জঠর পর্বঃ১১

0
1983

#জঠর
#পর্বঃ১১
লেখনীতেঃতাজরিয়ান খান তানভি

মুখের ভেতর এক দলা ভাত নিয়ে বসে আছে পিউলী। কিছুতেই খেতে চাইছে না বাচ্চাটি। নওশাদ সাহেব জোর করে মুখে লোকমা ঠুসে দেওয়ার দরুণ ওভাবেই চুপ করে বসে আছে। নওশাদ সাহেব আদুরে গলায় বললেন—

“খেয়ে নাও পিউলী, পাপা রাগ করবে।”

পিউলী অসহায় মুখ করে চেয়ে রইল। মুখের ভেতরের খাবারটুকু কষ্টের সাথে গিলে নিয়ে বলল–

“আমি খাবো না। মামুনির কাছে যাব।”

নওশাদ সাহেব আশ্বাসের সুরে বললেন—

“খেয়ে নাও সোনা। খাওয়া হলেই দাদু নিয়ে যাব। না খেলে পাপা রাগ করবে।”

পিউলী তার আধো আধো গলায় আপত্তি করে বলল—

“না। আমি মামুনির কাছে যাব। না হলে খাবো না। খাবো না। খাবো না।”

কান্না জুড়ে দেয় পিউলী। হতচকিত নওশাদ সাহেব। মেয়েটা আজকাল বড্ড জেদি হয়ে যাচ্ছে! কারো কথাই শুনে না।
,
,
,
ধুম ধরে বসে আছে নায়েল। প্রায় মিনিট পনেরো যেন পুরো পৃথিবী থমকে গেছে তার জন্য। আধশোয়া বসে পা সটান করে ছড়িয়ে রেখেছে অর্হিতা। মাথায় গোলাকার গজ বাঁধা। দুই পাশে ছড়ানো চুলের মাঝ গলিয়ে নিগূঢ় দৃষ্টিতে চেয়ে আছে নায়েলের দিকে। নায়েল স্থির, নিষ্কম্প, শান্ত। তার সমান্তরাল চাহনি নিজের মুঠোয় পুরে রাখা অর্হিতার হাতে। অর্হিতা লম্বা শ্বাস ফেলে বলল—

“চুপ করে আছেন কেন নায়েল? আপনি প্রশ্নের উত্তর দেননি।”

সিঁড়ি বেয়ে নামতে গিয়ে পায়ে পিচ্ছিল জাতীয় কিছু একটার সংস্পর্শে আসতেই পেছন দিকে হেলে পড়ে অর্হিতা। ভাগ্য সহায় বলে, সিঁড়ির রেলিং ধরার কারণে মাথার পেছনে সামান্য জায়গা কেটে যায় যাতে তিনটা স্টিচের প্রয়োজন পড়ে। প্রায় এক সপ্তাহ জোর করেই হাসপাতালে রাখা হয় অর্হিতাকে। তারপর বাসায় নিয়ে আসা হয়। তার দেখাশোনার সমস্ত দায়িত্ব নায়েলের ওপর। সব মিলিয়ে আজ পনেরো দিন।

নায়েল অবনত মুখটা তুলে বলল—

“আমি দুঃখিত। যা হয়েছে সবটার জন্য আমি ক্ষমাপ্রার্থী।”

অর্হিতা অসহনীয় গলায় বলল—

” আপনাকে ক্ষমা চাইতে বলিনি। আমি আমার প্রশ্নের জবাব চেয়েছি।”

নায়েল নৈঃশব্দে শ্বাস ফেলে বলল—

“হ্যাঁ। পিউলীর জন্মদাতা আমি নই। ও আমার বোন নিহিতার মেয়ে। কিন্তু পিউলী তা জানে না। আর আমিও চাই না ও কখনো জানুক যে আমি ওর পাপা নই।”

হেয়ালি গলায় বলে উঠে অর্হিতা—

“লুকিয়েছেন কেন আমার কাছ থেকে? কেন বলেননি এসব?”

“সুযোগ হয়নি। আমি যতবার আপনার সাথে দেখা করতে গিয়েছি পিউ ছিল আমার সাথে।”

ফিচেল হাসে অর্হিতা। ক্যাটক্যাটে গলায় বলল—

“আপনি কী সত্যিই গিরগিটি না-কি? মোবাইল ছিল না আপনার কাছে? আসলে আপনি ইচ্ছে করেই বলেননি। ইচ্ছে তো করছে আপনাকে….।”

এক অবিশ্বাস্য কাজ করে বসে নায়েল। ঝট করে ওঠে অর্হিতাকে বুকপাঁজরে জড়িয়ে ধরে। অর্হিতার রক্তপ্রবাহ যেন থমকে যায়। শ্বাসরুদ্ধ করে ঘটনার আকস্মিকতা আন্দাজ করতে সময় লেগে যায় তার। কণ্ঠে প্রখর আবেগ নিয়ে বলতে থাকে নায়েল—

