#বদ্ধ_হৃদয়ের_অনুভূতি
#পর্বঃ৪১
লিখাঃতাজরিয়ান খান তানভি
একটা চায়ের দোকানে নির্জীব হয়ে বসে আছে মাহাদ।তার নিম্নমুখী অক্ষিযুগল থেমে থেমে কাঁপছে।বসন্তের এই সময়টা বড্ড বেইমান।দিনে উষ্ণতা ছড়িয়ে রাতে নামায় শীতলতা।মৃদু শীতল বায়ু মাহাদ এর টি শার্ট এর হাতা বেয়ে যেনো ভেতরে ঢুকে যাচ্ছে।সুড়সুড়ি অনুভূত হচ্ছে তার।ডান হাতে থাকা চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে উষ্ণ ঠোঁট দুটো চড়িয়ে বড় শ্বাস নেয় মাহাদ।
রাগের বসে ফ্লাওয়ার ভাস ছুঁড়ে মারে শুধুমাত্র নিজের অযাচিত রাগকে প্রশমিত করার জন্য।নিজের সমস্ত ক্ষোভ ঢেলে দেয় হাতের পেশিতে আর ছুঁড়ে মারে ফ্লাওয়ার ভাস।বারান্দার দরজা সরাসরি হওয়ায় তা গিয়ে আছড়ে পড়ে বারান্দার গ্রীলে।ঝনঝন করে ভেঙে গুড়ো গুড়ো হয় ভাস।গজগজ করতে করতে ফ্ল্যাট থেকে বেরিয়ে আসে মাহাদ।
পকেটে থাকা মোবাইল ভাইব্রেট করতেই তা নিয়ে চোখ বুলায়।রিমেল কল করেছে।রিসিভ করেই শ্রান্ত গলায় প্রশ্ন করে মাহাদ—-
“কেমন আছিস?
ঝিমঝিম গলায় প্রত্যুত্তর করে রিমেল।
“ভালো।কী হয়েছে তোর?
মাহাদ সব খুলে বলতেই খলবলিয়ে উঠে রিমেল,বললো—
“ওই চুলকানির কী কাজকাম নাই!ইচ্ছে করছে ওর কানের দুই আঙ্গুল নিচে একটা ঠাটিয়ে চড় মেরে আসি।”
অন্য সময় হলে হয়তো মাহাদ হাসতো।কিন্তু চোখের সামনে শুধু আম্বের এর চেহারা ভাসছে।দীর্ঘশ্বাস ফেলে নরম গলায় মাহাদ বললো—
“ঠিক ই করেছে।সত্য জানা দরকার আম্বের এর।হয়তো আজ এমনটা না হলে আমি কখনো তাকে আমার অতীত বলার সাহস পেতাম না।”
রিমেল অস্ফুট আওয়াজ করে বললো–
“হু।”
মাহাদ এর চুপ্পিতে রিমেল দৃঢ় গলায় বললো—
“আমার মনে হয় তোর এইবার সবটা বলা উচিত।এভাবে পালিয়ে থাকলে ভাবির বিপদ কমবে বৈকি বাড়বে।মি. খান গরু খোঁজা খুজছে তোদের।পেলেই হামলে পড়বে।তখন সত্য বলার সুযোগ পাবি না।”
মাহাদ রুদ্ধশ্বাসে দাম্ভিক কন্ঠে বললো—
” আগলে রাখবো তাকে আমি।যতক্ষন না আমি চাইব তার শরীরের একটা লোমও স্পর্শ করতে পারবে না স্যার।”
“কিন্তু…।”
“অনেক সহ্য করেছি আমি।এইবার তার পালা।”
রিমেল হতাশ গলায় বললো—
“এজ ইউর উইশ।তোর তো চিন্তা নেই।চারদিকে নারীর ছড়াছড়ি।আর আমাকে দেখ।ছ্যাকা খেয়ে ব্যাকা হয়ে আছি।ওই চুলকানি ডাক্তারনির পিছনে অযথা দুই বছর ঘুরঘুর করলাম।শেষে কিনা তোর পেছনে সিরিয়াল লাগানো।বাই গড, একবার বাগে পেলে ওকে আমি বুড়িগঙ্গার জলে ধুয়ে আনতাম।”
মাহাদ বিরক্তিকর গলায় বললো—
“আজাইরা প্রলাপ বাদ দে।”
“ভাইরে তুই তো হানিমুনে ব্যস্ত।আর আমি পুরাই শরৎচন্দ্রের দেবদাস।আমার বিয়েতে তোর নাতি নাতনি সহ আছিস।”
মাহাদ অধর কোণে হাসে।নাতি নাতনি!হ্যাঁ। সেও একদিন বুড়ো হবে।তার আশেপাশে কিলবিল করবে তার নাতি নাতনি।এক ডজন বাচ্চাকাচ্চা।মুখরিত থাকবে চারপাশ হাসির ঝলকানিতে।তার পাশেই সাদা চুল,ঝুলে পড়া চামড়া,ফোকলা দাঁত আর মোটা ফ্রেমের চশমায় বসে থাকবে তার প্রজাপতি।হ্যাঁ।এমনটাই স্বপ্ন দেখে মাহাদ।তার জীবনের অন্তিম সময় পর্যন্ত তার সুগন্ধি তার সাথেই থাকবে।তার সুগন্ধেই সে তার শেষ নিঃশ্বাস মেশাতে চায়।
মাহাদ এর ভাবনার তার ছিঁড়ে রিমেল এর তীক্ষ্ম স্বরে,বললো—
“কোথায় তুই?
