সন্ধ্যে নামার আগে পর্ব-০৫

0
492

#সন্ধ্যে_নামার_আগে
#লেখিকা_সুমাইয়া_জাহান
#পর্ব-০৫

(৯)

মাগরিবের নামাজ পড়া শেষে রুমাইসা নিলুফার বেগমের ঘরের দরজার কাছে এসে দাঁড়ায়। নিলুফার সবে নামাজ শেষ করে উঠলেন রুমাইসাকে দরজার কাছে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে মুখে বিরক্তির ছাপ ফুটিয়ে বললেন,

“কি চাই তোর, এখানে দাঁড়িয়ে আছিস কেনো?”

রুমাইসা ভয়ে ভয়ে নিলুফারের দিকে চোখ তুলে তাকালো তারপর কিছুটা ইতস্ততা করে বলল,

” মা কাল একবার আমার স্কুলে যাবার প্রয়োজন। সামনেই তো এস এস সি পরীক্ষা তাই কাল স্কুলে যাওয়াটা খুব দরকার।”

রুমাইসার মুখে স্কুল যাবার কথা শুনে তেলে বেগুনে জ্বলে উঠলেন নিলুফার। কিন্তু বাহিরে সেটা প্রকাশ করলেন না জায়নামাজ গুছিয়ে আলনায় রেখে তিনি বিছানা এসে পা তুলে বসলেন। রুমাইসা অধীর হয়ে অপেক্ষা করতে লাগলো নিলুফারের পরবর্তী জবাবের। কিন্তু নিলুফার তেমন কিছুই বললেন না বিছানার পাশে থাকা টেবিল থেকে হাত বাড়িয়ে পানের বাটাটা নিয়ে পান সাজাতে ব্যাস্থ হয়ে পড়লেন। রুমাইসা বেশ অবাক হয় নিলুফার বেগমের এমন আচরণে। নিলুফারকে এতটা শান্ত আর নির্জীব দেখে রুমাইসার বুক দুরুদুরু করতে আরম্ভ করল। এই যেনো ঝড়ের পূর্বমুহূর্ত। প্রলয়নকারী ঝড় তার প্রলয় নৃত্য দেখানোর আগে নীরবতা পালন করছে। এক অজানা আতংক ধীরে ধীরে রুমাইসার মনে আসন পেতে বসছিলো। সে দ্বিতীয় বার আর স্কুলে যাবার কথা তুলতে পারলো না।

বেশ করে একখিল পান সাজিয়ে তাতে মিষ্টি জর্দা মিশিয়ে মুখে দিলেন নিলুফার। রুমাইসা তখনো নতজানু হয়ে দরজার বাহিরে দাঁড়িয়ে আছে। নিলুফার পান চিবুতে চিবুতে ভ্রুকুঞ্চিত করে একবার রুমাইসার দিকে দেখলেন তারপর ইশারা করে ঘরে আসার নির্দেশ দেন। রুমাইসা ঘরে এলে তিনি বসা থেকে উঠে আলমারির কাছে এগিয়ে যান। রুমাইসা নিলুফারের কর্মকাণ্ড বুঝতে না পেরে চিন্তিত মুখে দাঁড়িয়ে থাকে। নিলুফার আলমারির কবাট খুলে একটা বাক্স বের করে এনে রুমাইসার সামনে রাখেন। সে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে বাক্সটার দিকে। এটা তার মায়ের গহনার বাক্স যেটা সে গতবছর দাদীর আলমারিতে দেখেছিলো। কিন্তু এটা এখানে কি করে এলো সেটা তার বোধগম্য হলো না ।

নিলুফার বেগম বাক্সটা খুলে একখানা সীতাহার
তুলে নিজের গলায় জড়িয়ে ধরে বললেন,

“দেখতো এই হারে আমায় কেমন দেখতে লাগছে।”

“এটা তো আমার মায়ের সীতাহার দাদী দিয়েছিলেন। ”

“তাতে হয়েছেটা কি এখন তো আর তোর মা বেঁচে নেই যে এই গুলো পড়ে ধেইধেই করে ঘুরে বেড়াবে।”

“আপনি এই বাক্সটা কোথায় পেলেন?”

