সায়াহ্নের 🦋 পর্ব-২৭ শেষ পর্ব

0
4858

#সায়াহ্নের_প্রণয় 🦋🦋
#লেখনীতে: ইনায়াত আহসান (ছদ্মনাম)
#সপ্তবিংশ_পর্ব (অন্তিম পাতা)

৭৮.
নিস্তব্ধ কোলাহলহীন পরিবেশ। চারপাশে দূর দূরান্তেও‌ কোনো মানুষের চিহ্ন নেই। শুধু আছে মানুষের সমাহিত করা কবরস্থান।
তেমনি বেশ পুরনো একটা কবরের সামনে দাঁড়িয়ে আছে সমুদ্র। মুখশ্রী তার বেশ গম্ভীর। হাতে থাকা ফুলের তোড়া টা কবরের পাশে থেকে পাশ ঘেঁষে বসে পড়ে সে। প্রতিবছর নির্দিষ্ট একটা দিনেই এখানে আসা হয় তার। প্রতিবছর বলতে বিগত তিন বছর ধরেই আজকের দিনে এখানে এসে কবর জিয়ারত করে কিছু স্মৃতিচারণ করে যায় সে।
মোনাজাত শেষ হতেই উঠে দাঁড়ায় সমুদ্র। চোখদুটো তার অশ্রুসিক্ত। কবরস্থান থেকে বের হয়ে রোডসাইডে‌ যেতেই গাড়ির কাছে দেখতে পায় দু দুটো বাচ্চাকে‌। বাচ্চা দুটো সমান বয়সেরই‌। তিন বছর বয়সী বাচ্চা দুটো সমুদ্রকে দেখতে বেশ উৎফুল্লতার‌ সাথে এগিয়ে যায় সমুদ্রের দিকে।

– “বাবা, তুমি কোথায় গিয়েছিলে?”
সামনে দাঁড়িয়ে থাকা বাচ্চা মেয়ে আর ছেলে দুজনে একসাথেই প্রশ্ন করে সমুদ্রকে‌। সমুদ্র ও মুচকি হেসে বাচ্চা দুটোকে কোলে তুলে বলে উঠে,
– “স্নিগ্ধ, মীরা বাবা বলেছিল না আজকের দিন টা বাবার কাছে অনেক স্পেশাল‌। তাইতো বাবা প্রতিবছর এই স্পেশাল‌ জায়গায় এসে টাইম স্পেন্ড করে।”
– “কিন্তু বাবা আজকে কি এমন ইসপেশাল‌(স্পেশাল)? আজকে তো আমাল আর ভাইয়ুর জনমোদিন‌(জন্মদিন)।”
– “হ্যাঁ, আজকে তো আমার প্রিন্স আর প্রিন্সেস দুজনের ই বার্থডে। কিন্তু সেটা ছাড়াও আরো একটা দিন আজকে। সেটা হলো,,”

সমুদ্রের আর কিছু বলার পূর্বেই পেছন থেকে কেউ একজন বলে উঠে,
– “আজকে তোমাদের বড় দাদুর মৃত্যুবার্ষিকী! আর সেটার জন্যই বাবা প্রতিবছর এখানে আসে।”
মেয়েলি কোনো কন্ঠস্বর কানে পৌঁছাতেই পেছনে ফিরে তাকায় সমুদ্র। স্নিগ্ধ আর মীরাও সমুদ্রের কোল থেকে নেমে দৌড়ে সামনে থাকা রমণীর দিকে এগিয়ে যায়।
– “মাম্মাম!”
বাচ্চাদের কথায় রমণীও মুচকি হেসে বাচ্চা দুটোকে জড়িয়ে ধরে।
– “প্রাচী তুমি? তুমি না ব্যাংকে গিয়েছিলে?”
– “হ্যাঁ, ব্যাংকের কাজ আজ তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে যাওয়ায় ভাবলাম এখানেই ডিরেক্ট চলে আসি।”
– “আচ্ছা তাহলে চলো বাড়ি ফেরা যাক। এমনিতেই দেরি হয়ে যাচ্ছে।”
সমুদ্রের কথায় সম্মতি জানিয়ে স্নিগ্ধ আর মীরাকে নিয়ে গাড়িতে বসে পড়ে প্রাচী।

