বৃষ্টিস্নাত ভোর পর্বঃ২১

0
4921

#বৃষ্টিস্নাত_ভোর
#পর্বঃ২১
লিখাঃতাজরিয়ান খান তানভি

বিশাল আকাশ জুড়ে তারকারাজির ছড়াছড়ি।যেনো মনে হচ্ছে নিমেষ কালো শাড়িতে হিরে খচিত।রূপালি চাঁদের আলোয় চন্দ্রাবতী যেনো ধরনীর বুকে তার অস্তিত্বের আলোড়ন তৈরি করছে।ছাদের বাউন্ডারি দেয়ালে হাত রেখে নির্লিপ্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে প্রহর।অন্ধকার তমসা যেমন আমাদের একাকীত্বে স্বাধ আস্বাদন করায় তেমনি নিজেকে নিয়ে ভাববার অফুরান সময় দেই।নিস্তব্ধতা এক ধরনের মায়া থাকে।নিস্তব্ধতা মানুষ নিজেকে হাতড়ে বেরায়,খুজে ফিরে নিজের অস্বিত্ব।

ঘাড়ে উতপ্ত নিঃশ্বাস আর কোমড়ে উষ্ণ ছোয়ায় প্রহর বুঝতে পারে আজরাহান এর উপস্থিতি।পিঠের উপর ছড়ানো চুলগুলো সরিয়ে প্রহর এর ঘাড়ে চিবুক রাখে আজরাহান।কোনো রকম বিচলিত না হয়ে স্থবির হয়ে দাড়িয়ে থাকে প্রহর।প্রহর এর দিক থেকে কোনো রকম সাড়া না পেয়ে হালকা ঘাড় বাকিয়ে নিজের আর্দ্র ঠোঁটের স্পর্শ একে দেয় প্রহর এর গলায়।প্রহর এক নিঃশব্দ শ্বাস ফেলে।ভাবুক গলায় শান্ত ভাবে বলল–

“কেনো গিয়েছিলেন আপনি কুহুকপুর??

আজরাহান সোজা হয়ে দাড়ায়।কোমড়ে হাত রেখেই ওকে ঘুড়িয়ে দাড় করায়।আজরাহান নির্বাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখে প্রহর এর অক্ষিপল্লব ভিজে আছে।ছলছল করছে অথৈই সাগর।এখনি যেনো জলোচ্ছ্বাস শুরু হবে।ব্যতিব্যস্ত গলায় আজরাহান প্রশ্ন করলো–

“কী হয়েছে তোর!!কাঁদছিস কেনো??

ঝরঝর করে কেঁদে উঠে প্রহর।আজরাহান এর এক হাত নিজের দু হাতে আবদ্ধ করে অনুনয়ের স্বরে বলল–

“আপনি আর কখনো যাবেন না সেখান।কখনো না।”

আজরাহান ওর হাত ছাড়িয়ে নিজের দুই হাতের আজলায় প্রহর মুখ টা একটু উচু করে ধরে ওর কপালে চুমু খায়।শান্ত ও স্মিত গলায় বলল–

“যাবো না।
কিন্তু তার আগে তুই বল তুই কী করে বুঝলি আমি কুহুকপুর গিয়েছি!!
তুই কী সেখানে কখনো গিয়েছিলি??

প্রহর কান্না থামায়।কিছুক্ষন পর পর ফুপিয়ে উঠে।নিজেকে যথাসাধ্য শান্ত করে।নিশ্চল অক্ষিযুগল নিবদ্ধ করে আজরাহান এর দিকে।একরাশ প্রশ্নবিদ্ধ ওই নেত্রযুগল প্রহর এর দিকে কৌতূহলী হয়ে তাকিয়ে আছে।প্রহর চোখ নামিয়ে নেয়।আজরাহান আবারো হালকা উচু গলায় প্রশ্ন করে–

“কিরে বল!!
কী করে বুঝলি তুই!!
এই তোর গ্রামের বাড়ি কী কুহুকপুর!!

প্রহর ধুম করে মাথা উচিয়ে আজরাহান এর দিকে বিস্মিত চোখে তাকায়।শুকনো গলায় ঢোক গিলে নেয়।পাশ কাটিয়ে চলে যেতে চাইলে আজরাহান প্রহর এর হাত টেনে ধরে।প্রদৃপ্ত গলায় আজরাহান আবার বলল–

“আমি তোকে কিছু জিঙ্গেস করেছি!!