আশেপাশে অনেক আওয়াজ শোনা যাচ্ছে।”
“বাইরে।”
রিমেল তপ্ত গলায় বললো—
“এমন অবস্থায় ভাবিকে একা রেখে বাইরে এলি কেন?
মাহাদ নিরব গলায় বললো—
“যাবো।রিঝুম কেমন আছে?
রিমেল আমুদে গলায় বললো–
“ভালো।ভাবিকে দেখতে চায়।”
মাহাদ উজ্জ্বল হাসে।বিগলিত গলায় বললো—
“রিঝুমকে বলিস একেবারে ওকে ফুপি বানিয়ে ওর ভাবিকে নিয়ে আসবো।
রাখি এখন।বাসায় যেতে হবে।”
“ওকে।বাই এন্ড টেক কেয়ার।কোনো সাহায্যের প্রয়োজন হলে বলিস।”
মাহাদ ঠোঁট চিপে বললো–
“ওকে।”
কল কেটে রাস্তার দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে মাহাদ।সারিবদ্ধ গাড়ি ধেয়ে চলছে আপন গতিতে।হেডলাইটের আলোতে দৃশ্যমান পথ।চোখ ফেরায় মাহাদ।অবসাদ ঘিরে ধরেছে তাকে।সামনের বেঞ্চিতে বসে আছে কিছু মধ্য বয়স্ক লোক।তারা কিঞ্চিৎ বিস্মিত চোখে দেখছে মাহাদ কে।অপ্রস্তুত হয় মাহাদ।সেখান থেকে চোখ নামিয়ে দোকানের ভেতরে বসা দোকানদারের দিকে চোখ নিবদ্ধ করে মাহাদ।তার মানসপটে ভেসে উঠে সেই কলেজের নির্বিঘ্নে কাটানো দিনগুলো।চায়ের দোকানে আড্ডা,হুটহাট বন্ধুদের আবদারে ঠ্যাটানো গলায় গান,এক কাপ চা তিন বন্ধু মিলে খাওয়া।রেস্টুরেন্টে বসে তিনজনের খাবার এক জনেই সাবাড় করা,কার আগে কে খাবে।বন্ধুমহলে সমাদৃত ছিলো মাহাদ।ঝামেলা মুক্ত স্বাধীন জীবন।ছিলো না কোনো পিছুটান।
কিন্তু হঠাৎ করেই সব বদলে গেলো।ছন্নছাড়া জীবন হয়ে গেলো তার।আদৌ কী বিভীষিকাময় এই জীবনের সমাপ্তি ঘটবে?
মাহাদ জানে না।
গ্রামাঞ্চল হওয়ায় শীতের প্রকটতা কমতেই সেখানে মিলাদ মাহফিল এর আয়োজন করা হয়।দূর গ্রাম থেকে মানুষ আসে।কেউ পায়ে হেঁটে তো কেউ ট্রাক,সি এন জি করে।মিষ্টি একটা কন্ঠে মহান আল্লাহ পাকের রহমতের বার্তা ভেসে আসছে।মাহাদ উঠে দাঁড়ায়।একজন লোককে জিঙ্গেস করতেই সে জানায় এখান থেকে কয়েক মিনিটে দূরের একটা স্কুল মাঠেই এই মাহফিল এর আয়োজন করা হয়েছে।মাহাদ এর ইচ্ছে হলো সেখানে যেতে।পরক্ষনেই মনে পড়ে আম্বের এর কথা।একটা দীর্ঘ হতাশ নিঃশ্বাস ফেলে পা বাড়ায় তার প্রজাপতির সন্ধিস্থলে।
,
,
,
ফ্ল্যাটে প্রবেশ করতেই চকিতে মাহাদ অনুভব করে একটা তেলে ভাজা ঘ্রাণ ভেসে আসছে।তটস্থ হয়ে দরজা বন্ধ করে ভেতরে আসে মাহাদ।
সামনেই সুশ্রী বদনের এক নারী তার অধরের স্মিত হাসির ঝলকে ঝলসে দেয় মাহাদ এর চোখ।
কপট রাগি গলায় মাহাদ বললো—
“রান্না ঘরে কী করছেন আপনি?
