তুইতেই আমি🏵পর্বঃ২৭

0
2759

🏵তুইতেই আমি🏵
লেখিকাঃইসরাত আয়রা ইচ্ছে
পর্বঃ২৭

🍁🌼🍁

ইচ্ছে তার সামনে থাকা কাচের জগটা ফেলে দিলো।তারপর হনহনিয়ে নিজের রুমে চলে গেলো। ড্রেনিলা
ইচ্ছের পিছু পিছু যেতে চাইলেও আহান বাধা দেয়।তাই ড্রেনিলা নিজের রুমে চলে যায়। আহান থ্রি কোয়াটার প্যান্ট আর শার্ট পরে চুল ব্রাশিং করে নেয়। ইচ্ছে যে খায় নি তা আহান বেশ ভালোই জানে।কিচেনে গিয়ে দেখে তার সব পছন্দের খাবার রান্না করা।

“” মহারানী তাহলে কিছুই খায় নি”

আহান ইচ্ছের রুমে প্রবেশ করে ওর চুল ধরে টান দেয়।বেশ কর্কশ গলায় বলে ” আমার ক্ষুধা পেয়েছে খাব আয় এইসব কান্নাকাটি পরে করিস। আজকাল কান্নার দাম নেই বুঝলি?”

ইচ্ছে আহানের কথা বেশ ভালো ভাবেই ধরতে পেরেছে। আসলেই তো আহানের কান্নার দাম সে দেয় নি।।কথা না বাড়িয়ে রুম থেকে বেড়িয়ে যায়।বেশ কিছুক্ষণ পরে সব ধরনের খাবার আহানের সামনে দেয়।আহান বিনা বাক্যে খাওয়া শুরু করে।ইচ্ছে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে আহানের খাওয়া দেখছে।আহান না খেলে ইচ্ছে বড্ডো বেশি কষ্ট পেতো।

সব কিছু অর্ধেক অর্ধেক খেয়ে আহান বলে

— আর খেতে পারছি না।খাবার নষ্ট করাও ঠিক না।ইচ্ছে আয় বস খাওয়াই দি।

এবার ইচ্ছের মুখে হাসি ফুটে ওঠে। এই ছেলের উপর ইচ্ছে কিছুতেই রাগ রাখতে পারে না।ফেসটা কি অদ্ভুত মায়াবী!!!!

আহান জানত ইচ্ছে সারাদিন কষ্ট করে তার জন্যই রান্না করেছে।আর আহান সারাদিন ইচ্ছের সাথে যা করেছে তাতে খাওয়াই না দিলে কিছুতেই খেতো না ইচ্ছে।

খাওয়ানো হয়ে গেলে আহান ইচ্ছের সাথে কোনো কথা বলেই চলে যায় সামনের রুমে ।ইচ্ছের একটু মন খারাপ হয় আহান কথা না বলায় কিন্তু আহান তাকে খাওয়াই দিছে এটা ভাবতেই তার মন আবার ভালো হয়ে যায়।

সব খাবার ফ্রিজিং করে রেখে দেয় ইচ্ছে।আড়চোখে বার বার আহানের দিকে তাকায়।আহান শুয়ে শুয়ে ফোন গুতাচ্ছে একবারও তার দিকে তাকাচ্ছে না।

ইচ্ছে যাওয়ার সময় একবার আস্তে করে বললো
— সারা দিন বাইরে ছিলেন কষ্ট হয়েছে আপনার ঘুমিয়ে যান।

— সেটা তোর ভাবতে হবে না।তুই ঘুমা যা।

ইচ্ছে আর কথা বাড়ায় নি।নিজের রুমে চলে গেলো। দরজাটা আর লাগায় নি কারণ বিছানায় শুলে সরাসরি আহানকে দেখা যায়। আহানকে দেখতে দেখতে একসময় ঘুমের দেশে পারি জমায়

