Ragging To Loving 2পর্ব-৭

0
2873

#Ragging_To_Loving__2
#পর্বঃ- ৭
#রিধিরা_নূর

গেইটের বাইরে এসে নূর ঘন ঘন নিশ্বাস নিতে লাগলো। গলাটা শুকিয়ে গিয়েছে। পিছন ফিরে গেইটের দিকে তাকিয়ে আবারও চ্যালচ্যালাইয়া দৌড় দিল। রিহান ইয়াশকে সহানুভূতি দিয়ে দুজনে বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে। রিহানের চোখ মাঠে পড়তেই দেখে নূর ঝড়ের গতিতে দৌড়ে গেইটের বাইরে চলে গেল।

রিহান — (নূর এভাবে পালিয়ে গেল কেন? নিশ্চয় কোন গন্ডগোল করেছে। আমার বোন তুই। খুব ভালো করে জানি। আর আফরানকেও জানি। রাগ তার নাকের ডগায় থাকে। এখন আতঙ্ক নয় প্রলয় হবে।)

ইয়াশ — কি হয়েছে? কোন ভাবনায় মগ্ন তুই?

রিহান — না কোথাও না। চল বাকিদের দেখে আসি।

ইয়াশ — হুম। (তোমাকে তো আমি ছাড়ব না। আমার ক্যামেরা নষ্ট করার জন্য একবার মাফ করেও দিতাম। কিন্তু তোমার ফ্রেন্ড যা কিছু করল তা কখনো ভুলব না। জাস্ট ওয়েট এন্ড ওয়াচ মিস… হোয়াটএভার।)
.
.
আফরানকে দৌড়ে বেরিয়ে যেতে দেখে আহিল, ওয়াসিম, আরিফও বের হলো। এসে দেখে সিমা, আলিফা সিড়ির দ্বারে স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। চোখের পলকও নড়ছে না। ওয়াসিম ভ্রু কুচকে তাকাল তাদের দিকে।

ওয়াসিম — হেই মিস পিংকি। কি হলো? ভূত দেখলে নাকি। আহারে বেচারা ভূত। তোমাকে দেখে আরেকবার মরে ভূত হয়ে গেল।

ওয়াসিমের আওয়াজ শুনে আলিফা পাশে তাকিয়ে দেখে আরিফ। এক নিষ্ঠ ধ্যানমগ্ন হয়ে তাকিয়ে আছে ওয়াসিমের দিকে। আলিফা খুটিয়ে খুটিয়ে চোখ পিটপিট করে তাকিয়ে আছে আরিফের দিকে। সিমা ক্রুদ্ধ দৃষ্টিতে তাকাতেই ওয়াসিম চুপ হয়ে গেল।

সিমা — আরেকবার যদি আমাকে পিংকি বলেন তাহলে আপনাকে পিংক কালারের বিষ খাইয়ে ভূত বানাবো। যত্তসব।

সিমা হনহনিয়ে আলিফার হাত ধরে টেনে চলে গেল। আলিফা সিমার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকাল।

আলিফা — (ফকিন্নি তুই যাবি তো যা না। আমাকে নিয়ে এলি কেন? আমার মি. ক্রাশকে দেখছিলাম। উফফ। কিতনা হ্যান্ডসাম হে।) (আরিফের দিকে তাকিয়ে মনে মনে বলল।)
.
.
পান্না রেগে জুতোটা ছুড়ে ফেলে দিল। তা গিয়ে পড়ল পুষ্পর পায়ে। তা নিয়ে খুব একটা বিবেচনা করল না। হয়তো ভুলে পড়েছে। কিন্তু যখন দেখল পান্না মেরেছে…. শেষ। রাগ না হলেও জোর পূর্বক রাগ আনল। কারণ আফরান তাকে রিলেশনের ব্যাপারে কিছু জানায়নি। এতে তার ভীষণ ক্ষোভ। এখন সব ক্ষোভ তুলবে পান্নার উপর। লে ধুম তানা না না ধুম তানা না জোরে জোরে ঠাডা পরছে। না মানে একটু স্পেশাল ইফেক্ট দিলাম আর কি। পুষ্প জুতো নিয়ে পান্নার হাতে ধরিয়ে দিল।

পুষ্প — এই যে আপু। আপনার আমানত সামলে রাখুন। আশেপাশে কিছু ফেলার আগে দেখে নিবেন কেউ আছে কিনা।

পান্না — (হাত ঝেড়ে জুতো ফেলে দিল) হেই ইউ ইডিয়ট। এই নোংরা জুতো আমার হাতে দিয়েছ কেন? ডোন্ট ইউ হেভ এনি সেন্স?

