#বদ্ধ_হৃদয়ের_অনুভূতি
#পর্বঃ২৫
লিখাঃতাজরিয়ান খান তানভি
সকালের এক মুঠো ঝলমলে রোদ এসে হানা দেয় আম্বের এর নগ্ন পায়ে।পর্দা উড়িয়ে মৃদু হাওয়া এসে পড়েছে বেড সাইড টেবিলে রাখা ফ্লাওয়ার ভাস এ যার দরুন কাঁচা ফুলের মিষ্টি গন্ধ ছড়িয়ে পড়ছে পুরো ঘরে।রোদের মিষ্টি আভায় সুড়সুড়ি লাগে আম্বের এর পায়ে।চোখ কঁচলে উঠে বসে আম্বের।
পাশ ফিরে তাকাতেই দেখে মাহাদ নেই।ওয়াশরুমেরও দরজা ভেজানো।আনমনে এদিক ওদিক তাকাতেই আম্বের এর নজর আবদ্ধ হয় পাশের ছোট্ট টেবিলে।সেখানে লাভ শেপ এর একটা চিরকুট রাখা।আম্বের দ্রুত হস্তে তা নিয়ে খুলে দেখে।তা দেখেই এক চিলতে হাসি ফুটে আম্বের বদ্ধ অধরযুগলে।তাতে লেখা–
“সরি প্রজাপতি,ঘুমিয়ে ছিলেন।আপনার ওই ঘুমন্ত মনোহারিণী মুদিত চক্ষুদ্বয় উদ্ভাসিত করার মতো এতোবড় অপরাধ আমি করতে পারিনি।আপনার ওই নয়নযুগলের তীক্ষ্ম চাহনিতে কী নেশা তা আপনি জানেন না।আমি আমাকেই হারাই ক্ষনে ক্ষনে আপনার ওই হারিণী আঁখিতে যার পল্লবের প্রতিটি পলক আমার হৃদকম্পন বাড়িয়ে দেয়।”
আম্বের সলজ্জ চোখে আবার চিরকুট টি পড়ে।তার মনের আনাচে কানাচে এক অদ্ভুত শিহরণ বইতে থাকে।নিজের অজান্তে এক মায়া এসে আড়ষ্ট করে তাকে।
বিছানা ছেড়ে ওয়াশরুমে পা বাড়ায় আম্বের।লম্বা শাওয়ার নিয়ে বেরিয়ে চুল থেকে টাওয়েল খুলে তা বারান্দায় মেলে দিয়ে আসে।তার ঘন রেশম কালো চুলের ভারিক্কি পানির সংস্পর্শে দ্বিগুন বেড়ে যায়।আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চিরুনি চালায় তার দীর্ঘ কেশ এ।সেখানেও একটা চিরকুট পায় আম্বের।একরাশ উচ্ছ্বাস নিয়ে তটস্থ হয়ে তা খুলে আম্বের।তাতে লেখা–
“কেশবতী,তোমার ওই দীঘল কালো রেশমি চুলে তো আমি সেদিন মরেছি যেদিন তোমায় আমি প্রথম ওই গোলাপের মাঝে প্রজাপতি হয়ে উড়তে দেখেছি।তোমার ওই অঙ্গের সুগন্ধ যে আমার শরীরের সাথে সাথে আমার পুরো অন্তরআত্না কে তোমার নামে বিসর্জিত করার তাড়া দিয়ে বেরিয়েছে তা আমি বেশিদিন ধরে রাখতে পারিনি।করেছি নিজেকে সমর্পণ তোমার ওই সৌরভে।তোমার ওই ভেজা চুলের হৃদয় গলানো সৌরভ আমার সারা অঙ্গে তোমার নেশা ধরিয়ে দেয়।আমি শত চেষ্টায় নিজেকে অবধমন করতে ব্যর্থ
হই তোমার সত্তায় নিজেকে হারাতে।মিস সুগন্ধি সারা জীবন এভাবেই মিশে থেকো আমার প্রতিটি নিঃশ্বাসে।”
আম্বের এইবার ভারি লজ্জা পায়।মানুষটা দিন দিন সত্যিই পাগল হয়ে যাচ্ছে।এতোদিন তো নায়ক ছিলো এখন মনে হচ্ছে কবি হয়ে যাবে।লাজুক হাসে আম্বের।নিজের হাতে নিজের ভেজা চুলগুলো নিয়ে তার ঘ্রাণ নেওয়ার চেষ্টা করে।কিন্তু আম্বের কিছুই বুঝতে পারেনা।মানুষটা কী তাহলে মিথ্যে বলে!
