#মোহঘোর
#পর্বঃ১০
লেখনীতেঃতাজরিয়ান খান তানভি
স্বচ্ছ, শুভ্র নভোলোকে স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ইনজাদ। তার নির্ঘুম দুই চোখে ভীষণ জ্বালা। এখন সহ্য করা ছাড়া আর কিছুই করার নেই। দীপ্ত প্রভাকর তার আভা ছড়াতে তৎপর হয়ে উঠছে। শুভ্রতার বাঁকে বাঁকে এক মনোমুদ্ধকর নীলাভ ভাঁজ। তা ক্রমশ গাঢ় হচ্ছে। মৃদু সমীরণে কম্পিত হচ্ছে ইনজাদের আঁখিপল্লব। ঠান্ডা ঠান্ডা অনুভূতি। শামিয়ানা খাটানো পুরো ছাদে। কাল রাতেই তার হলুদের অনুষ্ঠান শেষ হয়েছে। বাকি রাত এই ছাদেই দাঁড়িয়ে, বসে, হেঁটে পার করেছে ইনজাদ। সবকিছু এত জলদি ঘটছে তার কোনো তল সে খুঁজে পাচ্ছে না।
বিষণ্ণচিত্তে এক পশলা বৃষ্টি হয়ে নামল বাবার স্বস্তির ছায়া। ইনজাদের কাঁধের ওপর হাত রাখলেন পারভেজ মির্জা। ইনজাদ সচেতন দৃষ্টিতে তাকাল। ছেলের চোখের ভাষা অনেক আগেই বুঝতে পেরেছিলেন তিনি। তবে সময় ও সুযোগ হাতছাড়া হয়ে গেছে। ইনজাদ খোলা আকাশের দিকে তাকিয়ে বিষাদ গলায় বলল—
“কিছু বলবে?”
পারভেজ মির্জা দৃঢ় হয়ে দাঁড়ালেন। প্রভাতের মিষ্টি রশ্মি ছুঁই ছুঁই তার নেত্রদ্বয়। তিনি অমায়িক চোখে তাকালেন। স্নেহার্দ্র গলায় বললেন—
“রেহাংশীর যখন আট বছর তখন ওর মা মারা যায়। ওর মার মৃত্যুর পরের দিন-ই জিবরান খন্দকার বাড়ি ছেড়ে চলে যান। এরপর হয়তো দু, একবার এসেছেন। তারপর হঠাৎ করে তিনি হারিয়ে যান। বছর কয়েক রেহাংশী ওর নানুর কাছে থাকে। ভদ্রমহিলা বিধবা। ছেলের সংসারে খেটে খায়। তারপক্ষে রেহাংশীকে আগলে রাখা আর সম্ভব হলো না। চলে এলো এই বাড়িতে। তারপর এখানেই কাটে ওর বাকি জীবন।
রতন ছেলেটা ততটা ভালো নয়। বারবার ফেল করার দরুন পড়ালেখা ছেড়ে দেয়। পাড়ায় গুন্ডামি, বখাটেপনা করেই ওর দিন কাটে। বাবা মেম্বার বলে তার দাপট নিয়ে চলে। শুনেছি ওর বাবা না কী তিনটি বিয়ে করছেন। তৃতীয় বিয়েতো দ্বিতীয় স্ত্রী থাকা সত্ত্বেও করেছেন। অবাক হওয়ার বিষয় নয়।”
পারভেজ মির্জা বুক ফুলিয়ে শ্বাস নিলেন। চোখের পল্লব কাঁপছে ইনজাদের। গলার স্বর বসে যাচ্ছে। দাঁতে দাঁত চেপে বলল—
“এসব আমাকে কেন শোনাচ্ছ?”
“এইজন্য শোনাচ্ছি, কারণ পরে যেন তোকে আফসোস করতে না হয়।”
“আফসোস! কীসের আফসোস?”
“নিজেকে না শোনার আফসোস। মায়ের কথা রাখতে গিয়ে তুই নিজের বিবেককে প্রশ্নবিদ্ধ করছিস না তো?”