চৌধুরী বাড়িতে বাচ্চাদের জন্মদিন উপলক্ষে বেশ আয়োজন করা হয়েছে। পিহু, স্নিগ্ধ আর মীরা; বাড়ির তিনটে বাচ্চাই বেশ হইচই নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে‌। রুমে দাঁড়িয়ে পার্টির জন্য তৈরি হচ্ছিল প্রাচী। ব্ল্যাক এন্ড গ্রিন কম্বিনেশন এর শাড়ি, হাত ভর্তি চুড়ি, অর্নামেন্টস। খোলা চুল গুলো স্ট্রেট করে ছেড়ে দেয়া। শাড়ির কুচি গুলো ঠিক করা শেষ হতেই যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচে প্রাচী। বাড়িতে বিশাল ব্যস্ততা। তার উপর অনেকটাই দেরি হয়ে গিয়েছে।
তন্মধ্যে কেউ পেছন থেকে জড়িয়ে ধরতেই কিঞ্চিৎ পরিমাণ কেঁপে উঠে প্রাচী। তবে চমকায় না কেননা এ স্পর্শ তার চিরচেনা।
– “কি করছেন সমুদ্র? ছাড়ুন আমাকে। বাড়িভর্তি মেহমান; কেউ এসে পড়বে।”
– “কি করব বলো? আমার ওয়াইফি দিন দিন এত সুন্দর হয়ে যাচ্ছে যে তার থেকে দূর হতেই মন চায় না।
এমন একটা ওয়াইফি থাকলে কি করে দূরে থাকি বলো? নিজের রূপ দিয়ে আমাকে ঘায়েল করার ইচ্ছে আছে নাকি!”
সমুদ্রের আগ্রাসী কন্ঠ শুনে লজ্জায় মিইয়ে যায় প্রাচী।
– “দু বাচ্চার বাপ হয়েও মুখে কিছু আটকায় না নাকি! লজ্জা শরমের মাথা খেয়ে বসেছেন দেখছি‌। ছাড়ুন আমাকে; মা নিচে ডেকেছে আমাকে।”
বলেই চোখ রাঙিয়ে নিজেকে সমুদ্রের কাছ থেকে ছাড়িয়ে নেয় প্রাচী। এদিকে প্রাচী চলে খানিকটা দূরে যেতেই হো হো করে হেসে উঠে সমুদ্র। ভাবে জীবন তার অদ্ভুত সুন্দর!

৭৯.
পশ্চিমা আকাশে সন্ধ্যে নেমেছে। আকাশের লাল আবিরের রেখা নিশ্চিহ্ন প্রায়! বিহঙ্গের দল ও নীড়ে ফিরে যাচ্ছে এক এক করে।
সায়াহ্ন মাখানো খোলা আকাশের দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে আছে প্রাচী। আজকের দিনটা তার বেশ ভালোই কেটেছে। কাটারই কথা। দিনটাকে নিয়ে অনেক দুর্বিষহ স্মৃতি ওতপ্রোতভাবে জড়িত।
হঠাৎ কাঁধে কারো স্পর্শ পেতেই ঘাড় ঘুরিয়ে তাকায় প্রাচী। সমুদ্র ও বিনিময়ে স্মিত হাসে।

– “কি হয়েছে মেহু পাখি? দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কি ভাবছিলে‌?”
– “এইতো ভাবছিলাম জীবনের এই অল্প সময়টুকুর‌ মধ্যে কত কিছু হয়ে গেল। কত পরিবর্তন, কত স্মৃতি রয়ে গিয়েছে এই তিন বছরে তাইনা?”
আকাশের দিকে স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে নিচু কন্ঠে বলে উঠে প্রাচী। প্রাচীর কথা শুনে সমুদ্র ও দীর্ঘশ্বাস ফেলল। প্রাচী যা বলছে তা তো ফেলনা নয়।
– “আজকের দিনটার কথা মনে পড়ে সমুদ্র? আজ থেকে তিন বছর আগের কথা। যেদিন,,”