প্রহর আর্দ্র গলায় শান্তভাবে বলল–

“আমি ঘুমাবো।”

আজরাহান প্রহর এর হাত ছেড়ে দেয়।গুটি গুটি পায়ে প্রহর নিচে নেমে আসে।আজরাহান ছাদের কার্নিশে দাড়িয়ে একটা বাউন্ডারি গ্রীলের উপর উঠিয়ে আকাশের দিকে নিস্পলকভাবে তাকিয়ে থাকে।

“এতো রাতে ছাদে!!

নন্দিতার নরম স্বরে আজরাহান ফিরে তাকায়।স্মিত হাসি টেনে বলল–

“তুমি এতো রাতে এখানে!!

“প্রহর কে দেখে আসলাম।”

“ও তো চলে গিয়েছে।”

“দেখেছি।”

আজরাহান পিঠ ঠেকিয়ে বুকে হাত ভাজ করে দাড়ায় রেলিং এ।নন্দিতা আজরাহান এর দিকে মুখ করে দাড়ায়।পিনপিনে বাতাস বইছে।ছাদের কোনায় লাগানো রজনীগন্ধা ফুলের গাছ থেকে এক অকৃত্তিম ঘ্রান ভেসে আসছে।চাঁদৈর উজ্জর আলোয় নন্দিতার চোখের জিঙ্গাসু দৃষ্টি আজরাহান এর চোখ এড়ায় নি।আজরাহান ঘুড়ে দাড়ায়।গাঢ় গলায় বলল–

“কিছু বলবে ভাবী??

নন্দিতা ছোট্ট করে হাসে।আর শান্ত গলায় বলল–

“হুহ।”

“বলো।”

নন্দিতা চোখে হাসে।নরম গলায় বলল–

“প্রহর কে তুমি….।”

নন্দিতার কথা শেষ হওয়ার আগেই আজরাহান প্রতপ্ত গলায় বলল–

“আমি ওকে ভালোবাসি।”

আজরাহান ম্লান হাসে।এক গাঢ় নিঃশ্বাস ছেড়ে আবার বলল–

“শুধু ভালোবাসি বললে ভুল হবে।ও আমার আসক্তি।যদি শুধু ভালোবাসা হতো তাহলে গত ছয় মাসে ও আমাকে রিক্তহস্তে ওর হৃদয়ের বদ্ধদ্বার থেকে যতবার ফিরিয়ে দিয়েছে আমি অনেক আগেই ওর পথ থেকে সরে দাড়াতাম।কিন্তু ও যে আমার নেশা।আমার অস্থি মজ্জায় মিশে আছে ওর সত্ত্বা।ওকে ছাড়া আমার অস্তিত্ব প্রলীণ হয়ে যাবে।”

নন্দিতা স্মিত হাসে।বাতাসের স্নিগ্ধতায় আরো বেশি মায়াময় হয়ে উঠেছে রাতের অন্ধকার।নন্দিতা সরস গলায় বলল–

“তুমি তো বেশ রোমান্টিক !!
বেশ গুছিয়ে কথা বলো।তাহলে তোমার ভাইয়া টা এমন হাম্বো কেন??

কথা শেষ করেই নন্দিতা ভ্রু নাচায়।কপট অভিমান দেখায় তার চেহারায়।আজরাহান নন্দিতার দিকে তাকিয়েই গা দুলিয়ে হেসে উঠে।ফিচেল গলায় বলল–

“ভাইয়া কে ছেড়ে যদি আমার সাথে লাইন মারার চেষ্টা করো তাহলে বুঝবে কী করে আমার ভাই কতোটা রোমান্টিক!!

নন্দিতা আজরাহান হাতে একটা দূর্বল ঘুষি মেরে হাসি হাসি গলায় বলল–

“পাজি কোথাকার!!

