আলোয় অন্ধকার পর্ব-৩৪

0
1509

#আলোয়_অন্ধকার🍁
#Roja_islam
#part 34

গোধুলির লগ্ন পেরিয়েছে রক্তিম আভা কেঁটে। ঝিরিঝিরি কালো অন্ধকারকে আকাশ যত্নে আপন করে নিচ্ছে একটু একটু করে। সেই সাথে পিউর ভয় ও বাড়ছে একটু একটু করে। পাশের ঝোপঝাড় থেকে অদ্ভুত অদ্ভুত সব শব্দ আসছে। তার সাথে পাল্লা দিয়ে পিউর বুকের ডিপডিপ শব্দ বেরেই চলেছে! পিউ একা গাড়িতে বসে। একা একা কাঁদতে কাঁদতে চোখের পানি শুকিয়ে! ঘণ্টা খানেক আগে সব ঠিকই ছিলো। নিরিবিলি পরিবেশে আস্ফির কাধে মাথা রেখে শুয়েছিলো পিউ কিন্তু কতক্ষণ এভাবে? বাসায় ও তো ফিরতে হবে ওকে! তাই সন্ধ্যা হওয়ার আগেই যখন পিউ বাড়ি যাবার কথা বলল! আস্ফি কোন প্রতিক্রিয়া দেখায়নি। ও চুপচাপ সীটে মাথা রেখে চোখ বন্ধ করে ছিলো পিউর হাত এক হাতে ধরে। আস্ফির বিশেষ কোনও প্রতিক্রিয়া না পেয়ে পিউ দু তিন বার একি কথা বলতেই। ও বলল,
–” সন্ধ্যার আগে বাড়ি না পৌঁছুলে বিশেষ কোনও ক্ষতি হবে?”

পিউ আস্ফির শীতল ঠাণ্ডা কণ্ঠে আমতা আমতা করে বলল,
–” আস্ফি বাবা মা চিন্তা করছেন হয়তো আমার জন্য আমার ২ টায় বাসায় ফিরার কথা এখন ৬ টা বাজে! প্লিজ! ”

আস্ফি সেই অবস্থাতেই বলল,
–” ব্যাপারটা এটা নয়!”

পিউর মনে হচ্ছে আস্ফি হুট করেই প্যাচানো হয়ে গেছে সেই সাথে গম্ভীর। তখন থেকে চুপ চাপ বসে আছে। ওর সাথে একটা কথা বলেনি জিজ্ঞেস করেনি একবার একদিন ও কেমন ছিলো কিভাবে ছিলো। আর এখন হুট করে এসে আজব বিহেভিয়ার করছে। না এই আস্ফিকে পিউ চায় না। পিউ পিউ করে সারাক্ষণ পেছন পেছন ঘুরঘুর করা ছেলেটাকে ও চায়। সারাক্ষণ ওকে ঝগড়াটে বলে ক্ষেপানো ছেলেটাকে ও চায়। হুটহাট….. পিউ দীর্ঘশ্বাস ফেলল ওর মন ভেঙে গেলো যেন আস্ফিকে এভাবে দেখে। ও কিছুটা রেগেই বলল,
–” বাসায় গেস্ট আসবে আমাকে দেখতে বাসায় ফিরতে হবে! ”

