#জঠর
#পর্বঃ১৪
লেখনীতেঃতাজরিয়ান খান তানভি
এক পশলা সোনালী মিহি রোদের প্রভাত। দিগন্ত জুড়ে দিবাকরের খিলখিলানো হাসি। পল্লবে পল্লবে সমীরণের গুঞ্জন। এক বৃষ্টিস্নাত সতেজ ভোর। দিনের রোশনাইতেই মিলিয়ে গেল রাতের তুমুল বর্ষণ। মিহি রোদের ঝলমলে আকাশের নিচে মৃদুসিক্ত মৃত্তিকা।
বসার ঘরের কাউচে বসে আছে নায়েল। তার ছড়ানো পা সেন্টার টেবিলের কোণ ঘেঁষে রাখা। পুরো পিঠ হেলিয়ে দেওয়া কাউচের নরম গদিতে। হাতে খবরের কাগজ। ডাইনিং টেবিলে বসে আছে পিউলী। তাকে খেতে সাহায্য করছে অর্হিতা। কিন্তু অর্হিতার আড়চোখের সলজ্জ চাহনি একটু পরপর বিদ্ধ হচ্ছে নায়েলের দিকে। নায়েল নির্লিপ্ত। সায়েরা নিজ কক্ষ থেকে বেরিয়ে আসলেন। একটা সিল্কের শাড়ি পড়েছেন তিনি। নায়েলের কাছে এসে বলল—
“আমার কিছু টাকা লাগবে নায়েল। একটা এতিম খানায় ডোনেশন দেওয়ার কথা ছিল।”
নায়েল পিঠ সোজা করে। মৃদু গলায় বলল—
“তুমি তাদের অ্যাকাউন্ট নাম্বার আমাকে মেসেজ করে দিয়ো। আমি আমার অ্যাকাউন্ট থেকে ট্রান্সফার করে দেবো।”
বিব্রত হলেন সায়েরা। তবুও ঠোঁটে মুচকি হাসি রেখে বললেন—
“তোমাকে ঝামেলা করতে হবে না। চেক দাও। আমি তাদের দিয়ে দেবো।”
অগত্যা নায়েল রাজি হলো। নিজ কক্ষে গিয়ে চেক এনে তাতে সাইন করে দিলো। হৃষ্ট গলায় বলল—
“কত লাগবে অ্যামাউন্ট বসিয়ে নিয়ো। তুমি কী এখনই যাবে?”
“হ্যাঁ।”
“আচ্ছা। তমালকে নিয়ে যেয়ো। ও বাইরেই আছে।”
“তোমাকে চিন্তা করতে হবে না। আমি আসি।”
সায়েরা যেতেই আবারও সেখানেই বসে পড়ে নায়েল। অর্হিতার ক্যাটক্যাটে চাহনি। ঘড়িতে দশটা বেজে গিয়েছে এখনো নায়েলের হেলদোল নেই। সে দিব্যি বসে আছে। পিউলীর খাওয়া শেষ হলে নওশাদ সাহেব নাতিনকে নিজ কক্ষে নিয়ে যান। অর্হিতা রান্না ঘরে ঢুকেছে।
একটা গাঢ় কমলা রঙের শাড়ি পরে টুকটুক করে হেঁটে আসে হৃতি। খবরের কাগজ থেকে চোখ সরিয়ে তার দিকে গভীর চোখে তাকাল নায়েল। বিস্ময়কর গলায় বলল—
” এত সেজেগুঁজে কোথায় যাচ্ছ?”
হৃতি শিশির সিক্ত হাসল। বলল—
“কলেজ। আজ একটা প্রোগ্রাম আছে। তুমি অফিস যাওনি যে?”
“এখন যেতে ইচ্ছে করছে না। যাব। লাঞ্চের পর। একটা মিটিং আছে।”
নায়েল গভীর মনোযোগ সহকারে হৃতির আপাদমস্তক দেখে বলল—
“এই সিগ্ধ সকালে কমলা রঙ! একদম মানাচ্ছে না। লাইট ব্লু শাড়ির সাথে হোয়াইট ব্লাউজ ভালো লাগত। তোমারও কমফোর্ট ফিল হতো। গাঢ় রঙের তাপ শোষন ক্ষমতা বেশি। ভীড় হবে নিশ্চয়ই। কলেজ প্রোগ্রাম বলে কথা। কত হ্যান্ডসাম ছেলেরা আসবে! কমলা রঙে ঘেমে গেলে পুরোই শীতে ঝরে পড়া শুকনো পাতার মতো লাগবে!”
