আমার_আদরিনী
আশুথিনী_হাওলাদার (ছদ্মনাম)
পর্ব-১১
মেঘালয় তিয়ানাকে ‘হা’ করে তার দিকে এভাবে চেয়ে থাকতে দেখে অপ্রস্তুত হয়ে যায়। ধুম করে নিজের হাত দু’টো মেয়েদের মতো করে শরীরে জড়িয়ে গা ঢাকার ট্রাই করে। আমতা আমতা করে বলল,,
__‘এএই এই অমন রাক্ষুসিদের মতো তাঁকাইয়া আছোস ক্যান? খাইয়া ফেলবিনি। বড় ভাই হই চোখ সরা। সরা চোখ! তোর দৃষ্টি তো ছেলেদের থেকেও তুখোড়। আমারে তো চোখহ দিয়ে’ই ধর্ষন করে ফেলবি। বদ মেয়ে!”
‘মেঘালয়ের এমন আচরনে হতভম্ব হয়ে যায় তিয়ানা। কি হচ্ছে বুঝতে পেরে। বিছানা থেকে তারাতাড়ি করে নেমে যায়। ঘুমের ঘোরে কোন ঘরে ঢুকেছে বুঝতে পারিনি সে। এক পলক মেঘালয়ের দিকে তাকায় তিয়ানা। মেঘালয় তখনও দু’হাত শরীরে জড়িয়ে রেখেছে৷ তিয়ানা বলল,,
__‘তুমি মেয়েদের মতো ওরকম গায়ে হাত পেঁচিয়ে রাখছো কেন? ভাইয়া! আমি মোটেও তোমার দিকে ‘হা’ করে তাঁকিয়ে ছিলাম না। ঘুম থেকে জেগে বুঝতে পারিনি কি হচ্ছে। আর আমি জানি তুমি ‘ভাইয়ায়ায়ায়ায়া’ তাই, নজর দেয়ার প্রশ্ন আসে না। আমার ভাইয়া নয় ‘সাইয়া’ আছে। ‘
‘কথা শেষ এক প্রকার দৌড়ে ঘর থেকে চলে যায় তিয়ানা। মেঘালয় শরীর থেকে হাত সরিয়ে বাম হাত কোমড়ে রেখে তিয়ানার যাওয়ার পথে ভ্রুকুটি করে তাকায়। তিয়ানা কি বলল? ‘সাইয়া’ আছে মানে? এই মেয়েকে তো সে দেখে নেবে।
ঘুমোনোর জন্য বিছানায় শোয় মেঘালয়। হুট করে একটা কথা মনে পরলো তার। তিয়ানা তাকে তুমি করে বলল না। অজান্তেই ঠোঁটের কোণে হাসি চলে আসে মেঘালয়ের।
‘নিজের ঘরে এসে দরজায় খিল আঁটকে দরজার সাথে লেগে দাঁড়ায় তিয়ানা। বড় বড় শ্বাস নেয় সে। আড় চোখে আয়নায় নিজের প্রতিবিম্বে দেখে সে। ফর্সা গাল দু’টো লজ্জায় লাল আভা ছড়িয়ে গেছে। কান থেকে কেমন গরম বের হচ্ছে। মেঘালয়কে ওভাবে দেখে তার ইচ্ছে করছিল জাপটে ধরে থাকতে। তারপর যা হয় দেখা যেতো। তার ইচ্ছে করছে ছূটে গিয়ে মেঘালয় কে জাপটে ধরে মেঘালয়ের সাথে মিশে যেতে। গলা শুকিয়ে যায় তার। কাঁপাকাঁপা হাতে পানি ঢেলে খায়। বুকের ভিতর ধড়ফড় ধড়ফড় করছে। বিছানায় শুয়ে চোখ বন্ধ করে তিয়ানা। মেঘালয়ের জীম করা শার্টলেস সিক্স প্যাক বডি তার সামনে দৃশ্যমান হয়। লজ্জায় কেঁপে উঠে চাদর খামছে ধরে সে।’
অবন্তীকে বাড়ি পৌছে দিয়ে গাড়তে এসে বসে তিলাত। বাড়ি ফেরার পথে রাস্তায় ফুটপাতে বসে একটা মেয়েকে কাঁদতে দেখে অবাক হয় তিলাত। এত রাতে এক মেয়ে এভাবে রাস্তায় বসে কাঁদছে। কৌতুহলে গাড়ি থামিয়ে মেয়েটার কাছে যায় তিলাত। কোনো বিপদের পরলো কিনা। তবে কাছে গিয়ে অবন্তীকে দেখে বেশ বিস্মিত সে। বলল,,