ইনজাদ বদ্ধশ্বাস ফেলল। ভীত গলায় বলল—
“এমন কিছু নয়।”
পারভেজ মির্জা ছোট্ট শ্বাস ফেললেন। নিজের স্ত্রীর প্রতি তিনি রাগান্বিত। কাউকে না জানিয়েই হুট করেই কথা দিয়ে ফেললেন ঝিনুক বেগমকে। ছেলের কাছে চাইলেন আবেশিত গলায় সম্মতি। বাধ্য, দ্বিধান্বিত, নিজের অনুভূতি সম্পর্কে অজ্ঞাত ইনজাদ রাগের বশে বিয়েতে রাজি হয়। কিন্তু…তারপর! তারপর থেকে তার ঘুম উবে যায়। সব হয়ে যায় এলোথেলো।
পারভেজ মির্জা প্রশস্ত গলায় নিম্ন স্বরে বললেন—
“জীবন কোনো বাজি নয়। হেরে গেলাম আর নয় জিতে গেলাম। জীবন হলো এক ঘড়ি। ইচ্ছে করে যদি তার ঘণ্টার কাটা পিছিয়ে নেই সময় পেছবে না, পিছিয়ে যাবে শুধু ওই কাটা-ই। যা আমাদের এই অবুঝ, অবলা চোখ দেখবে। সময় চলবে প্রকৃতির নিয়মে যা বিধাতা সৃষ্টি করেছেন। জীবন থেকে আমরা কোনো কিছুকে নিয়ে উপড়ে ফেলতে পারি না। প্রতিটি জিনিস তার স্বস্থানে নিজের যোগ্যতায় জায়গা করে নেয়। আমরা মানুষ তা বুঝতে বড়ো দেরি করে ফেলি। তুই- ও অনেক দেরি করে ফেলেছিস। তাই ফিরে যাওয়ার আর কোনো সম্ভাবনা নেই। শুধু বলব একটা নতুন সম্পর্কের শুরু এতটা দ্বিধা নিয়ে সম্ভব নয়। তাই পুরোনো ভাবনাকে মুছে ফেলতে হবে। বিয়ে দুই দিনের সম্পর্ক নয়। আজ ভালো লাগল তো কাল লাগবে না। বিয়ে এক পবিত্র সম্পর্ক, এক বাস্তব দাম্পত্য ব্যবস্থা। যেখানে মিথ্যের কোনো আঁচ নেই। মোহঘোরে মানুষ ভুল সিদ্ধান্ত নেয়। আশা রাখব তুই তোর মোহঘোর আর বাস্তবতার মাঝে তফাৎ রাখবি।”
পারভেজ মির্জা আলতো করে ছেলের কাঁধে চাপড় বসালেন। হতাশ শ্বাস ফেলে মাথা ঝাঁকালেন। তারপর শামিয়ানার পাশ কাটিয়ে চললেন ধীরে ধীরে। ইনজাদের বাহু দৃঢ় হয়। গলার রগ ফুলে ওঠে। আচানক চোখের পল্লব সিক্ত হয়ে জল গড়িয়ে পড়ল। দমে নিতে গিয়েও পারল না সে। গত কয়েকদিনে একবারও মেয়েটিকে দেখেনি ইনজাদ। বাড়িতে আদৌ আছে কি না তা নিয়ে সংশয়ে সে। তার দীর্ঘশ্বাস, অন্তত বিয়ের আগে মেয়েটাকে মন ভরে একবার দেখে সকল তৃষ্ণা সে মিটিয়ে নেবে। মা-কে দেওয়া কথা সে ফেলতে পারবে না। হৃদয়ে কাউকে রেখে অন্যজনকে সেই হৃদয়ে স্থান দেওয়া কতটা কষ্টকর তা আজ বুঝতে পারছে ইনজাদ। তার পুরুষ মন এতটা ব্যাকুল, কাতর, অসহায় হয়নি এর আগে কখনো। আজ নিজেকে তার এমন এক রাজা মনে হচ্ছে যার কাছে ক্ষমতা, স্থান, যোগ্যতা সব আছে, কিন্তু প্রজা নেই। যার প্রজা নেই সে আবার কীসের রাজা?
“কীরে, এখানে কী করছিস তুই?”