এবার আস্ফি চোখ তুলে তাকালো ওর দিকে। কী ভয়ংকর শীতল দৃষ্টি আস্ফির পিউ ছোট খাটো একটা ঢোগ গিলে চুপসে গেলো। আস্ফি পিউর মাথার পিছনের চুল ডান হাতে চেপে ধরে ওকে একদম নিজের মুখোমুখি করলো। পিউ ভয়ে ব্যাথায় ফুঁপিয়ে উঠলো। আস্ফি কিছুর তওয়াক্কা করলোনা। ভীষণ রেগে চিবিয়ে চিবিয়ে বলল,
–” আমি তোকে প্রচুর সময় দিয়েছিলাম পিউ! প্রচুর সময় ফোর্স করিনি কখনও। তুই আমাদের বিষয়টা খুব স্মার্টলি হেন্ডেল করতে পারতি। তাই না? বাট ইউ নো হোয়াট তুই প্রচণ্ড বাড়াবাড়ি করেছিস! আমি তবুও কিচ্ছু বলেনি! সময় দিয়েছিলাম। কিন্তু একটা লিমিট থাকে তাই না? বলেছিলাম না আমার ব্লাড ভালো নয়! আমায় রাগাস না! আমি না করলেও আমার ব্লাড খারাপ কিছু করে বসবে যা তোর জন্য ভালো কিছু বয়ে আনবেনা! নাও আমি যেটা করবো! তুই এটাই ডিজার্ভ করিস!”

বলেই আস্ফি রেগে ওকে গাড়িতে লক করে রেখে সেই যে বেরিয়েছে এখনও ফিরেনি!

পিউ আজ উপলব্ধি করলো আসলে ওর থেকে শতগুণ অভিমান, অভিযোগ আস্ফির অদের রিলেশনে। আস্ফি তো কম সহ্য করেনি ওর পাগলামো। আস্ফি জানতো পিউ মুখোমুখি না বললেও পিউ আস্ফিকে ভালোবাসে তবুও পিউ আস্ফিকে জ্বালাতে বিভিন্ন উপায় বের করতো। আস্ফিকে কষ্ট দিতো ওকে ভালোবাসেনা বলে বলে। আসলে পিউ কিছুই ইচ্ছে করে নি ওর বাচ্চামো থেকে করে ফেলেছে কিন্তু আস্ফি ঠিকি কষ্ট পেয়েছে! আর এখন ও নিজে পাচ্ছে। আচ্ছা পাচ্ছে না আস্ফি নিজে ওকে শাস্তি দিচ্ছে? কাঁদতে কাঁদতে গলা শুকিয়ে গেছে ওর! ভালোবাসা জিনিসটা বড্ড যন্ত্রণার!

পিউ কোথায় আছে ও জানে না কিন্তু সন্ধ্যায় পেরিয়ে গেলেও আজান শুনলোনা ও। বুঝতে বাকি নেই আশেপাশে মানুষের বসবাস নেই মসজিদ কোথা থেকে আসবে। আর ও আজানিবা কি করে শুনবে। এদিকে বাসায় কি হচ্ছে ওর চিন্তার বাহিরে। চিন্তায় ও ফোন বন্ধ করে বসে বসে আল্লাহ আল্লাহ করছে। গাড়িতে একটু পানিও নেই যে কাঠ হয়ে যাওয়া গলাটা ভেজাবে! ও আশেপাশে তাকালো মানুষ টা গাড়ি থেকে নেমে হাওয়া হয়ে গেলো? কোথাও দেখতেও পাচ্ছেনা! আজ রাতে কী আস্ফি পিউকে ছাড়বেনা? ওর শাস্তি কি ওর বাবা মা নিজের সম্মান হারিয়ে পাবে। ভাবতেই গলা ছেড়ে কেঁদে উঠলো ও! গাড়ির জানালায় হাত দিয়ে ধাক্কাতে লাগলো ও!

টনি জ্যাক একসাথে কী যেন কথা বলছে। ডাইনিং এ ডেনিয়ালের পাশে বসে বসে ব্রেকফাস্ট করতে করতে সেটাই আর চোখে দেখছে টিয়া৷ বিরক্ত হয়ে ব্রেকফাস্ট করতে করতে টনির সাথে চোখাচোখি হয়ে গেলো দ্রুত চোখ সরিয়ে নিয়ে কাচা শাক-সবজিতে মনোযোগ দিলো টিয়া। সবজি চিবুতে চিবুতে সেদিন জ্যাক এর জন্য ডেনিয়ালের রুম থেকে বেরুতে পেরেছে বলে মনে মনে জ্যাককে ধন্যবাদ দিলো। আসলে মনের ধন্যবাদ বাদ বড় ধন্যবাদ। জ্যাক শুনলো কি শুনলোনা তাতে ওর যায় আসেনা! যেমন জ্যাক নিজেও জানে না হুট করে ডেনিয়ালের কাছে চলে এসে কতবড় উপকার করেছে ওর!