__‘আরে অবন্তী না। তুমি এখানে এভাবে? কাঁদছো কেন?’
হঠাৎ কারো কন্ঠস্বরে শুনে ভয়ে পেয়ে যায় অবন্তী। ভয়ে আঁতকে উঠে পাশে তাঁকায়। তিলাত কে দেখে শান্ত হয় অবন্তী। অবন্তীর ভয়টা বুঝতে পেরে মৃদু হাদে তিলাত। বলল,,
__‘ আমাকে চিনতে পারছো? আমি তিয়ানা ভাই।’
__‘জি ভাইয়া।’ (মৃদু স্বরে উত্তর দেয় অবন্তী)
__‘তুমি এত রাতে এখানে কি করছো?’
__‘মায়ের ওষুধ শেষ হয়ে গেছিলো তাই নিতে আসছি?
দূরত্ব বোজায় রেখে অবন্তীর পাশে ফুটপাতে বসে তিলাত। বলল,
__‘তাই বলে রাত ১২.৩০ ঘর থেকে বের হবে? যদি, কোনো বিপদ হয় তখন?’
‘বিস্মিত হয় অবন্তী । অবাক হয়ে তিলাতের দিকে তাঁকায় সে। এত রাত কখন হলো? ‘
অবন্তীর দৃষ্টির মানে বুঝতে পেরে হালকা হাসে তিলাত। বলল,,
__‘সময় দেখোনি হয়তো। কিমতু এভাবে কাঁদছিলে কেন?’
হাসার চেষ্টা করে অবন্তী বলল,,
__‘তেমন কিছু না ভাইয়া।’
‘অবন্তীর চোখে চোখ মিলায় তিলাত। অবন্তীর চোখের কোনে জল লেগে আছে। কাঁন্নারত মুখে মেকি হাসি। অন্যরকম সুন্দর লাগছে অবন্তীকে। বুকের ভিতর কেমন ধক করে কেঁপে উঠলো তিলাতের। অদ্ভুত অনুভূতিতে ঘিরে ধরে তাকে। শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থা হয় তার। তৎক্ষনাৎ অবন্তীর থেকে দৃষ্টি সরিয়ে আশেপাশে দেখে সে। জ্বীবা ঠোঁট ভিজিয়ে বসা থেকে উঠে দাঁড়ায় তিলাত। ভিতরের অনুভূতি ডাবিয়ে রেখে বলল,,
__‘চলো তোমাকে পৌছে দেই। ‘
উঠে দাঁড়ায় অবন্তী হালকা হেসে বলল,
__‘তার দরকার হবে না ভাইয়া। আমি চলে যেতে পারবো। ‘
‘অবন্তীর তাকে ভাইয়া সম্মোধনে হুট করে তার ভিতরটা তেতো হয় যায়। মাথা গরম হয়ে যায়। নিজের এমন মনোভাব নিজেই অবাক হয় তিলাত। নিজের তেতো ভাবটা সরিয়ে বলল,,
__‘তোমাদের বাসা তো গলির অনেক ভিতরে। চলো আমি পৌঁছে দিচ্ছি। ‘
‘অবন্তী কথা বাড়ায় না। মনে মনে তারো বেশ ভয় লাগছিল এতো রাত হয়ে যাওয়ায়। সে ভাবতেও পারিনি এতো রাত হয়ে যাবে।’
‘তুলিকা ঘরে আসতে না দেখে বার বার দরজা কাছে গিয়ে উকি দয়ে দেখছে সাদিদ। তুলিকা এখনো ঘরে আসছে না দেখে রাগ হয় সাদিদের। তুলিকা কি জানে না? সে সাদিদের আশেপাশে থাকলে সাদিদ এর ভালো লাগে। পরক্ষনে ভাবে, সে তো কখনো বলেনি তুলিকাকে। আবার নিজ মনেই বলে,, ‘এখন বলেনি তাতে কি? আগে তো বলেছে। তুলিকার তো জানা যে তার উপস্থিতি সাদিদের ভালো লাগে। ছেলের উপর রাগ হয় সাদিদের। বাপের প্রেমে হিটলার হয়ে ঢুকছে। রাত এক’টা বাযে এখনো বাড়ি ফিরছে না। আর ছেকের চিন্তায় তার বউ তাকে ভুলে গেছে। মুখ ভার করে কতক্ষন কাউচে বসে থাকে সাদিদ। আবার উঠে হাটাহাটি করে বিছানায় বসছে। হাত ঘড়িতে টাইম দেখে বাইরে তাঁকিয়ে দেখার চেষ্টা করছে, তুলিকা কি করছে? ছেলেমেয়েদের চিন্তায় তার বউ তাকে ভুলে যাচ্ছে। বাহ!
