বদ্ধ হৃদয়ের অনুভুতি পর্বঃ১৩

0
4101

#বদ্ধ_হৃদয়ের_অনুভূতি
#পর্বঃ১৩
লিখাঃতাজরিয়ান খান তানভি

খাওয়ার টেবিলে বসে আছে আম্বের।এখন তার পা অনেকটা ঠিক হয়েছে।হাঁটাচলা একদম স্বাভাবিক।খাবার মুখে দিচ্ছে আর পাশে বসা মাহাদ এর দিকে আড়চোখে তাকাচ্ছে।মাহাদ ব্রেড এ কামড় বসিয়ে আম্বের এর দিকে চোখ ফেলতেই চক্ষুনত করে আম্বের।

আম্বের আর মাহাদ এর সম্পর্কটা একটু ভালো হয়েছে আগের চেয়ে।আম্বের কে এখন আর আটকে রাখা হয় না।সে স্বাভাবিক আচরণ করে মাহাদ এর সাথে।আম্বের এর দিকে তাকিয়ে কিঞ্চিৎ হাসে মাহাদ।অতি স্বাভাবিক গলায় বললো–

“খাচ্ছেন না কেন?সেই কখন থেকে ফর্ক হাতে নিয়ে বসে আছেন!

আম্বের প্রজ্বলিত চোখে তাকায়।মাহাদ বিগলিত হাসে।উৎফুল্ল গলায় বললো—

“এভাবে তাকান কেন!
“ঝড়ে পড়া পাতার বিবর্ণ রঙে
উড়ছে প্রজাপতি
দেখে তোর মুখ,ছুঁয়ে যায় সুখ
ভেঙে যাওয়া হৃদয়ে ।”

–তানভি

আম্বের নিঃশব্দে কিছুক্ষন তাকিয়ে থাকে।মাহাদ চোখ ফেলতেই আবার মাথা নিচু করে।আম্বের এর হাতে কাটা চামচ।মাহাদ সেদিকে তাকিয়ে মিচকি হেসে বললো—

“কী ভাবছেন!কাটা চামচ টা কোথায় ঢুকাবেন,
চোখে না মুখে!
যদি তাই হয় তাহলে চোখে ঢুকিয়ে কাজ নেই।কারণ হয়তো চোখ দুটো যাবে কিন্তু আমি বেঁচে যাবো।তার চেয়ে বরং গলায় ঢুকাবেন।এক নিমিশেই সাত আসমানের ওপার।কী বলেন বুদ্ধিটা ভালো না!

আম্বের ক্ষয়িষ্ণু গলায় বললো–

“আপনার কী কোনো কাজ নেই!এইসব কী বলেন! আর আমাকে কী আপনার খুনি মনে হয়!

মাহাদ তপ্ত নিঃশ্বাস ফেলে বললো–

“তাহলে আপনার কেন আমাকে খুনি মনে হয়!

আম্বের কিছু বললো না।গতকাল রাতে রাগারাগি করে কথা বলার সময় মাহাদ কে আম্বের খুনি বলে।আর তাই মাহাদ তার কথার বদলা নিয়েছে।এখন এইসব নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার।
মাহাদ গম্ভীর গলায় বললো–

“আজ থেকে আপনার ক্লাস শুরু।কলেজে যাবেন ক্লাস শেষ করে সোজা বাসায় ফিরবেন।আমি ড্রাইভার কে বলে দিয়েছি।ক্লাস এর পর আর কোথাও যাবেন না।”

আম্বের চোখ বাঁকিয়ে তাকায়।ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে জুস টা খেয়ে ফুরফুরে গলায় বললো–

“তাহলে কী করবেন?

মাহাদ আপেলের এক টুকরো মুখে নিয়েছে।তা গিলে নিয়ে শক্ত গলায় বললো—

“যে পা দিয়ে হেঁটে যাবেন তা আর সহীহ থাকবে না।পা ভেঙে ঘরে বসিয়ে রাখবো।”

