মোহঘোর”পর্বঃ২০

0
638

#মোহঘোর
#পর্বঃ২০
লেখনীতেঃতাজরিয়ান খান তানভি

খরতাপে নিজেকে ভিজিয়ে বাসায় ফিরেছে ইনজাদ। কলিং বেল বাজতেই সপ্রতিভ হলো রেহাংশী। যেন এই তীক্ষ্ম আওয়াজ কানে তুলতেই সে অপেক্ষা করছিল এত সময়। দরজা খুলেই তার নজর গিয়ে আটকে ইনজাদের পায়ের কাছে। ধূলো জমা পায়ের আঙুলের কাছে কালশে, শুষ্ক লহু। রেহাংশী ব্যথিত হয়। তার বোধগম্য হয়েছে, ইনজাদ রাগের বশে সামনের ব্যক্তিকে কিছু বলতে না পারলে ভাঙচুর করে। ইনজাদ দৃষ্টি সচল হতেই দেখল ওপর তলার সিঁড়ি বেয়ে একটা মেয়ে নামছে। তাকে দেখেই মেয়েটা চলার গতি বাড়িয়ে নিচে নেমে এসে বলল—

” এক্সকিউজ মি!”

ইনজাদ কিঞ্চিৎ বিস্মিত নজরে তাকিয়ে বলল—

“জি!”

“আপনি কী এই ফ্ল্যাটেই থাকেন?”

“জি।”

মেয়েটি স্বস্তিকর গলায় বলল—

“আসলে আমার এক ফ্রেন্ড একটা রুম খুঁজছিল। আর জানেন তো ব্যাচেলরদের বাসা ভাড়া নিতে কত সমস্যা! ম্যানেজার বলল আপনারা এখানে ব্যাচেলর থাকেন?”

ইনজাদ ভেতর দিকে তাকাল। রেহাংশী ঘরের ভেতরের দিকে চেপে দাঁড়িয়ে আছে। নরম দৃষ্টি। ইনজাদ চোখ ফিরিয় বলল—

“সরি, আসলে আমরা বাসাটা ছেড়ে দিয়েছি। আপনি কাইন্ডলি বাড়িওয়ালার সাথে কথা বলে নেবেন।”

“ও আচ্ছা। ধন্যবাদ।”

ইনজাদ ভেতরে ঢুকে পড়ল। দরজা লাগিয়ে নিজের কক্ষে এসে অবসন্ন দেহ নিয়ে বিছানায় বসল। ঝিমঝিম করা মস্তিষ্ক চেপে ধরল দুই হাত দিয়ে। আচানক পায়ের কাছে ঠান্ডা পানির স্পর্শে চঞ্চল হয়ে ওঠল। হাত সরাতেই চোখের সামনে দেখল রেহাংশীকে। মগে করে পানি এনে তাতে কাপড় ভিজিয়ে মুছে দিচ্ছে ইনজাদের আঙুল। সরে দাঁড়ায় ইনজাদ। রেহাংশী ব্যতিব্যস্ত হয়ে বলল—

“একটু দাঁড়ান, মুছে দেই আমি। ধূলো লেগে আছে। পরে আরও বেড়ে যাবে।”

ইনজাদ নিরুত্তর, নিরুত্তাপ। পকেট থেকে সিগারেটের প্যাকেট নিয়ে ড্রয়ারে রাখল। রেহাংশীর চোখ ভরে ওঠল। প্রিয় মানুষের এই অবহেলা কাঁটার মতো বিঁধছে তার। আকণ্ঠ তেষ্টা নিয়ে বলল—

“মাফ করে দিন। আর কখনো এমন করব না। আঙুলটা মুছতে দিন।”

ইনজাদ তাকাল না। গম্ভীর মুখে গায়ের গেঞ্জিটা খুলে ঝুড়িতে রাখল। বিষণ্ন বাতাসে দুঃখীভাব। রেহাংশী অসহায় গলায় ফের বলল—

“মাফ করেন দিন না! আর কখনো এমন করব না।”

ইনজাদ সরতে গেলে তার বুকে হুমড়ি খেয়ে পড়ে রেহাংশী। নোনা জলের জোয়ার তুলে বলল—

“আর কখনো এমন করব না। মাফ করে দেন এবারের মতো।”

ইনজাদের বুকে ঠেকল রেহাংশীর শিয়র। দৃঢ় হয়ে দাঁড়িয়ে আছে সে। অবাক হলো না। মেয়েটাকে সে এ কয়েকদিনে এইটুকু বুঝেছে, এই মেয়ে পাহাড়ের মতো অনঢ় তো, তুলোর মতো নরম। রেহাংশীর কোমরে হাত রাখে ইনজাদ। প্রগাঢ় স্পর্শে নিজের বক্ষ পাটাতনে ঠেসে ধরে। গাঢ় স্বরে বলল—

“ঠিক তো?”

রেহাংশী মাথা তুলল না। কপাল, নাক আর অধর চেপে রেখেছে ইনজাদের বুকে। অস্পষ্ট আওয়াজে বলল—

“হুম।”

“আর যদি করো?”