“একদম না।ভাইয়া কিন্তু বেশ রোমান্টিক।কিন্তু তোমাকে একটু পালিশ করে নিতে হবে আর কি।এতোদিনে সামান্য মরিচা পড়ে গিয়েছে আর কি।অবশ্য টিপস লাগলে আমার কাছ থেকে নিতে পারো।”

“কোনো দরকার নেই।”

“তাহলে এখন যাও।আমার মনে হয় না ভাইয়া এখনো ঘুমিয়েছে।”

“একটা দিবো।”

আজরাহান আওয়াজ করে হেসে উঠে।নন্দিতা যেতেই ফিচলে হাসি হাসে আজরাহান।
প্রহর এর কথা মনে হতেই অধর কোনে দীপ্ত হাসে আজরাহান আর বলল–

“আমার জন্ম,আমার শ্বাস
আমার অস্থিমজ্জায় শুধু তোমার বাস
আমার বিক্ষিপ্ত চিত্তের একমাত্র ভক্তি
তুমি আমার প্রেম,ভালোবাসা,আমার আসক্তি।””

—তানভি
,
,
,
ঘুটঘুটে অন্ধকার।নিঃশব্দে পা ফেলে এগিয়ে যাচ্ছে নুরাইসা।বাড়ির পিছনের দরজাটা মৃদু ক্যাচ শব্দে খুলে বাইরে বেরিয়ে আসে নুরাইসা।বাড়ির ব্যাক ইয়ার্ডে ছোট ছোট গাছপালা লাগানো।নাবীন খান একবার শখ করেছিলেন পদ্মফুল চাষের।বাড়ির পিছনটায় চেষ্টাও করেছিলেন।কিন্তু তার সে আশায় গুড়েবালি।নিভুনিভু পায়ে অতি সাবধানে পা ফেলছে নুরাইসা যেনো যাত্রা পথে কোনো বিঘ্ন না ঘটে।ব্যাক ইয়ার্ডের দক্ষিন পাশটায় একটা আমগাছের নিচে দাড়িয়ে আছে কেউ।আবছা আলোর তার মুখটা স্পষ্ট না হলেও অবয়ব সম্পূর্ন দৃশ্যমান।আর তা চক্ষুগোচর হতেই পায়ের চলার বেগ বাড়ায় নুরাইসা।অবয়বটি কাছে আসতেই তড়িত গতিতে তার বুকে ঝাপিয়ে সে।দু হাতে ঝাপটে কিছুক্ষন স্থির হয়ে থাকে।রাগ ও অভিমান মিশ্রিত গলায় বলল–

“আপনি এতো নিষ্ঠুর কেনো!!!
একটুও মনে পড়লো আমায়??

মারশিয়াদ হালকা হেসে স্বাভাবিক গলায় বলল–

“কেমন আছেন মিষ্টি??

নুরাইসা মারশিয়াদ কে ছেড়ে।চোখ মুখ কুচকে আহ্লাদী গলায় বলল–

“কথা বলবো না আমি আপনার সাথে।আপনি পাষান।”

মারশিয়াদ ওর হাত দিয়ে নুরাইসার ডান হাত নিয়ে তাতে চুমু খায়।চোখে হেসে বলল–

“তাহলে আসতে বললেন কেনো!!চলে যাবো??

নুরাইসা বুকের উপর হাত ভাজ করে ঘুড়ে দাড়িয়ে কপট রাগ দেখিয়ে বলল–

“চলে যান।”

মারশিয়াদ ওকে পিছন দিক থেকে জড়িয়ে ধরে স্নিগ্ধ ও স্বাভাবিক গলায় বলল–

“চলে গেলে কিন্তু আর আসবো না।”

বিদ্যুত বেগে ঘুড়ে মারশিয়াদ এর বুকে কয়েকটা নিস্প্রভ ঘুষি মেরে ছলছল চোখে আর্দ্র গলায় বলল–

“কোথায় ছিলেন এই দু’দিন আপনি!!
কতোবার কর করলাম।মোবাইল সুইচ অফ করে রেখছেন।নিজেও তো একবার কল করেন নি।”

“সরি মিষ্টি।জরুরী কাজ ছিলো তাই শহরের বাইরে যেতে হয়েছে।আর সেখানে নেটওয়ার্কেরও সমস্যা।তাই যোগাযোগ করতে পারি নি।”

নুরাইসা চোখের জল আর নাকের জল এক করে ফেলেছে।নাক টানতে টানতে কাঁদো কাঁদো স্বরে বলল–

“আর কখনো যাবেন না আমাকে ছেড়ে।তাহলে আমি আর কখনো আপনার সাথে কথা বলবো না।”

কথা শেষ করেই আবারও বুকে পড়ে মারশিয়াদ এর।মারশিয়াদ আলগোছে নুরাইসা কে দু হাতে আবদ্ধ করে।সরল গলায় বলল–

“যাবো না।ট্রাস্ট মি।
আচ্ছা এখন বলেন এতো রাতে আমাকে এখানে কেনো আসতে বললেন??