মাহাদ এর কথা শুনেই কুটুস করে ঢোক গিলে নেয় আম্বের।
,
,
স্বপ্নমহল এর বাইরে দাঁড়িয়ে আছে মাহাদ।আম্বের তৈরি হয়ে বের হয়ে আসতেছে।হলুদ রঙের সালোয়ার কামিজ পড়েছে আম্বের।নিতম্ব ছাড়ানো লম্বা চুলে বেনুনি করে তা পিঠের উপর ফেলে রেখেছে।আম্বের এর গায়ের রঙ চাপা।
উজ্জ্বল শ্যামলা বলা চলে।চোখের পাঁপড়ি গুলো ঘন আর বেশ বড়।কাজল টানাতে চোখ দুটো আরো বেশি কামাগ্নি ছড়াচ্ছে যেনো।মাহাদ উদ্ভাসিত দৃষ্টিতে নিস্পলকভাবে তাকিয়ে আছে।গুটি গুটি পা ফেলে মাহাদ এর সামনে এসে দাঁড়ায় আম্বের।স্মিত হাসে মাহাদ।আম্বের এর দৃষ্টি রহস্যঘন।
মাহাদ আম্বের এর গলা থেকে ওড়না নিয়ে তা ছড়িয়ে আবার পড়িয়ে দেয়।আম্বের অদ্ভুত দৃষ্টিতে মাহাদ এর কর্মকান্ড দেখছে।মাহাদ গাঢ় গলায় বললো–

“কী বলেছি মনে আছে তো আপনার!আমাকে ডবল ক্রস করার একদম চেষ্টা করবেন না।তাহলে সেটা ভালো হবে না।”

মাহাদ ঘড়ির দিকে তাকায়।ব্যস্ত গলায় বললো–

“যান,নাহলে প্রথম দিনই লেট হয়ে যাবেন।”

রহিম গাড়ির দরজা খুলতেই আম্বের ভেতরে গিয়ে বসে।মাহাদ তার ঘন পল্লবে আচ্ছাদিত চোখ দুটো নিষ্কম্পভাবে আবদ্ধ করে রেখেছে আম্বের এর দিকে।আম্বের বেশ উচ্ছ্বাসিত।আজ অনেকদিন পর সে বাইরে বেরিয়েছে।মাহাদ এর দিকে তাকাতেই মনে হলো যেনো কোনো পিতা তার মেয়েকে প্রথম স্কুলে দিয়ে যাচ্ছে আর ভাবছে,তার মেয়ে পারবে তো!সবকিছু বুঝবে তো!
আম্বের এর ঠোঁটে চিলতে হাসি ফুটে উঠে।মাহাদ কে কেমন যেনো উন্মনা লাগছে।যেনো সে কিছু ভাবছে।রহিম গাড়ি স্টার্ট করে।মাহাদ হাত উঠিয়ে আঙ্গুল নাড়িয়ে বিদায় জানায় আম্বের কে।

বেশ কিছু সময় দাঁড়িয়ে থাকে সেখানে।একটু পর মোবাইলের রিং বেজে উঠে।একরাশ বিরক্তি নিয়ে তা রিসিভ করে মাহাদ।কথা শুনেই গাড়ি নিয়ে বের হয়।আজ কিছু একটা হবে।
,
,
,
দিন বাড়তেই নিষ্প্রভ সূর্য ধীরে ধীরে তার আভা ছড়াতে থাকে।রেস্তোরাঁর জানালার কাঁচ গলিয়ে সূর্যের তীর্যক রশ্মি টেবিলের উপর এসে পড়ছে যেখানে ইপ্তিহা তার হাত দুটো রেখেছে।ধবধব ফর্সা হাতের নখ গাঢ় খয়েরী রঙের নেইলপলিশ আর ডান হাতে ডায়মন্ডের ব্রেসলেট রোদের আলোয় চিকচিক করেছে।সামনে থাকা মানুষটার দিকে তীব্র কঠোর দৃষ্টি দিয়ে গাল ফুলিয়ে বসে আছে ইপ্তিহা।সামনে থাকা মানুষটার সেদিকে খেয়াল নেই।সে বেখেয়ালি হয়ে তাকিয়ে আছে রেস্তোরাঁর অপর প্রান্তে।পুরো রেস্তোরাঁ ফাঁকা।মৃদু হাসে মাহাদ।তার হাসিতেই ক্ষোভে ফেটে পড়ে ইপ্তিহা।গমগমে গলায় বললো–

“তুমি আমার কল কেন রিসিভ করছিলে না?
ভয়েজ মেসেজের রিপ্লাই কেন দাওনি?

