বদ্ধ হৃদয়ের অনুভূতি পর্বঃ৪০

0
3450

#বদ্ধ_হৃদয়ের_অনুভূতি
#পর্বঃ৪০
লিখাঃতাজরিয়ান খান তানভি

ঝলমলে রোদ।সূর্যের তীর্যক রশ্মিতে ঘাস বিছানো মাঠে গোলাকার হয়ে বসে আছে মাহাদ,রিমেল আর তার বন্ধুরা।আলোচনা হচ্ছে সামনের সপ্তাহে অনুষ্ঠিতব্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান নিয়ে।সেখানে একটা ড্রামা প্লে হবে।শেক্সপীয়ারের “রোমিও জুলিয়েট”।মাহাদ সেখানে রোমিও এর চরিত্রে অভিনয় করবে।রোমিও এর কাজিন চরিত্রে থাকবে রিমেল।আর জুলিয়েট হবে তাদেরই ব্যাচমেট জিনিয়া।
আলোচনা শেষ।মাহাদদের ডিপার্টমেন্ট হেড তাকেই দলের লিডার করেছে।আচমকা সকলে মিলে মাহাদ কে গান গাওয়ার জন্য তাড়া দিতে লাগলো।মাহাদ প্রথমে ঘোর আপত্তি করলেও পরে রিমেলের জোড়াজুড়িতে রাজী হয়।

তাদের গানের মাঝেই এসে দাঁড়ায় গুটিকতক সিনিয়র স্টুডেন্ট।এরা ছাত্র নেতা।মাহাদ পলিটিক্স পছন্দ করে না।তাদের দেখেই উঠে দাঁড়ায় মাহাদদের ব্যাচ।

ছেলেগুলোর সাথে একটা মেয়েও আছে।আদ্রিতা খান।রাজনীতি যার রক্তে মিশে আছে।বাবার একমাত্র আদরের মেয়ে হওয়ায় ছোটবেলা থেকেই স্বাধীনচেতা।কলেজের সবাই এক নামে চেনে তাকে।যেকোনো ধরনের ঝামেলা হলে ছেলেদের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সমাধান করে তা।আদ্রিতাকে এর আগেও অনেকবার দেখেছে মাহাদ।কিন্তু এতো মানুষের ভীড়ে আজ প্রথম আদ্রিতার নজরে এলো মাহাদ।প্রসন্ন দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে মাহাদের দিকে আদ্রিতা।ঠোঁটের কোণে মিষ্টি হেসে হ্যান্ডশেক এর জন্য হাত বাড়ায় সে।মাহাদ বিলম্ব করে না।
ঝলমলে গলায় আদ্রিতার তার পরিচয় দেয়।মাহাদ জানায় সে আগে থেকেই সেইসব জানে।মাহাদ এর গানের গলার বেশ প্রশংসা করে আদ্রিতা।কথাবার্তার এক পর্যায়ে রিহার্সেলের কথা বলে আদ্রিতা থেকে বিদায় নেয় মাহাদ।
সেদিনের পর অনেকবার কথা হয় মাহাদ আর আদ্রিতার।

নির্দিষ্ট তারিখে অনুষ্ঠিত হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।মাহাদ এর অভিনয় ছিলো মনোমুদ্ধকর।সেইদিন থেকেই ছয় ফুট দুই ইঞ্চির সেই পুরুষের জন্য অদ্ভুত অনুভূতি জাগ্রত হয় আদ্রিতার মনে।তার সরু ভ্রু যুগলের নিচে থাকা সেই ঘন পল্লবে আবৃত গভীর চোখদুটির প্রতি মুহূর্তেই এক আকাশ ভালোলাগা কাজ করে।আদ্রিতার বেস্ট ফ্রেন্ড মিশ্মিয়া।তাকে পছন্দ করতো রিমেল।ঘটনাচক্রে একদিন তাদের সবার দেখা হয়।

