#উপন্যাস_প্রপর্ণ(২৬)
#কুরআতুল_আয়েন
শোকের ছায়া নেমে এসেছে রহমান ভিলাতে।পারভীনকে এইভাবে চলে যেতে দেখে সবাই একদম স্তব্ধ হয়ে গিয়েছে।আফিয়া যেনো বিশ্বাসই করতে পারছেন না নিজের পরিবারের সাথে এমন কিছু একটা হয়েছে।আজাদ আর আলামিন রহমান পাথর হয়ে আছেন।নিজেদের একমাত্র ছোটবোন।কি করে মানবেন উনারা,নিজেদের ছোটবোনের এইভাবে চলে যাওয়াটা।কোহিনূর স্তব্ধ হয়ে বসে আছেন।কয়েকদিন আগে শিউলির চলে যাওয়ায় অনেকটাই ভেঙে পড়েছিলেন।আর,আজকে ননদ পারভীনের এইভাবে চলে যাওয়া।বুরাগ পারভীনের লাশের পাশে বসে থাকলেও চোখ,মুখ তার শান্ত হয়ে আছে।অফিস যাওয়ার আগে সকালে যখন পারভীনকে দেখতে গিয়ে পারভীনের ঝুলন্ত লাশ দেখতে পেয়েছিলো তখনি বুরাগ ফুপি বলে জোরে এক চিৎকার দিয়ে উঠে।বুরাগের চিৎকার শুনে বাসার সবাই জড়ো হয়ে গিয়েছিলো।কেউ মানতে রাজি নন পারভীনের এইভাবে নিজেকে শেষ করে দেওয়ার ঘটনা টা।বেলী এককোণায় থম মেরে বসে রইলো।নিজের সাথে হাসি আর খুশিকে চেপে ধরে রেখেছে।হাসি,খুশি ভয়ে কান্না করছে।শিউলির লাশ দেখার পর নিজেদেরকে একটু স্বাভাবিক করে নিয়েছিলো আবার আজকে নিজেদের ফুপিকে এইভাবে দেখে অনেকটাই ভয় পেয়ে গিয়েছে।
সবাই থাকলেও লিটন এইখানে নেই।পারভীনের মৃত্যুর খবর পেয়ে সে ঘর থেকে বের হয়ে এসেছিলো।কিছুক্ষণ পারভীনের দিকে তাকিয়ে পুনরায় রুমে গিয়ে দরজা চাপিয়ে দেয়।বিছানায় শরীর এলিয়ে দিয়ে নিজেই নিজের সাথে বলতে থাকে,
‘যা হয়েছে একদম ভালো হয়েছে।পারভীনকে আমার একদমই সহ্য হতো না।আপদ চলে গিয়ে আমাকে একদম পাখির মতো মুক্ত করে দিয়ে গেছে।ধন্যবাদ তোমাকে পারভীন!আমাকে মুক্ত করে দেওয়ার জন্য।
বুরাগ পুলিশকে ফোন করতে নিলেই বাধা হয়ে দাঁড়ান আজাদ রহমান।উনি চান না পুলিশ জানাজানি হোক।এমনকি আশেপাশের মানুষদের অনেক কষ্টে সামলে রেখেছেন।পুলিশ আসলেই উনার রেপুটেশনের অনেক ক্ষতি হবে।এই নিয়ে বুরাগের সাথে আজাদ রহমানের অনেক কথা কাটাকাটি হয়েছে।বুরাগ মনে মনে আজাদ রহমানকে অনেক ধিক্কার জানালো।কেন জানি বুরাগের কাছে আজাদ রহমানকে বাবা বলতেও বিবেকে বাঁধছে।বুরাগ ভাবতেও পারছে না নিজের বাবাকে কি বলা উচিত।বাবার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে বুরাগ দৌড়ে ‘ফুপি পারভীনের’ রুমে গিয়ে ঢুকলো।দরজা ঠেলে বিছানায় শুয়ে থাকা লিটনের দিকে তাকিয়ে সেদিকেই এগিয়ে গেলো।নিজের শক্তপোক্ত হাত গুলো দিয়ে লিটনের গলা চেপে ধরে বললো,