মাহাদ নৈঃশব্দে নিঃশ্বাস ফেললো।আম্বের এর জন্য চিন্তা হচ্ছে।সে চায় না প্রথম দিনই কোনো ঝামেলা হোক।এমনিতেও আম্বের এখনো তাকে পুরোপুরি বিশ্বাস করে না।তাই আম্বের এর বিশ্বাস অর্জন করা সবচেয়ে জরুরী।আম্বের কে একা কোনোমতেই ছাড়া যাবে না।
মাহাদ সামনে তাকায়।ইপ্তিহা মেয়েটা বেশ মিষ্টি।ফর্সা গোলগাল মুখে পাতলা ঠোঁট।ঠোঁটে ডার্ক কালারের লিপস্টিক দেওয়া।ইপ্তিহার চেহারার সবচেয়ে আকর্ষনীয় জিনিস হচ্ছে ওর ওষ্ঠের বামদিক বরাবর একটা কালো তিল।
মাহাদ এর অক্ষিযুগলে তাকিয়ে আবারো শক্ত গলায় প্রশ্ন করলো ইপ্তিহা,–

“কথা বলছো না কেন!কল রিসিভ করলে না কেন?

মাহাদ অত্যন্ত স্বাভাবিকভাবে বললো—

“ইচ্ছে হয়নি তাই।”

ইপ্তিহা গলা উঁচু করে বললো—

“মাহাদ!

মাহাদ ফিকে গলায় বললো—

“আর কিছু বলবে?আমি এখন যাবো।”

ইপ্তিহা চোখ গোল গোল করে ঠোঁট গুজ করে বললো—

“ওই মেয়েটা কে?

মাহাদ চকিতে ইপ্তিহার দিকে চোখ তুলে তাকায়।জিঙ্গাসু গলায় বললো–

“কোন মেয়ে?

“কাল রাতে কল কে রিসিভ করেছে!

মাহাদ দুর্বোধ্য হাসে।সরস গলায় বললো–

“তোমার নানী।”

মাহাদ এর কথায় বিরক্তি ভর করে ইপ্তিহার চোখে মুখে।ভ্রু উঁচিয়ে বললো–

“মানে?

মাহাদ কালক্ষেপন না করে উঠে দাঁড়ায়।ইপ্তিহা এসে মাহাদ এর পথ রোধ করে।হিসহিসিয়ে বললো—

“আমার কথা এখনো শেষ হয়নি মাহাদ।”

মাহাদ সহজভাবে বললো–

“আমার শোনার কোনো ইচ্ছে নেই।সরে দাঁড়াও।”

ইপ্তিহা মাহাদ এর আরো কাছে এসে শক্ত গলায় বললো—

“শুনতে হবে তোমাকে।”

রাগে মাহাদ এর নাকের ডগা ফুলতে থাকে।দু হাতে ক্রমশ কম্পন শুরু হয়।দাঁতে দাঁত নিষ্পেষন করে ইপ্তিহার বাম হাত ধরে ওকে ঘুরিয়ে ইপ্তিহার পিঠ ঠেকায় নিজের বুকে।কানের কাছে স্মিত আওয়াজ তুলে বললো—

“সমস্যা কী তোমার?

ইপ্তিহা কোনোরকম ভনিতা না করে সোজা বললো–

“আই লাভ ইউ।”

“বাট আই ডোন্ট লাভ ইউ।”

ইপ্তিহা কাতর গলায় বললো–

“মাহাদ প্লিজ!

মাহাদ অধর কোণে হাসে।ইপ্তিহার করুণ আওয়াজ মাহাদ এর মনে দমকা হাওয়া লাগায়।এই মেয়ে থামবার নয়।তাকে তার পদ্ধতিই কাজে লাগাতে হবে।অবশ্য সে তাকে বাঁচানোর চেষ্টা করেছে।
মাহাদ তার উষ্ণ ওষ্ঠাধর ছুঁইয়ে ধরে ইপ্তিহার ঘাড়ে।এক হিমশীতল প্রস্রবণ বইতে শুরু করে ইপ্তিহার শিড়দাঁড়া বেয়ে।প্রস্তরখণ্ড হয়ে দাঁড়িয়ে আছে ইপ্তিহা।তার শরীর কাঁপছে।অনুরণন শুরু হয়েছে ঠোঁটে।মাহাদ এক ঝটকায় ইপ্তিহা কে ঘুরিয়ে নেয়।তার কোমরে জোরালো চাপ দিয়ে নিজের সাথে মিশিয়ে ধরে।ইপ্তিহার সিল্কি চুলগুলো তার মুখের সামনে এসে জড়ো হয়েছে।মাহাদ আলতো হাতে তা সরিয়ে দেয়।মাহাদ এর স্পর্শে পরম আবেশে চোখ বন্ধ করে নেয় ইপ্তিহা।মাহাদ ইপ্তিহার কানের কাছে গিয়ে আবেগী গলায় বললো—

“মরতে পারবে আমার জন্য?

