আমার_আদরিনী আশুথিনী_হাওলাদার (ছদ্মনাম) পর্ব-৩৪

আমার_আদরিনী
আশুথিনী_হাওলাদার (ছদ্মনাম)
পর্ব-৩৪
মেঘালয়ের এমন কান্ডে রেগে যায় তিয়ানা। রেগে বলে ওঠে,,
__‘এসব কি? আপনি ডিভোর্স চেয়েছেন আমি ডিভোর্স পেপার রেডি করে সাইন করে দিয়েছি। আর কী চাই? তারপরও এসব কেমন আচরণ ?’
মেঘালয় রাগ নিয়ে তিয়ানাকে দেখে। দু’পা এগিয়ে তিয়ানার সামনে গিয়ে তিয়ানার হাত ধরে পিছনে মুচড়ে তিয়ানাকে নিজের কাছাকাছি এনে চোয়াল শক্ত করে দাতে দাত চেপে বলে,,
__‘এসব করার সাহস কোথায় পেয়েছস তুই?’
তিয়ানাও শক্ত চোখে মেঘালয়ের চোখে রেখে বলে,
__‘এটা আমার লাইফ। তাই আমি ঠিক করবো কোনটা করা উচিত কোনটা করা উচিত না। আর যদি সাহসের কথা বলেন তো সাহস আমার বরাবর’ই ছিল।’
তিয়ানার উত্তরে মেঘালয় তিয়ানার হাতে জোড়ে চাপ দেয়। ব্যাথা পেলেও মেঘালয়কে বুঝতে দেয় না তিয়ানা। চোখ মুখ শক্ত করে রাখে।
__‘আমি তোকে ডিভোর্স দেবো না।’
মেঘালয়ের বলা কথা অবাক হয় তিয়ানা। প্রশ্ন করে,
__‘মানে?’
__‘মানে! তোকে ডিভোর্স দেবো না ‘
__‘ ডিভোর্স দেবেন না মানে? আপনি নিজে ডিভোর্স চেয়েছেন।’
তিয়ানাকে ছেড়ে দিয়ে ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বলে মেঘালয়,
__‘এখন চাচ্ছি না।’
বিরক্ত হয় তিয়ানা। বিরক্তি নিয়ে বলে,
__‘হেয়ালিপানা ছাড়ুন। আপনার এসব কথায় আমার বিরক্ত লাগছে।’
__‘লাগলে লাগুক। কিন্তু! তোকে আমি ডিভোর্স দিচ্ছি না। ‘
বারবার মেঘালয়ের এমন কথায় নিজেকে শান্ত রাখতে পারে না তিয়ানা। এক প্রকার চেচিয়ে বলে,
__‘লাগলে লাগুক মানে কি? কি চাচ্ছেন আপনি? আপনি না চাইলেও আমি আপনাকে ডিভোর্স দেবো’ই।’
মেঘালয় বাঁকা হেসে বলল,
__‘চেষ্টা করে দেখ।’
বিরক্তি নিয়ে মুখ অন্য দিকে ঘুরিয়ে ফেলে তিয়ানা। সেটা দেখে মৃদু হাসে মেঘালয়। ডান হাত বাড়িয়ে তিয়ানার থুতুনি ধরে তিয়ানার মুখ নিজের দিকে ফেতায় মেঘালয়। একটু এগিয়ে দু’জনের মধ্যে থাকা সামন্য দূরত্বটুকু মিটিয়ে তিয়ানার কপালে ঠোঁট ছোঁয়ায় মেঘালয়। বিরক্ত হয় তিয়ানা। বিরক্তি নিয়ে ডান হাতের তালু দিয়ে কপাল পুছে নেয় সে। তিয়ানার এমন কান্ডে কিটকিটিয়ে হেসে ওঠে মেঘালয়। বরাবরের মতো এবারও মেঘালয়ের হাসির প্রেমের পরে তিয়ানা। তবে মেঘালয়ের গত ব্যাবহার গুলোর কথা মনে করে নিজের দৃষ্টিকে সংযত রাখে সে। দ্বিতীয় বার সে এই হাসির মায়ায় পরতে চাচ্ছে না।
খানিক্ষন নীরাবতা শেষে তিয়ানা বলে,