আম্বের মিচকি হেসে ফিচেল গলায় বললো—
“মাংকি ডান্স করছি।দেখবেন?
মাহাদ রাগি চোখে তাকিয়ে অসহিষ্ণু গলায় বললো—
“আপনাকে রান্না ঘরে যেতে বাড়ন করেছি।কেন গেলেন?
আম্বের হাতের প্লেট সামনে এগিয়ে দিয়ে শান্ত ও আমুদে গলায় বললো—
“খাবেন?
মাহাদ শক্ত গলায় নাকোচ করলো।লম্বা লম্বা পা ফেলে বেড রুমে গিয়ে বিছানায় বসলো।আম্বের দরজায় এসে তীক্ষ্ম চোখে কিছুক্ষন চেয়ে থাকে।মাহাদ এর হেলদোল না দেখে কাছে এসে মাহাদ এর পায়ের উপর বসে।মাহাদ এখনো বিরস মুখভঙ্গি করে রেখেছে।আম্বের মাহাদ এর চুলে হাত গলিয়ে কিছু সময় চুল নেড়ে দেয়।আম্বের এর শরীরের মিষ্টি সুবাসে ঝনঝনিয়ে উঠে মাহাদ এর দেহপিঞ্জর।মাহাদ এর ললাটে উষ্ণ চুম্বন করে আম্বের।এক মুহূর্তেই মাহাদ এর সকল রাগ,অভিমান,অবসাদ এর অবসান হয়।মিষ্টি হেসে ঝলমলে গলায় আম্বের বললো—
“এতো রাগ কেন আপনার মি.ফিল্মস্টার?
মাহাদ প্রত্যুত্তর করলো না।নির্লিপ্ত তার চাহনি।আম্বের নিজের ঠোঁট কামড়ে থমথমে গলায় বললো—
“কোননোদিন তো এই রাগের তোড়ে আমাকেই মেরে ফেলবেন।”
মাহাদ এক হাত দিয়ে আম্বের এর কোমর হালকা চেপে ধরে যাতে সে পড়ে না যায়।আম্বের এর দিকে তাকিয়ে দৃঢ় গলায় বললো—
“আমি রাগি হতে পারি কিন্তু পাগল নই।যে নিজের হাতে নিজের প্রাণ কেড়ে নিবো।”
আম্বের ঠোঁট চেপে মাহাদ এর দিকে পূর্ণ নজরে তাকিয়ে রইলো।আচমকা ঝুমঝুম করে বললো—
“ওই মিশ্মিয়া যেনো আর কখনো আমার বাসায় না আসে।”
মাহাদ ভ্রু কুঁচকে গম্ভীর গলায় বললো–
“কেন?
আম্বের নাকের ডগা ফুলিয়ে বিতৃষ্ণা গলায় বললো—
“পরের স্বামীর দিকে এতো কিসের নজর তার!রিমেল ভাইয়া এতো ভালোবাসে তাও সবছেড়ে আপনার পিছেই পড়তে হলো!
আর একবার আমার স্বামীর দিকে তাকালে ওর চোখ তুলে ডাংগুলি খেলবো।”
মাহাদ প্রগাঢ় দৃষ্টিতে দেখছে আম্বের কে।আম্বের এর উষ্ণ নিঃশ্বাস আছড়ে পড়ছে মাহাদ এর অধরে।স্মিত হাসে মাহাদ।ফিচেল গলায় বললো—
“এতো হাইপার হয়ে যাচ্ছেন কেন?