ইপ্তিহা ঝট করে চোখ খুলে।ইপ্তিহা অবাক হয়ে দেখে মাহাদ এর চোখে মুখে এক রহসময়ী আবেদন।যা পুরোদমে আচ্ছন্ন করে ফেলেছে ইপ্তিহা কে।
মাহাদ এর ঘন পল্লবে আবৃত গভীর চোখে তো সে মরেই আছে।তার ডার্ক রেড ঠোঁটের ছোঁয়ায় যে কম্পন শুরু হয়েছে তার হৃদয়ে তা দ্বিগুন হারে বাড়তে শুরু করেছে।মনে হচ্ছে যে কোন সময় থমকে যাবে হৃদস্পন্দন।

ইপ্তিহা তার ডানহাত মাহাদ এর হৃদযন্ত্রটার উপর রাখে।তার মৃদু কম্পন অনুভব করছে সে।ধরা গলায় অনুরক্তের সুরে বললো—

“এইখানে জায়গা দিবে আমায়?

মাহাদ স্মিত হাসে।অনুচ্চ গলায় দৃঢ় হয়ে বললো–

“এতো সহজ নয় মিস।পারবেন তো সামলাতে?

“একবার সুযোগ দিয়েই দেখো।”

মাহাদ বাঁকা হাসে।তার চোখ জোড়া আবদ্ধ দূরে দাঁড়ানো দুটো চকচকে ধারালো চোখে।সেখান থেকে চোখ ফিরিয়ে ইপ্তিহার দিকে তাকিয়ে বললো—

“দিলাম।”

মাহাদ ইপ্তিহার ঠোঁটে গভীর চুমু খেলো।ইপ্তিহার গাল টিপে গাঢ় গলায় বললো—

“লেটস ইনজয়।”

মাহাদ দ্রুতপায়ে বেরিয়ে আসে রেস্তোরাঁ থেকে।এক পাথরমূর্তির মতো দাঁড়িয়ে আছে ইপ্তিহা।আনমনেই নিজের ঠোঁটে বিচরণ করায় নিজের হাতের।একঝাঁক বসন্তের রঙিন প্রজিপতি উড়ে বেড়াচ্ছে তার মনে।চোখের কোন বেয়ে ঝড়ছে জলধারা।
কিন্তু ইপ্তিহা জানে না কেউ একজন সুক্ষ্ম দৃষ্টিতে তাকে পর্যবেক্ষন করছে।
,
,
,
বাসায় এসেছে মাহাদ প্রায় দুই ঘন্টা।আম্বের এখনো ফেরেনি।তটস্থ পায়ে পায়চারী করছে মাহাদ।একরাশ ভয় এসে দাঁড়িয়েছে তার দুয়ারে।রহিম কে কল করেছে বলেছে তারা ফিরছে।পুরো বিশ মিনিট লেট।আম্বের এর ব্যাপারে মাহাদ কাউকে বিশ্বাস করতে পারে না।আম্বের কেও নয়।আম্বের এর চোখে এখনো মাহাদ ওই উত্তাপ দেখে যা জ্বলজ্বল করে তার আভা ছড়ায়।মাহাদ এর চোখের রঙ বদলাতে শুরু করে।

দুলতে দুলতে সিড়ি ভেঙে উপরে এসেছে আম্বের।মাহাদ কে দেখেই দম মেরে যায়।ঝড়ের গতিতে আম্বের এর সামনে গিয়ে ওকে ঝাকুনি দিয়ে তপ্ত গলায় বললো—

“এতো দেরি হলো কেন আপনার?ক্লাস শেষে কোথায় গিয়েছিলেন?

ড্যাবড্যাবে চোখ মেলে তাকিয়ে আছে আম্বের।এই লোকটা কী পাগল!ক্লাস শেষে তো ওয়াশরুমে গেলো।এখন কী ওয়াশরুমেও যেতে পারবো না।

“উফ!ছাড়েন তো।
কোথায় দেরি হয়েছে?

