উপন্যাস প্রপর্ণ পর্ব-২৩

0
3071

#উপন্যাস_প্রপর্ণ(২৩)
#কুরআতুল_আয়েন

রাতের খাবারের পর রায়ান চলে যায়।খাবার টেবিলে বসেও রায়ানের চোখ দুটো খুশির উপরে ছিলো।রায়ান ভেবে পায় না,কীভাবে এতো ছোট একটা মেয়েকে পছন্দ করে বসলো।তার বয়সেই তো এখন সাতাশ চলে আর সেইখানে একটা ক্লাস ফাইভের পড়ুয়া ছোট্ট মেয়েকে পছন্দ করে নিলো।আর,রায়ানের এই বা কি দোষ!ভালো লাগা তো মনের ব্যাপার স্যাপার।ভালো লাগতেই পারে।রায়ান ইচ্ছা করেও খুশির থেকে চোখ ফিরাতে পারে নি।যতোবারই খুশির দিকে তাকায় ততবারই নিজে নিজের কাছে ছোট হয়ে যায়।তাই তো দ্রুত রাতের খাবার খেয়ে রায়ান বাসায় চলে যায়।এখানে থাকা তার জন্য বেশি দুষ্কর হয়ে যাচ্ছে।

বেলী বিছানায় মুখ গোমড়া করে বসে আছে।তার কিছুই ভালো লাগছে না।রাতের খাবার মুখে তুলতে পারে নি,নাকে কেমন একটা গন্ধ আসতেই বমির বেগ গলা অবধি চলে আসে।তাই কিছু না খেয়েই রুমে চলে এসেছে।এতোক্ষণ বুরাগ খাবারের প্লেট নিয়ে বেলীকে খাওয়ানোর জন্য অনেক যুদ্ধ করেছে কিন্তু,যুদ্ধের ময়দানে তাকে হেরে যেতে হয়েছে।লাস্টে বেলীকে একগাদা ধমকে ধামকে খাবারের প্লেট নিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে পড়লো।তারপর থেকেই বেলী মুখ গোমড়া করে বসে আছে।বেলী বিরবির করে বলছে,খেতে যদি ইচ্ছা না করে তাহলে জোর করে খাওয়ানোর দরকার টাই বা কি!আহারে!আমার প্রতি এতো প্রেম যে কবে থেকে জন্ম নিয়েছে উনার বুঝি না।ওই স্নিগ্ধার কথা কি ভুলেই গেছেন নাকি।আজকে একটু পরোক্ষ করে দেখতে হবে।কি করবো আমি আর!বসে থাকতেও তো ভালো লাগে না তাই এটাই একটু করে দেখি।উনার মুখের রিয়েকশনেই বলে দিবে এখনো উনার মনে স্নিগ্ধার জায়গা আছে কিনা!!

বুরাগ হন্তদন্ত হয়ে রুমে এসে দরজা লাগিয়ে শুয়ে পড়লো।বেলী এখনো আগের মতো বসে আছে।বেলী বুরাগের দিকে তাকিয়ে,মুখের হাবভাব বুঝার চেষ্টা করছে।লাস্টে বুঝে উঠতে না পেরে বেলী বুরাগের হাতে ধাক্কা দিয়ে বলতে লাগলো,

–“শুনছেন?আপনি!”

বুরাগ চোখ বন্ধ করেই বললো,

–“না শুনার কি আছে!কান খোলা আছে বলতে পারো।”

–“আমার ঘুম আসছে না।”

–“তাহলে এক কাজ করো,বাহিরে গিয়ে উড়নচণ্ডীর মতো উড়ে আসো।তাহলে ঘুম চলে আসবে।”

বুরাগের কথা কর্ণপাত করে বেলী কিছুক্ষণ আহাম্মকের মতো বসে রইলো।স্পষ্ট বুঝতে পারছে বুরাগ রেগে আছে।
বেলী বুরাগের পিঠ ঘেঁষে বসলো।বুরাগের হাতের উপর নিজের থুঁতনীটা রেখে আদুরী কন্ঠে বললো,

–“উঠুন না!চলুন না আজকে একটু গল্প করি।”

বেলীর এরূপ কন্ঠ শুনে অগ্যাতা বুরাগকে শুয়া থেকে উঠতে হলো।বিছানায় হেলান দিয়ে শুয়ে বেলীকে বললো,

–“কি গল্প করবে তুমি!এই সময়ে।তোমার এখন ঘুমানোর সময়,ওষুধ খেয়ে ঘুম দেওয়া দরকার তোমার।আর তুমি কিনা রাতের খাবার টাই খেলে না,আর ওষুধের তো আশেপাশেই নাই তুমি!!”

