাতে খাঁমচি মেরে উঠে আয়েন্দ্রি।গা ঘিনঘিন করে উঠে নিষ্প্রাণের কথায় তার।আলতো হাসে নিষ্প্রাণ।মোলায়েম গলায় বললো—

“মেরে ফেলবি আমাকে?তার আগে তোর ভালোবাসায় তো সিক্ত হতে দে।”

দরজার সামনে এসে থামে নিষ্প্রাণ।মালেশিয়ান কাঠের দরজার উপরিয়াংশে একটা কোটর করা।যা লক করা।নিষ্প্রাণ কোল থেকে নামায় আয়েন্দ্রিকে।আয়েন্দ্রির লাল বেনারসি অগোছালো হয়ে আছে।নিষ্প্রাণ পকেট থেকে একটা ছোট চাবি বের করে সেই লক খুলে।সেখানের একটা সুইচ চাপ দিতেই সেখানে থাকা ইলেকট্রিক ডিভাইস থেকে লেজার বেরিয়ে নিষ্প্রাণের রেটিনা স্কেন করতেই স্বয়ংক্রিয়ভাবে দরজাটা খুলে যায়।বিস্ময়কর দৃষ্টিতে তা আবলোকন করতে থাকে আয়েন্দ্রি।আয়েন্দ্রিকে ভেতরে নিয়ে আসে নিষ্প্রাণ।

আয়েন্দ্রি যেনো কোনো ঘোরের মধ্যে আছে।বিশাল ড্রয়িং রুম যেনো দিনের আলোর মতো ঝলমল করছে।একপাশে কাউচ রাখা দুই সেট।অপরপাশে অত্যন্ত নান্দনিক ডিজাইনের ডিভান।দেয়াল জুড়ে বিশ্ব সেরা চিত্রকরদের চিত্রকর্ম।উত্তরের দেয়াল ঘষে বক্রাকৃতির সিঁড়ি।দক্ষিন দিকে ডাইনিং আর কিচেন স্পেস।আয়েন্দ্রি রুদ্ধশ্বাসে দেখতে থাকে সব।তৎক্ষণাৎ আলতো করে শাড়ির ফাঁক গলিয়ে আয়েন্দ্রির কোমর জড়িয়ে ধরে নিষ্প্রাণ।নিষ্প্রাণের স্পর্শেই যেনো সম্বিৎ ফিরে পায় আয়েন্দ্রি।ছোটার চেষ্টা করতেই নিষ্প্রাণ বলিষ্ঠ হাতের চাপ প্রয়োগ করে আয়েন্দ্রির উদরে।আয়েন্দ্রি রাগে ফুঁসলে উঠে।দুই হাতের খামচি বসাতে থাকে নিষ্প্রাণের হাতে।তাতে কিঞ্চিৎ বিচলিত নয় নিষ্প্রান।চেপে ধরে নিজের সাতে আয়েন্দ্রিকে।আয়েন্দ্রির পিঠ ঠেকে নিষ্প্রাণের তপ্ত,দৃঢ় বক্ষস্থলে।আয়েন্দ্রির কাঁধে চিবুক রাখে নিষ্প্রাণ।সাবলীল গলায় বললো—

“তুই একটুও বদলাসনি।এখনো সেই রাগ!কিন্তু বিশ্বাস কর,এই দুই বছরে তুই কিন্তু আরো বেশি সুন্দরী হয়েছিস।যাকে বলে পাগল করা সুন্দরী।আমাকে পাগল করেছিস তুই ধ্রুবতারা।
আমি নিজ হাতে আমাদের বাসর ঘর সাজিয়েছি।তোর প্রিয় বেলি ফুল দিয়ে।সারা বিছানায় গোলাপের পাঁপড়ি ছড়িয়েছি।তোর প্রিয় হার্টশেপ বেলুন আর গন্ধরাজ দেয়াল জুড়ে।সেখানে তুই আর আমি থাকবো।আজ তোর উপর শুধু আমার অধিকার থাকবে।তোর প্রেমে মত্ত হবো আমি।”

আয়েন্দ্রি কাঁদলো না। গত দুই বছরে একবারও ভাবেনি এই ধ্বংসাত্মক মানুষটা আবার তার জীবনে ফিরে আসবে।নিষ্প্রাণ বেপরোয়াভাবে ছুঁতে থাকে আয়েন্দ্রিকে।ঘৃণায় লুপ্ত হয়ে যাচ্ছে আয়েন্দ্রির সকল অনুভূতি।নিষ্প্রাণ পেছন দিকে হেলিয়ে আবারো কোলে তুলে নেয় আয়েন্দ্রিকে।আয়েন্দ্রি নির্বিকার।যেনো সে কোনো খেলনা যাকে নিয়ে খেলছে নিষ্প্রাণ।

