#আমার_আদরিনী
আশুথিনী_হাওলাদার (ছদ্মনাম)
পর্ব-১০
চিঠি পড়া শেষে কপাল কুচকে ফেলে মেঘালয়। তিয়ানার দিকে ফিরে গম্ভীর স্বরে প্রশ্ন করল,,
__‘এটা কি? ‘
তিয়ানা ঠোঁট থেকে হাত সরিয়ে চুপসানো মুখে দরজার সাথে লেগে দাঁড়ায়। বাম ভ্রু কুচকে ফেলে মেঘালয়। আগের থেকে কঠর আর গম্ভীর স্বরে ধমকে জিজ্ঞেস করলো ,,
__‘এটা কি? জিজ্ঞেস করছি না? এটা কি?
ভয়ে ফুঁপিয়ে ওঠে তিয়ানা। কথা বলার চেষ্টা করছে সে কিন্তু স্বর ভেজে আছে ভয়ে বের হচ্ছে না তো। তাতে সে কি করবে? তার কি দোষ? তিয়ানাকে ফুপিয়ে উঠতে দেখে চোখ গরম করে তার দিকে তাঁকায় মেঘালয়। মেঘালয়ের দৃষ্টির মানে বুঝতে পেরে নিজেকে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করে তিয়ানা। কাচুমাচু কন্ঠে বলল,,
__‘লিটন দা!
চোখ মুখ কুচকে ফেলে মেঘালয়। বলল,,
__‘লিটন দা কি?
__‘আমাকে লিটন দা এটা দিয়েছে।’
তিয়ানার থেকে দৃষ্টি ফিরিয়ে হাতে থাকা কাগজের কে একবার দেখে আক্রোশ নিয়ে দুমড়ে মুচড়ে ফেলে কাগজটাকে। অসয় চোখে চেয়ে দেখে তিয়ানা। তার মনে হচ্ছে, মেঘালয়ের কাগজটাকে না লিটনদাকে তার হাতে পিষ্ট করে ফেলছে। দুঃখ হয় তিয়ানার। ভারি দুঃখ হয় লিটনদার জন্য। এত সাধ করে ভালবেসে চিঠি লিখলো তার জন্য। সেই চিঠির অন্তিম যাত্রা দেখে তার দুঃখে কান্না আসছে। তিয়ানাকে এক পলক দেখে পায়ে ধপধপ আওয়াজ ফেলে বেলকনিতে গিয়ে লিটনদার ঘর সোজা ছুড়ে ফেলে তার দিকে অগ্নি দৃষ্টি ফেলে বেরিয়ে চলে যায় মেঘালয়। শুধু তার ঘর না বাড়ি থেকেও।
‘সেদিনের পরের দিন’ই তিয়ানার ঘরে বেলকনিতে ইয়া বড় পর্দা টেনে দেয় মেঘালয়। তিয়ানা দুঃখি মনে মুখ ভার ভার করে সবটা শুধু দেখলো। তার চেয়ে চেয়ে দেখা ছাড়া করনীয় কিছু ছিল না। মেঘালয় যা বলবে সেটাই মানা হবে। অন্তত তার ব্যাপারে ‘বড় ভাই বলে কথা মানতে তো হবেই। তার ভালোর জন্যই তো করছে এসব’এটা তিয়ানার কথা নয় তার মায়ের কথা যা তাকে শুনতে হয়েছে। তখন সে মনে মনে বলল,,
__‘বড় ভাই না বলে জামাই বলতে পারো না? ‘জামাই’ বইলা দেখো এক বার, সব মাইনা নেবো। তা তো বলবা না। তোমরা হলে গিয়ে অতিভদ্দর লোক। লোকের মেয়ে বাপের বন্ধুর ছেলেকে ভাইয়ের বন্ধু কে বিয়ে করতে চায়না। তারা জোর করে মাইয়া বিয়া দিতেছে। আর তোমাদের মাইয়া এক পায়ে খাড়াইয়া আছে তা তো তোমরা দেখবা না। তোমরা তো জামাই না বড় ভাই বানাইয়া রাখছো। আমার কি ভাই নাই? ভাইয়ের বন্ধুর কীসের জন্য ভাই হওয়া লাগবো। প্রচলিত প্রথা ভাইয়ের বন্ধু ভাই না জামাই হয় তা কি জানো না? ‘
তবে মনে মনে এসব চিৎকার করে বললেও বাইরে সে টু শব্দটি করতে পারলো না। সে এসব বলল, আর তার মা তাকে ঠাস ঠাস কয়েকটা ঝাঁটার বারি দিলো তখন তার সম্মান শেষ।