পুষ্প — আই হেভ। কিন্তু আপনার বোধহয় নেই। তাই আপনাকে একটু সেন্স দিতে এলাম।

পান্না — ইউ….
পান্না তেড়ে আসতেই আফরান তার হাত চেপে ধরে। ক্রুদ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে মাথা নেড়ে না বলল। তখনই সিমা, আলিফা এলো। পুষ্প কোন ভাবান্তর না করে ভেঙচিয়ে চলে গেল। সাথে বাকিরাও চলে গেল। আফরানের উপর বিরক্ত হয়ে পান্না চলে গেল। বাইরে এসে ব্যাগ থেকে গিফট বের করে ডাস্টবিনে ফেলে দিল। আফরানের উপর তার ক্ষোভ। কেন এক অচেনা মেয়ের জন্য তাকে থামালো।
.
.
নূর বাসায় এসে দরজা বন্ধ করে রুমে এদিক থেকে ওদিক পায়চারি করছে। হঠাৎ সচেতন হয়ে নূর ভাবনায় পড়ল।

নূর — এক মিনিট। তিন মাস পূর্বের ঘটনা আমার মনে পড়েছে। কিন্তু উনার তো মনে নেই। যদি মনে থাকতো তাহলে এতক্ষণে… (গলা কাটার ইশারা করল) আর মনে পড়লেও কি হবে? আমি ভয় পায় নাকি। হাহ্। হুদাই এমন চ্যালচ্যালাইয়া এলাম।

হাত পা ছড়িয়ে ধপাস করে বিছানায় শুয়ে পড়ল। কানে গুনগুন প্রতিধ্বনি হচ্ছে। লাফিয়ে উঠে ব্যাগ থেকে ফোন বের করে টাস্কিত। প্রত্যেক ফকিন্নির কলস এবং মেসেজেস। নূরের মাথা ঘুরান্তি দিয়ে উঠল। তাদের কি জবাব দিবে তাই ভাবছে। কি বলে বাহানা দিবে এমন দৌড়ে আসার কারণ কি বলবে? ভাবতে ভাবতে ঠাস করে ফোন অফ হয়ে গেল।

ওয়াসিম, আহিল মিলে আফরানের সামনে প্রশ্নের ঝুড়ি খুলে দিল। কিন্তু আফরান কিছু না বলেই চলে গেল। রিহান, ইয়াশকে ওয়াসিম সব কাহিনী বলল।

পরের দিন ভার্সিটির ক্যান্টিনে বসে আছে নূর এবং বাকিরা। কাল ফোন রিসিভ না করায় প্রথম দফা ঝেড়ে নিল। এখন একের পর এক প্রশ্নের তীর ছুড়ে দিচ্ছে নূরের দিকে। নূর পা বেঞ্চের উপর তুলে ধ্যানমগ্ন বৈঠকে বসল।

নূর — কাহিনী শুনবি? (সবাই উপর নিচে মাথা নাড়লো) ওকে। (সবার জন্য ফুচকা ও কোল্ড কফির অর্ডার দিল। খাবার আসতেই শুরু করল পাতিহাঁস থুক্কু ইতিহাস।)

মিউজিক হলে আফরান বাকিদের নিয়ে বসে আছে। এদিকে ওয়াসিম তার কান ঝালাপালা করে দিচ্ছে একই প্রশ্ন করে। “পুচ্চু পুচ্চি কি?” আফরান বিরক্ত হয়ে বলল।

আফরান — এসব ঝামেলা ওই চাশমিশ মেয়েটার জন্য হয়েছে। মনে আছে তিন মাস পূর্বে মিউজিক শো হয়েছিল এবং আমি ঝামেলায় ফেসে যাওয়ার কারণে আসতে দেরি হয়েছিল। ওই ঝামেলা আর কেউ মিস চাশমিশই ছিল।

রিহান — মানে? জিলাপির প্যাচ না বানিয়ে সোজাসাপ্টা বল।

আফরান — এটা তো জানিস সেই দিন বাবার দেওয়া কাজে আমাকে ঢাকায় যেতে হয়েছিল। ফেরার পথেই শুরু হয় ঝামেলা।

ফ্ল্যাশলাইট থুক্কু ফ্ল্যাশব্যাক___________________

নূর এবং বাকিরা হোস্টেলের সবার কাছ থেকে বিদায় নিল। সবার চোখে জল। হোস্টেলের প্রাণকেন্দ্র ছিল তাদের বন্ধুমহল। অল্প সময়ে সবার সাথে বন্ধুত্ব করে নিত। কিন্তু তাদের মাঝে কারো প্রবেশ নিষিদ্ধ ছিল। ফ্রেন্ডশিপের প্রধান রুলস ছিল হাজার সংখ্যক ফ্রেন্ড বানাও কিন্তু বেস্টফ্রেন্ড? নো নেভার কাবি নেহি।

