#পুনম
#আয়েশা_সিদ্দিকা
পর্বঃ৪১
পাবনীর বিয়ে আছর বাদ ঠিক হয়েছে।আছর বাদ মিলাদ হয় এরকমটা শুনেছে পুনম কিন্তু আছর বাদ যে বিয়েও হয় তা পুনম জানতো না।কাজটা করেছে বাবা তাই নিয়ে মায়ের সাথে একচোট ঝগড়া হয়েছে।রাতের বেলা পুনম কেঁদে কেটে একসাথ হলেও সকালে তার মুখ বৃষ্টি শেষে একফালি রোদ্দুরের মত জ্বলজ্বল করছে।ফড়িংয়ের মত উড়ে উড়ে বোনের বিয়ের তদারকি করছে।মুখে লেগে আছে প্রশান্তির হাসি!
অনেক রাত পর্যন্ত জেগে থাকায় লাবণ্যের ঘুম থেকে উঠতে দেরি হয়েছে। এলোমেলো বেশে ঘুম থেকে উঠে বিছানায় গড়াগড়ি খাচ্ছে। মরিচা লাবণ্যকে সজাগ দেখে চটপট এক মগ গ্রিন টি এনে দেয়।লাবণ্য মিষ্টি হেসে বলে, ধন্যবাদ মরিচা বু! মরিচা জবাবে, ওয়ালকাম জানিয়ে ফুরুৎ করে চলে যায়!
লাবণ্য মরিচার ভুলভাল ইংলিশ শুনে হাসে।এরপর মোবাইল হাতে নিয়ে তারুণের আইডিতে কতক্ষণ ঘোরাঘুরি করে। এটা লাবণ্যের প্রতিদিনের রুটিন।একআকাশ অভিমান লাবণ্য বুকে জমিয়ে রেখেছে। তারুণ কেন তার কাছে বিদায় না নিয়ে গেলো? কেনই বা তারুণ তার সাথে কোন যোগাযোগ করলো না?এই প্রশ্ন লাবণ্যের বুকে হুলের মত বিঁধে! লাবণ্য শুধু অপেক্ষায় আছে একটা সুযোগের, লাবণ্য একদিন না একদিন তো তারুণের সামনে দাঁড়াবে তখন তারুণকে সকল প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে। লাবণ্য চাইলেই তারুণকে নক করতে পারে কিন্তু করে না।
পাবনী খিচুড়ির প্লেট সামনে নিয়ে বসে আছে কিন্তু খেতে পারছে না।ভীষণ লজ্জা লাগছে।পাবনীর হাতে মেহেদীর রঙ টকটকে লাল হয়েছে তাই নিয়ে সবাই বিশ্রী রকমের রসিকতা শুরু করেছে!
সারা রাত বৃষ্টি পড়লেও ভোরের দিকে বৃষ্টি থেমেছিল। এখন আবার আকাশ কালো করে বৃষ্টি নেমেছে।বসার রুমে বসে কিছু আত্মীয়রা বলাবলি করছে,বিয়ের সময় বৃষ্টি হওয়া শুভ লক্ষ্মণ! পাবনীর ভাগ্য খুবই লক্ষীমন্ত! এসব কথা শুনে পুনম দীর্ঘশ্বাস ফেলে,! অথচ এই মানুষ গুলাই একসময় পাবনীর পায়ের জন্য অপয়া,অলক্ষী বলেছে!মানুষ কত সহজেই না মুখের ভাষা বদলে ফেলে!
রুমা বৃষ্টির মধ্যেই বাসা থেকে বের হয়েছে।ইষ্টি মিষ্টির জন্য লেহেঙ্গা টেইলার্সে সেলাই করতে দিয়ে ছিল।তারা ইষ্টির বটম পার্ট ঢিল আর মিষ্টির বটম পার্ট টাইট বানিয়ে রেখেছে।এই নিয়ে রুমার মেজাজ বেজায় গরম!আজ টেইলার্সের ব্যাটাকে কিছু কড়া কথা শুনাতেই হবে।কিছুদূর হাটতেই হারুনকে একটা দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে রুমার গরম মেজাজ আরো গরম হয়।আজ যদি হারুন কোন ঝামেলা করে তবে রুমা তাকে পুলিশে দিয়েই ছাড়বে!রোজ রোজ এই আদিখ্যেতা রুমা আর নিতে পারছেনা। কিন্তু হারুন কিছুই বললো না।রুমা ছাতা মাথায় থপথপ পা ফেলে হেটে সামনে দিয়ে চলে গেলো।কেন যেন রুমার গরম মেজাজ ঠান্ডা হতে শুরু করেছে।
সবচেয়ে বড় কথা, আসার সময় রুমা টেইলার্সের লোকটাকে কোন বকাবকি না করে বোনের বিয়ের দাওয়াত দিয়ে চলে এসেছে!
