আমার_আদরিনী
আশুথিনী_হাওলাদার
পর্ব-২
রিকশায় পাশাপাশি বসে তিলাত আর রিনি। তিলাত খুব’ই বিরক্ত। রিনি তাকে নিয়ে সারাদিন ঘুরতে চাচ্ছে। তবে তিলাতের এখন খুব ঘুম পাচ্ছে। তাকে যে করেই হোক ঘুমোতে হবে। তাই বিরক্ত হিয়ে মুখ ফুলিয়ে বসে আছে। রিনির তাতে কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। সে তার মতো বকবক করে যাচ্ছে। তিলাত প্যান্টের পকেট থেকে তুলা বের করে কানের ভিতর দেয়। রিনির বকবকের কারনে সে তার কাছে তুলোর প্যাকেট কিনে রেখেছে। মনে মনে রিনিকে হাজার রকম গালাগাল দিয়েছে। চোখ বুজে রিকশার সাথে লেগে ঘুমিয়ে পরে তিলাত। রিনি তার সারা শব্দ না পেয়ে তিলাতের দিকে তাঁকায় ইতিমধ্যে তিলাত নাক ডাকা শুরু করেছে। অবাক রিনি। রিকশায় কেউ ঘুমতে পারে? আশ্চর্য! এই কুম্ভকর্ণ কে না দেখলে কখনো জানতো না। রেগে জোরে ধাক্কায় দেয় তিলাত কে। লাফিয়ে উঠে তিলাত। চোখ বুঝে বলতে থাকে,,
__‘মা, তিনু ভুমিকম্প হছে আমি লরছি খাট লরছে। মেঘ মেঘ ভাই বাঁচা আমায়। আমি তোর কাছেই আমার বোন বিয়ে দেব কথা দিচ্ছি বাঁচিয়ে দে আমায়।
রিকশাওয়ালা মামা রিকশা থামিয়ে রাস্তায় বসে শব্দ করে হাসিতে থাকে। ফোস করে ওঠে রিনি। অনেকেয় তাঁকিয়ে আছে তাদের দিকে। তিলাতের কান থেকে তুলো বের করে। বলে,,
__এটা কি?
এক চোখ খুলে দেখে তিলাত। জিভ কাটে তিলাত। বিরবিরিয়ে বলে,,
__‘কাম সারছে।
মেকি হেসে বলে,,
__এটা কি বাবু।
দাত বের করে হাসে রিনি। দাতেত দাত চেপে হেসে বলে,,
__কেন বাবু এটা জানো না কি?
ডায়েরি নিয়ে বসে তিয়ানা। তার স্বভাব বা বদ অভ্যাস হলো ডায়েরি লেখা ছোটো বেলা থেকে এটা তার সংগি। অবশ্য ডায়েরি গিফট করেছিল মেঘালয় । তিয়ানার সপ্তম জন্মদিনে এক ডজন ডায়েরি তাকে গিফট করে মেঘালয়। আর বলে, ডায়েরি তে প্রতিদিন যা যা ঘটে সব লিখে রাখতে। তিয়ানা লিখেও তবে সেটা প্রতিদিনের সব ঘটনা না। শুধু ‘মেঘালয়’ নামক প্যারা কে নিয়ে তার সব লেখা। লিখতে শুরু করে তিয়ানা।
_আমার জীবনের সবচেয়ে প্যারাময় মানুষটি হচ্ছে তা গ্রেট মেঘালয় চৌধুরি। আমার জন্ম থেকেই এই প্যারাটা আমি সয়ে আসছি। প্রথমে বাবার বন্ধুর ছেলে তারপরে ভাইয়ের বন্ধু। জীবন তেজপাতা করে ফেলেছে। ইনি যত প্যারা আমায় দিয়েছেন। ততো প্যারা এ জীবনে আমার বাবা বা ভাইয়াও আমায় দেয়নি কখনো। শুনেছিলাম আমার জন্মের পর যখন উনি আমায় কোলে নিয়েছিলেন আমি নাকি তার কোলে পটি করে দিয়েছিলাম। এমনকি যতবার আমাকে তিনি কোলে নিয়েছেন হয় আমি পটি করেছি নয়তো হিসু। এটা আমার তার থেকেই শোনা। এবং সেটা নিয়ে তিনি আমায় আমার এই ২০ বছরের জীবনে কম জ্বালায়নি। অবশ্য শুধু তিনি না আমার আর তার পরিবারের সদশ্যরাও আমাকে নিয়ে বেশ হাসি হাট্টা করিয়েছেন। তবে বেশি পচানিটা আমি মি.