মাহাদ গলায় তপ্ত কয়লা ঢেলে বললো–

“পুরো বিশ মিনিট লেট করেছেন।”

আম্বের চোখ পিটপিট করে ঠোঁট গুঁজ করে অনুযোগের গলায় বললো—

“ওয়াশরুমে গিয়েছিলাম আমি।”

মাহাদ ধাতস্থ হয়।নরম গলায় বললো—

“ওকে।শাওয়ার নিয়ে নিন।আমি আপনার জন্য ওয়েট করছি।আর লেট হলে আমাকে জানিয়ে দিবেন।আমার চিন্তা হয়।”

আম্বের তীক্ষ্ম চোখে তাকিয়ে তার লম্বা বেনুনি ঝুলাতে ঝুলাতে চলে যায়।
মাহাদ বুক ফুলিয়ে নিঃশ্বাস নেয়।তাকে আরো সতর্ক হতে হবে।তার ভালোবাসা তার প্রজাপতির মৃত্যুর কারণ যেনো না হয়।
,
,
,
নতুন বইয়ে মুখ গুঁজে বসে আছে আম্বের।নতুন বইয়ের পাতায় এক ধরনের ঘ্রাণ থাকে।ছোটবেলা যখন আম্বের কে বই কিনে দেওয়া হতো তখন সে এই ঘ্রাণের কারনে মাঝে মাঝে চিবিয়ে খেতো কাগজ।মনে পড়তেই একগাল হাসে আম্বের।আজ ভার্সিটির প্রথম দিনই সামান্তা নামের একটা মেয়ের সাথে খুব ভাব হয় আম্বের এর।আর ক্লাস শেষে তার সাথে কথা বলতেই লেট হয়ে যায়।

আম্বের গম্ভীর হয়ে ভাবে,সেদিন তার বাবাকে অ্যাকসিডেন্ট এর পর পথচারীরা হসপিটালে নিয়ে যায় তখন সে আর কারো মোবাইল নাম্বার না দিয়ে মাহাদ এর কেন দিলো!
আদৌ মাহাদ সত্যি বলেছো তো!আর সেদিন সারাদিন কোথায় ছিলো তার বাবা!

আম্বের এর ঘরের দরজা ভেজানো ছিলো।তা হালকা ধাক্কা দিয়ে ভেতরে আসে মাহাদ।হাতে তার কফির দুটো মগ।বিছানায় বসে এক মগ এগিয়ে দেয় আম্বের এর দিকে।আম্বের তা হাতে নিয়ে পাশে রাখে।

বিছানায় বসে মাহাদ।কফিতে চুমুক দিয়ে সরস গলায় বললো–

“ভার্সিটি কেমন লেগেছে আপনার?

আম্বের ভ্রু কুঁচকে গম্ভীর গলায় বললো–

“ভালো।তবে আপনি আমাকে মিথ্যা কথা বললেন কেন?

মাহাদ ঈষৎ চিহ্নিত গলায় বললো–

“আমি কখন মিথ্যে বললাম!

“কলেজটা উচ্চ মধ্যবিত্তদের জন্য।আমাদের জন্য নয়।”

মাহাদ বেখেয়ালি সুরে বললো–

“ও আচ্ছা।ওসব নিয়ে আপনাকে ভাবতে হবে না।আপনি আপনার পড়ালেখায় মনোযোগ দিন।”

আম্বের ঠোঁটের কোণ চিপে শক্ত গলায় প্রশ্ন করলো–

“আপনি ইমুকে বোর্ডিং স্কুলে কেন পাঠিয়েছেন?

মাহাদ হাত ছড়িয়ে বিছানায় শুয়ে পড়ে।গাঢ় গলায় বললো–

“যা করেছি ওর ভালোর জন্যই করেছি।”

আম্বের ঝট করে তপ্ত গলায় বললো–

“সারা পৃথিবীর মানুষকে ভালো রাখার দায়িত্ব আপনি নিয়ে রেখেছেন!