– “হ্যাঁ মনে আছে। ভুলি কি করে? সেদিন তো চাইলেও ভোলা অসম্ভব!”
৩ বছর পূর্বে,,
সমুদ্রের এহেন সিদ্ধান্তে উপস্থিত সবার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ার উপক্রম। সমুদ্রের কথা শুনে আনোয়ার সাহেব রাগে ক্ষোভে সমুদ্রের দিকে একপ্রকার তেড়ে গেলেন,
– “সমুদ্র!! কি যা তা বলছো তুমি! ওটিতে আমার মেয়ে মৃত্যুর সাথে লড়াই করছে আর তুমি বলছো বেবিদের বাঁচাতে? তোমার মাথা খারাপ হয়ে গিয়েছে?”
– “বাবা আমি বুঝতে পারছি আপনার মনের অবস্থা কেমন। কিন্তু আমি নিরুপায়। আমি প্রাচীকে কথা দিয়েছি এমন কোনো পরিস্থিতি আসলে আমি আমার বাচ্চাদের বাঁচাব। আর যদি আমি প্রাচীকে দেয়া কথা না রাখি তাহলে কোনোদিন ও প্রাচীর মুখোমুখি হতে পারব না। আর যাই হোক আমি প্রাচীর ঘৃণা আর অবহেলা কোনোদিন সহ্য করতে পারব না।”
সমুদ্রের এমন দৃঢ় কথায় কিছু বলতে যেয়েও থেমে যান আনোয়ার সাহেব।
নার্স ফাইল নিয়ে ভেতরে প্রবেশ করতেই মেঝেতে ধপ করে বসে পড়ে সমুদ্র। শুনেছে পুরুষ মানুষদের নাকি কাঁদতে নেই কিন্তু আজ সে নিয়মও যেন ভেঙে গিয়েছে সমুদ্রের কাছে। ভেতরে ভেতরে যেন দুমড়ে মুচড়ে শেষ হয়ে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত সে। চোখ দিয়ে অবাধ্য অশ্রু গুলো চিবুক গড়িয়ে পড়ছে। জীবনে আজ পর্যন্ত এমন কঠিন সিদ্ধান্তের সম্মুখীন হতে হয় নি। ভেতরেও ডাক্তার রাও তাদের আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
সবার অধীর আগ্রহের সমাপ্তি ঘটে ভেতর থেকে আসা দুটো বাচ্চার কান্নার আওয়াজে। একটু পর নার্স এসে তোয়ালে জড়ানো দুটো বাচ্চা সমুদ্রের দিকে এগিয়ে দিতেই সমুদ্র কাঁপা কাঁপা হাতে তুলে নেয় বাচ্চা দুটোকে। ফর্সা মুখশ্রীতে লাল রক্তিম বর্ণ ধারণ করেছে।

– “কংগ্রেচুলেশন, মিস্টার জুনায়েদ! আপনার টুইন ছেলে মেয়ে হয়েছে।”
নার্সের কথা শুনে বাচ্চাগুলোর দিকে পুনরায় তাকায় সমুদ্র। কি নিষ্পাপ তাদের মুখশ্রী!
– “প্রাচী? প্রাচী কেমন আছে নার্স?”
নার্সকে প্রশ্নটা করতেই মুহূর্তের মধ্যে নার্সের মুখ কেমন ফ্যাকাশে, মলিন হয়ে যায়।
– “কি হয়েছে নার্স? আমি কিছু জিজ্ঞেস করেছি; আমার ওয়াইফ কোথায়?”
সমুদ্রের প্রশ্ন শুনে পরমুহূর্তেই নার্স যা বলে তাতে যেন বিস্ময়তার চরম পর্যায়ে চলে যায় সমুদ্র সহ বাকি সকলেই।

