মোহঘোর #পর্বঃ৪৮ শেষ পর্ব

0
2003

# মোহঘোর
# পর্বঃ ৪৮
লেখনীতেঃ তাজরিয়ান খান তানভি

হাসপাতালের পাশের এটিএম বুথ থেকে বেরিয়েছে ইনজাদ। টাকাভর্তি খাম পকেটে পুরে নিল। বাম হাতের মুঠোতে রাখা হলুদ গোলাপ আর বেলি ফুলের গুচ্ছ শোভা পাচ্ছে তার বুকের কাছে। এটিএম বুথের পাশে টুলের ওপর বসা আলমগীর হেসে উঠে দাড়ালেন। চোখে সজীবতা এনে বললেন—

“ভালো আছেন স্যার?”

ইনজাদ চোখের পাল্লা নাড়িয়ে নিঃশব্দে মাথা ঝাঁকাল। আলমগীর নম্র চোখে তাকিয়ে রইলেন। সিঁড়ি বেয়ে নামতে শুরু করল ইনজাদ। পিচঢালা পথের বুকে শ্লথ পায়ে এগিয়ে যাচ্ছে সে। কাছের হাসপাতালের সামনে গিয়ে দাঁড়াল। দুই হাতে বন্দি করল ফুলের গুচ্ছের ডাটা। ইনজাদ চোখে হাসল। কোমল, মোলায়েম, পেলব হাসি। কাঁচের দরজাটা হ্যান্ডেল ধরে পুশ করে ভেতরে ঢুকল ইনজাদ। অদ্ভুত শিহরণে তার অন্তরিন্দ্রিয়তে বাত্যার সৃষ্টি হলো। ইনজাদ স্থির দৃষ্টিতে নিজের হাতের ফুলের গুচ্ছতে তাকিয়ে রইল অনিমেষ। মনের কোণে সোনালু আভার মিষ্টি রোদের এক ঝলক উছলে উঠল। ইনজাদ চোখ তুলল। গ্রাউন্ড ফ্লোরের একপাশে মেডিসিন কর্ণার। দেশি-বিদেশি ঔষধের সমাবেশ সেখানে। অন্যপাশে রিসিপশন। মাঝে রাখা ওয়েটিং চেয়ার। ইনজাদ আলতো হেসে রিসিপশনের দিকে পা বাড়াল। রিপিসশনিস্ট মাহির ইনজাদকে দেখে প্রফুল্ল হলো। গাঢ় হাসির সাথে বলল—

“কেমন আছেন স্যার?”

ইনজাদ স্থবিরতা কাটিয়ে বলল—

“ভালো।”

পকেট থেকে খাম বের করে সামনের পাটাতনের ওপর রাখল ইনজাদ। অনুরক্তির সুরে বলল—

“সরি, এবার একটু দেরি হয়ে গেল।”

মাহির চমৎকার হেসে বলল—

“নো স্যার, ইটস ওকে।”

সপ্তাহ অন্তর একটা মোটা অংকের টাকা জমা দিতে হয় ইনজাদকে রেহাংশীর চিকিৎসার জন্য। একটি বেসরকারি হাসপাতালে একদিনের আইসিইউর খরচ প্রায় লাখ টাকার ওপরে। নিউ লাইফ হাসপাতাল আধা সরকারি। তার ওপর হাসপাতালের মালিক ইনজাদ যে ব্যাংকে চাকুরি করে তার মালিকের পরিচিত। তার সুবাদে ইনজাদকে ফিফটি পার্সেন্ট ডিসকাউন্ট দেওয়া হয়েছে। ইনজাদ তার নামে থাকা বাবার আমলের সমস্ত সম্পত্তি বিক্রি করে দিয়েছে। পারভেজ মির্জা তার জমানো কিছু টাকার পুরো অংশ ছেলের বউয়ের চিকিৎসায় ব্যয় করেছেন। এখন একটি গ্রাম্য হোটেলে বর্তমানে ক্যাশিয়ারের দায়িত্বে আছেন। তমালিকা তার সমস্ত গয়না বিক্রি করে দেন। গাধার মতো খাটে ইনজাদ। টাকার জন্য দুচোখের পাতা এক করে না সে। রাত-দিন হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে। নিজের আয়ের সমস্ত অর্থ অকাতরে খরচ করে রেহাংশীর চিকিৎসার জন্য।