বেলী মুখটাকে বিতৃষ্ণা করে বললো,

–“একদিন এইসব হাবিজাবি না খেলে কিছুই হবে না।আমার মন আজকে না করেছে খেতে তাই আমি খাই নি।মনের উপর কি কিছু হয় নাকি।এখন এইসব নিয়ে কথা বলতে আমার ভালো লাগছে না।”

–“ভালো না লাগলে ঘুমাও।”

বেলী বেঁকে বসলো।মনে মনে আওড়াচ্ছে,আজকে এতো ঘুম ঘুম করছেন কেন উনি?আমার মনের কথা না জানা পর্যন্ত শান্তি নেই।
কিছুক্ষণ নিজের সাথে বকে বেলী বুরাগের দিকে তাকিয়ে হাসি মুখে বললো,

–“একটা কথা বলি আপনাকে।”

বুরাগ লম্বা একটা হাই তোলে বললো,

–“বলো!”

–“স্নিগ্ধা আপুর কথা কি আপনার এখন আর মনে পড়ে না?না মানে,আপনি এতো ভালোবাসা দেখান আমার প্রতি তাই বলছিলাম আর কি।”

বুরাগ সরু চোখে তাকালো বেলীর দিকে।বেলীর মুখের মতিগতি বলে দিচ্ছে এইটার উত্তর না পেলে বেলীর মনে শান্তি হবে না।তাই বুরাগ কিছুটা আমোদিত গলায় বললো,

–“কে বললো,তোমার প্রতি আমি ভালোবাসা দেখাই!আমি তো আমার সন্তানের প্রতি ভালোবাসা দেখাই।এখন বলতে পারো,সন্তান তো পৃথিবীতে আসে নি,কিন্তু,সন্তান তো তোমার মাঝে আছে তাই এইরকম করি।সন্তানকে পেলে তোমাকে আর লাগবে না আমার।আর,স্নিগ্ধা এখনো আমার মনে আগের মতোই লেপ্টে আছে।একদম কাঁঠালের আঠার মতো।কথায় আছে না,প্রেম যে কাঁঠালের আঠা লাগলে পড়ে ছাড়ে না।আমারও হয়েছে সেই দশা।”

বেলী ঠায় হয়ে বসে রইলো।বুরাগের কথা শুনে রিয়েক্ট করতে ভুলে গিয়েছে।চোখের কার্ণিশে পানিরা খেলতে শুরু করেছে।বুরাগ চোখ বন্ধ রেখেছে আর মনের আনন্দে পা নাড়াচ্ছে।বেলী কাটকাট গলায় বললো,

–“আপনার মনে আমার কোনো জায়গা নেই?”

বুরাগ মাথা নাড়িয়ে বললো,

–“না নেই।”

বুরাগের কথা শুনে বেলী বিছানা থেকে উঠে পড়লো।বালিশ নিয়ে চলে আসতে নিলেই বুরাগ চেঁচিয়ে বললো,

–“কোথায় যাচ্ছো তুমি।”

–“থাকবো না আমি আপনার সাথে।যেখানে আমার কোনো মূল্য নেই,জায়গা নেই সেখানে আমি আর থাকবো না।”

–“তা বেশ ভালো কথা।কিন্তু,বালিশ টা রেখে যাও।এই বাসার আনাচে-কানাচে যেখানেই যাও না কেন বালিশের অভাব পাবে না।তাই,আমার বিছানার বালিশ টা রেখে যাও।”

বেলী রাগে হাতে থাকা বালিশ টা বুরাগের দিকে ছুঁড়ে মেরে জোর গলায় কেঁদে উঠলো।বালিশ টা বুরাগের কাছে না গিয়ে কাবার্ডে লেগে ধপাস করে নিচে পড়ে গেলো।বুরাগ বিছানা ছেড়ে বালিশ টা হাতে নিয়ে সুন্দর করে জায়গা মতো রেখে দিয়েছে।