টিয়াকে ভাবলেশহীন ব্রেকফাস্ট করতে দেখে ডেনিয়াল খেতে খেতে বলল,
–” আমার সামনে এভাবে বিরক্ত হয়ে খেলেই তোমার ব্রেকফাস্ট মেন্যু চেঞ্জ হয়ে যাবেনা! তাই ঠিক করে খাও!”

শেষের কথাটা ডেনিয়াল রুক্ষ কণ্ঠে বলল। ডেনিয়লের কথায় বিশেষ কিছুই ছিলোনা। কিন্তু যা ছিলো সেটা টিয়া ছাড়া কেউ বুঝবেনা এটা কত যন্ত্রণার! টিয়ার নাক ফুলে ফেঁপে উঠছে চোখে অল্পস্বল্প পানিও চলে এসেছে রাগে দুঃখে চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে করছে! এ কেমন জীবন যেখানে নিজের মর্জিতে কিছুই করা যায় না! এমন ভালো আছি দেখানো জীবন ওর চাইনা! স্তব্ধ কেন ওকে ফেলে গেলো এখানে ওকে নিয়েই নাহয় ওপারে চলে যেতো। ব্যাস সব শান্তি সব ঠিক হয়ে যেতো তখন ওকে এই হিংস্র প্রানীটার সাথে থাকতে হতোনা! যার না আছে মন না আছে মায়া না আছে দোয়া! টিয়ার জীবনে দেখা সবচেয়ে নির্দয় পাষণ্ড ছেলে ডেনিয়াল! পাষণ্ড পাষণ্ড পাষণ্ড…

টিয়া আর পারলোনা ওর ক্ষুব্ধ মন হু হু করে কেঁদে উঠলো! স্থান কাল পাত্র সব ভুলে গেলো ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো । ফর্সা মুখ মুহূর্তে লাল বর্নের হয়ে গেলো। সামনে বসা ডেনিয়াল কিংকর্তব্যবিমুঢ় হয়ে তাকিয়ে রইলো টিয়ার রক্তিম মুখস্রিতে। টিয়া হঠাৎ এভাবে কেঁদে উঠায় ডেনিয়াল হতভম্ব ওর হাত থেকে একটি চামচ নিচে পরে গেলো যার শব্দে টিয়ার হুস এলো! ও কান্না থামাতে চেষ্টা করতে করতে ডেনিয়ালের দিকে তাকালো। ডেনিয়ালের হুস এলো টিয়ার তাকানোতে! ডেনিয়াল কিছু বলবে টিয়া দৌড়ে উপরে চলে গেলো। ডেনিয়াল টিয়ার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে ভাবতে লাগলো। টিয়াকে ও এর থেকে বড় বড় ধমক, হিংস্র বিহেভিয়ার দিয়েছে এভাবে তো কখনও ওকে কাঁদতে দেখেনি। ডেনিয়াল ফিল করলো ওর কোথাও একটা খুব যন্ত্রণা হচ্ছে। এরকম টা আগে কখনও হয়নি! কেন হচ্ছে এত যন্ত্রণা টিয়ার কান্নায়? নাকি কান্নার কারণ ও নিজে সেটা ভেবে!