চকিতে নিজের পায়ে কিছু একটা লাগতেই পেছন ফিরে ইনজাদ। ছোট্ট একটি বাচ্চা এসে দাঁড়িয়েছে তার সামনে। ছোটো ছোটো চুলে দুটো ঝুঁটি করা। গালভর্তি মাংসের বহর। ছোট্ট গোলাপি ঠোঁট। ইনজাদ হাঁটু ভাঁজ করে বসল। বাচ্চাটি টসটসে চোখে চেয়ে আছে। দাঁত দিয়ে কামড়ে রেখেছে নিচের ঠোঁট। বাহু বন্দি করে রেখেছে একটি বল। ইনজাদ বাচ্চাটির গালে হাত দিলো। তার মনে হলো সে কোনো মেঘের ভাঁজে হাত গলিয়েছে। বাচ্চাটির পুতুল চোখ দুটোর দিকে তাকিয়ে বুক ভার হলো ইনজাদের। এমন ছোট্ট একটি পরী তারও হতে পারত! জল জমে ইনজাদের চোখে।

আচানক বোরখা পরিহিত কেউ এসে বাচ্চাটির হাত টেনে ধরে বলল—

“দুঃখিত! কিছু মনে করবেন না। ওকে ওখানে বসিয়ে রেখেছিলাম। ঔষধ আনতে গিয়েছিলাম। এসে দেখি চেয়ার থেকে উঠে এসেছে। ”

ইনজাদ উঠে দাঁড়াল। মায়াভরা কণ্ঠে বলল—

“সমস্যা নেই।”

নারীটি কৃতজ্ঞতার সাথে মাথা নাড়াল। ইনজাদের কাজ শেষ। মাহিরের কাছ থেকে টাকা পে করার রিসিট নিয়ে প্যান্টের পকেটে রাখল। চলতে শুরু করল নিজ গন্তব্যে।
,
,
,
নিঃশব্দে আইসিইউ কেবিনে পা রাখল ইনজাদ। নৈশব্দ, নীরব, স্থির।
ইনজাদ বিড়াল পায়ে সামনে এগোতে লাগল। অটোমেটিক আইসিইউ বেডের মাঝে সমাহিত নারী দেহটির দিকে চোখ রেখে পা বাড়াতে লাগল ইনজাদ। আইসিইউ কেবিনের এই ঝিম ধরা নৈঃশব্দে জারকাটা দিয়ে উঠল ইনজাদের লোমকূপ। বুকের পাঁজরে গহন যুদ্ধের তান্ডব রচিত হলো। প্রশ্বস্ত বুকের পাটা আড়ষ্ট হলো অদৃশ্য ভয়ে। বেডের কাছে পৌঁছাল ইনজাদ। মাল্টিপ্রা মনিটরে তাকাতেই রেহাংশীর হার্টবিটের ডায়াগ্রাম চোখে পড়ল। চোখ সরাল সে। মেয়েটা কত অভিমানী !

হাতের গুচ্ছ ফুল রেহাংশীর নিশ্চল দেহের পাশে রাখল। সাদা আর নীলাভ আভায় আচ্ছন্ন কেবিনের সর্বত্র নিস্তব্ধতার শামিয়ানা খাটানো। ইনজাদ সেই নিস্তব্ধতায় আলোড়ন তুলল।

“কেমন আছ বিষবাণ? জানো, আমি ভালো নেই। তোমাকে ছাড়া ভালো থাকি কী করে বলো? এত অভিমান! আজও তোমার অভিমানের পাল্লা আমার ভালোবাসার চেয়ে ভারী হয়ে রইল। পিষে ফেললে তুমি আমায়।”

ইনজাদ থামল। রেহাংশীর শ্বাস চলে যান্ত্রিক ক্রিয়ায়। ভেন্টিলেটর তার সহায়ক। ইনজাদ একটা টুল টেনে বেডের পাশে বসল। সপ্তাহের এই দিনটি সবচেয়ে আনন্দের দিন তার জন্য। বেশ সময় ধরে এখানেই বসে রেহাংশীর সাথে কথা বলে ইনজাদ। আদৌ কী প্রাণনারী শুনতে পায় তার হৃদয়েশ্বরের কাতর আকুতি?