ড্রয়ার খুলতেই চোখে পড়ে লিপস্টিক।আর সাথে চিরকুট।আম্বের প্রশান্তির নিঃশ্বাস ফেলে তা হাতে নেয়।খুলতে গিয়েও আবার বন্ধ করে ফেলে।আম্বের ভাবে।দুই চক্ষু বুজে কিছুক্ষন চিন্তা করতে থাকে চিরকুট টা কি নিয়ে হতে পারে।মাহাদ আর কী পছন্দ করে!
আম্বের এর মনে পড়তেই একপশলা লজ্জা এসে গুমোট বাধে তার নাকের ডগায়।লাজুক চোখ দুটো কিছুক্ষন বুজে চিরকুট টি দু হাতে মুষ্টিবদ্ধ করে নিজের বুকের সাথে চেপে ধরে আম্বের।
ঠোঁট।মাহাদ আম্বের এর চুলের সাথে তার পাতলা গোলাপী ঠোঁট পছন্দ করে সবচেয়ে বেশি।তাই তো সুযোগ পেলে কখনো তা হাত ছাড়া করে না মাহাদ।তার অধরপল্লবের একচ্ছত্র মালিকানা যেনো মাহাদ এর।আম্বের লজ্জা আর একবুক ভালোবাসা নিয়ে চিরকুট টি খুলে।মানুষটা আজ তাকে লজ্জা দিতে দিতে মেরেই ফেলবে।এতো প্রশংসাও কেউ করে!
চিরকুট খুলতেই নিজের অজান্তেই ঠোঁট কামড়ে ধরে আম্বের।মানুষটা আসলেও অসামাজিক।চিরকুটটিতে লেখা—
“তুমি চাইলেই হবো আমি বৃষ্টি,তোমায় নিয়ে করবো অনাসৃষ্টি।তোমার ওই গোলাপের মতো নরম ঠোঁটের আর্দ্রতায় আমার হৃদয়ের তৃষ্ণার্ত ভূখণ্ডে হবে প্রেমের বৃষ্টি।প্রেমানলে জ্বলা এই বুকে তোমার ওই অধরামৃত যেনো প্রাণের নিবারণ যার ছোঁয়ায় দগ্ধ এই বুকে জাগ্রত হয় প্রাণের সঞ্চারণ।প্রেমদেবী,তোমার চরণে দিও আমায় ঠায়।আমার ভালোবাসার অদ্বিতীয়া নারী তোমার ওই অমৃত যেনো সারাজনম আমার হৃদপিন্ডের অভ্যন্তরে বহমান রক্তধারার ন্যায় আমার হৃদস্পন্দন সঞ্চারন করে রাখে।”
আম্বের এর চক্ষু অবনত হয়।মানুষটা দিন দিন কেমন রোমান্টিক হয়ে যাচ্ছে।আম্বের আয়নার দিকে তাকাতেই তার চোখ যায় নিজের ঠোঁটে।কাল রাতের কথা মনে পড়তেই একরাশ লজ্জা এসে তার অক্ষিপুট ঝাপটে ধরে।দীর্ঘ একমাসের তৃষ্ণা মিটিয়েছে মাহাদ তার।মাহাদ এর কথা ভাবতেই আম্বের এর শিরদাঁড়া বেয়ে নামতে থাকে এক শীতল স্রোত।
বিছানায় চুল ছড়িয়ে বসে আম্বের।আম্বের এখন বিয়ে নিয়ে ভাবছে না।
সাধারণত হিরো হিরোইনদের বিয়ের পর তাদের ডিমান্ড অনেকটা কমে আসে।বিবাহিত হিরো হিরোইন ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি তে তেমন একটা সুবিধা করতে পারে না।হয়তো মাহাদ তাই বিয়েতে ডিলে করছে।এতোদিনে এইটুকু তো আম্বের বুঝতে পেরেছে যে মাহাদ তাকে ভালোবাসে।
আধ ভেজা চুলে একটা ক্লিপ লাগায় আম্বের।খিদেয় পেটে ইঁদুর দৌড়াচ্ছে।রুম থেকে বেরিয়ে কিচেন যায় আম্বের।আলতাফ কিছু একটা করছে।তাকে দেখেই আম্বের বললো–
“কী করছেন চাচা?