ইনজাদ চট জলদি চোখ মুছে নেয়। কনুইয়ের সাহায্যে চোখের ওপর ঘষা মারতেই কিচকিচ করে উঠে তা। মামার কণ্ঠে ব্যতিব্যস্ত হয়ে অধর বিস্তৃত করে। ভুবন ভোলানো কৃত্রিম হাসি। ভাগ্নের পিঠে আদুরে চাপড় বসালেন ত্রিমুল। হাসি হাসি ঠোঁটে বললেন—
“কী অবস্থা দুলহে রাজা! এখানে কী হচ্ছে?”
ইনজাদ মুচকি হাসল। যেন খুব লজ্জা পাচ্ছে সে। কিন্তু তার অন্তঃকরণে এক জ্বলন্ত অগ্নিশিখা জ্বলছে। যার লেলিহান শিখায় তার বুকটা পুড়ে ছারখার হচ্ছে। কিন্তু সেই খবর কেউ রাখেনি। লাল, নীল মরিচ বাতি সাজানো বনেদি বাড়িটি। তবে এখন তা জ্বলছে না। দিনের আলোতে বাতির কী কাজ? তাতো রাতের আঁধারে চোখ ধাঁধিয়ে তুলবে মানুষের। নুপূরদের বাড়ির সামনে বিশাল উঠোন। তাই তার বিয়ের শামিয়ানা সেখানে টাঙানো হয়েছে। মামা সেদিকে তাকিয়ে ঠেস মারা গলায় বললেন—
“ভাগ্নে! আর তো মাত্র কয়েকটা ঘণ্টা। সহ্য হচ্ছে না বুঝি?”
অকস্মাৎ ইনজাদের কণ্ঠে ভেসে এলো—
“আসলেই সহ্য হচ্ছে না। ইচ্ছে করছে ছুটে চলে যেতে ওর কাছে।”
ত্রিমুল গাঢ় চোখে চেয়ে অবাক গলায় বললেন—
“তুই ঠিক আছিস তো?”
নিজের জ্ঞানে ফেরে ইনজাদ। মহল স্বাভাবিক করতে চট করেই হেসে ফেলে। সহাস্য অধরে বলল—
“অবশ্যই আমি ঠিক আছি। মামি কোথায়? নিশ্চয়ই আম্মার সাথে ঝগড়া করছেন বিয়েতে কী পরবে তাই নিয়ে। ত্রিনা কোথায়? ওর তো খবর আছে। কাল আমাকে হলুদে ডুবিয়েছে। ওকে বলে দিয়ো ওর বিয়ের সময় ওকে যদি হলুদ দিয়ে আমি গোসল না করিয়েছে…।”
ঝপ করে ত্রিমুলকে জড়িয় ধরল ইনজাদ। চোখের পানি লুকোতে আর কী করবে সে? বাঁধ ভাঙা জোয়ার যে থামছে না। ইনজাদ গরগর করে বলতে লাগল—
“ত্রিনার বিয়ে ওর পছন্দ করা ছেলের সাথে দিয়ো মামা। বিয়ের আগে কিন্তু ওকে অবশ্যই জিজ্ঞেস করবে। ওর মত না নিয়ে যদি বিয়ে ঠিক করো তাহলে কিন্তু আমি ওকে তুলে নিয়ে গিয়ে ওর পছন্দের ছেলের সাথে বিয়ে দিয়ে দেবো। মনে রেখো।”
ত্রিমুল হকচকিয়ে যায়। বুকে প্রশ্ন জমা হয়। শ্রুতিগোচর হওয়া প্রতিটি শব্দ কী ধারালো আর মর্মভেদী তা তিনি বুঝতে পারলেন। কিন্তু তাকে প্রশ্ন করার সুযোগ না দিয়ে ত্রিমুলকে ছেড়ে ছাদের কার্ণিশ ঘেঁষে যেতে লাগল ইনজাদ। বলল—
“আমি ঘরে যাচ্ছি। অনেক কাজ বাকি এখনো। তুমি এদিকটা দেখো।”
ত্রিমুল ভাবুক দৃষ্টিতে চেয়ে রইলেন। যারপরনাই অবাক হলেন তিনি। ইনজাদ তার থেকে কিছু আড়াল করার চেষ্টা করছে না তো?