রুমাইসার প্রশ্ন শুনে ভ্রুকুঞ্চিত করে ফেললেন নিলুফার। সাথে সাথে কড়াভাষায় জবাব দিয়ে বললেন,

“সেটা কি তোকে বলতে হবে? এই বাড়িতে এত সোনার গহনা থাকতে তোর বাপ আমায় শুধু দুই আনা সোনার দুল পড়িয়ে এই বাড়ির বউ করে এনেছেন। কই কোনো দিন তো বলে নি এই গয়নাগুলোর কথা? বাড়ির বউ হিসেবে এই গয়না তো অনেক আগেই আমার পাওয়ার কথা ছিলো অথচ তিনি আমাকে এই গয়নার কথা ঘুণাক্ষরেও জানতে দেন নি। তিনি কি ভেবেছেন এই গয়না তিনি আমাকে না দিয়ে তোকে দিয়ে দিবেন?”

রুমাইসা জবাবে কিছু বলতে চাইলেও বলতে পারলো না। বুকে চাপা কষ্ট অনুভব করতে লাগলো। সোনার গয়না গুলো তার বাবা তার মাকে প্রথম বিবাহ বার্ষিকীতে উপহার দিয়েছিলেন। তখন রুমাইসার মা পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। তিনি খুব করে চাইতেন তার যেনো একটি ফুটফুটে কন্যাসন্তান হোক। সেদিন হয় তো আল্লাহ তার ডাক শুনেছিলেন। করিম সাহেব আর রুমানা বেগমের ঘর আলোকিত করে ফুটফুটে কন্যাসন্তানের জন্ম হয়। রুমানা বেগম মেয়ের নাম রাখেন রুমাইসা হাসনাত।

রুমাইসার যখন পাঁচ বছর একদিন তিনি দেখলেন মেয়ে তার গয়নার বাক্স খুলে সেখান থেকে একটা সীতা হার গলায় পড়েছে। রুমাইসার তখনো কান ছিদ্র করা হয় নি অথচ সে কানের উপর দুল লাগিয়ে আয়নায় নিজেকে ঘুরে ঘুরে দেখছিল। সেদিন রুমাইসার এমন কর্মকাণ্ডে রুমানা বেগম অনেক হেসেছিলেন তারপর নিজ হাতে তিনি নিজের সকল গয়না মেয়েকে পড়িয়ে দিয়ে বলেছিলেন,

“তোর যখন বিয়ে হবে তখন এই সব গয়না তোর হবে।”

রুমাইসা তখন কি বুঝেছিলো কে জানে মাকে জড়িয়ে ধরে সে খুশিতে গদগদ হয়ে বলেছিলো,

“তাহলে আমি ছেদিন ছীতা হালটা পলবো।”

রুমানা বেগম মেয়ের গালে আলতো চুমু বসিয়ে দিয়ে বলেছিলেন,

” যেদিন তোর বাবা আমাকে বিয়ে করে এ বাড়ির বউ করে এনেছিলেন তোর দাদী খুশি হয়ে এই সীতাহার আমাকে পড়িয়ে দিয়েছিলেন। যখন তুই বড় হবি তোর যে দিন বিয়ে হবে সেদিন এই সীতাহারটা আমি তোর গলায় পড়িয়ে দিবো।”
অবুঝ রুমাইসা সেদিন মায়ের সব কথার অর্থ বুঝতে পারছিলো না তাই সে মনে মনে ঠিক করে বাবা বাড়ি ফিরলে বাবার কাছ থেকে সব বুঝে নেবে।

সন্ধ্যের সময় করিম সাহেব সাইকেলে করে বাড়ি ফিরলেন। রুমাইসা ঘর থেকে বাবাকে আসতে দেখে দৌড়ে বেড়িয়ে এসে করিম সাহেবের সাইকেল আগলে ধরে। করিম সাহেব হেসে মেয়েকে কোলে তুলে নিয়ে জিজ্ঞাস করেন,

“আজ আমার রাজকন্যা এখনো পড়তে বসে নি?”

রুমাইসা না সূচক উত্তর জানালে করিম সাহেব তাকে আদর করে বললেন,

“না পড়লে তো তুমি বড় মানুষ হতে পারবে না মা। তোমাকে বড় হতে হলে অনেক পড়াশুনা করতে হবে।”

রুমাইসা বাবার কথা মনোযোগ দিয়ে শুনলেও তার মাথায় মায়ের বলা কথাটা ঘুরপাক খাচ্ছিলো। সে কিছু একটা চিন্তা করে বাবার গলা জড়িয়ে ধরে বলল,

“আমি তো বল হয়ে মায়ের মতো বিয়ে কলবো। মা বলেতে আমাল বিয়ে হলে আমি মায়েল ছীতাহাল পলবো।”

মেয়ের কথা করিম সাহেব একগাল হেসে বলেন,

“বিয়ের জন্য যে তোমাকে আগে বড় হতে হবে আর বড় হতে হলে পড়াশুনা জানতে হয়।”

