Ragging To Loving 2পর্ব-৯

0
3022

#Ragging_To_Loving__2
#পর্বঃ- ৯
#রিধিরা_নূর

আফরান অনবরত হাঁচি দিয়েই যাচ্ছে। নূর ভ্রু কুচকে তাকাল আফরানের দিকে।

আফরান — আপনি…(হাচ্চু) চুলে…(হাচ্চু) জুঁইফুলের… (হাচ্চু) তেল দিয়েছেন? (হাঁচি থামার নামই নেই)

নূর — (চুলের ঘ্রাণ নিল) উমম। হ্যাঁ! খুব মিষ্টি ঘ্রাণ তাই না! ঘ্রাণ নিয়ে দেখুন। (চুল এগিয়ে দিল)

আফরান — (হাচ্চু) আমার জুঁইফুলে এলার্জি আছে।

নূর দ্রুত চুল কোপা বেঁধে গুটিসুটি মেরে বসে আছে। আফরান হাঁচি দিতেই আছে। হাঁচির কারণে সঠিকভাবে ড্রাইভিং করতে পারছে না। নূর আড়চোখে আফরানের দিকে তাকিয়ে হুট করে লাফিয়ে উঠে আফরানের নাক মুখ চেপে ধরল। হঠাৎ দম আটকে যাওয়ায় আফরান দ্রুত ব্রেক কষে। ঝাড়ি দিয়ে নূরের হাত সরিয়ে দিল।

আফরান — হোয়াট দ্যা হেল। কি করছেন আপনি! এসবের মানে কি? (রেগে)

নূর — দুঃখিত। আসলে আপনি এভাবে বিরতিহীন হাঁচি দিচ্ছিলেন। তাই ভাবনা এই কৌশল ব্যবহার করে হাঁচি থামাবো।

আফরান — আপনার কি মনে হয় এসব ফালতু ট্রিক কাজ করবে? এটা এলার্জির সাইড ইফেক্ট। এমনি এমনি যাবে না। ঔষধ প্রয়োজন। আর আপনি….
বলতে বলতে থেমে গেল। খেয়াল করল আসলেই তার হাঁচি বন্ধ হলো। অবাক হয়ে তাকাল নূরের দিকে। নূর সেই ভেটকাইন্না মার্কা হাসি দিল। আফরান কিছু বলল না। কিছুক্ষণ পর তারা পৌঁছে গেল গন্তব্যে। গাড়ি দেখেই নূর চিনে ফেলল। দ্রুত গাড়ির দরজা খুলে বেরিয়ে গেল। আফরান বেচারা হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে নূরের দিকে। সেই যে সাহায্য করল কৃতজ্ঞ প্রকাশ করা তো দূরে থাক যাওয়ার সময় একটু বলেও গেল না। এক দীর্ঘ নিশ্বাস ছেড়ে গাড়ি স্টার্ট করতেই জানালার কাচে কড়া নাড়লো। পাশে তাকিয়ে দেখল নূর। মনে মনে আফরান বেশ প্রফুল্ল হলো। গাড়ি থেকে বেরিয়ে এলো।

নূর — অনেক ধন্যবাদ আপনাকে। আজ আপনার কারণে আমি সঠিক সময়ে পৌঁছাতে পেরেছি। নাহলে কি যে হতো আমি ভাবতেই পারছি না। সত্যি বলতে খুব কম মানুষই থাকে যারা বিপদে অন্যের সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসে। রাস্তায় অনেক্ষণ হাটছিলাম কেউ সাহায্য করল না। কিন্তু আপনি করেছেন। থ্যাংক ইউ সো মাচ। (হাত বাড়িয়ে দিল)

আফরান — মাই প্লেজার। (হাত মিলালো)

ঠিক তখনই নূরের জামার ভেতর থেকে ওড়না পড়ে গেল এবং তার পেট সমান হয়ে গেল।

নূর — পুচ্চু পুচ্চি পয়দা হয়ে গেল! (অবাক হয়ে বলল)

নূর আফরান দুজনেই অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে ওড়নার দিকে। দুজনে একবার ওড়না দেখছে, একবার একে অপরের চেহারা দেখছে, একবার ওড়না দেখছে, একবার একে অপরের চেহারা দেখছে। নূরের পেটের দিকে নজর পড়তেই আফরান ক্রুদ্ধ দৃষ্টিতে তাকাল নূরের দিকে। আফরানের আর বুঝতে বাকি রইলো না এসব নূরের সাজানো নাটক ছিল। রাগে ফোপাঁতে লাগলো আফরান। রাগে কপালের রগ ফুলে গিয়েছে, চোখ দুটো অসম্ভব লাল হয়ে গিয়েছে। আফরানের এমন রূপ দেখে নূর ভীষণ ভয় পেল। ভয় চাপিয়ে জোর পূর্বক হাসার চেষ্টা করছে। কিন্তু ভয়ের ঠেলায় হাসিও আসছে না। কিন্তু কিছু একটা তো করতে হবে। নাহলে যে এই ধলা মিয়া তাকে জেন্ত খেয়ে ফেলবে। তাই শুরু হলো নাটকের দ্বিতীয় ধাপ। (লাইটস ক্যামেরা একশন)।