আম্বের এর ডাকে সচকিত হয় আলতাম।তার দিকে তাকিয়ে মৃদু হেসে বললো–
“কিছু না বউমনি।”
আম্বের আলতাফ এর কাছে এসে দাঁড়ায়।স্বাভাবিক গলায় বললো—
“আপনি খেয়েছেন?
“নাহ।”
“তাহলে যান।আমি খাবার বানিয়ে আনছি।”
আম্বের নিজের আর আলতাফ এর জন্য রুটি,আলু ভাজি আর অমলেট করলো।কাউচের উপর পা উঠিয়ে বসে আম্বের।বাচ্চাদের মতো একের পর এক কথা বলছে আর খাচ্ছে।আলতাফ নির্নিমেষ তাকিয়ে আছে।মন ভরে দোআ করছে যেনো এই ইট পাথরের ঘর কে আম্বের তার ভালোবাসা,মায়া,মমতায় এক ভালোবাসার ঘরে পরিণত করে।
আজ অনেক রান্না করেছে আম্বের।মাহাদ এর সব পছন্দের আইটেম।পুরো ডাইনিং টেবিল ভরে ফেলেছে সে।রান্না করতে করতে একদম ঘেমে নেয়ে একাকার।এখন আবার শাওয়ার নিতে হবে।আম্বের কিচেনের সব কাজ শেষ করে ঘরে যায়।
,
,
,
একটা লাইট ব্লু কালারের শাড়ি পড়েছে আম্বের।চুল খুলে ছড়িয়ে দিয়েছে।স্বপ্নমহল এর সামনের বিশাল বারান্দায় গিয়ে দাঁড়িয়ে আছে অধীর আগ্রহ নিয়ে কখন মাহাদ ফিরবে।অপেক্ষা করতে করতে মাথার উপর স্থির সূর্য পশ্চিম দিগন্তে তার পথ বাড়াতে শুরু করে।আম্বের কয়েকবার কল করেছিলো।কিন্তু মাহাদ রিসিভ করেনি।
চকিতে আম্বের মাহাদ এর গাড়ি দেখতে পায়।স্বপ্নমহল এ ঢুকতেই দৌঁড়ে দোতালার সিড়ির কাছে এসে দাঁড়ায় আম্বের।মাহাদ কে দেখেই তার বুকে পড়ে।আদুরে গলায় বললো—
“এতো দেরি করলেন কেন?
সে কখন থেকে অপেক্ষা করছি।”
আম্বের কিছু বুঝে উঠার আগেই মাহাদ এক ঝটকায় আম্বের কে সরিয়ে দেয়।হতভম্ব আম্বের উদ্ভাসিত দৃষ্টিতে কিছুক্ষন তাকিয়ে রইলো।মাহাদ এর চোখ মুখ দিয়ে যেনো অগ্নিনালা বেরোচ্ছে।ধম করে কাউচে গিয়ে বসে মাহাদ।বিরক্তিকর মুখভঙ্গী করে একহাতে মাথা চেপে ধরে।
আম্বের ত্রস্ত পায়ে মাহাদ এর কাছে এসে দাঁড়ায়।উদ্বিগ্ন গলায় বললো—
“কী হয়েছে মাহাদ!খারাপ লাগছে?