৮০.
– “আপনার এই ভালোবাসার কাছে কিভাবে হেরে যেতাম সমুদ্র? কিভাবে ছেড়ে চলে যেতাম আপনাকে?
আপনাকে ছেড়ে যাওয়ার; আপনার ভালোবাসাকে উপেক্ষা করে চলে যাওয়ার সাধ্যি আমার নেই সমুদ্র। তাইতো সেদিন ফিরে এসেছিলাম আপনার কাছে। ছুটে এসেছিলাম আবারো আপনার এই ভালোবাসার কাছে।”

সমুদ্রের কাঁধে মাথা রেখে কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলে উঠে প্রাচী। সেদিনের ঘটনা মনে পড়লেই এখনো দম বন্ধ হয়ে আসে তার।
সেদিন,,
– “ইউর ওয়াইফ ইজ এলাইভ‌! মিসেস প্রাচী বেঁচে আছেন। তবে মিসেস প্রাচীর হেল্থ কন্ডিশন এখনো বেশ ক্রিটিক্যাল। তাকে অবজারভেশনে রাখা হবে। আগামী ৭২ ঘন্টার আগে কিছু বলা যাচ্ছে না মিস্টার জুনায়েদ।”

নার্সের কথা শুনতেই বিস্ময়তার চরম পর্যায়ে পৌঁছে যায় সমুদ্র। তবুও তার ঠোঁটের কোণে এক চিলতে হাসি ফুটে উঠে প্রাচীর কথা ভেবে সমুদ্রের। প্রাচীকে পাশের কেবিনে বেশ কিছুক্ষণ পর শিফট করতেই কেবিনের গ্লাসের অপর পাশ থেকে প্রাচীকে পরখ করে নেয় সমুদ্র। হাতে ক্যানেলা, মুখে অক্সিজেন মাস্ক লাগানো। এক রাতের মধ্যেই চেহারার রং বেশ ফ্যাকাশে হয়ে গিয়েছে।

ভোরের আলো ফোটা শুরু করে দিয়েছে। একটু আগেই ফজরের আজান দিয়েছে। ইশরাক, আনোয়ার সাহেব, সমুদ্র আর সাদাত চৌধুরী সবাই মিলে উপরের মসজিদে গিয়ে সালাত আদায় করে নেয়। সমুদ্র ও রবের নিকট শোকর আদায় করে আর প্রাচীর সুস্থতা কামনা করে।
সকালের আলো ফোটার পর পরই সমুদ্র সবাইকে বাড়ি পাঠিয়ে দেয় একপ্রকার জোর করে।
এর পরের তিনদিন টানটান উত্তেজনায় কেটেছে সমুদ্রের। ৬২ ঘন্টা পার হয়ে গিয়েছে ইতোমধ্যে। কিন্তু প্রাচীর হুঁশ ফিরে আসে নি এখনো। একটু আগেই কোহিনুর চৌধুরী আর সাদাত চৌধুরী এসে উপস্থিত হয়েছেন হসপিটালে। পিহু ও এসেছে সাথে করে। মায়ের কথা শুনতেই কান্না করতে করতে চোখ মুখ লালচে হয়ে গিয়েছে তার।

– “মিস্টার জুনায়েদ? প্লিজ কাম ইন মাই কেবিন!”
ডক্টর আয়েশার কথা শুনে সমুদ্র হকচকিয়ে গেলেও দ্রুত এগিয়ে যায় কেবিনের দিকে।