টিয়া এভাবে রুমে এসে বিপাকে পরে গেলো! তখন ওর মন ক্ষুব্ধ থাকলেও ধীরে ধীরে ও বুঝলো ও কি করেছে। এই এক মাসে ও বুঝেছে ডেনিয়াল মন মতো ব্যাবহার ওর থেকে না পেলেই ওকে বিভিন্ন ভাবে বিরক্ত করে শাস্তি দেয় ডেনিয়াল। শাস্তি আর বিরক্তিকরার কারণ গুলো এমন যা নরমাল সেন্সের মানুষ করেনা। বিকৃতমস্তিষ্ক এর মানুষ ধারাই এগুলো সম্ভব। প্রথম প্রথম যখন ও জেনেছিল টনি স্তব্ধের মৃত্যুর কারণ। ও নিজের মধ্যে ছিলোনা। তখন ডেনিয়ালের বিকৃতমস্তিষ্ক এর সাথে পরিচিত হয় ও। এত দিনের অত্যাচার এরপর তখন ও শিওর হয় ডেনিয়াল একটা সাইকো যার ধারা সব সম্ভব। নিজের জেদ আর খায়েশ পূর্ণ করতে ডেনিয়াল নিজের বাবাকেও নিজ হাতে মারতে পারে। তখন নিজের ভালো জন্য ও ডেনিয়ালের কথা মতোই চলতে শুরু করে। ওকে এটা বুঝাতে বাধ্য হয় ও স্তব্ধকে ভুলে গেছে। আর তার পর পরি ও লক্ষ্য করেছে ডেনিয়াল আর ওকে বিয়ের জন্য জোর করছেনা। ঠিক তখনি ও বুঝলো ডেনিয়ালের মনে ওর জন্য বিন্দুমাত্র মায়াও নেই ভালোবাসা দূর কথা! না চাইতেও ওর অবচেতন মন ডেনিয়াল ওকে নিজের কাছে রাখতে যে পাগলামো করছিলো সেটা দেখে যে কেউ এক মূহুর্তের জন্য ভাববে ডেনিয়াল ওকে ভালো বাসে কিন্তু এমনটা নয়। ডেনিয়াল যখনই দেখলো ও স্তব্ধকে ভুলে যাচ্ছে ধীরে ধীরে ওর কথা মতোই চলছে তখনই ওর জেদ কমে এলো ও বুঝলো টিয়া আর কোথাও যাচ্ছেনা। তখন ও কিছুটা স্বাভাবিক আচরণে চলে এলো! তবে নিজের জোরালো অধিকার ওর উপর বজায় রাখতে অনেক নিয়ম কানুনে মুরে দিয়ে ওর জীবন নরক করে দিলো। তাই বাধ্যতামূলক ও ডেনিয়ালের সাথে স্বাভাবিক সুন্দর আচরণই করে থাকে!

কিন্তু আজ এভাবে কান্নার জন্যে কি ডেনিয়াল আবার ওকে কোনও রকম শাস্তি দিবেনা তো! কিভাবে ও এত বড় বোকামি করলো ও কেন নিজের আবেগ সামলাতে পারেনি ওই জানোয়ার টার সামনেই কেঁদে দিলো! কিন্তু ওর কি দোষ ও যে আর পারছেনা এই জেল খানা ওর আর সহ্য হচ্ছেনা!

সেদিনের পর টনি অনেকবার কিছু বলতে চেয়েছে ওকে! প্রথম প্রথম রাগে,ক্ষোভে ও শুনতে চায়নি। একসময় ডেনিয়াল এর অমানবিক নিষ্ঠুর আচরণের ফলে ও রাজি হয় টনির কথা শুনতে। কিন্তু তখন বোধ হয় ডেনিয়াল কিছু আঁচ করে ফেলেছিলো। টনিকে আর টিয়ার আশপাশে আসতে দেওয়া হয়নি! এই নিয়ম ও এখনও চেঞ্জ হয়নি। ডেনিয়ালের মতো তার গার্ডদের তীক্ষ্ণ নজর পেরিয়ে টনির কথা শোনার মতো সাহসও নিজের মধ্যে হয়নি।বড় কথা বড্ড দেড়ি করে ফেলেছিলো ও সেবার! সত্যি বলতে ও একটি জোর জবরদস্তি জীবন কাটাচ্ছে। আল্লাহ ভালো জানেন কিসের শাস্তি পাচ্ছে ও!