বেডরুমে আসতেই আয়েন্দ্রির বিস্ময় যেনো সাত আসমান ছুঁলো।এমনটাই চেয়েছিলো আয়েন্দ্রি।এমন করেই সাজতে চেয়েছিলো।কিন্তু স্বামী নামের পুরুষটি ছিলো অন্যকেউ।
আয়েন্দ্রিকে বিছানায় বসায় নিষ্প্রাণ।গভীর দৃষ্টি দিয়ে দেখতে থাকতে আপাদমস্তক আয়েন্দ্রিকে।আয়েন্দ্রি অপ্রস্তুত হয়।শাড়ি টেনে নিজের নিষিদ্ধ জায়গাগুলো ঢাকার চেষ্টা করে।ফিচেল হাসে নিষ্প্রাণ।ঠেস মারা গলায় বললো—

“কী লুকাস আমার কাছ থেকে?এখন তো তোর সবটা আমার।সে অধিকার অর্জন করেছি আমি।”

নিষ্প্রাণ এগিয়ে আসে আয়েন্দ্রির কাছে।তার পদ্মকোমল ওষ্ঠাধর চুম্বকের ন্যায় আকর্ষণ করছে নিষ্প্রাণকে।ধুরন্ধর নিষ্প্রাণ আয়েন্দ্রির ঠোঁট আঁকড়ে ধরে।এইবার আর আয়েন্দ্রি পূর্বের ন্যায় চড় মারতে পারলো না।কারণ নিষ্প্রাণ আগেই আয়েন্দ্রির দুই হাত চেপে ধরেছে নিজের হাত দিয়ে।মাথা ঝাঁকিয়ে নিজের রক্ষার্থেও সুবিধা করতে পারলো না আয়েন্দ্রি।গভীর আশ্লেষে আয়েন্দ্রির অধরসুধা শুঁষে নিতে থাকে নিষ্প্রাণ।রাগে অগ্নিশর্মা আয়েন্দ্রি অবিশ্বাস্য কাজ করে বসে।সজোরে এক লাথি মেরে বসে নিষ্প্রাণের বুকে।ঘটনার আকস্মিকতায় দুরে ছিঁটকে পড়ে নিষ্প্রাণ।
ফুঁসে উঠে মুখ খুলে আয়েন্দ্রি—

“জানোয়ার!একদম ছুঁবি না তুই আমাকে।নরপশু,খুনি,পাগল একদম কাছে আসবি না আমার।”

হঠাৎ এমন ধাক্কার বেগ সামলাতে পারেনি নিষ্প্রাণ।এক কাত হয়ে পড়ায় কনুই ঠেসে যায় মেঝেতে।কনুইর নিচে হালকা ঘঁষে সোজা হয়ে বসে নিষ্প্রাণ।আয়েন্দ্রির উগ্রমুর্তিতে যেনো ভীষণ মজা পেলো নিষ্প্রাণ।অবশ্য তাকে কথা বলার জন্যই এমন আচরণ নিষ্প্রাণের।মেয়েটার কন্ঠস্বর শোনার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে নিষ্প্রাণ।ফুঁসতে ফুঁসতে আবার বললো আয়েন্দ্রি—

“তুই এলি কী করে এখানে?জানোয়ার!তোকে জেল থেকে ছাড়ালো কে?
কেন তোকে ওরা ফাঁসি দিলো না?খুনি!

পৈচাশিক হাসে নিষ্প্রাণ।মেঝেতে দুই হাতের ভর দিয়ে ঘাড় কাত করে আত্মবিশ্বাসী গলায় বললো—

“পৃথিবীর কোনো শক্তি নেই যে নিষ্প্রাণ মুনতাসিরকে তার ধ্রুবতারার কাছ থেকে দূরে রাখতে পারে।”

ভীত চোখে ফোঁস ফোঁস করতে থাকে আয়েন্দ্রি।বাতাস কাঁপিয়ে হাসতে থাকে নিষ্প্রাণ।

চলবে,,,

(বিঃদ্রঃ
সবাই স্বঅনুভূতি ব্যক্ত করবেন।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here