#আলোয়_অন্ধকার🍁
#Roja_islam
#part 21
স্তব্ধ টিয়াকে কোলে করে বেডে এনে শুইয়ে দেয়! তখন স্তব্ধ চোখ পড়ে টিয়ার গলায়, হাতে, পায়ে দাগ স্পষ্ট রক্ত জমাট বাধার! স্তব্ধ মলম টা এনে সুন্দর করে টিয়ার ক্ষত গুলোতে লাগিয়ে দেয়। তারপর টিয়ার হাতের উল্টো পিঠে বেশকিছু চুমু দিয়ে বলে উঠে,
— সরি….
🍁
🍁
মাত্রই টিয়ার জ্ঞান ফিরেছে! টিয়া বসে আছে বেডে নিজের ঘাড়ে এক হাত চেপে রেখে! যেখান টায় স্তব্ধ মলম লাগিয়ে দিয়েছিলো! কিছুক্ষণ আগের ব্যাপারটা এখনো টিয়া বুঝতে পারছেনা বললেই চলে! দরজায় তাকালো টিয়া! বন্ধ দরজা বাইরে থেকে দেখেই বুঝা যাচ্ছে! টিয়া উঠে দরজার কাছে গিয়ে দাঁড়িয়ে রইলো! টিয়ার এখনো বিশ্বাস হচ্ছে না কিছুক্ষণ আগের ঘটনা সেটা সত্যি ছিলো কি না? তাই সে আবার দেখতে চায় স্তব্ধকে! বিশ্বাস করতে চায় সত্যি স্তব্ধ এসেছে তাকে বাঁচাতে! ভেবেই টিয়া যেই দরজা ধাক্কা দিতে যাবে তার আগে দরজায় খুট করে আওয়াজ হলো। তাই টিয়া একটু পিছিয়ে দাঁড়ালো। আর দরজা ঠেলে স্তব্ধ রুমে ঢুকলো নিঃসংকোচে নিঃশ্বদে! তার হাতে খাবার ট্রে!
টিয়া স্তব্ধকে দেখে স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো সেখানেই! টিয়ার দিকে কোনো খেয়াল নেই স্তব্ধের! সে খাবার ট্রে সেন্টার টেবিলে রেখে সোফায় বসলো পায়ের উপর পা তুলে! টিয়া ঘুরে দাঁড়িয়ে স্তব্ধের দিকে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে!
১০ মিনিট হয়ে গেছে টিয়া একি ভাবে তাকিয়ে! স্তব্ধ ততক্ষণে জুস এর গ্লাসে সিপ লাগাচ্ছে আর ফোনে গুতাচ্ছে! টিয়া যে তার দিকে এভাবে তাকিয়ে আছে তাতে জেনো কোন খেয়ালি নেই স্তব্ধের! স্তব্ধের ভাব খানা এমন টিয়া তাকে দেখতে চাইছে যখন মন পেট ভরে দেখুক!
টিয়ার আরও কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে হঠাৎ কি হলো কে জানে? সে চোখ ঘুরিয়ে কাবার্ড এর দিকে তাকালো! তারপর দ্রুত কাবার্ডের সামনে গিয়ে দাড়ালো! দেখতে তার কোন ড্রেস আছে কিনা? না থাকলে তার স্তব্ধ ওর কাছে ড্রেস চাইতে হবে যা সে করবে না! সে স্তব্ধের সাথে কথা বলবেনা! টিয়া মনে মনে প্রে করতে করতে কাবার্ড খুললো? হ্যাঁ ড্রেস আছে কিছু জিন্স, টপস, টিশার্ট, লেডিস শার্ট! এগুলা দেখে টিয়া পিছন ফিরে একবার স্তব্ধের দিকে তাকালো! স্তব্ধ এখনো ফোনে মুখ গুঁজে!টিয়া দ্রুত সামনে ফিরে ফোফাতে ফোফাতে একটা ক্রিম কালার লেডিস শার্ট আর ব্লু জিন্স নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে পড়লো!
আলিশান একটি ওয়াশরুমের ঠিক মধ্যে খানে বসে হাটুতে মুখ গুঁজে ৩০ মিনিট ধরে কেঁদেই যাচ্ছে টিয়া! টিয়া বুঝতে পারছেনা কেনো কাঁদছে সে?স্তব্ধের জন্য নাকি অন্য কিছু!