ওড়না তুলে ছোট বাচ্চাদের ন্যায় কোলে নিল। অবলা নারীর মতো চেহারা বানিয়ে করুণ দৃষ্টিতে তাকাল আফরানের দিকে। লালালালালা….. ধুম তানা না না ধুম তানা না না….।

নূর — এই জালিম, নিষ্ঠুর দুনিয়ায় আমার পুচ্চু পুচ্চি পয়দা হলো। কে রাখবে এদের খেয়াল? কে করবে তাদের কোলে পিটে মানুষ। (জিবে কামড় খেল।) ওহ সরি। কে করবে তাদের কোলে পিটে ওড়না থেকে শাড়ি? আমি খুব চিন্তিত। কিন্তু আমার এখন আর নয়। কারণ এই জালিম নিষ্ঠুর দুনিয়ায় আপনার মতো নম্র, ভদ্র, উদার মনের মানুষ, দয়ালু আছে। আমি আমার পুচ্চু পুপুচ্চির দায়িত্ব আপনাকে দিলাম। (আফরানের কোলে তুলে দিল।) তাদের কোলে পিটে মানুষ থুক্কু শাড়ি করবেন। গেলাম আমি। বিদায় পৃথিবী। লালালালালালা।

আফরান নিস্তেজ, নিস্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। এতো বড় একটা শকড সে কোন ভাবেই মেনে নিতে পারছে না। পরিস্থিতি সুবিধার দেখে নূর দিল এক দৌড়। আফরান অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তার যাওয়ার পানে। হাবাগোবা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। এক দৌড়ে নূর বাসে উঠে গেল। সিটে বসে হাঁপাতে লাগলো।

নূর — আরে ভাই তাড়াতাড়ি বাস ছাড়েন। আর কতক্ষণ লাগবে?

নূরের চিৎকারে আমরিনের ঘুম ভাঙল।

আমরিন — আমরা পৌঁছে গিয়েছি?

সিমা — কি রে ফকিন্নি চিল্লাস কেন? কাল সারারাত ফেয়ার ওয়েল পার্টি করে ঘুমোতে পারিনি। এখন একটু শান্তিতে বিশ্রাম নিচ্ছি তোর সহ্য হচ্ছে না।

পুষ্প — চুপচাপ বসে থাক। গাড়ি যখন ছাড়ার ছাড়বে। আর তোর এই পাগলের মতো অবস্থা কেন? দেখে মনে হচ্ছে পাগলা গারদ থেকে পালিয়ে এসেছিস। নাকি ঘুমের ঘোরে পাগল হয়ে গিয়েছিস। বসে থাক চুপচাপ।

নূর রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সকলের দিকে। এরা কি বান্ধবী নাকি শত্রু? গত আধ ঘন্টা ধরে যে নূর গায়েব ছিল কারো কোনো খবর নেই। ওইদিকে সে ভেবে মরছিল না জানি তার সখীরা শোকে মরছে। এখানে তো উল্টো দৃশ্য। তারা শোকে নয় ঘুমে মরছে। নূর রেগে তিনজনের চুল মুটি ধরে টানল। ততক্ষণে বাস ছেড়ে দিল।

গাড়ির হর্ণে আফরানের ঘোর কাটলো। চমকে উঠে এদিক ওদিক তাকাচ্ছে। আচমকা হাতে ওড়নার দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। হালকা গোলাপি রঙের ওড়নার উপর ছোট ছোট গোলাপ ফুল কারচুপি করা। রেগে ওড়না খামচে ধরে চলমান বাসের দিকে তাকিয়ে আছে। ওড়না হাতে পেচিয়ে গাড়ি নিয়ে রওনা দিল। আজ তার জীবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি দিন। কত কাঠ পুড়িয়ে সে মিউজিক শো-তে অংশগ্রহণ করেছিল। কিন্ত সে তার মিউজিক শো বাদ দিয়ে মানবতার খাতিরে মেয়েটির সাহায্য করল। আর সে সব নাটক করছিল। এসব ভেবে আফরান রাগ আরও বাড়ছে। ফুল স্পীডে ড্রাইভ করছে। ফোনের রিংটোন কানে বাজতেই স্পীড কমিয়ে ফোনের স্ক্রিনে দেখে আরিফের নাম। রিসিভ করতেই শুরু হলো ঝাড়ি।