হৃতি ভোলা ভোলা চোখে চেয়ে নিরীহ গলায় বলল—
“তাহলে? আমার আকাশী রঙের শাড়ি নেই।”
“পিচ কালার দেখতে পারো।”
“সেটাও নেই।”
“তাহলে আর কী। টসটসা কমলা সেজে চলে যাও।”
হৃতির মনটা বিষণ্ণ হয়। বান্ধবীদের সাথে ম্যাচিং করে এই শাড়িটা কিনেছিল। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে একদম ঠিক হয়নি। হৃতির চোখের উজ্জ্বলতা বাড়ে। রান্নাঘরের পাশে দাঁড়িয়ে আছে অর্হিতা। আশা নিয়ে তার কাছে গিয়ে বলল—
“তোমার কাছে আকাশ রঙা শাড়ি হবে?”
অর্হিতার ইচ্ছে করছে এই মেয়েটাকে একটা ঠাটিয়ে চড় মারতে। তার আগে গিরগিটিটাকে। কত্ত ঢঙ! তোমাকে লাইট ব্লুতে ভালো লাগবে। বেয়াদব গিরগিটি! মনের অবাঞ্চিত চিন্তা ভুলে মুখে জোর করে কপট হাসি মাখে অর্হিতা। দুঃখী গলায় বলল—
“আমার আকাশ রঙা শাড়ি নেই।”
মনে মনে বলল,” আছে। দেবো না। শখ কত!”
ভারাক্রান্ত মন নিয়ে চলে যায় হৃতি। শাড়ি পরাতে সে পটু নয়। গত একঘণ্টা ধরে ইউটিউব দেখে শাড়িটা পরেছে সে। ভেবেছে ভালো লাগবে। কিন্তু নায়েলের কথায় একদম চুপসে গেল মেয়েটা।
হৃতি নায়েলের কাছে এসে অনুনয় করে বলল—
“আমাকে একটু পৌঁছে দেবো। ঘরেই তো বসে আছ।”
নায়েল আপত্তি করে বলল—
“না। তমাল আছে বাইরে। খালামনি ট্যাক্সিতে গেছে। তুমি গাড়ি নিয়ে যাও। এখন আর কোথাও যেতে ইচ্ছে করছে না আমার।”
ভারাক্রান্ত মন নিয়ে বাড়ি থেকে বের হয় হৃতি।
,
,
,
মধ্যদুপুর। সূর্যের প্রখরতায় ঝলসে যাচ্ছে বসুন্ধরা। তীব্র গরমে প্রাণ ওষ্ঠাগত। সেই আগুন ঝরা গরমে নায়েলদের বাড়ির বাইরে দাঁড়িয়ে আছে অর্নিশ। উদ্দেশ্য নায়েলের সাথে দেখা করা। ওয়াচম্যানকে বলতেই সে ভেতরে ল্যান্ডলাইনে কল করে। অর্হিতা তখন সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠবে। ফোন বাজতেই তড়িৎ হাতে রিসিভ করে যখন জানতে পারল অর্নিশ এসেছে ক্ষেপে ওঠে সে। বাড়ির বাইরে এসে দেখে ঘামে গোসল করে নিয়েছে অর্নিশ। তার চোখভর্তি কাতরতা। মুখটা রৌদ্রতাপে লাল হয়ে আছে। অর্হিতাকে দেখেই ক্লান্ত হাসে।
“কেমন আসিছ তুই?”
“কেন এসেছ তুমি?”
অর্নিশ ঝরঝর করে কেঁদে ফেলল। বলল—
“আমাকে ক্ষমা করে দে অর্হিতা। আমার সব শেষ। যেই ফ্ল্যাট নেওয়ার জন্য এতকিছু করলাম, কিছুই পেলাম না আমি। ওরা আমাকে ধোঁকা দিয়েছে। আমার আঠারো লাখ টাকা নিয়ে পালিয়েছে। তিনলাখ টাকা সীমানা দিয়েছিল। আমি ভেবেছি বাকি দুই লাখ ব্যাংক থেকে লোন নেবো। কিন্তু ওরা তার আগেই সব নিয়ে পালিয়েছে। পুলিশের কাছে গিয়েছিলাম। ওদের সব নাম্বাব, কাগজপত্র সব মিথ্যে। আমাকে শেষ করে দিয়েছে ওরা। সীমানা ওর টাকা ফেরত চাচ্ছে। কোথা থেকে দেবো আমি টাকা?”