অন্যকিছু নয় স্তব্ধের জন্যই কাদছে সে। স্তব্ধে তাকে ভালোবাসে না টিয়া সেটা জানে! তবুও.. তবুও যে টিয়ার কষ্ট হয়? স্তব্ধকে দেখলেই টিয়ার কষ্ট ধীগুণ বেড়ে যায়! কেনো স্তব্ধ তাকে একটু ভালোবাসতে পারলো না কেনো? এসব ভেবে ভেবে টিয়ার কষ্ট হয়! প্রচুর কষ্ট হয়! কিন্তু কেনো হয়? টিয়াতো যানেই স্তব্ধ তাকে ভালোবাসেনা ভালোবাসতে পারবেনা! তাকে স্তব্ধ পছন্দই করে না। যাকে পছন্দ তাকেই তো স্তব্ধ বিয়ে করে নিয়েছে! তাই স্তব্ধ তাকে ভালোবাসবে এটা ভাবাও চিন্তা করাও ভুল! কঠিন ভুল! জঘন্য ভুল!
এখন এটা সম্ভব নয় স্তব্ধের যে বৌ আছে! তাই টিয়া আর বেহায়া হবে না স্তব্ধকে ভালো বাসবে না সে নিজেও! অন্য কাউর সংসার সে ভাঙবে না কিছুতেই না! সে অন্য সব নিচু মন মানুষিকতার মেয়ে হতে পারেনা! নেহাতি সে স্তব্ধের সম্পর্কে জানতেই শুধু নিখুঁত ভাবে বিয়ের অভিনয় টা করেছিলো! আর অভিনয় করার মাশুল ও সে কড়ায়গণ্ডায় দিচ্ছে!
তাই আর জানতেও চেষ্টা করবে না সে কিছু সে তো বুঝেছেই। স্তব্ধ নিজের স্ত্রীকে বাঁচাতেই তাকে বিয়ের প্রপোজাল দিয়েছিলো! যেনো এই ডেনিয়াল তার স্ত্রীকে নয় তাকে তুলে আনে! আর মাহিনকেও মনে হয় নিজের দরকারেই মেরেছিলো স্তব্ধ! তার জন্য নয়। যাই হোক সে নির্দোষ ছিলো এটা ভেবে যে স্তব্ধ তাকে এখান থেকে নিতে এসেছে এটাই বেশি! সে আর কিছু ভাববে না সে বাসায় যেতে পারলেই হলো শুধু…….
হঠাৎ টিয়ার মাথায় এলো, আচ্ছা স্তব্ধকি জানে তার সাথে স্তব্ধের বিয়ে হয়নি? টিয়া আর ভাবলো না শাওয়া শেষ করতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো! পানিতে ক্ষত গুলো জ্বলছে শুধু……..
স্তব্ধ এক দৃষ্টিতে ওয়াশরুমের দিকে তাকিয়ে! স্তব্ধ বুঝতে পারছে টিয়া ওয়াশরুমে ঢুকেছেই কাঁদতে! স্তব্ধের সব যন্ত্রণা লাগছে এই মুহূর্তে! তাও চুপচাপ চোয়াল শক্ত করে বসে রইলো সে! টিয়াকে খাইয়ে ঔষধ খাইয়ে দিতে হবে! ডেনিয়াল টিয়াকে ড্রাগস দিয়েছে! ব্যাপার টা টিয়া জ্ঞান হারালে বুঝতে পারে স্তব্ধ! টিয়াকে এখন নরমাল দেখালেও নরমাল নয় সে! তাকে সুস্থ করে তুলতে হবে স্তব্ধ ওর!
টিয়া ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে স্তব্ধকে দেখতে পেলোনা সোফায়! চোখ ঘুরাতেই বেলকুনিতে দেখতে পেলো স্তব্ধকে! রুমের গ্লাস লাগিয়ে স্মোক করছে! আর এক হাত দিয়ে ঘাড়ের পেছনে স্লাইড করছে! আর এক পাশ থেকে অন্যপাশ হাটছে বেলকুনিতেই ক্রমাগত!
টিয়া স্তব্ধকে দেখে বিনা বাক্যে এসে সোফায় বসলো! খাবার দেখে বুঝলো। সে রাতে শাওয়ার নিয়েছে আর এখন ডিনার করবে! কি দিন এলো তার! কখন দিন হয়? কখন রাত হয়? কয় দিন গত হয়েছে! সে বুঝেনা আরও আছে সারাদিন সে কি করেছে? কই ছিলো? মাথা থেকে সব গায়েব হয়ে যায়! লাইক মেন্টালি সিক…ভেবেই দীর্ঘ শ্বাস ফেলে টিয়া খাবারে চোখ বুলালো!