রুমাইসা অনেক চিন্তাভাবনা করে তখন বলল, না আগে সে বিয়েই করবে তারপর পড়াশুনা। আগে বিয়ে না করলে সে তার সীতাহার কি করে পাবে।”

সেদিন সারা রাত আর রুমাইসার ঘুম হলো না। সীতাহার পাওয়ার জন্য তাকে তাড়াতাড়ি বিয়ে করতে হবে এটাই সে সারা রাত জেগে ভাবতে থাকলো। কিন্তু বাবার বলা কথাটাও সে মাথা থেকে দূর করতে পারছিলো না। তার বাবা বলেছে বিয়ে করতে হলে আগে তাকে বড় হতে হবে আর বড় হতে গেলে পড়াশুনা করা লাগবে। এই এত কিছুর মাঝে রুমাইসার একটা কথাই জানা হলো সেটা হলো বিয়ে কি জিনিস।

রুমাইসার বয়স যখন সাত তখন রুমানা বেগমের ব্লাড ক্যান্সার ধরা পড়ে। লাস্ট স্টেজে গিয়ে জানতে পারলেন তারা। তখন আর কিছু করার ছিলো না। রুমাইসা তখন সব কিছু একটু একটু বুঝতে শিখেছিল। রুমানা মারা যাবার আগে একদিন তার স্বামী এবং শ্বাশুড়িকে ডেকে তার গয়নার বাক্সটা শ্বাশুড়ির হাতে তুলে দিয়ে বলেছিলেন এগুলো যেনো রুমাইসা বড় হলে তার বিয়েতে তাকে দেয়া হয়।

রুমানার যেদিন মৃত্যু হয় তার তিনদিন আগে তিনি স্বামীর কাছে বায়না করেন তাকে যেনো একটা শিউলি ফুলের চারা এনে দেয়া হয়। করিম সাহেব স্ত্রীর আবদার মিটাতে একটা শিউলি ফুলের চারা এনে স্ত্রীর হাতে দেন। সে দিন বিকেলে রুমানা অসুস্থ শরীর নিয়ে বাড়ির পেছনে রুমাইসার ঘরের জানালা বরাবর শিউলি গাছটা লাগিয়ে দেন। গাছটা লাগানোর সময় রুমাইসাও তার মায়ের সাথে ছিলো। গাছ লাগানোর পর তিনি রুমাইসাকে উদ্দেশ্য করে বলেন,

“আমি যখন থাকবো না তখন এই গাছটা তোকে আমার কথা মনে করিয়ে দিবে। যখন আমার কথা খুব মনে পড়বে বা কিছু নিয়ে কষ্ট পাবি তখন এ গাছটার কাছে সব অভিমান, অভিযোগ জানাবি দেখবি তখন তোর সব অভিমান,অভিযোগ দূর হয়ে যাবে।আমি তখন দূর থেকে তোকে দেখতে পাবো। ”

রুমাইসা সেদিন মায়ের কথার পরিবর্তে একটা কথাও বলে নি। তার খুব অভিমান হচ্ছিলো কেনো মা তাকে ছেড়ে যাবার কথা বলছে?

“জানিস রুমাইসা এমনই কোনো এক শরৎ কিংবা হেমন্তের বিকেলে যখন শিউলি ফুলে ভরে উঠবে গাছটা তখন বুঝবি আমি তোর খুব কাছাকাছি আছি। বাতাসে যখন হেমন্তের পাঁকা বিন্নি ধানের গন্ধ পাবি তখন বুঝবি সেটা তোর মায়ের শরীরের গন্ধ।”

রুমাইসা মায়ের কথাগুলো মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে শুনেছিল সেদিন। তার কাছে মায়ের বলা কথা গুলো যেনো রুপকাথার গল্পের মত শুনাচ্ছিল। যেনো মা এক অচিন দেশে পাড়ি দিবে সেখান থেকে মা শুধু তাকে দেখবে কিন্তু কাছে এসে ধরা দিবে না। এমনি কোনো এক শরৎ কিংবা হেমন্তের গৌধুলি বেলায় ধানের গন্ধ আর শিউলির সুবাসে সাথে মিশে এসে তাকে তিনি নিজের অস্তিত্বের জানান দিবে।”