অর্হিতা এবার ভালো করে দেখল তার ভাইকে। আল্লাহ্ মালুম! কতদিন খায়নি। চোখ ডেবে ভেতরে ঢুকে গিয়েছে। বাড়ন্ত চুলগুলো উষ্কখুষ্ক। যেন হাত পড়েনি কতদিন, কতদিন ঘুমায়নি তার ইয়াত্তা নেই! অর্হিতার কঠোর মন পলেই বিগলিত হলো। ভাইয়ের জন্য কেঁদে উঠল মন। অর্নিশ দুই হাত জোড় করে বলল—
“আমাকে ক্ষমা করে দিস বোন। আমি গ্রামে চলে যাচ্ছি। বাবার রেখে যাওয়া ভিটে বিক্রি করে সীমানাকে ওর টাকা শোধ করতে হবে। না হলে ও আমাকে শ্বাসও নিতে দেবে। ওর পাল্লায় পড়ে তোর সাথে অনেক বড়ো অন্যায় করে ফেলছিলাম। ভাগ্যিস নায়েল তোকে বিয়ে করেছে। না হলে আমি..।”
কান্নায় ভেঙ্গে পড়ল অর্নিশ। চোখ, মুখ লুকাল সে। কারো স্পর্শে তার আচ্ছন্নতা কাটে। নায়েল দাঁড়িয়ে আছে সামনেই। অর্নিশের চোখে অনুতপ্তের পালতোলা নৌকা। যা ভেসেই যাচ্ছে। ভরাট গলায় বলে উঠে নায়েল—
“কোথাও যেতে হবে না আপনার। এই নিন
আপনার ফ্ল্যাট।
ওরা যা করেছে আমার কথায় করেছে। এই ফ্ল্যাট অর্হিতার নামে। আপনার যতদিন ইচ্ছে, যেভাবে ইচ্ছে থাকবেন। ভুলেও অন্যকিছু করার কথা ভাববেন না।”
বিস্ফোরিত চোখে দুই ভাইবোন নায়েলের দিকে তাকায়। নায়েল কটাক্ষ করে বলল—
“আমার সত্যিই অবাক লাগে, অর্হিতা আপনার আপন বোন তো?”
অর্নিশের লজ্জায় মাথা ফাটিয়ে ফেলতে ইচ্ছে করছে। নিজের বোনের সাথে অনেক বড়ো অন্যায় করেছে সে। নায়েল ধমকের সুরে বলল—
“যান। মাঝে মাঝে এসে বোনকে দেখে যাবেন। টাকার কাছে সম্পর্ক বিক্রি করবেন না।”
অর্নিশ আর দাঁড়াল না। তার মরে যেতে ইচ্ছে করছে। নিজের ভাইয়ের যাওয়ার পানে চেয়ে আছে অর্হিতা। বেখেয়ালি গলায় বলল—
“বাকি টাকা আপনি কেন দিলেন?”
নায়েল চাপা স্বরে বলল—
“ওটা আপনার দেনমোহর থেকে কেটে রেখেছি। ইন্টারেস্ট ছাড়া ইনবেস্ট করি না আমি।”
অর্হিতা জ্বলন্ত চোখে চেয়ে বলল—
“বেয়াদব গিরগিটি!”