বেলী বুরাগের এমন খাপছাড়া আচরণ দেখে আরো জোরে কেঁদে উঠলো।সে ভেবেছিলো বুরাগ তার কান্না দেখে এগিয়ে আসবে কিন্তু,বুরাগ তার কাছে না এসে যত্ন করে বালিশ টা রেখে দিলো।বেলী কান্না করছে আর ভাবছে,তোরও কপাল ভালো বালিশ,উনার কেয়ার পাচ্ছিস।আর আমাকে দেখ,আমি খাম্বার মতো দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কান্না করছি।
কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে যখন বুরাগের পাত্তা পেলো না তখন বেলী রুম থেকে বের হওয়ার জন্য হাঁটা ধরে।দরজার সামনে আসতেই বুরাগ বেলীকে কোলে তোলে নিলো।বেলী নেমে যাওয়ার জন্য শরীর নাড়াচাড়া করছে।বুরাগ শান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,

–“কাল আমার সন্তানকে ছাড়া থেকেছি আজকেও ওকে ছাড়া থাকতে পারবো না।তাই,এইখানেই শুয়ে পড়ো তুমি।”

বেলী বিছানায় শুয়ে কাঁথা গলা অবধি ঢেকে উল্টো হয়ে শুয়ে পড়লো।বুরাগ লাইট অফ করে বেলীর একদম পাশে গিয়ে শুয়ে পড়লো।
বেলী ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কান্না করছে।বুরাগ বেলীকে নিজের বুকে চেপে ধরে বললো,

–“নিজের দোষেই কান্না করছো তুমি।একটু আগের অযৌক্তি প্রশ্ন টা না করলে এখন আর কান্না করতে হতো না।”

বেলী ক্রন্দনরত গলায় বললো,

–“আপনি যে এখনো স্নিগ্ধাকে ভালোবাসেন সেইটা কিছু না।আমি বললেই সেটা অযৌক্তিক হয়ে গেলো।”

–“হয়েছেই তো।তুমি স্ত্রী হয়ে কীভাবে এমন একটা প্রশ্ন করতে পারলে,এইটা নিয়ে তো আগে অনেক কষ্ট পেয়েছো তাহলে আবার কেন ঘুরেফিরে নিজের কষ্ট বাড়ানোর জন্য এইসব প্রশ্ন করেছো।”

বেলী নিজেকে বুরাগের থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে পুনরায় আগের মতো শুয়ে পড়লো।বুরাগ ফোঁস করে একটা নিঃশ্বাস ছেড়ে বললো,

–“আর কান্না করতে হবে না।আমার মনে স্নিগ্ধার জন্য আর কোনো অনুভূতি নেই।”

বেলী চট করে বুরাগের দিকে ফিরলো।মাথার নিচে হাত দিয়ে শুয়ে বুরাগকে কতক্ষণ পর্যবেক্ষণ করে নিলো।চোখের কোণে লেগে থাকা পানিটুকু মুছে নিয়ে বললো,

–“একটু আগেই তো বললেন স্নিগ্ধা আপনার মনে এখনো কাঁঠালের আঠার মতো লেগে আছে যা ছাড়া খুব মুশকিল,আর এখন বলছেন তার উল্টো কথা।শুনন!আমি ছোট বাচ্চা নই,আপনি যা তা বলবেন আর তাই বুঝবো।”

বুরাগ বেলীকে নিজের বুকের উপর চেপে ধরে রেখেছে।বেলীর চুল গুলো কানের পিছনে গুজে দিয়ে বললো,

–“তোমাকে পানিশমেন্ট দিতে চেয়েছিলাম।যাতে এইরকম প্রশ্ন আর আমাকে না করো।স্নিগ্ধা অনেক আগেই আমার মন থেকে মুছে গিয়েছে।আর,আমাদের মাঝখানে তৃতীয় কোনো ব্যক্তি আসবে না।”