মাহাদ কোনো কথা বললো না।দুই হাতে মাথা চেপে ধরলো।অসহ্য যন্ত্রণা হচ্ছে তার মস্তিষ্কে।যেনো এখনই ফেটে সব বেরিয়ে আসছে।আম্বের কিছুক্ষন গভীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে মৃদু গলায় বললো—
“মাথায় যন্ত্রণা হচ্ছে আপনার!আমি ম্যাসেজ করে দেই।”
মাহাদ ঝট করেই এক লাথি মারে সামনে থাকা সেন্টার টেবিলে।ঝনঝন করে তা ভেঙে সারা ঘর তলিয়ে যায়।চোখ তুলে আম্বের এর দিকে তাকাতে ধক করে উঠে তার বুক।স্থির হয়ে আসে তার শরীর।মাহাদ এর উগ্রমূর্তি দেখে আঁতকে উঠে আম্বের এর প্রাণআত্না।
দুই চোখ দিয়ে যেনো আগুন ঝরছে মাহাদ এর।মাহাদ উঠেই আম্বের এর দু’বাজু চেপে ধরে।মেঘের মতো গর্জন করে বললো—
“এই সবকিছুর জন্য আপনি দায়ী।আমার জীবন টা বিষিয়ে তুলেছেন আপনি?চলে যান আপনি।চলে যান এখান থেকে।”
আম্বের এর দু চোখে অশ্রু ভরে আসে।নির্লিপ্ত চোখে তাকিয়ে আছে সে।
মাহাদ আবার গর্জে উঠে,বললো—
“কী হলো দাঁড়িয়ে আছেন কেন?চলে যান আমার সামনে থেকে।আমার জীবনে সকল অশান্তির মূল আপনি।”
আম্বের স্থিমিত গলায় বললো—
“আমার কী কোনো ভুল হয়েছে মাহাদ!কী করেছি আমি?
মাহাদ দাঁতের সাথে দাঁত চেপে ধরে উগ্র গলায় বললো–
“যাচ্ছেন না কেন আপনি!
আমার জীবনে আপনার কোনো প্রয়োজন নেই।শেষ তা।”
আম্বের ঝুমঝুম করে কেঁদে ফেলে।নিরীহ গলায় বললো—
“কী হয়েছে আপনার!এমন বলছেন কেন!আমি আপনাকে ভালোবাসি মাহাদ।”
মাহাদ অট্টহাসিতে ফেটে পড়ে।তপ্ত গলায় বললো—
“ভালোবাসেন।
যেই মেয়ে বিয়ের আগেই পরপুরুষের সাথে রাত কাটায় তার আবার ভালোবাসা!
হাউ ফানি মিস আম্বের!
আম্বের গমগমে গলায় বললো–
“মাহাদ!
এইসব কী বলছেন আপনি।”
মাহাদ জোরালো পায়ে হেটে নিজের ঘরে যায়।সেখান থেকে ফিরে একটা চেক হাতে দেয় আম্বের এর।স্থির গলায় বললো—
“নিন।এইটা ব্ল্যাঙ্ক চেক।আপনার সাথে যে রাত গুলো কাটিয়েছি তার মূল্য।যা ইচ্ছে বসিয়ে নিন।আর এই মুহূর্তে এই বাড়িতে থেকে চলে যান।”
আম্বের নিষ্প্রভ চোখে তাকিয়ে রইলো।তার নিজের চোখ আর কান যেনো আজ তাকে ধোঁকা দিচ্ছে।নরম গলায় বললো–
“কী হয়েছে মাহাদ! কেন এমন করছেন! আপনি তো জানেন আপনি ছাড়া আমার কেউ নেই।তাহলে কোথায় যাবো আমি!
মাহাদ সোজা বললো—
“আই ডোন্ট নো।কিন্তু এই বাড়ি থেকে আমার জীবন থেকে চলে যান।আপনার কোনো প্রয়োজন নেই আমার জীবনে।সো,আই সে গেট আউট।”
মাহাদ দমদম করে নিজের ঘরে চলে যায়।দরজা লক করে দেয়।ফ্লোরে বসে অঝোরে কাঁদতে থাকে আম্বের।সে মাহাদ এর প্রয়োজন ছিলো প্রিয়জন ছিলো না।তাহলে এতো ভালোবাসা, এতো বিশ্বাস সব মিথ্যে!হাউমাউ করে কাঁদতে থাকে আম্বের।আলতাফ সব দেখলেন।
আম্বের এর সামনে এসে বসলেন।নরম গলায় বললেন—
” এইসব তো একদিন হওয়ার ই ছিলো বউমনি।সূর্যকে যে স্পর্শ করবে সে তো পুড়ে ছারখার হবেই।তাতে সূর্যেয কিছু আসে যায় না।”
আম্বের অনুনয়ের গলায় বললো—
“চাচা,আপনি মাহাদ কে বলেন না।আমি তাকে ভালোবাসি।সে ছাড়া আমার কেউ নেই।কোথায় যাবো আমি?