“শাস্তি দেবেন।”

“মনে থাকে যেন।”

নিজের কাছ থেকে আলগা করে রেহাংশীকে। রক্তিম, লাস্যময়ী, ব্রীড়াময়ীর আননে মুগ্ধ হলো ইনজাদ। হাতের আঙুলের আলতো ছোঁয়ায় পরিপূর্ণ হলো স্নেহ। ইনজাদ মায়াময় চোখে চেয়ে বলল—

“খেয়েছ সকালে?”

রেহাংশী চুপ করে রইল। উত্তর পেয়ে গেল ইনজাদ। মেয়েটা খায়নি।

“খাওনি কেন?”

“আপনি ওমন করে চলে গেলেন কেন?”

“থাকতে দিলে কই!”

রেহাংশী চোখ নামাল। তাকে জড়িয়ে ধরল ইনজাদ। এতটা জোরে ধরল যেন বুকের মাঝেই সমাহিত করে নেবে!
ইনজাদ ব্যথাতুর গলায় বলল—

“এমন কোরো না আর। সইতে পারব না আমি। তোমাকে ছাড়া এক মুহূর্তও এখন ভাবতে পারি না। ভুল হয়ে গেছে। আমাদের বিয়েটা তো স্বাভাবিক ছিল না। তোমাকে জানার সুযোগ পাইনি আমি। কিন্তু দূরেও সরিয়ে রাখতে পারিনি। তাই…। তাই বলে কথা বলা বন্ধ করে দেবে! অন্যায় না হয় একটু করে ফেলেছি। তাই বলে এত কঠিন শাস্তি!”

রেহাংশী প্রতিক্রিয়া করল না। হাতের বেড় শক্ত করল শুধু। ইনজাদ পেলব স্পর্শে জাগ্রত করল রেহাংশীর নারীমন। মৃদু হাসল সে। ইনজাদ অধর ছোঁয়াল। অবিরত, শুদ্ধ, প্রেমময় ছোঁয়া। চোখের পাতায় আঁকল ভালোবাসার পরশ। ফিসফিসিয়ে বলল—

“ফ্রেশ হয়ে আসি। তুমি খাবার নিয়ে এসো।”

“হুম।”

ইনজাদ ওয়াশরুমে ঢুকতেই রান্নাঘরে ছোটে রেহাংশী।
,
,
,
রেহাংশীর অবিন্যস্ত, মাদকতায় ভরা কুন্তলে নাক ডুবিয়ে রেখেছে ইনজাদ। তার পুরুষালী দেহের অর্ধেক ভর রেহাংশীর কোমল দেহের ওপর। তাকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে রেখেছে ইনজাদ। নিজের তৃষ্ণা নিবারণে মত্ত সে। বাহুর অবাধ বিচরণ প্রেয়সীর অঙ্গে। রেহাংশী কথা বলল—

“মেহমাদ ভাইয়া আসবে না?”

ইনজাদ মাথা তুলল। রেহাংশীর চোখের কোটরে দৃষ্টি রেখে মৃদু রাগী স্বরে বলল—

“এখন ওর কথা মনে পড়ল কেন তোমার?”

“সকালে যে খুব তাড়াতাড়ি বের হয়ে গেল?”

“ওর গার্লফ্রেন্ডের সাথে দেখা করতে গেছে। রাতে চলে আসবে।”

রেহাংশী অবাক গলায় বলল—

“কী করে তার গার্লফ্রেন্ড?”

“ফিজিক্সে অনার্স।”

নিভে গেল রেহাংশীর দ্যুতিময় আনন। ছেয়ে গেল আঁধার। ইনজাদ অধরের অপ্রতিরোধ্য ব্যবহার করল। স্বামীর ছোঁয়ার ফাঁকেই বিষাদ গলায় বলল রেহাংশী—

“আপনার আপসোস হয় না?”

ইনজাদ থামল। রেহাংশীর ওপর ঝুঁকে তীক্ষ্ম চোখে তাকিয়ে বলল—

“কীসের জন্য?”

“এই যে আমি যে তেমন পড়ালেখা পারি না।”

“বন্ধ করলে কেন পড়ালেখা?”

“বড়ো আম্মু আর পড়তে দেইনি।”

“ভর্তি করিয়ে দেবো?”

রেহাংশী বিহ্বল হয়ে বলল—

“আরে না, না। সবাই আমাকে খালাম্মা ডাকবে।”

রেহাংশীর ওষ্ঠাধরে ছোট্ট কামড় বসাল ইনজাদ। গালে, চোখে, গলায় চুমুর বজ্রপাত ঘটিয়ে বলল—

“কার এত বড়ো সাহস আমার কচি বউকে খালাম্মা ডাকবে!”

“ডাকবে না তো কী? আমি তো পড়লেখায় গোল আলু।”

“উঁহু, আমার মিষ্টি আলু।”

ইনজাদ সকল বাঁধা অতিক্রম করে প্রেমসায়রে জোয়ার তুলে। তাতে আকণ্ঠ ডুবে যায় রেহাংশী। স্বামীর নিবিড়, গহন স্পর্শে ক্লান্ত হয় সে।

চলবে,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here