রুমানা মারা যাবার এক বছর পর একদিন দুপুরে সে স্কুল থেকে বাড়ি ফিরে দেখলো তার একমাত্র ফুফু আয়েশা বেগম তাদের বাড়িতে এসেছেন। তিনি কি এক বিষয় নিয়ে তার বাবার সাথে খুব কথা কাটাকাটি করছেন। রুমাইসা সবে মাত্র স্কুল থেকে ফিরেছিলো। আয়শা বেগম একটা সময় ভাইয়ের সাথে কথায় না পেরে কান্না জুড়ে দেন। রুমাইসা হতবাক হয়ে তার বাবা ও ফুফুর বাকবিতণ্ডা দেখে। একটা সময় আয়শা বেগম তার দাদীকে উদ্দেশ্য করে বলেন,

“আম্মা মাইয়া ভালা, শিক্ষিত আছে ভাইয়ের লগে ভালাই মানাইবো। তাছাড়া মাইয়ার বয়স একেবারে বেশিও না। রুমাইসারে সে নিজের মাইয়ার মতোই দেইখা রাখবো। তাছাড়া রুমাইসা এহন বড় হইতাছে এই সময় ওর মারে কাছে পাওয়া প্রয়োজন তুমি বুড়ি মানুষ কত দিন নাতনীরে দেইখা রাখবা? ভাই এহন যতই না না করুক বিয়ে অইলে দুই একটা পোলাপান হইলে নতুন সংসারে ঠিক ই মন পইড়া যাইবো। তাছাড়া বেডা মানুষ কয় দিন বউ ছাড়া থাকবো?

আয়শার কথায় সেদিন রুমাইসার দাদী কোনো প্রতিক্রিয়া না দেখালেও ধীরে ধীরে যেনো তিনি মেয়ের কথাটাই বিশ্বাস করতে শুরু করলেন।
নাতনী আর ছেলের কথা চিন্তা করে করিম সাহেব কে দ্বিতীয় বার বিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন।

আষাঢ় মাসের একুশ তারিখ। রুমাইসার গা কাঁপিয়ে জ্বর এলো। সারারাত জ্বরের ঘোরে সে মাকে ডেকে গেছে। বাহিরে তখন ঝুম বৃষ্টি। বাড়িতে কেউ ছিলো না সেদিন তার দাদী ছাড়া। গভীর রাতে রুমাইসার ঘুম ভেঙে গেলে পাশের ঘরে কয়েকজনের কলহাস্য শুনতে পায়। জ্বরের শরীরে তার ভোধগাম্য হয় না পাশের ঘরে এত কলহাস্যের কারণ। রুমাইসা শোয়া থেকে উঠতে গেলে তার দাদী এসে তাকে বাঁধা দিয়ে বলেন,

“কই যাও বইন? ঘরের বাহিরে এক পা দিও না। বাড়িতে নতুন বউ আইসে এই জ্বরের শরীর নিয়া ঘর ভর্তি মানুষে মাঝে গিয়া আর জ্বর বাড়াইও না।”

রুমাইসা তখন দাদীর কথার অর্থ বুঝতে না পারলেও অল্পসময়ের ব্যবধানে সে দেখতে পেলো তার বাবার সাথে করে একজন লাল টুকটুকে শাড়ি পড়া একজন মহিলা তার ঘরে এসে ঢুকেছে।

রুমাইসাকে অন্যমনস্ক দেখে নিলুফার বেগম খেঁকিয়ে উঠে বললেন,

“তোর এখানে দাঁড়িয়ে থাকা হয়ে গেলে এবার যা। আমার অনেক কাজ আছে।”

নিলুফারে রুষ্ট কন্ঠস্বর কানে এলে রুমাইসা ভাবনার জগৎ থেকে বেড়িয়ে আসে। ততোক্ষণে নিলুফার রুমানার সকল গয়না একে একে গায়ে জড়িয়ে নিয়েছিলো। রুমাইসা তা দেখে দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে আবার স্কুলে যাবার কথা তুলে। নিলুফার বেগম প্রথমে কোনো প্রতিক্রিয়া না দেখালেও এবার তিনি ক্রুদ্ধ হয়ে উঠলেন তারপর বললেন,

“বাহ আজকাল তো দেখছি খুব বাড় বেড়েছিস। স্কুলে যাবি তাই না স্কুলে গেলে বাড়ির এত কাজ কে করবে শুনি, তোর মরা মা?”