বেলী বুরাগকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে পড়লো।বুরাগও বেলীকে চেপে ধরে আছে।বাহির থেকে ঠান্ডা মৃদু বাতাস ভেসে আসছে।গরমের অবসান ঘটাচ্ছে এই মৃদু বাতাস টি।হয়তোবা বৃষ্টি হতে পারে।বুরাগ পাশ ফিরে শুয়ে বেলীকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো।বারান্দা থেকে বেয়ে আসা বাতাসটা বুরাগের মনে শিহরণ জাগিয়ে দিচ্ছে।বেলীর ঠোঁটে ইচ্ছামত চুমু খেয়ে গলায় মুখ ডুবিয়ে দিলো বুরাগ।বেলীর অস্বস্তি হচ্ছে খুব।মনে হচ্ছে এই প্রথম স্পর্শ পাচ্ছে বুরাগের।বুরাগের ভিজা গাঢ় চুমুতে বেলীর গলা ভরে উঠতে শুরু করলো।বেলীর উপর আধশোয়া হয়ে শুয়ে বুরাগ বেলীতে মত্ত হতে শুরু করে দিলো।বুরাগের এক একটা স্পর্শ পেয়ে বেলী শরীর ঝাঁকিয়ে কেঁপে উঠছে।বুরাগ একবার বেলীর বন্ধ চোখের দিকে তাকিয়ে পুনরায় মত্ত হয়ে উঠলো।বুরাগের স্পর্শ গভীর থেকে গভীরতা হতেই বেলী ভেঙে আসা গলায় বললো,

–“এখন এইসব না প্লিজ।তিনমাস চলছে।

বাধ্য হয়েই বুরাগকে সমাপ্তি টানতে হলো।কিছুক্ষণ বেলীর দিকে অসহায় চোখে তাকিয়ে আগের ন্যায় বেলীকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে পড়লো।
—-
দিনের শুরু টা হয়েছে সবারই নিত্যদিনের কাজের মাধ্যমেই।বুরাগ সকাল সকাল অফিসে চলে গিয়েছে।যাওয়ার আগে বেলীকে ভালোবাসার ছোঁয়া দিতে ভুলে নি।কোহিনূর হাসি আর খুশিকে স্কুলে দিয়ে আসতে গেলেন।আফিয়া এখন সংসারের কাজ নিয়ে ব্যস্ত আছেন।তিনি নিজের মনের আনন্দেই সংসারের সব কাজ করে যাচ্ছেন।বুরাগের সন্তানের জন্য এখন থেকেই কাঁথা সেলাই করার প্রস্তুতি নিয়ে নিয়েছেন।আজাদ রহমান খুব চিন্তায় আছেন।রাখেশকে কথা দিয়ে ফেলেছেন জয়নব কে বুরাগের বউ করে নিয়ে আসবেন।কিন্তু,জয়নবের প্রতি বুরাগের অবহেলা,রাগ দেখে আজাদ রহমান বেশ খানিকটাই চিন্তায় রয়েছেন।কিছুতেই ভেবে পাচ্ছেন না কি থেকে কি করবেন উনি।সবার দিন নিত্যদিনের মতো চললেও পারভীনের দিন গুলো কেমন যেনো বিষিয়ে উঠেছে।কেন জানি উনার হঠাৎ করেই ভয় হতে শুরু করে।ভয় টা তাঁর স্বামী লিটনকে নিয়ে।পারভীন ঘুমের ভান করে শুয়ে থেকে লিটনকে পর্যবেক্ষণ করেন।মাঝরাত পর্যন্ত যখন লিটন ফোন নিয়ে ব্যস্ত থাকে তখনই পারভীনের মনে একটা খটকা এসে ভর করে।তবে,উনি সাহস করে কিছুই বলতে পারছেন না লিটনকে।আজকে অনেকবার বলেছিলেন লিটনকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে চেকআপের জন্য কিন্তু,লিটন কাজের দোহাই দিয়ে এড়িয়ে গিয়েছে।তাই,আফিয়া বুরাগকে বলে দিয়েছেন আজকে যেনো খুব তাড়াতাড়ি অফিস থেকে এসে পারভীনকে যেনো ডাক্তারের কাছে নিয়ে যায়।বুরাগও সম্মতি জানিয়ে চলে গিয়েছে।