,
,
,
দিনের রোশনাই তার অন্তিম শ্বাস নিচ্ছে। একটু পরেই আঁধার ঘনিয়ে আসবে। কমলা রঙে রাঙানো পশ্চিমাদেশ। হরেক রঙের মরিচ বাতিগুলো জ্বলজ্বল করছে। কাঁচা সড়কের দুই পাশের দেয়ালে ঝোলানো বাতি। ছোটো ছোটো বাচ্চারা সেগুলোর তারের মাঝে এপাশ থেকে ওপাশে যাচ্ছে। গায়ের সাথে না লাগিয়ে যাওয়ার চেষ্টায় যখনই কোনো মরিচ বাতির আগা তাদের ছুঁইয়ে দেয় বাকিরা হো হো করে হেসে ওঠে। ইনজাদ শান্ত দৃষ্টি চেয়ে আছে রেহাংশীদের ছাদে। আর একটু পরই তার বিয়ে। তারপর সব শেষ। দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসে তার বুক চিরে। ইনজাদের মোবাইল ফোন ডেকে উঠে বেসুরে গলায়। তা দ্রুততার সাথে রিসিভ করে খেঁকিয়ে উঠে—
“তুই এলি না কেন?”
মেহমাদ উচ্চ কণ্ঠে বলল—
“এসব কী করছিস তুই? আবালগিরি না করলে আর হচ্ছে না তোর!”
“তুই জানিস এই বিয়ে ভাঙলে ওরা আবার রেহাংশীকে দোষারোপ করবে।”
“তাই বলে ভালোবাসবি একজনকে আর বিয়ে অন্যজনকে?”
ইনজাদ শীতল গলায় বলল—
“আমি ওকে ভালোবাসি না। কেন বুঝতে পারছিস না তুই?”
মেহমাদের নাক-মুখ খিঁচে আসে। তীক্ষ্ম স্বরে বলল—
“যা ইচ্ছে পর। পস্তাতে তোকেই হবে।”
“তুই আসবি না?”
মেহমাদ অশ্লীল কিছু শব্দ বলে দাপিয়ে ওঠে। সাথে আরও বলল—
“তোর এই ঢঙের বিয়া তুই কর। আমি তোর এসব বিয়াতে গিয়ে মাংকি ডান্স করতে পারব না। পরীক্ষা আছে কাল আমার। রাখি।”
ইনজাদ লাইন কেটে দেয়। পরীক্ষা শুধু এক বাহানা। মেহমাদ ইচ্ছে করেই বিয়েতে আসছে না তা সে কাল রাতেই বুঝতে পেরেছে। চকিতে ইনজাদের মনে হলো কেউ তাকে দেখছে। চট করেই পল ব্যয় না করে ছাদের দিকে তাকাল। কেউ ছিল না। তবে তার ষষ্ঠ ইন্দ্রীয় বলছে কেউ ছিল!
দেয়াল ঘেঁষে নিচে বসে পড়ে রেহাংশী। ঝমঝমিয়ে কেঁদে বুক ভাসায়। হাতের আংটি সজোরে নিক্ষেপ করে ছাদের পাটাতনে। ইচ্ছে করেই সেদিন আংটি লুকিয়ে ছিল সে। ইনজাদ যখন তাকে সোফায় বসায় সকলের অগোচরে নিজেই সরিয়ে নেয় আংটি। তবুও কী হলো! ইনজাদ নুপূরকে চুড়ি পরিয়ে দিয়েছে। এই লোকটা এমন কেন? আঁধারের চাঁদোয়া নেমেছে ধরণীর বুকে। সেই আঁধারের বুক ছেদ করে যাচ্ছে রেহাংশীর নীরব কান্না।
রাস্তা দিয়ে হেঁটে আসছে মামুন। উচ্ছ্বাসিত সে। বুকের পাটা ফুলিয়ে হাঁটছে। যেন কোনো রাজা প্রবিষ্ট হচ্ছে! ইনজাদ তাকে দেখেই কাছে এগিয়ে এলো। মোলায়েম গলায় বলল—
“কোথায় যাচ্ছ মামুন ভাই?”