–“তোর জন্য ফুপি এই কাজ টা করেছো।কেন কষ্ট দিলি তুই আমার ফুপিকে।ফুপি কি দোষ করেছিলো বল?তোকে আমি ছাড়বো না।তোকে একদম শেষ করে ফেললো কুত্তার বাচ্চা।”
লিটন কাশতে কাশতে শেষ।বুরাগের হাত দুটো আঁকড়ে ধরে আছে।বুরাগ ছাড়ার নামেই নিচ্ছে না।বুরাগ আর একটু জোরে চেপে ধরতেই লিটনের চোখ,মুখ নীল হয়ে আসার উপক্রম।কপালের রগ গুলো ফুলে উঠেছে।লিটনের মুখ যেনো রক্তের ন্যায় লাল হয়ে যাচ্ছে।অনেক কষ্টে লিটন হাত পা ছুঁড়াছুঁড়ি করে নিজেকে বুরাগের কাছ থেকে ছাড়িয়ে নিলো।তাও,বুরাগ থামে নি!লিটনকে একটার পর একটা থাপ্পড় দিয়ে যাচ্ছে আর দাঁতে দাঁত চেপে বলছে,
–“তোকে আমি একদমই ছাড়বো না।তোর জন্য ফুপি আজকে চলে গিয়েছে।তুই দায়ী এর জন্য।ফুপিকে তুই কষ্ট দিয়েছিস।কতোটা কষ্ট সহ্য করে ফুপি এই পৃথিবী ছেড়ে বিদায় নিয়েছে।”
লিটনের কাছে আজকে বুরাগকে খুব ভয়ংকর লাগছে।পাগলের মতো আচরণ করছে বুরাগ।হিংস্র পশু যখন ক্ষুধার্ত থাকলে খাবারের জন্য পাগল হয়ে যায় ঠিক বুরাগও লিটনকে মেরে ফেলার জন্য এইরকম হিংস্র পশুর মতো পাগল হয়ে উঠেছে।লিটন ভেঙে আসা পা দুটো নিয়ে দৌড়ে নিচে নামতে লাগলো।বুরাগও ধেয়ে আসছে লিটনের দিকে।
লিটনের দৌড়ানো দেখে বেলীসহ সবাই অবাক হয়ে যায়।সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো বুরাগ আর লিটনের দিকে।বুরাগ প্যান্ট থেকে কালো বেল্ট টা খুলে নিয়ে লিটনের পিঠে চাবুকের মতো সটান করে একটা বাড়ি মারলো।যার প্রকোপে লিটনের শরীর টা মোচড় দিয়ে উঠলো।আফিয়া সামনে আসতেই বুরাগ আফিয়ার দিকে রক্তচক্ষু নিয়ে তাকালো।আফিয়া ভয়ে নিজেকে জড়োসড়ো করে ফেলেছেন।বুরাগের রক্তলাল চোখ দেখে বেলী ভয়ে নিজেকে আড়ষ্ট করে নিয়েছে।হাসি,খুশিকে আগের ন্যায় নিজের সাথে চেপে ধরে রেখেছে।
বুরাগ লিটনকে একদফা মেরে ক্লান্ত হয়ে যায়।শরীর থেকে ঘাম বেয়ে বেয়ে পড়ছে।ঘামের তাড়নায় বুরাগের শার্ট টা বুকের সাথে লেপ্টে আছে।ফ্লোরে লিটন শুয়ে ছটফট করছে।বেল্টের আঘাতে শরীরে রক্তের ছোপ ছোপ দাগ ফুটে উঠেছে।বুরাগ পুনরায় মারতে নিলেই রায়ান দৌড়ে এসে বুরাগকে জাপটে ধরে আটকায়।বুরাগ তেজী গলায় বললো,
–“রায়ান আমাকে ছাড়!ওকে শেষ করতে না পারলে আমার শান্তি হবে না।”
রায়ান বুরাগকে শক্ত করে জড়িয়ে রেখেছে।আশ্বস্ত করে বললো,
