পুনম পর্বঃস্পেশাল পর্ব

0
4267

#পুনম
#আয়েশা_সিদ্দিকা
#স্পেশাল পর্ব

পাবনীর হলুদ পর্ব শেষ হয়েছে দু’ঘন্টা হলো।এখন সবাই মটকা মেরে ঘুমাচ্ছে!বাহিরে প্রচন্ড বৃষ্টি হচ্ছে! ঝুম বৃষ্টি! পুনম নিজের ভারি পোশাক বদলে সাধারণ একটা পোশাক পড়ে।কড়া লিকারের দুধ চা বানিয়ে বারান্দায় এসে বসে।
যে দিনগুলোতে বৃষ্টি হয় সে দিন গুলোতে পুনম কিছুতেই ঘুমাতে পারেনা!মন, মস্তিষ্ক, চোখ সবকিছু অবাধ্য হয়ে ওঠে! একটা নাম তখন তারা বারবার জপে! তানভীর! তানভীর!
সেই বৃষ্টি ভেজা বিকেলটার কথা কি চাইলেও ভুলা যায়? শুভ্র পাঞ্জাবিতে যখন কাঙ্ক্ষিত পুরুষটা তার দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়েছিল,তখন সবটা পুনমের কাছে অবিশ্বাস্য লাগছিলো!যেন কোন ভয়ংকর স্বপ্ন! ঘুম ভাঙলেই নিজেকে আবিষ্কার করবে নিজের শক্ত পোক্ত বিছানায়!
কিন্তু পুনমের ঘুম ভাঙেনি কেননা গোটা ব্যপারটা অবাস্তব মনে হলেও স্বপ্ন ছিলনা কিছুতেই!
ঢাকা শহরে সেদিন ঝুম বৃষ্টি নেমেছিল আর পুনমের মনেও!তানভীর হাত বাড়িয়ে দিয়েছিল তার দিকে।শুধু পুনমের হাত ধরা বাকি! সুঠাম দেহের আকর্ষণীয় তানভীর খুবই সহজ ভাবে ভালোবাসার আকুতি জানিয়েছিল পুনমের কাছে।তারপর তো ঘোরলাগা পুনমকে নিয়ে গিয়েছিল শাহবাগের এক কাজি অফিসে। চারদিকে তখন অজস্র বাতাস,বৃষ্টি!পুনমের হাতের ছাতা বাতাসের দাপটে পড়েছিল রাস্তায়! পুনম ঠকঠক করে কাঁপছিলো!বৃষ্টিতে নাকি ভয়ে? তা পুনম বুঝতে পারেনি!বৃষ্টির প্রতিটা ফোঁটা পুনমকে ভিজিয়ে দিচ্ছিল!তিরতির করে কাঁপছিল! তানভীর এসে পুনমকে আগলে ধরে!পুরো রাস্তা জনশূন্য! তাই তানভীর নির্দ্বিধায় এসে পুনমকে কোলে তুলে নেয়! পুনম বড় বড় চোখ করে তাকালে তানভীর মাদকচোখে চেয়ে হেসে দেয়!পুনমের তখন নিজেকে বড় অসহায় মনে হয়েছিল! পুনমের অস্থিরতা বুঝতে পেরেই তানভীর আরো শক্ত করে ধরে হাঁটা দেয়!ক ফুট দূরত্বে কাজি অফিস!
“আমাকে নামান মি.তানভীর! “…ছটফটিয়ে বলে পুনম!