অনুষ্ঠানের পর থেকে কারণে অকারণে মাহাদ এর সাথে সখ্যতা গড়ে উঠে আদ্রিতার।কিন্তু মাহাদ তাকে নিছক একজন জুনিয়র ছাড়া কিছুই ভাবেনি।কারণ মাহাদ এর লক্ষ্য ছিলো অন্য।ওলিজা মাহাদ কে ছেড়ে যাওয়ার পর আর বাবার মৃত্যুতে অনেকটা ভেঙে পড়ে মাহাদ।কিন্তু ধীরে ধীরে নিজেকে সামলে এগিয়ে যায় সামনে।মিডিয়া পাড়ায় তার বিচরণ শুরু হয়।মাহাদ এর বাবা ছোটখাটো আর্টিস্ট হওয়ায় তার কিছু চেনাজানা ছিলো।মাহাদ ধর্না ধরে বসে থাকতো একটা ছোট্ট চরিত্রের জন্য।মাঝে মাঝে পেয়েও যেতো।নিজের সবটা দিয়ে তা করতো মাহাদ সেই সাথে নিজের লেখাপড়া।উচ্চ শিক্ষার সাথে তাকে সমাজের উঁচু স্থানের মানুষ হতে হবে।দেখিয়ে দিতে হবে তার মাকে।

থার্ড ইয়ারের টেস্ট আসার আগ মুহূর্তে মাহাদ একটা বিগ বাজেটের ফিল্মে ছোট্ট রোল অফার পায়।সে আপ্রাণ চেষ্টা করে সেই রোল যথাযথভাবে প্লে করার।এর মধ্যে কলেজের অনুষ্ঠানে একটা উপন্যাস প্লে করারও অফার পায়।কিন্তু মাহাদ না করে দেয়।সে এখন বাড়তি ঝামেলা চায় না।
প্রোগ্রামে ঠিক করা হয় হুমায়ূন আহমেদ এর”কৃষ্ণপক্ষ” প্লে করা হবে।আর সেখানে মুহিব চরিত্র ঠিক করা হয় মাহাদ এর জন্য আর অরু আদ্রিতা।কিন্তু মাহাদ এর না তে রুষ্ট হয় আদ্রিতা।অপমানিত বোধ করে সে।আজ পর্যন্ত সে কোনো কিছুতেই না শুনতে পারে না।ক্ষেপে উঠে আদ্রিতা।কারো অবহেলা সে কখনো সহ্য করতে পারে না।

মাহাদ তার অভিনয়ে মুগ্ধ করে সবাইকে।এক্সামও দেয় ভালোভাবে।কিন্তু বিপত্তি বাঁধে রেজাল্টে।সব বিষয়ে ফেল আসে মাহাদ এর।মাহাদ এর মাথা কাজ করা বন্ধ করে দেয়।এমন কখনো হতেই পারে না।কিন্তু মাহাদ জানতে পারে কলেজের উঁচুস্তর থেকেই এমনটা করা হয়েছে।আর তা করেছেন আদ্রিতার বাবা মাহতাব খান।

মাহাদ কে কোনমতেই এক্সামে বসতে দিবে না।তার উপর মাহাদ এর কোনো কাজও আসছে না।মাহতাব তার ক্ষমতার জোরালো ব্যবহার করে।মেয়ের কোনো চাওয়াই সে অপূর্ণ রাখেনি হোক তা ন্যায় বা অন্যায়।মাহাদ প্রথমবার দেখা করে মাহতাব খানের সাথে।রাজকীয় আসনে বসে আছেন তিনি।প্রাসাদ সমতুল্য বাড়ি তার।মাহাদ কে অপছন্দ করার তেমন কোনো কারণ মাহতাব খান পেলেন না।শুধু একটাই সমস্যা তা হলো মাহাদ এর সামাজিক অবস্থান।মাহতাব খান তার ব্যবস্থা করলেন।তিনি মাহাদ কে একটা সুযোগ অফার করলেন।মাহাদ কে বিয়ে করতে হবে আদ্রিতাকে।তার স্বপ্ন পূরণে সাহায্য করবে মাহতাব খান।মাহাদ রাজী হয়নি।সে তার প্রতিষ্ঠা চায় কিন্তু নিজের বলি দিয়ে নয়।

আত্নসম্মান যখন ঘৃণিত তখন আত্নমর্যাদা বিদ্রুপ ছাড়া কিছু নয়।

মাহাদ এর এক্সাম চলে আসছে।আর কোনো কাজও সে পাচ্ছে না।একরকম কোনঠাসা হয়ে পড়ে মাহাদ।বাধ্য হয়ে মাহতাব খানের প্রস্তাবে রাজী হয় মাহাদ।তাদের এই বিয়ে সম্পর্কে খুব কম সংখ্যক মানুষ জানতো।বিয়ে হয় তাদের।কিন্তু আদ্রিতা কখনো মাহাদ কে স্বামী হিসেবে মানে না।তার জেদ ছিলো মাহাদ কে হারানো তা সে পেরেছে।