ফুলগুলোর দিকে মায়ায় আবিষ্ট নয়নে তাকাল ইনজাদ। মুচকি হাসির এক চিলতে ঝলক ফুটে উঠল তার অধরের কোণে। মায়ামুগ্ধ কণ্ঠে বলল—

“তোমার প্রিয় ফুল নিয়ে এসেছি রেহাংশী। এই দেখো, তোমার প্রিয় শার্ট। তুমি বলেছিলে না, এইটা পরলে আমাকে সর্ষে ফুল মনে হয়! সবুজ রঙের প্যান্ট। সবাই বলে একদম-ই ভালো দেখায় না আমাকে।
কিন্তু আমি জানি সবার হিংসে হয়। কারণ, এই সর্ষে ফুল আমাকে তোমার কথা মনে করিয়ে দেয়। তোমার আমার কথা মনে পড়ে তো বিষবাণ?”

ইনজাদ চোখের পানি উছলে উঠতেই মুছে নিল। গড়াতে দিলো না সে। ফের হাসল। বলল—-

” ও চুপকথা!
আমার হৃৎকম্পনের অজস্র ঘাতক ব্যথা,
ঝরা অশ্রুর দুর্বার বাকস্বাধীনতা, নৈশব্দের পাথুরে ভ্রম;
ভ্রংশ হোক তোমার বজ্রকঠোরতা,
অম্লান রয়ে যাক তোমার নৈকট্যে আমার প্রণয়গাথা।”

“কত্ত অভিমান তোমার তাই না রেহাংশী! আমার কথা একটুও ভাবলে না। আমার রাগটাই দেখলে? ভালোবাসা তোমার অন্তর কাঁপালো না? এভাবে কেন আমাকে জীবন্ত লাশ বানিয়ে দিলে তুমি? কেন?”

ইনজাদের চোখের দর্পণে অশ্রুকণারা হুটোপুটি শুরু করল। নির্জীব শুয়ে থাকা রেহাংশীর কোনো হেলদোল নেই। কৃত্তিম শ্বাসক্রিয়ায় বেঁচে থাকা নারীর রক্তশূন্য, ফ্যাকাশে আননে ঝাপসা চোখে চাইল ইনজাদ। ইনজাদ অধর ছড়িয়ে শ্বাস ফেলল। নিঃশ্বাস কেন তার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে না? কেন রুদ্ধ হয়ে যায় না? বন্ধ হয়ে যাক এই শ্বাস! থেমে যাক এই স্পন্দন! বেঁচে যেত সে।

ইনজাদ শান্ত হলো। স্বাভাবিক শ্বাস নিয়ে বলল—

“নুপূরের ছেলে এখন শব্দ করে হাসে। জানো? মেহমাদ বাবা হতে চলেছে। তবে আমাকে কেন এত বড়ো শাস্তি দিলে রেহাংশী? কেন আমাদের সন্তানকে এই পৃথিবীর আলো দেখতে দিলে না? আমার শাস্তি কেন আমাদের সন্তানকে দিলে? কেন আমাকে বাবা হতে দিলে না? বলো না, বিষবাণ! তোমার দেওয়া সাজা কেন বারবার আমাকে মৃত্যু যন্ত্রণা দেয়! এর শেষ কোথায় বিষবাণ?
আমার জন্য না হোক, যে তোমার গর্ভে বেড়ে উঠছিল, তার জন্য আমাকে ক্ষমা করে দিতে। কেন এত কঠোর হলে তুমি? তুমি তো হৃদয়হীনা ছিলে না! ভালোবাসার ভাসন্ত পদ্ম ছিলে। তবে এভাবে কেন সব ডুবিয়ে দিলে? অবিনাশী দন্ডে দন্ডিত করলে আমায়! আর কত কাল সইব আমি? আর কত?”