বৃষ্টিতে ভিজছিল তানভীরের চুল, ভ্রুু, চোখ, ঠোঁট! কি অসহ্য সুন্দর দৃশ্য! পুনম চোখ ফিরিয়ে নেয়।তানভীর পুনমকে কোলে নিয়ে মৃদু হাঁটতে হাঁটতে বলছিল, ” রিলাক্স পুনমি!এত ছটফট কেন করছো?আমি না নামালে নামতে পারবে বুঝি?”
পুনম শান্ত হয়ে যায়।তানভীর মৃদুস্বরে বলতে শুরু করে, “পুনমি,আজ তোমাকে ছুঁয়ে প্রতিজ্ঞা করছি।কোনদিন এই সস্পর্কের বোঝা তোমার পায়ে বেড়ি বাঁধবে না।তবুও আমাকে ফিরিয়ে দিও না পুনমি! আমি প্রতিটা মুহুর্তে তোমাকে হারিয়ে ফেলার ভয় করি!আমার দমবন্ধ হয়ে আসে!শ্বাস নিতে পারি না!মৃত্যু যন্ত্রণাও বুঝি এর চেয়ে সহজ!আমার বলতে দ্বিধা নেই,তুমি আমার এমন মূল্যাবান সম্পদ যা হারালে আমাকে দেউলিয়া হয়ে ঘুরতে হবে!এত বড় শাস্তি আমায় দিও না পুনমি!আমি কথা দিচ্ছি, কখনো তোমাকে এই সস্পর্কের অধিকার নিয়ে কিছু বলবো না।শুধু তোমার নামের পাশে আমার নামটা জুড়তে চাই,হোক না তা লোকচক্ষুর অন্তরালে!তবুও স্বস্তি। পুনমি,আমার পুনমি!আমি তোমাকে ভালোবাসি। আমি নিজেকে নিয়ে ভয় পাই,আমার কারণে না তোমাকে হারাতে হয় তাই এখানে নিয়ে আসা।আজ তোমাকে নিয়ে হয় আমি কাজি অফিসে যাবো নতুবা তোমার সাথে আমার এই শেষ দেখা!হয়তো পৃথিবীতে আমার কিছু নিঃশ্বাস ফেলা বাকি!”
পুনম সেদিন তানভীরের কথায় পুরোপুরি কেঁপে উঠেছিল। কি ভয়ংকর কথা! পুনম কি করবে ভেবে উঠার আগেই তানভীর তাকে নিয়ে কাজি অফিসের সেই ছোট্ট রুমটায় প্রবেশ করেছিল।দুজন অচেনা স্বাক্ষী, একজন কাজী আর সামনে রাখা নীল কাগজের ফাইল।পুনম স্তম্ভিতের মত বসে ছিল।মাথা পুরোপুরি ফাঁকা!হাত দুটো কাঁপছিল! গলা শুকিয়ে আসছিল!পুনম খুবই মৃদুস্বরে উচ্চারণ করেছিল, “আমার বাবা!”। তানভীর পরম ভরসায় হাতের উপর হাত রেখে পুনমকে আসস্থ করেছিল।পুনম শূন্য চোখে তাকিয়ে দেখলো তানভীর ঘচঘচ করে কাগজে সই করে কাগজটি হাসি মুখে বাড়িয়ে দিয়েছিল পুনমের দিকে।কি নির্মল সুন্দর হাসি!পুনমের কান্না পেলো।এখান থেকে চলে যাওয়া মানে তানভীরকে হারিয়ে ফেলা।আবার এই কাগজটিতে সই করা মানে…. নিজেকে শপে দেয়া!
সকল ভাবনার দোলাচলে থেকেই পুনম সই করে দিয়েছিল।বাহিরে তখন ঝুম বৃষ্টি আর তানভীরের চোখেও বৃষ্টি নেমেছিল।তানভীর পুনমের হাত চেপে ধরে হাউমাউ করে কেঁদে উঠেছিল।কাজী অবাক চোখে তাকিয়ে ওদেরকে দেখছিল। এতদিন দেখে এসেছে মেয়েরা কাঁদে আজ সে একটা ছেলেকে কাঁদতে দেখে প্রচুর অবাকই হলেন।তানভীরের কান্না পুনমের বুকে সুক্ষ্ম ব্যথার আলোড়ন তুললো।ঠিক সেই মুহুর্তে পুনমের মনে হলো,ও ভুল করেনি!বরং এই মানুষটাকে আজ ফিরিয়ে দিলে বড় ভুল হয়ে যেতো!

তানভীর তার কথা রেখেছিল।কখনো পুনমের সামনে স্বামী হয়ে দাঁড়ায়নি।বরং প্রেমিকরুপেই তার আগমণ হত বারবার! পুনম মাঝে মাঝে অবাক হত!আবার ভাবতো মি.তানভীর কি ভুলে গেছে তারা বর বউ?
তানভীর শুধু নিশ্চয়তা চেয়েছিল।পুনম নামের মেয়েটা শুধু তার এতটুকু নিশ্চয়তা তার কাছে অনেক কিছু।তানভীর নিজের বাবাকে জানতো,তাই খুব গোপনে পুনম নামের মেয়েটাকে নিজের নামের সাথে জুড়ে দিয়েছিল!