“নাহ।আমি শুধু নিজেকে ভালো রাখতে চাই।আর তার জন্য আমার যা করতে হবে আমি তা করবো।”

আম্বের জ্বলন্ত চোখে তাকিয়ে রইলো।মাহাদ স্থির গলায় বললো–

“কফিটা খেয়ে নিন।ঠান্তা হয়ে যাবে।”

“আমার ইচ্ছে হলে আমি খেয়ে নিবো।আপনাকে বলতে হবে না।”

মাহাদ ধুম করে উঠে বসে।নম্র গলায় বললো–

“আপনার মা কী আপনার মুখে মধু দেয় নি!সবসময় তিতা কথা বলেন কেন!
একটু ভালোবাসার কথাও তো বলতে পারেন।”

আম্বের গলা নামিয়ে দৃঢ়ভাবে বললো—

“আমি আপনাকে ভালোবাসি না।”

“ঘৃণাও করতে পারেন না।”

আম্বের এ মনে ঝড়ো বাতাস বইতে থাকে।মাহাদ মিথ্যে বলেনি।এ কয়েকদিন হাজার চেয়েও সে মাহাদ কে ঘৃণা করতে পারে না।অজানা অদেখা মোহ তাকে বারবার মাহাদ এর কাছে টেনে নিয়ে যায়।আম্বের নিজেকে ফেরানোর আপ্রান চেষ্টা করে।নিজেই নিজের ভালোবাসার সাথে লড়াই করে আজ সে বড় ক্লান্ত।ভালোবাসা অপরাধ নয়,অপরাধ ভুল মানুষকে ভালোবাসা।তাই সে নিজের ভালোবাসা কে আবদ্ধ করে রেখেছে নিজের হৃদয়ে।

মাহাদ ধরা গলায় বললো–

“ভালো যখন বাসবেন না ঘৃণাই করেন।নাহলে সেখানে ভালোবাসার জন্ম নিবে।একবার ভালোবাসার গাছ তার ফুল ফোটাতে শুরু করলে নিয়ম করে প্রতি বসন্তেই আপনার হৃদয় রাঙাবে।যতদিন তার দেহে প্রাণ আছে।”

আম্বের কিছু বললো না।মাহাদ এর প্রতিটি কথা তার বুকে বিষের বাণ এর মতো বিঁধে।কিন্তু সে চাইলেও তার বাবার মৃত্যুর কথা ভুলতে পারে না।পারেনা ভুলতে মাহাদ এর সেই রূপ।ভালোবাসা কী পন্য!তা এক সুপ্ত অনুভূতি।যাকে দেখানো যায় না,ছোঁয়া যায় না,না পরিমাপ করা যায়।যায় শুধু হৃদয় দিয়ে অনুভব করা।মাহাদ এর সেই হৃদয় বদ্ধ।সে কোনোদিনও তার সেই #বদ্ধ_হৃদয়ের_অনুভূতি হতে পারবে না।

মাহাদ এর কথায় ঘোর কাটে আম্বের এর।মাহাদ বললো–

“পড়েন প্রজাপতি।আমি আসি।
আর কলেজে গিয়ে পড়লেখাতেই মনোযোগ দিবেন।অন্য কিছুতে না।আর স্টুডেন্টদের সাথে মেলামেশা কম করবেন।”

আম্বের ভ্রু নাচিয়ে উষ্ণ গলায় বললো—

“কেন?
আমি কী করোনা রোগী!

মাহাদ গা দুলিয়ে হাসে।এই মেয়েটাকে ছাড়া সে থাকতে পারবে না।
নরম গলায় মাহাদ বললো—

“আপনি আমার সুগন্ধি প্রজাপতি।আমি চাই না আপনার সুগন্ধি নেওয়ার অধিকার আমি ছাড়া অন্য কারো হোক।
বি সেফ!

মাহাদ চলে যেতেই শূন্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে আম্বের।
,
,
হাই ভলিউমে টিভি দেখছে মাহাদ।উত্তেজিত হয়ে তার ঘরে ঢুকে আম্বের।হিসহিসিয়ে বললো–

“টিভির সাউন্ড কমান।আমি পড়তে পারছি না।”

মাহাদ মিউট করে দেয়।উৎসুক গলায় বললো—

“এখানে কেন আপনি?

“এতো সাউন্ড দিয়ে কেউ টিভি দেখে!

“তাতে আপনার কী সমস্যা?