******

এরপর দশদিন কেটে গেছে আহান একবারও কথা বলে নি ইচ্ছের সাথে।সারাক্ষণ চোখের সামনে ড্রেনিলার সাথে গা ঘেষাঘেসি,সারাক্ষণ ড্রেনিলার সাথে গল্প,প্রায়ই দুজন ঘুরতে যায় কিন্তু ইচ্ছেকে নেয় না, ড্রেনিলাকে কতো কিছু কিনে দেয় কিন্তু ইচ্ছের জন্য কিছুই আনে না।মাঝে মাঝে আবার খাওয়াই দিচ্ছে দুজনকে দুজন।দিন দিন ইচ্ছের ধৈর্যের বাধ ভেঙে যাচ্ছিলো। একদিন রাত নয়টার দিকে ইচ্ছে নিজের রুম থেকে বের হয় কিচেনে পানি আনতে যাবে বলে।ঠিক সে সময়ই সোফায় বসা আহান ড্রেনিলার দিকে চোখ যায় । আহান নিজের ঠোঁটে আঙুল ছুয়িয়ে বার বার বলছে

— ওয়ান মোর বেবি ওয়ান মোর।

— দিস ইয ফাইভ আহান। এনাদার মোর?

— ইয়েস অনলি অন কিস বেবি।

ইচ্ছে আর শুনতে পারলো না।হাওয়ার গতিতে গিয়ে আহানের কাছে গিয়ে থাপ্পড় লাগিয়ে দেয়। ড্রেনিলা আহান দুজনই থম মেরে যায়।এটার জন্য কেউই প্রস্তুত ছিলো না।ইচ্ছের চোখ দিয়ে অনবরত অশ্রু গড়িয়ে পরছে।আহান গালে হাত দিয়ে ইচ্ছের দিকে তাকিয়ে আছে। ড্রেনিলা হা অবস্থায় মুখে হাত দিয়ে আহান আর ইচ্ছের দিকে তাকাচ্ছে।ফার্স্ট টাইম ইচ্ছে আহানকে তুই করে চিল্লাতে শুরু করে

— তুই এখানে আমার জন্য এসেছিস আর এই মেয়েকে দেখে আমাকেই ভুলে গেছিসসসস।তোর সাহস কি করে হয় চুমু খাওয়ার।জীবনে কম খেয়েছিস? এতো দিন পর আমার কাছে এসে আমাকে টাইম দিবে তা না সারাদিন ড্রেনিলাকে নিয়ে পরে আছিস।ঘুরতে যাওয়া জড়িয়ে ধরা থেকে শুরু করে সব করছিস।এখন চুমুও খাচ্ছিস আর না জানি চোখের আড়ালে আরও কতো কি করেছিস।আমি তোর থেকে দূরে গিয়েছি এর মানে এই না যে আমি অন্য রিলেশনে গিয়েছি।আম্মু ফোন দিয়ে বললো তুই নাকি সব জেনেছিস আমার সমস্যা সম্পর্কে। ভাবলাম তাই জন্য এসেছিস আর এখন আমার এসব দেখতে হচ্ছে।যাক আমি আর ডিসটার্ব করবো না। তোদের আমার জন্য প্রবলেম হচ্ছে অবশ্যই।আমি এখনই চলে যাবো এখনই। এই মুহুর্তে ঘর ছেড়ে চলে যাবো।

আহান এতক্ষণ ইচ্ছের সব কথা চুপ করে শুনেছে।আহান চাচ্ছিলো ইচ্ছে কথা বলুক তার সাথে নরমাল হোক। ইচ্ছে নিজেকে একা রাখতে রাখতে নিজে কতটা অস্বাভাবিক করে ফেলেছে তা নিজেও জানে না।আহান চাইছিলো ইচ্ছে জেলাস ফিল করে রিয়াক্ট করুক প্রতিবাদ করুক।আজ প্রতিবাদ করেছে ঠিক কিন্তু বেশিই বলে ফেলেছে।আহান জোরে শ্বাস ছাড়লো। ইচ্ছে এতক্ষণে দরজা খুলেছে চলে যাওয়ার জন্য।ড্রেনিলা আহানকে বার বার বলছে

— আহান ইচ্ছে ইজ লিভিং ( আহান ইচ্ছে চলে যাচ্ছে)স্টপ ইচ্ছু প্লিজ স্টপ । ইউ আর রোঙ ইচ্ছু।এভ্রিথিং ইয ফেইক।

আহান ড্রেনিলাকে থামিয়ে দিলো।ইচ্ছে বেশ কিছু সিড়ি পেরিয়েছে এতক্ষণে ।আহান দৌড়ে ওর হাত টেনে আবার রুমে নিয়ে এলো। ইচ্ছে আহানের হাতে সমানে কামড় বসাচ্ছে।ইচ্ছের রুমের মধ্যে ঢুকে দরজা আটকে দিলো।ইচ্ছের পা ছড়াছড়ি থামছেই না দরজা খুলে ড্রেনিলার কাছে চারটা ওড়না চাইলো ওড়না দিতেই আবার দরজা আটকে দিলো।দুই হাত বিছানার দুইপাশে বেধে দিলো।পায়ের গোড়ার দিক আর হাটু বরাবর দুইটা ওড়না দিয়ে বেধে দিলো।ইচ্ছের সামনে মুখ করে বসে ঠান্ডা মাথায় বললো

— এবার বল হয়েছে কি?