– “মিস্টার জুনায়েদ, ৬২ ঘন্টা পার হয়ে গিয়েছে ইতোমধ্যে। এখন পর্যন্ত মিসেস প্রাচীর সেন্স ফিরে আসে নি। এভাবে কোন ইমপ্রুভমেন্ট না হলে মিসেস প্রাচীর কোমায় চলে যাওয়ার চান্স অনেক বেশি।”
ডক্টর আয়েশার কথা শুনে ঠিক কি রিয়্যাক্ট করবে তা বুঝে উঠতে পারে না সমুদ্র। একটু আগেও তো সবকিছু ঠিকঠাক ছিল। মাথা নাড়িয়ে ধীর পায়ে কেবিন থেকে বেরিয়ে প্রাচীর কেবিনের সামনে গিয়ে দাঁড়ায় সমুদ্র।

– “আমি জানি মেহু পাখি তুমি আমার কথা শুনতে পারছ! আমি জানি তুমি ঠিক আছো; প্লিজ চোখ খুলো! দেখ আমি, মা বাবা সবাই তোমার অপেক্ষা করছে। আমাদের বেবি! আমাদের বেবি ও তোমার ওয়েট করছে। এবার তো প্লিজ ফিরে আসো। আমি আর পারছি না তোমাকে ছাড়া থাকতে। প্লিজ মেহু পাখি, প্লিজ!”
প্রাচীর দিকে তাকিয়ে বিড়বিড় করে সমুদ্র। কাঁধে কারো স্পর্শ পেতেই পেছনে ঘুরে তাকাতেই সাদাত চৌধুরীর মুখশ্রী চোখে পড়ে তার‌। সেও এগিয়ে গিয়ে সাদাত চৌধুরীকে জড়িয়ে ধরে।

বিকেল নেমে এসেছে। কেবিনের বাইরে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে সমুদ্র। একটু আগেই কেবিনে নার্স গিয়েছে প্রাচীর চেকআপ করতে। হঠাৎ ই কেবিন থেকে হুড়মুড় করে বেরিয়ে আসে ডক্টর আয়েশা সহ নার্স।
– “মিস্টার জুনায়েদ, আপনার ওয়াইফের‌ জ্ঞান ফিরেছে।”
ডক্টরের কথা শুনে খুশিতে উৎফুল্ল হয়ে ওঠে সমুদ্র।
– “সত্যি ডক্টর? আমি কি দেখা করতে পারব আমার ওয়াইফের‌ সাথে?”
– “জি তবে বেশি কথা বলা যাবে না।”
ডক্টরের অনুমতি পেতেই দ্রুত কেবিনে প্রবেশ করে সমুদ্র। চোখ বন্ধ করে শুয়ে ছিল প্রাচী‌। পাশেই বাচ্চা দুটোকে রাখা হয়েছে দোলনাতে‌। কারো উপস্থিতি টের পেতেই পিটপিট করে চোখ মেলে তাকায় প্রাচী। সমুদ্রকে দেখতে পেয়েই অস্ফুট স্বরে বলে উঠে,
– “স,স্‌,সমুদ্র!”
– “মেহু পাখি? তুমি ঠিক আছো? জানো কত ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম আমি! তোমাকে হারিয়ে ফেলার ভয় বারবার আমাকে ঝাপ্টে ধরছিল। এই মনে হচ্ছিল তুমি আমার থেকে দূরে সরে যাচ্ছ। আমাকে কষ্ট দিতে খুব ভালো লাগে তাই না!”
– “সরি সমুদ্র! আমি আপনাকে কষ্ট দিতে চাইনি। আমি চাইনি এমনটা হোক। সরি?”

প্রাচীর চোখ দুটো অশ্রুভেজা। ঠোঁট যুগল কিঞ্চিৎ প্রসারিত করে আরো কিছু বলতে যাবে তখনই রুমে প্রবেশ করে নার্স সহ সাদাত চৌধুরী, কোহিনুর চৌধুরী। নার্স এসে দোলনা থেকে বাচ্চা দুটো কোলে নিয়ে প্রাচীর দিকে এগিয়ে যায়। প্রাচীও বাচ্চা দুটোতে দেখতে পেয়ে কাঁপা কাঁপা হাত বাড়িয়ে দেয়।
নিজের সন্তানকে প্রথমবারের মতো স্পর্শ করতেই তার চোখের কার্নিশ বেয়ে নোনা অশ্রু গড়িয়ে পড়ে।