“কিন্তু সে তো আপনাকে ভালোবাসে বউমনি।যার কেউ নেই তার আল্লাহ আছে।পৃথিবীতে উপর ওয়ালা কাউকে একা পাঠান না।আপনার জন্যও তিনি কাউকে না কাউকে পাঠিয়েছেন।এখন সময় তাকে খুঁজে নেওয়ার।কেন এখানে থেকে নিজের জীবন নষ্ট করছেন!
আম্বের এর চোখ বেয়ে ঝরছে শ্রাবণের ধারা।ধরা গলায় বললো—
“আমাকে তো নষ্ট করেই দিয়েছে মাহাদ।শূন্য করে দিয়েছে আমাকে।কী করে বাঁচবো আমি!
আলতাফ মাথা নিচু করে।সলজ্জ চোখ দুটো উঠিয়ে মৃদু গলায় বললো—-
“মাহাদ বাবা যা করেছে ঠিক করেনি।ছেলের মতো ভালোবাসি তাকে।তাই তো এতো অন্যায় করার পরও তাকে ছেড়ে যেতে পারছি না।কিন্তু আমি চাই আপনি চলে যান।নিজেকে বাঁচান বউমনি নিজেকে বাঁচান।”
আলতাফ নিজেকে ধরে রাখতে পারলেন না।তার চোখ দিয়ে জলপুকুরের অথৈ জল গড়িয়ে পড়তে লাগলো।কিন্তু তিনি চান না তা দেখে আম্বের নরম হয়ে যাক।তাই দ্রুত চলে যান সেখান থেকে।
আম্বের আবার কাঁপা পায়ে উঠে দাঁড়ায়।মাহাদ এর ঘরের দরজায় গিয়ে করাঘাত করতে থাকে।প্রস্ফুরণিত গলায় বললো—
“মাহাদ প্লিজ দরজা খুলেন।প্লিজ মাহাদ।আপনি ছাড়া যে আমার কেউ নেই।মাহাদ!
না দরজা খুললো না মাহাদ।ভেতর থেকে কোনো সাড়াও এলোনা।আম্বের ক্ষনকাল দরজার সাথে লেপ্টে দাঁড়িয়ে রইলো।তারপর!তারপর ধীরে ধীরে হাতের উল্টো পাশ দিয়ে চোখ মুছে নিলো।নরম পায়ে এগুতো থাকলো সিড়ির দিকে।
বুকের বা’পাশটা প্রচন্ড যন্ত্রণা হচ্ছে।শরীর বিবশ হয়ে আসছে আম্বের এর।কিন্তু আর যে সময় নেই।এই ঘর তার নয়।এই মানুষগুলোও তার নয়।তার প্রয়োজন ফুরিয়ে গেছে।
আম্বের স্বপ্নমহল এর বাইরে চলে আসে।হালকা বাতাসের শব্দ কানে আসতেই পেছন ফিরে তাকায় বারবার।এই বুঝি মাহাদ তাকে ডাকলো।কিন্তু সে সব এখন আর হবার নয়।এই জন্যই বুঝি মাহাদ এতোটা ভালোবেসে ছিলো তাকে।আজ তার আর কোনো প্রয়োজন নেই মাহাদ এর কাছে।ঘোলা চোখে কোয়ার্টার এর দিকে তাকাতেই দেখে রহিম দাঁড়িয়ে আছে।আম্বের চোখ ফিরিয়ে নেয়।পেছন ফিরে স্বপ্নমহল এর গেইট থেকে পুরো বাড়িটাকে আবার দেখে।সে তার সব স্বপ্ন,আশা,ভালোবাসা রেখে যাচ্ছে।রেখে যাচ্ছে তার হৃদয়টাও ওই হৃদয়হীন পুরুষের কাছে যার কাছে তার কোনো মূল্য নেই।আম্বের অস্ফুটভাবে বলে উঠে—