এরপর বেশ কিছুদিন মেঘালয়ের সাথে দেখা হয় না তার। মেঘালয়ও খুব একটা আসে না। নতুন হস্পিটালে জয়েন করেছে সারাক্ষন ব্যাস্ত মানুষ । তার খবর রাখার কি দরকার? সে তো বোন হয়। বন্ধুর বোন তো বোন’ই হয়। অন্য সব ভাইয়ের বন্ধুর মতো তো বন্ধুর বোন, বউ হবে না। তার অতি চরিত্রবান ভাইয়ের বন্ধুর তো বোন সে। লহবর নিয়ে কি করবে। পরের দিন গুলো বেশ কষ্টে, দুঃখে কাঁটে তিয়ানার। খুব করে দুঃখ হয় তার। মনে হচ্ছে দিনকে দিন সে ‘মেঘরোগে’ আক্রান্ত হয়ে যাচ্ছে । এবং সে রোগের একমাত্র ওষুধ হচ্ছে মেঘ নিজে।
রাত ন’টা বাজে ওষুধ কেনার জন্য বের হয়েছে অবন্তী । মায়ের ওষুধ শেষ। রাতে খাওয়ার পর’ই খাওয়াতে হবে। একদিনও মিস যাওয়ার মতো না। খুব দরকার বলে এত রাতে বের হতে হচ্ছে তাকে। রাত ন’টা খুব একটা গাড়ো রাত না হলেও তাদের মতো মধ্যবিত্তদের কাছে অনেক রাত। গলির শেষ মাথায় তাদের বাসা। গলির রাস্তার ল্যাম্পপোশটের একটা লাইট ইদানীং জ্বলছে না খুব বাজে একটা অবস্থা। বাজে ছেলেরা ওতপেতে থাকে এ সময়। কিন্তু কিছু করার নেই ওষুধ দরকার। যদি তার ভাইয়া বেঁচে থাকতো তাহলে হয়তো এতো রাতে তাকে একা এভাবে বের হতে হতো না। দীর্ঘশ্বাস ফেলে মেইন রোডের কাছে একটা ফার্মিসিতে গিয়ে ওষুধ নেয় সে। বাবা , ভাইয়া বেঁচে থাকতে তাদের কোনো অভাব ছিল না। এখনো নেই তবে আগের থেকে আয় রোজগার কম। উচ্চমধ্যবিত্ত বলা চলতো তাদের। একটা পাঁচ তলা বিশিষ্ট বাড়ি আছে। বাবা , ভাই মারা যাওয়ার পর বাড়ি ভাড়া দিয়েই চলছে তাদের মা মেয়ের।
ওষুধ নিয়ে ফেরার পথে দূরে দু’টো মেয়েকে দেখে থমকে দাঁড়ায় অবন্তী । তারা রাস্তায় বসে আইস্কিম খাচ্ছে। একজন আর এক জন কে লাগিয়েও দিচ্ছে। কিচ্ছুক্ষন পরপর খিল খিল করে হাসছে দু’জন। চোখ ভরে ওঠে তুলির। বুক হঠাৎ ভারি হয়ে আসছে। নিজের ভারসাম্য রাখতে না পেরে ফুটপাতে বসে পরে। একপ্রকার হাউমাউ করে কেঁদে দেয় সে। খুব মনে পরছে তিয়ানা আর তার ফেলে আসা সেই সুন্দর দিনগুলোর কথা। কোথায় হারিয়ে গেল সে সব? সবকিছু কেন তাকে’ই হারাতে হয়। তার কি হারানো লগ্নে জন্ম হইছে?
‘‘মেঘালয় তার খোজ না নিক। সে নেবে মেঘালয়ের খোজ সেই ভাবনাতেই আজকের রাত মেঘালয়ের বাড়িতে কাটানোর প্লান করেছে তিয়ানা। সবার খুব আদরের হওয়াতে এ বাড়িতেও তার নিজস্ব ঘর আছে। অবাক করা ব্যাপার হলো তার ঘরের ডেকারেশন আর মেঘালয়ের ঘরের ডেকারেশন এক। রুমের দরজার সামনে মাদুর থেকে শুরু করে আলমারি, খাট, ড্রেসিং টেবিল, দেয়ালের কালার সব এক। দু’জনের ঘরও পাশাপাশি। নিজের ঘরে গিয়ে আলমারি থেকে নাইট ড্রেস বের করে ওয়াশ রুমে যায় তিয়ানা। আলমারিতে তার জামা কাপড়ও রাখা আছে অনেক। নিজের বাড়ির থেকেও বেশি। প্রতিবার এসে কিছুনা কিছু নতুন ড্রেস পাবে’ই সে। হয়তো মাম্মিম বা পাপ্পি কিনে রাখে তার জন্য।