__‘আপনি এখন আসতে পারেন। আমি আব্বুকে ল’ইয়ারের সাথে কথা বলতে বলবো। ডিভোর্স পেপার তৈরী করার জন্য।’
দ্বিতীয় বার তিয়ানার এহনো কথায় ধপ করে মাথায় রাগ উঠে যায় মেঘালয়ের। পিছনে হাত বাড়িয়ে তিয়ানার চুল নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে তিয়ানাকে নিজের কাছাকাছি এনে রাগে হিসহিসিয়ে বলে ওঠে মেঘালয়,
__‘একবার বললে কানে যায় না তোর? আমি বলছি না আমি তোকে ডিভোর্স দেবো না। তাছাড়া প্রেগ্ন্যাসির সময় ডিভোর্স হয় না। ‘
__‘ওকে! তাহলে বাঁচ্চা জন্মানোর পর ডিভোর্স হবে।’
এবার আর নিজের রাগকে কন্ট্রোল করতে পারে না মেঘালয়। তিয়ানাকে ছেড়ে দিয়ে কিছুক্ষন মাথার চুল টানতে টানতে রুম জুড়ে পায়চারি করে। কিছু একটা ভেবে দ্রুত তিয়ানাকে কাঁধে তুলে নেয় সে।

বসার ঘরে বসে অফিসের কাজ করছিলো তুলিকা। কালকের রাতের পর থেকে তার মন কিছুটা ভালো। মেঘালয়ের রাতে ‘এ’ বাড়িতে আসায় সে ভিষন খুশি। এতদিন ধরে শুধু মনে মনে চেয়ে গেছেন যেন তার মেয়ের সংসারটা বাঁচে। রাতে মেঘালয়ের ‘এ’ বাড়তে এসে তিয়ানার ঘরে থাকায় কিছুটা আশার আলো দেখতে পাচ্ছে তুলিকা। জীবন তো এভাবে পার হলো শুধু এখন একটা’ই চাওয়া তার ছেলে-মেয়ে দুটো জীবনটা যেন সুন্দর হয়। সাদিদের কথা ভেবে দীর্ঘশ্বাস ফেলে তুলিকা। সেদিন সব জানার পর থেকে সাদিদ তার সাথে একটা কথাও বলেনি। ইদানিং ঠিকঠাক বাড়ি আসে না। সে কিছু দিলে সেটা ছুয়েও দেখা না সাদিদ। এই তো আজ ভোরে বেলা ঘুম থেকে উঠে সাদিদের অফিসে পরে যাওয়ার ড্রেস বের করে খাটের উপরে রেখে এসে সাদিদের জন্য ব্রেকফাস্ট তৈরি করলো সে। কিন্তু! সাদিদ না তার বের করা ড্রেস পরলো আর না তার তৈরী করা খাবার মুখে তুললো। ভাবতে গিয়ে চোখের কোণে জল আসে তুলিকার। বুকের ভিতর জ্বলছে তার। সত্যি’ই তো সারাজীবন মানুষটা তাকে ভালবাসার ফল ধোকা পেয়ে গেল। আজকাল নিজের প্রতি ঘৃনা হয় তুলিকার।সাদিদের কথা না ভেবে সে সারাজীবন নিজের আর নিজের বোনের কথা’ই ভেবে গেল। এতগুলো বছর ধরে অনুতাপের আগুনে জ্বলছে সে। সাদিদের মুখের দিকে তাঁকিয়ে কথা বলতেও নিজের প্রতি ঘৃনা হয় তার। মানুষটাকে খুব বেশি কষ্ট, দুঃখ দিয়ে ফেলল সে। হাতে থাকা ফাইলটা বুজিয়ে চোখহ বন্ধ করে সোফার সাথে হেলান দিয়ে বসতে’ই তিয়ানার চিৎকারের শব্দ পায় সে। মেয়ের আবার কি হলো? বসা থেকে উঠে দৌঁড়ে তিয়ানার ঘরের সামনে এসে থমকে দাঁড়ায় সে। মেঘালয় তিয়ানাকে কাঁধে নিয়ে ঘর থেকে বেড়িয়ে সদর সরজার দিকে যেতে যেতে তুলিকাকে উদ্দেশ্য করে বলল,
__‘তোমার মেয়েকে নিয়ে যাচ্ছি আন্টিম্মু। যত দিন বেয়াদবটার মাথা থেকে ডিভোর্সের ভুত না নামবে ততদিন ‘ও’ আমার সাথে থাকবে।’
তিয়ানা চিৎকার করে মেঘালয়ের পিঠে ধুরুম করে কিল বসিয়ে তুলিকাকে বলল,,