আফরান — আসছি আমি। মাঝপথে ঝামেলায় ফেসে গিয়েছিলাম।
.
.
বর্তমানে______________________________
সকলে হতভম্ব হয়ে আফরানের দিকে তাকিয়ে আছে। সকলের বিস্ময় চরম পর্যায়ে।

আরিফ — তো এই ছিল তোর সেই ঝামেলা? (আফরান মাথা নেড়ে সম্মতি জানালো)

ওয়াসিম — ওহ মাই গড। এটা ঝামেলা? আরে ঝামেলা না মহাঝামেলা।

আহিল — আরে এই তো রিহানের আতংক।

রিহানের মুখটা ভয়ে চুপসে গিয়েছে। ভাবছে আহিল যেন গেল নাকি রিহান আর নূর ভাইবোন। কিন্তু না৷ আহিল হো হো করে হেসে উঠল। সাথে বাকিরাও। তার মানে সে মজা করে বলেছিল। রিহান স্বস্তির নিশ্বাস নিয়ে তাদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে হাসছে। আফরান সবকটাকে মারতে লাগলো।

আফরান — তোরা বন্ধু নাকি শত্রু। হারামির দল। (মার খেয়ে তারা আরও জোরে হাসতে লাগলো। আফরান বিরক্ত হয়ে চলে গেল।)
.
.
অন্যদিকে নূরের ইতিহাস শোনে হাসতে হাসতে সবার পেট ব্যাথা করছে। আলিফা, মেহেরের হাসি থামছেই না। সিমা,আমরিন,পুষ্প হাসছে। সাথে আবার অবাকও হলো এই ভেবে নূর আধ ঘন্টা ছিল না আর তাদের খবরও ছিল না। নূর রেগে ফুচকাতে ইচ্ছেমতো মরিচ দিয়ে একেকটা ফুচকা সবার মুখে গুজে দিল। ঝালে তাদের লাফানি দেখে কে? আলিফা, মেহেরকে কোল্ড ড্রিংকস পান করতে দিলেও সিমা, আমরিন, পুষ্পকে দিল না। বেচারিরা অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে নূরের দিকে। নূর রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।

ক্যান্টিন থেকে বেরিয়ে নূর ভয়ে ভয়ে ক্লাসে গেল। আশেপাশে ভালো করে দেখে নিল কোথাও আফরান আছে কিনা। সচেতন হয়ে প্রতিটি ধাপ ফেললো।

আমরিন ভুলক্রমে তার ফোন ক্যান্টিনে ফেলে আসে। আলিফাকে নিয়ে ক্যান্টিনে গেল ফোন আনতে। ফোন নিয়ে ফিরতেই আমরিনের ধাক্কা লেগে ফোন পড়ে যায়।

আহিল — ওপস সরি। (হঠাৎ খেয়াল করল এই দেখি আমরিন। খুশিতে আত্মহারা হয়ে আরিফকে জড়িয়ে ধরল।) দোস্ত পেয়ে গিয়েছি। ইয়াহু। পেয়ে গেছি। পেয়ে গেছি।

আমরিন অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। আলিফার মনে লাড্ডু ফুটছে আরিফকে দেখে। চোখ পিটপিট করে এক ধ্যানে তাকিয়ে আছে আরিফের দিকে। আমরিন ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আলিফার হাত ধরে চলে যাচ্ছে। আহিল সামনে তাকিয়ে দেখে আমরিন নেই। পাশে তাকিয়ে দেখে আমরিন চলে যাচ্ছে। চিৎকার করে বলল।

আহিল — হেই ইউ লিসেন টু মি। (চিল্লিয়ে)। ইউ আর মাই লাভ জানো তুমি। (আস্তে করে বলল)

আহিলের ডাক শুনতে না পেয়ে আমরিন চলে গেল। খুশিতে আত্মহারা হয়ে আহিল লাফাতে লাগলো।

আহিল — আমি এতো বোকা কেন? কালকে পিংকিকে দেখে আমরিনের কথা জিজ্ঞেস করা উচিৎ ছিল। দুইজন যেহেতু ফ্রেন্ড সেহেতু একসাথেই তো থাকবে। আর আমি দেবদাস হয়ে পড়ে ছিলাম।

আরিফ কিছুই বুঝল না। সব তার মাথার উপর দিয়ে গেল।

.
.
.

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here