“আমি সব সময় চাইবো আপনি সুখে থাকেন।আমার জায়গায় অন্য কেউ আসুক আপনার জীবনে।ভালোবাসায় ভরিয়ে তুলুক আপনার জীবন।তাকে অন্তত ধোঁকা দিবেন না।”
আম্বের পা বাড়ায় সম্মুখদিকে।তার শাড়ির আঁচল সড়ক পথের ধূলোয় গড়াগড়ি খাচ্ছে।মৃদু বাতাসে অগোছালো চুল এসে পড়ছে মুখের উপর।প্রশ্বস্ত চোখের পাল্লা বেয়ে গড়িয়ে পড়ছে উষ্ণ জলের প্রস্রবণ।
মাহাদ এর বাড়ির আশেপাশের অনেকখানি জায়গা ফাঁকা।আম্বের উদ্ভ্রান্তের মতো হাঁটতে হাঁটতে বড় রাস্তায় চলে আসে।তার কানে ভেসে আসে কিছু শব্দ—
“প্রেমের নামের অভিনয় তুই ভালোই জানোস রে
নিঃস্ব করলি আমারে তুই এক নিমিষেই।”
আম্বের সেই শব্দগুলো শুনতে পেলেও তার মধ্যে কোন প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয় না।সে ধীর পায়ে উন্মনা হয়ে হেঁটে চলছে। পেছন থেকে কখন যে একটা বাইক এসে তাকে ধাক্কা দিলো সে বুঝতেই পারলোনা।ধাক্কা লেগে নিচে পড়ে যায় আম্বের।আর সেখানেই বসে রইলো।বাইকের ব্যক্তিটি বাইক থামিয়ে আলতো পায়ে পেছন ফিরে এসে তার হাত এগিয়ে দিলেন আম্বের এর দিকে।আম্বের মাথা তুলে চাইতেই দেখে লম্বা ফর্সা মতো এক সুঠামদেহী পুরুষ তার দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়েছে।আম্বের তার কম্পনরত হাত এগিয়ে দিতেই ব্যক্তিটি তা লুফে নেয়।আম্বের কে একরকম জোর করেই পিচঢালা পথ থেকে উঠিয়ে দাঁড় করায়।ব্যক্তিটি স্মিত হেসে বললো—
“হাই!
আই এম রিমেল।ইউ বিউটিফুল লেডি,হোয়াট ইজ ইউর নেইম?
আম্বের তার ঝাপসা চোখ জোড়া একবার খোলে আরেকবার বন্ধ করে ব্যক্তিটিকে ভালো করে দেখার চেষ্টা করে।
আম্বের ক্ষয়িষ্ণু গলায় বললো—
“আআপপনিইই!
চলবে,,,
(বিঃদ্রঃ
অনেকের মাহাদ এর আম্বের কে আপনি বলায় একটু ওড লাগে বিষয়টা।কিন্তু যারা আমার প্রথম গল্প থেকে পড়েছে তারা এই বিষয়টা খেয়াল করেছে আমার সব নায়কই নায়িকা কে আপনি করে বলে।ইভেন গল্পের অন্য অনেক বয়সে ছোট চরিত্রও কেও।বাস্তব জীবেন এইটা অকওয়াড।কিন্তু আমার ভালো লাগে এইটা।আপনি বলায় যেমন ভালোবাসা থাকে তেমনই বিনম্র শ্রদ্ধা আর সম্মান থাকে।কারণ আপন থেকেই আপনি😍😍।আমি মনে করি আরকি😊😊।
এর মধ্যে শুধু আমার আজরাহান প্রহর জুটি টাই আলাদা ছিলো।থাক না কিছু আলাদা😊😊।
হ্যাপি রিডিং☺☺)