–“বুরাগ!একটু শান্ত হ।ওকে শাস্তি দেওয়ার জন্য মহান আল্লাহ তা’য়ালা আছেন।ওর শাস্তির কোনো ক্ষমা হবে না।দেখবি,একদিন ও এমন শাস্তি পাবে যা দেখে আমরা অনেক শান্তি পাবো সেই সাথে পারভীন ফুপির আত্নাও।”
–“ওকে,এই বাসা থেকে চলে যেতে বল।ওকে আমার চোখের সামনে একদমই সহ্য হচ্ছে না।এইখানে এই কুত্তার বাচ্চা আর একমুহূর্তের জন্য থাকলে আমি ওকে গলা টিপে শেষ করে দিবো।”
লিটন গলা কাটা মুরগীর মতো ছটফট করতে করতে চলে গেলো।বাসার সবাই অবাক হয়ে দেখছিলো এতোক্ষণ সব কাহিনি।আফিয়া বুরাগের কাছে এসে বললেন,
–“কি হয়েছে বুরাগ তোর?এইভাবে লিটনকে কেন মারলি?আর পারভীনই বা কেন নিজেকে শেষ করে দিয়েছে??সব কিছুর উত্তর তোর কাছে আছে বুরাগ।”
বুরাগ রাগে ফোঁসফোঁস করছে।আফিয়ার কথায় দ্বিগুণ চেঁচিয়ে বললো,
–“ওর জন্য ফুপি নিজেকে শেষ করে দিয়েছে।কতোটা কষ্ট পেয়েছিলো ফুপি তা আমি দেখেছি।”
আফিয়ে পিলে চমকে উঠলেন।সাথে আজাদ আর আলামিন রহমানও।আফিয়া ভয়ার্ত গলায় বললেন,
–“মানে কিসব বলছিস তুই বুরাগ।লিটনের জন্য কেন পারভীন নিজেকে শেষ করে দিবে।তারা তো দু’জন দু’জনকে খুব ভালোবাসতো।”
বুরাগ আফিয়াকে কিছু বলতে যাবে তার আগেই বেলীর উপর চোখ পড়লো।বেলীকে এইভাবে ভয়ে বসে থাকতে দেখে বুরাগ দীর্ঘ একটা নিঃশ্বাস ছাড়লো।বেলীর কাছে গিয়ে আদেশের সুরে বললো,
–“বেলী!হাসি আর খুশিকে নিয়ে রুমে যাও।”
বুরাগের কন্ঠে বেলী চমকে উঠলো।ভয়ার্ত চোখ নিয়ে বুরাগের দিকে তাকিয়ে হাসি আর খুশিকে নিয়ে বেলী চলে যায়।বেলীর ভয়ার্ত চোখ দেখেই বুরাগ বুঝে নিয়েছে বেলী যে ওকে ভয় পাচ্ছে।বুরাগ বেলীর যাওয়ার দিকে কিছুক্ষণ একপলকে তাকিয়ে রইলো।
—-
পড়ন্ত বিকেলের রেশ চারপাশে ছড়িয়ে গিয়েছে।পশ্চিম আকাশটা যেনো রক্তিম লাল হয়ে আছে।পারভীনের দাফন করিয়ে সবাই ড্রয়িং রুমে বসে আছে।আফিয়া থেমে থেমে কেঁদে উঠছেন।বুরাগের কাছ থেকে তখন সব শুনেছেন।নিজের বোনের মেয়ে স্নিগ্ধার উপর উনার খুব রাগ হচ্ছে।এমনকি লিটনের উপরও।আফিয়া এখন জানতে পারলেন,বুরাগের সাথে স্নিগ্ধার সম্পর্ক কেন শেষ হয়ে গিয়েছিলো।আর,স্নিগ্ধাই বা কীভাবে পারলো,বাবার বয়সী একটা লোকের সাথে লিভ টুগেদার করতে।উনার খুব কষ্ট হচ্ছে।পারভীনের লাশ দেখেও আফিয়া বুঝেছিলেন পারভীনের বিষন্নতা।
রায়ান সবার থেকে বিদায় নিয়ে চলে গিয়েছে।খুশির দিকে তাকাতে গিয়েও পারছিলো না।বেচারি যে খুব ভয় পেয়েছে তা রায়ানের বোধগম্য হয়েছে।ইচ্ছে করছিলো খুশির কাছে বসে খুশিকে একটু আশ্বস্ত করে আসতে,যেনো ভয় না পায়।নিজের ইচ্ছাটাকে দমিয়েই রায়ান বুরাগদের বাসা থেকে বেরিয়ে পড়ে।
