আলোয় অন্ধকার পর্ব-২৪

0
1616

#আলোয়_অন্ধকার🍁
#Roja_islam
#part 24
স্তব্ধ নিজের রুমে বেডে আধশোয়া হয়ে ল্যাপটপে কাজ করছিলো। হঠাৎ নিচ থেকে ঠাস করে কিছু পড়ার আওয়াজ হলো। স্তব্ধ দ্রুত উঠে ল্যাপটপ রেখে। দ্রুত পায়ে নিচে গেলো। সিরি দিয়ে নামতে নামতেই চোখ বুলালো এদিক ঐদিক কিন্তু হলে কেউ নেই। বিশাল বড় বাড়ী টার ভেতরে গার্ড থাকা নিষেধ। বাড়ীতে শুধু টিয়া আর স্তব্ধ আছে টনি কাজে বাইরে আছে আপাদত। স্তব্ধের চিন্তাটা তাই একটু বেশী হলো আওয়াজে। টিয়ার আবার কিছু হলো না তো!

স্তব্ধ হেটে ডাইনিং এরিয়ায় যেতেই সে হুট করেই দাড়িয়ে গেলো। তার চোখ গোল গোল রসগোল্লা হয়ে গেলো৷ একি দেখছে স্তব্ধ? না আজ রিয়াকশন না দিয়ে পারলো না সে। যদিও সে যে দাড়িয়ে আছে তাকে একদম স্বাভাবিক লাগছে। যদিও নিজের ভেতরেই স্তব্ধ অবাক!

অবাক হওয়ার কারণ। হাতে ওয়াইনের বোতল হাতে নিয়ে প্রায় বিশ চেয়ারের একটি ডাইনিং এর উপর ঠিক মধ্যে খানে টিয়া আশন পেতে বসে ঠোঁটে এক আঙুল চেপে। ধরে আছে। জেনো তাকে বলা হয়েছে কথা না বলতে। অন্য হাতে ওয়াইনের বোতল। ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে আছে স্তব্ধের দিকে টিয়া। কতটা নিরিহ সেই চাহুনি!

স্তব্ধের কেনো যেনো টিয়া একটা কিউট সুইট টেডিবিয়ার লাগছে। যেকিনা তার ভয়ে চুপ মেরে বসে আছে। টিয়ার চোখ সাদা খুব কম মানুষেরি এমন হয়! টিয়া কালো ফুল হাতার একটি টিশার্ট পড়ে সাথে ব্ল্যাক লেডিস ট্রাইজার। লাইটের আলো কালোর মাঝে সাদা চোখ গুলো ফুটে উঠেছে৷ অদ্ভুত আকর্ষণীয় লাগছে এই মুহূর্তে টিয়াকে স্তব্ধের। যেমন টিয়াই এই মুহুর্তে শ্রেষ্ঠ সুন্দরী নারী স্তব্ধের চোখে৷ স্তব্ধের ঘোর লেগে যাচ্ছে কেমন যেনো…

এদিকে টিয়া নিজের এহেম কাজে ভয়ে বিড়াল ছানার মতন চুপটি করে ডাইনিং থেকে নেমে গিয়ে সুন্দর করে ওয়াইনের বোতলটা যেখান থেকে এনেছিলো সেখানে রেখে এসে স্তব্ধের থেকে একটু দূরে দাড়ালো। স্তব্ধ ছোট ছোট চোখ করে টিয়ার দিকে তাকিয়ে আছে।

সেটা দেখে টিয়া জোরপূর্বক হেসে বললো,
— আমি শুধু বোতল ট্যাচ করেছি স্তব্ধ ওও। ইয়ে মানে খাইনি একটুও না!

কথা বলছে আর কেমন ঢুলুঢুলু করছে টিয়া।স্তব্ধ শুধু টিয়ার কাণ্ড দেখছে কিছু বলছেনা। তাতে টিয়া ভ্রু কুঁচকে বললো,
— তুমি আমার কথা বিশ্বাস করছো না? কথা বলছোনা কেনো তাহলে। আচ্ছা তুমি কি কথা বলতে পারোনা??

স্তব্ধ ধমক দিয়ে বললো,
— জাস্ট শাট আপ টিয়া!

