#বদ্ধ_হৃদয়ের_অনুভূতি
#পর্বঃ১৭
লিখাঃতাজরিয়ান খান তানভি
চারদিকে কোলাহল।কেউ চেয়ার চায় তো কেউ টেবিল।কেউ কোল্ড ড্রিংস তো কেউ ফ্রেন্স ফ্রাই।ছোটখাটো স্কুল কলেজের এইসব ক্যান্টিনে অফ পিরিওডে বেজায় ভীড় থাকে।চারদিক থেকে হৈ হুল্লোড় এর আওয়াজ ।কথার ধ্বনি যেনো একে অন্যের মস্তিষ্কে সমানতালে আন্দোলন শুরু করে।
ক্লাস আওয়ার শেষ হয়নি।বিজন্যাস মেথ ক্লাসটা মিস যাওয়ায় আম্বের এর সুযোগ হয়েছে ক্যান্টিনে এসে বসার।সাথে সামান্তাও আছে।দুই বান্ধবী রাজ্যের গল্প জুড়ে দিয়েছে।ওদের মাঝেই কিছুক্ষন পর এসে অযাচিতভাবে বসে ইলহাম আর জাসিন।ওদের দুজনকে দেখেই ভ্রু ক্রুটি করে সামান্তা।নিশ্চিত কোনো গোলমাল করবে।আম্বের ইলহাম কে কয়েকবার দেখেছে কিন্তু কথা হয়নি।ছাত্র রাজনীতির একজন লিডার বলে তার সুখ্যাতি আছে।
আম্বের কে দেখেই বাঁকা হেসে ফিচেল গলায় ইলহাম বললো—
“কেমন আছেন ভাবি?
আম্বের ভ্রু কুঞ্চি করে গম্ভীর দৃষ্টিতে তাকায়।বিরক্তিকর গলায় বললো—
“ভাবি!কে ভাবি?
ইলহাম অধর বাঁকিয়ে হাসে।তীক্ষ্ম গলায় বললো—
“আরে মি.টপ আপনাকে এখনো কিছু বলেনি!
ভেরি স্যাড।”
আম্বের অস্বস্তিকর গলায় বললো–
“আপনি এইসব কী বলছেন!
ইলহাম সামান্তা কে উদ্দেশ্য করে বললো—
“কিরে,এখনো মি.টপ আগায় নি সামনে!ভাবি কে কিছু বলে নি!হায়,,বলা উচিত।
ভাবি কিন্তু সেই।যা শুনেছি তার চেয়ে বেশি বেশিই সবকিছু।”
ইলহাম কথা শেষ করে আম্বের কে আপাদমস্তক বিশ্রিভাবে দেখে।আম্বের অপ্রস্তুত হয়।সব কিছু অস্বস্তিকর লাগছে।সামান্তা রেগে গিয়ে চড়া গলায় বললো—
“দেখ ইলহাম ভালো হবে না বলে দিচ্ছি।যা এখান থেকে।”
“হুশশশশ,,
ভাবির সাথে পরিচিত হয়ে নেই আগে।”
ইলহাম হাত বাড়িয়ে আম্বের এর চুল ধরতে এলেই কেউ একজন তাকে টান দিয়ে ঘুরিয়ে ইলহাম এর গালে সজোরে এক থাপ্পর বসিয়ে দেয়।আগুন ঝরা কন্ঠে ঘি ঢেলে অভি ইলহাম এর কলার চেপে ধরে বললো–
“তোকে না বলেছি ওর কাছ থেকে দূরে থাকতে!
ইলহাম গর্জন করে বললো—
“তোর সাহস কী করে হলো আমার গায়ে হাত তোলার!তুই জানিস না আমি কে!এই দুইটাকার মেয়ের জন্য তুই আমার গায়ে হাত তুললি!
অভি ইলহাম কে দুটো ঘুষি মারে।এক পর্যায়ে ওদের মারামারিতে লোক ভর্তি হয়ে যায় ক্যান্টিনে।অনেক কষ্টে ওদের কে ছাড়ানো হয়।রাগে উগ্রমূর্তি ধারণকারী ইলহাম হিসহিসিয়ে বললো—
“এই মেয়ের জন্য তুই আমার গায়ে হাত তুললি ওকে আমি দেখে নিবো।মনে রাখিস।”
অভিও চড়া গলায় বললো—
“আম্বের এর গায়ে আঁচ লাগলে তোকে আমি জ্যান্ত দাফন করবো।যা এখান থেকে।”
ধীরে ধীরে খালি হতে থাকে ক্যান্টিন।আম্বের নিথর হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।অভির এই রূপ সে আগে কখনো দেখেনি।অভি তো পানির মতো।নিশ্চল যার চলা।সে কী করে এতটা এগ্রেসিভ!