“প্রেম করতে।”

নুরাইসা ফিক করে হেসে দেয়।মারশিয়াদ স্মিত হেসে একটা ছোট্ট শ্বাস ফেলে। বিরস গলায় বলল–

“আমার কী এখন লুকিয়ে লুকিয়ে প্রেম করার বয়স আছে!!!

“কেনো প্রেম করতে কী বয়স লাগে না কী!!আর আপনি কী বুড়ো হয়ে গিয়েছেন না কী!!!

মারশিয়াদ নুরাইস কে সোজা করে দাড় করিয়ে হালকা ঝুকে ওর নাকে নাক ঘষে বলল–

“বুড়ো না হলেও অর্ধ বুড়ো তো হয়ে গিয়েছি।”

“সরেন।”

মারশিয়াদ ঝপাৎ করে নুরাইসা কে বুকে টেনে নেয়।আচকায় মারশিয়াদ এর এমন কাজে হকচকিয়ে উঠে নুরাইসা।উদ্বিগ্ন গলায় বলল–

“কী হয়েছে??

“”আপনি আমাকে ছেড়ে যাবেন না তো মিষ্টি??

“কখনো না।”

মারশিয়াদ দীর্ঘশ্বাস ফেললো।ফিকে গলায় বলল–

“কোথায় যাবেন আপনি??

“আপনি যেখানে নিয়ে যাবেন।”

এই রাতের বেলাতেই মারশিয়াদ নুরাইসা কে নিয়ে বেড়িয়ে পরে ওর গাড়ি করে।বাড়ির মেইন গেইটে তালা।তাই বাধ্য হয়ে দেয়াল টপকে বাইরে বেরিয়ে আসে দুইজন।আবাসিক এলাকা হওয়ায় চোর ডাকাতের ভয় নেই।তাই ওয়াচম্যান রাখা তেমন গুরুত্বপূর্ণ নয়।

মারশিয়াদ ড্রাইভিং করছে।আর বার বার আড় চোখে নুরাইসা কে দেখছে।মেয়েটা অনেক কথা বলে।নিরবচ্ছিন্ন ভাবে কথা বলতে বলতে হাপিয়ে উঠেছে নুরাইসা।হালকা হেসে ওর দিকে পানি এগিয়ে দেয় মারশিয়াদ।সেই প্রথম দেখায় নুরাইসার কথার প্রেমে পড়ে মারশিয়াদ।জানালায় চিবুক রেখে বাইরে তাকিয়ে আছে নুরাইসা।সরস গলায় বলল–

“জান!!

“বলেন।”

“ইনশিরাহ আপুর সাথে আপনার কিসের সম্পর্ক??সে আপনার বাসায় কেনো থাকে??

মারশিয়াদ বিরস গলায় বলল–

“আপনি কী আমাকে বিশ্বাস করেন না??

নুরাইসা সোজা হয়ে বসে।মারশিয়াদ এর দিকে স্নিগ্ধ চাহনি নিক্ষেপ করে।শান্ত গলায় বলল–

“উহু।”

নুরাইসা ঝট করে নিজের এর এক হাত মারশিয়াদ বুকের উপর রাখে।মারশিয়াদ হতবিহ্বল হয়ে গাড়ি থামায়।রোষ ভরা গলায় বলল—

“মিষ্টি!!
কী করছেন কী!!!

নুরাইসা শান্ত গলায় বলল–

“বলেন তো আমি আপনি বেঁচে আছেন কি না??

“এইসব কী বলছেন আপনি!!
অবশ্যই।”

নুরাইসা অধর কোনে স্মিত হাসে।নরম গলায় বলল–

“কী করে বুজলেন??