ঝুমা খিচুড়ি থেকে কলিজা বেছে বেছে মুক্তকে খাওয়াচ্ছে। পাশে জামাল বিরক্তি নিয়ে বসে আছে।যতক্ষণ না মুক্তর খাওয়া হচ্ছে ততক্ষণে জামাল নড়তে পারছে না।অথচ জামালের বাথরুমে যাওয়া এখন ফরজ হয়ে দাঁড়িয়েছে।এখন জামাল এখান থেকে নড়লেই মুক্ত তারস্বরে চিল্লাবে, আর ছেলের খাওয়া ঠিকমত না হলে ঝুমা তার উপর ঝাড়ি দিবে।বউ আর ছেলেকে নিয়ে তার বেজায় সমস্যা!
নিয়াজ উদ্দিন বিরক্তি নিয়ে একটা চেয়ারে বসে আছে।আর লাবণ্য পরম যত্নে বাবার মুখে ফেসপ্যাক লাগিয়ে দিচ্ছে। নিয়াজ উদ্দিন কে উসখুস করতে দেখে লাবন্য বাবাকে ধমকে ওঠে। নিয়াজ উদ্দিন পড়েছে মহা ঝামেলায়।কেটারিংয়ের লোকদের সাথে কিছু কথা বলতে হবে কিন্তু লাবণ্য তার কাজ শেষ না হওয়া অবধি যে তাকে ছাড়বে না তা সে নিশ্চিত! সুমন আর জামালকে আসতে দেখে লাবণ্য তাদেরও জোড় করে তার নতুন ফেসপ্যাক লাগিয়ে দেয়। কালকে এই ফেসপ্যাকটা নিয়ে তাকে একটা ভিডিও করতে হবে তাই এই পরিক্ষামূলক এক্সপেরিমেন্ট!
মুক্ত কোথা থেকে দৌড়ে এসে তার নানার মুখে লাগানো ফেসপ্যাক ধরতে চায়।নিয়াজ উদ্দিন পুনরায় ঝামেলায় পড়েন। নাতিকে না করলে কাঁদবে আর এখন নড়লে বা কথা বললে লাবণ্য ঝাড়বে। কি যে জ্বালা!
আজকে তারুণের জন্মদিন।ঘুম থেকে উঠেই মোবাইল হাতে নিয়ে দেখে তানভীর আর মা উইশ করেছে।তানভীর লিখেছে,”শুভ জন্মদিন ভাই!আই মিস ইউ ” আর মা লিখেছে, “শুভ জন্মদিন বাবু,মায়ের বুকে ফিরে আয়!” তারুণ মেসেজ দেখে কেঁদে দেয়।তার জন্মদিনটা কি আসলেই শুভ? তারুণের ভীষণ খারাপ লাগে কিন্তু কার জন্য ভেবে পায় না।যে মা তাকে শতকষ্ট নিয়ে জন্ম দিয়েছে নাকি যে মা বুকে আগলে রেখেছে।নাকি যে বাবা তাকে যথাযথ সম্মান দিয়েছে নাকি যে বাবা এতটা দিন মিথ্যে ভালো বেসেছে।কার জন্য তারুণের খারাপ লাগা উচিত? পরক্ষণেই তারুণ অবাক হয়।লাবণ্য এবারেও কোন উইশ করেনি।মেয়েটা কি তাকে তাকে সত্যি সত্যি ভুলে গেছে? তারুণের মনটা অকারণেই আবার খারাপ হয়।তখনই দেখে লাবণ্য স্ট্যাটাস দিয়েছে,”পালিয়ে বেড়ানো মানুষকে কি আদৌ শুভেচ্ছা জানাতে আছে?” আর লাবণ্যের একটা লাইনেই হাজারের উপর কমেন্টের ঝর উঠেছে।তারুণ ফের হতাশ হয়!মেয়েটা কি ভীষণ রেগে আছে?