আর পুনম, নিজের ক্যারিয়ার আর পরিবারকে একটু গুছিয়ে তানভীরের হাতটা পাকাপোক্ত ভাবে ধরতে চেয়েছিল কিন্তু তার আগেই সবটা এলোমেলো হয়ে গেলো!পুনম নিজের পরিবারকে ভালোবাসে সবকিছুর উর্ধে!তাই ভয় পেলো,তাদের বিয়ের খবরটা জানাজানি হলে সব শেষ হয়ে যেতো।তাই মি.তানভীরকে দূরে সরিয়ে দিয়েছিলো নিজের থেকে কিন্তু মন থেকে কি সরাতে পেরেছিল? প্রতিটা মুহুর্ত শুধু তানভীর নামক পুরুষটিকে ভেবেইে কেটেছে! পুনম অপেক্ষা করতো কিন্তু তানভীর তার বাক্যে অটল,সে ফিরলো না!না কোন অধিকার বা না কোন প্রেমিক হয়ে!
পুনম অস্থির হয়ে প্রহর গুনতে।হয়তো হুট করে একদিন তানভীর তার সামনে দাঁড়িয়ে বলবে, “পুনমি থাকতে পারলাম না তোমায় ছেড়ে।যা শাস্তি তোমার পাশে থেকেই দাও!তবু আর দূরে থাকতে বলো না!”
কিন্তু তানভীর ফিরলো না।এই তিনটা বছর কেটে গেলো।পুনমের যখন প্রচন্ড অস্থির লাগতো দূর থেকেই দেখে আসতো মি.তানভীরকে।এরপর সারাটাদিন কাঁদতো!কিন্তু কাল সকল ধৈর্য্যের বাঁধ ভেঙে গেলো।গোপনে তাকে বিয়ে করবে আর প্রকাশ্যে অন্য মেয়ের চোখের প্রশংসা!তা কখনো হবে না!
কাপের চা ঠান্ডা হয়েগেছে অনেকক্ষণ। বারান্দা গলে বৃষ্টি এসে পুনমকে ভিজিয়ে দিচ্ছে। পুনম গুনগুন করে কেঁদে উঠলো। বুকের উপর চাপ বাড়ছে,কষ্ট হচ্ছ! এরপরই পুনম পাগলের মত হাউমাউ করে কেঁদে উঠলো।কান্নার শব্দে পাবনীর ঘুম ভেঙে গেলো।সে ছুটে এসে দেখলো পুনম উদ্ভ্রান্তের মত হাউমাউ করে কাঁদছে!পাবনী ভীষণ ভয় পেলো!দৌড়ে এসে পুনমকে জাপটে ধরলো!পাবনী শুনতে পেলো পুনম কাঁদছে আর বলতাছে,” আমার ভীষণ কষ্ট হচ্ছে সেজ আপা!ভীষণ কষ্ট হচ্ছে! তাকে ফিরতে বল তুমি!তাকে ফিরতে বল আমার কাছে!”
পাবনী বোকার মত বোনের দিকে তাকিয়ে থাকলো কতক্ষণ। তার বুঝে আসলো না পুনম কাকে ফিরতে বলছে?পাবনী কি তাকে আদৌও চেনে?

চলবে,
পর্ব ৩৩ স্বপ্ন ছিল নাকি সত্য? এবার বুঝতে পেরেছেন সকলে আশাকরি। স্পেশাল পর্ব কেমন লাগলো জানাবেন আশাকরি। আজকের পর্বে শেষ করতে পারলাম না। দেরি করে দেওয়ার জন্য দুঃখিত। গতকাল থেকে প্রচুর মাথা ব্যথা ছিল পরে আজ ডাক্তার দেখালাম।ডাক্তার চশমা দিয়েছে।পুরাই বিরক্তকর। নাকের ডগায় একটা ঝামেলা বহন করা!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here