ইনজাদের গলা ধরে এলো। জ্বলতে শুরু করল চোখ। চোখ বন্ধ করে নিঃশ্বাস নিতে লাগল। চোখ খুলে বুক ফুলিয়ে শ্বাস নিয়ে রেহাংশীর দিকে চাইল। তারপর চোখ সরিয়ে রেহাংশীর হাতের কাছে চাহনি নিবদ্ধ করল। আলতো করে রেহাংশীর হাত তুলে নিল নিজের হাতের তালুতে। উঁচু করে আঙুলের ডগায় চোখ ছুঁইয়ে বলল—

“ফিরে এসো রেহাংশী। একবার পরদেশীকে ক্ষমা করে ফিরে এসো। এই বুকের মধ্যে লুকিয়ে রাখব তোমায়। আর কোনো মোহে পড়ব না। ঘোরের বশে কোনো ভুল করব না। মোহঘোর কখনো আমাকে তোমার থেকে আলাদা করতে পারবে না। তুমি বলেছিলে, যতদিন তোমার শ্বাস থাকবে আমি তোমার। আমি তোমার রেহাংশী, শুধু তোমার। ফিরে এসো বিষবাণ। একবার আমার কথা শোনো। ফিরে এসো। ”

ইনজাদ থামল। কণ্ঠরোদ হয়ে আসছে বারংবার। তবুও তাকে বলতে হয়। আকুতিতে ভরা কণ্ঠ পৌঁছাতে হয় তার বিষবাণের কর্ণরন্ধ্রে। ইনজাদ রেহাংশীর হাত রাখল শুভ্র বিছানাতে। রেহাংশীর দেহে সাদা পাতলা চাদর টানা। ইনজাদ একটুখানি হাসল। তার স্বরে এলো সতেজতা। প্রসন্নতায় চোখ হেসে বলল—-

“আমি জানি তুমি ফিরবে। তোমার পরদেশীর জন্য ফিরবে। তোমাকে ফিরতেই হবে বিষবাণ। আমার কাছে তোমাকে ফিরতেই হবে। আমি অপেক্ষা করব সেই দিনের জন্য। আমার অন্তিম শ্বাস পর্যন্ত আমি তোমার জন্য অপেক্ষা করব। আমার অপেক্ষা তোমাকে আমার কাছে তোমাকে ফিরিয়ে আনবে। ”

ইনজাদ উঠে দাঁড়াল। গাঢ় মায়াময়, কাতর চাহনি। একটু এগিয়ে গিয়ে রেহাংশীর কপালে ঠোঁট ছোঁয়াল। সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে বিধুর স্বরে বলল—

“ভালোবেসেছি তোমাকে। আমার ভালোবাসার প্রতিদান চাই আমার। আমার ছোট্ট কুটিরের সুখ কেড়ে নিয়েছ তুমি। আমার মুখের হাসি কেড়ে নিয়েছ। বাবা হওয়ার সুখানুভূতি থেকে বঞ্চিত করেছ। সব ফেরত চাই আমি। সব। ফিরো এসো তুমি। না হয় আমাকেও তোমার কাছে ডেকে নাও। একজীবনে তুমি আমার না হও তো, এই ধরণীর আমার নয়। ফিরে এসো তুমি। আমি মিথ্যে বলিনি রেহাংশী। মনে রেখো।”

স্বশব্দে শ্বাস ফেলল ইনজাদ। দৃঢ় করল চোয়াল। চাহনিতে অশিথিলতা। ইনজাদ ঘুরে পা বাড়াল দরজার দিকে। পিছু ফিরল না। ফিরলে হয়তো দেখতে পেত, কারো চোখের কোণ বেয়ে জল নামছে! কারো হৃদয়ের কম্পন বেড়েছে! প্রেমানুভুতিতে সাড়া দিচ্ছে কেউ। কেউ ফিরতে চাইছে তার অভিমানের পাহাড়ে ধ্বস নামিয়ে। এখন শুধু অপেক্ষা!

কেবিন থেকে বের হতেই কাউকে দেখে থমকে গেল ইনজাদ। জিবরান খন্দকার দাঁড়িয়ে আছেন। তিনি দুই হাত জোড় করে আহত স্বরে বললেন—

“রেহাংশী!”

ইনজাদ শক্ত কণ্ঠে বলল—

“ভালো আছে।”

জিবরান খন্দকার ডুকরে উঠলেন। রেহাংশীর চিকিৎসার জন্য এক পয়সাও তার থেকে নেয়নি ইনজাদ। হঠাৎ এসে দাঁড়ালেন আইসিইউ স্পেশালিষ্ট ডাক্তার রুহুল। ইনজাদ তাকে দেখেই কেমন মিইয়ে গেলে। প্রশ্ন করল—

“ও ঠিক হয়ে যাবে তো ডক্টর?”