— তুই আমার হাত পা আটকেছিস কেন? ছাড় বলছি।

এবার আহান বেশ জোরে ইচ্ছের গালে একটা কামড় দেয়।

— আমাকে তুই করে বলা হচ্ছে? তোর সাহস এতো বেড়েছে।এক্কেবারে সোজা করে দেবো চিনিস আমায়?

ইচ্ছের এতোক্ষনে খেয়াল আসে সে কি করছিলো।এবার ইচ্ছের কান্নার আওয়াজ শোনা গেলো।

— ঐ কাদছিস কেন?

— আপনি তাহলে পাঁচটা চুমু কেন খেয়েছেন?

আহান চোখ গরম করে বললো
— কামড়ে এক্কেবারে ভর্তা বানিয়ে দেব। তুই দেখেছিস আমাকে চুমু খেতে?

— দেখেনিতো কি? শুনেছি আমি

— কচু শুনেছিস।এটা মাথায় ঘোরে না যে ওরা যা করছে আমার সামনে কেন করছে দেখিয়ে কেন করছে? একটা মানুষ রুমে আসলে টের পাওয়ার পরেও কেন তোকে শুনিয়ে কথা বলবে বুঝিস না?? এসব তো লুকিয়ে করে কিন্তু তোর সামনে হচ্ছে মানে তোকে দেখিয়েই করা হচ্ছে।।(আহান জোরে শ্বাস ছাড়ল)আচ্ছা দ্যাখ তুই সামনের রুমে বসা থাকলে ড্রেনিলা বা তোর রুম থেকে যদি কেউ বের হয় তা তুই দেখবি না?

ইচ্ছে নাক টেনে বললো
— হ্যা কিন্তু তার সাথে চুমুর কি সম্পর্ক?

— তাহলে এটা বুঝিস না যে তোকে দেখিয়ে সব করা হয়? আর ড্রেনিলা আমার থেকে বড়।আমি ই কি একমাত্র ব্যক্তি যে কিনা সব বুড়িদের সাথে প্রেম করার জন্য জন্মেছি?

ইচ্ছের মাথায় এবার সব ঘুরছে ।নিজেকে অনেক বড় বোকা বলে মনে হলো ইচ্ছের।

এবার আহান ইচ্ছের গাল দুটো দুইহাতে জাগিয়ে নিজের দিকে আনলো।

— ইচ্ছু আমি দেশ থেকে বিদেশে এসেছি তোর জন্য।কিন্তু তুই কি আমার সাথে ঠিক ভাবে কথা বলেছিস একবারও? জানতে চেয়েছিস তুই ছাড়া কেমন ছিলাম? কতোটা অবনতি হয়েছে আমার তোর অনুপস্থিতিতে? জানি তুইও ভালো ছিলি না। আমার সাথে ঐ দিনগুলোতে খারাপ ব্যবহারের পিছনে আমারই ভালো খুজেছিস তুই। তাই আমার তোকে নিয়ে অভিযোগ নেই। সব শুনে ছুটে এসেছি তোর কাছে।যাতে তোর নিজেকে একা না লাগে কিন্তু তুই? আমি আসার পর থেকে চুপচাপ ছিলি,নিজে থেকে কথা বলিস নি।একবারও কাছে টানিস নি আমাকে।জানতে চেয়েছিস একবারও যে আমি কেমন ছিলাম বা আছি?