মাহাদ তার কাজ এবং পড়ালেখায় অভিনিবেশ করে।আদ্রিতার ব্যবহার ক্রমাগত রুক্ষ হতে শুরু করলো।ছেলে বন্ধুদের সাথে অবাধ মেলামেশা,পার্টি,হ্যাং আউট কোনো কিছুই থামলো না।মাহাদ এর মনে কখনো ভালোবাসা জন্মায়নি আদ্রিতার জন্য।মাহতাব খান মেয়ের কথা ভেবে অনেকটা সমীহ করতো মাহাদ কে।মিসেস খান ছেলের মতোই ভাবতো মাহাদ কে।মাহতাব খানের বদৌলতে অনেক ফিল্মে চান্সও পায় মাহাদ।
ক্রমশ তার ফেম ছড়িয়ে পড়তে লাগলো।দুই বছরে মাহাদ তার কাঙ্ক্ষিত সাফল্য অর্জনে অনেকটা এগিয়ে যায়।নিজের নিষ্ঠা,কাজের প্রতি একাগ্রতা আর তার ভেতরে সুপ্ত থাকা তুঁষের আগুন যেনো হঠাৎই জ্বলন্ত স্ফুলিঙ্গের মতো বিচ্ছুরিত হতে লাগলো।

আদ্রিতার প্রতি ছিলো মাহাদ এর দায়বদ্ধতা।কিন্তু তাও কেটে যায় যেদিন মাহাদ আদ্রিতাকে তারই সিনিয়র আরশের সাথে অন্তরঙ্গ অবস্থায় দেখে।নিজের স্ত্রীকে এইভাবে দেখেও শান্ত ছিলো মাহাদ।তার লক্ষ্য ছিলো শুধু নিজের প্রতিষ্ঠার প্রতি।

বছরের সেরা নবাগতার পুরষ্কার জিতে মাহাদ।সেই থেকে তার স্বর্নশিখরে আরোহন শুরু।আচমকা আদ্রিতা দূর্বল হতে থাকে মাহাদ এর উপর।তার সকল শুটিং স্পট,পার্টি এমনকি বাইরে কোথাও শুটিং এ গেলে সেখানেও একসাথে যাওয়ার অভিপ্রায় করে আদ্রিতা।
সুইজারল্যান্ডে শুভ্র আকাশ আর নীল জলরাশিরকে সাক্ষী রেখে মাহাদ কে প্রপোজ করে আদ্রিতা।সে চায় তাদের দাম্পত্য জীবন বাকি পাঁচটা দম্পতির মতো হোক।কিন্তু মাহাদ তা এক্সেপ্ট করে না।এক মাস নিরন্তর প্রচেষ্টা করে আদ্রিতা।কিন্তু তাতে কোনো কাজ হয় না।

একদিন একটা নতুন ফিল্ম সাইন করার জন্য একটা রেস্টুরেন্টে আসে মাহাদ।তার সাথে ছিলো বিখ্যাত ফিল্মমেকার আবরাহাম চৌধুরী।সেখানে এসে ঝামেলা পাকায় আদ্রিতা।কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে রাগে অগ্নিশর্মা আদ্রিতা নিজের গাড়ি নিয়ে বের হয়।
আদ্রিতা ডিপ্রেশনে ছিলো।আরশের সন্তানের মা হতে চলে ছিলো সে।তাই আদ্রিতা চেয়েছিলো মাহাদ এর নাম দেওয়া হোক তার অনাগত সন্তানকে।একজন সাইক্রিয়াটিস্ট এর সাথে দেখা করেই মাহাদ এর কাছে গিয়েছিলো আদ্রিতা।
রাগে,ক্ষোভে আর নিজের উপর অভিমানে বেপরোয়া গাড়ি চালাতে গিয়ে দূর্ঘটনার স্বীকার হয় আদ্রিতা।আদ্রিতার পেছনেই ছিলো মাহাদ।রক্তাক্ত অবস্থায় আদ্রিতাকে দেখে থম মেরে যায় মাহাদ।তার বুকের বা’পাশের যন্ত্রটা ধীরে ধীরে তার স্পন্দন কমিয়ে দিচ্ছে।সমস্ত শরীর যেনো প্রলীণ হতে থাকলো চোরা বালুচরে।মাহাদ নিজেকে জনমানবহীন মরুভূমিতে দেখতে পেলো।তার পায়ের নিচে মাটি নয় শুধু ঝরঝরে বালু।মাহাদ এর মনে হলো পা বাড়ালেই সে হারিয়ে যাবে সেই চোরাবালিতে।রুদ্ধশ্বাসে নির্নিমেষ তাকিয়ে আছে মাহাদ।আদ্রিতাকে কোলের উপর নিতেই বড় বড় নিঃশ্বাস টানতে থাকে সে।তার সমস্ত দেহ যেনো ভারি পাথরে পরিণত হয়েছে।অনেক করে চেয়েও নিজেকে নাড়াতে পারছে না আদ্রিতা।তার অশ্রুসিক্ত নয়ন দুটি মাহাদ এর দিকে কাতর হয়ে চেয়ে আছে।