সেদিনের মতো ডেনিয়াল এর দেখা টিয়া আর পায়নি। বেশ অবাক হয়েছে ও এই একমাস ডেনিয়াল ওকে ছাড়া ব্রেকফাস্ট, লাঞ্চ,ডিনার কিছুই করেনি! সেখানে ডেনিয়ালকে ও বাসায়ই দেখছেনা আজ প্রায় এক উয়িক হলো। এতে ওর অবশ্য কিছু যায় আশেনা। কিন্তু বেশি ভালো থাকাও যে ওর কপালে সহ্য হয় না। এই এক সাপ্তাহ টিয়া বাসার ভেতরেই হোক যা খুশি করেছে, খেয়েছে কোনও বাধ্যবাধকতা রাখেনি ডেনিয়াল ওর জন্য! মনের এক কোণা অনেক শান্তিতে এই সাপ্তাহ থাকলেও অন্য কোণা বড্ড চিন্তিত ওর। ডেনিয়াল কোথায় এসে আবার ওর সাথে কি করবে? একটা কথা বলতেই হবে যতই রাগ, জেদ, ক্ষোভ ওর ডেনিয়ালের উপর থাকুক না কেন তবুও ডেনিয়ালকে ও যমের মতো ভয় পায়। ঈগলটার আশেপাশে থাকতেও ও বুক ধুকপুক ধুকপুক করে!

জ্যাক আর টনি পাশাপাশি ঝাকঝমকালো শহরের একটি বিখ্যাত ক্লাবে বসে চমৎকার সব মেয়ের ডান্স দেখতে দেখতে স্মোকিং করছে। তবে জ্যাক স্পষ্ট বুঝতে পারছে টনি এসব চমৎকার মেয়েগুলো দেখতে মোটেও ইন্ট্যেরেস্ট নয়! জ্যাক ফিল্টারে বেশ আয়েশ করে একটা টান দিয়ে অদ্ভুত ভংগিমায় বাঁকা হেসে বলে উঠলো,
–” তোমার মনে হয় তোমার ম্যামকে তুমি বাঁচাতে পারবে?”

টনি চমকে তাকালো! জ্যাক কী ওকে ধরে ফেলল? তবুও নিজেকে সামলে বলল,
–” কি বলতে চাইছো তুমি?”

জ্যাক এবার একটু শব্দ করে হেসে বলল,
–” তুমি ভালো যানো সেটা! আমি কি বলছি!”

টনি এবার আর কিছুই বলল না। ঘাবড়ে গিয়ে ও কিছু করতে চায় না! তাই চুপচাপ ভাবতে লাগলো ব্যাপার টা কি করে হেন্ডেল করা যায়। ওর চিন্তিত ব্রেককে আরো চিন্তিত করতে জ্যাক পুনোরায় বলে উঠলো রূঢ় কণ্ঠে,
–” তুমি যা ভাবছো সেরকম কিছুই হবে না। বরং তুমি নিজের প্রাণ হারাবে! আর তোমার ম্যাম আই মিন টু স্যে টিয়া! সেটার মূল্য সারা জীবন চুকিয়ে শেষ করতে পারবেনা! ডেনিয়ালকে শেষ করা সম্ভব নয়। অন্তত তোমার ম্যাম এর পক্ষে তো নয়ই। যেনাকি ডেনিয়াল তার পাশে দাঁড়ালেও শিকার করা হরিণের মত কাঁপতে থাকে!”

বলেই বাঁকা হাসলো জ্যাক! টনি ওর কথা শুনে চেয়ারে হেলান দিয়ে মাথা নিচু করে একটু হাসলো! বলল,
–” ডেনিয়ালকে শেষ করা সম্ভব নয়! হু? অসম্ভব ও নয় জ্যাক?”