তার উপর আম্বের কে নিয়েই।আম্বের ঘাবড়ে যায়।ভীত দুটো চোখ আবদ্ধ করে রেখেছে অভির দিকে।অভি ফোঁস ফোঁস করছে।চোখ দুটো জ্বলন্ত কয়লার মতো জ্বলজ্বল করছে।নিস্পলক তাকিয়ে থাকায় আম্বের এর চোখ দিয়ে পানি পড়তে লাগলো।সামান্তার কথায় ভাবনার সুতো ছিঁড়ে আম্বের এর।সামান্তা তাকে ইলহাম আর অভির সম্পর্কের কথা বলে আর বলে ইলহাম এর বাজে স্বভাবের কথা।তাই অভি রেগে গিয়েছিলো।এইটা তেমন কিছু না।কলেজের আর এই এলাকার অনেকেই বিষয়টা জানে ওরা দুই ভাই দুই মেরুর প্রাণি।
মারামারি করায় অভির ঠোঁট কেটে রক্ত পড়ছে।আম্বের নিজের ব্যাগ থেকে একটা টিস্যু বের করে তা মুছে দিতে থাকে।শান্ত গলায় বললো—
“বিষে বিষক ক্ষয়।তুমি কেন ওদের সাথে মারামারি করতে যাও!তুমি কী বিষ!তুমি তো অমৃত।অমৃত হয়ে কেন বিষের সাথে মিশতে যাবে।”
আম্বের অভির কাটা জায়গায় হালকা করে ফুঁ দেয়।আম্বের এর উষ্ণ ফুঁ তে শিউরে উঠে অভির শরীর।তার ভেতরে সবটা আন্দোলিত হতে থাকে।ঘোর লাগা চোখে অভি তাকিয়ে আছে আম্বের এর দিকে।আম্বের ওই ময়ূরের পালকের মতো চোখের পাপড়ি নড়াচড়া দেখছে অভি।আম্বের এর ঠোঁটের নিচে তার হালকা হাসিতে একটা ছোট্ট ভাঁজ পড়েছে তাও নিবিড়ভাবে দেখছে অভি।আম্বের এর চিবুকের নিচটায় ঠিক বামপাশ বরাবর একটা ছোট তিল।যাতে আটকে যায় অভির চোখ।উদ্ভ্রান্তের মতো উঠে দাঁড়ায় অভি।তার চোখ জ্বলছে।
আম্বের উৎসুক গলায় বললো–
“কী হয়েছে?
অভি অপ্রস্তুত হয় আম্বের এর প্রশ্নে।ইতস্তত হয়ে বললো—
“কিইইকিইছু না।”
“কিছু না হলেই ভালো মি,অভিইইইইইরাজ।”
আম্বের ইচ্ছে করেই অভির নাম টেনে বলে।খিলখিলিয়ে হাসে আম্বের।আর এই হাসিতে ক্ষত বিক্ষত হয় অভির হৃদয়।তার মরুভূমি হৃদয়ের জল তেষ্টা মিটানোর ঝর্নার ফোয়ারা আম্বের।অন্ধকার আকাশের আলোর শিখা ওই চাঁদ আম্বের।
আম্বের বিগলিত গলায় বললো–
“তোমাদের এই ছেলেদের আমি বুঝি না।কিছু হলেই রক্তারক্তি বাঁধিয়ে দাও।ওই যে মাহাদ কিছু হলেই….।”
অবাক চোখে আম্বের এর দিকে তাকায় সামান্তা।উৎসুক গলায় বললো—
“তুই চিনিস মাহাদ আবইয়াজ কে?