মামুন খুশিতে গদগদ হয়। মুখভর্তি হাসি নিয়ে বলল—
“বিয়ে, বিয়ে। নুপূরের বিয়ে। যাব আমি। নুপূর, নুপূর। বউ, বউ।”
তার ভাঙা ভাঙা কথার মানে বুঝল ইনজাদ। মৃদু হেসে বলল—
“তোমাকে কিন্তু আজ ভীষণ সুন্দর লাগছে। পাঞ্জাবিটা সুন্দর!”
দাঁত কেলিয়ে হাসল মামুন। পাঞ্জাবির দুই মাথা টেনে ধরে লাজুক গলায় বলল—
“রেহাংশী, রেহাংশী। দিয়েছে। সুন্দর।”
চকিতে বড়ো শ্বাস ফেলল ইনজাদ। দ্রুতগতিতে প্রশ্ন করল—
“রেহাংশী বাড়িতে আছে?”
মামুন পূর্বের ন্যায় হাসল। শরীরের উপরি অংশ দুলিয়ে বলল—
“হা, হা। আমার চুল, দেখো চুল। কেটে দিয়েছে। ঘড়ি, ঘড়ি। ঘড়ি দিয়েছে। সরো, আমি বিয়েতে যাব।”
ইনজাদের মনে বরফের প্রলেপ পড়ল। মেয়েটা বাড়িতে অন্তত আছে!
,
,
,
মায়ের ছবির সামনে বসে আছে রেহাংশী। তার শরীরে জড়ানো লাল বেনারসি। লাল বলা যায় না। কারণ রঙটা পুরোপুরি লাল নয়। কেমন গোলাপি গোলাপি আভা ছড়ায়! লাল গোলাপি! ফিক করে হেসে ফেলে রেহাংশী। মাঝের সিঁথিতে একটা বেশ বড়ো সাইজের টিকলি পড়েছে। চুলে হাত খোঁপা করে তাতে বেলি ফুলের গাজরা মুড়িয়ে দিয়েছে। হাতে দুটো বালা। কানে ঝুমকো। এই শাড়ি, চুড়ি সব তার মায়ের। মেয়ের মৃত্যুর পর সেগুলো আঁকড়ে রেখেছিলেন রেহাংশীর নানু। তার মৃত্যুর পর রেহাংশী তার মামির কাছ থেকে এসব নিয়ে আসে।
রেহাংশী বিগলিত গলায় বলল—
“তুমি তো জানো মা, আমি সেদিন কোনো অন্যায় করিনি। তবুও শাস্তি আমাকেই পেতে হয়েছে। ওরা সবাই ইনজাদকে ঠকাচ্ছে। আমি কিন্তু তা হতে দেবো না। আমি সত্যিই তাকে ভালোবাসি। ভালোবাসার মানুষের খারাপ চাওয়া যায় না। যেমন তুমি বাবাকে ভালোবাসতে!”
বাবার কথা আসতেই রেহাংশীর মন ভার হয়। দরজায় করাঘাত পড়তেই দৌড়ে দরজা খুলে দাঁড়ায়। নুহাশের অক্ষিপুট রুখে যায়। রেহাংশীর হাসি হাসি ঠোঁটের ওপরে ওই তীক্ষ্ম নাকের ডগায় জমা ঘাম, চিবুকের গাঁথুনিতে চোখ পড়তেই তার হৃৎকম্পন থেমে যায়। সম্মোহিনী দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। রেহাংশী তার কাজল কালো আঁখিদ্বয় পরিস্ফুটন করে একরাশ উচ্ছ্বলতা নিয়ে বলল—
“এত দেরি করলে কেন? আমি কখন থেকে অপেক্ষা করছি তোমার জন্য।”
নুহাশের ঘোর কাটল না। তাকে নাড়া দিলো রেহাংশী। নুহাশের শরীর শিউরে ওঠে। ব্যস্ত চোখে তাকিয়ে বলল—
“কী?”
“তোমাকে যা বলেছি সব ঠিকঠাক করেছ তো? মামুন ভাই এসেছে?”
“সব ঠিক আছে। আয় তুই আমার সাথে।”
নুহাশ হাত ধরল রেহাংশীর। আজ সে ছোঁয়ায় বিরক্ত হলো না সে। বিনা সংকোচে নিজের কক্ষ থেকে বেরিয়ে আসলো নুহাশের সাথে।
চলবে,,,