জ্যাক চুপ করে রইলো যেন এমন কিছু শোনার অপেক্ষায় সে ছিলো। সেটা বুঝতে পেরে টনি বলল,
–” তুমি কি আমাকে হেল্প করতে চাও জ্যাক! আমি তোমার চোখে অন্যকিছুই দেখতে পাচ্ছি!”

জ্যাক কিছু বলল না কিছু ড্রিংকস অর্ডার করলো দুজনের জন্য। টনি যেন নিজের উত্তর জ্যাকের মুখ পরেই নিয়ে নিলো। তাই ও আর কথা বাড়ালোনা! মনে মনে এতো দিনের তৈরি করা প্ল্যান কার্জ পূর্নতা পাবে ভেবেই ওর চোয়াল শক্ত হয়ে গেলো। ওর ক্ষুব্ধ মন চেঁচিয়ে উঠলো রাগে! যেন এখুনি শেষ করে দেবে ডেনিয়ালকে! ক্ষোভে ও একের পর এক ড্রিংক মুখে পুরলো!

টিয়া ডিনার করে মাত্রই বেডে শরীল এলিয়েছে ঘুমাবে বলে যখনি তন্দ্রা ভাব চলে এলো এলো বলে ঠিক তখনি মনে হলো ওর দিকে কিউ তাকিয়ে আছে! ও লাফ দিয়ে উঠে বসলো! ডান পাশে তাকিয়ে বাম পাশে তাকাতেই ও ভড়কে গেলো! ডেনিয়াল অদ্ভুত দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকিয়ে আছে! খুব হ্যান্ডসাম লাগছে ওকে মনে হচ্ছে কোনও পার্টি থেকে ফিরেছে মাত্র কিন্তু লুক এখনও একদম পরিপাটি এবং পার্ফেক্ট! টিয়া কিছুটা হাসার চেষ্টা করে বলল,
–” আপনি কোথায় ছিলেন এতোদিন? ”

ডেনিয়াল গায়ের ব্লেজার টা খুলে দূরে ছুড়ে ফেলল। টিয়া যথেষ্ট স্বাভাবিক থাকার চেষ্টা করলো! ডেনিয়াল অর হোয়াইট শার্ট এর হাতা ফোল্ড করতে করতে ওর পাশে বেডে গিয়ে বসে বলল,
–” কেন? মিস করছিলে আমায়?”

টিয়া মনে মনে হাসলো। এই জলজ্যান্ত সাইকোটাকে ও মিস করবে? যাকে গলা টিপে রোজ হত্যার স্বপ্ন দেখে। আশ্চর্য কথা! মনকে সম্পূর্ণ দূরে রেখে ও বলল,
–” অবশ্যই। আপনি ছাড়া এখানে আমার কে আছে আর?”

ডেনিয়াল উত্তরে খুশি হলো বুঝা গেলো। ও টিয়াকে জরিয়ে ধরলো। বলল,
— তোমার জন্য সারপ্রাইজ রেড়ি করছিলাম! তাই দূরে ছিলাম! ”

হুট করে জরিয়ে ধরায় ডেনিয়ালের বুকে হাফসাফ করছিলো টিয়া। ডেনিয়ালের কথায় ভয়ে ভয়ে বলল,
–” কি সারপ্রাইজ? ”

যদিও সারপ্রাইজ কাউকে বলে দেয়না তবুও টিয়ার মুখে ওর জন্য ভয় দেখে ডেনিয়ালের ভালো লাগলোনা। টিয়ার মুখে একটু হাসি দেখতে ও সত্যিটা বলে দিলো চট করেই!
–” আমারা বাংলাদেশ যাচ্ছি! কাল রাতে ফ্লাইট! আর ইউ হ্যাপি?”

চলবে!

[ টিয়া বাংলাদেশ যাচ্ছে খুশিতো! আচ্ছা একটা কথা বলুন এই গল্পের নাম অনুযায়ী আপনাদের কি মনে হয় গল্পটা স্যাড নাকি হ্যাপি এন্ডিং হবে? কোনটা?]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here