কী হতো সবটা যদি স্বপ্ন হতো!কী হতো আরশ আদ্রিতাকে ধোঁকা না দিলে!কী হতো যদি সম্পর্কের শুরু থেকেই মাহাদ আর আদ্রিতা একে অপরকে ভালবাসতো!কী হতো এই বিয়েটাকে নিছক নিজেদের স্বার্থ না ভেবে একে অপরের হয়ে এগিয়ে গেলে!কী হতো আজ মাহাদ আদ্রিতাকে মেনে নিলে!কী হতো যদি এই বিয়েটাই না হতো!কী হতো যদি মাহাদ আর আদ্রিতার কখনো দেখাই না হতো!

অনেক প্রশ্ন।যার কোনো উত্তর নেই আজ।আদ্রিতার শ্বাস ভারি হতে থাকে।তার প্রাণসঞ্চিবণী শেষ হওয়ার পথে।অনেক কষ্টে নিজের ডান হাতের আঙ্গুল চালায় মাহাদ এর বুকে।আদ্রিতার তীক্ষ্ম ধারালো নখের আঁচড়ে ফিনকি দিয়ে রক্ত পড়তে থাকে মাহাদ এর বুক থেকে।অস্ফুটভাবে আদ্রিতা তার শ্বাস সঞ্চারণ করে প্রস্ফুরণ গলায় বললো—

“এএএইই ববুবুকেএএএ শুধু আমার নাআআম থাকবে।আআরর কাআআরো না।”

দীর্ঘশ্বাস নেয় আদ্রিতা।মাহাদ এর নিষ্প্রভ চোখ বেয়ে বয়ে চলছে নোনা জলের প্রস্রবণ।ততক্ষনে মাহতাব খান এসে দাঁড়ায় সেখানে।আবরাহাম চৌধুরী কল করে মাহতাব খান কে।নিজের একমাত্র কলিজাকে এইভাবে দেখে শান্ত থাকতে পারলেন না মাহতাব খান।পাগলের মতো আচরণ শুরু করেন।আদ্রিতা তাকে শান্ত হতে বলে।নিজের শেষ শ্বাসবিন্দু পুঞ্জিভূত করে আদ্রিতা তার বাবার কাছে শেষ আবদার করে।আর তা হলো মাহাদ এর নামের পাশে আর কোনো নারী নাম আসবে না।মাহাদ এর হৃদয়ের একমাত্র সম্রাজ্ঞী থাকবে সে।মাহাদ কখনো কাউকে ভালবাসবে না।নিজের সাথে সাথে সে মাহাদ এর হৃদয়ের জাগ্রত ভালোবাসার অনুভূতিকে ঘুম পাড়িয়ে দিয়ে যায়।আজ থেকে যা থাকবে তা হলো বদ্ধ হৃদয়ের অনুভূতি।

বুক ফুলিয়ে শ্বাস নেয় মাহাদ।আম্বের এর দিকে ঘুরে তাকাতেই দেখে প্রগাঢ় দৃষ্টি নিক্ষেপ করে উৎকর্ণ হয়ে আছে সে।আম্বের এর চোখে মুখে অদ্ভুত ভীতিকর ছায়া।মাহাদ এর অক্ষিপল্লব ভেজা।ধরা গলায় ধীরগতিতে বললো—

“স্যার এর মতো আপনারও কী মনে হয় আমি সত্যিই অপরাধী?

আম্বের চুপ করে রইলো।সে বুঝতে পারলো না কী জবাব দিবে।একজন বাবা কী করে মেয়ের এমন জেদ মেনে নিতে পারে!ভালোবাসা বিহীন কোনো সম্পর্ক টিকে না।তাহলে এমন বিয়ের কী মানে!

আম্বের অস্ফুট আওয়াজ করে বললো—

“শুধুমাত্র অন্যের সন্তান নিজের গর্ভে ধারন করেছিলো বলে আপনি আদ্রিতাকে মেনে নেননি?