লিটন চেয়ারে বসে গভীর ভাবনায় মত্ত।তবে ভাবনার থেকে তার আফসোস হচ্ছ বেশি।বেলীকে এক বাসায় পেয়েও কিছুতেই ছুঁয়ে দিতে পারলো না।যখন সামনে বেলীকে দেখে তখনই তার নিজেকে দিশেহারা মনে হয়।
স্নিগ্ধার প্রতি সে এখন তেমন একটা মজা পায় না।তাও,এখন স্নিগ্ধাকে দিয়েই কাজ চালিয়ে দিচ্ছে।তবে,সুযোগ বুঝে বেলীকে সে ছুঁয়ে দেখবেই।বেলীর মাঝে সে অন্যরকম একটা অনুভূতি পায়।যার জন্য তার নিজেকে মাঝেমধ্যে পাগল পাগল মনে হয়।

রায়ান একরাশ বিরক্তি নিয়ে জ্যামে আটকে আছে।প্রায় ত্রিশ মিনিট হতে চললো তাও জ্যাম ছুটার কোনো নামগন্ধ নেই।রায়ান কম সাউন্ডে একটা গান ছেড়ে দিয়ে গাড়ির সিটে মাথাটা এলিয়ে দিয়েছে।সামনের দিকে তাকিয়ে আছে।তবে কোথায় গিয়ে তার চোখ থামছে তা বুঝতে পারছে না।হঠাৎ করেই একটা আইসক্রিম পার্লারের সামনে খুশিকে আইসক্রিম নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে রায়ান কিছুটা চমকে উঠলো।রায়ান একটু নড়েচড়ে বসলো।ভালো করে খুশির দিকে তাকালো,স্কুলের ফ্রোক পড়ে আছে আর মাথার চুল উঁচু করে বাঁধা।পাশে হাসি সহ আরো অনেকেই আছে।খুশি তাদের সাথে হেসে হেসে কথা বলছে আর ঠোঁটের চারপাশ ভরিয়ে আইসস্ক্রিম খাচ্ছে।ঠোঁটের পাশে আইসক্রিম লাগতেই খুশি হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে ঠোঁট দুটো মুছে নিলো।নেভে ব্লু রঙের ফ্রোকটায় হাত দুটো মুছে পুনরায় আইসক্রিম খেতে লাগলো।রায়ান তড়িঘড়ি করে,ফোন বের করে খুশির কয়েকটা ছবি ক্যাপচার করে নিলো।খুশির দিকে তাকিয়ে রায়ান বলতে লাগলো,

–“এই পিচ্চির থেকে চোখ সরানো খুবই কষ্টকর।এখন থেকে মেয়েটার আশেপাশে যাওয়াটাই মুশকিল হয়ে দাঁড়িয়েছে।শুধু আদর করতে ইচ্ছা করে।বুরাগ শুনলে আমাকে কি ভাববে!!যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব আমাকে এই দেশ থেকে চলে যেতে হবে।আজকেই বাবাকে গিয়ে বললো,আমি আমেরিকা যেতে রাজি।সেখানেই না হয় কোম্পানি দাঁড় করিয়ে শিফট হয়ে যাবো।তবে,আমি খুব মিস করবো এই পিচ্চিকে।”

জ্যাম ছাড়তেই রায়ানও গাড়ি স্টার্ট দিলো।স্টিয়ারিং এ হাত দিয়ে রায়ান আরেক পলক খুশির দিকে তাকিয়ে চলে গেলো।
——
বুরাগ বিকেল হওয়ার একটু আগেই বাসায় চলে আসে।হাতে ব্লেজার টা নিয়ে ধপাধপ্ পা’য়ে রুমে ঢুকে গেলো।বেলীকে ঘুমোতে দেখে আস্তে পা’য়ে কাবার্ডের কাছে এগিয়ে গিয়ে একটা শার্ট নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো।ঘামে লেপ্টে থাকায় শার্ট টা চেঞ্চ করে রুম থেকে বেরিয়ে পড়লো।গাড়িতে আফিয়া যত্ন করে পারভীনকে বসিয়ে দিলেন।বুরাগকে গাড়ি সাবধানে চালাতে বলে উনি চলে গেলেন।বুরাগ মিষ্টি হেসে ফুপি পারভীনের দিকে তাকিয়ে গাড়ি স্টার্ট দিলো।

প্রায় সন্ধ্যা হয়ে এসেছে।একটু আগেই বুরাগ আর পারভীন হাসপাতাল থেকে বেরিয়েছে।চেকআপ করিয়েছেন রিপোর্ট দুইদিন পর দিবে।বুরাগ একটা দোকানের সামনে দাঁড় করিয়ে পারভীনকে উদ্দেশ্য করে বললো,

–“ফুপি!কিছু খাবে তুমি?”