ইচ্ছে নীরবে কাদছে।সত্যিই যে ভুল হয়ে গেছে তার।

— তুই ভালো মায়ের কাছে নিজের সমস্যার কথা জানতে পেরেই আমার কাছ থেকে আলাদা হয়ে গেলি? একবার জানতে চাইতি আমি কি চাই? চেয়েছিস? হ্যা আমি মানছি আমি একটা প্রিন্সেস চেয়েছিলাম তার মানে এই না যে সেটা তোর অনুপস্থিতিতে। তার মানে এই না যে সেই প্রিন্সেস অন্য কেউ দিতে পারলে তাকেই আমি জীবনে নিবো আর তুই দিতে না পারলে তোকে তাড়িয়ে দেবো।আমার প্রথম চাওয়া তুই ইচ্ছুপাখি তুই।তারপর তোর কাছ থেকে আমি কি পাই না পাই তা অনেক পরের কথা।সবার আগে তুই তা বুঝিস না?( আহান কান্না করছে আর বলছে)

এবার আহান ইচ্ছের সারামুখে ঠোঁট ছুয়িয়ে দিচ্ছে আর বলছে ‘তুইতেই আমি’ জানিস না তুই?ভুলে গেলি? কিভাবে? তুই ছাড়া আমি অচল ভুলে গেলি? ভালোবাসার সম্পর্ক শুরু হওয়ার আগে থেকেই তোকে ছাড়া থাকতে পারতাম না।আর তুই কিনা এই আহানকে একা ছেড়ে দিলি? কিভাবে পারলি? তুইতেই আমি ইচ্ছু পাখি তুইতেই আমি বিশ্বাস কর।

ইচ্ছে অনবরত কেদে যাচ্ছে।দুইহাত দুই দিকে বাধা আহানকে জড়িয়েও ধরতে পারছে না ইচ্ছে।খুব বড়ো ভুল হয়ে গেছে।কৌশলে হলেও একবার জানতে চাওয়া উচিত ছিলো আহানের কোন জিনিসটা ছাড়া চলবেই না?বেবি নাকি ইচ্ছে?তাহলেই এতগুলো মাস কষ্ট পেতে হতো না কারো।

— তুই অনেক বড় দোষ করেছিস ইচ্ছে।আমি তোকে মাফ করবো না।তুই কিভাবে ভাবলি আমি একটা বাচ্চার জন্য তোকে ছেড়ে দেবো,, কিভাবে?

আহান কাদতে কাদতেই উঠে চলে গেলো । ইচ্ছে বার বার চিল্লিয়ে বলছে “আহান আমার হাত ছাড়িয়ে দিন আহান”।আহান আর ফিরে তাকালোনা।

ঘন্টা খানেক পরে আহান রুমে আসে।ইচ্ছে তখনও সজাগ। আহানকে দেখে আবার বাচ্চাদের মতো ঠোঁট উল্টে কাদতে শুরু করলো।আহান ইচ্ছের সামনে বসে আস্তে করে জিজ্ঞেস করে ” কি কাদছিস কেন?”

ইচ্ছে নাক টেনে উত্তর দেয়
— আমার ভুল হয়ে গেছে আহান।মাফ করে দিন না প্লিজ।

— এতো সহজ?

— তাহলে?

— আজ রাতটা এভাবে থাকবি।

— এভাবে? আমি খাই নি ক্ষুধা পেয়েছে আমার।আর সারারাত বসে বসে ঘুমাবো কিভাবে?শুয়ে গেলে দুই হাত দুইদিকে এভাবে ঘুমানো যায় নাকি?

— সব যায়।

আহান রুমাল ভিজিয়ে এনে ইচ্ছের মুখ মুছিয়ে দিতে দিতে বলে

— আর যদি নাকের জল চোখের জল এক করেছিস তাহলে তা গ্লাসে ঢেলে তোকেই খাওয়াবো।

— ওয়াক ছিইইই

— আহান যা বলে তাই করে। আর কাদবি না একদম মনে থাকে জানো

ইচ্ছে আদুরে মুখে বলে
— আমি কাদলে আপনার কান্না পায় এই জন্যই কাদতে না করছেন তাই না?

— কচু। চুপ একটা কথাও বলবি না

আহানের ধমকে ইচ্ছে চুপ মেরে গেলো। আহান খাবার এনে নিজেও খায় ইচ্ছেকেও খাওয়ায়।তারপর একঘন্টার পরিশ্রম করে ইউটিউব ঘেঁটে ইচ্ছের চুল বেনি করে দেয়।তারপর জিজ্ঞেস করে রাতে ঘুমানোর আগে আর কি কি করিস?আর কোথায় কি ক্রিম লাগাও?