৮১.
– “মেহু পাখি?”
সমুদ্রের ঘোর লাগা কন্ঠ শুনতে পেয়ে পেছন ফিরে তাকায় প্রাচী। এই মানুষটা এমন সুন্দর কেন? তার ভালোবাসাই বা এত অদ্ভুত সুন্দর কেন?
– “হুম বলুন সমুদ্র!”
– “থ্যাঙ্ক ইউ সো মাচ প্রেয়সিনী আমার জীবনটাকে নিজের ভালোবাসা দিয়ে পূর্ণ করে দেয়ার জন্য। নিজের থেকে কোনোদিন আলাদা করো না আমায়। তাহলে যে আমার অস্তিত্ব ই বিলীন হয়ে যাবে। এই প্রাচী বিহীন সমুদ্র একদম শূন্য, অস্তিত্বহীন!
এই সায়াহ্ন মাখানো আকাশকে সাক্ষী রেখে বলছি আজীবন ভালোবেসে যাব প্রেয়সিনী‌!”

সমুদ্রের কথা শুনতেই প্রাচীর ঠোঁটে সেই মায়াবী হাসি ফুটে ওঠে। আসলেই তো! এই মানুষটা তার সাথে থাকলে অনায়াসেই এক যুগ পার করে দেয়া যাবে।

– “আমিও ভালোবাসি প্রিয় আর আজীবন ভালোবেসে যাব!”
বলেই ধীরে নিজেকে সমুদ্রের বুকে লুকিয়ে ফেলে প্রাচী।

“_গোধূলি রাঙানো মেঘমল্লার
ব্যস্ত নীড়ে ফিরে যাওয়া বিহঙ্গেরা;
মহাশূন্যের বিশালতার নিচে দুজন মানব মানবীর কিছুটা কোলাহল!
ঢল নামে দূর পশ্চিমা আকাশপানে,
ফুরিয়ে আসে যে সময়
তবুও থেমে যাক না কিছুটা;
এ তো যেন #সায়াহ্নেরই‌_প্রণয়!
(ইনায়াত আহসান)_”

জীবন হলো এমন একটা পৃষ্ঠার সংমিশ্রণ যেখানে একাকিত্ব, বিষন্নতা, ভালোবাসা, বিচ্ছেদ সবকিছুই থাকবে। তবে যদি ভালোবাসা পাওয়ার আশায় আপনি বাকি অংশ গুলো মুছে ফেলতে চান তাহলে কখনোই সম্ভব হবে না সেটা। তার চেয়ে বরং অনুভব করুন প্রতিটা মুহূর্ত, প্রতিটা অধ্যায়!
দেখবেন দিন শেষে আপনার ভালোবাসার মানুষটি ঠিক আপনার সাথেই রয়েছে।
এভাবেই না হয় বেঁচে থাকুক সব ভালোবাসা।

সমাপ্ত।

(আসসালামু আলাইকুম। 🌼
কেমন আছেন সবাই? দীর্ঘ একটা সময় পর সমাপ্তি ঘটল উপন্যাসটির। উপন্যাসটিতে সবকিছুর সংমিশ্রণ ই ছিল। আমি আন্তরিক ভাবে দুঃখিত আমি মাঝে থেকে গ্যাপ দিয়েছিলাম কেননা আমার কিছু ব্যক্তিগত সমস্যা ছিল।
তবে যাই হোক লাস্ট মুহূর্তে এসে আমি শুধু এটুকুই আশা করব পুরো উপন্যাস পড়ে আপনাদের কেমন অনুভূতি তা সম্পর্কে দু চারটে লাইন লিখবেন।
আবার ইনশাআল্লাহ ফিরে আসব আপনাদের মাঝে। ততদিন ভালো থাকুন। সুস্থ থাকুন।
ভালোবাসা অবিরাম 🖤)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here