আম্বের শুকনো ঢোক গিলে।থমথমে গলায় আমতা আমতা করে বললো—
“না মানে ওই যে ছবিতে দেখেছি তাই বললাম।”
সামান্তা আশ্বস্তের গলায় বললো–
“ও আচ্ছা।”
আম্বের ছোট্ট করে দম ফেলে।দম আটকে গেছিলো তার।মুখ ফসকে মাহাদ এর নাম বলে ফেলতে গিয়েছিলো।
সামান্তা দুর্বোধ্য হাস।রসালো গলায় বললো—
“তুই কি জানিস আমাদের মি.টপ মাহাদ আবইয়াজ এর ডাইহার্ট ফ্যান!
আম্বের গোল গোল চোখে তাকায়।বিরক্তিকর গলায় ঠোঁট বাকিয়ে বললো—
“আর কোনো মানুষ পেলে না ফ্যান হওয়ার!আর তুমি না ক্রিকেট পছন্দ করো।সাকিব,মাশরাফি,শচীন টেন্ডুলকার এরা কী দোষ করলো!
অভি স্মিত হাসে।দৃঢ় গলায় বললো—
“হি ইজ মাই আইডল।”
আম্বের চোখ মুখ ভারী করে গমগমে গলায় বললো–
“কারো সম্পর্কে ভালো করে না জেনে তাকে আইডল মানা উচিত নয় অভি।”
অভি নির্বিকার ভাবে বললো—
“কে বললো জানি না!অনেক কিছু জানি।”
“কী জানো?
সামান্তা ঝলমলে গলায় বললো—
“তোকে বলেছিলাম না অভির বাবা একটা হসপিটাল দিচ্ছে তার পাশেই তো মাহাদ আবইয়াজ এর অরপ্যান হাউজ।”
আম্বের তাচ্ছিল্যের সাথে বললো–
“তো!এতিমখানা অনেকেই দেয়।এইটা এমন কিছু নয়।”
অভি মৃদু হাসলো।শান্ত ও গাঢ় গলায় বললো–
“ঠিক।কিন্তু মাহাদ আবইয়াজ প্রতি সপ্তাহে সেখানে যায়।নিজ হাতে ওই মানুষগুলোর সেবা করে।টাকা দিয়ে অনেকেই অনেক কিছু করে কিন্তু নিজের হাতে সেবা ক’জন করে!
এছাড়াও তার আরো অনেক এনজিও আছে।স্কুলে ডোনেশন দেয়।বৃদ্ধাশ্রম আছে।নিজের আয়ের প্রায় ফোরটি পার্সেন্ট সে অসহায় মানুষদের জন্য ব্যয় করে।”
আম্বের গম্ভীর গলায় প্রশ্ন করলো—
“এইসবের সত্যতা কী।”
“আমি বিভিন্ন আর্টিকেলস এ পড়েছি,তার টুইটার,ইন্সট্রাগ্রাম থেকে জেনেছি।এবং নিজে গিয়ে সেখানে খবর নিয়ে তার সত্যতা পেয়েছি।ফর দিস হি ইজ মাই আইডল।অনেকবার তাকে দেখেছি।কিন্তু কাছে যাইনি।ভাবলাম সে আমার এক আকাঙ্ক্ষীত স্বপ্ন।স্বপ্নই থাক তাতে ভালোবাসা থাকে,থাকে শ্রদ্ধা।হয়তো কাছে গেলে সে স্বপ্ন এতোটা ভালোবাসাময় নাও থাকতে পারে।”
আম্বের বুঝতে পারে না।কী ভাববে সে।একটা মানুষের দুটো রূপ কী করে হতে পারে!
যার বাইরের টা এতোটা ঝলমলে ভেতরটা এতোটা কলুষিত কেন?
আম্বের হাঁক ছেড়ে বললো—
“আমি এখন যাই।দেরি হয়ে যাচ্ছে।”
” ওকে।বাই।”
আম্বের যাওয়ার পরও তার পথের দিকে চেয়ে থাকে অভি।ভাবুক গলায় সামান্তা বললো–
“কবে বলবি তুই ওকে?