— গালে।

ইচ্ছের দেখানো ক্রিমটা এনে ইচ্ছের গালে দশ মিনিট ধরে ঘষামাজা করে।এমন ভাবে কাজ করছে যেনো মহৎ কোনো কাজ করছে।দুই ঠোঁটে ঠোঁট চেপে ধরে গালের উপর ক্রিম ঘষামাজা করেই চলছে আহান। ইচ্ছের গাল মোটামোটি ব্যাথা হয়ে গেছে। ইচ্ছে একপর্যায়ে বলে ওঠে

— আহান আমার গালের ছাঁল উঠে গেলো তো।

— হয়ে গেছে নাকি আরও গাগাতে হবে??

— আরও? না বাবা আর থাক অনেক পেরেছেন।
ইচ্ছে মনে মনে বলছে আমি আর জীবনেও আপনাকে এসব কাজ করতে দেব না।এই জীবন থাকতে তো না।

— শুয়ে পর তাহলে

— এভাবে? দুই হাত দুই দিকে দিয়ে শুবো? স্বাধীন বাংলাদেশ সাইন দিয়ে?

আহান ইচ্ছের পা দুটো টেনে শুইয়ে দিল।

— পা দুটো তো খুলে দিন।

— না দিবো না।

ইচ্ছে ভেবেছিলো আহান সামনের রুমে ঘুমাবে। কিন্তু না সে ইচ্ছের পেটের উপর মাথা দিয়ে শুয়েছে। নিজের অজান্তেই মুখে হাসি ফোটে। বেশ কিছুক্ষণ কেটে যায়।হঠাৎ করে আহান বলে

— ইচ্ছে এতো উসখুস করছিস কেন?

— কই?

— যা চাইছিস তা একদম হবে না বলে দিলাম।

— এমা আমি কি চাইলাম?

— ভাবিস কি? কিছু বুঝি না?সব বুঝি সব হুম।

— হ্যা বুঝেন তাই তো পেটের উপর সেই থেকে আপনিই আঁকিবুঁকি করছেন।

— বেশ করছি। যা করছি বেশি করছি( ইচ্ছের মুখের উপর মুখ এনে)

আহান ইচ্ছের মুখে আস্তে করে ফু দিয়ে বলে কয়টা বাজে রে?

— আমার হাত খুলে দিন।তারপর মোবাইল দেখে বলছি।

আহান ইচ্ছের হাত খুললো না নিজেই মোবাইল দেখে বললো” রাত বারোটা দশ।আর মাত্র চব্বিশ ঘন্টা ”

ইচ্ছে আহানের কথার আগা মাথা কিছুই বুঝলো না।আহান ইচ্ছের মুখের আরও বেশ খানিকটা কাছে নিজের মুখ নিয়ে আসে তারপর নেশাক্ত গলায় বলে
” আমার লজ্জা বেড়ে গেছে হয়তো বুঝলি। এতো কাছে তবুও কিছু করতে পারছি না।তবে করবো (দুষ্ট হাসি দিয়ে) গেট রেডি ইচ্ছুপাখি”

আহানের এই গলা শুনে আবেশে ইচ্ছের চোখ বুঝে আসে।লজ্জাও লাগে বেশ।ইচ্ছে চোখ খুলে আর আহানকে পায় না।আহান চলে গেছে। ইচ্ছে দরজা দিয়ে তাকিয়ে দেখে আহান নিজের বিছানায় শুয়েছে। ইচ্ছে মুচকি হেসে ঘুমিয়ে যায়।

*******

সকালে ইচ্ছের ঘুম ভাংলো অনেক মানুষের হৈচৈ শব্দে।চোখ খুলে দেখে তার হাত পায়ের বাধন খোলা।রুমের বাইরে বের হয়ে দেখে তার ভার্সিটির বেশ কয়জন বন্ধুবান্ধব এসেছে।বলতে গেলে সবাই কাজে ব্যস্ত ইচ্ছেকে কেউ দেখে নি।আহান আর ড্রেনিলাকে খুজলো ইচ্ছে। কিন্তু তারা উধাও।

ইচ্ছে কারো সাথে কথা না বলে ফ্রেশ হতে চলে গেলো। ফ্রেশ হয়ে বের হতেই ড্রেনিলাসহ অন্য মেয়ে বন্ধুগুলো হুরমুরিয়ে ঢুকে পরে ইচ্ছের রুমে।অল টাইম ওয়েস্টার্ন পরা মেয়েগুলো আজ শাড়ি পরেছে।ইচ্ছে কিছুই বুঝতে পারছে না।ড্রেনিলাকে বেশ সুন্দর মানিয়েছে শাড়িতে সবার থেকে সুন্দর বেশিই সুন্দর লাগছে।

(সবার কথা বাংলায় বলা হলো )

— তোমরা সবাই শাড়িতে। আর হঠাৎ আমার বাসায়? ড্রেনিলা আমাকে তো কিছু বললে না?ওরা আমাদের বাসায় শাড়িতে কাহিনী কি?