আম্বের ভ্রু নাচিয়ে চোখ মুখ কুঁচকে বললো—
“হাইপার এর কী আছে!আমি আদ্রিতা নই।পর পুরুষের প্রতি আসক্তও নই।তাই আমার স্বামীর দিকে নজর দিলে আস্ত গিলে নিবো ওই মিশমিশ পিশপিশ কে।”
আম্বের এর বোকা বোকা কথায় মৃদু ছন্দে হাসে মাহাদ।ঠোঁট গুজ করে বললো—
“যত যাই হোক,মিশ্মিয়া আপনার অনেক খেয়াল রেখেছে।”
আম্বের ঝামটা মেরে বললো—-
“একদম ওই বট তলার পেত্নির নাম নিবেন না আপনি।আমি আর তার কাছে চেকাপ করাবো না।”
মাহাদ চোখে হেসে শান্ত গলায় বললো—
“নাম নিলে কী করবেন?
“সুপার গ্লু লাগিয়ে দিবো আপনার ঠোঁটে।বুঝলেন ফিল্মস্টার।”
মাহাদ ছোট্ট নিশ্বাস ফেলে বললো—
“ওকে।কিন্তু আপনি আর রান্না ঘরে যাবেন না।যা লাগবে আমাকে বলবেন।”
“আচ্ছা।”
রাতের অন্ধকার কাটিয়ে ভোরের সূর্য নতুন দিনের সূচনা নিয়ে আসে।জীবন অতিক্রান্ত হয় হাসি কান্নার মাঝেই।সুখ,দুঃখ একে অন্যের পরিপূরক।সুখ না থাকলে যেমন দুঃখের আভাস বোঝা যায় না তেমন দুঃখ না থাকলে সুখের ভাব ঠিক জমে না।জীবনে ঝড় আসবেই।অকুলপাথারে নিজেকে ভাসিয়ে না দিয়ে দৃঢ় হতে হবে।ইউনুস (আঃ) চল্লিশ দিন মাছের পেটে থেকেও আল্লাহ তা’আলার উপর ভরসা হারান নি।তার বিশ্বাস,একাগ্রতা,ইবাদাত তাকে তার পরীক্ষায় উত্তীর্ণ করেছেন।
,
,
,
রাতের নিভু নিভু তারার মাঝে এক ফালি চাঁদ।নিকষ আঁধারেও যেনো ভরা পূর্নিমার আলো।মৃদু শীতল বেপরোয়া পবন।তাতে আছে এক প্রশান্তি।নিস্তব্ধ চারপাশ।ঘুমন্ত নগরীর কোথাও কোনো শব্দ নেই।ঝিঁঝির আওয়াজ শোনা যাচ্ছে।এক অদ্ভুদ সমীকরণ মানুষের জীবনের সাথে ঝিঁঝি পোকার।শরীরের অর্ধাংশে আলো নিয়ে ঘুরে বেড়ায় ঝিঁঝি পোকা।কাকে আলোকিত করতে!নিজেকে নাকি অন্ধকারকে!
তেমন মানুষও জানে না সে কী করছে!কেন করছে! কার জন্য করছে!
এক পা ফ্লোরের সাথে মিশিয়ে অন্য পায়ের হাঁটু ভেঙে রেখেছে মাহাদ।সেই পায়ের উপর মাথা রেখে মাহাদ এর বুকের সাথে লেপ্টে আছে আম্বের।মাহাদ দু হাতে জড়িয়ে রেখেছে তাকে।স্বশব্দে মাহাদ বললো—
“আপনি আমাকে ক্ষমা করেছেন তো প্রজাপতি?
বারান্দার গ্রীল ভেদ করে হুরহুরে এক ঝটকা বাতাস এসে কানে লাগে আম্বের এর।আম্বের এর শরীর ঈষৎ কেঁপে উঠতেই মাহাদ তার হাতের বাঁধন শক্ত করে।মৃদু গলায় আম্বের বললো–
“অনুতাপ মানুষের সবচেয়ে বড় সাজা।আপনি নিশ্চয়ই আপনার ভুল বুঝতে পেরেছেন?
মাহাদ নির্বিকার গলায় বললো—
“হ্যাঁ।”
আম্বের মৃদু হাসে।জিঙ্গাসু গলায় বললো—-
“আদ্রিতার বাবা তাকে খুব ভালোবাসতো তাই না?
“নাহ।এখনো বাসে।”
আম্বের চোখের পাল্লা প্রশস্ত করে বললো—
“আরশকে কোথায়?
“আদ্রিতার মৃত্যুর খবর শুনে আরশ আর কখনো দেশে ফেরেনি।”
আম্বের উৎসুক গলায় প্রশ্ন করলো—-
“আদ্রিতার বাবা তার সন্তানের কথা জানে?