“জানি না।ওকে হারানোর ভয় হচ্ছে আমার।শি ইজ মাই লাভ কুইন।
,
,
,
প্রায় এক ঘন্টা যাবত স্থির হয়ে বসে আছে মাহাদ।রাগে তার আঙ্গুলের নখ পর্যন্ত কাঁপছে।ঝিমঝিম করছে মস্তিষ্ক।হাতের রগ ফুলে তার অস্তিত্ব জানান দিচ্ছে।নৈঃশব্দ পরিবেশে এসির ভোঁতা আওয়াজ আরো চড়াও করছে মাহাদ এর মস্তিষ্কের নিউরণ গুলোকে।
পিনপতন নিরবতার মধ্যে ভেতর ঘর থেকে অশ্লীল গোঙানির আওয়াজ ভেসে আসছে।একজন প্রাপ্ত বয়স্ক পুরুষ হিসেবে এই আওয়াজ এর মানে তার জানা।গা গুলিয়ে উঠলো মাহাদ এর।কিড়মিড় করে উঠে তার দন্তমূল।কপাল জুড়ে ভাঁজ।চোয়াল শক্ত হয়ে আছে।
এই কারণেই মিডিয়ার মেয়েদের ঘৃণা করে মাহাদ।একটা সুযোগের জন্য নিজের সবটা বিলিয়ে দিতে দু বার ভাবে না।কী হবে এইসব দিয়ে যখন নিজের অস্তিত্ব অন্যের দখলে থাকবে।টাকা!টাকায় সব কিনা গেলেও সুখ কেনা যায় না যা মাহাদ হাড়ে হাড়ে জানে।কিন্তু এই টাকার জন্য সব হারাতে হয় যা মাহাদ তার জীবনের প্রতি ক্ষেত্রে উপলব্ধি করেছে।
রাগে ইচ্ছে করছে সব ভেঙে চুরে ফেলতে।কিন্তু ওই যে অতীত!অতীত তাকে বাঁধ সেরে রেখেছে।তাই বাধ্য হয়ে আসতে হলে।যারাই মাহাদ এর অতীত জানে সবাই সেটাকে সুযোগে ব্যবহার করতে চায়।
মাহাদ এর ভাবনার মধ্যেই একটা মেয়ে বেরিয়ে এলো ভেতর থেকে।একটু আগে ঘরের ভেতর কী হয়েছে তা মাহাদ ভালো করেই জানে।অস্ফুটভাবে বললো–
“শালা পার্ভার্ট।এক পা কবরে তাও শরীরের কুড়কুড়ানি কমে না।”
ভেতরে গিয়ে ধড়াস করে কাউচে বসে মাহাদ।তার সামনেই বিছানা থেকে কাপড় ঠিক করে বসেছে এনাম মাহমুদ।মাথার অর্ধেক অংশের চুল উধাও।হাত পায়ের পাতলা চামড়ার উপরে ফুলন্ত শিরাও দৃশ্যমান।পান খাওয়া লাল দাঁত বের করে মাহাদ কে প্রশ্ন করলো—
“কেমন আছেন নায়ক সাহেব?
এনামের দিকে তাকাতে খিন্তি মেরে উঠে মাহাদ।ইচ্ছে করছে দু ঘা দিতে।দাঁত কিড়মিড়িয়ে বললো—
“এই বয়সেও এতো জোর আসে কোথা থেকে আপনার!ঘৃণাও লাগে না!নাতীর বয়সি মেয়েদের সাথে এইসব করতে!আরে আপনাকে দেখেতো আমারই সহ্য হয় না ওই মেয়েগুলো কী করে সহ্য করে !
যান ফ্রেশ হয়ে আসেন।”
এনাম দাঁত কেলিয়ে বললো–
“নায়ক সাহেব ক্ষেপে আছেন মনে হয়!শরীর বুড়ো হয়েছে মন তো এখনো নতুন রস খুঁজে বেড়ায়।”
হা হা হা।এনামের হাসিতে মাহাদ এর মস্তিষ্কের দুই পাশের রগ দপদপ করতে থাকে।এনাম আবার বললো—
“এখানে হলো সব গিভ এন্ড টেক রিলেশনসিপ।”
মাহাদ ধমকে উঠে বললো—
“আপনি যাবেন এখান থেকে!