ফ্রেস হয়ে এসে ড্রইং রুমে আয়েশ করে বসে টিভিতে কার্টুন দেখতে বসে তিয়ানা। আজ আর কোনো ফিল্মে দেয়নি। দেখা যাবে আবার সেদিনের মতো লজ্জার কর ঘটনা ঘটে যাবে তাই আর রিক্স নেয়নি সে। বাড়ির প্রত্যেকেই হস্পিটালে। শুধু দু’জন ছাড়া এক সে অন্যজন রুমা। রুমা মেঘালয়ের বাসায় থাকে। মৌমিতার হাতে হাতে ঘরের কাজ করে দেয়। নিজের পড়াশুনাও করে। রুমা এবার এসএসসি দেবে। রুমার সাথে তিয়ানার খুব ভাব। যাকে বলে গলায় গলায় মিল।
‘বেশ রাত করে বাড়ি ফেরে সবাই। ঘরে ঢুকেই কোনোদিকে নজর না দিয়ে ফ্রেস হতে যায় মেঘালয়। শর্টস পরে গলায় তোয়ালে ঝুলিয়ে ওয়াশরুম থেকে বের হয় সে। খাটের কাছে এসেই তিয়ানাকে তার ঘরে ঘুমতে দেখে বিস্মিত মেঘালয়। ঘুমের ঘোরে কি আবল তাবল দেখছে সে। চোখ ডলে আবার তাকায় সে। না, ভ্রম না! তিয়ানা সত্যিওই তার ঘরে এবং তার বিছানায় রাজত্ব করে ঘুমিয়ে আছে। ঢোক গিলে তিয়ানার থেকে চোখ সরিয়ে অন্যদিকে তাকায় মেঘালয়। তিয়ানার গেঞ্জি সরে গেছে। পেট দৃশ্যমান রাগ হয় মেঘালয়ের। এতো বড় হয়েছে তারপরও ঘুমের ঠিক নেই তিয়ানার। তিয়ানাকে এভাবে দেখে অসস্থি হয় তার। অন্য দিকে ফিরে তিয়ানাকে ডাকে,
__“তিনু, তিনু ওঠ এটা তোর না আমার ঘর।’
রাগে নিজের মাথার চুল খামছে ধরে মেঘালয়। তিয়ানাকে এখন না তুললে খুব বড় ভুল হয়ে যাবে। চোখহ বন্ধ করে নিজেকে শান্ত করে ফোস ফোস করে শ্বাস ফেলে তিয়ানার কাছে গিয়ে তাকে টেনে তুলে।
হঠাৎ টানে ভয় পেয়ে যায় তিয়ানা। চোখ বন্ধ করে চিল্লিয়ে বলল,
__ভূত!! ভূত!! আম্মু, ভাইয়া ভূত মেরে ফেলল আমাকে।
মেজাজ খারাপ হয় মেঘালয়ের। ধমকে উঠে বলল,,
__‘বদ মেয়ে চুপ। আর একবার চিল্লালে ভূতদের সাথে বেঁধে রেখে আসবো। আমার ঘুমম হারাম করে ভূত ভুত করছে মহারানী।
ততক্ষননে তিয়ানা চোখ খুলে মুখ ‘হা’ করে মেঘালয়ের খালি শার্টলেস শরীরের দিকে তাঁকিয়ে আছে।
মেঘালয় তিয়ানাকে ‘হা’ করে তার দিকে এভাবে চেয়ে থাকতে দেখে অপ্রস্তুত হয়ে যায়। ধুম করে নিজের হাত দু’টো মেয়েদের মতো করে শরীরে জড়িয়ে গা ঢাকার ট্রাই করে। আমতা আমতা করে বলল,,
__‘এএই এই অমন রাক্ষুসিদের মতো তাঁকাইয়া আছোস ক্যান? খাইয়া ফেলবিনি। বড় ভাই হই চোখ সরা। সরা চোখ! তোর দৃষ্টি তো ছেলেদের থেকেও তুখোড়। আমারে তো চোখহ দিয়ে’ই ধর্ষন করে ফেলবি। বদ মেয়ে!
চলবে?
(আমি একটু অসুস্থ এল চোখের উপর ফুলে গেছে। গ্রাম্য ভাসায় যাকে ‘এলানি’ বলে সেটা হইছে। চোখ দিয়ে তাকাতে পারছিনা। আবার বন্ধ করেও রাখতে পারছি না। খুব’ই বাজে অবস্থা ভিতিরে চুল্কাচ্ছে৷ চুকাতেও পারছি না ব্যাথার কারনে। মহা যন্ত্রনা। এজন্য কাল গলল্প নাও দিতে পারি। আর রিচেক করিনি ভুল হলে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। আর হ্যা নাইস নেক্সট না লিখলে খুশি হবো। সেটা না লিখে হাবুযাবি কিছু লিখে রাখবেন তাতেও হবে। তার হ্যা যারা মন্তব্য করেন তারা অবশ্যই কিছু বলবেন দু’এক লাইন। আর হ্যা ব্যাথার কারনে আমি কিছু ভাবতে পারছিলাম না। তাই যেমন পারছি লিখছি হয়তো ভাল হয়নি। আবার বলছি মন্তব্য চাচ্ছি। )