হৃদয় গলানো হাসে নায়েল।
,
,
,
শরতের নির্মেঘ আকাশের মতো মিহি নীল রঙের শাড়ি জড়িয়েছে নিজের অঙ্গে অর্হিতা। সাথে শুভ্র রঙের ব্লাউজ। নায়েলের মুখ থেকে হৃতিকে এই রঙের শাড়ি পরতে বলায় অর্হিতার মনে হলো এই রঙ নায়েলের পছন্দ।
অবিন্যস্ত চুলগুলো চিরুনি দিয়ে আঁচড়ে নেয় অর্হিতা। কলেজে অনেক প্রোগ্রামেই সে শাড়ি পরেছে পূর্বে। তাই তাকে এতে বেগ পেতে হয় না। লজ্জায় তার চোখ দুটো বন্ধ হয়ে আসে। সে জানে না কেন এমন হচ্ছে তার সাথে। মানুষটাকে সহ্য না হলেও অকারণেও চেয়ে থাকতে ইচ্ছে করে, কাছে পেতে ইচ্ছে হয়, তার উষ্ণ শ্বাসেও যেন হৃদগহীনে ঝড় ওঠে। নিজের সাথে লড়ে পরাস্থ হয় অর্হিতা। তার থিতিয়ে থাকা অজ্ঞাত অনুভূতিরা প্রজাপতির মতো উড়তে চায়, রঙ মাখিয়ে দিতে চায় অরঞ্জিত বদনে।
নায়েলের কক্ষের দরজার কাছে এসে দাঁড়ায় অর্হিতা। দরজার কিঞ্চিৎ ফাঁক গলিয়ে ভেতরে উঁকি দিয়ে দেখছে সে। কাউকে দেখতে না পেয়ে ফট করে ঢুকে পড়ল। নায়েলের অস্তিত্ব টের পাচ্ছে না সে। ওয়াশরুমের দিকে হেঁটে যায় অর্হিতা। সেখানেও নেই। বারান্দার থাইয়ে পর্দা ঝোলানো। এখান থেকে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে না। অর্হিতা গুটিগুটি পায়ে বারান্দায় উঁকি দিলো। চার ফুটের প্রশস্ত বারান্দার এ মাথা থেকে ও মাথা হেঁটে এলো একবার। ভেতরে এসে হতাশ শ্বাস ফেলল। নায়েল কক্ষে নেই। তাহলে হয়তো নিচে। অর্হিতার চোখ আটকে টেবিলে থাকা ফটোফ্রেমে। নায়েলের সাথে পিউলীর এটাচ ছবি। সেইটা হাত দিয়ে ধরতে গেলেই চকিতে কেঁপে ওঠে সে।
“অর্হিতা আপনি?”
ঢোক গিলে তাকায় অর্হিতা। নায়েলের কক্ষের একপাশে মসজিদে থাকা মিম্বরের মতো একটা জায়গা আছে, যেখানে আদ্যোপান্ত পর্দা ঝোলানো। সরাসরি দেখলে মনে হবে জানালায় পর্দা দেওয়া। কিন্তু তাতে নায়েলের জরুরি কাগজপত্রের একটা শোকেস রাখা। সেখানে কিছু একটা দেখছিল সে। পর্দা থাকায় অর্হিতা খেয়াল করেনি।
“না মানে, আমি।”
“জি আপনি। আমার ঘরে? কেন, কিছু লাগবে?”
“না, না। আমি যাচ্ছি।”
অর্হিতা পা বাড়াতেই মনে হলো কেউ তাকে টেনে ধরেছে। এই সেরেছে! অর্হিতার শাড়ির আঁচল গিয়ে আটকেছে টেবিলের নিচের দিকের পাটাতনের পেরেকে। তা ছাড়ানোর চেষ্টা করছে সে। কিন্তু মনোযোগ নায়েলের দিকে। নায়েল গাঢ় চোখে তাকাতেই অর্হিতা মেকি হেসে বলল—
“শাড়ি,শাড়ি আটকে গেছে। আমি এখনই খুলে নিচ্ছি।”
অর্হিতা পেছন ফিরতেই তার পাতলা শাড়ির আঁচল কাঁধ থেকে খসে পড়ে। হুড়মুড়িয়ে তা তুলে নিয়ে বুকের কাছে চেপে ধরে। নায়েল হাতের ফাইলটা বিছানার একপাশে রেখে এগিয়ে আসে। অর্হিতার কাছে এসে দাঁড়াতেই এক অবাধ্য অনুভূতির সপ্রতিভ আগ্রাসনে ঘায়েল হলো অর্হিতা। নায়েল মৃদু গলায় বলল—
“আমি দেখছি। শান্ত হোন। সব কাজে তাড়াহুড়ো করলে হয়!”
নায়েল একটু ঝুঁকে টেবিলের তলার দিকে হাত দেয়। তার নিঃসৃত তপ্ত নিঃশ্বাসের ছড়াছড়ি চলছে অর্হিতার কাঁধে। অর্হিতা স্থির থাকতে পারল না। গূঢ় কাঁপনে বিধ্বস্ত সে। নায়েল আঁচলের কোণাটা বের করে আনে। অর্হিতা যেন নিমজ্জিত জলরাশি থেকে উঠে এলো। বুকভর্তি শ্বাস নিল সে। নায়েল সরে আসে। বিছানার কাছে এসে নরম গলায় বলল—
“বললেন না তো কেন এসেছিলেন? মিসেস অর্হিতা তো এমনি এমনি কোথাও যাওয়ার পাত্র নয়।”
মাথা ফাটাতে এসেছিলাম বুদ্ধু গিরগিটি। মনে মনে উচ্চারিত কথায় নিজেই গহন হাসল অর্হিতা। আজকাল তার কিছু একটা হয়েছে। সে মনে মনে রাগে, আবার মনে মনেই হাসে।
নির্মল গলায় উত্তর করে অর্হিতা।
“কিছু না। কেন আসতে নেই বুঝি?”