“প্লিজ অর্হিতা, আমি আমার সব কাজের জন্য ক্ষমা চাইছি। প্লিজ, কোথাও যাবেন না। প্লিজ।”

অর্হিতার কী যেন হলো। সে কিছুই বলতে পারল না। কাঁপন শুরু হলো তার দেহে। তরতর করে তার ভেতরের শীতলতা উষ্ণ হতে লাগল। বিগলিত হলো সমস্ত রাগ, অভিমান। নিজের অজান্তেই আঁকড়ে ধরল নায়েলকে। অদ্ভুত, অবোধ্য, অপ্রমত্ত অনুভূতির সাগরে তলিয়ে গেল সে। অনাস্বাদিত এক প্রগাঢ়, অতলান্তিক ভালোবাসায় আচ্ছন্ন হলো অনুপলেই। যখন বুঝতে পারল নিজেকে সংকুচিত করে নিল অর্হিতা। অবিচ্ছিন্ন পুরুষালী সৌরভে অর্হিতার নারীমন অসহায় হয়ে পড়ে। সে মিষ্টি সুরে বলল—

” এইটা আবার সরি বলার কোন পদ্ধতি! সরুন মি. গিরগিটি।”

নায়েল কেঁপে ওঠে। অপ্রস্তুত হয়ে দ্রুততার সাথে সরে আসে। ব্রীড়াময় চাহনি। মিচকি হাসি অর্হিতার অধরের কোণে। ছেলেমানুষ এত লজ্জা পায়! তার সুপ্ত মন যেন আকাশ কাঁপিয়ে হাসছে। কিন্তু তার আভাস পায় না নায়েল। নায়েলের দিকে মজার দৃষ্টিতে তাকিয়ে সশব্দে হেসে ওঠে অর্হিতা। হেসে হেসে বলল—

“চিন্তা করবেন না। এত সহজে আপনার পিছু ছাড়ছি না। আর মরছিও না। পিউ বলল, আপনি না-কি বলেছেন আল্লাহ যাদের বেশি ভালোবাসেন তাদের নিজের কাছে ডেকে নেন! আমার ক্ষেত্রে তার ভালোবাসার পরিমাণ একটু কম। আমাকে তিনি এত তাড়াতাড়ি নিবেন না। এই যে দেখুন, দিব্যি আপনার সামনে বসে আছি। আব্বুর হার্টে ছিদ্র ছিল। টাকা ছিল না। বিনা চিকিৎসায় মারা যান আব্বু। আব্বুর শোকে মাস দুয়েকের মধ্যে আম্মুও মারা যায়। তারপর দুই ভাইবোন এদিক ওদিক ঘুরতে ঘুরতে পৃথিবী আর তার মানুষকে চিনতে শুরু করলাম। যার কেউ নেই পুরো পৃথিবীটাই তার। তাই না বলুন। এই পৃথিবীটাও আমার। ভাববেন না, রোগে-শোকে নিজের আত্মাহুতি দেবো। এত সাহস নেই আমার। নিজের জীবন নেওয়া কী এত সোজা! বেঁচে আছি, বেঁচে থাকব। যতক্ষণ না ওই ওপরওয়ালার পেয়ারি না হই। সো, ডোন্ট ওয়ারি মি. গিরগিটি। ”

কথা শেষ করেই মুক্ত হাসে অর্হিতা। তার ঝরা হাসিতে নায়েলের উদ্বিগ্ন মনে জলপ্রপাত নামে। অর্হিতা থমকে যায়। সন্ধানী গলায় প্রশ্ন ছুড়ে—

“পিউর বাবা কোথায়?”

নায়েল কাতর চোখে তাকায়। একটু সময় নেয়। চাপা দীর্ঘশ্বাসের সাথে বলল—

“মাহিম জানে না পিউর কথা। ডিবোর্সের পর আর কখনো ও এখানে আসেনি। আমিও খোঁজ নেইনি। পিউর কথাও জানাইনি।”

“ও আচ্ছা। আপনার বাবা হওয়ার সুপ্ত বাসনা পূর্ণ হলো তাই। সাবাশ!”

নায়েলের কাঁধে হাত দিয়ে সাবাশি দেওয়ার ভঙ্গিমায় চাপড় মারতেই ভ্রূকুঞ্চন করে নায়েল। মেয়েটা এত অদ্ভুত কেন?

চলবে,,,

(বি.দ্র:
পর্ব ছোটো নিয়ে আর কোনো কথা হবে না। বড়ো করতে গিয়ে কাল দুর্ঘটনা ঘটিয়েছি। ছেলেদের কলেজকে মেয়েদের। ছেহ! আসলে কাজিনের সাথে কথা বলছিলাম তখন। তাই ওর কলেজের নামই🌝🌝।
আমি সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত আমার মত করে লিখতে দিন। প্লিজ। আর ভুল ধরিয়ে দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here