পাবনী আর সুমনের বিয়েটা কিছুক্ষণ আগে সমাপ্ত হয়েছে।মা বাবা দুজনেই সুখে কেঁদে ফেলেছে।পুনমের চোখটাও ভিজে উঠে।সেজ আপাকে কি সুন্দরই না লাগছে লাল শাড়িতে!সুমন সব লাজ লজ্জা ভুলে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে পাবনীর দিকে।লাবণ্য হুট করে এসে একটা আয়না রাখে তাদের সামনে।সুমনকে জিজ্ঞেস করে, কি দেখা যায় আয়নায়? সুমন ছলছল চোখে বলে, ” আমার সম্পূর্ণাকে দেখতে পাচ্ছি! ” পাবনী চোখে জল মুখে হাসি নিয়ে বলে,”আমার সকল অপূর্ণতা ছাপিয়ে পূর্ণ সুখ দেখতে পাচ্ছি! ”
সবাই হইরই করে ওঠে।পুনমের বন্ধুরা গান গেয়ে ওঠে। ঠিক সেই সময় তানভীর এসে উপস্থিত হয়।সবার হাসি মুখ আশ্চর্যতায় হা হয়ে যায়।তানভীর একটা মেরুন রঙের শেরওয়ানি পড়ে দাঁড়িয়ে আছে কিন্তু সমস্ত শরীর বৃষ্টিতে ভেজা।তানভীরের পাশে দাঁড়িয়ে আছে শায়েলা বেগম, রাজু,মাহি আর পিছনে বিশাল ব্যান্ড পার্টি! পুনম তানভীরের এই আকস্মিক আগমনে বোকা হয়ে গেছে। ব্যান্ড পার্টি তাদের বাদ্য যন্ত্র বাজাতে শুরে করে।তানভীর পুনমকে না দেখার ভান করে এগিয়ে এসে নিয়াজ উদ্দিনের সামনে এসে দাঁড়ায়। তারিন ভাইকে এই সাজে দেখেই আনন্দে চিৎকার করে ওঠে কিন্তু ব্যান্ড পার্টির শব্দে তারিনের চিৎকার ভাটা পড়ে যায়।নিয়াজ উদ্দিন তানভীরকে দেখেই চিনে ফেলে।এই ছেলেটাই একসময় পুনমের জন্য তাদের বাসার সামনে দাঁড়িয়ে থাকতো তারপর তো একদিন বাসায়ই এসে পড়েছিল।নিয়াজ উদ্দিন নিজের হতবিহ্বল অবস্থা কাটিয়ে ওঠে প্রশ্ন করে, ” কি ব্যপার?এসব কি?”
তানভীর মুখে চওড়া হাসি ঝুলিয়ে বলে, “আঙ্কেল আমি আমার বউ নিতে এসেছি!”
নিয়াজ উদ্দিনের মাথা ঘুরে ওঠে।সে বহুকষ্টে বলে, ” এই ছেলে কে তোমার বউ?”
তানভীর পিছনে ঘুরে পুনমের হাত ধরে সামনে এনে বলে,” এই যে, এই আমার বউ!আপনার মেয়ে পুনমি!”
নিয়াজ উদ্দিন ধপ করে চেয়ারে বসে পড়ে।লাবণ্য দৌড়ে বাবার জন্য পানি নিয়ে আসে।বাসার প্রতিটা সদস্য গোল গোল চোখে তাকিয়ে আছে তানভীরের দিকে।মরিচা এই সিনেমাটিক ব্যপার দেখে ভীষণ মজা পেয়েছে।তার এই নয়া দুলাভাই ভীষণ পছন্দ হয়েছে।আর পুনম নিজেকে সামলে জিজ্ঞেস করে,”এসব কি হচ্ছে মি.তানভীর?কিসব তামাশা শুরু করেছেন?”
তানভীর পুনমের দিকে রাগান্বিত চোখে তাকায়। বরের নাকে যখন ঘুসি মারে তখন তামাশা হয় না আর বউ নিতে আসলেই তামাশা।তানভীর ভারীস্বরে বলে,”কোনটা তামাশা পুনমি?তুমি আমার বউ নও?নাকি এখনও সবটা অস্বীকার করতে চাইছো?”