“আমি পড়তে পারছি না।”

মাহাদ স্মিত হাসে।কারণ আম্বের জানেই না মাহাদ এর রুম সাউন্ড প্রুভ।দরজা পুরো আটকানো থাকলে বাইরে সাউন্ড যায় না।আর ভেজানো দরজার আওয়াজও আম্বের এর রুম পর্যন্ত যাওয়া সম্ভব না।

আম্বের টিভির দিকে তাকিয়ে চোখ খিচে বললো—

“ছিঃ!
এইসব কী দেখেন আপনি!

“ফ্যাশন শো।দ্যা ওর্য়াল্ড মোস্ট হটেস্ট মডেল এরা।”

“আপনার এইসব নোংরা মেয়ে মানুষ দেখতেই ভালো লাগে!

“নোংরা হবে কেন?

“এদের জামা কাপড় দেখেছেন।ছিঃ!

“এতো ছিঃ ছিঃ করছেন কেন?
ওইসব ড্রেস তো সবাইকে মানায় না।আপনাকে তো একদমই না।আপনার না আছে ফিগার না আছে গ্ল্যাসি লুক।দেখেই হাড় হাভাতে মনে হয়।”

আম্বের ফুঁসে উঠে।শাসানো গলায় বললো–

“একদম বাজে কথা বলবেন না।”

“বাজে কথা কখন বললাম!সত্যি কথা বললাম।”

“চুপ করেন।”

মাহাদ সোজা হয়ে বসে।নিস্পলক তাকিয়ে থাকে আম্বের এর দিকে।মৃদু গলায় বললো—

“আপনাকে রাগলে আরো বেশি হট লাগে।”

“ইউ……।

আম্বের মাহাদ এর দিকে তেড়ে আসতেই মাহাদ বললো—

“স্টপ।”

আম্বের শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে।মাহাদ একটা প্যাকেট আম্বের এর হাতে দিয়ে বিগলিত গলায় বললো—

“এইটা পড়ে আসেন।”

আম্বের প্যাকেট খুলে দেখে একটা লাল রঙের শাড়ি।ভ্রু বাঁকিয়ে বললো—

“পড়বো না আমি।”

“সময় নষ্ট করবেন না।তাহলে কিন্তু বাধ্য হয়ে আমাকেই হাত লাগাতে হবে।”

আম্বের কথা বললো না।এতদিনে ও এইটা অনেকটা বুঝতে পেরেছে আম্বের এর উপর মাহাদ জোর খাটাতে পারবে।

নিজের ঘরে গিয়ে শাড়ি পড়ে নেয় আম্বের।ব্লাউজ টা একদম ঠিক মতো হয়েছে।আম্বের ভাবে,মানুষটার নজরও শকুনের মতো।একদম পার্ফেক্ট।
আম্বের এর আগে কখনো শাড়ি পড়েনি।কিন্তু রুম পার্টনারদের পড়তে দেখেছে।তাই তার পড়তে সমস্যা হয়নি।আম্বের তার লম্বা চুল গুলো পুরো ছেড়ে দিয়েছে।চোখে কাজল আর কানে এক জোড়া ঝুমকো।লিপস্টিক নিয়েও কেনো যেনো দিতে ইচ্ছে হলো না।

পুরোদস্তুর তৈরি হয়ে মাহাদ এর ঘরে এসে দেখে মাহাদ নেই।মাহাদ কে ঘরে না পেয়ে নিচে নেমে আসে আম্বের।দেখে আলতাফ দাঁড়িয়ে আছে।কাছে গিয়ে মাহাদ এর কথা জিঙ্গেস করতে বলে সে তাকে দেখেনি।ম্নান মুখে দোতলায় উঠে আসে আম্বের।হঠাৎ পুরো ঘরের লাইট বন্ধ হয়ে যায়।
আম্বের ঘাবড়ে যায়।চকিতে আম্বের অনুভব করে কারো প্রশস্ত হাতের পাঞ্জা তার শাড়ির আঁচল ভেদ করে উন্মুক্ত পেটে বিচরণ করছে।শ্বাসরুদ্ধ হয়ে আসে আম্বের এর।প্রস্ফুরণ শুরু হয় তার শরীরে।সেই উষ্ণ দেহের মানব আম্বের এর গালের সাথে গাল লাগিয়ে ভারী গলায় বললো—

“মেনি মেনি হ্যাপি রিটার্নস অফ দ্যা ডে।হ্যাপি বার্থডে মিস আম্বের।”

আম্বের এর চোখ টলটল করে উঠে।

চলবে,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here