টিয়া হুট করেই স্তব্ধের কাছে এসে গলা পেচিয়ে ধরলো। স্তব্ধ হতভম্ব হয়ে গেলো তাতে। টিয়া মিটমিট করে হেসে বললো,
— আমি যানিতো তুমি কথা বলতে পারো৷ কিন্তু ভাব নিয়ে থাকো! তুমি এমন কেনো?? আম্মু মধু দেয়নি? না কথা আছে মুখে৷ না কথা একটু মিষ্টি ভাব আছে হুহ…সব তিতা তিতা তিতা হুহ! এতো তিতা কই রাখো?

টিয়া স্তব্ধের গলায় ঝুলে একের পর এক কথা বলেই যাচ্ছে৷ স্তব্ধের তাতে অস্বস্তি হচ্ছে! জীবনে প্রথম কোন মেয়ে স্তব্ধের এতো কাছে আসতে পেরেছে তাও তার ভালোবাসার মানুষ টিয়া! সব কেমন জেনো ঘোর ঘোর লাগছে আজ স্তব্ধের। তার উপর টিয়াও আজ কিসব বলছে….

হঠাৎ কিভেবে স্তব্ধ হুট করেই কোলে তুলে নেয় টিয়াকে। টিয়া স্তব্ধ গলা জরিয়ে আরো মিশে যায় স্তব্ধের বুকে। স্তব্ধের হাটা অবস্থারেই টিয়া স্তব্ধের গালে হাত রেখে বলে উঠে,
— আমায় ভালোবাসলে কি হয় স্তব্ধ? এমন কেনো তুমি? শুধু শুধু আমায় কষ্ট দাও তুমি!

স্তব্ধের ত্যাড়া জবাব,
— আমি এমনি নাও শাট দ্যা ভাঙা রেকর্ড!

টিয়া ভ্রু কুঁচকে বললো,
— ভাঙা রেকর্ড কি?

স্তব্ধ টিয়াকে তার বেডে বসিয়ে দিয়ে বললো,
— এসব খেতে আর একবার নিচে গেলে। এই রুম থেকে আর বেরুতে পারবা না!

টিয়া কাদো কাদো হয়ে বললো,
— আপনিও আমায় ঐ ডেনিয়ালের মতন বন্দী করে রাখবেন?

স্তব্ধ কি বলবে বুঝতে পারলো না। আস্তে করে বললো,
— না রাখবোনা তুমি ঘুমিয়ে পড়ো সকালে ভালো লাগবে!

টিয়া ভয়ে উঠে দাড়িয়ে স্তব্ধকে ধাক্কা দিয়ে বেডে বসিয়ে নিজের স্তব্ধের কোলে বসে। তার গলা জরিয়ে ধরে বললো,
— প্লিজ স্তব্ধ আমার সাথেই থাকুন কতদিন পড় পেয়েছি আপনাকে? অনেক কষ্ট দিয়েছেন আপনি আমায় কেনো একটু ভালোবাসলে কি হয়!

স্তব্ধের বুকে ব্যাথা ধরে গেলো টিয়ার কথায়। টিয়ার চোখ বেয়ে পানি পড়ছে। স্তব্ধ টিয়ার চোখের পানি মুছে দিয়ে বললো,
— আমি আছি তোমার সাথে টিয়া আর কষ্ট দিবোনা!

স্তব্ধের কথা শেষ হতেই টিয়া শব্দ করে স্তব্ধের ফর্সা গালে চুমু দিয়ে বললো,
— আমি জানি আপনি দিবেন আমায় কষ্ট। বারবার দিবেন! আপনি আমায় ভালোবাসেন না তবুও আই লাভ ইউ স্তব্ধ।

বলেই একের পর এক চুমু দিতে লাগলো টিয়া স্তব্ধের গালে কপালে। স্তব্ধ মূর্তির মত বসে টিয়ার দিকে তাকিয়ে তার কাজকর্ম দেখছে। কিন্তু ভেতরে স্তব্ধের তুফান চলছে টিয়ার কথা গুলোয়৷ টিয়ার ঠোঁটের স্পর্শে! স্তব্ধ আর সহ্য করতেনা পেরে বললো,
— টিয়া স্টোপ! গুড গার্লের মতো ঘুমিয়ে পড়ো প্লিজ… আমায় যেতে হবে।

টিয়া মাথা তুলে স্তব্ধের চোখে চোখ রেখে বললো,
— তাহলে একবার ভালোবাসি বলুন প্লিজ!