পাবনী বুঝে ফেলে এই ছেলের জন্য পুনম কাল রাতে কেঁদেছিল।পুনম মাহিকে ইশারা করে বলে,”কে ইনি।”
তানভীর ঠোঁট চেপে হাসে হিংসুটে রাণীকে দেখে।
“আমার বন্ধু। কেবল বন্ধু! ”
পুনম এই কথা শুনে গটগট করে হেঁটে রুমে যেয়ে দরজা লক করে দেয়। পুনমের আসলে ভীষণ কান্না পাচ্ছে। অতগুলো মানুষের সামনে কি কাঁদা যায়?সবাই তো জানে পুনম শক্ত মেয়ে, তবে?
সালেহা বেগম ধমক দিয়ে ব্যান্ড পার্টি থামিয়ে দেয়।তারপরে বলে, এসব কি হচ্ছে?
শায়লা বেগম এসে সবটা বুঝাতে শুরে করে।সে নিজেও ছেলের কান্ডে অবাক হয়েছিল।যখন ভর দুপুরে এসে বললো, “চল মা আমার বউ আনতে যাবো।” তখন তিনি ভেবেই বসেছিলেন তার ছেলেকে জ্বিনে ধরেছে।পড়ে সবটা ছেলে তাকে বুঝিয়ে বলেছে। এখন তাকে বুঝাতে হবে পুনমের পরিবারকে!বউ তার ভীষণ পছন্দ হয়েছে।
রুমা ঝুমা এসে অনবরত দরজা ধাক্কাচ্ছে।পুনম কিছুতেই দরজা খুললো না।কি করে খুলবে?পুনম তো কেঁদে কেটে একাকার করছে।এত কাঁন্নার কি আছে পুনম নিজেই জানে না।কিন্তু তার ভীষণ কান্না পাচ্ছে!
নিয়াজ উদ্দিনের প্রেশার হাই হয়ে গিয়েছিল।তা এখন মোটামুটি কন্ট্রোলে এসেছে।তানভীরের মা সিদ্ধান্ত জানতে চাইলে নিয়াজ উদ্দিন উঠে পুনমের দরজায় নক করে।বাবার কন্ঠ পেয়ে পুনম দরজা খুলে দেয়। নিয়াজ উদ্দিন মৃদুস্বরে বলে, “পুনম আমি জানি,দুনিয়ায় সবাই ভুল করলেও আমার পুনম কখনো কোন ভুল কাজ করেনি।এই সিদ্ধান্তের পিছনে নিশ্চিত কোন কারণ আছে।তা জানতে চাচ্ছি না।এখন তুমি কি চাও?”
পুনম কিছুই বলতে পারলো না।বাবাকে জড়িয়ে ধরে হু হু করে কেঁদে উঠলো।নিয়াজ উদ্দিন তার জবাব পেয়ে গেছে! তার এই মেয়েটা সারাজীবন তাদের জন্য কষ্ট করছে।কখনো কিছু বায়না করেনি।আজ মেয়েটা কাঁদছে, মেয়ের কান্নার কারণ যাই হোক তা যদি নিষিদ্ধ কিছুও হয় তাও তিনি করবেন।মেয়ের মুখে হাসি ফিরাবার এতবড় সুযোগ কিছুতেই হাত ছাড়া করা যাবে না।কিছুতেই না!
পাবনী আর সুমনের বিয়ে পড়িয়ে কাজি চলে যেতে পারে নি বৃষ্টির জন্য! এখন তাকে আবার দ্বিতীয় বিয়ে পড়াতে হবে।একই দিনে দুই বোনের বিয়ে।
পাবনী বিয়ের সাজেই পুনমকে সাজাতে শুরু করছে।তানভীর একটা লাল আর নীলের মিশ্রণের বেনারসি এনেছে।তাই পড়াচ্ছে সব বোন মিলে পুনমকে।সকলের চোখেই পানি।সেটা কখনো অতীতের কষ্ট মনে করে আবার কখনো এই বর্তমানের অনাকাঙ্ক্ষিত সুখের কথা মনে করে।পাবনী যেন একটু বেশিই কাঁদছে।লাবণ্য বিরক্ত নিয়ে বলে,”উফফ! সেজ আপা! নিজে কেঁদে নিজের মেকাপ তো নষ্ট করছোই আবার নয়াপুর সাজে ব্যঘাত ঘটাচ্ছো।তুমি আসলে কি চাচ্ছো?আমার দুই দুলাভাই বাসর ঘরে তাদের বউকে দেখে ভয়ে স্ট্রোক করুক!”