বিকেলের সময় পেরিয়ে রাত ঘনিয়ে এসেছে।সময় যেনো খুব দ্রুত চলে যাচ্ছে।বুরাগ সোফায় চুপটি মেরে বসে আছে।বেলী শুয়ে থাকলেও তার ঘুম আসছে না।চোখের কার্ণিশ বেয়ে পানি পড়ছে।বুরাগের ফোনটা হঠাৎ বেজে উঠলো।নিঃশব্দ এই রুমটায় বুরাগের ফোনটা বেজে উঠতেই বুরাগ বেলী দু’জনেই চমকে উঠলো।বুরাগ ফোন টা হাতে নিয়ে তড়িঘড়ি করে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে সময় টা দেখে নিলো।সবেমাত্র এগারোটা বাজতে চললো।ফোনের স্ক্রিনে ডক্টরের পিএর নাম্বার দেখে বুরাগের বুকটা মোচড় দিয়ে উঠলো।কেন জানি,বাচ্চাদের মতো কান্না করতে ইচ্ছা করছে।বুরাগ ফোনটা রিসিভ করতেই ফোনের অপাশ থেকে ডক্টরের পিএ বললেন,
–“মিসেস পারভীনের রিপোর্ট গুলো কালকে নিয়ে যাবেন।সাথে রোগীকেও নিয়ে আসবেন।রোগীর প্রেগ্ন্যান্সিতে কিছু প্রোবলেম আছে।”
বুরাগ কিছুক্ষণ চুপ থেকে ভাঙা ভাঙা গলায় বললো,
–“রিপোর্ট গুলোর আর দরকার নেই।আমার ফুপি আজকে দুনিয়ার মায়া ত্যাগ করে আজীবনের জন্য চলে গিয়েছে।”
ফোনের অপাশে ডক্টরের পিএ কোমল কন্ঠে বলে উঠলেন,
–“সরি!খুবই দুঃখজনক ঘটনা।”
বুরাগ ফোন কেটে দিয়ে মুখটা দু’হাত দিয়ে চেপে ধরেছে।বেলী শুয়ে শুয়ে এতোক্ষণ বুরাগের কথাগুলো মনোযোগ দিয়ে কর্ণপাত করছিলো।বুরাগের সম্পূর্ণ কথা শুনে বেলীর মনটা নিমিষেই খারাপ হয়ে যায়।বিছানা ছেড়ে বেলী বুরাগের দিকে গুটিগুটি পা’য়ে এগিয়ে গেলো।বুরাগের পাশে বসে কাঁধে হাত রাখতেই বুরাগ বেলীকে জাপটে জড়িয়ে ধরলো।বেলীকে জড়িয়ে ধরেই ডুকরে কেঁদে উঠলো।
বেলী বুরাগকে সান্ত্বনার সুরে বললো,
–“নিজেকে শক্ত রাখুন।মা,বাবার মনের অবস্থাও তো ভালো না।আপনিও যদি এইভাবে ভেঙে পড়ুন তাহলে বাকি সবাইকে কীভাবে ঠিক রাখবেন।”
–“বেলী!ফুপিকে আমি খুব মিস করছি।আমার ছোটবেলার খেলার সাথী ছিলো ফুপি।কেন এইভাবে চলে গেলো ফুপি আমাদের কে ছেড়ে।”
বেলী কি বলবে কিছুই বুঝতে পারছে না।তবে তার খুব কষ্ট হচ্ছে।বেলী বুরাগের মুখটা নিজের দু’হাতের ভাঁজে নিয়ে বললো,
–“কপালে এইটাই লিখা ছিলো।এখন শুধু আমাদের দোয়া করতে হবে ফুপি যেনো ভালো থাকেন।”
বুরাগ ছোটবাচ্চাদের মতো কান্না করে বলতে শুরু করলো,