“আমার হার্টবিট চলছে মিষ্টি।”

নুরাইসা নিজের হাত সরায়।সোজা হয়ে বসে সম্মুখ দিকে চোখ রেখে বলল–

“আমি ঠিক ততোটাই বিশ্বাস করি আপনাকে যতটা বিশ্বাস করলে আপনার হৃদয়ের স্পন্দনে আমি বেঁচে থাকতে পারবো।”

মারশিয়াদ ছোট্ট করে শ্বাস ছাড়ে।গাঢ় গলায় বলল–

“আপনার বিশ্বাসের অমর্যাদা আমি করবো না।আই প্রমিজ ইউ।”

“আই নো জান।”

গাড়ি আবার চলতে শুরু করে।সম্মুখপানে দৃষ্টি রাখে নুরাইসা।গাড়ির হেডলাইট এ সামনের দিকের দুপাশ দেখা যাচ্ছে।মনে হচ্ছে সবকিছু যেনো থমকে রেখে চলে যাচ্ছে ওরা।হুড়হুড়ে বাতাসে এলোথেলো চুল গুলো উড়ে চলছে।মারশিয়াদ আজ প্রথম প্রগাঢ় দৃষ্টিতে তাকায় তার কথার প্রেমিকার দিকে।আবছা আলোয় নুরাইসার ওই পাতলা ঠোঁটের স্মিত হাসি মারশিয়াদ এর হৃদয়ের কম্পন বাড়িয়ে দিচ্ছে।সে যাকে খুজছে আজ পেয়ে গেছে তাকে।মারশিয়াদ চোখে হাসে।গাড়ি গতি বাড়িয়ে সামনে আগুয়ান হয়।
,
,
,
প্রাতঃরাশ সেরেই ধোয়া উড়ানোএক কাপ গরম চায়ে চুমুক দিয়ে খবরের কাগজে চোখ বুলাতেই চকচক করে উঠে অক্ষযুগল সানোয়ার আহমেদ এর।আজও ব্ল্যাক শ্যাডো নতুন কর্মকান্ডের খবর বেরিয়েছে।বাড়ির বাকী সবাই তখন ডাইনিং টেবিলে।কাউচে বসেই হেড়ে গলায় ডাকলেন কুহেলিকা কে। বাকীদের সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করে তিনি খবরটা এক নিঃশ্বাসে পড়ে শোনালেন।

কুহুকপুর এর সেই হসপিটালে অবৈধভাবে ডেট এক্সপায়ার মেডিসিন এর উপর নতুন প্যাকেজিং ডেট লাগিয়ে সেসব ঔষদ কমদামে হসপিটালেরই নিম্নবৃত্ত রোগীদের দেওয়া হতো।ব্ল্যাক শ্যাডো সংস্থার ই মেম্বাররা সেখানে স্ট্রিং অপারেশন চালিয়ে তাদের সব অপকর্ম হিডেন ক্যামেরার মাধ্যমে রেকর্ড করে তা ব্রেকিং নিউজ করে টিভিতে দেখায়।সেই রেকর্ড বিভিন্ন নামকরা প্রেস এ পাঠানো হয়।আর এইসব কিছুর মূলহোতা হসপিটাল এর প্রতিষ্ঠাতা মোতালেব খাঁ।

চোখের সাথে সাথে সানোয়ার আহমেদ এর মনটাও আনন্দে উদ্বেলিত হয়।উচ্ছ্বসিত হয়ে সবাইকে তার কাজের প্রশংসা করলেন।
এতোকিছুর মাঝে মাথা নিচু করে অমলেট মুখে পুরছে আজরাহান।তার এইসব এ মাথাব্যথা নেই।বরং একগাদা রাগ তার।যখন ই ব্ল্যাক শ্যাডোর কোনো খবর বের হয় তার মা তাকে একগাদা কথা শোনান।
প্রহর আড়চোখে তাকিয়ে আছে আজরাহান এর দিকে।আজরাহান চোখ লুকানোর চেষ্টায় ব্যস্ত।আজ শুক্রবার।তাই সবাই বাসায়।সামান তার খাবারে একবার তাকিয়ে আবার আড়চোখে নন্দিতার চোখে তাকায়।কাল সারারাত অপেক্ষা করার পরও নন্দিতা ওকে একটুও সময় দেয়নি।তার জন্য ঈষৎ অভিমান চলছে তাদের মধ্যে।
প্রহর বিগলিতে হেসে সানোয়ার আহমেদ কে শুনিয়ে ফিচলে গলায় বলল–

“ছোট আব্বু,,ব্ল্যাক শ্যাডো এই বয়সেও কতো কিছু করে আর ছোট মার আজাইরা রাহান শুধু সারাদিন কুমিরের মতো ঘুমিয়ে রসগোল্লা খায়।”