ডাক্তার রুহুল ভারী শ্বাস ফেলে বললেন—

“পেশেন্টের অবস্থা আপনি ভালো করে জানেন মি. ইনজাদ। সে বেঁচে আছে আপনারে বিশ্বাসে, সে বেঁচে আছে পরম করুণাময় আল্লাহ্ পাকের রহমতে। আমরা তো উছিলা মাত্র। কিন্তু, পেশেন্ট যতক্ষণ না নিজে চাইবেন, ততক্ষণ পর্যন্ত আমরা কিছুই করতে পারব না। দীর্ঘ ছয় মাস তো দেখছি। তার লাইফ সাপোর্ট এখনো কন্ট্রোল মুডে চলছে। সে যদি চেষ্টা না করে, তার যদি ইচ্ছে না হয়, তাহলে আমরা কিছুই করতে পারব না।”

ইনজাদ ঠোঁট কামড়ে নিজেকে ধাতস্থ করল। কান্না আটকে নিল গলায়। অশ্রু ভেজা চোখে চেয়ে আত্মবিশ্বাসের সাথে বলল—-

“ও ফিরবে ডক্টর, ও ফিরবে। ওকে ফিরতেই হবে। আমি অপেক্ষা করব। আমার দেহের শেষ রক্ত বিন্দু দিয়ে হলেও আমি চেষ্টা করব। আমার বিশ্বাস, ফিরে আসবে আমার রেহাংশী। ফিরবে ও।”

ইনজাদ কাতর হাসল। সেই হাসিতে গা কেঁপে উঠল ডাক্তার রুহুলের। তিনি হতভম্ব হয়ে চেয়ে রইলেন। কারো বিশ্বাস এতটা গভীর, এতটা প্রগাঢ় আর জীবন্ত হতে পারে তা তিনি ইনজাদকে না দেখলে বুঝতে পারতেন না।
জিবরান খন্দকার রেহাংশীকে কাছ থেকে দেখার অনুমতি কখনো পাননি। কাঁচের ছোট্ট খুপরি ভেদ করে দূর থেকে মেয়েকে রোজ দেখে যান।
,
,
,
হাসপাতালের বাইরে এসে দাঁড়াল ইনজাদ। সূর্য মাথার ওপর উঠেছে। সে সামনে তাকাল। ব্যস্ত নগরী, যান্ত্রিক বাহন, মানুষের ঢল, কোলাহল! কিন্তু কোনো কিছুতেই তার কিছু আসে যায় না। তাকে ফিরতে হবে। অনেক কাজ বাকি। তার বিশ্বাসের মূল্য টাকা দিয়ে কিনতে হয়। তাকে সে অর্থ উপার্জন করতে হবে। আচমকা ভয় পেল ইনজাদ। তার মনে হলো কেউ একজন তার পাশে দাঁড়িয়ে ! ইনজাদ চট করে ঘাড় ঘুরাল। উঁহু, কেউ না। মিথ্যে ! ইনজাদ হাসল। মোহঘোরে পড়েছে সে। কেউ নেই তার। এই শহরে সে একা, সম্পূর্ণ একা। তার সঙ্গী তার বিষবাণের ফিরে আসার বিশ্বাস। তাকে বুকে ধারণ করে চলতে শুরু করল ইনজাদ। নিরুদ্বেগ, নির্ভয়, নির্বিঘ্ন চলা। বক্ষ:স্থলে বিশ্বাস। সে ফিরবে। ইনজাদ স্বগতোক্তি করল—

“বিষবাণ!
হৃৎগহীনে ঝড় তোলা এক জলোচ্ছ্বাস,
হতপ্রায় জীবনের প্রাণোচ্ছ্বাস,
কুণ্ঠিত প্রণয়ের আসক্তি, আমার চিরচেনা অনুরক্তি।
ঘোরের বশে করা ভুল, জীবন জুড়ে যার বেনামী মাশুল
কেটে যায় সহস্র দিন, বক্ষস্পন্দেন যার অজস্র ঋণ;
মোহের কারণে ঘুরে যাওয়া জীবনের মোড়
দোহাই লাগে অভিমান গলে মুছে যাক সকল মোহঘোর।”

————সমাপ্ত———

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here