মেঘালয় চৌধুরি কাছ থেকেই খেয়েছি। এমন খাওয়া খেয়েছি যে এখন আর আমার ভাতের খুদা লাগে না। মাঝে মাঝে তো ইচ্ছে করে৷ তার মাথায় চোরে কাকের মতো পটি করে দুর্গন্ধ করে দিতে। তারপর বলতে ইচ্ছে করে যে,, এবার পচা যত পারিস পোচা। নো সমস্যা এবার আমি জেনে বুঝেই সজ্ঞানে তোর মাথায় পটি করে দিয়ে দুর্গন্ধ ছড়িয়ে দিয়েছি। এবার যত খুশি পচা। কিন্তু মেঘালয় নামক প্যারা কে আমি শুধু ডায়েরি পাতাতেই যত খুশি গালি, বা কথা শুনাতে পারি। বাস্তবে আমি তার সামনে নিতান্তই এক নিরহ প্রানী।
“__তিনু শোন।
মায়ের ডাকে লেখা শেষ করে উঠে তিয়ানা।
হেলতে দুলতে রান্নাঘরের মোরাতে গিয়ে বসে। আলশে দিয়ে প্রশ্ন করে,
__‘কিছু বলবা? আমার বহুত ঘুম পাচ্ছে ঘুমতে হবে যা বলার তাড়াতাড়ি বলো।
কটমট করে মেয়ের দিকে তাঁকায় ‘তুলিকা আহমেদ’। তিয়ানা মায়ের এমন চাহনি দেখে বোকা হাসে।
তুলিকা মেয়ের দিক থেকে চোখখ সরিয়ে। টিফিন বক্স রেডি করে বিরিয়ানি রাখে তাতে। তিয়ানা বিরিয়ানি দেখে লাফিয়ে উঠে। প্লেটে নিয়ে খেতে যায়। তুলিকা তার কাছ থেকে প্লেট টেনে নয়ে টিফিন বক্স হাতে তুলে দেয়। তিয়ানা ঠোঁট উল্টে অসহায় চোখের মায়ের দিকে তাঁকায়। তবে তাতে তুলিকার ভ্রুক্ষেপ নেই। সে কড়াইতে তেল ঢেলে বলে,,
__আগে বাটিটা নিয়ে মেঘদের বাড়ি তে দিয়ে আয়। তারপর এসে খাবি। মেঘ বাবা বিরিয়ানি খুব পছন্দ করে।
বিরক্ত হয় তিয়ানা। রআগ মিশ্রিত কন্ঠে বলে,
__সারাক্ষন মেঘ মেঘ। তোমার মেঘ বাবা বিরিয়ানি শুধু পছন্দ করে। আমি করিনা? সব কিছুতে শুধু মেঘকেই দেখো তোমরা। আমি কোথায়? আমার কাছ থেকে যখহন কেড়ে নিয়েছো খাবার। আমি খাবোইনা তোমার বিরিয়ানি।
মেয়ের এমন কথায় তুলিকা কিছুটা অবাক হয়। এর আবার কি হলো হঠাৎ করে। বাটি নিয়ে বাড়ি থেকে বেড়িয়ে যায় তিয়ানা। উদ্দেশ্য মেঘালয়ের বাড়ি। তাদের বাড়ি থেকে পাঁচ মিনিটের পথ। হেটে যাওয়া আশা করা যায়।
রুম লাগাওয়া বেলকনিতে গিটার নিয়ে বসে মেঘালয়। তবে বেলকনি বলা যায় না। বেলকনি না বলে মিনি ছাদ বলা যায়। গিটারে সুর তোলার চেষ্টা করে মেঘালয়। তার অনেক গুলোর সখের প্রধান সখ গান আর গিটার। তার থার্ড ভালবাসা বলা চলে। গেটের দিকে চোখ যায় তার। তিয়ানা কে আসতে দেখে। মৃদু হেসে গিটারে সুর তুলে সাথে নিজের কন্ঠে। তিয়ানার বড় দূর্বলতা তার কন্ঠের সুর, গান। তার গিটার বা ভাইলেনের সুর।