__‘আম্মু! আমাকে বাঁচাও আমি ওনার সাথে যাবো না। আমাকে জোড় করে তুলে নিয়ে যাচ্ছে। ‘
তিয়ানার হাতের কিলের হালকা ব্যাথা পায় মেঘালয়। সদর দরজা পেরোতে পেরোতে ঠাট্টার স্বরে বলল,
__‘আচ্ছা বেয়াদব হয়েছিস তো! স্বামী সেবা তো জীবনে করলি না উলটো মারছিস।’
তিয়ানা রাগে ফোস ফোস করতে করতে বলে,
__‘খুব খারাপ করছেন। একবার যদি, আমার ভাইয়া জানে আপনি আমাদের বাড়িতে এসে আমাকে এভাবে তুলে নয়ে যাচ্ছেন। ভাইয়া কিন্তু আপনাকে ছাড়বে না।
হাসে মেঘালয়। হেসে তিয়ানাকে নামিয়ে গাড়িতে ফ্রন্ট সীটে বসিয়ে সীট বেমট বাঁধতে বাঁধতে বলল,
__‘তোর ভাই কে ভয় পায় কে? শালাকে পরে বুঝে নেবো আগে শালার বোনের বিষ দাত ভাংগি।’
তুলিকা ওদের পিছন পিছন সদর দরজার অব্দি আসে। মেঘালয় ড্রাইভিং সীটে বসে তুলিকার দিকে তাঁকিয়ে হেসে বলল,
__‘যাচ্ছি শাশুড়ী মা । তোমার মেয়ের হাত থেকে বেঁচে ফিরলে আবার দেখা হবে। ‘ও হ্যা!’ তোমার হিটলার ছেলেকে বুখিয়ে শুনিয়ে রেখো।’
মেঘালয়ের কথা শুনে খিল খিল করে হেসে দেয় তুলিকা। তিয়ানা নিজের মায়ের দিকে কটমট করে তাঁকিয়ে থেকে গাড়ির দরজা খুলতে নিলে। মেঘালয় গাড়ি লক করে দেয়। তিয়ানা রেগে গিয়ে দু’হাতে মেঘালয়ের চুল খামচে ধরে।
তিয়ানার হাত চুল ছাড়াতে ছাড়াতে চেচিয়ে দুঃখ নিয়ে বলে ওঠে,
__‘আরে! আমার চুল। হিটলারের বংশধর আমার চুল ছাড়।’
চুল ছাড়িয়ে তিয়ানার গা থেকে ওড়না খুলে ওড়না দিয়ে তিয়ানার হাত বেঁধে রাখে মেঘালয়। তিয়ানা রাগী চোলহে কটমট করে মেঘস্লয়কে দেকজে ফোস ফোস করতে থাকে। মেঘালয় সেদিকে পাত্তা না দিয়ে গাড়ি ড্রাইভিং এ মনোযোগ দেয়।
__‘আমি কিন্তু আপনাকে ছাড়বো না।’
দৃষ্টি সামনে রেখে হেসে উত্তর দেয় মেঘালয়,
__‘আচ্ছা!’
তিয়ানা ঝুঁকে মেঘালয়ের হাতের বাহুতে কামড় বসিয়ে দিয়ে বলল,
__‘আমি কিন্তু আপনাকে খুন করে ফেলবো।’
হঠাৎ করে গাড়ি থামিয়ে দেয় মেঘালয়। ঝাঁক্কিতে তিয়ানা সামনে ঝুঁকে পড়তে নিলে মেঘালয় হাত বাড়িয়ে তিয়ানাকে ধরে নেয়। সীট বেল্ট খুলে তিয়ানার দিকে এগিয়ে যায় মেঘালয়। মেঘালয়কে নিজের দিকে আগাতে দেখে তিয়ানা ভয়ে সীটের সাথে লেপ্টে যায়। নিজের প্রতি এখন ভিষণ রাগ হচ্ছে তিয়ানার তলহন রাগে মেঘালয়কে কামড়ে দেয়ার জন্য আফসোস হচ্ছে। তবে মনে মনে ভয় পেলেও নিজেকে সাহসি দেখানোর চেষ্টা করে তিয়ানা। মেঘালয় এগিয়ে গিয়ে তিয়ানার ঘাড় থেকে চুল সরিয়ে ঘাড়ে কামড় বসিয়ে নিজের সীটে এসে গাড়ি স্টার্ট দিয়ে বাঁকা হেসে চোখহ টিপ মেরে বলল,
__‘মেঘালয় চৌধুরী আবার ধার রাখে না বউ সোনা

চলবে?
(রিচেক করা হয়নি)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here