মাহাদ দীর্ঘশ্বাস ফেললো।ম্লান গলায় বললো—

“আমি এতোটাও মহানুভব মানুষ নই যে অন্যের সন্তানের দায়ভার নেবো।”

“ভুল মানুষ করে।ভুল থেকে শিক্ষা নিয়েই মানুষ সঠিক পথে ফেরে।আপনি একটা সুযোগ দিতে পারতেন তাকে।”

মাহাদ দৃঢ় গলায় বললো–

“ভুল তাকে বলে যা অজান্তে হয়।নিজর ইচ্ছায় যে ভুল করা হয় তা হয় পাপ।আদ্রিতা নিজ মুখে আমাকে সত্য বলেনি।মিশ্মিয়া বলেছে।হয়তো এতোকিছুর পরেও আমি তাকে মেনে নিতাম।কিন্তু আদ্রিতা নিজের পাপ ঢাকতেও আমাকে ব্যবহার করতে চেয়েছে ভালবেসে নয়।”

আম্বের দীপ্ত গলায় প্রশ্ন ছুঁড়লো—-

“মিশ্মিয়া তো আদ্রিতার বেস্ট ফ্রেন্ড।বন্ধুর এতোবড় ক্ষতি কেন করলো সে?

মাহাদ এর উত্তরের অপেক্ষা না করে আম্বের গাঢ় গলায় আবার বললো—

“ও বুঝতে পেরেছি।মিশ্মিয়াও আপনাকে পছন্দ করতো।তাই সে চেয়েছিলো পথের কাটা সরে যাক।”

মাহাদ এর নিরব অভিব্যক্তিতে তেঁতে উঠে আম্বের।গমগমে গলায় বললো—

“সবাই স্বার্থন্বেষী।নিজের স্বার্থে কেউ স্বামী কে ধোঁকা দিয়েছে,কেউ বান্ধবী কে দিয়েছে আর কেউ নিজেকে দিয়েছে।”

মাহাদ অনুযোগের গলায় বললো—

“হয়তো।”

আম্বের ঝাঁঝানো গলায় বললো—

“হয়তো নয় মাহাদ।হয়েছে।আর এই জন্যই বুঝি আজ মিশ্মিয়া এই কাবিননামা আমাকে দিয়ে গেছে!

মাহাদ ধীর গলায় বললো—

“মিশ্মিয়া আর আমার মাঝে এখন কোনো কিছু নেই।আমরা শুধু বন্ধু।”

তাচ্ছিল্যপূর্ণ হাসে আম্বের।উপহাসমিশ্রিত গলায় বললো—

“বন্ধু!
হ্যাঁ।এই বন্ধুই একদিন আদ্রিতাকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছে।এই বন্ধুই একদিন আপনার কান বিষিয়ে তুলেছে আপনারই স্ত্রীর নামে।আর আপনিও।কথায় বলে “একেতো নাচুনি বুড়ি তার উপর ঢোলের বারি।”

ধমকে উঠে মাহাদ।তপ্ত গলায় বললো—

“কী বলতে চান আপনি?
মেনে নিতাম আদ্রিতাকে!ওর সন্তান সহ!আমি এতোটাও সুহৃদ নই।অন্যের বাচ্চাকে নিজের বাচ্চা বানানোর কোনো স্বাধ আমার নেই।”

আম্বের ছোট্ট নিঃশ্বাস ফেলে শান্ত গলায় বললো—

“আপনি চাইলেই আদ্রিতাকে তার বিরূপ জীবন থেকে ফিরিয়ে আনতে পারতেন।তাকে বুঝাতে পারতেন।কিন্তু আপনি নিজের স্বার্থ বুঝেছেন।ঠেলে দিয়েছেন তাকে অন্ধকারে।নিজের ক্যারিয়ার,ফেম,পপুলারিটির আগে কিছু দেখেন নি আপনি।আজ আমার সত্যিই মনে হচ্ছে আপনি একজন হৃদয়হীন পুরুষ।আর একজন হৃদয়হীন মানুষ কখনো কারো আপন হতে পারে না।”

মানুষ পৃথিবীর সবচেয়ে অদ্ভুত প্রাণি।সে ততক্ষনই নিজেকে সঠিক ভাবতে থাকে যতক্ষন না সে নিজের ভুলের শাস্তি পায়।

আম্বের এর কথায় উত্তেজিত মাহাদ বিছানার পাশে থাকা ফ্লাওয়ার ভাস সজোরে ছুঁড়ে মারে আম্বের এর দিকে।

চলবে,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here