“নিষেধ নেই। আপনার জন্য উন্মুক্ত।মহানিশাতেও এই ঘরের দরজা আপনার জন্য খোলা।”
“আর আপনার মনের?”
চোখ তুলে তাকায় নায়েল। অর্হিতার তাচ্ছিল্য চাহনি। আর বেহায়া হতে পারবে না সে। এই লোকটা কী কিছুই বুঝে না? রাগ হয় অর্হিতার। টলটলে চোখ নিয়ে দপদপ করে পা ফেলে দরজার কাছে যেতেই তাকে বিস্ময়ে নিমজ্জিত করে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে নায়েল। অর্হিতা হিমালয় শৃঙ্গের মতো জমে যায়। শ্বাসরুদ্ধ করে নায়েলের শ্বাস শুনছে সে। নায়েল তার কাঁধে অধর ছোঁয়ায়। বিষাক্ত তীরের আঘাত পেয়েছে সে। অর্হিতার বাঁচা মুশকিল! নায়েল মোহগ্রস্ত গলায় বলল—
“শাড়িতে আপনাকে আরও বেশি সুন্দর লাগে। ইচ্ছে করলে রোজ পরতে পারেন। আমার সমস্যা নেই। রোজ না পারলে মাঝে মাঝে কন্ট্রোল করে নেবো নিজেকে।”
নায়েলের পুরুষালী গাঢ় স্পর্শ অর্হিতার অনাবৃত উদরে। ঝড়ের বেগে পেছন ফিরে নায়েলের বুকে মুখ গুঁজে শ্রান্ত গলায় বলল—
“পরব, আপনি বললে প্রতিদিনই পরব।”
নায়েল দুই হাতের বন্ধনে আড়ষ্ট করে অর্হিতাকে। সকল জড়তা, সংকোচ, দ্বিধার জলাঞ্জলি দিয়ে নীলাভ মেঘের সাথে মিশে
যেতে থাকে সফেদ মেঘ।
অগোছালো বিছানায় ওঠে বসে নায়েল। তার তন্দ্রালুভাব এখনো কাটেনি। ক্লান্ত শরীরের অলসতা ছেড়ে ঘুমু ঘুমু চোখে ঘড়ির দিকে তাকায়। বিকেল চারটা। ইশ! এত সময় কখন চলে গেল নায়েল বুঝতেও পারল না। বিছানায় চোখ বুলিয়ে অর্হিতাকে পেল না। মেয়েটা নিশ্চয়ই চলে গেছে। নায়েলের নাকের ডগায় এখনো অর্হিতার দেহপিঞ্জরের সৌরভ স্লোগান দিচ্ছে। নায়েল মুচকি হাসল। ভাবল, মেয়েটা লজ্জায় হয়তো আজ আর তার সামনেই আসবে না। আর এখন নির্ঘাত বিছানার উপর গুটিসুটি মেরে বসে বলছে,” বেয়াদব গিরগিটি!”
নায়েল মোবাইল নিল। মেয়েটার লাজুক কণ্ঠ শোনার বড্ড লোভ হলো তার। লাগাতার রিং হলেও রিসিভ করল না অর্হিতা। একটা মেসেজ সেন্ট করল নায়েল। লিখল,
” হায়াহীন মায়া
কাটে না তার ছায়া
রাত পেরিয়ে দিনের ভোর
আধো আদর, আধো ঘোর।”
অর্হিতার মোবাইলে টুংটুং শব্দ হয়। ভেজা চুল পিঠে ছড়িয়ে দিয়ে পাথরের মতো বসে আছে সে। দুরন্ত বেগে মোবাইল হাতে নিয়ে ইনবক্স চেক করে নাক, মুখ খিঁচে বলল—
” বেয়াদব গিরগিটি! বেশরম গিরগিটি!”
চলবে,,,