গাড়র হর্ন শব্দে এক প্রকার লাফিয়ে ওঠে সাদিদ। আজ ছেলের একটা হেস্তনেস্ত সে করবে। এমন হিটলার গিরি চলবে না তার বাড়িতে। দ্রুত হেটে বসার ঘরে যায়। তুলিকা দরজা খুলে পাশে দাঁড়ায়। তিলাত ভিতরে ঢুকে বাবার চুপসানো মুখের দিকে তাঁকিয়ে ভ্রুকুটি করে ফেলে। মা’কে ধরে বলল,,
__‘তুমি এখনো জেগে আছো কেন? আম্মু! ঘুমিয়ে যেতে আমার কাছে তো বাসার চাবি ছিল।”
ছেলেকে নিজের থেকে ছাড়িয়ে ডাইনিং টেবিলের দিকে যেতে যেতে বলল,,
__‘তোরা বাড়র বাইরে থাকলে আমার চিন্তা হয়। কেন বুজিস না? এতবার করর বলি বেশি রাত করবি না। কিন্তু কে শুনে কার কথা। ফ্রেস হয়ে আয় খাবার দিচ্ছি। ‘
তুলিকার কথায় তাল মিলিয়ে সাদিদ বলল,
__‘হ্যা একদম। আমার বাড়িতে এতো রাত করে ফেরস চলবে না। তাতে চাকরি গোল্লায় যাক। এমন হিটলার গিরি আমার সাথে চলবে না। ‘
তিলাত থতমত খেয়ে যায় আবার কথায়। বলল,,
__‘আমি আবার কি হিটলার গিরি করলাম আব্বু?’
গম্ভীর স্বরে উত্তর দেয় সাদিদ,,
__‘অনেক, যা রুমি বুঝববে না। যাও তারাতাড়ি খেয়ে আমাকে উদ্ধার করো।’
গম্ভীর ভাবেই কথা শেষ নিজের ঘরে চলে যায় সাদিদ। তিলাত বাবার যাওয়ার পথে হাবলার মতো তাঁকিয়ে থাকে। তুলিকা মৃদু হাসে, সাদিদের কথার মানে সে বেশ বুঝতে পেরেছে। উপরে উপরে দেখাবে তাকে দেখতে পারে না, সহ্য হয় না। আবার উলটো তাকে ছাড়া কিছু বুঝেও না। হাসে তুলিকা প্রশান্তির হাসি।
চলবে?
(আমার চোখ আস্তে আস্তে ফুলে জাম্বুরা হচ্ছে যা অনেক বাজে অবস্থা। চুল্কাচ্ছে ব্যাথা করছে তাকাতে পারছিনা এমন অবস্থা। ওষুধ খাচ্ছি কমছে না দোয় করবেন। আর হ্যা মন্তব্য অবশ্যই করবেন। দু’এক লাইন চাচ্ছি। ওদের বিষয়ে বলবেন কিন্তু। মন্তব্য চআই চাই। ভালো ভালো মন্তব্য পেলে লেখার আগ্রহ বাড়ে। আর হ্যা ব্যাথার জ্বালায় সহ্য করে মোটামুটি কিখছি। তবে রিচেক করিনি ভউল থাকলে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। আর মন্তব্য কিন্তু চআচ্ছি 😊😊😊)