প্রহর এর কথা শেষ হতেই সবার দৃষ্টি আবদ্ধ হয় আজরাহান এর দিকে।আজরাহান সবেই একটা রসগোল্লা মুখে নিয়ে চেয়েছিলো।কিন্তু প্রহর এর কথায় তা আর হলো না।ভ্রু কুচকে সবার দিকে তাকাতেই ঈষৎ রাগী প্রদৃপ্ত গলায় বলল—

“সবাই আমার দিকে তাকিয়ে আছো কেনো!!মা আজাইরা বলে,বলে কী আমি সত্যিই আজাইরা না কি!!
টানা পৌনে চার ঘন্টা কলেজে ক্লাস করিয়ে আসি।আজব!!
আজকাল শিক্ষকদের কোনো দামই নেই।”

কুহলিকা আজরাহান এর পাশে এসে দাড়ায়।নির্নিমেষ তাকিয়ে বললেন প্রজ্জ্বলিত গলাত বললেন–

“এই দুই দিন কোথায় ছিলে তুমি আজরাহান??

আজরাহান বৃহৎ ঢোক গিলে।শ্বাস আটকে থম মেরে বসে থাকে।কৌতুহলী চোখে সবাই দৃষ্টি ছুড়ে আজরাহান এর দিকে।আজরাহান নির্লিপ্ত অক্ষিযুগল ঘুড়িয়ে আনে সবার দিকে।তার গলায় ঢালা রসগোল্লা আটকে আছে।ফিকে গলায় আজরাহান বলল—

“আমার এক বন্ধুর বাবা অসুস্থ ছিলো।তার অপারেশন করতে হয়েছিলো কিন্ত আহতিম দেশের বাইরে।তাই আমাকেই থাকতে হয়েছিলো সেখানে।”

ছোট্ট নিঃশ্বাস ছাড়ে আজরাহান।প্রহর চোখ বাকিয়ে তাকায়।কুহেলিকা অত্যুজ্জ্বল চোখে তাকিয়ে উদ্দীপ্ত গলায় বললেন—

“তা সেই জায়গাটার নাম টা কী শুনি!!

প্রহর মুচকি হেসে টেনে টেনে বলল—

“ছোট মা,,,রসগোল্লা কিন্তু রাহান ভাইয়া সেখান থেকেই নিয়ে এসেছে।”

সানায়া আজরাহান এর সামনেই বসা ছিলো।মিষ্টির প্যাকেটে সানায়ার নজর পড়তেই আজরাহান খপাৎ করে পাজকোলে ঝাপটে নেয় মিষ্টির প্যাকেট।গম্ভীর গলায় বলল–

“একদম আমার জিনিসে হাত দিবি না।”

আজরাহান উঠে দাড়ায়।অরুনলোচন চোখে কিড়মিড় করে তাকায় প্রহর এর দিকে যেনো ওই চোখের অগ্নিনালায় এখনই ভষ্ম করে দিবে প্রহর কে।মিষ্টির প্যাকেট বুকে জড়িয়েই সিড়ির দিকে যেতে থাকে।অস্পষ্টভাবে বিড়বিড় করে বলতে থাকে,,””একবার একা পেয়ে নেয় ডিঙি নৌকা তোকে দেখিস কী করি!

কুহেলিকা বিরস চাহনি রাখে আজরাহান এর দিকে।স্বাভাবিক গলায় বললেন–

“ছেলেটাকে জ্বিনে টিনে আছড় করলো না কী!!আজকাল কেমন আজব ব্যবহার করে।”

সানায়া ফিকে হেসে ফিচলে গলায় বলল–

“মা ছেলেদের জ্বীন এ আছড় করে না পরী তে করে।আর তোমার ছেলে তো অতি মাত্রায় সুদর্শন।আর রাত বিরাতে তার এখানে সেখানে বিচরণ।হলেও হতে পারে।তাই নারে প্রহর!!!

প্রহর আর সানায়া খলখলিয়ে হেসে হাই ফাইভ করে।নন্দিতা মুচকি হেসে ফোড়ন কেটে বলল–

“তবে চিন্তার কিছু নেই।সত্যিই যদি আজরাহান কে পরী আছড় করে তাহলে আমাদের ঘরেও স্পেশাল ওঝা আছে।তাই না প্রহর!!
সো ডোন্ট ওয়ারি।”

প্রহর নিস্প্রভ চোখে কাতর দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে নন্দিতার দিকে।সানায়া আর নন্দিতা খিক খিক করে হেসে উঠে।

চলবে,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here