গত পনেরো মিনিট ধরে তারা বাসস্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে আছে বাসের অপেক্ষায়। কিছুক্ষণ পর দোতলা বাস এলো। ধাক্কাধাক্কি করে সবাই বাসে উঠল। একেবারে পিছনের সিটে নূর, আমরিন। তার সামনের সিটে পুষ্প,সিমা। আমরিনের মাথা ব্যাথা হওয়ায় সে চোখ বুজে হেলান দিয়ে আছে। নূর বাইরে তাকিয়ে দেখে একজন প্রবীণ রিকশাচালক খুব জোর প্রচেষ্টায় গর্তে আটকে যাওয়া রিকশা টানার চেষ্টা করছে। বৃদ্ধ বয়সে শরীরে আর কতই বা জোর থাকে। তাও পেটের দায়ে রাস্তায় নামতে হয়। কিন্তু আত্মসম্মান বির্সজন দিয়ে নয় বরং পরিশ্রম করে আয় রোজগার করে। উনার প্রতি নূরের ভীষণ মায়া হলো। তার চোখের সামনে যেন দাদুর চেহারা ভেসে উঠেছে। নূর মায়া ভরা দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে উনার দিকে। মূহুর্তে যেন তার মায়াদৃষ্টি ক্রুদ্ধে পরিণত হলো। তার কারণ রিকশায় বসে থাকা অতিভদ্র বেশে অভদ্র এক তরুণ। একদিকে রিকশায় বসে অনায়াসে ফোনে কথা বলছে। অপরদিকে বৃদ্ধ লোকটার সাথে উচ্চস্বরে কথা বলছে। মাথার উপর সূর্যের উত্তাপ নিয়ে বৃদ্ধ লোকটা রিকশা টানার চেষ্টা করছে। আর আশেপাশের লোকজন সেই দৃশ্য উপভোগ করছে। বিষয়টি নূরের ভীষণ খারাপ লাগলো। তাই কাউকে কিছু না বলেই হুট করে বাস থেকে নেমে পড়ল।

নূর — এই যে মিস্টার ভদ্রলোক। আপনার মাঝে কি এতটুকু জ্ঞান নেই যে উনি রিকশা টানছেন আর আপনি অনায়াসে ফোনে কথা বলছেন। রিকশা উঠিয়ে উনার সাহায্য করতে না পারেন কিন্তু রিকশা থেকে নেমে তার ওজন হালকা করে তো সাহায্য করতে পারেন। কিন্তু না বরঞ্চ আপনি উনার সঙ্গে উচ্চস্বরে কথা বলছেন। নামেন রিকশা থেকে। (ছেলেটা মাথা নিচু করে নেমে গেল। নূর পিছন থেকে রিকশা ধাক্কা দিয়ে গর্ত থেকে তুলে দিল। ছেলেটা আবার রিকশা উঠতে নিলে নূর থামিয়ে দেয়।) এই যে কি? কোথায় উঠছেন? হেটে যান।

ছেলেটি — কি বলছেন এসব। এই কড়া রোদ থেকে বাঁচার জন্যই তো রিকশা নিয়েছিলাম। আর আপনি বলছেন হেটে যেতে।

নূর — বাহ্! ভালো তো। নিজে রোদ থেকে বাঁচার জন্য রিকশা নিলেন। আর উনি যে সেই রোদে পুড়ে আপনাকে আপনার গন্তব্যে পৌঁছে দেয় তার সম্মান দিতে পারেন না? তিনি পরিশ্রম করে তার প্রাপ্য পারিশ্রমিক নেন। আপনাদের গোলামি করে না যে এমন আচরণ করেন। আশা করি এর চেয়ে বেশি কিছু বলতে হবে না।

ছেলেটি — সরি আপু। সরি চাচা। ক্ষমা করবেন আমায়।

বৃদ্ধ — না বাবা থাক। ক্ষমা চাইতে হবে না। এসবে আমি অভ্যস্ত। (লোকটি নূরের মাথায় হাত বুলিয়ে দোয়া করে দিলেন।)

নূর মনে এক ধরনের প্রশান্তি অনুভব করল। আশেপাশে লোকজনের দিকে তাকিয়ে নূর ভাবছে, “লোকলজ্জার ভয়ে অনেকে চেয়েও কারো সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসে না। আমি বুঝি না কাউকে সাহায্য করার মধ্যে লজ্জা কীসের? বরঞ্চ নিজ থেকে আগ বাড়িয়ে দেখুন হয়তো আপনার দেখাদেখি বাকিরাও সাহায্যের উৎসাহ পাবে।” এসব ভেবেই দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলে বাসের দিকে পা বাড়ালো।

.
.
.

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here