–“ফুপি আমার সাথে রাগ করেছিলো বেলী।ফুপির রাগটাও ভাঙাতে পারি নি।তার আগেই ফুপি আমার হাতের নাগালের বাহিরে চলে গিয়েছে।আমারেই দোষ।আমিই ফুপির কাছে যেতে দেরি করেছি।”
বেলী ইচ্ছা করেই বুরাগের বুকে নিজের মাথা টা ঠেকিয়ে রেখেছে।ক্রন্দনরত গলায় বললো,
–“আপনি প্লিজ এইভাবে কান্না করবেন না।আমার খুব কষ্ট হচ্ছে।”
বুরাগ কান্না থামিয়ে দিয়েছে।বেলীকে নিজের সাথে চেপে ধরে রেখেছে।বেলীর দিকে তাকিয়ে কিছুক্ষণ লিটনের কথাগুলো ভাবলো,লিটনও তো বেলীকে ছোঁয়ার জন্য অনেক চেষ্টা করেছিলো,যদি বেলীকেও হারিয়ে ফেলতো তাহলে তার কি হতো!সে তো এখন বেলীকে ছাড়া একদন্ডও থাকতে পারে না।বলতে গেলে বেলী তার নিঃশ্বাসের সাথে জড়িয়ে গিয়েছে।বেলী আর তার অনাগত সন্তানই তো সব।দু’জনের কারোর ক্ষতি হতে দিবে না বুরাগ।
বুরাগ দীর্ঘ একটা শ্বাস ফেলে বললো,
–“বেলী চলো!ঘুমোবে তুমি।”
–“আপনি কি ঘুমোবেন না?”
–“আমার ভালো লাগছে না বেলী।একটু একা থাকতে চাই আমি।নিজেকে খুব অপরাধী মনে হচ্ছে।বারবার,মনে হচ্ছে ওইদিন ওইসব কথা গুলো না বললে আজকে ফুপি আমাদের মাঝে বেঁচে থাকতো।”
বেলী সাহস দেখিয়ে বললো,
–“কি এমন হয়েছিলো যার জন্য ফুপি নিজেকে শেষ করে দিয়েছেন।সন্তানদের কথাও ভাবলেন না।আর,আপনিই বা কেন ফুফাকে এইভাবে মেরে ছিলেন?”
বুরাগ গলা কেশে বললো,
–“এইসব বাদ দিয়ে ঘুমোতে যাও।না হলে তোমার শরীর খারাপ করবে।”
বেলী সটান করে উঠে বসলো।বুরাগের দিকে না তাকিয়ে চলে গেলো বিছানায়।যতোবারই বুরাগকে এইসব নিয়ে প্রশ্ন করেছে ততবারই বুরাগ কথাগুলো এড়িয়ে গিয়েছে।বিছানায় গিয়ে বেলী পাতলা কম্বল টা মুড়ি দিয়ে শুয়ে পড়লো।বুরাগ বেলীর দিকে অসহায় চোখে তাকিয়ে রইলো।
—-
দেখতে দেখতে অনেকগুলো দিন কেটে যায়।রহমান ভিলাতে পারভীনের শোকের ছায়া যেনো দিনদিন বেড়েই যাচ্ছে।জাবেদা ফোন করে পারভীনের জন্য প্রায়ই দুঃখ প্রকাশ করেন।কাছের মানুষ গুলো এইভাবে চলে গেলে নিজেদেরকে ঠিক রাখা খুব দুষ্কর হয়ে যায়।বেলীর এখন চারমাস চলছে।নিজেকে যতটা সম্ভব সাবধানে রাখে।তার ইদানীং খুব ভয় হয়।রাতে শুধু আজেবাজে স্বপ্ন দেখে ঘুম থেকে উঠে পড়ে।বুরাগ আগের মতো নেই।সারাদিন শুধু মনমরা হয়ে থাকে।রাগ যেনো আগের থেকে দ্বিগুণ বেড়ে গিয়েছে।
আজকে রায়ান লন্ডন চলে গিয়েছে।যাওয়ার আগে খুশির সামনে আর যায়নি।অবশ্য,বুরাগ এয়ারপোর্টে গিয়েছিলো রায়ানকে বিদায় জানাতে।রায়ানের চলে যাওয়ায় বুরাগের নিজেকে খুব একা একা লাগছে।বন্ধুত্ব হয়তোবা এমনই হয়।একজনের চলে যাওয়ায় আরেকজন কষ্ট পায়।