পারভীন ঠোঁট দুটো প্রসারিত করে বললেন,

–“হ্যাঁ রে বুরাগ!খুব টক খেতে ইচ্ছা করছে।নেমে দেখ তো তেঁতুলের চাটনি পাস কিনা।”

বুরাগ সিটবেল্ট খুলতে খুলতে বললো,

–“ঠিকাছে ফুপি!তুমি বসো।আমি নিয়ে আসছি।”

বুরাগ নেমে যেতেই পারভীন ছোটবাচ্চাদের মতো বাহিরে তাকিয়ে মানুষের আনাগোনা দেখছেন।বাহিরে এসে ভালোই লাগছে উনার।সারাদিন রুমে বসে থাকতে এখন উনার আর ভালো লাগে না।শরীর এতোটাই ফুলেছে এখন নড়তে চড়তেও অনেকটা কষ্ট হয়।আবাসিক হোটেল থেকে স্নিগ্ধা আর লিটনকে বের হতে দেখেই পারভীন চমকে উঠলেন।কিছুক্ষণ ভালো করে চেয়ে রইলেন আসলেই মানুষ দুটো লিটন আর স্নিগ্ধা কি না।আর একটু সামনে থেকে যখন দেখলেন মানুষ দুটো লিটন আর স্নিগ্ধাই তখনই উনার মনের ভিতর অন্যরকম এক ভাবনা জাগতে শুরু করলো বারবার ভাবছেন আবাসিক হোটেলে তাদের কি কাজ ছিলো।আর,লিটনই বা কেন স্নিগ্ধার সাথে এইসময়।
ততক্ষণে,বুরাগও দশ টা তেঁতুলের চাটনি কিনে নিয়ে চলে এসেছে।পারভীনের হাতে ধরিয়ে দিয়ে বললো,

–“এই নাও ফুপি!তোমার চাটনি।”

পারভীন আনমনেই বলে উঠলেন,

–“বুরাগ দেখ তো এইটা তোর ফুফা না,আর ওইটা স্নিগ্ধা না।তাদেরকে আমি একটু আগেই এই আবাসিক হোটেল টা থেকে বের হতে দেখেছি।কেন বল তো?”

বুরাগ বিস্ময় নিয়ে তাকালো পারভীনের দিকে।নিজেও সামনে তাকিয়ে লিটন আর স্নিগ্ধাকে একসাথে দেখে চোখে,মুখে ঘৃণার রেশ ফুটে উঠলো।কিন্তু,তার মনে খুব ভয় হচ্ছে পারভীন কে নিয়ে।তার ফুপি কষ্ট পাবে বলে বুরাগ লিটনকেও কিছু করতে পারছে না।তা না হলে,কবেই লিটনের বারোটা বাজিয়ে দিতো।শুকনো একটা ঢোক গিলে বললো,

–“হয়তোবা কোনো কাজে এসেছে।”

–“তাই বলে,আবাসিক হোটেল থেকে বের হবে।আমার মনটা খুব কু গাইছে বুরাগ।খারাপ কিছু হবে না তো।”

বুরাগ পারভীনকে আস্বস্ত করে বললো,

–“তুমি একটু শান্ত হয় ফুপি।এতো চিন্তা করলে তোমার শ্বাসকষ্ট বেড়ে যাবে।পরে,আরো সমস্যা হতে পারে।”

পারভীন কিছু বললেন না।শুধু চেয়ে রইলেন লিটন আর স্নিগ্ধার হাসি উজ্জ্বল মুখটার দিকে।একটু পরেই লিটন আর স্নিগ্ধা চলে যেতেই পারভীন আশেপাশে পাগলের মতো খুঁজতে লাগলেন তাদেরকে।কিছুতেই উনার মনে শান্তি পাচ্ছেন না।বুরাগ ফুপি পারভীনের অস্থিরতা দেখে চোয়াল শক্ত করে নিয়েছে।আজকে লিটনকে একটা শাস্তি দিতেই হবে না হলে সে কিছুতেই শান্তি পাবে না।

চলবে..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here