এনাম উঠে ওয়াশরুমে যায়।মাহাদ ফোঁস করে এক দম ছাড়ে।নিজের মোবাইল বের করে গ্যালারিতে থাকা আম্বের এর স্থিরচিত্র গুলো দেখতে থাকে।
অদ্ভুত মুগ্ধতা ছেয়ে আছে সে চেহারায়।তার লম্বা অক্ষিপল্লবে ঘেরা নয়নযুগল এক নিমিশেই মাহাদ কে নিয়ে যায় এক অপার্থিব দুনিয়ায়।তার দীর্ঘ রেশম কালো চুলের বিস্ময়কর ঘ্রাণ মাতোয়ারা করে দেয় তাকে।আর আম্বের এর শরীরের সেই অদ্ভুত সুগন্ধ মাহাদ এই জীবনে ভুলতে পারবে না।অচিরেই মাহাদ এর অধরযুগল প্রস্ফুটিত হতে থাকে গোলাপের মতো।আম্বের এর আর্দ্র ঠোঁটের স্পর্শ কাঁপিয়ে তোলে মাহাদ এর অন্তর।এই মেয়েটাকে সে সত্যিই ভালোবাসে।
কিন্তু তার জীবনের অন্ধকারের আগ্রাসন থেকে কী করে বাঁচাবে তার প্রজাপতি কে!
এনাম শাওয়ার নিয়ে এসে বসে।মাহাদ এখানে একান্ত বাধ্য হয়ে এসেছে।মাহাদ কে এনাম একটা ওয়েব সিরিজ করতে বলেছে।কিন্তু মাহাদ করবে না বলেছে।তবুও ওকে ব্ল্যাকমেল করে নিয়ে এসেছে।নাকের ঢগায় একরাশ ক্ষোভ জমে আছে মাহাদ এর।এই ধরনের কাজ সে কখনো করে না।কিন্তু এনাম চায় প্রফিট।মাহাদ এর মতো কেউ অ্যাডাল্ট টাইপ ওয়েব সিরিজ করলে তার জনপ্রিয়তা আর প্রফিট দুটোই বাড়বে।
আজকাল বিনোদন কে সবাই অসুস্থতার কাঠ গড়ায় দাঁড় করিয়েছে।এখনকার ফিল্ম,ড্রামা,সিরিজ পরিবারের সবাইর সাথে বসে দেখা অনেকটা দৃষ্টিকটু।
মাহাদ এর নিস্তব্ধতায় এনাম মুখ খুললেন,বিশ্রিভাবে মুখভঙ্গি করে বললেন—
“মেয়ে কিন্তু একদম ঠাসামাল।কচি।নরম,তুলতুলে।একবার হাত লাগালেই শুধু ছুঁতে ইচ্ছে করবে।”
মাহাদ অগ্নিঝরা চোখে একবার তাকায় এনাম এর দিকে।যেনো লালা ঝরা কোনো কুকুর।দাঁতে দাঁত চেপে মাহাদ বললো–
“কল দ্যাট গার্ল।
মাহাদ এর কথায় মেয়েটিকে ডেকে আনা হয়।মেয়েটাকে ঠিক মাহাদ এর সামনে বসানো হয়।এনাম কে যেতে বলা হয়।মাহাদ গাঢ় দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে মেয়েটির দিকে।মেয়েটি তার ওড়না দিয়ে নিজেকে ভালো করে ঢাকার চেষ্টা করছে।পাতলা গড়নের শরীরে ফর্সা হলুদাভ চেহারা।প্রশ্বস্ত অক্ষিযুগল।মাহাদ মেয়েটির পায়ের দিকে তাকায়।বুঝা যাচ্ছে কী ঝড় চলছে তার মনে।এক পা দিয়ে অন্য পায়ের নখ খোঁটায় ব্যস্ত সে।মনে হচ্ছে অদৃশ্য কোনো সত্তার সামনে বসে আছে সে।মাহাদ ঝট করেই বললো—
“টেক অফ ইউর ক্লথস।”
মেয়েটি কেঁপে উঠে মাহাদ এর কথায়।শূন্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে মাহাদ এর দিকে।মেয়েটির ভীত চোখ দুটি উপচে আসছে বর্ষনের নীর।
মাহাদ কপট রাগ দেখিয়ে আবার বললো—
“জাস্ট টু মিনিটস।গেট নেকেড।”
মেয়েটি ধরা গলায় জড়োসড়ো হয়ে বললো—
“এইসব কী বলছেন আপনি!
মাহাদ উতপ্ত গলায় বললো—
“বুঝতে পারছো না কী বলছি!পুরো একটা সিরিজ করবে।তা তোমাকে টেস্ট তো করে নেই সব ঠিক আছে কিনা!