স্তব্ধ টিয়ার চোখের দিকে তাকালো টিয়ার এই আব্দারে। গভীর ভালোবাসা দেখতে পেলো নিজের জন্য টিয়ার চোখে স্তব্ধ! টিয়া আবার বললো,
— প্লিজ স্তব্ধ!

আর নিজেকে আটকাতে পারলো না স্তব্ধ টিয়ার কথা শেষ না হতেই টিয়ার ঠোঁটে ঠোঁট বসিয়ে দিলো স্তব্ধ৷ দীর্ঘ দিনের তৃষ্ণার্তের মতো চুমু খাচ্ছে স্তব্ধ টিয়ার ঠোঁটে। তার সব বরাবরই মতোই উল্টো পাল্টা করে দিয়েছে টিয়া। টিয়া আবেশে ঘোর লাগা অবস্থায় চোখ বন্ধ করে আছে। বেশকিছুক্ষণ পড় স্তব্ধ টিয়ার ঠোঁট ছেড়ে কপালে কপাল ঠেকিয়ে জোরে জোরে শ্বাস নিতে নিতে বলে উঠে,
— টিয়া আই….

স্তব্ধের উত্তর শোনার আগেই টিয়া ঢোলে পরে স্তব্ধের বুকে। স্তব্ধ চোখ বন্ধ করে আরো শক্ত করে জরিয়ে ধরে টিয়াকে নিজের সাথে মিশিয়ে নেয়৷ কি হয়ে গেলো মুহূর্তে স্তব্ধ মেলাতে পারছেনা! স্তব্ধের মন চাইছে সময়টা থেমে যাক। তারা এভাবেই থাকুক অনন্তকাল এভাবেইই থাকুক। কিছু চাইনা স্তব্ধের টিয়া তার বুকে থাকলেই চলবে!

ডেনিয়ালের রুমের বিশাল বেডটার সাদা বেডসীটটা রক্ত লাল হয়ে আছে। একটা ধবধবে আমেরিকান সুন্দরী আজও ডেনিয়ালের হাতে প্রাণ হারিয়েছে! ডেনিয়াল তার রুমের সাথে লাগাওয়া ছাদের সোফায় বসে। ফর্সা বডি সম্পূর্ণ উন্মুক্ত। শুধু একটা ট্রাউজার পড়নে তার! সারা বডিতে তাজা রক্ত এখনো লেগে আছে তার। চুলগুলো এলোমেলো হয়ে আছে।

পাগলের মতো ড্রিংক্স করছে ডেনিয়াল৷ আজ দুদিন টিয়া তার কাছে নেই৷ সম্পূর্ণ অন্য ফিলিং ডেনিয়ালের৷ যা কোনদিন হয়নি না এমন অদ্ভুত ফিলিং এর আগে হয়নি তার। এই দুদিনে সে অদ্ভুত এই ফিলিং এর সাথে সে পরিচিত হয়েছে। তার মনে হচ্ছে অনেক মূল্যবান কিছু হারিয়ে গেছে তার থেকে। সেই মূল্যবান জিনিস টা চাই ডেনিয়ালের যেকোনো মূল্য চাই৷ ভেবেই ডেনিয়াল বলে উঠে,
— হারিয়ে যাওনি তুমি মিস টিয়া! তোমাকে কেরে নেওয়া হয়েছে৷ স্তব্ধ খান কেরে নিয়েছে… মরবে তুমি স্তব্ধ খান ৷ আমি এনিটাইম আসছি তোমায় মারতে৷ আমার শহরে আছো তুমি আমায় হারাতে পারবেনা! নো.. নেভার! জাস্ট ওয়েট এন্ড সি! ডেনিয়াল গ্লোবাল কিভাবে যা হওয়ার নয় তাই করে দেখায় অসম্ভবকে সম্ভব করে দেখায়!

বলেই ডেনিয়াল উচ্চস্বরে হেসে উঠে….

চলবে!
[গাইছ একটা কথা। যেহেতু প্রতিদিন গল্প দেই গল্পের পর্ব তাই একটু ছোটই হবে৷ কেনোনা রোজ এতো বড় করে দেওয়া সম্ভব হচ্ছেনা আমার ধারা। কষ্ট হয়ে যায়। মাইগ্রেনের ব্যাথাটাও বাড়ছে ইদানীং আশা করি বুঝতে পারবে সবাই ❤]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here