মাহাদ নির্বিকার গলায় বললো—-
“হ্যাঁ।কিন্তু স্যার জানে ওই বাচ্চা আমার ছিলো।”
আম্বের জোর গলায় প্রশ্ন ছুঁড়ে,,,
“আপনি কেন বলেন নি সত্য?
আম্বের এর দিকে শ্রান্ত দৃষ্টি রেখে মাহাদ বললো–
“স্যার আদ্রিতাকে খুব ভালোবাসতেন।আমি চাইনি আদ্রিতার মৃত্যুর পর তার সম্পর্কে কোনো খারাপ ধারণা জন্ম নেক স্যার এর মনে।”
“তাই সে আপনাকে মারতে চায়?
মাহাদ কঠিন গলায় বললো—
“নাহ।সে আমাকে নয় আমার প্রাণ কে মারতে চায়।আমাকে শেষ করতে চাইলে তো সে অনেক আগেই পারতো।”
আম্বের নিষ্প্রভ চোখে তাকিয়ে কাতর গলায় বললো—
“উনি আমাকে মেরে ফেলবেন মাহাদ?
মাহাদ শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আম্বের কে।দীপ্ত গলায় বললো—
“আপনাকে ছুঁতে পর্যন্ত দিবোনা আমি তাকে।”
“আমাকে ভালোবাসেন মাহাদ?
“আপনার এখনো বিশ্বাস হয় না?
“কেন?
মাহাদ প্রসন্ন গলায় বললো—
“আমার পাঁজরের হাড় দিয়ে হয়তো আপনাকেই বানিয়েছে বিধাতা।হয়তো আমার বুকের বা’পাশের যন্ত্রটায় আপনারই নাম লিখা।হয়তো আমার এই বদ্ধ হৃদয়ের অনুভূতি আপনিই।”
মাহাদ দু হাতে আম্বের কে কোলে তুলে নেয়। আম্বের আলতো করে তার মাথা হেলিয়ে দেয় মাহাদ এর গায়ের সাথে।অনুযোগের সুরে মাহাদ বললো—
“সরি।”
আচমকা মাহাদ এর মুখে সরি শুনে আম্বের বললো—
“কেন?
মাহাদ বিরস মুখে বললো—
“আপনার বাবাকে কথা দিয়েছিলাম আপনার স্টাডি কমপ্লিট করাবো।কিন্তু স্যার,মিসেস শেখ আর ফাহাদ এর কারণে সব এলোমেলো হয়ে গেলো।”
মাহাদ আম্বের কে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে পাতলা চাদর টেনে দেয়।ফাল্গুন এর ফাগুন হাওয়ায় ঈষৎ কাঁপন তো হয় ই।মাহাদ অনেকটা ঝুঁকে আম্বের কপালে চুমু খায়।দীপ্ত হেসে আম্বের বললো—
“”এই জন্য বুঝি আপনার বাবা হতে ইচ্ছে হলো!
“লজ্জা দিচ্ছেন?
“বেহায়া পুরুষের আবার লজ্জা!
মাহাদ ঝলমলে হেসে বললো—
“আপনার আমাকে বেহায়া কেন মনে হয়।আপনার প্রেগন্যান্সির পর কিন্তু একবারো আপনাকে হাত লাগাই নি আমি।যদি বেহায়াই হতাম তাহলে হানিমুনে এসে একটা রাতও আপনাকে ঘুমাতে দিতাম না।”
আম্বের লাজুক হেসে সলজ্জ গলায় বললো—
“যাহ,নষ্ট পুরুষ।”
“আরে বাপরে!
বেয়ায়া পুরুষ,নষ্ট পুরুষ,হৃদয়হীন পুরুষ!আর কিছু?
পুরুষ না হয় বুঝলাম।কিন্তু বাকি গুলো!
আম্বের ব্যস্ত হয়ে বললো—
“ওগুলো আপনার মাথা।কুটনা পুরুষ।”
মৃদু ছন্দে হেসে উঠে মাহাদ।ঘাড় নিচু করে দীর্ঘ সময় ধরে চুমু খেলো আম্বের এর ঠোঁটে।
“চিলতে রং,ধূসর হয়ে নামিয়েছে আজ সন্ধ্যা
ভুলগুলো সব,সুখ হয়ে,হয়ে যাক স্মৃতিগন্ধা।”
চলবে,,,
(বিঃদ্রঃ
অসম প্রেম কে যারা হরর গল্প ভেবেছেন তাদের জন্য এক ট্যাংকি সমবেদনা😆😆😆😆😆)