খাবার ভালো করে দেখে বুঝলো তার কতটা খিদে পেয়েছে! কারণ মেনুতে চিংড়ি আছে দেখে পেটে খুদা নামক ইঁদুর লাফালাফি করছে টিয়ার। আর দেড়ি করলোনা টিয়া! গপাগপ খেতে লাগলো প্লেইটে নিয়ে।
স্তব্ধ নিজেই স্তব্ধ হয়ে টিয়ার খাওয়া দেখছে গ্লাস ভেদ করে বেলকুনিতে দাড়িয়ে ! টিয়ার হাত কাপছে তাও টিয়া খাচ্ছে! স্তব্ধ আর তাকিয়ে থাকতে পারলো না টিয়ার দিকে অন্যপাশে ফিরে আরো একটি সিগারেট জ্বলালো! ক্রমাগত সিগারেটটে টান দিচ্ছে স্তব্ধ টিয়ার এই কষ্ট গুলো স্তব্ধ জাস্ট মানতে পারছেনা!
স্তব্ধ আজ পর্যন্ত নিজের বাবা কথা ছাড়া একটি কাজ করেনি! স্তব্ধের জীবন টা বাবা নামে স্তব্ধ উৎসর্গ করে দিয়েছে যেমন। কিন্তু তাতে স্তব্ধের কোন ক্ষতি হয়নি কখনো বরং। বাবা কথায় কাজ করে পদে পদে শিক্ষা পেয়েছে স্তব্ধ। কিন্তু বাবার কথায় টিয়াকে নিজের লাইফে এনে যেনো আজ স্তব্ধের মনে হচ্ছে বাবার কথা না শোনাই ভালো ছিলো।
দূর থেকে টিয়াকে ভালোবেসে স্তব্ধ না হয় একাই কষ্ট পেতো। কিন্তু এখন যে তার ভালোবাসার মানুষটি সম্পূর্ণ নির্দোষ হয়েও কষ্ট পাচ্ছে। যেটা মেনে নেওয়া সহ্য করা তার ভালোবাসার মানুষটির পক্ষে সম্ভব হচ্ছেনা।
এই কষ্ট টিয়াকে পেতে হবে ভেবেই তো ৪ বছর কষ্ট দিয়েছে টিয়াকে! নিজেকে! টিয়ার সামনেও যায়নি যেনো টিয়া কষ্ট না পায়! তাকে ভুলে যায়। কিন্তু এসব কিছুই হলোনা। স্তব্ধ যেটার জন্য ভয় পেতো তাই হলো টিয়া অকারণে কষ্ট পেলো! স্তব্ধের কি করা উচিৎ সব ঝামেলা মিটিয়ে টিয়াকে নিজের কাছে রাখা উচিৎ না। ছেড়ে দেওয়া উচিৎ টিয়ার নতুন জীবন শুরু করার জন্য………
স্তব্ধ আকাশ পাতাল ভাবলো! ভেবে এটাই মাথায় এলো টিয়াকে কষ্ট দেওয়ার! কষ্টে দেখার মানেই হয়না! না সে বা তার বাবা ইচ্ছায় টিয়ার লাইফ নিরধারণ হতে পারেনা। টিয়া তার কাছে থাকলে৷ ডেনিয়ালের মতন বড় বড় মাফিয়া দের নিশানা হবে৷ যা চিরজীবন হয়তো বয়ে বেরাতে হবে টিয়াকে তার সাথে থাকলে। সব চেয়ে বড় কথা টিয়ার লাইফটাও তখন রিস্ক এর মধ্যে যখন তখন প্রান যাওয়ার ভয় …..