“ছিঃ!
আপনি এইসব কী বলছেন!
ঝুমঝুমিয় কেঁদে ফেলে মেয়েটি।মাহাদ কড়া গলায় বললো—
“এই মেয়ে এই,বয়স কতো তোর!এই বয়সে এইসবে নেমেছিস!নিজের অবস্থা দেখেছিস।আরে তোকে একবার হাত লাগালেই তো তুই শেষ হয়ে যাবি,পুরো সিরিজ করবি কী করে!এতো টাকার প্রয়োজন তোদের!কী করবি টাকা দিয়ে!
মেয়েটি বিলাপ করে কাঁদতে থাকে।মাহাদ তটস্থ হয়ে বললো—
“থাম বলছি থাম।
ওই কবরবাসী পাল্লায় পরলি কী করে।আর তুই থেকেছিস ওর সাথে!
মেয়েটি বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে বললো—
“এইসব আপনি কী বলছেন!উনি বলছেন আপনার সব কথা শুনলেই সে আমাকে টাকা দিবে।”
“শালা হারামি।”
মাহাদ ফোঁস করে এক দম ছেড়ে মেয়েটির পাশে গিয়ে বসে।নরম গলায় জিঙ্গেস করলো—–
“কী নাম তোমার?
মেয়েটি কম্পনরত গলায় বললো—
“নুজহাত।”
“কোন ক্লাসে পড়ো?বয়স কতো তোমার?আর এখানে কী করে এলে?
নুজহাত আবেগী গলায় বললো—
“সব প্রশ্নের উত্তর একসাথে বলবো না কী একটা একটা করে।”
মাহাদ ঝরা হাসে।স্মিত গলায় বললো—
“সরি।তোমার যেমন ইচ্ছে বলো।”
“নাইনে পড়ি।পনেরো বছর আমার।আমার বাবা এখানে কাজ করতো।বাবার অ্যাকসিডেন্ট হয় আর….।”
নুজহাত আবারো ঝরঝরিয়ে কাঁদে।মাহাদ ওকে শান্ত হতে বলে।নুজহাত জড়ানো গলায় আবার বললো—
“মায়ের কিডনীতে পাথর হয়েছে।তাই এনাম স্যার এর কাছে টাকা চাইতে আসলে উনি বলে কাজ না করলে টাকা দিবে না।”
“ওই শালা একটা হারামি।
কোথায় তোমার মা এখন?
“হসপিটালে।”
“চলো আমার সাথে।”
নুজহাত কে নিয়ে হসপিটালে আসে মাহাদ।অপারেশন এর সমস্ত টাকা পে করে দেয়।যাওয়ার আগে নুজহাত কে একটা ভিজিটিং কার্ড দিয়ে যায়।সরস গলায় বললো–
“আজকের পর আমি যেনো তোমাকে মিডিয়া পাড়ার আশেপাশে না দেখি।কোনো কিছু লাগলে আমাকে জানাবে।গট ইট?
“হু।একটা কথা বলবো?
“বলো।”
“আপনি আমার জন্য এতোকিছু কেন করলেন?আমি তো আপনার কেউ নই।”
মাহাদ দুর্বোধ্য হাসলো।ফিকে গলায় বললো—
“রক্তের সম্পর্ক যখন ধোঁকা দেয় তখন পৃথিবীর সব সম্পর্ক কে আপন মনে হয়।
তোমার জন্য নয় তোমার মায়ের জন্য করেছি।মানুষ আলাদা হতে পারে কিন্তু মা তো মা ই হয়।আসি ভালো থেকো।”
নুজহাত নির্নিমেষ তাকিয়ে থাকে।এই মানুষটার অনেক কথা শুনেছে আজ চোখেও দেখে নিলো।
হাতের পাঁচ আঙ্গুল যেমন এক হয় না তেমন এক জায়গায় অবস্থানরত সব মানুষের মস্তিষ্কও এক হয় না।কেউ জীবনকে আয়নার মতো দেখে তো কেউ পঁচা গন্ধযুক্ত ডাস্টবিন।
চলবে,,,
(বিঃদ্রঃ
আগামী পর্বে মাহাদ এর কপালে দুঃখ আছে😒😒😒)