মুক্ত সারা ঘরে ছুটছে আর বলছে আমার পুনুমার আজ বিয়ে!হুররে!
তানভীর বর সাজে এখানে চলে আসাতে কোন লজ্জাই পায়নি কিন্তু এখন ভীষণ লজ্জা পাচ্ছে!সোফার রুমে সে বসে আছে তার তাকে ঘিরে জামাই আপ্যায়নের ধুম পড়েছে! কি লজ্জাজনক অবস্থা!
তানভীরের এই হাল দেখে বল্টু আর রাজু হেসে গড়াগড়ি খাচ্ছে। তানভীর তাদের দিকে কটমটিয়ে তাকালো তাতে তাদের হাসি একটুও কমলো না,বরং বাড়লো!
রাত আটটার সময় পুনম আর তানভীরের আবার বিয়ে হলো।এবার পরিবারের সামনে।দুজনে দুজনের জন্য কবুল বললো।তানভীর কবুল বলেই সবার অলক্ষ্যে পুনমের হাত চেপে ধরলো।পুনম কেঁপে উঠলো!হাত পা ঝিন ঝিন করে উঠলো।সেই অবস্থাই পুনম কবুল বললো।
পরিবারের প্রতিটা সদস্য চোখে জল মুখে হাসি নিয়ে এই দম্পত্তির জন্য দুয়া করলো। এরপরই পুনমের বন্ধুরা আর পুনমের পরিবারের মুরব্বিরা বাদে সকলে আমোদ ফুর্তিতে মেতে উঠলো। তারিন, রাশেদ, রাজু, বল্টু, সাকিব,নাহিদ, বর্ষা,শিমুল, শশী, লাবণ্য, ঝুমা,রুমা,পাবনী,সুমন, জামাল, মাহি সকলে এক সাথে গান গেয়ে উঠলো, “বন্ধু তিনদিন তোর বাড়িতে গেলাম দেখা পাইলাম না,বন্ধু তিনদিন!।।।।।”
তানভীর বিয়ে উপলক্ষে সবার জন্য কিছু ছোট বড় গিফ্ট এনেছে।তার মধ্যে পাবনী আর সুমনের জন্য এনেছে হানিমুন গিফ্ট, কক্সবাজারের সাতদিনের ট্রিপ। বড় আপা আর মেজ আপার জন্য সোনার চেইন। আর লাবণ্য আর মায়ের জন্য এনেছে তারুণের কাছে যাওয়ার জন্য কাগজপত্র! কিছু কাজ এখনো বাকি অবশ্য! একমাস পড়ে মা আর লাবণ্য তারুণের কাছে যেতে পারবে।
বাহিরে তুমুল বৃষ্টি পড়ছে! লাবণ্য ফ্রম হাতে নিয়ে রুমে বসে আছে।তার রাগ কান্না দুটোই আসছে।তার মনে হচ্ছে হাতের কাগজ ছিঁড়ে কুটিকুটি করতে!যাবে না সে ওই নিষ্ঠুর ছেলেটার কাছে!কিছুতেই যাবে না! তারুণ নামের ছেলেটা কি জানে, লাবণ্য এখনো সমুদ্র দেখেনি!তাদের একসাথে সমুদ্র দেখতে যাবার কথা! তা কি মনে আছে তারুণের?নাকি ভুলে বসে আছে পড়ুয়া ছেলেটা!
তানভীর আর পুনম এক রুমে বসে আছে।দুজনেই অস্বস্তিতে গাঁট হয়ে বসে আছে।তানভীর একমনে তখন থেকে পুনম কে দেখছে।এত ঝড় ঝাপটার পর অবশেষে পেলো তার পুনমিকে!