আর ভাবতে পারলো না স্তব্ধ। না টিয়াকে নতুন জীবন এর দিকেই ঠেলে দিবে নিজের কাছে রেখে কষ্ট দিবে না অসম্ভব! না স্তব্ধের একটুও কষ্ট হচ্ছেনা টিয়াকে ছাড়া থাকতে হবে ভেবে। সে টিয়াকে নিজের করবে ভেবে ভালোবাসেনি! ভালোবাসলেই নিজের করে পেতে হবে এর কোনও মানে হয়না! দূর থেকে আরো গাঢ ভাবে ভালোবাসা যায়। যে ভাবে সে ৪টি বছর দূর থেকে টিয়াকে ভালোবেসেছে সে ভাবেই টিয়াকে ভালোবেসে যাবে! টিয়া ভালো থাকবে তাই স্তব্ধের সব থেকে বড় পাওয়া আর কিছু চাইনা।
স্তব্ধ এবার ঘুরে টিয়ার দিকে তাকালো। খাচ্ছে এখনো মেয়েটা যেনো কতদিন শান্তিতে খায়নি! স্তব্ধ ভেবে নিলো সে টিয়ার একটা ভুল ও ভাঙবেনা৷ ভুল বুঝুক টিয়া ওকে খারাপ ভাবুক, ঘৃণা করুক ভুলে যাক ওকে এটাই টিয়ার জন্য সব থেকে ভালো!
ভেবেই লাস্ট একটা টান দিলো সিগারেটে স্তব্ধ তার শেষ অংশ টা ঢিল দিয়ে ছুঁড়ে ফেলে দিলো হাওয়ায়। গ্লাস খুলে ভিতরে গিয়ে টিয়ার সামনে মেডিসিন রাখলো খুলে। টিয়ার খাওয়া মাত্রই শেষ হয়েছে। সে মেডিসিন দেখে নাম মুখ কুচকে নিলো। তারপর ভয়ে ভয়ে একবার মাথা তুলে স্তব্ধের দিকে তাকাতেই দেখলো চোখ রাঙিয়ে তাকিয়ে স্তব্ধ তার দিকে! টিয়া আর এক সেকেন্ড দেরি করলোনা দ্রুত পানি দিয়ে মেডিসিন খেয়ে নিলো৷
স্তব্ধ টিয়া মেডিসিন হাতে নিয়েছে দেখেই চলে যায় রুম থেকে! স্তব্ধ আর থাকবে না টিয়ার সামনে বেশী। সে যা ঠিক করার ঠিক করে নিয়েছে! আর এটাই টিয়ার জন্য ভালো হবে…..
টিয়া স্তব্ধের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলো চোখদিয়ে বৃষ্টি ঝড়ছে! স্তব্ধ রুম থেকে বেরুতেই টনি ওর সামনে এসে দাড়ালো! কিন্তু স্তব্ধ দাড়ালো না! স্তব্ধ গটগট করে হেটে নিচে নামছে! টনিও উপায় না পেয়ে ছুটে যাচ্ছে স্তব্ধের পিছু আর বলছে,
— স্যার? এক্সকিউজ মি স্যার?
উত্তর দিচ্ছে না স্তব্ধ টনি আবার বললো,
— স্যার ইট’স…. কায়রা! ওকে রাইজিং গ্লোবার এর লোক। শিকাগো ওর এয়ারপোর্টে থেকে তুলে নিয়ে গেছে!
হুট করেই দাড়িয়ে পড়ে স্তব্ধ! শুধু এইটুকুই জিজ্ঞেস করে টনির দিকে তাকিয়ে শান্ত গলায়,
— বাঁচানোর কি কোন ওয়ে আছে?
টনি মাথা নিচু করে ভণিতা না করে বলে উঠে,
— মিস টিয়াকে রাইজিং এর হাতে তুলে দি…
আর বলতে পারেনা টনি! স্তব্ধ গাড়ী নিয়ে বেরিয়ে যায় সেখান থেকে! টনি মাথা তুলে তাকায় স্তব্ধের যাওয়ার দিকে এই কথাটা সে বলতো না। কিন্তু স্তব্ধ তো কথা প্যাচানো পছন্দ করেনা তাই সে বলে দিয়েছে! কিন্তু স্তব্ধ গেলো কোথায়। টনি পিছু নিতে পারলোনা কারণ টিয়া একা যদিও গার্ডের অভাব নেই এই বিশাল বাড়ীটিতে তবে কাউকে এই মুহূর্তে ট্রাস্ট করা যায় না! এই মাফিয়া, বিজনেস ম্যান এর জগতে সবাই টাকার দাশ…
চলবে।
[তেমন ভালো হয়নি হয়তো পার্টা 😕 তবে বলতে পারি একটু ধৈর্য ধরুন মন মতোই হবে। শুধু সাইলেন্ট থাকবেন না মতামত জানাবেন ধন্যবাদ ❤]