— সারপ্রাইজ ইচ্ছে । সব কথা পরে হবে আগে তুমি লেহেঙ্গা পরো।( ইচ্ছের হাতে একটা প্যাকেট ধরিয়ে দিয়ে)

— কিন্তু সবাই আমার বাসায় আমি কিন্তু অবাক হচ্ছি?

— অবাক তো হবেই। আরও অনেকে এসেছে।আমাদের ক্লাসের তিনটা ছেলে আর এই পাঁচজনের বয়ফ্রেন্ড।( সবাই হাসছে অনবরত)

— আমি সত্যিই অবাক হচ্ছি সত্যিই।

— আরও বাকি আছে। যাও চেঞ্জ করে এসো।

********

ইচ্ছে চেঞ্জ করতে এসে দেখে রেড গোল্ডেন ব্লাক মিক্সিং একটা লেহেঙ্গা। গায়ে পড়ার পর নিজেকে পুরোই বঁধু বঁধু লাগছে।লেহেঙ্গা পরে বাইরে বের হতেই সবাই মিলে খুব সুন্দর করে বউ এর মতো সাজিয়ে দিলো।মাথায় ঘোমটাও দিয়ে দিলো।সাজ কমপ্লিট হবার পরে নিজেকেই নিজে চিনতে পারছেনা।সত্যিই পরীর মতো লাগছে নিজেকে। এতো সুন্দর কখনো লাগে নি নিজের কাছে।আহান দেখলে কি বলবে এটা ভাবতেই ইচ্ছের মন আঁকুপাঁকু করে ওঠে।

তারপর সবাই ইচ্ছেকে ধরে সামনের রুমে নিয়ে যায়।সেখানে গিয়ে দেখে আহানের গায়েও রেড শার্ট ব্লাক কোট প্যান্ট। আজ আহানকে বেশ বড় বড় লাগছে।ইচ্ছে আহানের দিকে বেশ কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলো। আহানও ইচ্ছের সৌন্দর্যে মুগ্ধ। সবার হাসির শব্দে বেশি সময় তাকিয়ে থাকতে পারলো না দুজন দুজনার দিক।ইচ্ছে এত সাজগোজের কারণ খুজে পাচ্ছে না।সামনের রুমটাও বেশ সুন্দর ভাবে ফুল দিয়ে সাজিয়েছে ওরা।আহানও সেজেছে ম্যাচিং পোশাকে। ইচ্ছে শুধু কারণ খুজছে।

ওরা ইচ্ছেকে নিয়ে আহানের পাশে বসিয়ে দেয়। কেউ কেউ পাশে বসে আর কেউ কেউ দাঁড়িয়ে থাকে। আহান ইচ্ছের সামনে একটা ল্যাপটপ। ইচ্ছে বার বার জিজ্ঞেস করছে এসবের মানে কি? আহান শুধু মুচকি হেসেই চলছে মুখে কিছু বলছে না।কিছুক্ষণ পরেই আহান ল্যাপটপ অপেন করে কাউকে কল লাগায়।ল্যাপটপে ভেসে ওঠা মুখ গুলো দেখে আহানের দিকে তাকায়।শিরিন নিধি রাকিব আব্দুর রাহমান ইশাল আয়ান সবাইকে ল্যাপটপে দেখা যাচ্ছে।ইচ্ছে এবার কেদেই দেয়।

শিরিন বলে ওঠে
–আজ একদম কান্না হবে না বলে দিলাম।

নিধিকেও কাদতে দেখা যাচ্ছে।রাকিব আব্দুর রাহমান কে বলে ওঠে বেয়াই এখন বিয়ে পড়ানো হবে। কান্নাকাটি এখন আর এলাউড না।যা হবার পরে।

ইচ্ছে অবাক হয়ে আহানের দিকে তাকায়। আস্তে করে বলে” বিয়ে?”

আহান চোখ টিপে বলে ” হ্যা বিয়ে”

চলবে,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here