বেলী বিছানা গোছাচ্ছিল।বুরাগ অফিস থেকে এসে সোজা বাথরুমে চলে গিয়েছে।ফ্রেশ হয়ে এসে বেলীর পিছনে দাঁড়ালো।বেলীকে পর্যবেক্ষণ করে বললো,
–“এখনো কি আমার উপর রেগে আছো বেলী।তোমার মনে প্রশ্ন জাগছে তাই তো কেন তোমার কথাগুলো এড়িয়ে যাচ্ছি আমি।”
বেলী কিছু বলে না।বুরাগের উপর খুব অভিমান জমেছে।বেলী তো মনে মনে ভেবে নিয়েছে,বুরাগ তাকে নিজের লোক ভাবে না।ভাবলে কি আর তার কথাগুলো এড়িয়ে যেতো।বেলীর কোনো উত্তর না পেয়ে বুরাগ বেলীকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরলো।নিজের সাথে চেপে ধরে বললো,
–“ও বেলী!আর রাগ করে থেকো না।কথা বলো আমার সাথে।এইভাবে তুমি চুপ করে থাকলে আমার ভালো লাগে না।”
বেলী কপট রাগ দেখিয়ে বললো,
–“আমি কি আপনার আপন নাকি যে রাগ করবো।আপন হলে তো আমাকে সব কথাই বলতেন।আমাকে নিশ্চয় আপনার সন্তানের জন্য রেখেছেন নিজের কাছে!না হলে কবে দূরে পাঠিয়ে দিতেন।আমার জন্য তো আপনার মধ্যে বিন্দুমাত্র ভালোবাসাও নেই।”
বুরাগ অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে বেলীর দিকে।বেলীর কথাগুলো শুনে নিজেকে ঠিক রাখতে খুব কষ্ট হচ্ছে।বুরাগ বেলীকে নিজের দিকে ফিরিয়ে আচমকাই বেলীর ঠোঁট দুটোতে নিজের ঠোঁট দুটো চেপে ধরলো।ইচ্ছামত শুষে নিচ্ছে বুরাগ।বেলী প্রথমে চমকে গেলেও পরে নিজেকে বুরাগের কাছে সঁপে দেয়।মিনিট দশেক পর বুরাগ বেলীর ঠোঁট ছেড়ে দিলো।বেলীর কপালে কপাল ঠেকিয়ে বললো,
–“তুমি আমার খুব কাছের বেলী।নিজের সন্তানের জন্য তোমাকে রাখিনি আমি।আমার সন্তান আর তুমি দু’জনেই আমার কাছে অনেক গুরুত্বপূর্ণ।তোমাদেরকে ছাড়া আমি অচল বেলী।”
–“কিন্তু আমাকে ভালো তো আর বাসেন না।”
বুরাগ মুচকি হেসে বললো,
–“সময় আসুক।এইটার উত্তরও পাবে তুমি।অপেক্ষার ফল মিষ্টি হয় বেলী।”
বেলী একরাশ হতাশা নিয়ে বারান্দায় চলে গেলো।বারান্দায় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কল্পনার রাজ্যে ডুবে দিলো।যেই কল্পনার রাজ্যে রয়েছে তার আর বুরাগের কিছু সুন্দর মুহুর্ত।অন্যদিকে বুরাগ বেলীর দিকে তাকিয়ে মনে মনে আওড়াতে লাগলো,আর কয়েকটা দিন অপেক্ষা করো বেলী।আমি আমার ছোট্ট সোনাকে যেদিন কোলে নিবো সেদিনেই আমি তোমাকে আমার ভালোবাসার কথা বলবো।
চলবে..
(অনেকদিন পর দিলাম উপন্যাস টা।নিজেই লিখার তাল হারাই ফেলছি।)