পুনম নিজেকে আড়মোড়া ভেঙে স্বাভাবিক করে।এত আনইজির কি আছে? তানভীর কি বাঘ না ভাল্লুক? স্বভাবসুলভ ভাবে পুনম কপাল কুঁচকে তানভীরের দিকে তাকায়। পুনমের এমন চাহনি দেখে তানভীর হেসে দেয়! তানভীর হাসলে গালে সুন্দর ভাঁজ পড়ে।পুনম কতক্ষণ তাকিয়ে থাকে।তানভীর স্বগতোক্তি করে,”দেখো নিষ্ঠুর মেয়েটা এখনো কেমন করে তাকিয়ে আছে?আনরোমান্টিক একটা মেয়ে!”
তানভীর ঝট করে উঠে একটানে পুনমকে উঠিয়ে কোলে তুলে নেয়।পুনম চমকে ওঠে। কন্ঠনালী শুকিয়ে কাঠ হয়ে আসে।চোখের পাতা তিরতির করে কাঁপে!ঠোঁট দুটোও অস্বাভাবিক ভাবে কাঁপতে শুরু করে।তানভীর সবটা পর্যবেক্ষণ করে।ইশ!তার বউটা এত সুন্দর কেন?মেয়েটা কি জানে তাকে এমন বউরুপে দেখে তানভীরের কেমন অসভ্য হতে মনে চাইছে! তানভীর কেমন ঘোরলাগা কন্ঠে বলে,” ” আজ তোমাকে একটুও ঘুমাতে দেব না পুনমি!আমার সকল নির্ঘুম রাতের কষ্ট সুদে আসলে হিসাব তুলবো!আমি প্রচন্ড প্রতিশোধ পরায়ণ বর তোমার!বুঝলে নিষ্ঠুর মেয়ে!”
পুনম পুনরায় কেঁপে উঠলো।কি সাংঘাতিক মানুষ! পুনম খেয়াল করলো তানভীর তাকে কোলে নিয়েই খাটে আধশোয়া হয়ে বসে পড়েছে।পুনম বিড়বিড় করে বলে উঠলো,”আমার ভীষণ ঘুম পাচ্ছে মি.তানভীর। ”
তানভীর যেন শুনতেই পারলো না এমন ভান করে পুনমের ঠোঁটে গাঢ়ো লম্বা একটা চুমু খেলো।এরপরই তানভীরের খোঁচা খোঁচা দাড়ি দিয়ে পুনমের গাল, গলা ঘষে দিলো।পুনম আবার কেঁপে উঠলো।পুনম শুনতে পেলো তানভীর তার কানে ফিসফিসিয়ে বলছে,”পুনমি তোমার কপালে আর গলার তিলটা এত মারাত্মক কেন? একদম এন্টিবায়োটিক ডোজের মত!আজ তোমার সব তিলগুলো আমি একটা একটা করে গুনবো আর চুমু খাবো!”
পুনম আর কিছুই ভাবতে পারলো না।তার মনে হচ্ছে সে এখনই জ্ঞান হারাবে!তানভীর হয়তো তাকে আজ মেরেই ফেলবে!
সমাপ্ত।
জানিনা আজকের পর্ব আপনাদের কাছে কেমন লেগেছে?
আমি চেষ্টা করেছি পুনম গল্পটা সুন্দর ভাবে লিখতে কিন্তু কতটা পেরেছি জানি না।আমার জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা কম।তাই হয়তো গল্পে কোথাও কোন ভুল থাকতে পারে।তার জন্য আমি আগেই দুঃখিত বলছি।কখনও যদি লেখা লেখির ব্যপারে আমার মেধা ও মনন বৃদ্ধি পায় আমি চেষ্টা করবো পুনম গল্পটিকে নতুন করে সাজিয়ে লিখতে।তখন কোন অভিযোগ ইনশাআল্লাহ রাখবো না।তারুণ আর লাবণ্যের পথচলা কিছুটা অসমাপ্ত রয়ে গেলো।পুনম গল্পটি যে কজনই পড়েছে, মন্তব্য করেছে তারা আমার কাছে অনেক কাছের মানুষ। কেননা তাদের আমি চিনেছি এই পুনমের মাধ্যমে। তাই পুনম আর তারা আমার কাছে বিশেষ! না দেখেই অনেকটা ভালোবাসা দিয়েছেন আপনারা।তাই আপনাদের অনুপ্রেরণা পেলে হয়তো অনেকটা পথ আমার চলা হবে ইনশাআল্লাহ!