“তোর মা তো কবেই মরে ভুত হয়ে গেছে আর আমার জন্য রেখে গেছে তোর মতো অপয়া মেয়ে। কেনো রে হ্যাঁ তুই কেনো আমাকে জ্বালিয়ে মারতে এখনো পড়ে আছিস? যা না মায়ের মতো মরে এ সংসার হতে বিদায় হ।”

নিলুফারের এমন আক্রমণাত্মক কথার জন্য মোটেই প্রস্তুত ছিলো না রুমাইসা। কিছু বুঝে উঠার আগেই নিলুফার তাকে আচ্ছা করে কথা শুনিয়ে দিলেন। নিলুফারের শেষের কথা রুমাইসার কানে শূলের মত গিয়ে বিধে। নিলুফারের এমন আচরণ দিনের পর দিন অসহনীয় হয়ে উঠছে তার কাছে। উঠতে বসতে প্রতিনিয়ত তিনি কথা শুনান। এমন কি তার মৃত মা রুমানাকেও গাল মন্দ করতে ছাড়েন না।

রুমাইসা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কথাগুলো শুনছে আর নীরবে চোখের জল বিসর্জন দিচ্ছে। এই দুনিয়ায় তার দুঃখ বুঝার মতো এমন কেউ নেই। নেই কোনো আত্নীয় যে তাকে এমন নরক থেকে উদ্ধার করতে পারে। রুমাইসা আর বেশিক্ষণ সেখানে দাঁড়িয়ে থাকতে পারলো না কান্নাগুলো দলা পাকিয়ে আসতে চাইছে। সে আর এক মুহূর্ত সেখানে দাঁড়াল না দৌড়ে বেড়িয়ে গেলো ঘর থেকে।

(১০)

মেঘমুক্ত খোলা আকাশের নিচে দাঁড়িয়ে আছে স্মরণ এবং ফায়াজ। নিশ্চিন্দপুর গ্রামে এসেছে তারা বেশ কয়েকদিন হলো। এই কয়েকদিনের গ্রামের প্রায় অর্ধশতাধিক মানুষের সাথে তাদের পরিচয় হয়েছে। গ্রামের বেশিরভাগ মানুষই স্বল্প শিক্ষিত কিংবা একেবারেই মূর্খ। তবে আশেপাশের গ্রাম হতে যে কয়েকজন এসেছেন তাদের মাঝে বেশ কয়েকজন রুগী শিক্ষিত ছিলেন। তাদের মাঝে কেউ স্কুল শিক্ষক কেউ বা অন্য পেশায় নিয়জিত।

হেমন্তের শীতল বাতাসের সাথে শিউলি ফুলের সুবাস ভেসে আসছে। স্মরণ নাক টেনে সে সুবাস গ্রহন করে মৃদু হেসে বলল,

“গ্রামে না আসলে হয় তো কখনো বুঝতেই পারতাম না প্রকৃতি এতটাও সুন্দর হতে পারে।”

ফায়াজ স্মরণের কথায় মাথা দুলিয়ে হাসলো। স্মরণ দূরে দাঁড়িয়ে থাকা খেজুর গাছটার দিকে লক্ষ্য করে বলল,

“এখানে আসার পর আমি বেশ কিছু জিনিস লক্ষ্য করেছি। গ্রামের মানুষ সম্পর্কে আমার কাল অবধি যে ধারণা ছিলো সেটা আজকে পুরোপুরি না হোক কিছুটা হলেও বদলে গেছে। এখানকার মানুষগুলোকে আমি যতটা বোকা আর সহজ সরল ভাবতাম তারা ততোটাও সহজ সরল নয়।”

“কি হয়েছে বলতো? ডা.স্মরণের মুখে এ কথা? ”

স্মরণ আবারো ঠোঁটে বেখেয়ালি হাসি ফুটিয়ে দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে। আজ সকালের রমিজ থেকে পাওয়া চিঠি, বিকেলের দেখা স্পষ্টবাসী সেই মেয়েটার রাগী দুটো চোখের দৃষ্টি এই দুই যেনো তার মাঝে আলাদা আলাদা অনুভূতির জন্ম দিয়েছে। বাঁশবনে আচ্ছন্ন সারি সারি ধান খেতের মাঝে শান্ত দিঘীর জলে মতো এই গ্রামটিতে সে যেদিন প্রথম পা রেখেছিলো সেদিন রাতে তার মাঝে এক অন্যরকম অনুভূতি জন্ম হয়েছিলো। অজানা কারণেই গ্রামটাতে পা রাখার সাথে সাথে প্রচণ্ড শান্তি অনুভব করে স্মরণ। সেদিন রাতে তাকে তিন ক্রোশ পথ হেঁটে গন্তব্যে পৌঁছাতে হয়েছিল অথচ এই তিন ক্রোশ রাস্তা যেনো সে নিমিষে পার করে এসেছিলো।

চলবে,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here