‘কলিং বেল বাজিয়ে দরজার সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়ায় তিয়ানা। মেঘালয় গান গাচ্ছে। এই কন্ঠ তাকে খুব খুব করে টানে। কিন্তু সে চায় না। মোটেও চায়না। এই কন্ঠের জাদুতে নিজেকে হারাতে। তিয়ানা ভেবেও পায়না। এমন খারুশ বজ্জাদ গম্ভীর ছেলের গলার স্বর কেন এত মিষ্ট সুন্দর হবে। হওয়া তো উচিত কর্কশ কন্ঠের উধিকারি। চেহারা হওয়া উচিত ইয়া লম্বা লম্বা তাল গাছ টাইপ তবে তাল গাছের মতো লম্বা আছে। যেখানে সে চুনোপুটি। আর এর নাক হওয়া উচিত ছিল শুপারি গাছের মতো লাম্বুস। কান হওয়া উচিত হাতির কানের মতো। কিন্ত্য শেগুরে বালি। হয়েছে পুরু ইংরেজদের মতো ধইলা আর চেহারা তো মাশাল্লাহ। এদের পূর্বপুরুষ হয়তো ইংরেজ ছিল তাই এত ধলা। যেদিন থেকে ক্রাশ শব্দের মানে সে জানে। সেদিন থেকে প্রতি ক্ষনে ক্ষনে এই খারুশ টার উপর উঠতে বসতে ক্রাশ খায় সে। তবে যেকোনো সময় ক্রাশ বাশে পরিনত হতে পারে ভেবে নিজেকে সামলে নেয়। মেঘালয় নামক প্যারাকে আর যাই হোক বিশ্বাস করতে নেই। কখন যে এসে তাকে ভেনিশ করে দেবে ঠিক নেই।
হঠাৎ হুমরি খেয়ে ফ্লোরে পরে যায় তিয়ানা। কোমড়ে হাত দিয়ে আশে পাশে তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করলো কি হলো। সামনে মেঘালয় দেয়ালে হেলান দিয়ে এটিটিউড নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ভেংছি কাটে তিয়ানা। এত ভাব যে কই থেকে আসে। ভেবে পায়না সে। তিয়ানা উঠতে গিয়ে বুঝতে পারে বেশ ব্যাথা পেয়েছে সে। তাই চিৎকার করে ডেকে উঠে,,
__মাম্মিম’
তিয়ানার চিৎকারে মেঘালয় নিজের এটিটিউড ভুলে কান চেপে ধরে। কিচেন থেকে ছুটে আসে ‘মৌমিতা’।
তিয়ানাকে এভাবে ফ্লোরে পরে থাকতে দেখে তার কাছে গিয়ে তাকে জড়িয়ে ধরে। জিজ্ঞেস করে,,
__‘তিনু মা আমার কি হয়েছে?
তিয়ানা ফুপিয়ে বলে,
__‘তোমার ছেলে আমার ফেলে দিয়েছে মাম্মিম।
মেঘালয় কটমট করে তাকায় তিয়ানার দিকে।
তিয়ানা তার মাম্মিমের কোলে মুখ লুকিয়ে হাসে। এবার খাক বকা। খারুশ একটা ।
চলবে?
(দু এক লাইন মন্তব্য চাচ্ছি। 😑😑😑😐😐😐৷ সেটাও কি দেয়া যায় না। নাম না ওদের চরিত্র ওদের স্বভাব কেমিন লাগলো সেটা জানতে চসিছিলাম 🙃🙃🙃 আর কাল হয়তো গল্প দিতে পারবোনা। কেউ অপেক্ষা করবেন না)